• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৮ | এপ্রিল ২০২০ | ছোটদের পরবাস | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • আমার বকখালি বেড়ানো : অদ্রিজা চক্রবর্তী

    পুজোর ছুটিতে আমার প্রথম সমুদ্র দেখতে যাওয়া। ভোরবেলা হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার নাক এঁটে গেছিল। আমি বাবা-মাকে ডাকলাম। কেউ ঘুম থেকে উঠল না। আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এর মধ্যে মা কখন উঠে দাঁত মাজা, চা খাওয়া, স্নান করা সেরে নিয়েছে আমি টের পাইনি। হঠাৎ মায়ের ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠেই আমি ব্রাশ করে নিলাম। তারপর বাবার সঙ্গে চা-বিস্কুট খেয়ে নিলাম। চান করে জামাকাপড় পরে রেডি হয়ে উঠোনে চলে গেলাম। একটু পরেই ফটকেকাকু ডাক দিল।

    ফটকেকাকুর গাড়িতে চড়ে আমরা বকখালির জন্য রওনা দিলাম। গাড়িতে আমরা মোট ৬জন ছিলাম। আমি, মা, বাবা, ফটকেকাকু, কাকিমা আর ভাই, মানে ফটকেকাকুর ছেলে। তারপরে আমরা আস্তে আস্তে কুলপি রোডে এলাম। কুলপি রোডে নেমে একটা দোকান থেকে কিছু চিপস্‌ আর কোল্ড ড্রিংকস্‌ কিনে আবার যেতে শুরু করলাম। আরো বেশ কিছুক্ষণ যাবার পর আমরা হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর ওপর যে নতুন ব্রীজ হয়েছে সেখানে এসে পৌঁছলাম। ব্রীজের ওপর নেমে আমরা কিছু ছবি তুললাম। ব্রীজের ওপর থেকে নদীতে অনেক বড়ো বড়ো মাছ ধরার ট্রলার দেখলাম।

    আরো খানিকক্ষণ যাবার পর আমরা বকখালি পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে গাড়িটা পার্ক করে রেখে দিলাম। বাড়ির এত কাছেই যে সমুদ্র, তা আমি জানতামই না! প্রথম সমুদ্র দেখব বলে মনে মনে আমার খুব আনন্দ হচ্ছিল। সমুদ্রের বীচে ছুটে গিয়ে দেখি কী গরম! বীচের ধারের একটা দোকান থেকে ফটকেকাকু, বাবা, মা আর কাকিমা ডিম-পাঁউরুটি, চা-বিস্কুট খেয়ে একটু ঘোরাঘুরি করলুম। কিন্তু সেখানে খুব গরম ছিল বলে হাঁটতে হাঁটতে কাছেই একটা পার্কে গেলাম। সেখানে আমি আর ভাই অনেকক্ষণ ধরে দোলা চড়লাম। পার্কের মধ্যেই একটা চিড়িয়াখানা! সেখানে লাল কাঁকড়া, কুমির, হরিণ আর বাঁদর দেখলুম। সেখানে আমরা বেশ কিছুক্ষণ থাকলাম।

    অনেকক্ষণ বসে থাকার পর আমাদের খুব খিদে পেয়ে গেল। ওখানে কাছাকাছি অনেকগুলো হোটেল ছিল। হোটেলের লোকগুলো তাদের দোকানে খাবার জন্যে আমাদের ডাকছিল। তার মধ্যে একটা ভালো হোটেলে গিয়ে ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ, চিংড়ি খেয়ে আবার সেই পার্কটাতে গিয়ে বসলাম।

    রোদ কমে যাবার পর আমরা সমুদ্রের বীচে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম অনেক রকমের দোকান বসেছে। আমি একটা দোকান থেকে বড়ো রবারের বল কিনলাম। আমি আর ভাই বলটা নিয়ে বীচে খানিকক্ষণ খেললাম। সমুদ্রের জলের সঙ্গে খেলতে খেলতে দু-চারবার এমন ঢেউ দিল যে দেখে আমার মন আনন্দে ভরে গেল। কিন্তু একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম যখন আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম ঢেউটা চলে যাবার পর ফুর ফুর করে বালিটা পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছিল! তাতে খুব মজা লাগছিল। বীচের ভিজে বালি নিয়ে আমি আর ভাই খেলছিলাম। আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হয়ে এল। সন্ধের সময় একটা অসাধারণ জিনিস দেখলাম। আকাশটা পুরোপুরি হালকা লাল হয়ে আসল। তা দেখে আমার খুব ভালো লাগল। এরকম আমি আগে কখনো দেখিনি।

    বীচে একটা আইসক্রিমের দোকান বসেছিল। সেখানে আমরা আমাদের পছন্দের আইসক্রিম খেয়ে ফটকেকাকুর গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বিষ্ণুপুরের কাছাকাছি এসে আমি একটু বমি করলাম। এইভাবে কষ্ট করে বাড়ি ফিরে এসেই চিৎপটাং।


    অদ্রিজা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বহড়ুতে থাকে। ক্লাস থ্রি-তে পড়ে। গান করতে, আঁকতে আর বেড়াতে ভালোবাসে।




    অলংকরণ (Artwork) : ছবি : রাজীব চক্রবর্তী
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments