• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৫ | জুন ২০১৯ | গল্প
    Share
  • হরিহর আত্মা : কিশোর ঘোষাল


    কদিন ধরে টানা নিম্নচাপের দরুন খুব বৃষ্টি আর মেঘলা গেল। আজ সকালটা ঝকঝক করছে পরিষ্কার। আড়ালবাবু এখনো নিচেয় নামেননি, নামলে, এমন দিনে বলতেন, “আজ সকালটা বেশ চকচক করছে, দেখেছেন? নীল আকাশটাকে আজ যেন পালিশ দিয়ে, আয়না করে ছেড়ে দিয়েছে। একটু লক্ষ্য করলে, এই পৃথিবীর ছায়াও হয়তো দেখা যাবে আকাশের গায়ে। আর ওদিকে স্যাকরার দোকান থেকে সদ্য গড়িয়ে আনা সোনার থালার মতো ঝকঝকে সূর্যটার আলো চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। গাছের পাতায় ঝিলমিল করছে সোনা রোদ্দুর। গাছেরা পাতায় পাতায় আজ জবরদস্ত ভোজবাড়ির মতো ব্যস্ততা। হাওয়ায় দুলতে থাকা পাতারা বাতাস থেকে হুস হুস করে কার্বন ডায়ক্সাইড টেনে নিচ্ছে, আর ওদিকে শেকড়-বাকড় ভেজামাটি থেকে চোঁ চোঁ করে জল টেনে, পৌঁছে দিচ্ছে পাতায়, পাতায়। তারপর সূর্যের আলোর সঙ্গে সবুজ পাতায় সালোকসংশ্লেষ ঘটিয়ে, বাতাসে কয়লার উনুনের ধোঁয়ার মতো ছাড়ছে অক্সিজেন আর বাষ্প। আজ গাছের আশপাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, বুক ভরে শ্বাস নিতে কী আরাম, কী আরাম! গাছের ছাড়া ওই বাষ্পের জন্যে দরদরিয়ে ঘামটা হয় ঠিকই, কিন্তু বাস ট্যাক্সি অটোর ধোঁয়ার জন্যে, ফুসফুসের কেলটে তেলচিটে ন্যাতা-ন্যাকড়া ব্যাপারটা যে কমে যায়, সেটা বেশ টের পাই।”

    আড়ালবাবুর কথাবার্তার এরকমই ধরন। রোজ সকাল সকাল আমরা একসঙ্গে হাঁটতে যাই। আড়ালবাবু আর আমি। আড়াল রয়। আড়ালবাবুর নাম আসলে রঙ্গলাল রয়, প্রথম পরিচয়ের দিনই আমাকে মজা করে বলেছিলেন, “আমি হচ্ছি রঙ্গলাল রায়, সংক্ষেপে আর এল রয়, তার মানে, আড়াল রয়, আমি আড়ালেই তো থাকি মশাই, প্রকাশ্যে বড়ো আসি না, হে হে হে হে।”

    আড়ালবাবু আর আমি একই অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা। উনি থাকেন চারতলায়, আমি আটতলায়। এ নিয়েও উনি মজা করে আমাকে বলেন, “আপনারা সব উঁচুতলার বাসিন্দা।” সারাদিন নিজের নিজের কাজকর্মে আমরা ব্যস্ত থাকি, তাই দেখাসাক্ষাৎ কমই হয়। তবে মর্নিং ওয়াকের সময় উনি আমার নিত্যসঙ্গী। আর ছুটির দিনগুলোতে দিনের বেশ কিছুটা সময়, হয় আমি ওঁনার ফ্ল্যাটে কাটাই, নয়তো উনি আমার ফ্ল্যাটে। তার কারণও আছে, আমি ব্যাচিলর আর আড়ালবাবু বিপত্নীক। তাঁর একমাত্র কন্যা বিয়ে-থা করে সুদূর সিয়াটেল শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি ফ্ল্যাটে একলাই থাকেন। অবরে সবরে কন্যা-জামাই-নাতি-নাতনীদের কলকাতায় আবির্ভাব হলে কয়েকটা দিন আড়ালবাবু ব্যতিব্যস্ত থাকেন। “আবির্ভাব” আর “ব্যতিব্যস্ত” কথাগুলো উনিই বলেন। একবার জিগ্যেস করেছিলাম, “ওদের আসাকে হঠাৎ আবির্ভাব বলেন কেন?”

    “কী বলছেন মশাই, আবির্ভাব নয়? এঁনারা সকলেই এনারাই, মানে এন আর আই। প্রবাসী। যতদিন এখানে থাকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকি। এই যেমন ধরুন টয়লেট শুকনো নয়। টয়লেট কোনদিন শুকনো হয় শুনেছেন? আমি তো শুনিনি মশাই। আমাদের ছোটবেলায় দেশের বাড়ির কলতলায় টিউকল ছিল, সেখানেই আমাদের চান, হাত-পা ধোয়া, মুখধোয়া, আঁচানো, ছোঁচানো সবই চলত। গরমের নির্জন দুপুরেও টিউকলের তলায় বালতি রাখার গাব্বুতে জল খেতে আসত কাকের দল। হাগু করতে যেতাম ঘর থেকে একটু দূরে, এক টেরে। এখন “হাগু” বলুন না, রে রে করে সবাই তেড়ে আসবে। পটি বলতে হয়। পটি বললেই যেন জিনিষটা শুদ্ধ হয়ে গেল। আমার বাপু অত সব মাথায় থাকেও না, মাঝে মধ্যেই এমন সব বদখৎ কথা বলে ফেলি। আমার কিছু হয় না, আমার মেয়ে অপ্রস্তত হয়। আড়ালে ডেকে চুপি চুপি বলে, ‘বাপি, তুমি আর শুধরোলে না।’ নাতি আর নাতনীদের সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলতে হয়। অফিসে মাঝে মধ্যে ইংরিজিতে কথাবার্তা বলতে হত, বুঝলেন? তা সে-সব কথা অফিসিয়াল কথা, তার এক বাঁধাধরা গৎ আছে, কিন্তু ঘরোয়া কথাবার্তায় ইংরিজি কী বলি বলুন দেখি।” আমিও সমর্থন না করে পারি না।

    “তা ঠিক, সাদা বাংলার কথাবার্তা ইংরিজিতে বলতে গেলে, বেশ খটোমট হয়ে যায় ব্যাপারটা।”

    “হয় না? বলুন দেখি। এই তো গেলবার যখন এসেছিল। একদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর, ভাবলাম নাতি-নাতনী দুটোকে ঠাকুমার ঝুলির গল্প শোনাই। প্রথমেই এক বেমক্কা হোঁচট খেলাম। বললাম গ্র্যান্ডমামা’স ব্যাগ। নাতি জিগ্যেস করে বসল, হোয়াট টাইপ অফ ব্যাগ? লেদার অর সিন্থেটিক? কটন অর জুট? যতো তাকে বোঝাতে যাই ইটস নট লাইক দ্যাট, ইটস সিম্বলিক। ইউ মে থিংক অফ কালেকশান অফ গ্র্যান্ডমামা’স স্টোরিস। সে মশাই, তাদের ঝুলি বোঝাতেই আমার সময় কেটে গেল, গল্প আর শুরুই করা হল না। ওদিকে মেয়ে আর জামাই নিজেদের মধ্যে অনর্গল ইংরিজিতে বকে চলেছে, জামাই বলছে ওর কলেজের বন্ধুদের গেট টুগেদারে যেতেই হবে, মেয়ে বলছে তার কলেজের বন্ধুদের...।”


    আমাদের ব্লকের একপাশে ছোটছোট চারাগাছে ফুল এসেছে বিস্তর। দোপাটি, নয়নতারা, বেলি। লতায় লতায় মাধবীলতা, জুঁই আর ঝুমকো কুরুপাণ্ডব। মিনিট দশেক ঘুরে ঘুরে ফুল-টুল দেখার পর আমাদের ব্লকের সিকিউরিটি অনাদি পোল্লেকে জিগ্যেস করলাম, “রঙ্গলালবাবু নামেন নি এখনো?”

    সিকিউরিটি অনাদি পোল্লে উত্তর দিল, “না স্যার, এখনো তো দেখিনি ওঁনাকে।”

    “এত দেরি তো করেন না, শরীর-টরীর খারাপ করল নাকি?”

