• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮০ | অক্টোবর ২০২০ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : সুগত মুখোপাধ্যায়


    হত্যাকাণ্ড

    বিষয়টি বড়ো স্পর্শকাতর
    তাই আপাতত পর্দা যেমন
    ঝোলানো তেমনই; স্পর্শে কাতর
    তাঁরা ইদানিং মসনদে কিনা।

    তথ্য যেভাবে বাক্সে বন্দি,
    তেমনই থাকুক আমাদের পেটে;
    দোহাই দাদারা, আসুন এবার
    আমরা ছাপোষা কিছুতে থাকি না।

    ইতিহাসে দাগ রাখবে ভেবে কি
    জড়িয়ে এমন পড়েছিল ওরা,
    হঠকারিতায় বিপজ্জনক
    নিরীহ চেহারা ক'টি ছেলেপুলে?

    ছিল না সঙ্গে কোনো পাকামাথা,
    উচ্ছন্নের পথ দেখানোর?
    জিগেস করতে অমনি বলেছি,
    সে কি আজকের, গেছি সব ভুলে।

    বৃদ্ধের হাতে কী আর থাকবে?
    কিচ্ছু ছিল না, তবুও ওদের
    হাত কাঁপল না, গলগল করে
    রক্তে রক্তে মাটি লালে লাল।

    এতদিন হলো তবুও এখনো
    ভাবলেই আজো বুকের মধ্যে
    ছলাৎ ছলাৎ নদী পাড় ভাঙে;
    পরে যতকিছু, সবই তো কপাল!


    অন্নপ্রাশন

    বংশতিলক ভাত খেল আজ।
    তাই সারাদিন উৎসবগৃহে
    উথলে পড়েছে অতিথির ভিড়।
    আলাপে আমোদে জমেছিল বটে!
    লাগেনি কি তাতে বিসদৃশের
    দু'চার বিন্দু? -- তবে সে তুচ্ছ,
    কোথায় না হয়? তারিফই করেছে
    অভ্যাগতেরা, তাম্বুল মুখে।

    রঙিন বেলুন ফেটে রামধনু
    সলমা চুমকি ফোয়ারার মতো
    যেই না ঝরেছে সে কী করতালি!
    নকল ফুলের চোখটানা শোভা;
    বেজে যাচ্ছিল জলতরঙ্গে
    দ্রুতলয়ে সুর, সে বড়ো মধুর!
    দেওয়ালের জমি ভরে গিয়েছিল
    আদুরে ছবির বাঘভাল্লুকে।

    পূর্ণিমা কিনা আজকে আবার,--
    চকচকে থালা চাঁদ উঠেছিল।
    জোছনার দুধ ছড়িয়ে ছিটিয়ে
    পুকুরের জলে, সে এক কাণ্ড!
    দিঘির পাড়ে যে বাড়ি একতলা,
    কীভাবে ফিরেছে এতদিন বাদে?
    অর্ধশতক হয়ে গেল তার,--
    দাঁড়িয়ে সে নেই কারুর জন্য।

    পুকুরই বা কই? কবেই বুজিয়ে
    চওড়া রাস্তা, তবু আজ রাতে
    কিসের তাগিদে সেপিয়া ছবিটি
    ফের জীবন্ত? লম্বা উঠোনে
    সার বেঁধে পিঁড়ি, ভাত বেড়ে রাখা
    কলাপাতা ক'টি, এসে পড়বেন
    মরে ঝরে যাওয়া পূর্বপুরুষ,--
    তাঁদেরও যে আজ নেমন্তন্ন।


    উনিশশো সাতচল্লিশ

    কবে এসেছিল ষাঁড়াষাঁড়ি বান?
    ভাবতে ভাবতে তিনি আনমনা,
    পুরু চশমাতে প্রবীণ চোখের
    মণিতে ঈষৎ আলো আর ছায়া।
    এখনো রয়েছে জখমের দাগ
    জলের কামড়ে ভাঙা তটরেখা;
    ভেসে গিয়েছিল মাটির কেল্লা,
    আজকে দাঁড়িয়ে অধরা সে মায়া।

    আঙুল তুলে দেখালেন তিনি,
    জানো ওইখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম,
    ওই চবুতরা; পিঙ্গল জলে
    গমগমে গলা পাতালের গান।
    ওই দিকে ছিল কালভৈরব
    দেউলের ধাঁচা, তা'ও গিলে খেল
    উন্মাদ নদী। দশ দিগন্ত
    তখন সে সব সমান সমান।

    কিছু ধ্বংসের দাগ ছেড়েছুড়ে
    জল নেমে গেছে, স্মৃতির মুকুরে
    সেপিয়া ছবির খণ্ডাবশেষ;
    মনে করি তাকে বছর বছর।
    আমরা কেউ সে প্লাবন দেখিনি,
    বৃদ্ধ ক'জন বলতে পারেন,
    ঢেকে গিয়েছিল এলোকুন্তলে
    অন্তরীক্ষছোঁয়া চরাচর।




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments