কাস্তে; অনিতা অগ্নিহোত্রী; প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি, ২০১৯; দে'জ পাবলিশিং - কলকাতা; পৃষ্ঠাঃ ১৯০; ISBN: 978-93-88351-64-5
‘কাস্তে’ কথাটির অভিধানগত মানে—‘ধান্যচ্ছেদনার্থ চন্দ্রকলাকৃতি’ অস্ত্র বিশেষ। ফার্সি কাশ্ত্কার অর্থ চাষী, হিন্দুর উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হত। কাস্তগির অর্থ চাষী। শূন্যপুরাণে, বঙ্গসাহিত্য পরিচয় (ক.বি.) প্রভৃতি বইতে এ শব্দের ব্যবহার আছে।
কৃষিভিত্তিক দেশ বলেই বহু গীতিকার/ কবি তাঁদের রচনায় ‘কাস্তে’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। যেমন—
১) জন্মে তাদের কৃষাণ শুনি কাস্তে বানায় ইস্পাতে (বিষ্ণু দে)
২) তোমার কাস্তেটারে দিও জোরে শান/ কিষাণ ভাই রে, (হেমাঙ্গ বিশ্বাস)
চল্লিশের বাঙালী কবি দিনেশ দাশ লিখেছিলেন ‘এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে’ সেটা চাঁদের শতক নয় অর্থাৎ ভাবোচ্ছাসে ভেসে যাওয়ার প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয়। তরুণ দিনেশের এই পংক্তি বিখ্যাত হয়ে যায় এবং সিনিয়র বিষ্ণু দে ও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তা ব্যবহার করেন। কিন্তু এদের ব্যবহার খ্যাতি পায় নি।
মহাশ্বেতা তাঁর কথাসাহিত্যে শোষক নিধনে কাস্তের কথা বলেছেন একাধিকবার। অনিতা সে পথে যান নি। কাস্তে এ উপন্যাসে দৃশ্যগ্রাহ্য। ব্যূহপ্রবেশ ও ব্যূহ ছিন্ন করার কথা তাঁর কথাসাহিত্যে বারংবার। পুরাণ কথা ও সাম্প্রতিক কথা, কৃষ্ণ ও কংস কথা ঢেউ তুলেছে সাম্প্রতিক ঘটনার ঘোলাজলে।
এক একজন চিত্র পরিচালকের সৃষ্ট কয়েকটি ফিল্ম পরপর দেখলে সেই চিত্র পরিচালক—তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, গ্রহণ-বর্জনের ভঙ্গি, উপস্থাপনার ধরন, এডিটিং, শব্দ ও সঙ্গীতের ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে দ্রষ্টার মনে কিছু ধারণা গড়ে উঠতে থাকে। ঠিক তেমনি একজন কথাসাহিত্যিকের সৃষ্ট কয়েকটি উপন্যাস ও গল্প পরপর পড়লে সেই কথাসাহিত্যিক—তাঁর উপস্থাপনার ধরন, বিষয়বস্তু নির্বাচন, গ্রহণ ও বর্জনের ধরন, শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে পাঠকের মনে একটা ধারণার ক্যানভাস গড়ে উঠতে থাকে। পাঠক তখন তাঁর নিজ অর্জনদক্ষতা, জীবনদৃষ্টি ইত্যাদি দিয়ে পঠিত লেখকের পরিমাপ করতে অগ্রসর হতে পারেন। এক্ষেত্রে উদ্দিষ্ট লেখকের সমকাল ও সমকালীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি অনিতা অগ্নিহোত্রীর ‘কাস্তে’ উপন্যাসটি পাঠ প্রসঙ্গে এই সংক্ষিপ্ত গৌরচন্দ্রিকা করছি। তাঁর পূর্বে লেখা কয়েকটি উপন্যাস পড়েছি, বেশ কিছু ছোটগল্প পড়ারও সুযোগ ঘটেছে। সেই পাঠের অভিঘাতে উক্ত লেখক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা গড়ে উঠেছে। অবশ্য এই উপন্যাসটিকে কেন্দ্র করেই দু চার কথা বলতে চাই।
উপন্যাসটির ‘দৃশ্যপট’ অংশে লেখিকা বলেছেন—এখানে আছে মারাঠওয়াড়া ও বিদর্ভের দুটি আখ্যান। এ দুটির মুখ্য চরিত্র যারা তারা কৃষক। খরা, বিপুল জলকষ্ট, ভয়ঙ্কর জীবনযাপন, ব্যাপ্ত শোষণ, নিরুপায় মানুষের আত্মহত্যা এবং সরকারী ঔদাসীন্য—এই হল পটভূমি। এর সঙ্গে যুক্ত—কন্যাসন্তান হত্যা ভ্রুণাবস্থায়, খরা টিঁকিয়ে রাখা ও জলের ব্যবসা, চিনিকল ও রাজনীতির গাঁটছড়া ইত্যাদি। এ সবই গত ২/৩ দশকের কথা। বহুকাল আগে দেবেশ রায় লিখেছিলেন মানুষ আত্মহত্যা করে কেন? মানুষ, বলাবাহুল্য কৃষক। ‘কাস্তে’ এবং ‘ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো’ এই দুটি আখ্যানকে ঔপন্যাসিক যুক্ত করে দেন ভারতীয় কৃষকদের সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক লং মার্চের সঙ্গে। এ ভাবেই গড়ে ওঠে এই বিচিত্র উপন্যাস। প্রথম আখ্যানে দয়া যোশী এবং দ্বিতীয় আখ্যানে রঞ্জন প্রতিরোধে নামে, মুষ্টিমেয় সহযোগী পায় এবং প্রতিরোধের কারণেই তাদের জীবনে নেমে আসে করাল পরিজন। এভাবেই লেখিকা উন্মোচন করতে চান—‘সোনার কফনে ঢাকা সত্যের মুখ’।
