মুখবন্ধ
তিনি বাংলার জনপ্রিয়তম কথা সাহিত্যিক। তাঁর লেখার গুণমান নিয়ে অনেক সমালোচনাই শোনা যায়। তাঁকে সাহিত্যজগতে উচ্চ স্থান দিতে বেশ কিছু সমালোচকের প্রবল অনীহা। এমনকি পরবর্তীকালেও কোন গদ্যসাহিত্যিক যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দ্বারা বিশেষ প্রভাবিত, সেরকম শোনা যায়নি।
তবে শুধু বাংলাতেই নয়, সারা ভারতেও তিনি খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। আমার একটি পরিচিত দক্ষিণ ভারতীয় ছেলে নিজে থেকেই এসে আমাকে জানিয়েছিল যে তার ‘শরৎ’ নামকরণ তার বাবার সবচেয়ে প্রিয় সাহিত্যিকের নামে।
আমার নিজেরও শরৎচন্দ্রের কিছু উপন্যাস খুব প্রিয়। শ্রীকান্ত তো আছেই, এছাড়া আরো কিছু উপন্যাস, যাদের মধ্যে অগ্রগণ্য দুটি ছোট উপন্যাস—পল্লীসমাজ ও পণ্ডিতমশাই। বিশেষতঃ পণ্ডিতমশাইয়ের বৃন্দাবনকে বড়ই ভাল লাগতো। তার শিক্ষকতার আদর্শকে খুব কাছের মনে হত। আমাদের ছাত্রজীবনেও ঐরকম শিক্ষকদের দেখেছি বলেই হয়তো।
তিনি মাত্র কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, সংখ্যার দিক দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথ লিখিত প্রবন্ধের তুলনায় তারা নিতান্তই অপ্রতুল। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এর মধ্যেই তিনি অকপটভাবে, সহজ সরল ভাষাতেই নিজের বক্তব্যকে মেলে ধরেছেন। একমত হই বা না হই, তাঁর প্রবন্ধ লেখার আঙ্গিকটি আমার ভারী মনোগ্রাহী লাগে। সেই দিকগুলিতে আলো ফেলার উদ্দেশ্যেই এই লেখার আয়োজন।
জীবন ও রচনাকাল
তাঁর মৃত্যু ১৯৩৮ সালের ১৬ই জানুয়ারি। প্রথম লেখা (স্বনামে নয় যদিও) ‘মন্দির’ প্রকাশিত ও পুরস্কৃত ১৯০৩ সালে। শেষের দিকে বছর দুয়েক শারীরিক অসুস্থতার দরুন বেশি লিখতে পারেননি। এছাড়া ১৯০৩ থেকে ১৯১২ অবধি রেঙ্গুন বসবাসকালীন তিনি সেভাবে সাহিত্য রচনায় মন দিতে পারেননি। অর্থাৎ ধরা যায় প্রায় ১৯১৩ থেকে ১৯৩৬, তাঁর লেখকজীবন মোটামুটি ২৩–২৪ বছর ।
তাঁর অগ্রজ ও তুলনায় অধিক প্রতিভাবান দুই লেখক, বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথকে তিনি জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছিলেন। রেঙ্গুন থেকে ফিরে সাহিত্যকে জীবিকা করেই তিনি জীবন নির্বাহ করেছিলেন। এমনকি বাংলা চলচ্চিত্র যখন সাহিত্য নির্ভর হতে শুরু করলো, তখনও শরৎচন্দ্র এগিয়ে রইলেন। তাঁর কাহিনি অবলম্বনে ১৯২২ সালে নির্বাক ছবি ‘আঁধারে আলো’ এবং ১৯৩১ সালে সবাক ছবি ‘দেনা-পাওনা’ এই ব্যাপারে পথিকৃৎ। আর ১৯৩৫ সালে প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’ দর্শকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করলো। আজও আমরা দেখি দেবদাসের চাহিদা কমেনি। একবিংশ শতাব্দীতেও আবার পুনরুজ্জীবন লাভ করেছে। আবার আসছে শ্রীকান্তও।
তাঁর রচিত প্রবন্ধগুলি নিম্নরূপ পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত—
নারীর মূল্য – ১৯১৭ তরুণের বিদ্রোহ - ১৯২৯ স্বদেশ ও সাহিত্য আমার কথা—১৯২২ স্বরাজ সাধনায় নারী - ১৯২১ শিক্ষার বিরোধ - ১৯২২ স্মৃতিকথা - ১৯২২ অভিনন্দন - ১৯২২ ভবিষ্যৎ বঙ্গ-সাহিত্য - ১৯২৩ গুরু-শিষ্যসংবাদ - ১৯১৪ |
