• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৬ | সেপ্টেম্বর ২০১৯ | গ্রম্থ-সমালোচনা
    Share
  • গ্রন্থ-সমালোচনা: রণ-সজ্জায় জার্ম্মেনী—ডঃ অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য : সংহিতা মুখোপাধ্যায়

    || চেনা ইতিহাসের অজানা অধ্যায় ||

    রণ-সজ্জায় জার্ম্মেনী—ডঃ অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য; বেঙ্গল ট্রেডার্স লিমিটেড, কলিকাতা; প্রথম জয়ঢাক সংস্করণঃ জয়ঢাক প্রকাশন, কলকাতা-১২৩; নভেম্বর ২০১৮

    রণ-সজ্জায় জার্ম্মেনী ইতিহাসের এক পরম সংকটকালের অবশ্যপাঠ্য দলিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির একশো বছর পরেও এই বই থেকে টের পাওয়া যায় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিনগুলোতে খোদ জার্মানির অলিতে গলিতে কী ঘটছিল। এই বইটি তথাকথিত উগ্র জাতীয়বাদ ও তার বিরোধিতার কালদর্পণ। সেই সময়কার সমাজমানসের নিরিখে আজকের পৃথিবীর জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রভাবনাগুলিকে ঝালিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত যন্ত্র হিসাবে আলোচ্য বইটি অমিতগুরুত্বপূর্ণ।

    আতঙ্ক তৈরি করা সর্বনাশী যুদ্ধ ঘটানো রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর ইতিহাস পড়ার বইতেই পাওয়া যায়। যে কথা জানা যায় না তা হলো ঐতিহাসিক আস্ফালন আর উস্কানির সময় হরিপদ কেরানী কিংবা যদু-মধুরা কী ভাবছিল, কী করছিল, কী বলছিল। আলোচ্য বইতে এক দারুণ ঐতিহাসিক সংকটকালে অবয়বহীন সাধারণের বিবরণ ধরা আছে। সেই বিবরণ জীবনের সম্ভাব্য সব মাত্রাকে ছুঁয়ে গেছে। প্রবাসী ছাত্রের বয়ানে লেখক উন্মোচিত করেছেন এক বহু চর্চিত কালের অপরিচিত ইতিহাস। সেখানে স্বার্থপরের পাশেই কেমন মহানুভবের অবস্থান ছিল তা যেমন দেখা গেছে, তেমনই জানা গেছে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের সাথে অন্যান্য আবেগের সংঘাতের কথা।

    বইটির প্রত্যেক ছত্রে প্রাক্‌ যুদ্ধ উৎকন্ঠা আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে পাঠককে। নিমেষে পাতা উলটে যায়। একেকটা কথোপকথনের বিবরণে চমকে উঠি, মনে হয় যেন সমকালের বর্ণনা। তারপর সেই ভাবনায় তলিয়ে যেতে যেতে পাত্র-পাত্রী সাল তারিখের ছোঁয়ায় চমক ভাঙে...... এতো একশো বছর আগেকার কথা। কিন্তু স্বাজাত্যভিমান, আত্মুমর্যাদা, জাতীয়তাবোধ নিয়ে ভাবনাগুলো ভীষণ রকম মিলে যায় এখনকার সঙ্গে। প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় মানুষের আবেগের আবহমানতা।

    বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রের কূটনৈতিক আচরণের আলোচনায় লেখক উল্লেখ করেছেন “... কথা এই, সততা কি বর্বরতা দেখেই যে পৃথিবীর সকল শক্তি সকল সময়ে পক্ষ নির্ব্বাচন করে তা নয়। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা সর্বদা লোলুপ। ন্যায় ধর্মের কথাটা একটা ভরং মাত্র।” লেখকের পর্যবেক্ষণ ও মতামত স্থাণ, কাল ও পাত্র বদলালেও চিরন্তন সত্যের মতো রয়ে গেছে।