প্রথম আখ্যানের শিরোনাম—কাস্তে। এর আটটি অংশ—খরা, বনভূমি, টোলির মাঠে সন্ধে, ফেলে আসা গ্রাম, কতদূর আর কতদূর, ক্লান্তি আমার, মৃত্যু উপত্যকা, দুর্গা। এই অষ্ট অংশ সমন্বিত কাহিনীর সূত্রপাতেই পাই যুবতী, সন্তানবতী তের্না-কে। সে ছ' বছর ধরে স্বামী ও ছেলেপুলে নিয়ে আসছে আখ কাটাই-এর টোলিতে মারাঠওয়াড়ার লাতুর জেলা থেকে। তাদের বিশ্রামের কোনও ধরাবাঁধা সময় নেই। বিশ্রামে পোশাক সম্পর্কে সতর্কতার অভাবে একবার সে দাদন দেওয়া দালাল (মুকাদম) দ্বারা ধর্ষিত হয়। ২য় বাচ্চাটা একবছর হতেই তাকে জেলা ক্লিনিকে গিয়ে বাচ্চাদানি ফেলে আসতে হয়েছে। তারা আট মাস থাকে এই টোলিতে। এদের মধ্যে ‘কাস্তে’ বা কইতা কথাটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। লেখিকা বলে দেন—স্বামী স্ত্রী মিলে এক ‘কইতা’ বা কাস্তে। বাঙালী আমরা কাস্তে বলতে যা বুঝি তা নয় এটি। কইতা বা আখ কাটাই-এর অস্ত্রটি ‘কাস্তের মতন পিঠ বাঁকানো নয়, বরং চ্যাপটা ও সোজা’। দাদনের হিসেব হয় এক পরিবারে কত ‘কইতা’ তার হিসেব করে। দ্বিতীয়ত: বাঙালী কবি দিনেশ দাস ‘এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে’ বলতে শোষণ সচেতন কৃষক আন্দোলন যা ঘটেছিল চল্লিশের দশকে তার প্রতীক প্রতিরোধ অর্থে ব্যবহার করেছেন। এই অস্ত্র মহাজন বা জমিদার সংহারেও ব্যবহৃত হয়েছে সে সময় ও পরে। আলোচ্য আখ্যানে এই ব্যবহার অবশ্য নেই। সে যাই হোক, আখ কাটিয়ে মহারাষ্ট্রী মজুরদের মধ্যে তার ব্যবহার-অর্থ ভিন্ন—‘মানুষ এখানে কাস্তে। তাদের নাম নেই, সংখ্যা আছে। পরিবার পিছু কাস্তের হিসেব। স্বামী-স্ত্রী মিলে এক। সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান বা দেবর থাকলে তাদেরও ধরা হবে কাস্তের হিসেবে।’ (পৃ. ২২) আগাম নেওয়া টাকা শোধ হবে উপযুক্ত পরিমাণে আখ কেটে ও বোঝাই করে। এ-ভাবেই কাস্তের মুক্তি। মারাঠাওয়াড়ার বিচিত্র ভৌগোলিক অবস্থান। জল নেই। অন্য দিকে ঠিকেদারেরা সরকারি টাকা টেনে নিয়ে বড় বাঁধে নিমজ্জিত করে। একটা চক্র কাজ করে। আখকাটিয়ে মজুরদের শ্রমে বিরতি বলে নির্দিষ্ট সময় নেই। অন্যদিকে টোলিতে জলের কল মাত্র একখানা। এরা বন্জরি, নিজেদের হিন্দু বলে মনে করে। বিজয়া দশমীতে বিশাল মেলা, ভগবান বাবা, ভীমসিংহ বাবা এদের ধর্মগুরু। এদের দুর্দশায় উদাসীন শহুরে সংস্কৃতিবানরা। এবার আর এক সমস্যা—কন্যাভ্রূণ পরীক্ষা। তের্ণা এক উপনদীর নাম, কিন্তু ভাগ্যের ফেরে শ্বশুরবাড়ির দেশ—খরাপ্রবণ, আর নিজেও হয়ে গেল বন্ধ্যা অর্থাৎ খরার্ত। জানা যাচ্ছে সত্তরের দশক থেকে আখ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই রাজ্যের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। (পৃ. ২৭) চিনিকলের মালিকরা বসাল দেশী মদের ভাঁটি। ঝুপড়িতে রান্না একবেলা আর হেঁশেলে মাছ মাংস ঢোকে না। তের্ণার ছোট মেয়েটা একদিন জলে ভেসে গিয়েছিল, ডালপালায় আটকে যাওয়ায় উদ্ধার হয়। খরাপীড়িত এলাকায় ট্রেনে পাঁচলাখ লিটার জল যায়—কয়েক কোটি টাকার খেলা—শুকিয়ে যেতে থাকা লাতুরের এ আর এক ব্যবসা। তের্ণার মধ্যেও একটা আস্ত ভরা নদী ছিল ছোটবেলায়, সে নদী শোষকদের চক্রান্তে বাষ্প হয়ে গেল। (পৃ. ৩৪)।
এর পর আখ্যানে আসছে একটি চরিত্র—দয়া যোশী, যে স্বাধীনতা কল্পনা ও স্পৃহার ভিতরে অবগাহন করতে করতে বড় হয়েছে, শিবাজি প্রভৃতি বীরদের সংগ্রামের গল্প পড়েছে। সে হয়ে উঠল লড়াকু যুবতী। সাতারা কোর্টে প্র্যাকটিস করে। ভৌগোলিক পর্বতাদি, শহর, দুর্গ, বাড়ির অভ্যন্তর, মধ্যবয়সিনী কাজের সহায় প্রমীলা। দয়া ও তার স্বামী অভিজিৎ রাত জেগে কাজ করে, মেয়ে অরণ্যা সাত সকালে কয়েক মাইল দৌড়য়। ড্রাইভার বলবীর আসার আগেই মেয়ে দৌড়য়। দীপক কাছেই থাকে, অরণ্যার প্রেমিক। একটা লোক দেখা করতে এসেছে দয়ার কাছে। ছোট শহরের একমাত্র মহিলা আইনজীবি দয়ার কাছে সে নিবেদন করে ইদানীং আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে লিঙ্গ বলে দেওয়া হচ্ছে ভ্রূণের। যশোবন্ত লোকটি এর প্রতিকারার্থে দয়ার কাছে সাহায্য চায়। মেয়ে অরণ্যা অটোরিকশায় কোর্টে চলে গেছিল, দয়া ও দীপক পৌঁছল কোর্টে। সেশন কোর্টের চার নম্বর হলে একটা বোমা ফেটেছে, অরণ্যা বেঁচে গেছে একটুর জন্য। ক্ষতিপূরণের চেষ্টায় যশোবন্তের অনুরোধে ওই বেআইনি লিঙ্গ নির্ধারণের কাজে দয়া চক্রব্যূহে ঢুকে যায়, প্রতিবিধানের গরজে।
