কাট! টানটান শরীরটাকে আলগা করে দিলেন সুমন্দ্র সেন। বেশ কঠিন ছিল শটটা। পরিচালক এগিয়ে এল একগাল হাসি নিয়ে—চমৎকার হয়েছে। আর আপনাকে খাটাব না আজ। আমি বাকিদের সিনটা তুলে নিই।
—দ্যাখো, দরকার হলে আরও কয়েকটা শট দিতে পারি কিন্তু।
—না না। ...সত্যি, কত কিছু শেখার আছে আপনার কাছে। আপনি কি একটুও টায়ার্ড ফিল করেন না?
—কাজের মধ্যে থাকলে করি না।
একটা মনভোলানো হাসি দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে মেক-আপ রুমের দিকে এগিয়ে যান সুমন্দ্র। সত্যিই একটু বিশ্রাম চাইছে তাঁর শরীর। ওরা বুঝতে পারেনি।
বুঝতে পারেনি তাঁর ছেলে তূণীরও। অর্চনা তাঁকে ছেড়ে চলে যাবার পর যে ছেলেকে তিনি একাই মানুষ করেছেন। সে এখন কৃতী সাংবাদিক; আলাদা সংসার পাতলেও প্রায়ই দেখা করতে আসে। গতকালই এসেছিল। একথা-সেকথার পর বলল, ড্যাড—একটা কথা বলব, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড?
—যথেষ্ট বড় হয়েছিস। এখনও এত সঙ্কোচ?
—না, মানে – মা... মায়ের সঙ্গে সেদিন দেখা হল। একটা পার্টিতে...
সুমন্দ্র লক্ষ্য করেছিলেন – কথাটা বলেই ছেলে চোরা দৃষ্টি দিয়ে দেখে নিতে চাইছিল তাঁর কোন ভাবান্তর হল কিনা। হলেও বা ছেলেকে সেটা বুঝতে দেবেন কেন? অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তিনি বলেছিলেন—বেশ তো।
—মা… কিন্তু তোমার খোঁজখবর নিচ্ছিল ড্যাড। জিজ্ঞেস করছিল, তুমি ঋতমদার ছবির প্রিমিয়ারে আসবে কিনা...
—আমি তো এমনিতেই আজকাল সব জায়গায় যাই না।
—ড্যাড, ঋতমদাকে তুমি স্নেহ কর। হি হ্যাজ ইনভাইটেড ইউ সো কর্ডিয়ালি। তুমি যদি না যাও... লোকে ভাববে, মাকে অ্যাভয়েড করার জন্যই তুমি... এখন সোস্যাল মিডিয়ায়, সেলেবদের সামান্য একটা জেশ্চার নিয়ে হাজারটা কথা ওঠে। এই বয়সে তোমার মত একজন ডিগনিফায়েড অ্যাক্টরকে নিয়ে সেসব যাতে না হয় ...
—যাব না সেকথাটাও কিন্তু বলিনি। ভারি গলায় বলেছিলেন সুমন্দ্র। তূণীর চুপসে গিয়ে বলে উঠেছিল, সরি। ... রাগ করলে?
—দূর! ইট্স জাস্ট প্রফেশনাল, মাই বয়। ছেলেকে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হেসে উঠেছিলেন সুমন্দ্র ।
***
অর্চনার মনে পড়ছিল প্রথম দেখা হবার দিনটা। তখন অ্যামেচার থিয়েটারে অল্পস্বল্প অভিনয় করতেন তিনি। একটা গোপন ইচ্ছেও ছিল, ছোটখাটো রোলে অভিনয় করতে করতে যদি সিনেমায় নামার সুযোগ আসে। একবার কপালজোরে নাটকে নায়িকার ভূমিকা জুটেছিল। কারণ চরিত্রটার জন্য নাচ জানার দরকার, অর্চনার সে-গুণটা ছিল।
শো-এর দুদিন আগে নায়কের অ্যাক্সিডেন্ট। কি হবে? নাট্য-নির্দেশক জ্যোতিদা অনেকক্ষণ আঙ্গুল মটকে, তিনটে সিগারেট পুড়িয়ে শেষে – “দাঁড়া, দেখি একজনকে – যদি রাজি হয়...” করতে করতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
পরদিন জ্যোতিদার জরুরি তলব—ব্যবস্থা হয়ে গেছে। অর্চনা আসতেই হইহই করে উঠেছিলেন, এই যে—ধরে এনেছি। একেবারে সিনেমার হিরো। সুমন্দ্র, এসো—আলাপ করিয়ে দিই।
সুমন্দ্র তখন দু-তিনটে ছবি করেছে—‘বিখ্যাত’ না হলেও পরিচিত মুখ। রূপোলি পর্দার নায়কের বিপরীতে মঞ্চে অভিনয় করা—একটা অন্যরকম ব্যাপার। তার উপর ছাব্বিশ-সাতাশ বছর বয়সে সুমন্দ্রর ঐ কণ্ঠস্বর, চেহারা—মেকআপ ছাড়াও যে একজন পুরুষকে এত সুন্দর দেখাতে পারে—অর্চনা ওকে মুখোমুখি না দেখলে বুঝতে পারত না। সুমন্দ্র আলগোছে একটা নমস্কার করেই কাজের কথায় চলে এসেছিল—আপনি এতদিন যেভাবে করেছেন, করুন। এ পার্ট আগেও করেছি কলেজলাইফে, সামলে নেব। ...আসুন সংলাপগুলো করে নিই। সময় খুব কম।
