বিয়াল্লিশের বাংলা’--নির্মলকুমার বসু; কারিগর প্রকাশনালয়, কলকাতা-৪ ISBN: 978-93-81640-11-1
জ্ঞান আহরণের কী কী পন্থা আছে গো?
কেন, জানো না?
পুঁথির পাতে, গুরুর বাণীতে।
পুঁথির পাতা থেকে জ্ঞান-আহরণ করতে গ্রন্থাগারে যাই, গুরুর বাণী শুনতে আশ্রমে।
আর এই এই স্থানে যাবার অবকাশ নাই যার?
কেন, সে তা পাবে কারাগারে বসেই!
বলো কী? কারাগারে বসেই জ্ঞানার্জন?!
হ্যাঁ, সমগ্র অবিভক্ত বঙ্গদেশ থেকে আসা সহ-কয়েদিদিগের (স্বাধীনতা-সংগ্রামী) কাছ থেকে তাঁর তাঁর জিলার খবর, মাটির খবর, মানুষজনের খবর, ব্যবসা-বাণিজ্যের খবর, পরব-উৎসবের খবর…সংগ্রহ।
আর এই সব লিখে নেওয়া হলো এক ডায়ারিতে, মুক্তাক্ষরে--ছবি ও ম্যাপ সহ।
নির্মলকুমারের এই ডায়ারির একমাত্র তুলনা পাই আহম্মদনগর কারাগারে বসে নেহরুজীর ‘ডিসকভারি…’ লেখার সাথে।
*
মহাত্মা গান্ধীজীর সচিব (১৯৪৬-৪৭)---তাঁর নোয়াখালি পদযাত্রা ও অবস্থান কালে (হ্যাঁ, মহাদেব দেশাই ততদিনে পরলোকে)। তার আগে ১৯৩০-এ আইন-অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবাস করে এসেছেন নির্মলকুমার--প্রেসিডেন্সি কলেজের পঠনপাঠন মুলতুবি রেখে। পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নৃতত্ত্বে এম.এ.। আজও ভারতের প্রথম সারির নৃতত্ত্ববিদের নাম উঠলে শরৎ রায়/পঞ্চানন মিত্র/বিরজা গুহ-র সঙ্গে সঙ্গে নির্মলকুমারের (১৯০১-৭২) নামও একই সারিতে উচ্চারিত হয়।
**
জেমস রেনেল, বুকানন ও হান্টার সাহেবদিগের দৌলতে সেই বৃটিশ জামানার শুরু থেকেই বঙ্গদেশে গেজেট লেখা কিন্তু নূতন কিছু নয়, যদিও তাঁদের সামনেও মডেল হিসেবে ‘আইন-ই-আকবরী’ বা মানসিংহের নামচা ছিল। কিন্তু তাতে কি কান্দি-র (মুর্শিদাবাদ) আহিরী গোয়ালাদের বাথান করার গল্প ছিল? পড়তে পাওয়া যেত কি তাতে বগুড়ার মুসলমান জোলাদের গামছা-মশারি বুননের কথা, বা তাঁদের মহিলাদিগের জন্যে ‘ছ্যাওটা’ বোনার কথা? অধ্যা. নির্মলকুমার বসুর বর্তমান এই রমণীয় গেজেটটিতে এই এই যাপনের কথা পড়তে পাওয়া যায় বলেই এটি সুস্বাদু এত!
*
তিরিশের ‘আইন অমান্যে’র পরে বিয়াল্লিশের ‘ভারত ছাড়ো’-ই ছিল গান্ধীজীর সর্বভারতবর্ষব্যাপী বিশাল এক গণ-আন্দোলন--আমরা সবাই জানি তা। চল্লিশোর্ধ্ব অধ্যাপক নির্মলকুমার যখন এই আন্দোলনেও ঝাঁপিয়ে পড়ে কারাবরণ করলেন তখনই তিনি এক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃতত্ত্ববিদ---গান্ধীবাদের পাশাপাশি যে-বিদ্যার পাঠ তাঁর ধমনীতে ধমনীতে! এরই প্রকাশ দেখা যাচ্ছে এই “বিয়াল্লিশের বাংলা” বই, তথা ডায়ারি-তে। এক মান্য নৃতাত্ত্বিকের হাতে না পড়লে এই ‘ওজন’ আসে না বইটিতে, ---সুখপাঠ্যতাটুকু তো উপরি পাওনা।
*
পাঁচটি অধ্যায় ও গড়ে প্রতিটিতে পাঁচ-ছয়টি করে উপ-অধ্যায় জুড়ে চারশত পৃষ্ঠাব্যাপী গ্রন্থ এ’খানি। জেলের মধ্যে বসে লেখা, তাই রেফারেন্স বই বা লাইব্রেরির কোনো সাহায্য পাননি নির্মলকুমার, হয়তো তা চান-ও নি, কারণ ওঁর উদ্দেশ্য ছিল মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ইতিহাস-ভৌগোলিক আখ্যানের নথিবদ্ধকরণ। গ্রন্থের গোড়াতেই ঐ সকল ব্যক্তিবর্গের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে যাঁদের কাছ থেকে তথ্য আহরণ করেছেন নির্মলকুমার (লক্ষণীয়, একজনও মুসলিম ব্যক্তি নাই?! )
অধ্যায়গুলি হলো বিয়াল্লিশের বঙ্গদেশের পাঁচটি ডিভিশন (হ্যাঁ, তখন পাঁচটিই ছিল)—চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, প্রেসিডেন্সি ও বর্ধমান। আর, উপ-অধ্যায়গুলি হলো ডিভিশনগুলির অধীনে থাকা জেলাসমূহ—ত্রিপুরা…ফরিদপুর…পাবনা…নদীয়া…হুগলী ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রতিটি (উপ)অধ্যায়েই সেই সেই জিলার মাটি (ভূমি-প্রকৃতি), নদনদী, কৃষিজ দ্রব্য ,ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বাজার-হাট, শিল্প, উৎসব-মেলা খাদ্যাভ্যাস--নিপুণ তুলিতে দু’-একটি দু’-একটি এমন এমন রমণীয় তথ্য তুলে ধরেছেন উনি---বড়ই সুখপাঠা তা।
যেমন, জানতাম কি (চোখেও দেখিনি কোনদিন) যে গোবরের গোল গোল পরিচিত ঘুঁটের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাগণ দুই-এক হাত লম্বা বাঁশের উপর গোবর মাখিয়ে ‘ঘুঁটের লাঠি’ বানান যা জ্বালানি হিসাবে বহুল প্রচলিত? বা, অনাবৃষ্টির নিদানে রংপুর জিলাতে গভীর রাত্রে মহিলাদিগের উলঙ্গনৃত্যের এক ব্রত পালিত হয়? অবশ্যি, এটা জানতাম যে বাঁকুড়া/মেদিনীপুরের বাঙালি-মুসলমানগণই তুঁতের চাষ ও রেশমবস্ত্র ব্যবসায়ের পুরোধা ছিলেন ও আজও আছেন।
*
চমৎকার প্রচ্ছদ বইটির। বানানের সমতা সারা বই জুড়ে রক্ষা করেছেন-না-করেননি খোলসা করতে গিয়েও দ্বিধাগ্রস্ত রয়ে গেছেন প্রকাশক-মশাই (বিয়াল্লিশ সালে নির্মলকুমার ‘হুগলি’ ‘বাংলা’ বা, ‘নদিয়া’---প্রভৃতি বানান লিখেছেন এটা বিশ্বাস করা শক্ত)।
সবশেষে নিবেদন, ওরাল-হিস্ট্রি (বা ওরাল-জিওগ্রাফি) ভালোবাসেন যাঁরা নির্মলকুমার বসুর এই ল্যান্ডমার্ক কিতাব মহাসমাদরে শোভা পাবে তাঁদের বই-তাকে। বাংলা সাহিত্য যে শুধুমাত্র গল্প-কবিতা-উপন্যাস দিয়েই শোভিত নয়, একটি আপাত-রসকষহীন গেজেটিয়ারও যে কত সাহিত্যগুণসমৃদ্ধ হতে পারে---এ’বইটি না পড়লে বোঝা যাবে না।
বাংলা সাহিত্যের এক সম্পদ তাই এই বই।
দক্ষিণবঙ্গের প্রবাদ-প্রবচন ও সময়ানুগ পরিবর্তনের ধারা---একটি আর্থসামাজিক সমীক্ষা--অসীম কুমার মান্না; মডেল পাবলিশিং হাউস, কলকাতা-৭৩; প্রথম প্রকাশ বইমেলা, ২০২১; ISBN: 81-7616-146-2 (ভুল?)
এ বইয়ের শিরোনামে একটি লেজুড় আছে।
তাতেই বেশি আকর্ষিত হয়ে কিনি বইটি, মূল নামটিতে যত না।
“দক্ষিণবঙ্গের প্রবাদ-প্রবচন ও সময়ানুগ পরিবর্তনের ধারা---(একটি আর্থসামাজিক সমীক্ষা)।
কী বলেন, পাঠক, জবরদস্ৎ নয় লেজুড়খানি?
কারণ, বাংলা প্রবাদ-প্রবচন নিয়ে বাজারে কিতাব তো কম পড়ে নাই (দুইখান এমন বইয়ের কথা ৫৪ ও ৬৫ সংখ্যায় পড়েছি) কিন্তু সময়ের নিরিখে তার পরিবর্তনের ধারাটি ধরতে পারা তো সহজ কাজ নয় মোটেই। অর্থাৎ, এই বইয়ে পড়তে চাইব কোনো এক প্রবচনের ঊনবিংশ শতাব্দীর রূপ এবং তার পাশাপাশি আজকের রূপ। আবার, কোনো প্রবাদ হয়তো পূর্বে ছিলই না, হালে এসেছে। সেটাও ‘সময়ানুগ ধারা’-র মধ্যেই পড়ল তো, না কি?
না, একটু ছোট্ট ভুল বলেছি।
একটি নয়, দুইটি লেজুড় আছে এই বইয়ের শিরোনামে। কেন, ঐ যে ‘আর্থসামাজিক’ সমীক্ষাও লেখা আছে, দেখতে পাচ্ছেন না?
তার মানে, আর্থসামাজিক ফ্যাক্টরগুলি কী কী ভাবে কোনো প্রবাদ-প্রবচন গড়ে তুলতে সহায়ক হয়, এবং কীভাবেই বা টাইমস্কেলে তার পরিবর্তন আনছে----এক বর্ষীয়ান অধ্যাপকের এক দশকব্যাপী নিরলস ক্ষেত্রগবেষণার মধ্য দিয়ে এই এই বিষয়গুলি জানতে চাওয়া ও জানতে পাওয়াটা বিশেষ কৌতূহলোদ্রেককারী বটে, কৌতূহল নিরসনকারীও! অবিখ্যাত প্রকাশনালয় হতে অনামী অধ্যাপক লিখিত এই কেতাব এইসকল আগ্রহের নিরসনে অনেকটাই সফল হয়েছে (অনেকটা আবার হয় নাই)---সে কথাই বলব।
*
প্রবাদ প্রবচন বাগধারা ইত্যাদি কাকে কাকে বলে সে সব জানেন পরবাসের সকল পাঠকই, চুয়ান্ন ও পঁয়ষট্টি সংখ্যায় পড়েওছি। অতএব সে সব নিয়ে অধিক কচাকচি না করে প্রথমে খুঁজি ‘দক্ষিণবঙ্গ’ বলতে উনি কোন্ অঞ্চলের কথা বলেছেন?
গঙ্গা-পদ্মা ভাগ হয়ে যাবার পরে মুর্শিদাবাদ থেকে সুন্দরবন---পুরোটাকেই দক্ষিণবঙ্গ বলে জানতাম। এখানে লেখক কিন্তু কেবল পূর্বতন সমগ্র মেদিনীপুর ও চব্বিশ পরগণা জেলার প্রবাদ-প্রবচনের কথাই বলেছেন। বেশ। কিন্তু এতে তাঁর কাজটা কি কঠিনতর হয়ে গেল না? কারণ কিছু প্রবাদকে অঞ্চলের সঙ্গে সহজে সনাক্ত করা গেলেও বহু বহু প্রবাদই সমগ্র বঙ্গদেশেই প্রচলিত। তবে লেখকের এ’হেন প্রয়াসে এমন অনেক অনেক প্রবাদ প্রবচন জানা হয়ে গেল, যে গুলো আগে শুনিই নি। এগুলি বিশেষতঃ দক্ষিণবঙ্গেরই, এগুলিই উত্তম প্রাপ্তি। যেমন
‘বাঘুয়া, আম্লি, বারুটিয়া/ সবে মরে খরাটিয়া’
বা,
‘কলির কথা কই গো দিদি কলির কথা কই /
গিন্নির পাতে টক আমানি, বৌ এর পাতে দই’
বা,
‘যেমন হাঁড়ির তেমন সরা / বনায় এটি ক্ষুদি বেরা’
সুদীর্ঘকাল ধরে ক্ষেত্রসমীক্ষা করে বর্ষীয়ান লেখক প্রায় দেড় সহস্রাধিক এমন এমন প্রবাদ-প্রবচন ছেঁচে এনেছেন। এরমধ্যে প্রথম দুই শত পৃষ্ঠাব্যাপী ৭২২টি প্রবাদের প্রত্যেকটির নিচে নিচে সামান্য ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, যদিও বহু ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন হয়ত ছিল না। উনি কিন্তু সৎভাবে খেটেছেন। এর পরেও সত্তর পৃষ্ঠাব্যেপে ৮৭৩টি প্রবচনের চয়ন ও গ্রন্থন। খেটে কাজ। এ’সব প্রবচন তো আগে শুনিই নি গো!
বধাঈ!
*
কিন্তু ‘সময়ানুগ পরিবর্তনের ধারা’-টির কী হলো?
না, সেটা নেই; অন্তত আশানুযায়ী নেই। যেমন, ২৪৪ পৃষ্ঠায় রয়েছে, 'কাই রামচন্দ্র, আর কাই রামা ছুতরিয়া'; কিন্তু এটার একটা উত্তরবঙ্গীয় রূপও আছেঃ ‘রাণী ভবানী আর ফুল জেলেনি’। হিন্দিতে এটাই বহুল প্রচলিতঃ ‘কঁহা থে রাজা ভোজ ঔর কঁহা ইয়হ্ ভজুয়া তেলি’—রূপে। এ’সবের একটু আলোচনা হলে আরও সুখপাঠ হতো। সুদেষ্ণার বইটিতে এটি পেয়েছিলাম, ৬৫ সংখ্যায়। তবে, এত এত আঞ্চলিক প্রবাদ যে দুই মলাটের অন্দরে আনা যায়, অসীমবাবু দেখিয়ে দিয়েছেন সেটা। মস্ত কাজ।
বধাঈ জানাই আবার।
*
শালীনতা/যৌনতা আরেকটি দিক যেটা প্রবচনের আলোচনায় অবধারিতভাবে উঠে আসবেই, কারণ এগুলির আকর হলেন/ছিলেন গ্রাম্য অশিক্ষিত/অল্পশিক্ষিত মহিলাগণ। এর আলোচনা চমৎকার করেছেন লেখক। অশালীনতার দোহাই দিয়ে এগুলিকে গ্রন্থিত কেতাব থেকে নির্বাসন দিলে ভাষা হবে ক্ষতিগ্রস্ত, আয়নায় পড়বে আঁচড়---কারণ অনায়াসে মাটি থেকে উঠে আসা এইসকল প্রবাদ-প্রবচন হলো জীবনের আয়না, সমাজের আয়না। এই প্রকার শ’য়ে শ’য়ে প্রবাদ প্রবচন রয়েছে এই গ্রন্থে। এতোই বেশি রয়েছে যে অনায়াসে বইটিকে ‘অশ্লীল প্রবচনের সংকলন’ আখ্যা দেওয়া যেত! (মেয়েদের অশ্লীল শব্দ নিয়ে পরশু-সংখ্যাতেই পড়েছি না আমরা?)
*
“আর্থিক আয়না”-ও কি?
কেন, ঐ যে শিরোনামেই লেখক ‘আর্থ-সামাজিক’ অবস্থার কথা বলেছেন?
হ্যাঁ, শেষ অধ্যায়ে যথেষ্ট মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন লেখক এর উপরে।
যেমন, প্রাক্-আধুনিক কালে দক্ষিণ মেদিনীপুরের মুসলিম শাসক তাজ খাঁ মসনদ-ই-আলা-র আমলে রাজানুগ্রহ পেতে যে খেড়িয়া-শবরগণ দলে দলে মুসলমান হয়েও হালে পানি পান নি অতঃপর, তাদের থেকে “যেটি আছে খাঁড়িয়ার বস্তি, ধর্মকর্ম সব নাস্তি” প্রবচনটির উদ্ভব। বেশ লাগে এ’সব পড়তে। আরও, যেমন, নিম্নবর্গীয় পৌন্ডক্ষত্রিয় বা ‘পোদ’ সম্প্রদায়ের মাথাগরম করার বদ অভ্যাসের উপরে,
‘পোদ পাগড়া, ধানে আগড়া, দুধে কেনি জল/ সে পোদ যাইছে রসাতল’!
পড়ুন, প্রিয় পাঠক, এ’ বইটি নেড়েচেড়ে। ভালো লাগবে।
**
কিন্তু অজস্র বানান ভুল যে! অজস্র!
‘মুখবন্ধ’-র প্রথম প্যারাগ্রাফেই গ্রামীন, পরিসেবা, ভূগেছি, উচ্চাকাঙ্খাহীণ ইত্যাদি পাঁচ-সাতটা ভুল। ‘হীন’ বানানটা যে বই এর কত কত স্থানে ‘হীণ’ লেখা হয়েছে! শেষ অধ্যায়ে পৃ ৩২০-১ দুই বার ‘neak name’ লেখা হয়েছে। ‘দুস্থ’---পৃ ৩২০; ‘প্রতিধ্বনী’---পৃ ৩২২ . অধ্যায়ের শিরোনামে ‘প্রানী’ (দন্ত্য ন) লেখা হয়েছে। লেখক-মহাশয় যে প্রকাশককে ধন্যবাদ-টন্যবাদ জানিয়ে একশা করলেন মুখবন্ধে , সেটা কীসের জন্য? প্রচ্ছদ মামুলি। ছাপাই বাঁধাই অনুত্তম, কাগজ জ্যালজেলে।
বিপন্ন বাঙালি---সম্পাদনাঃ তপোধীর ভট্টাচার্য; অভিযান পাবলিশার্স; প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৮; ISBN: 978-93-87575-47-9
একটি সুমুদ্রিত, সুগ্রন্থিত চমৎকার কেতাবের মূলসুরের সঙ্গে যদি অসহমত হই, যে-বই কিনা আবার অত্যুৎসাহে প্রকাশমাত্রই ক্রয়---তার গ্রন্থ-সমালোচনা লেখা কি উচিত হবে?