সাহিত্য ও নীতি – ১৯২৪ সাহিত্যে আর্ট ও দুর্নীতি - ১৯২৫ ভারতীয় উচ্চসঙ্গীত—১৯২৫ আধুনিক সাহিত্যের কৈফিয়ৎ - ১৯২৪ সাহিত্যের রীতি ও নীতি—১৯২৭ অভিভাষণ ১—১৯২৮ অভিভাষণ ২—১৯২৯ যতীন্দ্র সম্বর্ধনা—১৯৩১ শেষ প্রশ্ন - ?? রবীন্দ্রনাথ—১৯৩১ |
এছাড়াও আরো একটি প্রবন্ধের কথা বলা যেতে পারে—মাতৃভাষা এবং সাহিত্য।
এপ্রিল ১৯২৩শে নারীর মূল্য এবং আগস্ট ১৯৩২শে ‘স্বদেশ ও সাহিত্য’—এই দুটিই তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন।
নারীর কল্যাণে আধুনিকমনস্কতা
‘নারীর মূল্য’এবং ‘স্বরাজসাধনায় নারী’—এই দুই প্রবন্ধ বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে। লক্ষণীয় প্রবন্ধগুলির রচনাকাল, বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়—তৃতীয় দশক। এই সময়ে ইউরোপেও নারী আন্দোলন শুরু হলেও সেভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। এই প্রবন্ধগুলি সেভাবে অনুবাদিত হলে পথিকৃতের মর্যাদা পেত, এমন সম্ভাবনা আছে।
সাহিত্য সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে আমরা একবার এই প্রবন্ধগুলিতে চোখ বুলিয়ে নিতে চাই।
“আমার জীবনের অনেক দিন আমি Sociology-র (সমাজতত্ত্ব) ছাত্র ছিলাম। দেশের প্রায় সকল জাতিগুলিকেই আমার ঘনিষ্ঠভাবে দেখবার সুযোগ হয়েছে,—আমার মনে হয় মেয়েদের অধিকার যারা যে পরিমাণে খর্ব করেছে, ঠিক সেই অনুপাতেই তারা, কি সামাজিক, কি আর্থিক, কি নৈতিক সকল দিক দিয়েই ছোট হয়ে গেছে। এর উলটো দিকটাও আবার ঠিক এমনি সত্য। অর্থাৎ, যে জাতি যে পরিমাণে তার সংশয় ও অবিশ্বাস বর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, নারীর মনুষ্যত্বের স্বাধীনতা যারা যে পরিমাণে মুক্ত করে দিয়েছে,—নিজেদের অধীনতা-শৃঙ্খল ও তাদের তেমনি ঝরে গেছে।” ১এত সহজ করে ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার কথা আগে আমরা কি শুনেছি? তিনি যে সমাজতত্ত্বের ছাত্র ছিলেন তাঁর ‘নারীর মূল্য’ প্রবন্ধটি পড়লেই পরিষ্কার বোঝা যায়। ১৯১৭ সালে, তিনি বিভিন্ন দেশের নারীদের ওপর পুরুষ কর্তৃত্বের যে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন তা পড়লে রীতিমতো তাজ্জব হতে হয়। একথা বলা হচ্ছে না যে তাঁর সব মতবাদই সম্পূর্ণ ঠিক, অনেক কিছু নিয়েই তর্ক এবং ভিন্নমত পোষণের সম্ভাবনা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব ঠিকমতো প্রচারিত হলে তিনি নারীমুক্তির ভগীরথ অভিধায় অভিভূত হতে পারতেন। একটি অপেক্ষাকৃত অনুন্নত, পরাধীন দেশের সাহিত্যিকের এত উঁচু মনের ও মানের চিন্তাধারা থাকতে পারে, তা প্রবন্ধটি পড়লে বোঝা যাবে। এমনকি, আজও কোন নারী আন্দোলনের কর্মী এই প্রবন্ধগুলি পড়ে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হতে পারেন।
সাহিত্যলোচনা
আলোচনা শুরু করার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক কেন তিনি প্রবন্ধগুলো লিখেছিলেন। তাঁর প্রকাশক আর্য পাবলিশিং কোং এর শ্রী দীনেশচন্দ্র বর্মণ জানাচ্ছেন,
“এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, কয়েক বৎসর পূর্ব্বে, জনকয়েক শুচিবায়ুগ্রস্ত সমালোচকের কৃপায় আধুনিক সাহিত্যিকদের বিরুদ্ধে একটি তীব্র আন্দোলনের সৃষ্টি হয় এবং ‘প্রত্যক্ষে ও পরোক্ষে শরৎ সাহিত্যের প্রতি দুই হাত পুরিয়া বিদ্বেষের আবর্জ্জনা নিক্ষেপ করতে থাকেন। উপরোক্ত প্রবন্ধগুলি সে সময়ে তাহার প্রতিবাদে রচনা।”২এই কথাটি মনে রেখেই প্রবন্ধপাঠ শুরু করতে হয়। তাঁর প্রবন্ধগুলিতে বেশ কিছু বক্তব্য বারে বারে ফিরে এসেছে, কিছু প্রসঙ্গের পুনরাবৃত্তিও হয়েছে। তারও কারণ সম্ভবত একটাই—এগুলি মূলতঃ প্রতিবাদের রচনা।