তাই হল। ঢোকা, বেরনো, পজিশন নেওয়া—এগুলো কোনরকমে আলোচনা করে নেওয়ার বেশি আর কিছু করা গেল না। অর্চনা বুঝতে পারছিল তার অভিনয় সুমন্দ্রর মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেশি অদল-বদল করা সম্ভবও নয়। সব মিলিয়ে বেশ অস্বস্তিতেই ছিল অর্চনা স্টেজে নামার আগে।
প্রথম দুটো দৃশ্যের পরই সুমন্দ্র উইংসের ধারে অর্চনাকে টেনে নিয়েছিল একপাশে—কী সমস্যা হচ্ছে আপনার? এমন আড়ষ্ট হয়ে আছেন কেন?
—আমি... আমি তো চেষ্টা করছি। অর্চনা কোনমতে উত্তর দিয়েছিল।
—না। আপনি কোঅপারেট না করলে কিন্তু আমারও অসুবিধে হচ্ছে। প্লিজ, একটু হেল্প করুন—তাকান আমার দিকে—এইভাবে।
সুমন্দ্র তার মুখটা দুহাতে ধরে নিজের চোখের দিকে তাকাতে বাধ্য করেছিল তাকে। মুহূর্তে অর্চনার মনে হয়েছিল, এই মানুষটার জন্য তাকে নিজের সবটুকু দিতেই হবে। বাকি দৃশ্যগুলো অনেকটা সহজ হয়েছিল এরপর।
নাটকে নায়ক-নায়িকার সম্পর্কটা বেশ জটিল। ক্লাইম্যাক্সের দৃশ্যে একটা আকস্মিক অভিঘাতে তারা কাছাকাছি এসে পড়ে। সুমন্দ্র বলে রেখেছিল—আমি পড়ে গেলে শুধু আমাকে ধরবেন। দেখবেন যাতে আপনার মুখটা ঢাকা না পড়ে। বাকি কাজ আমার।
সুমন্দ্র অজ্ঞান হয়ে পড়ব-পড়ব করতেই অর্চনা ধরে ফেলেছিল তাকে। কিন্তু এ কী? মানুষটা সত্যিই শরীরের পুরো ভারটা তার উপর ছেড়ে দিল নাকি? কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেশ কয়েক পা পিছিয়ে আসতে হল তাকে। তারপর—সুমন্দ্রর মাথাটা ছিল তার কাঁধের উপর—ফিসফিসে স্বরে নির্দেশ – “বসে পড়ুন”। অর্চনার খেয়াল হল এতক্ষণে, সে স্টেজের মাঝামাঝি রাখা খাটিয়ার পাশে চলে এসেছে। ‘অচেতন’ সুমন্দ্রই তাকে ঠেলে নিয়ে এসেছে। খাটে বসতেই সুমন্দ্র তাকে ছেড়ে ন্যাতার মত গড়িয়ে পড়ল বিছানায়। হাততালি। অর্চনা বুঝতে পারল, দৃশ্যটা চমৎকার উৎরে গেছে।
নাটকের শেষে অর্চনা হাঁপ ছেড়ে বলেছিল সুমন্দ্রকে—যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন! ভাবতেই পারছিলাম না কী করব।
—ভয় পাওয়াতেই চেয়েছিলাম। আতঙ্ক, বিস্ময়, কী করব-কী করব ভাব—এগুলো সব আপনার এক্সপ্রেশনে ফোটা দরকার ছিল।
অর্চনা বুঝেছিল, মানুষটা অভিনয়ের জন্য সব কিছু করতে পারে। সহ-অভিনেতার সেরাটুকু নিংড়ে বের করে নিতে জানে। অভিনয়ের জগতে কিছু করতে গেলে এরকম একজনকে পাশে চাই তার।
এইভাবেই প্রেম, তারপর বিয়ে। প্রথমদিকে সুখের সাগরে ভেসে ছিল অর্চনা। কিন্তু আস্তে আস্তে সুমন্দ্রর অন্য একটা দিক দেখতে পেল সে। পেশার বাইরেও প্রচুর পড়াশোনা-করা মানুষটার মনের তল পাওয়া মুশকিল। আর অর্চনার যেটা স্বপ্ন—সে ব্যাপারেও কোনরকম সাহায্য করতে তার প্রচণ্ড অনীহা। এই নিয়ে কতবার অশান্তি হয়েছে। সুমন্দ্রর একটাই কথা—“অভিনয় তোমার আসে না। এটা কাউকে ধরাধরি করে সুযোগ পাইয়ে দেবার বিষয় নয়। আমি কাউকে বলতে পারব না।”
অর্চনার ডিপ্রেশন এসে গিয়েছিল একটা সময়। ততদিনে তাদের সন্তান এসেছে। সুমন্দ্রর নাম-যশ-খ্যাতি বেড়েছে অনেক। কাজের চাপ, বেশিরভাগ দিনই ফিরতে রাত হত। অর্চনার নিজের হাতেও যদি কাজ থাকত, তবে এ-ব্যাপারটা তার অসহ্য লাগত না হয়তো।
অর্চনা নিজে চেষ্টাচরিত্র করে একটা ছোট রোল পেয়েছিল একটা ছবিতে। সুমন্দ্রর স্ত্রী হিসেবে খানিকটা পরিচিতি তার হয়েওছিল, সেই সূত্রেই। তবে সুমন্দ্রকে বলে ওঠার সুযোগ হয়নি। অবশ্য শুটিং-এ যাবার আগে বলতেই হোত।