এই ভেবে ভেবেই দু’ বচ্ছর কেটেছে। (এটাও বটে, যে অপেক্ষা করছিলাম আসাম এন.আর.সি. প্রক্রিয়ার ফলাফল কী হয় দেখতে)।
উপরন্তু, গ্রন্থটির প্রধান লেখক-তথা-সম্পাদক ছিলেন অধমের শিক্ষক, এবং তাঁর সহধর্মিণী (অন্যতম লেখিকা) সহকর্মী। তাই ব্যক্তিগত ঝোঁকটা এড়ানোও কর্তব্য হয়।
*
সংস্কৃত ও বাংলাভাষার দিকপাল পণ্ডিত অধ্যা. তপোধীর ভট্টাচার্য (জ. ১৯৪৯) মহাশয় শিলচরের ‘আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে’র উপাচার্য ছিলেন, আজকের বাংলা ভাষার এক পুরোধা লেখক তিনি। জনা-পঁচিশেক তাবড় তাবড় লেখক/প্রাবন্ধিককে জুটিয়ে এনে [ #?? ] এই সাড়ে তিনশ’ পৃষ্ঠার যে সংকলনখানির সম্পাদনা তিনি করেছেন, ভবিষ্যতের জন্যে এক অনন্য দলিল হয়ে থাকবে তা---সে আপনি বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হোন্ বা না-হোন্। অত্যন্ত খেটে কাজ এটি। পড়বার মতো বই, অবশ্যই। সংগ্রহযোগ্যও ।
*
আজকের ভারতবর্ষের মধ্যে আসাম-তথা-উত্তরপূর্বাঞ্চল এমন এক রাজ্য/অঞ্চল যা কিনা দু’হাজার বছর ধরেই অখণ্ড ভারতবর্ষের মূল মানচিত্রে আসত না---তা সে মৌর্য-গুপ্ত-হর্ষ-তুঘলক-আওরঙজেবের তাবৎ বড় বড় সাম্রাজ্যই হৌক না কেন। যদিও প্রাগ্জ্যোতিষপুরের (আজকের গুয়াহাটি অঞ্চল) নাম আদিকাল থেকেই পাওয়া যায়, মহাভারতের অর্জুনও নাকি এখানকার মণিপুর/নাগাভূমিতে এসে চিত্রাঙ্গদা ও উলুপীকে বিয়ে-টিয়ে করেছিলেন।
এই সেদিন, ১৮৩০-এর দশকে বেনিয়া ইংরেজ চা, তৈল ও কাঠের ব্যবসার লোভে আসামকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অঙ্গীভূত করে, এবং ছয় শত বছর ধরে চলা অহোম-সাম্রাজ্যকে উৎখাত করে। এই অহোমগণ পরের দিকে নিজেদের ‘হিন্দু’ বলে পরিচয় দিলেও মূলত এঁরা থাই উৎসের ছিলেন, এবং গো-শূকর দুইই খেতেন, হিজরির মতো চান্দ্রমাস মেনে চলতেন।
অর্থাৎ, যে বাঙালি-অসমীয়-হিন্দু-মুসলিম ভূমিপুত্র/বহিরাগত বিরোধ বর্তমান কেতাবখানির উপজীব্য তাহা অতি আধুনিক বিষয় মাত্র।
**
দ্বিতীয় প্রসঙ্গঃ স্বশাসনের অধিকার যে কোনো গোষ্ঠীরই মজ্জাগত এবং স্বাভাবিক দাবি। প্রাচীন ‘অহোম’ নাম থেকে ‘আসাম’, অসমীয়গণ এখানকার ভূমিপুত্র, তাই তাঁদের প্রদেশের শাসনাধিকার তাঁদেরই থাকবে স্বাভাবিকই তো এটা, নয়?
তাহলে, বাঙালিরা?
