• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৬ | সেপ্টেম্বর ২০১৯ | গল্প
    Share
  • দূরভাষ : বিশ্বদীপ সেনশর্মা


    --বিতান মিত্র বলছেন?

    একটি অচেনা মেয়ের গলা। নিশ্চয়ই কোন টেলিকলার হবে। সে আলগা ভাবে বলল--বলছি।

    --হ্যালো, হ্যালো...

    বিতানের অফিসের ডেস্কের কাছে মোবাইলের সিগন্যাল উইক, মাঝে মাঝেই কল ড্রপ হয়ে য়ায়। সে বিরক্ত হয়ে ফোন নামিয়ে রাখল।

    সে বলেছিল বাড়িতেই প্রেগন্যান্সি কিট এনে দেখে নিতে। জয়তী রাজি হয়নি। বলেছিল, ওসব ঝামেলা করে কাজ নেই, তুমি সোজা স্যামপল নিয়ে ল্যাবে দিয়ে দাও।

    সেইমত আজ সকালে সে জয়তীর ইউরিন স্যামপল নিয়ে পাড়ার ল্যাবরেটরিতে দিয়ে আসে। এখন অফিস থেকে ফেরার পথে রিপোর্ট নেয়। পজিটিভ।

    বাড়ি যেতে যেতে সে টের পেল তার পদক্ষেপ ধীর হয়ে আসছে। বিয়ের পরপরই তাদের প্রথম সন্তানকে তারা রাখেনি। তার দুবছর পর বুবুন আসে। এখন আর একজন আসতে চাইছে। জয়তী কি রাজি হবে?

    সেদিন রাতে বুবুন ঘুমোলে বিছানায় তাদের এরকম কথাবার্তা হয়—

    জয়তী--বুবুনের পাঁচবছর হতে চলল। এটাই ঠিক সময়।

    বিতান-- আমরা কুলিয়ে উঠতে পারবনা। মা-বাবার চিকিৎসা, বুবুনের স্কুলের খরচ এইসবই সামলে উঠতে পারছিনা।

    জয়তী--ও ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে। দরকার হলে আমি কয়েকটা বাচ্চাকে পড়াব।

    বিতান--তুমি বুঝতে পারছনা, অফিসের..

    জয়তী--আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। বুবুনের একটা ভাই বা বোনের খুব দরকার। একা থাকলে বাচ্চারা ঠিক ভাবে মানুষ হয়না।

    বিতান আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, জয়তী পাশ ফিরে ঠোঁট দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে দেয়।

    সঙ্গমের পর অনেকক্ষণ তার ঘুম আসছিলনা। সাবধানে উঠে সে ব্যালকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। নীচে নি:ঝুম সন্তোষপুর।

    আর একজন তাহলে আসছে। সে, বিতান মিত্র, যাদবপুর থেকে এম সি এ করে বছর দশেকের অভিজ্ঞতা, সেক্টর ফাইভের একটা বড় আই টি কোম্পানিতে কাজ করে। ইনসেন্টিভ বাদে সি টি সি আট লাখ, মাস গেলে কেটেকুটে হাজার পঞ্চাশেক টাকা হাতে পায়। কলকাতার হিসাবে টাকাটা খারাপ নয়। তবে কিনা, তার ফ্ল্যাটের ই এম আই কাটে কুড়ি হাজার। তাদের সেলিমপুরের বাড়ি বিক্রী হবার পর নিজের ভাগে কিছু টাকা পেয়েছিল, নয়ত আরও বেশি হত। মা-র এখন সারাক্ষণের লোক লাগে তাকে হাজার পাঁচেক দিতে হয়। বুবুনকে ভাল স্কুলে দিয়েছে, সেখানে নেয় মাসে দশ হাজার। চিকিৎসার খরচা তো আছেই। সব মিলিয়ে মাসের শেষ কটা দিন হাতে কিছু থাকেনা। আগে তারা মাসে একদিন করে বুবুনকে নিয়ে পার্কস্ট্রীটে খেতে যেত, ফ্ল্যাট কেনার পর সেসব পাট উঠে গেছে। শেষ বেড়াতে গেছে দিদিদের সঙ্গে বেনারসে প্রায় বছর দুই আগে। অফিসের খবরও ভাল নয়, মন্দার বাজারে কোনরকমে মাথা ভাসিয়ে আছে। এবছর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, মাস গেলে মাইনেটা কোনরকমে আসছে। । ফ্ল্যাটটা কেনার পর অসময়ের ভরসা বলতে হাজার বিশেকের একটা ফিক্সড ডিপজিট। পি এফ থেকেও দফায় দফায় অনেকটাই লোন নেওয়া হয়ে গেছে।

