|| হাইট ||
লোকটার নাম শুনেছিলাম।
সবাই বলতেন, লোকটার হাইট সাত ফুট তিন ইঞ্চি
ইয়া ছাতি
লম্বা লম্বা হাত।
আমি বিশ্বাস করতাম না।
দূর থেকে যে দিন দেখলাম
বুঝলাম, কেউ মিথ্যে বলেননি।
সাত ফুট তিন কী?
ঠিকঠাক মাপলে, দু'-চার ইঞ্চি বেশিই হবে।
এর ক'দিন পরেই
লোকটার সঙ্গে আমার আলাপ হল,
ভাল করে চিনলাম।
একদিন ফিতে দিয়ে মাপতে গিয়ে দেখি
তাঁর হাইট মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।
পাঁচ ফুট চার!
হিসেবে কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে না তো!
পরের দিন মাপতে গিয়ে দেখি
তিন ফুট সাত,
তার পরের দিন
কোনও রকমে টেনে-টুনে দু'ফুট।
দু'ফুট! এর পরের দিন মাপতে গেলে
হয়তো আরও কমে যাবে...
আমি ছিটকে চলে এলাম।
মানুষকে আর কত ছোট হতে দেখব!
কত!
|| সতর্কীকরণ ||
বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
দেখবেন, ছেলেদের দিকে তেমন ভিড় না থাকলেও
লেডিজ সিটের সামনে মেয়েদের ঠিক পিছনে
কিংবা গাঁ ঘেষে দাঁড়ানোর জন্য
বাবা-জ্যাঠা-মামাদের সে কী প্রাণপণ লড়াই
কয়েক দিন খেয়াল করলেই টের পাবেন
গভীর রাতে উঠে শাশুড়ি কান পাতছেন
ছেলের ঘরের দরজায়
না না, ছিঃ, ও সব শোনার জন্য নয়,
কান পাতছেন, বউ তাঁর ছেলের কানে কোন মন্ত্র দিচ্ছেন,
তা শোনার জন্য
বয়স হলে মানুষেরা ফুটপাতের এত ধার ঘেঁষে হাঁটেন যে, নোংরা তাঁরা মাড়াবেনই।
বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।
এমনকী, যখন আমার বয়স হবে, তখন আমার থেকেও
অবশ্য আমার বয়স কি আর বাড়বে!
|| অপারগ ||
বন্যায় সব ভেসে গেছে
ক’টা জামাপ্যান্ট ছাড়া কিছুই আনতে পারিনি…
ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলেছিল সে।
হঠাৎ করে ঘরে আগুন লেগে গেলে
কিংবা আচমকা ভূমিকম্প হলে
মানুষ কী নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে! কী নিয়ে!
ও রকম কোনও দিন যদি আমার জীবনে আসে
তা হলে কী কী নেব? কী কী?
তার একটা তালিকা তৈরি করে রেখেছিলাম আমি।
সেই তালিকার প্রথমেই ছিল
আমার কবিতার খাতা,
দ্বিতীয় স্থানে ছিল
আমার পোষা বেড়ালছানা,
আর তৃতীয় স্থানে
ছেলেবেলায় পাওয়া আমার প্রথম প্রেমপত্র।
চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তমে আর কী কী ছিল
এখন আর মনে নেই।
যে দিন সত্যি সত্যিই ওই ভাবে আমাকে বেরিয়ে আসতে হল
সে দিন কিচ্ছু নিতে পারলাম না
না সেই প্রেমপত্র
না সেই ছোট্ট বেড়ালছানা
না সেই কবিতার খাতা
কিচ্ছু না। কিচ্ছু না। কিচ্ছু না।
এমনকী, নিজেকেও সঙ্গে করে আনতে পারলাম না।
|| কী করে বলি ||
হাইকম্যান্ডকে কী করে বলি!
ও রকম দু'-চারটে খুন সবাই করতে পারে
কিন্তু এক কোপে কারও মাথা নামিয়ে
সেই মুণ্ডু নিয়ে কখনও কি ফুটবল খেলেছেন প্রকাশ্য রাস্তায়?
তবে?
ও রকম দশ-বিশটা ধর্ষণ সবাই করতে পারে
কিন্তু আপনার নাম শুনলেই
মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যাবে মেয়েদের স্কুল, পাপড়ি গুটিয়ে নেবে ফুল
সে রকম বিভীষিকা কি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন চারিদিকে?
তবে?
আপনাকে আসতে দেখলে
আশপাশের বাজার, চৌরাস্তার মোড় কিংবা অফিসপাড়া
খরগোশ হয়ে যেতেই পারে
কিন্তু ওদের ভিতরের বাঘটাও যে মাথা নুইয়ে কোণে গিয়ে লুকোবে
সে রকম কুচকুচে কালো মেঘে কি ঢেকে দিতে পেরেছেন গোটা আকাশ?
তবে?
হাইকম্যান্ডকে আমি কী করে বলি
এ বার অন্তত ভোটে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে একটা টিকিট দিক!