ব্রিটিশ শাসনামলেই দলে দলে বাঙালিবাবুদের এই প্রদেশে আগমন, মূলত হোয়াইট কলার জব নিয়ে---শিক্ষকতা, সরকারি চাকুরি, ওকালতি ইত্যাদি। তাঁদের বংশধরগণই আজকের আসামবাসী বাঙালি, যাঁদের জন্মকর্ম আসামেই। অতএব, তাঁরা আসামেরই ভূমিপুত্র হয়ে গেছেন।
কিন্তু সেকালে আগে আগে ইংরিজি শিক্ষা শুরু করার কারণে বাঙালিবাবুরা এগিয়েই ছিলেন চাকুরি-ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে, যেটা ক্রমে আদত আসামবাসীর গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এবং ‘বাঙালি খেদাও’ আন্দোলন জ্বলে ওঠে। এমনকি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথও অসমীয়া ভাষাকে বাংলার উপভাষা বলে মনে করতেন, ও ঠাকুরবাড়ির জামাতা লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়াকে ‘উপভাষা ছেড়ে মূল বাংলায়’ লিখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
*
এরই মধ্যে ধর্মভিত্তিক দেশভাগ (বাংলা ভাগও) হয়ে গেল। এবং এটিই আজকের আসামের বাঙালিদের সমস্যার প্রধান এক কারণ। কারণ সেই পাকিস্তানী আমল থেকেই যেমন যেমন হিন্দু-বিতাড়ন হয়েছে পূর্ববঙ্গে তেমন তেমনই জান-মান বাঁচাতে পালিয়ে আসা হিন্দুবাঙালির ভিড় বেড়েছে আসামে, যেটা সেখানকার জন-শতাংশের পাল্লাটা বেসামাল করে দিয়েছে। এটা না হলে তপোধীরবাবুকে এই বই আজ সম্পাদনা করতে হয় না।
কিন্তু আশ্চর্যের কথা, সেইভাবে ঐ ধর্মভিত্তিক বঙ্গবিভাগকে দায়ী করা হয়নি এই বইয়ের কোনো প্রবন্ধেই, কেবল ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যাওয়া হয়েছে।
সাপ্টা প্রশ্নঃ পূর্ববঙ্গ থেকে আসামে অগণিত বাঙালির আগমন ঘটে চলেছিল কি না? এই অনিয়ন্ত্রিত আগমন অহমিয়া কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও সমাজ-অর্থনীতিকে টলিয়ে দিয়েছে কি না? কাশ্মীরের উদাহরণে আজকের আসামবাসী হিন্দু ভীত হয়ে পড়লে তাঁদের দোষ দেওয়া যায় কি না? এই সকল চাঁচাছোলা প্রশ্ন করেন নি এখানে কেহই, তাই সহজেই জবাবটা এড়িয়ে গিয়ে সংকলনটির মূল আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে পড়েছে আজকের শাসক হিন্দুবাদী পার্টিটিই, যদিও উত্তরপূর্বে এন.আর.সি.-র সিদ্ধান্ত এঁরা আসবার অনেক আগেই নেওয়া হয়েছিল।
**
বাংলাভাষায় কথা বলেন যাঁরা তাঁরাই বাঙালি।
এঁদের সিংহভাগ মুসলমান, অধিকাংশই (৬৫%) বাস করেন আজকের স্বাধীনরাষ্ট্র বাংলাদেশে। তাঁরা কিন্তু তপোধীরবাবুর প্রথমতম বাক্যটির সঙ্গে একমত হবেন না (“১৫ আগস্ট বাঙালিদের জন্যে স্বাধীনতার সঙ্গে দেশভাগের মর্মন্তুদ বার্তাও বয়ে এনেছিল ১৯৪৭ সালে”), বরং তাঁরা মনে করেন যে বঙ্গবিভাগ না হলে পূর্ববঙ্গের উন্নতি অসম্ভব ছিল। পূর্ববঙ্গের ‘কার’ উন্নতি, কোন্ কোন্ মানুষের উন্নতি? সে সব ভুল প্রশ্ন। করা যাবে না। কারণ কেবলমাত্র জনসংখ্যার শতাংশের হিসাবে হিন্দু সেখানে ইতোমধ্যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিল। এবং বহু বহু ক্ষেত্রে বিতাড়িত। এবং আসাম-সমস্যার সূত্রপাত। সূচিপত্রে লক্ষণীয়, শ্রদ্ধেয় ও বরিষ্ঠ সাংবাদিক বাহার উদ্দিন ও মাইনুল হক মহাশয় ছাড়া আর কারোকে পাননি সম্পাদক মহাশয়, লেখক-%শে যাঁরা পঁচিশে দুই, মানে আট শতাংশ।
এর চেয়ে বেশি আসামবাসী মুসলমান কি বাঙালিকে ‘বিপন্ন’ ভাবেন না?!
*
(১) প্রেক্ষাপট, (২) সমবায়ী স্বর, (৩) যখন গিলোটিন নেমে আসছে, (৪) সংবাদ মূলত হননকথা ও (৫) পরিশিষ্ট--এই পাঁচ অধ্যায়ের মধ্যে একান্নখানি সুচিন্তিত, সুলিখিত ও তথ্যনির্ভর প্রবন্ধ পড়তে পাই। যদিও লিখনমান উন্নত হলেও তথ্যে ও সুরে এতই এ-ক কথা বলা যে গোটা পাঁচেক প্রবন্ধের মধ্যেই তা এঁটে যেত। বেসুরো কিছু প্রবন্ধও থাকতে পারত, যেখানে, যেমন, কাশ্মীরী অভিজ্ঞতার কথা তুলে আসামের সঙ্গে তার তুলনামূলক এক বিশ্লেষণ করা যেত, যাতে এন.আর.সি.-র অন্য একটা দৃষ্টিকোণ উঠে আসত। অবিভক্ত আসামের প্রিমিয়ার স্যার সৈয়দ মোহম্মদ সাআদুল্লাহ্ সাহেবের কথা তো কৈ কোত্থাও পেলাম না, আধুনিক আসাম গঠনে যাঁর ভূমিকার উল্লেখ ছাড়া বর্তমান বইটি অসমাপ্ত, মানতে হবে। ছেচল্লিশের ভোটে আসামে মুসলিমলীগের ৩১% ভোটপ্রাপ্তির কথাও বলা দরকার---সেসব ভোটাররা কি পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন? পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা আজকের ধুবড়ির প্রবাদপ্রতিম নেতা বদরুদ্দিন আজমল সাহেবের কী মত আজকে---সেটাও তো শোনা হলো না।
*
(আসামের) বাঙালি বিপন্ন বিপন্ন বলে বিলাপ করলে তো সমাধান হবে না, তার জন্যে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের (কিছুটা) দায়ী করলেও না (পৃ ২৮)।
শিকড় বাড়তে দিয়ে কেবল ডালপালা ছেঁটে কী লাভ, স্যর?
[ # ] এঁদের অনেকের লেখার কথা ৫৩ সংখ্যাতে পড়েছিলাম।
Inside the Talibaghi Jamaat--Ziya Us Salam; HarperCollins Publishers India; First published in 2020; ISBN: 978-93-5357-927-2
অবোধ শিশুকে যেমন মিষ্টি লাড্ডু বা চকোলেটের লোভ দেখিয়ে পড়তে বসানো হয়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে এক ধার্মিক মানুষ তেমনি আশেপাশের গরীব 'মেও' প্রজাতির মুসলমানদের নমাজে বসতে ডাকতেন তাঁর দক্ষিণ দিল্লির মসজিদে, প্রতিদিন দুটি আনা দেবার লোভ দেখিয়ে।
দু আনা, কারণ ঐ গরীবগুর্বো মানুষগুলি সেকালে সারাদিন রাস্তা বানানো বা রাজমিস্ত্রির কাজ করে ঐ পয়সাই উপার্জন করতেন। সালটা ১৮৮০, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস তার পাঁচ বছর পরে প্রতিষ্ঠিত হবে।
*
দক্ষিণ হরিয়ানা/রাজস্থানে বসবাসকারী মেও প্রজাতির মুসলিমদের কিছু বিশেষত্ব আছে।
প্রায় ছয় শত বৎসর আগে থেকে তাঁরা ক্রমে ক্রমে মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত হতে শুরু করলেও আজও হোলি-দীপাবলীর মতো বহু বহু হিন্দু ধর্মাচরণ এঁদের যাপনের অঙ্গ হয়ে রয়েছে। আলোচ্য ঐ ধার্মিক পুরুষ, মৌলানা মুহম্মদ ইস্মাইল নাম তাঁর, তাই এঁদের রীতিমাফিক প্রার্থনা বা নমাজ পড়াতেই জোর দিয়েছিলেন, আর কিছুতে নয়। এবং আজ প্রায় দেড়শ বছর হয়ে গেল, এই গোষ্ঠী প্রার্থনা ছাড়া জাগতিক কোনো বিষয়েই আগ্রহ দেখায় নি।
হ্যাঁ, এই তবলীগি জামাত-ই হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম ধর্মাচরণী গোষ্ঠী, দিল্লি নগরীর নিজামুদ্দিন অঞ্চলে যার প্রধান কার্যালয়। ঐ ইসমাইল সাহেবের প্রপৌত্র সাআদ সাহেবই হচ্ছেন এই গোষ্ঠীর বর্তমান পুরোধা।