শুরু করতে চাই যে প্রবন্ধটি দিয়ে সেটির নাম—‘মাতৃভাষা এবং সাহিত্য’। এটি অগ্রন্থিত। এমনকি অনলাইন রচনাবলীতেও এটি অজ্ঞাত রচনার অন্তর্ভুক্ত। ৩
প্রবন্ধের প্রথমেই জানতে পারি তখনও ‘তথাকথিত’ শিক্ষিত বাঙালির মধ্যে কি পরিমাণ ইংরেজি ভাষার প্রতি অনুরাগ আর মাতৃভাষার প্রতি বিরাগ ছিল। সেই প্রতিষ্ঠিত বাঙালিগণ, - একেবারে উচ্চশ্রেণীর, তাঁরা
‘লজ্জার পরিবর্তে শ্লাঘাবোধ করিতেন অর্থাৎ ভাবটা এই যে, এত ইংরাজি শিখিয়াছি যে, বাঙ্গালায় একখানা চিঠি লিখিবার বিদ্যাটুকু পর্যন্ত আয়ত্ত করিবার সময় পাই নাই।' ৪কিমাশ্চর্যম! অর্থাৎ আজকের সেই বিখ্যাত কবিতার (বাংলা টাংলা—অপূর্ব কুমার দত্ত) চরিত্ররা তখনো, সেই তথাকথিত স্বর্ণযুগেও উপস্থিত। এঁদের মা-রা ও বলে থাকবেন —
‘চুপ করো তো / ওর ফল্টটা কিসে, / স্কুলে কেন বেংগলিটা / পড়ায় না ইংলিশে?মনোবিজ্ঞানের দিক থেকেও তিনি খুবই প্রাঞ্জল ভাষাতে ব্যাখ্যা করেছেন কেন মাতৃভাষার দক্ষতা, সভ্যতার মূল ভিত্তি হতে পারে। মূল কথাটি যা বলেছেন তা হল ভাষা ও চিন্তা—একে অপরের পরিপূরক। ভাষা ছাড়া চিন্তা হয় না, আবার চিন্তাও ভাষার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সেই পথ ধরে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন যে—মানুষের মধ্যে চিন্তাশীলতা বিকাশ করতে গেলে বিদ্যাশিক্ষা ও চিন্তাচর্চা মাতৃভাষার মাধ্যমেই সবচেয়ে উপযোগী। এই পথে তিনি বৈজ্ঞানিকদের প্রসঙ্গ টেনেছেন, যা আমার কাছে খুবই অভিনব মনে হয়েছে। বলছেন,
“একবার বলিয়াছি, ভাষা ছাড়া চিন্তা করা যায় না। তাই জগতে যাঁহারা চিন্তাশীল বলিয়া খ্যাত, তা সে চিন্তার যে-কোন দিকই হউক, মাতৃভাষায় দেশের সাহিত্যে তাঁহারা ব্যুৎপন্ন একথা বোধ করি অসংশয়ে বলা যায়।ভীষণভাবে আশ্চর্য হতে হয় তাঁর গভীর আলোচনার ব্যাপ্তি দেখে। দেশী, বিদেশী বৈজ্ঞানিকদের সাহিত্য প্রতিভা সম্পর্কেও তাঁর এতটা সজীব আগ্রহ? আর একটি সন্দেহও মনে জাগে। আমরা এত যে ইংরেজি মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছি, তাতে আমাদের বিজ্ঞানচিন্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না তো?পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিকদের প্রতি চোখ ফিরাইলে এই সত্য অতি সহজেই সপ্রমাণ হয়। তাঁহারা দর্শন বা বিজ্ঞান লইয়াই থাকেন, লোকে তাঁহাদের চিন্তার ঐ দিকটার পরিচয় পায়, কিন্তু, দৈবাৎ কোন প্রকাশ পাইলে, বৈজ্ঞানিকের অসাধারণ সাহিত্য-ব্যুৎপত্তি দেখিয়া লোকে বিস্ময়ে অবাক হইয়া যায়। বিলাতের হক্সলি, টিন্ডল, লজ, ওয়ালেশ, হেল্মহোজ, হেকেল প্রভৃতি বৈজ্ঞানিকেরা খুব বড় সাহিত্যিক। আমাদের জগদীশচন্দ্র, প্রফুল্লচন্দ্র ও কোন খ্যাত সাহিত্যিক অপেক্ষা ছোট নহেন।” ৫
অন্যদিকে, সাহিত্যের সত্য ও বাস্তবতা সম্পর্কে লিখছেন,
কিন্তু, আর কোন্ কাজ হইবে? তাঁহাদের মতে যাহা ঘটিয়াছে তাহাই সত্য, কিন্তু যাহা হয়ত ঘটিলে ঘটিতে পারিত কিন্তু ঘটে নাই, তাহা মিথ্যা। কিন্তু বস্তুতঃ তাই কি? এইখানে কবির অমর উক্তি উদ্ধৃত করি —- এই অংশে তিনি একেবারে সাহিত্য রচনার মর্মমূলে পৌঁছে গেছেন। তাঁর আরো কতকগুলি প্রবন্ধ থেকে সাহিত্য সম্পর্কিত তাঁর এই বিশ্বাস আরো প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন তাঁর অন্য একটি প্রবন্ধ—‘সাহিত্য ও নীতি’।ঘটে যা তা সব সত্য নয়, কবি তব মনোভূমি
রামের জনমস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।বস্তুতঃ ইহাই সত্য এবং বড় রকমের সত্য। ইংরাজেরা যাহাকে ‘এ হায়ার কাইন্ড অফ ট্রুথ’ বলেন, ইহা তাহাই। সীতাদেবী যথার্থই শ্রীরামচন্দ্রকে অতখানি ভালবাসিয়াছিলেন কিনা, ঠিক অমনি পতিগতপ্রাণা ছিলেন কিনা, যথার্থই রাজপ্রাসাদ, রাজভোগ ত্যাগ করিয়া বনে-জঙ্গলে স্বামীকে অনুসরণ করিয়াছিলেন কিনা, কিংবা ঐতিহাসিক প্রমাণে তাঁহাদের বাস্তবসত্তা কিছু ছিল কিনা, ইহাও তত বড় সত্য নয়, যত বড় সত্য কবির মনোভূমিতে জন্মিয়া রামায়ণের শ্লোকের ভিতর দিয়া বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে।
৬
খুবই বিনীতভাবে তিনি বলেছেন—
‘এই কথাটাই আমি গোটা-দুই দৃষ্টান্ত দিয়ে পরিস্ফুট করতে চাই। আমার নিজের পেশা উপন্যাস-সাহিত্য, সুতরাং এই সাহিত্যের দু-একটা কথা বলা বোধ করি নিতান্তই অনধিকার চর্চা বলে গণ্য হবে না।‘ - ৭এখানে তিনি তাঁর আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করে জানিয়েছেন যে যা কিছু ঘটে তাই সাহিত্যের উপাদান হতে পারে না। বাস্তব অভিজ্ঞতাকে রাখতে হয়, কিন্তু বাস্তব ও অবাস্তবের সংমিশ্রণে অনেক পরিশ্রমেই কোন চরিত্র বা আখ্যানপঞ্জী গড়ে ওঠে। তাঁর বক্তব্য খুবই প্রাঞ্জল—যা কিছু সত্যই ঘটে তাকে নির্বিচারে স্থান দিলে বড়জোর সত্যকথন হতে পারে, কিন্তু সাহিত্য হয় না।
তাঁর পল্লীসমাজ গ্রন্থের নায়িকা বিধবা রমা ও রমেশের বাল্যপ্রণয় নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছিল ও ধিক্কার জুটেছিল, তাকে বলেছেন—নীতির ধিক্কার, আর্টের ধিক্কার নয়।
এখানে দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি এনেছেন বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ উপন্যাসে রোহিণী চরিত্রের কথা, যা তাঁকে খুব ধাক্কা দিয়েছিল। এখানে বঙ্কিমচন্দ্র রোহিণীকে পাপের শাস্তি দিলেন, কিন্তু সেটাই কি সাহিত্যের চাহিদা ছিল? বঙ্কিম কি নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করলেন না? লিখছেন —
“আমার আজও যেন মনে হয়, দুঃখে সমবেদনায় বঙ্কিমচন্দ্রের দুই চোখ অশ্রু পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, মনে হয়, তাঁর কবি চিত্ত যেন তাঁরই সামাজিক ও নৈতিক বুদ্ধির পদতলে আত্মহত্যা করে মরেছে।”
“উপন্যাসের চরিত্র শুধু উপন্যাসের আইনেই মরতে পারে, নীতির চোখরাঙানিতে তার মরা চলে না।” - ৮অসাধারণ মন্তব্য! বিশেষতঃ আমাদের মত সাধারণ, সাহিত্যানুরাগী পাঠকের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য খুব প্রয়োজনীয় কথা। এখানে তিনি উপন্যাসের আইন (বা ব্যাপক অর্থে শিল্পের আইন) বা রীতি সংক্রান্ত আলোচনা এনেছেন। সামাজিক ভাবে যা দৃষ্টিকটু তা শিল্পে গ্রহণযোগ্য হতে পারে সৃষ্টিকর্তার হাতের ছোঁয়াতে। আবার খুব সামাজিক ভাবে গৃহীত ঘটনাও শিল্পমাধ্যমে সেভাবে অঙ্কিত না হতে পারে। কারণ তাদের আইন বা রীতিনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
‘আধুনিক সাহিত্যের কৈফিয়ত’ প্রবন্ধটি ও কৌতূহলোদ্দীপক। এই প্রবন্ধটি পড়লে জানা যায় তখনও নতুন সাহিত্যিকদের বয়স্কদের কাছে বিড়ম্বনায় পড়তে হত এবং ‘কৈফিয়ৎ’ দাখিল করতে হত। এই পংক্তিটি উল্লেখযোগ্য,
“তাঁহাদের দ্বিতীয় বক্তব্য এই যে, বাঙ্গালা সাহিত্য রসাতলে গেল,—আর বাঁচে না। আবর্জনায় বাঙ্গালা সাহিত্য বোঝাই হইয়া উঠিল, আমাদের কথা কেহ শুনে না; হায়! হায়! বঙ্কিমচন্দ্র বাঁচিয়া নাই, মুগুর মারিবে কে? ঝুড়ি ঝুড়ি নাটক নভেল ও কবিতা বাহির হইতেছে, তাহাতে সুশিক্ষা নাই—তাহা নিছক দুর্নীতিপূর্ণ।”- ৯এই কথা পড়ে আমার আধুনিক সাহিত্যিক বন্ধুগণ যদি আজকের যুগের সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পান, তাদের দোষ দিতে পারিনা। আসলে যে কোন যুগে, যে কোন কালে, যে কোন দেশে, আধুনিক শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে চিরাচরিতের সংঘাত হয়েছে। সেই যে ‘হঠাৎ আলো দেখবে যখন, ভাববে একি বিষম কাণ্ডখানা’!
আরো উদ্দীপ্ত হই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখে। এই পর্যায়টিও বাংলা সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য ও ঐতিহাসিক দিক।
‘সাহিত্যের রীতি ও নীতি’ প্রবন্ধে তিনি বেশ সরসভাবেই এই বিরোধের কথা উল্লেখ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তখন বিচিত্রা পত্রিকায় ‘সাহিত্যের ধর্ম’ নামক প্রবন্ধ লিখেছেন। তা কিঞ্চিৎ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ডঃ নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত কিছুটা প্রতিবাদ করেছেন। শরৎচন্দ্রের ভক্তরা তাঁকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে। বিবাদ তুঙ্গে, ওদিকে কবিবরের অবস্থা শরৎবাবু কল্পনা করছেন —
“প্রিয় পাত্ররা গিয়া কবিকে ধরিয়াছে, মশাই আমরা ত আর পারিয়া উঠি না, এবার আপনি অস্ত্র ধরুন। নানা, ধনুর্বাণ নয়,— গদা। ঘুরাইয়া দিন ফেলিয়া ওই অতি-আধুনিক-সাহিত্যিক-পল্লীর দিকে। লক্ষ্য? কোন প্রয়োজন নাই। ওখানে একসঙ্গে অনেকগুলি থাকে।”১০আচ্ছা। কত প্রাসঙ্গিক এখনো, তাই না? ‘অতি-আধুনিক-সাহিত্যিক-পল্লী’—যুগে যুগেই আছে।
প্রিয়পাত্রদের কবিকে ধরার কথা যে কষ্টকল্পনা নয় তাও জানা যায়, একটি চিঠির থেকে। লেখক ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক শ্রী সজনীকান্ত দাস। চিঠির অংশবিশেষ —
“শ্রীযুক্ত নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত মহাশয় এই শ্রেণীর লেখকদের অগ্রণী। Realistic নাম দিয়ে এগুলিকে সাহিত্যের একটা বিশিষ্ট অঙ্গ বলে চালাবার চেষ্টা হচ্ছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, নরেশবাবুর কয়েকখানি বই, “কল্লোলে প্রকাশিত বুদ্ধদেব বসুর ‘রজনী হ’ল উতলা’ নামক একটি গল্প, যুবনাশ্ব’ লিখিত কয়েকটি গল্প, এই মাসের (ফাল্গুন) কল্লোলে প্রকাশিত বুদ্ধদেব বসুর কবিতাটি, ‘কালিকলমে নজরুল ইসলামের মাধবী প্ৰলাপ’ ও ‘অনামিকা’ নামক দুটি কবিতা ও অন্যান্য কয়েকটি লেখার উল্লেখ করা যেতে পারে।”১১
উপরে চিঠির যে অংশ উদ্ধৃত তাতে অতি-আধুনিক-সাহিত্যিক-পল্লী বলতে যে ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীকেই ধরা হয়েছে তাও স্পষ্ট। এই প্রবন্ধের আরো এক উল্লেখযোগ্য বিষয়—শরৎচন্দ্র সাহিত্যে বাস্তবতার ছোঁয়া প্রসঙ্গে এখানে ‘কাব্য-সাহিত্য’ এবং ‘কথা-সাহিত্য’— এই দুইয়ের মধ্যে স্পষ্ট প্রভেদ দেখিয়েছেন। বলছেন কাব্য রচনাতে বিজ্ঞানকে বা বাস্তবকে উপেক্ষা করা গেলেও উপন্যাস সাহিত্যে তা চলে না। লিখছেন —
“বিজ্ঞানকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করিয়া ধর্মপুস্তক রচনা করা যায়, আধ্যাত্মিক কবিতা রচনা করা যায়, রূপকথা-সাহিত্যও রচনা করা না যায় তাহা নহে, কিন্তু উপন্যাস-সাহিত্যের ইহা শ্রেষ্ঠ পন্থা নহে।”১২আজকের দিনে হয়তো এই মন্তব্য নিয়ে তর্ক চলবে কিন্তু তখন, বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় বা তৃতীয় দশকে এটাই তাঁর কাছে সত্য মনে হয়েছিল। আর তা নিঃসংশয়ে বিবৃত করতে চান তিনি।
তিনি খুব সংযত ভাবে রবীন্দ্রনাথকে পরামর্শ দিয়েছেন যে প্রকৃত অভিভাবকের মত তাঁর উচিত অনুজ সাহিত্যিকদের সস্নেহে দিকদর্শন করানো। এই যে নবীন সাহিত্যব্রতীরা, এঁরা তো সাহিত্য সেবাতেই নিয়োজিত। তাহলে ক্ষতি কি যদি তাদের ভুলগুলি সস্নেহে দেখিয়ে দেওয়া যায়? হাজার হোক, ‘স্নেহ সর্বদাই নিম্নগামী’! শরৎচন্দ্র নিজের সাহিত্যিক জীবনের কথাও মনে করেছেন, গালমন্দ তো তাঁকেও কম খেতে হয়নি। সেকথা মনে রেখে তিনি সর্বান্তঃকরণে তাঁদের আশীর্বাদ করেন। কিন্তু তিনি বিমর্ষভাবে লক্ষ করেছেন, এঁদের প্রতি একটু বেশীই আক্রমণ হচ্ছে।
প্রবন্ধ শেষ করছেন তিনি, রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ করে —
“—বাঙ্গালা সাহিত্যসেবীদের মাঝে এমন কেহই নাই যে তাঁহাকে মনে মনে গুরুর আসনে প্রতিষ্ঠিত করে নাই, আধুনিক সাহিত্যের অমঙ্গল আশঙ্কায় যাহারা তাঁহার কানের কাছে ‘গুরুদেব’ বলিয়া অহরহ বিলাপ করিতেছে, তাহাদের কাহারও চেয়েই ইহারা রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধায় খাটো নহে।”১৩“গুরুদেব বলিয়া অহরহ বিলাপ করিতেছে-’—অর্থাৎ গুরুদেবের সেই স্তাবককুল যাঁরা সাহিত্যসেবার চাইতে স্তাবকতা করতেই বেশি ভালবাসে। খোদ রবীন্দ্রনাথকেই তিনি যেন সতর্ক করে দিচ্ছেন—তিনি যেন কর্তব্যচ্যুত না হন। অর্থাৎ ঐ চিঠিকে বেদবাক্য না ধরে নিয়ে নিজের চোখ কান খোলা রেখেই কলম ধরেন। তিনি প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু সশ্রদ্ধভাবে, সবিনয়ে।
আমার মনে হয়, তাঁর এই নম্র অথচ দ্বিধাহীন প্রতিবাদ থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারি। আগেই দেখেছি, নিজের সাহিত্য সংক্রান্ত বক্তব্যের ধার বাড়াতে তিনি নিজেই রবীন্দ্রনাথ উদ্ধৃত করেছেন, আবার যেখানে মনে হয়েছে তিনি দ্বিমত পোষণ করেন, ব্যক্ত করেছেন সুস্পষ্টভাবে।
বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গেও তিনি রবীন্দ্র বক্তব্যে অভিভূত। প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রদত্ত অভিনন্দনের উত্তর দিতে গিয়ে যে অভিভাষণ পাঠ করেন তাতে জানাচ্ছেন—
“কবি বঙ্কিমচন্দ্রের 'আনন্দমঠের' উল্লেখ করে বলেছেন, 'বিষবৃক্ষ' ও ‘কৃষ্ণকান্তের উইলের' তুলনায় এর সাহিত্যিক মূল্য সামান্যই। এর মূল্য স্বদেশ-হিতৈষণায়,—মাতৃভূমির দুঃখ-দুর্দশার বিবরণে, তার প্রতিকারের উপায় প্রচারে, তার প্রতি প্রীতি ও ভক্তি আকর্ষণে। অর্থাৎ, 'আনন্দমঠে' সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের সিংহাসন জুড়ে বসেছে প্রচারক ও শিক্ষক বঙ্কিমচন্দ্র। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস সম্বন্ধে এমন কথা, বোধকরি এর পূর্বে আর কেউ বলতে সাহস করেনি।”১৪একেবারে সটান কুর্নিশ! শরৎচন্দ্রের এই সোজা সাপটা ভাবটা আমার খুব আন্তরিক লাগে। সম্ভবত তাঁর নিজের এই ভাব রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের মধ্যেও তিনি প্রত্যাশা করে থাকবেন, না পেয়ে হতাশ হয়ে থাকবেন। যেমন লিখেছেন ‘শিক্ষার বিরোধ’ প্রবন্ধে। রবীন্দ্রনাথ ইউরোপীয় ও ভারতীয়দের মধ্যে তফাৎ বোঝানোর জন্য এক বাপের দুই ছেলের উপমা দিয়ে একটি গল্প বলেছিলেন। তা একদমই পছন্দ করেননি শরৎচন্দ্র—
“এই গল্পের সার্থকতা যে কি আমি বুঝতে পারিনি। ছেলে-দুটিকে তা অনুমান করা শক্ত নয়; কিন্তু এক ছেলের প্রতি আর এক ছেলের অকারণ দৌরাত্ম্য দেখে যে বাপ প্রসন্ন হন, তিনি যে কিরূপ বাপ তা বোঝা যায় না!”১৫তবে তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধটি (১৯৩১ সালের রবীন্দ্র জয়ন্তীতে পঠিত) নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। তিনি লিখেছেন যে তাঁর নিজের যে পরিবারে জন্ম, সাহিত্যের স্থান সেখানে অল্পই ছিল। তাঁর এক আত্মীয় একবার পড়ে শোনালেন ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’। যিনি পড়লেন তাঁর সঙ্গে শরৎচন্দ্রও অশ্রুপাত করলেন। সেই শুরু। তাঁর প্রকৃত সাহিত্যপ্রেম রবিঠাকুরের হাত ধরেই। স্বীকার করেছেন দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর সাহিত্য রচনাতে সাহস পেলেন কবিগুরুর রচনার অনুপ্রেরণাতেই —
“আর কোথাও না হোক, সাহিত্যে গুরুবাদ আমি মানি।‘পণ্ডিতের তত্ত্ব বিচারে’—খুব গুরুত্বপূর্ণ শব্দবন্ধ। সাহিত্যানুরাগে তার গুরুত্ব কতখানি তা পাঠক নিজেই ঠিক করবেন তাঁর আপন অভিরুচি অনুযায়ী। তাঁর কাছে ‘সেই সত্য’ আলাদা হতেই পারে। বস্ততঃ এই ধারণা সমস্ত শিল্পবিচারেই প্রযোজ্য হতে পারে। শিল্পের আর বিজ্ঞানের মধ্যে সম্ভবত মূল প্রভেদ এখানেই—একই শিল্পকর্মে পরস্পর বিরোধিতার জন্য অনেক বেশি জায়গা থাকে। কারণ তা বিজ্ঞানের মত নৈর্বক্তিক (objective) নয়, বরং তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল (subjective) ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ওপর।রবীন্দ্র-সাহিত্যের ব্যাখ্যা করতে আমি পারিনে, কিন্তু ঐকান্তিক শ্রদ্ধা ওর অন্তরের সন্ধান আমাকে দিয়েছে। পণ্ডিতের তত্ত্ব বিচারে তাতে ভুল যদি থাকে ত থাক, কিন্তু আমার কাছে সেই সত্য হয়ে আছে।”
১৬
তাঁর উপন্যাসেও মাঝে মাঝে সাহিত্য আলোচনা চলে এসেছে বেশ প্রাসঙ্গিক ভাবেই। যেমন ধরা যাক ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের গোড়াতেই—
“যাহা বলিতে বসিয়াছি, তাহাই বলি। কিন্তু বলিলেই ত বলা হয় না। ভ্রমণ করা এক, তাহা প্রকাশ করা আর। যাহার পা-দুটা আছে, সেই ভ্রমণ করিতে পারে; কিন্তু হাত-দুটা থাকিলেই ত আর লেখা যায় না! সে যে ভারি শক্ত।১৭আর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাসে কিরণময়ী-দিবাকর সংলাপ—ভারী প্রিয় আমার এই অংশটি—কিরণময়ী যখন বোঝায়—
“খুনের অপরাধে জজসাহেব যখন হতভাগ্যের প্রাণদণ্ড করেন, তখন তিনি বিচারক, কিন্তু অপরাধীর অন্তরের দুর্বলতা অনুভব করে যখন তিনি দণ্ড লঘু করেন, তখন তিনি কবি। ঠাকুরপো, এমনি করেই সংসারের সামঞ্জস্য রক্ষা হয়, এমনি করেই সংসারের ভুল, ভ্রান্তি, অপরাধ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে না। কবি যে শুধু সৃষ্টি করে তা নয়, কবি সৃষ্টি রক্ষাও করে। যা স্বভাবতই সুন্দর, তাকে যেমন আরও সুন্দর করে প্রকাশ করা তার একটা কাজ, যা সুন্দর নয়, তাকেও অসুন্দরের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলা তারই আর একটা কাজ”-১৮শরৎচন্দ্র জনপ্রিয় লেখক। সমস্যা এই যে যখন কোন লেখক খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, তাঁর সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত মেধাবী পাঠকবৃন্দের মধ্যে কেমন এক ঔদাসীন্য লক্ষ করা যায় । যিনি এত জনপ্রিয়, তিনি কি কালজয়ী বা চিরায়ত সাহিত্যের স্রষ্টা হতে পারেন? কিন্তু আমার তা মনে হয় না। জনপ্রিয় শিল্পও যে কালজয়ী হতে পারে তার প্রমাণ ত হাতের কাছেই আছে—রবীন্দ্রসঙ্গীত।
এই আলোচনা পাঠকের কাছে একটু অসম্পূর্ণ, এমনকি কিঞ্চিৎ বিক্ষিপ্তও মনে হতে পারে। প্রবন্ধগুলি সংখ্যায় অপ্রতুল হলেও তার বিষয়ের গভীরতা ও ব্যাপ্তি অনস্বীকার্য। সুতরাং প্রত্যেকটি প্রবন্ধ এবং তার আনুষঙ্গিক আলোচনার যথাযোগ্য পরিসর একটিমাত্র লেখার মধ্যে যোগাড় করা দুষ্কর। এই বিষয়ের ওপর পুরোমাত্রায় সুবিচার করতে একটি সম্পূর্ণ গ্রন্থের প্রয়োজন হতে পারে। এমনকি সেই যুগের লেখকবৃন্দ, সাহিত্য সমালোচনা, বিতর্ক, সহিষ্ণুতা-অসহিষ্ণুতা, শ্রদ্ধাজ্ঞাপন—সবকিছু নিয়েই কিছু লেখা হতে পারে কোন আধুনিক জৈবনিক উপন্যাস, যা এযুগের লেখক পাঠকদের কাছেও মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে।
এই লেখাটি সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার একটি বিশেষ প্রয়াসমাত্র।
তথ্যসূচি -
১) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001008
২) প্রকাশকের কথা—স্বদেশ ও সাহিত্য—আর্য পাবলিশিং কোং, ভাদ্র - ১৩৩৯
৩) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?005072001001
৪) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?005072001001
৫) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?005072001004
৬) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?005072001005
৭) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001034
৮) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001035
৯) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001046
১০) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001050
১১)https://bn.wikisource.org/wiki/পাতা:চিঠিপত্র_(ঊনবিংশ_খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ_ঠাকুর.pdf/৮৩
১২) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001053
১৩) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001057
১৪) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001060
১৫) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001015
১৬) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?004059001068
১৭) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?001009001001
১৮) https://sarat-rachanabali.nltr.org/content.jsp?001015031008