পরের অধ্যায়ে আখ মজুর নকোশী, বাবলা গাছের ছায়ায় পাঁচ ছয়জন। বউ দুটো অ্যালুমিনিয়ামের ক্যানে এনেছে বাজরার ভাক্রি, দুধের ক্যানে ঘোল। অনেক মেয়ের শেষজন বলে—নকোশী, তার বর সাগর তাকে মীনু বলে ডাকে। দয়া তাই এদের গ্রামে বহুবার কাজ করতে এসেছে। যশোবন্ত-সূত্রে দয়া জেনে নেয় বেআইনি ক্লিনিকগুলো। গল্প চলছে বীড গাঁয়ে। বৌয়ের মেয়ে হলে শ্বশুরবাড়ির লোক বলে—এক কইতা কমি। চাই পুরুষ সন্তানের জন্ম দেওয়া, তবে কাস্তেতে শামিল হতে পারবে। আখ-মজুরদের শর্করা কারখানার মালিক শ্রীরাম পাটিল যার টাকা আর কবজির জোর এম এল এর থেকেও বেশি। আর আছে দাদনদার মুকাদম্রা, পুলিশের চেয়েও ক্ষমতা বেশী রাখে তারা। মালিক মেসিন বসালে মজুরদের কাজ মেসিন করে দেয় অনেক আগে। দেশান্তরী মজুররা আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। সহ্যাদ্রি পর্বতশ্রেণীর মাথায় অপরাহ্নের লাল সূর্য। মেয়েরা অল্প জলে বাসন ধুচ্ছে। দূরে ট্রাক্টর আসা যাওয়ার শব্দ। ফাঁকা খেতে আগুন, দেখে ভয় হয় মীনুর।
ফোকাস এবার গ্রামে। দাদনের টাকা নিয়েও অনেকে কাজে আসেনি। মুকাদমদের মুখ পুড়েছে। মজুরদের তো কোনো বাঁধাধরা ঘন্টা নেই। বৃষ্টিহীন দিন, প্রবল রৌদ্র, মানুষ মুখ থুবড়ে পড়ে। নিজেদের রোদ্দুরে পোড়া জমি ফেলে টোলিতে যায়। সাত-আট মাসের ক্ষীণজীবী ঘরকরণা, মুকাদমরা ট্রাকে তুলে আনে মজুরদের। শৌচাগার নেই। মেয়েদের স্নানের জায়গা নেই, পানীয় জলের অভাবে তারা বর্জ্য আখের ‘মড়ি’ পান করে আর গলা জ্বলে যায়। খেতের মধ্যে দু-খেপ যাওয়ার ফাঁকে মেয়েরা মোটা মোটা বাজরা বা জোয়ারের রুটি বানায়। ফেরার পালাও ট্রাকে, মিনিট্রাকে। গ্রামে পড়ে ছিল অশক্ত বুড়োবুড়ি, কিছু কিশোরী। স্কুল চলে দু-চারজনকে নিয়ে। ঘর রং চটা, পলেস্তারা খসা, পথঘাট পরিষ্কার নয়, ধুলো প্রচণ্ড, তাছাড়া প্লাস্টিকের ঠোঙা, ফসলের খোসা। নকোশীর মনে হল ‘থম মেরে গুঁড়িমারা জন্তুর মতন বসে আছে তাদের গ্রামটা। জন্তুরই মতন বোঁটকা দুর্গন্ধ তার সারা গায়ে।’ পুরুষগুলো যেখানে সেখানে থুতু ফেলছে, ধুলোর ওপর কফ থুতু পেচ্ছাপ বাহ্য। পায়খানা বানাবার টাকা এসেছে কিন্তু টাকা লোপাট। দয়া তাই এলে আবার একটা গণ্ডগোল বাধবে। দয়া তাই ওদের বোঝায়। দয়া তাই নাটক করে, গান দিয়ে অবস্থা বোঝায়। ময়লা পরিষ্কারের কথা বলে। মোটর আর পাইপ লাইন বসিয়ে দিয়েছিল দয়া লাখখানেক টাকা খরচ করে। কলের মাথা কেউ ভেঙে নিয়েছে, মোটর থেকে পাইপের জোড় খুলে নিয়েছে, আর নেশাড়ুরা নেশা করেছে। দয়া ধমকায়, মেয়েদের অবস্থা বোঝায়। কিন্তু অবুঝ পুরুষ চায় জুয়া, মদ, রুটি, ডাল গরম না পেলে বেধড়ক মার। আর বৌ-এর জরায়ু খসিয়ে নেওয়া, পেটে বাচ্চা এলে ‘জাঁচ’ করতে ক্লিনিকে যাওয়া, মেয়ে সন্তান এলে জন্মের আগেই তাকে নিকেশের ব্যবস্থা করা। মানুষ মেয়েদের দুর্গতির কথা ভাবে না। শাসক কর্তৃক চোখে ভাসানো হয় রাস্তা, ব্রিজ, ঝকঝকে উন্নয়ন। ভরাট গলায় মাইকে এসব বলেন দয়া। গত পনের বছর ধরে তিনশো মাইল আর ছ ঘন্টার রাস্তা পেরিয়ে এ কাজ করেন তিনি। দুশোর ওপর বেআইনি মদ ভাঁটি বন্ধ করিয়েছেন মেয়েদের নিয়ে একজোট করিয়ে, পুলিশ ও এক্সাইজকে ডেকে। লম্বা চিঠি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। মেয়েদের স্কুলে স্কুলে ঘুরেছেন, বিয়ের অনুষ্ঠানে সঙ্গী সাথী সাংবাদিক বন্ধুদের নিয়ে হাজির থেকেছেন। কচি মেয়ের সঙ্গে দোজবরে চল্লিশের পুরুষের বিয়ে রুখতে গেছেন। স্কুলে গিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা। তারা বলেন আমাদের কোনো হাত নেই। দয়া অবাক হতেন নব্বই শতাংশ বিয়েই বালবিবাহ, অবাক লাগে কার্ডে অতিথি হিসেবে এলাকার এম. এল. এ বা এম. পি. র নাম ছাপা। কৌশল বদলে তিনি স্কুলে, পঞ্চায়েতে বলতে লাগলেন বাল-বিবাহ আইনবিরুদ্ধ। যেসব এম. এল. এ বা এম. পি হাজির তাদের সামনের বার ভোট দিও না। এদের নামের লিস্ট বার করা হল। এক ফিল্মের দল ছবিতে এসব বোঝাল, দিল্লীর জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে তা পুরস্কার পেল। অভিনয় করা হল। বালিকা বিবাহ বন্ধের সঙ্গে মেয়ে-ভ্রূণ হত্যা বন্ধের গোপন সতর্ক অভিযান চলতে লাগল।