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথাগত ইতিহাসে যুদ্ধের কারণ, রাষ্ট্রনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থবুদ্ধির আলোচনা যতো বিশদে হয়, যুদ্ধের বিরোধিতার ব্যাপারে ততো সাড়ম্বর আলোচনা নজরে পড়ে না। আলোচ্য বইতে যুদ্ধের আয়োজনের আলোচনা যেমন বিশদে আছে, তেমনই আছে যুদ্ধ বিরোধী প্রয়াসের নানান বিবরণ। সেরকমই এক বিবরণ, “বড় বড় লাল রঙের প্লাকার্ডে রাস্তার দুই দিক ছাইয়া গিয়াছে। তাহাতে আছে, ‘যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর (Kriege das Krieg)’। হাতে হাতে হ্যান্ড্‌বিল ছড়াইয়া দিতেছে ‘যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত হও, জগতের যুদ্ধ বন্ধ হইবে। হে পিতৃভূমি-রক্ষাকারী-দেশভক্তগণ! মনে রেখ দায়িত্বহীন অবিবেচক গণই মুহূর্তে যুদ্ধে সায় দিতে পারে।”

    আলোচ্য বইয়ের অনেকটা জুড়ে আছে গুজব বা মিথ্যা খবর প্রচারের ব্যবস্থাপত্রের প্রতি সন্দিগ্ধ নজরদারী। যে কোনো খবরই কতোটা সত্যি ও কতোটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যে তাই নিয়ে পাতায় পাতায় তর্কের তর্জা। এর থেকে ভীষণ স্পষ্ট হয়ে যায় যে ফেক নিউজ বা মিথ্যা খবর কিংবা সারবত্তাহীন গুজবের প্রচার শত বছর আগেও ছিল; তার মাধ্যম ছিল তখন টেলিগ্রাম, সংবাদপত্র ও বেতার; এখন তার সাথে জুড়েছে সামাজিক জাল ও সামাজিক মাধ্যম, কখনও সর্ব সমক্ষে, কখনও ব্যক্তি বিশেষকে নিশানা করে, গোপণ প্রচার।

    ফেক নিউজ প্রসঙ্গে আলোচ্য বইয়ের লেখকের ভাষ্য, “উল্‌ফবোরো নাকি বিশ্বস্ত সূত্রে খবর অবগত হইয়াছে যে পিটার্সবার্গ, মস্কো, ওয়ার্সো প্রভৃতি সহরে জার্ম্মেনগণের উপর অত্যাচার হইতেছে। উল্‌ফ বোরোর সেই সূত্রটা যে কি, তাহা কেহই জানিবার জন্য কিছুমাত্র ব্যগ্র হইল না।” আরও চমকপ্রদ প্রতিবেদন হলো যে এই সমস্ত খবর বা মিথ্যে খবর বলে প্রচারিত তথ্যের প্রভাবে জনগণের প্রতিক্রিয়া। প্রত্যেক খবরেই যাদের উদ্দেশ্যে প্রচারিত এই খবর সেই জনতা খেপে উঠছিল পিতৃভূমির অপমানে।

    যুদ্ধপন্থী ও যুদ্ধবিরোধী সমাজের দুই মেরুর মানুষের সাথেই সাধারণ সামাজিক আদানপ্রদানের বিবরণ লেখক রেখেছেন এই বইতে। এই সব বিবরণের পাতায় পাতায় টের পাওয়া যায় পরাধীন জাতির গুণী মানুষের গ্লানি। সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের সমর বাতিক ও দুনিয়াব্যপী আগ্রাসনের প্রতি পরাধীন ভারতবাসীর তীব্র কটাক্ষ।

    বইতে ঘুরে ফিরে জেগে উঠেছে জাতীয়তাবাদী বোধ ও আবেগের সাথে অন্যান্য আবেগের সংঘাত। সেই সংঘাতের আলোচনাতেই জানতে পারা যায় যে শান্তির সময়ে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে নাগরিক চলাচল অবাধ ও উন্মুক্ত। সমস্যা দেখা দেয় যুদ্ধকালে। এক দেশে দীর্ঘদিনের বাসিন্দা যদি অন্য দেশের নাগরিক হন এবং যুদ্ধকালে যদি বাসভূমি ও জন্মভূমি প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় তবে বাসভূমি তাঁদের কারণাকারণে জন্মভূমির চর বলে সন্দেহ করে। এই রকম অবিশ্বাস ও সন্দেহের আবহাওয়ায় বাসভূমিতে দুই ভিন্ন দেশের নাগরিকের বন্ধুত্ব, পরিচিতি এবং প্রেম কী জাতীয় জটিলতার সম্মুখীন হয় তা এই বইতে নানান ঘটনার বিবরণে বিধৃত হয়েছে।

    শান্তির সহজ পরিস্থিতিকে কুটিল যুদ্ধ কী পরিমাণে জটিল করে তোলে তা এই বইয়ে বেশ স্পষ্ট করে দেখানো আছে। রাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত নানান দৃষ্টিভঙ্গীর সাপেক্ষে যুদ্ধকালে এক অধিকৃত প্রদেশের রাজনৈতিক অবস্থাণ সেই প্রদেশকে তার ওপর অধিকার কায়েমকারী রাষ্ট্রের শত্রু করে তুলতে পারে তাও দেখা গেছে এই বইতে। কিংবা বলা ভালো যে অধিকৃত অঞ্চল আন্তরিকভাবে কখনও অধিকার পত্তনকারী রাষ্ট্রের সাথে মিলে মিশে যায় না; বরং সুযোগ মতো তার নিজের জাতীয়তাবাদী চরিত্রের প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী হয় সেই তথ্যও এই বইতে ধরা পড়েছে।

    ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নিরিখে দেখা যায় যে পরাধীনতার গ্লানি বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ ও পাশ্চাত্য শিক্ষায় উত্তীর্ণ ভারতীয়দের অঙ্গের ভূষণ হয়ে ছিল। আবার এও দেখা যায় যে লেখক নিজেকে ব্রিটিশ ভারতের অধিবাসী বলে স্বীকার করতে চান নি কখনও, বরং তিনি নিজের জাতীয়তাবাদী পরিচয় প্রতিষ্টা করেছেন হিন্দুত্বে।

    পুরো বইতে প্রাকযুদ্ধ জার্মানির হালে শহরের হালহকিকত বলতে গিয়ে লেখক তুলে ধরেছেন পুরো জার্মানির প্রাক্‌ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নৈতিক অবস্থাণ। বইটির ভাষ্য এমন কৌতুহল তৈরি করে যে শেষ পাতা অবধি পড়ার পরও জিগীষা তুষ্ট হয় না। জানা যায় না যে শুভানুধ্যয়ীদের অকৃপণ সাহায্যে লেখক নিরাপদ হতে পেরেছিলেন কিনা। তবু সব শেষে বইয়ের “প্রথম খন্ড সমাপ্ত” দেখে আশা জাগে যে দ্বিতীয় খন্ডে আরও খানিক কৌতুহল মিটবে।

    কিন্তু সে আশা ক্ষীণ। ১৯২১ সালে প্রথম প্রকাশের পর বইটি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করে। ফলে বইটি কোনো পাঠকের দৃষ্টি পায় নি। প্রথম খন্ডের এমন পাতাল যাত্রা হয়তো পরবর্তী খন্ডগুলি প্রকাশের নিরুৎসাহের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