    এর মধ্যে দ্বিতীয় সন্তানের আবির্ভাব। জয়তীকে কি আর একবার বোঝান যেতে পারে?

    এসব বেশ কয়েক মাস আগের কথা। জয়তীকে বুঝিয়ে লাভ হয়নি, সে এখন মহা উৎসাহে আসন্ন মাতৃত্বের জন্য তৈরী হচ্ছে।

    সে টি-কর্নারে গিয়ে এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে এল। সমস্যা আরও আছে। বাবার শরীরটা একদমই ভাল যাচ্ছিলনা। হঠাৎ হঠাৎ করে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা। অনেক চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত স্পেশালিস্ট কোলনের বায়োপ্‌সি করতে বলেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে করাতে হয়। সেই রিপোর্ট কয়েকদিন হল পাওয়া গেছে।

    --হ্যালো বিতান মিত্র বলছেন?

    --বলছি।

    আমি মীনা বলছি.... --হ্যালো হ্যালো...

    সে উঠে অন্যত্র যাবার আগেই কলটা আবার কেটে গেল। আজকে ফোনটা বেশি ভোগাচ্ছে। হয়ত সার্ভিস প্রোভাইডারের টাওয়ার ডাউন আছে। সে নম্বরটা দেখল, চেনা চেনা লাগছে। তবে কোন বোর্ডের নম্বর, কল ব্যাক করে লাভ হবে না।

    গতকাল বাবার রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে দেখান হয়। জয়তীও সঙ্গে গেছিল। ডাক্তার দেখে বলেছিলেন, হুঁ, এখনও ফার্স্ট স্টেজেই আছে, তবে উনি এই বয়সে ট্রিটমেন্ট কতটা নিতে পারবেন দেখতে হবে। আপনারা একটা কাজ করুন। ওনাকে দিনসাতেকের জন্য আডমিট করিয়ে দিন। আমরা কেমোর প্রথম সাইকলটা শুরু করে দি। তারপর উনি কিভাবে রিয়াক্ট করেন দেখছি।

    সে আমতা আমতা করে বলেছিল, মানে... কিরকম খরচা যদি একটু আইডিয়া দেন।

    ডক্টর বোস বলেছিলেন, হাসপাতালের বিল ধরে আপাতত একলাখের কাছাকাছি হবে ধরে নিন।

    চেম্বার থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে তারা লেকটাউনে দিদিদের বাড়ি গিয়েছিল। দিদিকে আগে বলা হয়নি। দিদি খবরটা শুনে কেঁদে ফেলেছিল। বিতানের হাত ধরে বলেছিল, তুই ভাল করে চিকিৎসা করা, যা খরচা হবে দেখা য়াবে।

    তবু ফিক্সড ডিপজিটটা ভাঙ্গা ছাড়া উপায় নেই।

    সে মাঝেমধ্যে চাকরি পাল্টানোর কথা ভাবে। দশবছরে সে একবারই চাকরি ছেড়েছে। সেজন্যই হয়ত তার স্যালারি তুলনামূলক ভাবে কম। তার ব্যাচের অনেকে নিয়মিত কোম্পানি পাল্টে এখন অনেক বেশি স্যালারিতে আছে। তবে এই মন্দার বাজারে চাইলেই বা চাকরি দিচ্ছে কে? ইন্টারনেটে জব পোর্টালে সি ভি দেওয়া আছে। আগে তবু দু-চারটে কল-টল আসত এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। তার এক বন্ধু কিছুদিন চাকরি করে নিজের একটা ছোট কোম্পানি খুলেছে, এখন জনা কুড়ি ছেলেমেয়ে কাজ করে। সে বলছিল রোজই ওপেনিংএর খোঁজে পাঁচটা দশটা ফোন আসে।