লেখিকা দেখিয়েছেন মারাঠওয়াড়া কিভাবে মৌসুমী বায়ুর দাক্ষিণ্যবঞ্চিত। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বেরিয়েছেন দয়া, দীপক আর সাংবাদিক-অভিনেতা সঞ্জয়। যেহেতু দীর্ঘ পথ পরিক্রমা তাই দীপক গাড়ি চালানোর ফাঁকে স্বল্পাহারী। দয়া ও সাংবাদিকের নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে দীপক। তারা এসে পৌছল শিরুর কাসার বাজারে, সাড়ে তিনশো কিলোমিটার পার হয়ে। এর ধারে-কাছে ষাটখানা গ্রাম থেকে মেয়ে বউদের নিয়ে দল গড়েছেন দয়া। কাজ—বাল্যবিবাহ বন্ধ, মদের ভাঁটি বন্ধ, আইনি সাক্ষরতা ছড়িয়ে দেওয়া। চা-দোকানী যশোবন্ত আকারে ইঙ্গিতে খবর নেয় ও দেয়। লেখিকার ভাষায় এ এক চক্রব্যূহ—যাতে ঢুকতে হলে একটা সুড়ঙ্গ দরকার। মেয়ের জন্ম এতো কম কেন? যশোবন্ত তার চা-হোটেল মারফৎ নানান খদ্দের-সূত্রে খবর দেয়। অনেক পলিক্লিনিক, মাল্টি ক্লিনিক, মাতৃভবন, যেখানে চলছে বেআইনি ভ্রূণ নির্ণয়, ভ্রূণ নিষ্কাশন, ছুরি শানিয়ে বসে আছে প্রসূতি চিকিৎসকেরা। আসছে নতুন নতুন ডাক্তার, গড়ে উঠছে নতুন নতুন ক্লিনিক। দয়ার পরিচিত গ্রামের মেয়েরা জানে পরিবারে মেয়েদের হাজার কাজ, কিন্তু তাদের নয়, পুরুষকর্তা ও তার ছেলেদের জন্য সব খাবার। তাই জন্মদাতা বাপ মা ঝুটঝামেলা চায় না। মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়। তাছাড়া বিয়েতে ম্যাট্রিক ফেল ছেলেও চায় বিস্তর পণ, যার বিস্তৃত বিবরণ আছে (পৃ. ৭২), না দিলে মেয়ে পোড়াও। সুতরাং মেয়ে জন্ম না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। লেখিকার ভাষায়-- ‘কারখানায় যেমন কনভেয়র বেল্টে পটাপট ব্যাগ সেলাই হয়, সেইরকম নি:শব্দ নিখুঁত প্রণালীতে চলে মারণ যজ্ঞ।’ (পৃ.৭৩) অন্যদিকে নগর সভ্যতা ও তার ঐশ্বর্যের নানা ছলাকলা। শিরুর কাসার সদরেই ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস করেছেন দয়া। যশোবন্ত গোপনে যোগায় হাসপাতালে প্রসূতি ভর্তির খবর। নিকট বন্ধু, সতীর্থদের কেউ কেউ জড়িয়ে নিয়েছে নিজেদের দয়ার কাজে। অফিসার ও পুলিস কর্তাদের কাছে দয়া ‘অনেকটা অ্যানচারটার্ড মিসাইল’-এর মতন, কখন কার ওপর পড়বেন কেউ জানে না। মারাঠওয়াড়ার কলের জল সরবরাহ হয় মাসে দুবার। পানের জল ধরে রাখে গৃহস্থ। ট্যাঙ্কারের যোগান, রান্না, স্নান, জামা কাপড় ধোয়াতে লাগে। যোগিনী, মীনু, ইন্দুমতী আন্দোলনে প্রাণ সঞ্চারিণী। যদিও চতুর্দিকে চিরন্তন দারিদ্র্য। বাবলা গাছ যত্রতত্র। এ গাছ মারাঠি শব্দার্থতে ‘উন্মাদ’ (পৃ. ৭৭)। সামাজিক জীবনে এ গাছের কোনো ভূমিকা নেই। ক্লান্ত দয়া অফিসঘরে বসে ডায়েরিতে নোট নিয়েই চলে। হাত পা ধোয়া নেই, খাওয়া বা বিশ্রাম নেই দয়া ও তার সঙ্গীদের। অক্লান্ত অভিযান।
‘ক্লান্তি আমার’ অধ্যায়ে আছে আরো এক কিস্তি দুর্যোগের বিবরণ—যা চক্রব্যূহের অংশ। ভয়াবহ বাস্তব ও উপযোগী ভাব-মণ্ডিত ভাষা, যা উপন্যাসটিকে অন্ততঃ আমার কাছে মহিমান্বিত করে তুলেছে। ‘আলো’ এ অধ্যায়ে আলঙ্কারিকতায় প্রযুক্ত। বিদ্যুৎ নেই, কারণ সরকার বিমুখ, হুকিং করে গ্রামাঞ্চলের লোক জীবন চালায়। ‘নৈরাজ্যশাসিত, নির্বাপিত অঞ্চল’ যাতে ‘জলহীনতার রাক্ষসের মুখোশ’। চতুর্দিকে ‘রুক্ষ কাল্চে পাহাড়ের সপাট রিক্ততা’। আলো কোথাও নেই। আলো পূর্ণতা বিধায়ক। আবহে, মনে, কোথাও আলো নেই। আলো হারিয়েছেন অবিরামযোদ্ধা দয়াও—‘দয়া কেঁদে ফেললেন। আমি আর পারি না রে দীপক, আমার শক্তি নেই, ক্লান্ত লাগে সবসময়।’ (পৃ. ৮৬) লেখিকা এখানে দাভোলকর, পানসারে, গৌরী লঙ্কেশ—এই মৃত্যুঞ্জয়ী অথচ নিহত সমাজকর্মীদের সঙ্গে দয়া চরিত্রটিকে সংযুক্ত করে সংগ্রামী ঐতিহ্যের পরিসর বাড়িয়েছেন। এরা সবাই বুঝেছেন বা বুঝছেন--প্রতিকার তন্ময় বেপরোয়া ‘কাজের কোনো পরিণতি হয় না এর সহজে, দুনিয়া বদলায় না’, অথচ কি বিপুল ঝুঁকি নিয়ে চলেছেন মরণজয়ী সামাজিকের দল। (পৃ.৮৩) এই আশ্বাসহীন অন্ধকারের মধ্যে মোবাইলের আলো সাথী, সমাজকর্মী ইন্দুমতী ও তার বরের আগমন, দীপকের আজগুবি গান ও নৃত্য, আর মধ্যরাতে, 'ভিজে মাটির গন্ধ, গাছের পত্রাবলী, কোমল মাটির সংবাদ’। দয়া তাঁর নির্ভীক ব্যক্তিত্ব নিয়ে ডায়েরি লিখে চলেন আর পাঠক পেয়ে যান দয়াহত্যার পূর্বাভাস। (পৃ.৮৪) যেন শেক্সপীয়রীয় ট্রাজেডির পূর্বাভাস।