সেদিন রাতে সুমন্দ্র বাড়ি ফিরল থমথমে মুখ নিয়ে। জানতে চাইল—তুমি নাকি সৌরীন দেবের ছবিতে সাইন করছ? একটা ফালতু রোলে?
শুনেই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল অর্চনার—ফালতু মানে? ছোট হোক, বড় হোক—যেকোন রোলই সম্মানের। এটা যে বোঝেনা সে কীসের অভিনেতা?
—বাজে কথা ছাড়ো। ঐ লোকটা—জঘন্য, ধান্দাবাজ – কত নতুন আর্টিস্টের সর্বনাশ করেছে—শেষে তার কাছে নিজেকে বিক্রি করলে? ছি! আমি ওর অফার ফিরিয়ে দিয়েছি—আর তুমি আমার মুখ ডোবাবে! এ আমি হতে দেবনা।
—চেঁচিও না। তুমি এটা জোগাড় করে দাওনি, আমাকে সৌরীনদা উপযুক্ত ভেবে নিয়েছেন। আমি কাজটা করবই—আটকাও দেখি। আমি নিজের যোগ্যতায় -
—নিজের যোগ্যতায়, না আমার নাম ব্যবহার করে? তোমার দিকে তাকাতেও আমার ঘেন্না হচ্ছে। শেষে ঐ নোংরা লোকটার কাছে --এই উদ্দেশ্য নিয়ে বিয়ে করেছিলে আমায়? তোমার ঐ সৌরীনদার মত কারোর গলায় ঝুলে পড়লেই পারতে।
—কী বললে? অর্চনা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। ঝাঁপিয়ে পড়ে সুমন্দ্রর কলার চেপে ধরেছিল। রাগে, অপমানে পাগল হয়ে উঠেছিল সে।
সুমন্দ্র নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। যাবার আগে সশব্দে দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরদিন সকালে যথারীতি ফিটফাট হয়ে কাজে বেরিয়ে গিয়েছিল, যেন কিছুই হয়নি। একবারও অর্চনার খোঁজ নেয়নি। রাতের ব্যাপারটা মিটিয়ে নেবার কোন চেষ্টাও করেনি। অর্চনার মনে হচ্ছিল সে একটা ভয়ংকর ফাঁদে পড়ে গেছে। যাকে সে স্বপ্নের নায়ক বলে ভালবেসেছিল, সে আসলে পাথরের মত কঠিন একটা মানুষ। নিজেকে ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। এই মানুষটার সঙ্গে থাকলে সে শেষ হয়ে যাবে। অথচ এসব কথা কাউকে বলে বিশ্বাস করানো যেত না। কারণ বাইরের লোকের কাছে সুমন্দ্র অত্যন্ত মার্জিত, হাসিখুশি, বন্ধুবৎসল। অর্চনার সঙ্গে অভিনয় নিয়ে সংঘাতটা না হলে হয়তো মানুষটার বিরুদ্ধে অন্যদিক দিয়ে কোন অভিযোগের জায়গা তারও থাকত না।
বিচ্ছেদটা তবু অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। অর্চনার জেদ চেপেছিল, সুমন্দ্রর সাহায্য ছাড়াই সে অভিনয়-জগতে কিছু করে দেখাবে। থিয়েটারের অভিজ্ঞতা আর নাচ—এগুলোকে সম্বল করেই সংসার, সন্তান—সব ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল অর্চনা। অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছিল তাকে; অন্য সম্পর্কের হাতছানিও এসেছিল কয়েকবার। কিন্তু কোনটাই বেশিদূর গড়ায়নি। নায়িকা হিসেবে নাম করাও হয়ে ওঠেনি। তবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে একটু একটু করে পরিচিতি হয়েছিল তার।
তারপর অনেকদিন কেটেছে, বয়স হয়েছে। বয়স্ক রোলে কয়েকটা সিরিয়ালে অভিনয় করার পর, গত কয়েক বছরে দু-তিনটে ছবিও করেছেন অর্চনা। সুমন্দ্র অবশ্য এসব সিরিয়াল-টিরিয়াল থেকে শতহস্ত দূরে। বরাবরই বেছে কাজ করার স্বভাব – নায়ক না হলেও গুরুত্বপূর্ণ, চ্যালেঞ্জিং চরিত্র চাই। আর এখন তো খুব ভাল চরিত্র না পেলে করতেই চান না। আর নতুন করে কীই বা প্রমাণ করার আছে তাঁর! অর্চনার সিরিয়াল করার খবরটা নিশ্চয় তাঁর অজানা নয়। মানুষটা কি আজও তাঁকে ছোট নজরে দেখেন এর জন্য?
***
দেখাটা হয়েই গেল ছবির প্রিমিয়ারে। সুমন্দ্রই কথা বললেন—কেমন আছ?
—চলছে। ...তুমি? থেমে থেমে অর্চনা উচ্চারণ করেন। প্রায় তিরিশ বছর পর।
—কেমন দেখছ?
—ভালই তো। গ্রেসফুলি এজিং।
সুমন্দ্র হাসেন – এ ছবিটায় ভাল কাজ করেছ দেখলাম।
অর্চনা চমকে উঠলেন। কী বলছে মানুষটা!
—ওভাবে কী দেখছ?
—ভাল হয়েছে! বলছ?
—বলছি তো ।
অর্চনা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তারপর যেন কথা ঘোরানোর জন্যই বলেন—শুনলাম অটোবায়োগ্রাফি লেখার কথা ভাবছ?
—না তো ।
—না কেন? কনটেম্পোরারি অনেকেই তো লিখেছে।
—অভিনেতার কি আত্মজীবনী হয়? হতে পারে? গভীর চোখে তাকান সুমন্দ্র। আবৃত্তির ভঙ্গিতে উচ্চারণ করা শব্দগুলো ঠিক ধরতে পারেন না অর্চনা।
—বুঝলে না? আমি যা নই সেটা করে দেখানোটাই তো অভিনয়। কী লিখব—আমি যা সত্যি, না কি যা নই?
আর বেশি কথা হয়নি। উঠে আসার আগে সুমন্দ্র হাত বাড়িয়েছিলেন অর্চনার দিকে। হ্যান্ডশেকের জন্য। আঙ্গুল কাঁপছিল অর্চনার। সুমন্দ্র কি উপভোগ করছিলেন তাঁর অস্বস্তিটা?
***
সুমন্দ্রর ফ্ল্যাটে বসে ছিলেন অর্চনা। সব কিছু মিটে যাওয়ার পর। সব কিছু বলতে গীতাপাঠ আর স্মরণসভা। দেহটা সুমন্দ্র দান করে গিয়েছিলেন। অন্য কোনরকম পারলৌকিক ক্রিয়ায় তাঁর বিশ্বাস ছিল না। শুধু গীতা ছাড়া। মানুষটার চরিত্রে আরও অনেক বৈপরীত্যের মতই।
তূণীরই মা-কে বলেছিল, একদিন এসো। তোমার নাচের অনেক পুরনো ছবি, চিঠি—খুব যত্নে রাখা ছিল। যদি কিছু নিয়ে রাখতে চাও।
পড়ন্ত বিকেলে জিনিসগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে অর্চনা বলে ওঠেন—কিছুই বুঝতে দেয় নি, না?
—না, হার্টটা অনেকদিন ধরেই ভোগাচ্ছিল, কিন্তু বলতেন না। নিজেই ফিজিসিয়ানের সঙ্গে কনসাল্ট করতেন অসুবিধা হলে। ... আমিও ক’মাস আগে জানতে পেরেছিলাম।
অর্চনা আনমনে তাকান বাইরের দিকে। কোন্ গোপন বেদনা, কোন্ সঙ্কট লুকিয়ে ছিল মানুষটার অমন ঔজ্জ্বল্যের আড়ালে!
অভিনয়। যা নই সেটা হয়ে ওঠাই অভিনয়। কথাগুলোর মানে খুঁজতে থাকেন অর্চনা। শো-কেসের উপর রাখা ছবিটা ঝাপসা হয়ে আসে তাঁর চোখে ।