    বইটি একালে ছাপা হলেও, তার সামগ্রিক পরিবেশনা একশো বছর আগেকার। হয়তো সেই কারণেই বাক্যবিন্যাস অনেক ক্ষেত্রে এলোমেমো লেগেছে। বহু জায়গা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে সেটা সেকালের চলিত বাংলা ব্যকরণের সঙ্গে জার্মান বা ইংরেজির সমঝোতা করার চেষ্টায় ঘটে গেছে। এইভাবে বাক্যের জটিলতা অনেক ক্ষেত্রেই গতিমান বিষয়কে সজোরে থমকে দিয়েছে থেকে থেকে। তাছাড়া বেশ কিছু টাইপো নজরে পড়ে। বাংলা বানারের পাশে রোমান হরফে জার্মান বানানটি লিখতে গিয়ে মাঝে মধ্যে স্বরবর্ণের স্থলে “=” (সমান) চিহ্নের ব্যবহার ভ্রান্তি তৈরি করেছে। লেখক তাঁর বই প্রকাশের আদি মুখবন্ধে যে বানান ও উচ্চারণ বিধি প্রবর্তন করেছিলেন, “=” (সমান) চিহ্নের ব্যবহার সেই বিধিতে অনুপস্থিত। এ ব্যাপারে প্রকাশক কিংবা স্বত্বাধিকারী আলোকপাত করলে অসামান্য বইটির পাঠ সরলতর হবে।

    জয়ঢাক প্রকাশনের উদ্যমের কাছে এই বইয়ের পাঠক নিঃসন্দেহে কৃতজ্ঞ এমন মূল্যবান একটি ঐতিহাসিক দলিলকে সময়ের ধুলো খুঁড়ে বের করে আনার জন্য। আজকের পৃথিবীকে আরও একটু স্পষ্ট করে বোঝা সম্ভব করে দিয়েছে এই বই। আমাদের আজকের অস্তিত্বকে যথাযথ সুরক্ষিত রাখতে হলে এই বই বা এই জাতীয় বই থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা অত্যন্ত জরুরী।



    || পাখি চেনা শুরু করার বই ||

    পাখি-পড়া/ পাখি দেখার প্রাথমিক পাঠ --ঋত্বিক; জয়ঢাক প্রকাশন; প্রথম প্রকাশ – জুলাই, ২০১৯

    বাংলা ভাষায় লেখা পাখি চেনার ফিল্ড গাইড বেশ কম। ফিল্ড গাইড হওয়ার জন্য প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে বই হালকা হতে হবে এবং মুড়ে পকেটে রাখা যাবে এমন। সেই বিচারে জয়ঢাক প্রকাশনের পাখি-পড়া ভীষণ উপযুক্ত। লেখক ঋত্বিক পাখি চেনার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিগুলো জানিয়েছেন।

    যদিও আকার, আকৃতি ওজনের বিচারে বইটি উপযুক্ত ফিল্ড গাইড, তবুও লেখক চেষ্টা করেছেন পাঠক বিশেষত কিশোর পাঠক যেন ঘরে বসেই পাখি চিনতে শুরু করে। সেই চেষ্টাটা এই বইয়ের মূল আবেদন। যে চার দেওয়াল মানুষের আশ্রয় হয়ে মানুষকে প্রকৃতির থেকে, প্রকৃতির অন্যান্য সদস্যের থেকে আড়াল করেছে, আলাদা করেছে, সেই চার দেওয়ালকেই আবরণ করে পাখির সাথে চেনাশোনা বাড়ানোর উপায় জানিয়েছেন লেখক। লেখক দেওয়ালের আড়ালটা দিয়েই দেওয়াল ভেঙে দিয়েছেন। এর থেকে আরও ভালো বোঝা যায় যে আমরা আমাদের অনিচ্ছেটাকে অধিকাংশ সময়ে অজুহাত দিয়ে ঢাকি, হুঁকোমুখো হ্যাংলার মতো। সেই অজুহাতের প্রস্থে অনেক সময় ঢাকা দিয়ে ফেলি আমাদের চারপাশের বাকি সকলের ইচ্ছেটাকে। আলোচ্য বইতে লেখক দেওয়ালের অজুহাতটা ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন অনায়াসে। যাঁরা অন্যের অজুহাতের আস্ফালনে বিশ্বাস করে ফেলেছিলেন যে এতো ঘুলঘুলিহীন দেওয়ালের পিছন থেকে পাখি চেনা যায় না, তাদেরকে নতুন বিশ্বাস দিতে পেরেছেন যে দেওয়ালটাই পাখি চেনার মোক্ষম উপকরণ।

    শিরোনামেই এই বই জানিয়ে দিয়েছে যে এই বই পাখি চেনার প্রথম পাঠ। পাখি চেনানোর প্রথম পাঠ হয়ে ওঠার প্রয়াসে এই বই সম্পূর্ণ সফল। প্রাথমিক ভাবে পাখির আকার আকৃতি, ঠোঁট আর পায়ের বর্ণনা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছে এই বই যে কোন পরিবেশে কী ধরনের পাখি দেখতে পাওয়া যেতে পারে। যাঁরা পাখি দেখার চেষ্টা করেন তাঁরা জানেন যে চড়া দিনের আলোতেও অনেক সময় পাখিকে ডাহা অন্ধকারে একটা অবয়ব বলে মনে হয়। সেই পরিস্থিতিতেও দৃশ্যমান পাখিকে যতটা সম্ভব সনাক্তকরণের উপায় জানিয়েছে এই বই। এই বই জানাতে ভোলে নি যে প্রাথমিক পাঠের পর কিভাবে বুক, ঠোঁট বা চোখের রঙ দেখে পাখি চেনা যেতে পারে এবং সেটা আরও বিশদ পাঠের অংশ।

    আলোচ্য বইটি পাখি চেনায় মূলত পাখির আকার, আকৃতি আর মাপের নিরিখে। সেই অনুযায়ী ছবিগুলি যথার্থ। বিশেষত সোয়ালো আর স্যুইফট্‌-এর লেজের তফাৎ খুবই স্পষ্ট করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু ছবিতে ঘন ভরাট রঙ না থাকলে বোধ হয় আরও বেশি বুঝতে সুবিধে হতো। পাখি চেনার উপায়ের মধ্যে পাখি বসার সময় কতটা কোণ অনুভুমিকের সাথে তৈরি করে সেকথা আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার প্রতিফলন ছবিতে থাকলে আরও ভালো হতো। অর্থাৎ কোনো পাখি মাটির ওপর লম্ভভাবে বসে নাকি কোণ করে বসে, কোণ করলে কতটা কোণে বসে এসব মাত্রা ছবিতে দেখানো থাকলে বোঝা আরও সহজ হতো।

    পাখি চিনতে গেলে শুরুতে পাখি চেনার নজরটা তৈরি করতে হয়। সেই প্রয়াসে পাখি-পড়া সম্পূর্ণ সফল। কিন্তু নজরে প্রায় পড়েই না কিন্তু ডাকে অস্থির করে দেয় যেসব পাখি, যেমন চোখ-গেলো কিংবা বউ-কথা-কও, সেই সব পাখির ব্যাপারে এই বই একদম নীরব। এই বই একথাও উল্লেখ করে নি যে কিভাবে চোখের কোণের নীলচে রঙের থাকা না থাকায় ব্রাহ্মিনি স্টার্লিং আলাদা হয়ে যায় ছাতারে পাখির থেকে। এই বই এটুকুও জানায় নি যে একই পাখির পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে আলাদা হতে পারে এবং পুরুষ প্রজনন ঋতুতে সম্পূর্ণ নতুন রঙ ধারণ করতে পারে। পরিবেশের প্রভাবে পাখিদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চেহারা কেমন হয় তাই দিয়ে পাখি চেনানোর চেষ্টা করলেও পরিযায়ী পাখি ও স্থিতু পাখির কোনো আলোচনাই এই বইতে নেই।

    এই বইয়ের সহজ সততা এই যে শুরুতেই লেখক ধরে নিয়েছেন যে সব্বাই পাখির ব্যাপারে কৌতুহলী নাও হতে পারে। তবে বইটা মূলত লিখেছেন ক্লাস সিক্সে পড়া আকাশের জেঠু হয়ে। বইটা যেহেতু ক্লাস সিক্সে পড়া আকাশদের জন্য লেখা, সেহেতু বইটা আকাশের ভাষ্যে হলে আরও আবেদন রাখতে পারত।



  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments