মাথা ফাটার ছবি আমরা অনেক দেখেছি।
খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখের মধ্যে স্বপ্ন, বুকের মধ্যে রাগ, মুখে, মাথায় রক্ত
অনেক অনেক।
তবু এই ছেলেটার তুবড়ে যাওয়া স্কাল বোন রিকন্সট্রাকশনের ছবিটা এমন জ্বালাচ্ছে কেন?
কাম অন ডক্টর, আপনার তো অনেক বয়েস হলো,
নকশাল আমল থেকে ক্যাডাররাজ, সেখান থেকে ঘাসফুল হয়ে রামরাজ্য, একই ঘোলাটে পথে হেঁটেছেন দিবারাত্রি,
রক্তমাখা হাতে ঘেঁটেছেন হাড়, মাংস, মেদ।
আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস।
অনিবার্য পলায়ন, বাস্তবের অমোঘ কুঠার। আবার হাঁটতে শেখা, অচেনা আঁধারে।
যেমন লিখেছিলেন প্রুস্ত--ইন সার্চ অফ লস্ট টাইম।
কম্পিউটারে বানানো ছবিটা আমায় হাঁ করে গিলে খেতে আসছে।
এখানে সাগরপারে।
প্রতিদিন শান্ত সন্ধ্যা, মগ্ন আকাশের গায়ে জেগে থাকে বিষণ্ণ সিলুট।
ইউনিভার্সিটি হসপিটাল
এ আশ্রয়, এই নিকেতন। এ আমার মন্দির-মসজিদ-গীর্জা। শান্তি আর নিয়মের ছবি।
এখানে ডাক্তার পেটানোর কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা।
তবু,
সমুদ্র পেরিয়ে আমার আত্মা ফিরে যায়, কুয়াশায় ভেজা রাজপথে
কলেজ স্ট্রীট থেকে শিয়ালদা, খালপাড় হয়ে পার্ক সার্কাস।
যেখানে ফরমালিনের সঙ্গে অনিদ্রার গন্ধ মিশে যায়
অসময়ে যোনি ছিঁড়ে দেখা দেয় মানুষের মুখ, যেখানে অপটু হাতে স্ক্যালপ্যাল কাঁপে থরথর।
হিমোস্ট্যাট পিছলিয়ে রক্তে ভাসে যেখানে চশমা।
যেখানে কর্ণের রথ প্রতিদিন, মৃত্যুমুখে ভুলে যাওয়া ওষুধের নাম।
কে এখানে ডেকেছে আমায়?
কার সৃষ্টি এ নরক? এই ঘৃণা, এই ভ্রষ্টাচার? কে আমার দুচোখ বিঁধেছে লালসায়?
কে আমার আদর্শ কেড়েছে?
কে আমাকে বিদেশী করেছে?
কে আমাকে দেখিয়েছে আপোসের রামধনু রং?
কে আমাকে বুঝিয়ছে মেধা নেই, প্রতিভার চোখ কানা, মুড়ি আর মুড়কির একদর।
গুণের আদর নেই, আছে শুধু মধ্যমান, আছে খোসামোদ আর মিথ্যাচার।
ছেয়ে আছে প্রতারক, বহুরূপী, ছেনাল, সুবিধাবাদী, চামড়া বাঁচানো ভদ্রলোক, ডিগবাজি খাওয়া
বুদ্ধিজীবী, সিন্ডিকেট আর উচ্ছিষ্টভোগীদের দল।
পরিবহ।
বলতে ইচ্ছে করে এসো ভাই,
চলো আবার আমরা একসাথে ভূমিষ্ঠ হই
তুমি আর আমি, একই পরিবাহী ছন্দে, ফিরে যাই শুক্রে ও শোণিতে
হাসপাতালের সেই ক্লান্ত বিছানায়।
যেখানে আমার উৎস, যেখানে তোমার ভবিষ্যৎ।