‘মৃত্যু-উপত্যকা’ অধ্যায়ে ফোকাস করেন হোটেলওলা যশোবন্তকে। তার জীবনবৃত্তান্তে যুক্ত হয়ে যায় রণবীর সেনার দাপট। যশোবন্তের কাজ-চলা বিদ্যা, সকলের ভালোবাসা, পাপের মৃত্যুর পর তার একাকিত্ব, ‘দেশটাকে ভেঙে টুকরো করে, মানুষকে থেঁতলে পিষে চলে যায় জাতের রথ’ (পৃ.৯০)--লেখিকার বজ্রকঠোর স্টেটমেন্ট। পাশে এল ক্রমবর্ধমান স্টিং অপারেশন, শিশুহত্যার আড়াল রাখা একাধিক সরকারী আইন। ক্লিনিকে ঢুকে তদন্ত 'হাঁ করা বাঘের মুখের মধ্যে মাথা পেতে দেওয়ার মতো’। (পৃ.৯৩) দয়ার টিম স্টিং করেছে বার বছরে চৌষট্টিটি। ‘এবার দু-তরফের পদ্ধতি।' দয়ার পরাক্রমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে অপরাধীদের প্রস্তুতি। ‘কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে শয়ে শয়ে ক্লিনিকে।’ দয়ার মধ্যে জমে রাগ, হতাশা, ক্লান্তি। দয়া সহযাত্রিণীদের অনুপ্রেরণা দেয়--‘তোরা সব আমার আর্মি। আর্মির মতো মেয়েদের (দেশের মতো) পাহারা দেয়, চুখাতে দেয়, তারপর আমরা সবাই মিলে ওদের বড়ো করব।' এক অবর্ণনীয়, ভয়াবহ বর্ণনা আছে এ অধ্যায়ে--‘বড় বড় চারটে চৌবাচ্চা, অগভীর। চারটে চেনে বাঁধা বিশাল কুকুর। ওটি থেকে ট্রেতে এনে চৌব্বাচ্চায় ফেলা হচ্ছে নিষ্কাশিত কন্যাভ্রূণ। মৃত নয় তারা, ধড়ফড় করছে জল থেকে তোলা মাছের মত। কুকুরগুলো প্রাণপণে ভ্রূণগুলো খেয়ে শেষ করছে। (পৃ.১০০) আমার উপন্যাস পাঠের যে অভিজ্ঞতা আছে--দেশী বা বিদেশী--কোনো পুরুষ বা নারীর কলমে--তুলনীয় কিছু মনে পড়ছে না। নারীর কলমে এমন লেখা মনে পড়ছে না। যে অধ্যায় শুরু আলোহীনতায়, গোপন তথ্যসংগ্রহের বিপজ্জনকতায়, তা হয়ে ওঠে আলোময়।
এ পর্বের শেষ অধ্যায়--দুর্গা। এখানে দেখার আছে অনেক কিছু। প্রথম দিকে লেখিকা যশোবন্ত চরিত্রটিকে একটা পূর্ণায়ত চেহারা দেন। গজানন পাটিলের বৌ রূপালি যার সন্তান দুর্গা, যাকে জন্মের পরেই গজানন প্রসূতিসদনের জানলা গলিয়ে ফেলে দিয়েছিল, মেয়েটির মৃত্যু আশা করে। যশোবন্তের মনে একদা ‘দুর্মর আশা’ ছিল তার পুরোনো ট্রেকারে সে বসবে রূপালিকে নিয়ে। সে শুধু যেত রূপালিকে দেখতে, তার মনটিকে স্পর্শ করতে। এক সংযত প্রেমের সংযত উপস্থাপনঃ যশোবন্তই রূপালিকে গজাননের চিঠিতে নিয়ে যায় প্রসূতিসদনে। হাসপাতালে বসে সে ভাবে তার বিহার প্রদেশের গ্রামে দুর্গাপুজোর কথা। তবে এ অঞ্চলে দুর্গাপুজো নয়, দীপাবলীই প্রধান। তার স্মৃতি আকাশের গভীরে নক্ষত্রের মতো। (তুলনীয়: রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।) শিক্ষা তার সামান্য, কিন্তু তার চরিত্রে ছিল না ‘ওপরের পালিশ।' এখানে মেয়েরা ‘ভারবাহী পশুর’ চেয়েও খারাপ অবস্থায়। হাসপাতালে তাকে প্রসূতির ঘরে যেতে দেবে না। সে দীর্ঘ পদচারণা করে ‘খাঁচায় বন্দি বাঘের মতন’। একসময় ‘অলৌকিক তরবারিতে চিরে জেগে ওঠে শিশুর কান্না’। কিন্তু হঠাৎ নীরবতা। আশঙ্কায় যশোবন্ত ছুটে যায় লেবার রুমের পিছনে। মেয়েটাকে উদ্ধার করে এসে ধমকায় গজাননকে। পুলিশে দেবার কথা বলে। গজানন তার পায়ে ধরে ক্ষমা চায়। দীর্ঘ ষোল বছরে দুর্গা বিয়ের যোগ্য। এই নাটকীয় গল্পে ফুটে ওঠে যশোবন্তের সংযত প্রেম ও দীপ্র পৌরুষ। দয়াকে সে অনুরোধ করে নাটের গুরু ডাক্তার মঞ্জু পাটিলকে অ্যারেস্ট করাবার। এবার পরিস্থিতি—শিক্ষায় বেনামী শিক্ষক, মেয়েদের ক্লাস এইট পড়ার পর বসে থাকা, অন্যদিকে ‘রোজই খসে খসে যায় অজস্র জীবন্ত শিশু কন্যার ভ্রূণ।' খবরের স্প্লিন্টার যোগায় যশোবন্ত, দয়ার ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে, আর পরিপার্শ্বের অজস্র মানুষ ক্রুদ্ধ থেকে ক্রুদ্ধতর হয়ে উঠতে থাকে। কুকুরও যখন ভ্রূণ ভক্ষণে অরাজী তখন কুমির আনার গল্প ওঠে। মঞ্জু পাটিলের কন্যা হনন চিন্তা নেভে না। দীপকের গান চরিত্রটির প্রাণবন্ততার পরিচায়ক, উপন্যাসে একটু বৈচিত্র্য আনে। এবার ক্লান্তি ভোলা দয়ার বিক্রম ও ‘সংহারক মূর্তি। সম্পূর্ণ অহিংস সত্যাগ্রহ দিয়ে হাসপাতাল বন্ধ যেমন, তেমনি যশোবন্তর দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া।' প্রশাসন এক নিষ্ঠুর চক্রান্ত ভাঁজে। মন্ত্রী অনিরুদ্ধ দয়াকে নারীসেবার জন্য পুরস্কার দিতে দিল্লী ডাকে প্রবল শীতে। পুরস্কার দেওয়া হয়, তারপর সাত সকালে ফেরার জন্য এয়ারপোর্টে আসার গাড়িতে তাঁকে পরিকল্পিত হত্যার চেষ্টা করা হয়। আহত দয়া রাস্তায় বসে থাকেন। দয়া এবার ক্লান্তি ভুলেছে, ভয় ভুলেছে। মুমূর্ষু দয়া জরুরী কাজগুলোকে সেরে নিতে চায়। এক নির্ভীক সেবাব্রতীর হত্যা চক্রান্তের এই কাহিনী লেখিকার আশ্চর্য বলিষ্ঠ লেখনীতে পাঠকচিত্তে ধাক্কা মারতে থাকে।
