• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৬ | সেপ্টেম্বর ২০১৯ | কবিতা
    Share
  • পাঁচটি কবিতা : শেখ একেএম জাকারিয়া


    আসন

    ভাতঘুমে ডুবে থাকা চৈত্রের দুপুরের মতো সুনসান মফস্বলের কবি।
    কারণ খুঁজলেই পাবেন পৌরানিক বর্ণের অভিশাপে অভিশপ্ত তিনি।
    বেদনার সিম্ফনি বিরাজমান তার প্রতিটি শব্দচয়নে, প্রতিটি বাক্যবিন্যাসে।
    উদ্ভিদতত্ত্বের ক্লাসে গাছবৃকের প্রচ্ছদ আঁকা হয়নি কবির।
    তবে জীবন ও স্বপ্নের ক্যানভাসে এঁকেছেন কবিতার গোপন চিবুক।
    এত যে আদর যত্ন, এত যে প্রেম জমা কবিতার কার্নিশে,
    এত যে শব্দনিয়ে খেলেই চলছেন বিরামহীন,
    নান্দনিকখেলা শব্দের খেলাঘরে। হবে কি একটি আসন শব্দের ঘুঘুচরে?


    নির্জলা দুপুরে একদিন

    নির্জলা দুপুরে একদিন। কিশোর বেলার আমাকে বললাম, পথিক দাঁড়া। আমাকে নিয়ে যা, গাঙচিল ওড়া আকাশে। নিয়ে যা, জোছনামাখা কাজলাদিদির বাঁশবাগানে। নিয়ে যা, পিয়াইন নদীর গোলাজল মাখা চিনামাটির পিচ্ছিলঘাটে।

    হাতের বামবাশে যে নদী হেঁটে গেছে দেওবন ছুঁয়ে, আমি এখনো দেখি,শ্বেতসবুজের মিলনমেলা। যার পাদ-প্রদীপে হেসে ওঠে মানুষসহ ত্রিপদী চৌপদী জানোয়ার,পুরোনো টিন, সবুজ ধানগাছ, উলুছন আর বিইন্যা। ইচ্ছেরা আজ জন্মমৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়ানো তেজহীন প্রদীপ।

    এখানে গল্পরা জেগে নেই, আখ্যান-নাটকেরা ঠাট্টায় মশগুল।অন্যদিকে সনির্বন্ধ হেসে যায় সংখ্যালঘু কবিতারা নির্জন ছন্দজলে। আর আমি হরহামেশা ভাটক দেই কবিতার বিভব, অকবিদের হাতে।

    তবুও একটুকরো সাদাপাতা পেলেই স্বপ্ন দেখি, কবিতায় সূর্যের লালচে রঙ। দেখি এক দল কিশোর-কিশোরীর কাঁদে ঝুলানো চুপড়িভর্তি বহুপ্রজাতির ছোট মাছ। দেখি সামান্য সময় নদীজলে চিংড়ি-কাঁকড়া-শামুকের সুখবিলাস। দেখি কয়েকটি টেলাজান,অগুণতি জাহাজ, পালতোলা নৌকা। দেখি, নিলাজ কন্যার জলটানা কলসী আর ঘোলাজলঘাট। আরো কত কী!


    নিয়তি

    ঘটকের ঝুলি থেকে হেঁটে আসা প্রস্তাবটি .. বিষিয়ে তুললো জীবন।
    আঁতুড়ঘর ডিঙোতেই হবে ঋতুমতি যুবতীর!
    আকাশ, বাতাস, নদী সবারই একই ইচ্ছে
    নীতি সরোবরের পঙক্তিগুলো তুমি নামক কলসে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
    অকাব্যের পিচহীন রাস্তায় অনিচ্ছাকৃত বাজাতে হবে গীতিকাব্যের মাউথ অরগান।
    অসমাপ্ত কাব্যে দাঁড়ি কমার ম্যাকবেথ
    অহেতুক উড়িয়ে দিতে হবে প্রবাসী হাওয়ায়!
    সাথে আয়ুর আর্কেস্ট্রা, শব্দতলার প্রেমময় শব্দ!
    এর কোনো সমাধান নেই ! শুধু টান পড়বে দুরন্ত হৃদয়ে...

    মৌন মিছিল

    মৌন পুতুল, জলের আয়নায় রঙহীন মুখ তুমি
    সফেদ ক্যানভাসে ভেসে ওঠে শহর, হেঁটে যায় আমি-
    দিগন্তময় চোখ এখনও আঁকেনি কেউ
    অব্যবহৃত রঙ তুলি-চারকোল-প্যালেট আগের মতই
    ভুলে গেছি পথ, তোমাকে পাবার রাস্তাটা ডুবে গেছে
    সূর্য ডোবার মতো, সন্ধ্যের আকাশে-
    অচেনা আমি,জানি বিষাদ আঁকবে রাত্রি
    অস্থির জল, কাঁটবে সাঁতার
    দু’চোখের তারায়- খরায় পুড়ছে বুক, ধুক! ধুক!
    এখনও কিছু কথা আনকোড়া, শেষ হয়ে যায়নি-
    শেষ পৃষ্ঠার পর আবারও শুরু করা যায়-
    উল্টেপাল্টে দেখলে নিজের ছবিই ভেসে ওঠে ওখানে!

    নীরদ তনয়া

    বরষা বিদায় বিদায় নিয়েছে ক’দিন আগে।
    নীরদ তনয়ার আসা যাওয়া এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি।
    এখনও গৌরবর্ণ চন্দ্রালোক মেঘডুম্বুর শাড়িতে ঘুমটা টানা।
    উপরে তাকালেই দেখি, নীলাম্বর জুড়ে মেঘের আড়ম্বর,
    আকাশজমিনের মাঝখানে মেঘরোদের কানামাছি খেলা।
    ডানপাশে তাকালেই চোখে পড়ে
    নদী তীর ঘেঁষে হেসে ওঠা অসংখ্য কাশফুল,
    হিমহিম বাতাসে উড়া এসব ফুলের ঢেউ তুলা স্রোত।
    বামপাশে চোখে পড়ে, সরু রাস্তার দু’পাশে জেগে ওঠা অসংখ্য ঘাস।
    ঘাসের ডগায় ঝুলে ফোঁটা ফোঁটা রূপারং জল।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments