এইস্থানে দুই নারী নিরন্তর তাহাদের পরিত্রাতা ঈশ্বরের স্তবে
মন্ত্রমুগ্ধ; তাহাদের সহোদরা, তাহাদের বান্ধবী বা কেহ
এ মুহূর্তে অচেতন, এ মুহূর্তে শল্য চিকিৎসায় আরোগ্য খুঁজিয়া ফিরে
তাহাদের কোন প্রিয়জন।
পরিব্যাপ্ত উৎকণ্ঠা ও কৃষ্ণ প্রতিচ্ছায়া — বেদনার, তথাপি এখানে
দুই নারী খুঁজিতেছে মাঙ্গলিক নিরাপত্তা
তাহাদের পরিচিত ঈশ্বর সকাশে।
আমি এই মুখদুটি দেখিয়াছি; ধর্মীয় প্রলেপে
প্রশান্ত নির্মোকসম স্মিতহাস্য ফুটিয়াছে
উদ্বেলিত এদুটি অধরে।
বিশ্বাসে মিলয়ে শান্তি, তথাপি আমার এই ধর্মহীন অবিশ্বাসী মনে
যুক্তির তাড়না নিয়া অনিকেত আমি আজ
কলিকাতা নামধারী বিষণ্ণ শহরে।
আমার তসবি নাই, ওষ্ঠে বিদ্রূপ আছে ভরে
জপের মালাটি আমি ফেলিয়া দিয়াছি হেলাভরে
উপবীত ভস্মীভূত, আমি এই সন্ত্রস্ত প্রহরে
একাকী অস্তিত্ব এক, নির্বিকল্প যন্ত্রণার স্তরে।
প্রতিদিন যারা সুস্থ হয়
তাহারা আসিছে ফিরে অবিশ্বাসী আমার আকাশে।
বিচ্ছিন্ন প্রত্যঙ্গগুলি নক্ষত্র হইয়া ফুটে অন্তরীক্ষে ভাসে,
প্রতিদিন যারা এইস্থানে
ব্যাধিলিপ্ত শরীরের অঙ্গ কিংবা প্রত্যঙ্গ বিশেষ
সানন্দে করিছে দান
সার্জারি টেবিলে
তাহারা সঙ্গীত গাহে, তাহারা সকলে
বিশুদ্ধ বাতাস বাহি কেবলই উড়িয়া আসে
আমার আকাশে।
যে যুবা চলিয়া গেছে গতরাত্রে, মাল্টিপল অর্গান ফেলিয়রে
সেও তো সহাস্যে আসে, হাত নাড়ে
একরাশ আলো অন্ধকারে।
এইসব মগ্ন ঐকতানে
পর্দা উঠে, আমি দেখি কোন এক জাদুকরী স্টেজে
শশব্যস্ত চলাফেরা:
রোগীর স্ট্রেচারবাহী আর্দালি ও চিকিৎসক, তৎসঙ্গে সেবিকা সকল,
অবসাদ, কটুগন্ধ, মৃতকল্প মানুষের ভিড়
দুইচোখে মৃত্যুভয় — অসুস্থ ও ব্যথিত ঈশ্বর;
অবিচল দুই নারী তবু স্থির স্থাবর বিশ্বাসে।
এসব ঘটিতে থাকে কলিকাতা শহরের
নিবিড় রহস্যে ভরা ম্যাজিকাল এক এডিফিসে
শহর ভরিয়া উঠে এইসব দিবাস্বপ্ন স্রোতে
যেথায় সানন্দে আমি শুধুমাত্র আরোগ্য খুঁজেছি।