দ্বিতীয় আখ্যানে আসা যাক। এটিও খরাপীড়িত, প্রবঞ্চনা-মুখর কাহিনী। প্রথমটিতে আখ চাষ, এখানে তুলো চাষ। অঞ্চল মোটামুটি একই। তুলো চাষি উমেশ ও তার বৌ বৈশালীর গল্প। জলের বেজায় টানাটানি। উমেশ নিজের বাড়িটা বানিয়েছিল খরচ করে, মজবুত করে। অঞ্চলে আছে বলদ পুজো। কুশোপাতিনী বা পিঠোরী অমাবস্যার কথা আছে। এ অমাবস্যায় চাষী তার পরিশ্রমী ও সহিষ্ণু গৃহপালিত প্রাণীদের বন্দনা করে। বাড়ির কাছে উমেশ লাগিয়েছিল চাষের জন্য ধার নেওয়া টাকার খানিকটা। উমেশ লড়াকু মানুষ। ব্যাঙ্কের গুণ্ডারা এসে শাসায় বৈশালীকে। এক ভুঁড়িওয়ালা অফিসার পলাতক স্বামীর বৌ বৈশালীকে কুপ্রস্তাব দেয়। ঋণশোধে নিরুপায় উমেশ আত্মহত্যার বিকল্প কিছু জানত না। দীর্ঘ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় লেখিকা জেনেছিলেন—‘তুলো চাষির আত্মহত্যা তো নতুন কিছু ঘটনা নয়, বিদর্ভের প্রতি জেলায় সারা বছরে তিন চারশো চাষি নিজের জান নেয় নিজের হাতে, গুনতে গেলে।’ (পৃ. ১২৯) বর্ষা হয়ে আসছে এলোমেলো, তুলো চাষের খরচ ক্রমশ: বাড়ছে। কিন্তু ধার শুধতে চাষী অপারগ। তাই— ‘ঘণ্টায় একজন করে মারাই যায়।’ (পৃ. ১২৯) বৈশালীর সখ্য হয় দিনমজুর বিধবা রাধার সঙ্গে। হতাশা-বিহ্বল বৈশালীকে সে বলে নাবালক সন্তানের জন্য সরকারী একটা টাকা পাওয়া যায়। সেটা জোগাড়ে উদ্যোগ নিতে হবে। পোকার বিষ খেয়ে আত্মহত উমেশের মৃত্যু-তদন্তে নানা সরকারী ছোট-বড় কর্তা আসে, নানা প্রশ্ন চলে। পৃ. ১৩৯-এ আনা হয় নতুন একটি চরিত্র রঞ্জন পাটিলকে। সে একজন বি টেক, কিন্তু চাষীদের কাজে নামে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে, পি.এইচ.ডি করতে। এখানেও চলে আর এক চক্র। খরা নিয়ে ব্যবসা, (পৃ. ১৪১) পানীয় জল নিয়ে মুনাফা চক্র। খরা, চাষীদের কেন্দ্রে রেখে চক্রব্যূহ—দুটি গল্পের কাঠামোকে বাঁধে। রঞ্জন চরিত্রটিকে সক্রিয় দেখানোর জন্য দরকার ছিল তার সক্রিয়তার এলাকাটা দেখানো, তুলো চাষে নতুনত্ব, সরকারের নির্বাক দর্শকের ভূমিকা, বড় বড় ঋণগ্রহীতাদের বিদেশ পলায়ন (পাঠক সমাসাময়িক কিছু রাঘব বোয়ালের বিদেশে পলায়ন ও সরকারী নীরবতা নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন)। পৃ. ১৪৬-এ পুনরায় তিন চারজন উদ্যোগপতির দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা আছে। যা নীরব মোদী, বিজয় মাল্য প্রভৃতির কথা স্মরণ করায়। তদন্ত করতে করতে রঞ্জন পৌঁছে যায় বৈশালীর কাছে। ব্যাঙ্কের কর্মচারী ও এজেন্টদের ‘শাস্তি যোগ্য অপরাধ’ তাকে ক্রুদ্ধ করে। পটভূমিতে আছে দীপাবলী উৎসবে সম্পন্নগৃহে আয়োজন এবং তদন্তকারী, অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ী প্রতিকারে সমুৎসুক রঞ্জন চাষী ঘরের ছেলে হলেও তাকে ‘কাঁটার মতো তাকে উপড়ে ফেলাও সোজা নয়’, কারণ সে উচ্চশক্ষিত। এখানেই দয়া ও রঞ্জন দুই আখ্যানের দুটি চরিত্র পাঠকমনে যুক্তভাবে ধাক্কা দিতে থাকে।
সেচের অভাবে পশুখাদ্যে টান এবং জলপ্রাচুর্যে পশুর জন্য আখ—‘কী বৈচিত্র্যের সমাহার এ দেশ’ (পৃ. ১৪৯)--লেখিকা শ্লেষ করেছেন তীব্রভাবে। ঘটনা হচ্ছে—‘বিদর্ভে হাজার পঁয়ত্রিশ মৃত চাষির খতিয়ান মেঘের মতন রঞ্জনের চোখে ভেসে বেড়ায়’ (পৃ. ১৫০)—এ দুঃখের ক্ষোভের মেঘ দরদী লেখিকারও। কনট্রাস্টে দেখানো হয় দক্ষিণ বম্বের সাততলা হোটেলের সমুদ্রমুখী বড় ফ্লোরে বড়লোকি জন্মদিনের পার্টি। মেয়ের জন্মদিনে বাবা অমরেশ ঋণের চাপে আত্মহত্যা করে। বিপুল বিদর্ভ মারাঠওয়াড়া জুড়ে ব্যাপক ‘সেচ- কেলেঙ্কারি’ যাতে অমরেশ ইনভলভড্—এটাও পূর্বোক্ত আখ্যানের সঙ্গে যোগ রচনা করে। কিভাবে কারচুপি তার কলাকৌশল আছে পৃ. ১৫৬-তে। উল্কা হ্রদের সৃজন কথা, ভীলদের বসতভূমি, উল্কা হ্রদের অপর নাম (লোনার), লবণের গোলার নাম (ভুশিকি) থেকে লেখিকা চলে যান ঋগ্বেদ-বর্ণিত গয়াসুর ও কোলহাসুরের নিহত হওয়ার কথায়, ফিরে আসেন কালিদাস পুরন্দরের কথায় যার অঙ্ক, ইতিহাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে অগাধ পড়াশুনা, আসে শিবাজির মা জিজাবাঈ-এর বাপের বাড়ির কথা। আর প্রকৃতির বৈচিত্র্য রূপ পায় নানা বর্ণে। পট রচনায় তাঁর নৈপুণ্য—পট শুধু প্রকৃতি বর্ণনা, ইতিহাস, পুরাণ প্রসঙ্গে নয়, বর্তমান ও সুদূরের সম্মিলনে—অপরিসীম। ষাট হাজার বছরের ইতিহাসকে বিপুল দক্ষতায় তিনি ধরে দেন। এই ব্যতিক্রমী পটে বৈশালীকে নিয়ে রঞ্জনের পরিবারে ‘তুমুল অশান্তি’। আতাগাছের পাশ দিয়ে যেতে যেতে রঞ্জন অকস্মাৎ বৈশালীর ব্যথিত ঠোঁটে উদ্বেল ওষ্ঠ রাখে। রূঢ় বাস্তব ও নিবিড় রোমান্টিকতায় গতায়াত, কোনোটিতেই থেকে যাওয়া নয়, এ সংযম বিরল বলেই মনে হয়।
শেষাংশের পৃথক অবস্থান—নাম ‘দ্য লংমার্চ’। পৃথক বললাম বটে কিন্তু পৃথক নয়-ও বটে। এ রকম ধোঁয়াশা-মার্কা কথার ব্যাখ্যা দিই। ‘দ্য লং মার্চ’ অভুক্ত, বঞ্চিত, ক্ষুব্ধ কৃষকদের—প্রায় ৫০ হাজার কৃষকদের বোম্বাই আজাদ ময়দান অভিযানের বাস্তব ঘটনা, যা ঘটেছিল ২০১৮ মার্চে। এর আগেই ২০১৬ অক্টোবরে ঘটেছিল পালঘর অঞ্চলে আদিবাসী অবরোধ, যা ‘ঐতিহাসিক’। এই অভিযানে কোনো রাজনৈতিক দলের অভিঘাত নেই, এ অভিযান কোনো ময়দান কাঁপানো বক্তৃতা ও এদিক-ওদিক ঘোরার ব্যাপার নয়। লেখিকা দেখাচ্ছেন একের পর এক জঙ্গল কাটা হচ্ছে আর দোষ চাপানো হচ্ছে আদিবাসীদের ওপরে। অথচ লেখিকা তাঁর অভিজ্ঞতা-সূত্রে জানাচ্ছেন ঘটনা ঠিক উল্টো। আদিবাসীরাই গাছ বাঁচিয়ে রাখে। অভিযাত্রীরা চাইছিল জমির পাট্টা। মহাকুমা ও জেলায় মিটিং-এ কাজ হয় নি। তাই হেঁটে যাওয়া বোম্বাই। ভীল, গোন্ড, কোলি-মহাদেব, ওয়ার্লি, কোকনা, ঠাকুর, আন্ধ্, মাড়িয়া গোন্ডু, কোলাম প্রভৃতি আদিবাসী গোষ্ঠী যারা অতিকষ্টে চাষ করে পাহাড়ে, জঙ্গলে, চলেছে এই অভিযানে। বনচরী থেকে গৃহবাসী মানুষগুলো জমি হারাচ্ছে। ‘কাস্তে হাতুড়ি আঁকা লাল টুপি’ (পৃ. ১৬৮) এটি আরেক যোগসূত্র প্রথম আখ্যানের সঙ্গে, পরোক্ষ দ্বিতীয় আখ্যানের সুত্রে-ও। রুকমা বাঈ তার পোলিও রোগাক্রান্ত ছেলে রাখুকে শাশুড়ির কাছে রেখে চলেছে। কত উপনদী, নদী তাদের পথসঙ্গী। পার হল সপ্তশৃংগী দেবির মন্দির। তৃষ্ণার্ত মাটি ও মানুষ চলেছে। আর একজন শান্তা বাঈ, যে গত সাত আট বছরের ভোল পালটে যাওয়া তল্লাট দেখেছে ও দেখছে। নান্দুর বার জেলার কিছু লোকজনও আছে। এরা কথা বলছে আহিরাণী ভাষায়। পথে পড়ল তৌলা ডোঙ্গর, গৌরাচে ডোঙ্গর (উঁচু পার্বত্য অংশ) কদবা উপনদী, নাসিক, সহ্যাদ্রি পর্বতমালার খণ্ডছিন্ন উপ-পর্বত, এল বড় বড় চট্টান, ভাল্দেবী নামে নদী (যা ছিল পূর্বে অপরিচিত) কয়েকটি উপনদী, পুলিশ ও হাইওয়ে প্যাট্রল মিলে তৈরী করা সাময়িক আস্তানা, পোঁটলাতে জামাকাপড়, সামান্য খাবার, শিল্পনগরী সিন্নর প্রভৃতি। যুবকেরা গান গাইছে খালি গলায়, টানে টানে আর একদলের মারাঠী গান (দুটি আখ্যানের সংগ্রামী যুবক দীপক ও রঞ্জনের গান মনে পড়ে, এটাও আর এক যোগসূত্র)। ‘বহুস্তরীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও সরকার এখন ধনী ও করপোরেট হাউসেদেরই প্রতিনিধি, যেহেতু সরকারের নীতি নিয়ন্ত্রিত হয় তাদেরই স্বার্থ মাথায় রেখে।' (পৃ. ১৮০) এই প্রতারক নীতি পূর্বোক্ত আখ্যান দুটির সঙ্গে আর একটি যোগসূত্র। লেখিকা প্রথমে তৈরি করে নেন ব্যাপ্ত পরিপ্রেক্ষিত (যাতে প্রকৃতি, বঞ্চনা ও সংগ্রাম) তারপর দেখান ২০১৫-তে ২৪টি জেলায় কৃষকসভার মিটিং, ২০১৬-তে নাসিক-এ বিপুল কৃষক সত্যাগ্রহ, ২০১৭ অক্টোবরে লক্ষাধিক চাষীদের কনভেনশন এবং অন্যদিকে ‘বিদর্ভ ও মারাঠওয়াড়ায় জলভাণ্ডার নির্মাণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার কারচুপি।’ (পৃ. ১৮১) (এটিও আর এক যোগসূত্র), ২০১৬, মে-তে দুর্দান্ত গ্রীষ্মে দশ হাজার কৃষকের মিছিলে বাঁশের ‘তিরডি’তে মৃত মানুষের দেহ। শচীন, ভোঁসলে প্রভৃতি পার্টির আগ্রাসন এড়ানো কর্মী। ঋণ মকুবের জন্য এগার দিনের ধর্মঘট, চৌত্রিশ হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুবে সরকারের বাধ্যতা। প্রবীণ দশরথ লিলা নিখুঁত পরিকল্পনা করেন চাষীদের যাত্রাপথের, দিনপিছু ৩৫ কিলোমিটার পাড়ি। এলা চলেছে সম্পন্ন দাদুর পাশাপাশি, রঞ্জন ও তার দুই বন্ধু চলেছে বিদর্ভের মেয়েদের দলটির সাথে, দীপক এসেছে গাড়ি চালিয়ে সুদূর সাতারা থেকে দয়া যোশীকে সঙ্গে নিয়ে। ভারী চমৎকার ভাবে মিলিয়ে দিলেন লেখিকা আখ্যান দুটিকে শেষাংশের সঙ্গে। আর একটা অন্তর্নিহিত যোগসূত্র—সংগ্রামী মানুষের ক্লান্তি, হতাশা উত্তীর্ণ হওয়া মৃত্যুঞ্জয় আশা ও স্বপ্ন। রূকমা বাঈয়ের চাষের জমি ও ব্যক্তিগত বিপর্যয়, কৃষকদের দাবী মেটানো, রঞ্জনের পি.এইচ.ডির কাজের অগ্রগতি, বৈশালীর হাস্যোজ্জ্বল মুখ সব মিলে যায় আগামী দিনের ভোর-এর সম্ভাবনায়। ‘ভোর’ তাই হয়ে ওঠে সমাপ্তিতে মেটাফরিক্যাল।
লেখকের জীবনবীক্ষা নানা প্রত্যক্ষে, পরোক্ষে তাঁর কৃৎকৌশলকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্লটের বিন্যাস, চরিত্র উপস্থাপন, অধ্যায় সমূহ, বর্ণনা ও সংলাপের ভাষা, উপমা সৃজন কতো কিছুতেই না ছড়িয়ে আছে জীবনবীক্ষা। এই বীক্ষা একদিনে তৈরি হয় না, অভিজ্ঞতা সঞ্চয়, আখ্যান রচনার ক্রমান্বয় প্রয়াস—এ যেন রাগ সাধনার নিয়মিত রেওয়াজের মতো। পাঠককেও অবশ্য আস্বাদনের যাথার্থ্যের জন্য তৈরি হতে হয়।
অনিতার কয়েকটি উপন্যাস এবং খান পঞ্চাশেক গল্প পড়ার পর আমার মনে হয়েছে প্রশাসনিক ইনভলমেন্ট তাঁর অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সাহায্য করেছে। ‘সোনার কফনে ঢাকা সত্যের মুখ’ উন্মোচনের জন্য যথেষ্ট সাহস প্রয়োজন এবং সেটা তাঁর আছে। তাছাড়া রোমান্টিক প্রবণতা তাঁর কবিতায় থাকলেও আখ্যান রচনায় তিনি দৃষ্টি সংহত করেছেন অতি বাস্তব, বঞ্চিত শোষিত মানুষের জীবনযাত্রায়। সে কাজে তিনি ওপর ওপর দেখাকে ব্যবহার করার পরিবর্তে রীতিমত পরিসংখ্যান, ইতিহাস—পুরা ও আধুনিক ইতিবৃত্ত ব্যবহার করেছেন। ‘মহানদী’ এবং ‘কাস্তে’ পড়লে বোঝা যায় শোষিত মৃত্যুমুখী মানুষের কথা শোনাতে এবং প্রশাসনিক বর্বরতার বৃত্তান্ত তুলে ধরতে তিনি আদৌ কম্পিত নন। গৌরী লঙ্কেশ, কালুবুর্দ্দি, পানসারে, দাভোলকর-এর মৃত্যু তাঁর জানা, শেষ উপন্যাসটিতেও তার উল্লেখ আছে। ‘মহানদী’ উপন্যাসেও আদিবাসী উৎখাতের বিবরণ ভয়ঙ্কর। ‘হাতুড়িটা ঠিক জায়গায় মারার সাফল্য আনার অনেকসাধ্য সম্পন্ন করেছেন।’ একটা দায়বোধ, কমিটমেন্ট ‘দেশের ভিতর দেশ’ বইটির প্রবন্ধগুলি পড়লে বোঝা যায়। ‘এ সব কাজে সময় লাগে’—প্রস্তুতির, শিল্পায়নের। তাই লেখিকার নিরাপত্তার প্রশ্নটি উপেক্ষা করার নয়। একার্যে তাঁর গোষ্ঠী আছে কিনা জানি না, তাই চিন্তা হয়। আর একটা কথা—তিনি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গীয় দুর্বিপাক নিয়ে আখ্যান লিখছেন না। সেটা একদিক থেকে ভালো।
উপন্যাসটি (কাস্তে) অনেকটাই ডকুমেন্টারি, কিন্তু ডকুমেন্টারি উপন্যাসের যান্ত্রিকতা এতটুকু নেই। চরিত্রসৃজনে—দয়া বাঈ, রঞ্জন, দীপক প্রভৃতি, এমনকী জল ছিটিয়ে ঘুম ভাঙানিয়া পরিচারিকা প্রমীলা এবং তের্ণা-র চরিত্রায়ণ চমৎকার। তিনি যেমন ঔপন্যাসিক নারায়ণ হরি আপ্টের অপরাজেয় নক্ষত্রের কথা বলেন (পৃ. ৩৬) তেমনি ২০০৩-এ ভ্রূণহত্যা সংশোধনী, আসে শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক পোলাসুর নিহত হওয়া (পৃ. ১২৬) বা ঋগ্বেদে দত্তক রাজার রাজধানী মধুমতী (পৃ. ১৫৮) অথবা জিজাবাঈ (পৃ. ১৫৯) প্রসঙ্গ আনেন। এ হল তথ্য আগ্রহের ‘নমনীয়তা’। ‘উল্কা হ্রদ’ অংশের বর্ণনা ও সেই পটে বৈশালী ও রঞ্জনের সন্নিকর্ষ অপূর্ব।
ভাষার মধ্যে তৎসম, দেশজ ও ইংরেজি শব্দ যেমন, তেমনি ক্ষোভ, প্রাণবন্ততা, বিষাদ মিশিয়েছেন। পাহাড়ের সপাট রিক্ততা, তালঢ্যাঙা মুখচোরা মানুষ, দিগন্তলিপ্ত পাহাড়, খবরের স্প্লিন্টার, প্রশ্নের গোলা, ত্যাঁদোড় লোক, মালখোর, মস্তিষ্কের কোষে বহু সূর্যাস্তের স্মৃতি—তারিফযোগ্য ব্যবহার, লোক দেখানো নয়।
উপমা বা বর্ণনার ভাষায় লেখিকার অর্জিত দক্ষতা অসামান্য। কয়েকটি উদাহরণ দিলে পাঠক হিসেবে আমার ভালো লাগবে—
ক) নকোশীর মনে হল—‘কেমন যেন থম্ মেরে গুঁড়ি মারা জন্তুর মতন বসে আছে তাদের গ্রামটা।’
খ) ‘ব্যাঙের হাঁচির মতো তুচ্ছ কারণে বিদ্যুৎ সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়।’
গ) ‘মেয়েদের অবস্থা ভারবাহী পশুদের চেয়েও খারাপ।’
ঘ) ‘অলৌকিক তরবারিতে চিরে শিশুর কান্না’।
ঙ) ‘একাকীত্বের গহনে ঘষ্টে চলেছে বিপুল এক মন্থন’
চ) ‘বাড়ির অবস্থা সুনামির পরের সমুদ্রকুলের মতন’।
ছ) হত্যার সুপারি যারা নিয়েছে ‘ফিরে ফিরে আসবে তারা, ঢেউয়ের মতন’।
জ) ‘সুদের লতিয়ে ওঠা বিষলতা’
ঝ) (বৈশালী) ‘বিসর্জনের পরের প্রতিমার মতো দেখতে হয়েছে’।