    চায়ের কাপটা ট্র্যাশবিনে ফেলে এসে সে দেখল অমিতাভদা তার টেবিলে দাঁড়িয়ে আছেন। সে ব্যস্ত হয়ে বলল, অমিতাভদা, কিছু বলবেন?

    অমিতাভদা তাদের প্রোজেক্ট ম্যানেজার। তিনি তার হাতে একটা স্লিপ দিয়ে বললেন, কর্পোরেট এইচ আর থেকে তোর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। এই নম্বরে একবার ফোন করে নিস।

    সে স্লিপটা দেখে ঘাড় নাড়ল। অমিতাভদা নিজের কেবিনে ফিরে গেলেন। সে নম্বরটা ডায়াল করে দেখল বিজি আসছে। নিশ্চয়ই কল ব্যাক করবে। আধার কার্ডের ডিটেলস সিস্টেমে আপডেট করার কথা, তার এখনও করা হয়নি। অনেকের কাছেই কল আসছে।

    পিতৃদেব কি তাহলে রওনা দিলেন? তার হঠাৎ বাবার কাছে শোনা ছোটবেলার গল্প মনে পড়ছিল। সেলিমপুরে ঠাকুর্দা ও তাঁর ভাইদের বিশাল একান্নবর্তী পরিবার ছিল, দুবেলা না হোক গোটা তিরিশেক পাত পড়ত। অন্য ভাইদের তুলনায় ঠাকুর্দা সেরকম কিছু একটা করতেননা, কখনো ওষুধের কোম্পানির সেলসম্যান, কখনও কলেজস্ট্রীটে প্রুফরীডার এরকম নানান পেশায় ছন্নছাড়া জীবন কাটাতেন। মাঝেমধ্যেই বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকতেন। ঠাকুমা কান্নাকাটি করতেন কিন্তু আশ্চর্য যে যৌথপরিবারের স্নেহচ্ছায়ায় বাবা ও পিসীদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে কোন ফারাক পড়েনি। আর পাঁচটা ভাইবোনের সঙ্গে তারাও বইএর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যেত, ফিরে এসে টানা বারান্দায় সার দিয়ে বসে বিকেলের টিফিন করে খেলতে চলে যেত। এইভাবেই বাবাদের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। এমনকি বাবার কলেজে ভর্তি হওয়ার টাকাও নাকি মেজঠাকুর্দা দিয়েছিলেন।

    যৌথপরিবারের রান্নাঘর আলাদা হয়ে য়ায় তাদের ছোটবেলাতেই। তবু তারা একসঙ্গেই মানুষ হয়েছে। আগের মত মাখামাখি না থাকলেও পুজোপার্বণে বা কাজেকর্মে হৈচৈ হত। আলাদা হলেও আপদেবিপদে কোথাও একটা ভরসার ব্যাপার ছিল। সেই বাড়ি কিছুদিন আগে বিক্রী হয়ে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। এখন মাথার উপর ই এম আই দেওয়া ছাদ, ব্যাঙ্কের কাছে দায়বদ্ধ।

    --কি করছিস?

    কাঁধে একটা হাত এসে পড়ল। সে তাকিয়ে দেখল, শুভজিৎ। তারা একসময় একই প্রোজেক্টে কাজ করেছে। এখন অবশ্য আলাদা। তবে বন্ধুত্বটা রয়েই গেছে।

    --চল তোকে একটা বিড়ি খাওয়াই।

    তারা উঠে এসি হলের বাইরে স্মোকিং জোনে এল। আগে এখানে ভীড় হয়ে থাকত। ইদানীং ফাঁকাই থাকে। বাঙালি স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে উঠেছে।

    শুভজিৎ সিগারেটে টান দিয়ে বলল--বল, কি চলছে।

    সে হাত উল্টে মৃদু হেসে বলল-- নো নিউজ ইজ গুড নিউজ।

    --বাঙ্গালোরে শুনলাম অনেককে রিজাইন করতে বলেছে?

    বাঙ্গালোরে তাদের হেড অফিস। এ খবরটা সেও শুনেছে। ঘাড় নেড়ে বলল--জানি।

    --প্রথমে ফোন করে (করতে??) বলছে। যারা করছেনা তাদের টার্মিনেট করা হবে। বুঝতেই পারছিস, টার্মিনেশনের কেস হলে টাকা পয়সা কিছুই পাওয়া যাবেনা।

    সে চুপ করে রইল। শুভজিৎ আবার বলল--বাইরের প্রোজেক্টে চেষ্টা করছিস?

    -- সবই দেখছি। বাজারের অবস্থা তো জানিস।

    --ইউ এস এ-র বাজারটা হঠাৎ যেন বন্ধ হয়ে গেল। শুভজিৎ ঘাড় নেড়ে বলল।

    তারা কিছুক্ষণ চুপ করে সিগারেট শেষ করল। শুভজিৎ ফিলটারের টুকরোটা আশট্রেতে গুঁজে দিয়ে বলল--মেসোমশাইএর ট্রিটমেন্ট শুরু করিয়েছিস?

    শুভজিৎ বাবার ব্যাপারটা জানে। সে বলল--দেখি আজ দুপুরে একবার বেরব। হাসপাতালে ব্যবস্থাপত্র করে আসতে হবে।

    --কিছু দরকার হলে বলিস।

    সে মনে মনে বলল দরকারের কি শেষ আছে রে শুভ। মুখে বলল-- আচ্ছা।

    সীটে ফিরে এসে কিছুক্ষণ সে অমিতাভদার কথা মত তাদের প্রোজেক্টের উপর উইকলি প্রোগ্রেসরিপোর্ট লিখল। মেয়েটি আর ফোন করছেনা। হয়ত তার ফোনের অপেক্ষায় আছে। থাক। সে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিল।

    লাঞ্চের পর সে অমিতাভদাকে রিপোর্টটা দেখাল। উনি সামান্য করেকশন করে দিলেন। ঠিক করে সে সবাইকে মেল করে দিল। তারপর অমিতাভদাকে বলে বেরিয়ে গেল। হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক অনেক জায়গায় য়েতে হবে। প্রথমে ব্যাঙ্কে গিয়ে ফিক্সড ডিপজিটটা ভাঙ্গাল। কালকের মধ্যে টাকা সেভিংস আকাউন্টে চলে আসবে। হাসপাতালে ফর্ম-টর্ম ফিল আপ করল, সেই সঙ্গে কুড়ি হাজারের একটা চেক জমা করল। আপাতত এতে কাজ চলে যাবে। বাকি টাকা রিলিজের সময়। দিদির কাছে হাত পেতে কিছু নিতে হবে। বাকিটা ক্রেডিট কার্ডে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অফিস থেকে আডভান্স দেওয়া অনেকদিন বন্ধ করে দিয়েছে। তার কার্ডে ইতিমধ্যেই হাজার পঞ্চাশেক ডিউ আছে। শোধ করতে পারছেনা বলে মাসে মাসে ইন্টারেস্ট দিতে হচ্ছে। অঙ্কটা একলাফে অনেকটা বেড়ে য়াবে।

    সন্ধ্যাবেলা অফিসের এক কলিগ রুদ্রের বিবাহ-বার্ষিকীর পার্টি ছিল। রুদ্র তার সঙ্গে একই প্রোজেক্টে কাজ করে। কাল বুবুনের পরীক্ষা তাই জয়তীকে রেখে সে একাই গেল। অফিস থেকে উপহার কেনা হয়েছে তবু একগোছা ফুল নিয়ে গেল। বিশাল আয়োজন। তাদের মতই ছোট দুকামরার ফ্ল্যাট, তবু বাইরের ঘর থেকে সোফা-টোফা সরিয়ে বার কাউন্টার করা হয়েছে। মেঝেতে শতরঞ্চি আর তোষক পেতে বসার জায়গা। সবাই যে যার মত পানীয় নিয়ে গ্লাস হাতে করে বসে পড়ছে। ব্যালকনিতেও একটা ঠেক হচ্ছে। রুদ্র আর তার স্ত্রী পারমিতা মহা উৎসাহে ঘুরে ঘুরে সকলের দেখাশুনো করছে। হাতে হাতে কাবাবের প্লেট ঘুরছে।

    দু-তিনটে ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে তুমুল আড্ডা চলছে। বিষয়টা গৌণ, হৈ চৈ করাটাই মুখ্য। শুধু অফিসের প্রসঙ্গ বাদ, কেউ তুললেও বাকিরা হৈহৈ করে উঠছে।

    তার হার্ড ড্রিঙ্কস চলেনা, অরেঞ্জ জুস নিয়েছে। ক্ষণিকের জন্য হলেও এই আনন্দলহরী খারাপ লাগছিলনা । এর মাঝে রুদ্র প্লেয়ারে মিউজিক চালিয়ে দিয়েছে। ছোট ঘরে নাচার জায়গা নেই তবু দুএকজন উঠে কোমর দোলাতে লাগল। পারমিতা কিচেনে গিয়ে নতুন কাবাবের প্লেট এনে মাঝখানে রাখতেই কাড়াকাড়ি পড়ে গেল।

    অমিতাভদা সস্ত্রীক এসেছেন। তিনি নিজে একটু চুপচাপ কিন্তু মধুছন্দাদি খুব হৈচৈ করতে ভালবাসেন। তিনি হঠাৎ মিউজিকের উপরে গলা তুলে বললেন--আচ্ছা আমরা মাসে একবার করে এরকম মিট করতে পারিনা। ঘুরিয়েফিরিয়ে একেকজনের বাড়িতে?

    একটা সমবেত সমর্থনের আওয়াজ উঠল। মধুছন্দাদি বললেন--নিজেদের দিয়ে শুরু করছি। সামনের মাসের প্রথম শনিবার আমাদের ফ্ল্যাটে সবাই আসবে।

    ফ্ল্যাট কাঁপিয়ে একটা খুশীর হররা উঠল। দুএকজন উঠে নাচতে শুরু করল। মধুছন্দাদি বললেন, নাচলে হবেনা, ভলান্টিয়ার চাই। প্রত্যেক মাসের জন্য একজন।

    নটা নাগাদ সে উঠে পড়ল। ওলা ধরে দশটার মধ্যে পৌঁছে গেল। বুবুন তার কাছে পার্টির গল্প শুনবে বলে জেগে রয়েছে। শুনেটুনে বলল, বাবা আমাদের বাড়িতে পার্টি হবে না?

    সে হেসে বলল--কেন তোমার জন্মদিনে হবে।

    জয়তী বুবুনকে ঘুম পাড়িয়ে দিল; কাল বাবাকে ভর্তি করানোর ব্যাপারে জয়তীর সঙ্গে দুচারটে কথা বলে সেও শুয়ে পড়ল।

    সেদিন রাতে সে একটা স্বপ্ন দেখল। তাদের অফিস ফাঁকা, শুধু অমিতাভদা তার সীটের পাশে দাঁড়িয়ে একটা ফোন তার দিকে এগিয়ে দিয়েছেন। লাইনের অন্যপ্রান্তে কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে।

    সে স্বপ্নের মধ্যে চিৎকার করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসল। তার ওঠার শব্দে জয়তীরও ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সে উদ্বিগ্নগলায় বলল--কি হল?

    সে অস্ফুটে বলল-- কিছু না।

    জয়তী কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে তাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল--ঘুমোও।




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ রাহুল মজুমদার
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)