*
ঠিক ধরেছেন, সম্প্রতি কোভিড ছড়ানোর অভিযোগে দিল্লির এই গোষ্ঠীর নামই মিডিয়াতে এসেছিল বারবার। এবং বর্তমান কেতাবখানি লিখবার মূল কারণ বা উদ্দেশ্য হলো এই ভুল ধারণার অপনোদন, যাতে লেখক সফল, বিশেষ সফল। দিল্লিনিবাসী প্রবীণ সাংবাদিক জিয়া-উস-সালাম সাহেবের কলাম/ফিচার আমরা দীর্ঘকাল ধরে পড়ে এসেছি ‘দ্য হিন্দু’ কাগজে, প্রধানতঃ তাঁর সাবলীল ভাষার আকর্ষণে, বর্তমান কেতাবটিতেও যার ব্যত্যয় হয়নি। শিশুদের জন্যে লেখা এঁর ‘365 Tales from Islam’ পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বর্তমান বইটির মতো ঋজু ও নৈর্ব্যক্তিক বক্তব্য কম কেতাবেই পড়তে পাওয়া যায়, বিশেষতঃ, আলোচ্য যেখানে এক স্পর্শকাতর বিষয়।
*
পাকিস্তান-প্রস্তাবের বিরোধিতা করা দেওবন্দী সংগঠন ‘জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ্’ (প্র. ১৯১৯; ‘পদ্মভূষণ’ হুসেইন আহমাদ মাদানী), বা সমর্থন করা ‘জামাত-এ-ইসলামী হিন্দ্’ (প্র. ১৯৪৮; প্র. আবুল আলা মৌদাদী)-রা বহুবার বহুভাবে বহুকারণে সংবাদ-শিরোনামে এসেছে, কিন্তু ভারত-তথা-বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামিক প্রতিষ্ঠানটি থেকে গেছে অলক্ষ্যেই। তাঁদের লক্ষ্য যে ঐ ‘ভিতর পানে চাওয়া’---পড়ুন, প্রার্থনা (ইবাদত/নমাজ)। এই সংগঠনটিরই নাম ‘তবলীগি জামাত’ঃ অন্তঃশুদ্ধির জন্য প্রার্থনা, প্রার্থনা ও সমবেত প্রার্থনা ছাড়া যাঁদের আর কিছুতেই বিশ্বাস নেই। ভারতের কোণ কোণ থেকে তো বটেই, বিশ্বের বহু বহু দেশ থেকে এঁদের দরিদ্র সদস্যরা নিজ ব্যয়ে আসেন বছরে একবার দিল্লির প্রধান সংগঠনে---‘মার্কাজ’! কী তাঁদের সেই শক্তি, সেই আকর্ষণ? বড় অনায়াসে লিখেছেন জিয়া সাহেব সে কথা। আবার ওঁদের ‘কূপমণ্ডুকতা’, প্রযুক্তি-বিরোধিতার সমালোচনা করতেও ছাড়েন নি। সব মিলিয়ে বইটি তাই ধর্মপ্রচারের প্যামফ্লেট হয়নি, হয়েছে এক মনোজ্ঞ পাঠ।
*
এপ্রিলে কোভিড সংক্রমণের গ্রাফ উর্ধ্বমুখী ছিল যখন তখন অবশ্যই তবলীগি সদস্যগণ স্বেছায় সেটা ছড়ান নি---যেটা কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠির অপপ্রচারের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। বড় অনায়াসে বর্ণনা দিয়েছেন তার লেখক। এছাড়াও চব্বিশটি অধ্যায়ব্যেপে অন্তর্মুখী এই ধর্মান্দোলনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করেছেন তিনি অতি সাবলীল ভাষায়---বড় সুখপাঠ তা।
*
শেষে ‘শব্দার্থপাঠ’-এর অণু-অধ্যায় রয়েছে এক, যেখানে ‘জামাত’ (society/association/council), ‘সালাহ্’ (prayer, নমাজ), ‘জাকাত’ (দান), ‘উলেমা’ (Islamic scholars) প্রভৃতি অনেকানেক পরিচিত/অর্ধপরিচিত আরবী/ফারসী শব্দার্থ বলে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক গবেষণালব্ধ পুস্তক এ’খানি। বহু বহু কেতাব ও ওয়েবসাইট ঘেঁটে প্রস্তুত---দীর্ঘ লিস্টি রয়েছে তাহারও, অত্যুৎসাহী পাঠকের জন্যে।
সব মিলিয়ে এক যুগোপযোগী ও প্রয়োজনীয় কেতাবের প্রিয়পাঠের রেশ বহু সময় ধরে মনের মধ্যে রয়ে যায় পাঠশেষে।
এইটেই প্রাপ্তি!