    আমি আমার মোবাইল থেকে আড়ালবাবুকে কল করলাম। চারবার রিং হ’য়ে কেটে গেল। তার মানে আড়ালবাবু আসছেন বোধ হয়। এদিকে আমাদের ব্লকের লিফ্‌টটাও নেমে আসছে দেখলাম। নিচেয় এসে লিফ্‌টটা দাঁড়াতে, দরজা খুলে আড়ালবাবুই এগিয়ে এলেন, বললেন,

    “আমার একটু দেরি হয়ে গেল। আপনার কল পেয়েই বুঝলাম আপনি অপেক্ষা করছেন। আজকের রোদ্দুরটা দেখেছেন, মশাই? কদিন মেঘলার জন্যে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ছিল ওয়েদারটা, আজ একেবারে বকেয়া গরম যেন ঢেলে দিচ্ছে হুড় হুড় করে। সকালেই এই, বেলায় দেখবেন, রোদ্দুরে বেরোনো যাবে না; ঘাড় পিঠ, মুখ একেবারে ড্রাগনের নিশ্বাসের মতো জ্বালিয়ে দেবে। চলুন, রোদ্দুরটা ঝাঁঝালো হবার আগেই হেঁটে আসি। ভাদুরে ভ্যাপসা গরমে একটু হাঁটাচলা করলেই ঘাম! একটু ছায়া ছায়া দেখে হাঁটবো মশাই, অকারণ পিঠ পুড়িয়ে, মুখ পুড়িয়ে লাভ নেই।”

    “সেই ভালো, আর দেরি না করে, চলুন ঘুরে আসি।” আমাদের আবাসনের মধ্যেই ইঁট সাজানো সুন্দর পথের ওপর নেমে আমি বললাম। পিছন থেকে সিকিউরিটি অনাদি পোল্লে হঠাৎ পিছু ডাকল,

    “স্যার, স্যার।” আমি ও আড়ালবাবু দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালাম।

    “কিছু বলবে, অনাদি?” আমি জিগ্যেস করলাম।

    “আচ্ছা, এখন থাক স্যার। ফিরে আসুন, এলে বলব।”

    সিকিউরিটি অনাদির আচরণে আমি একটু বিরক্তই হলাম, কিন্তু কিছু বললাম না। হাঁটতে শুরু করলাম, আমার পাশে পাশে আড়ালবাবুও হাঁটতে আরম্ভ করলেন।

    অন্যদিন আড়ালবাবু অনর্গল বকবক করেন, অথচ আজ মিনিট পাঁচেক হাঁটার পরেও উনি কথা বলছেন না দেখে আমি বেশ আশ্চর্যই হলাম। ওঁকে কথা বলানোর জন্যে আমিই কথা শুরু করলাম,

    “অনাদি পিছু ডেকে কী বলতে চাইছিল, বলুন তো? আমি তো ওর সামনে মিনিট দশেকের ওপর দাঁড়িয়েই ছিলাম, ফুলগাছ দেখছিলাম, তখন কিছু বলল না।”

    “যা বলেছেন, সকাল সকাল পিছু ডাকলে মাথাটা খুব গরম হয়ে যায়, জানেন? খনার বচন জানেন তো ‘ভরা থেকে খালি ভালো, যদি ভরতে যায়; আগে থেকে পিছে ভালো, যদি ডাকে মায়’।”

    “তার মানে? বুঝলাম না ঠিক--” আমি হেসে বললাম।

    “বুঝলেন না? ছড়ায় বলছে, একমাত্র মা যদি পিছু ডাকেন তাহলে খুব শুভ, অন্য কেউ ডাকলে নয়।”

    “তাই? আর ওই ভরা-টরা নিয়ে যেটা বললেন?” হো হো করে খানিক হাসলেন আড়ালবাবু, তারপর হাসি থামিয়ে বললেন,

    “এগুলো সব দিদিমার থেকে শোনা, বুজেছেন? সে সব অন্যরকম দিন ছিল, ভালো কী মন্দ সে তর্কে যাচ্ছি না, তবে একদম অন্যরকম। দিদিমা বলতেন, কোথাও যাত্রার সময়, ভরা কুম্ভ, মানে জলভরা কলসী দেখা শুভ, আর খালি কলসী খুব অশুভ। কিন্তু শূন্য কুম্ভ নিয়ে কেউ নদীতে বা পুকুরে জল ভরতে যাচ্ছে, এই দৃশ্য নাকি দারুণ শুভ।”

    “বাঃ।” আমি মৃদু হেসে উত্তর দিলাম, “আপনার থেকে পুরনো দিনের অনেক কিছু জানা যায়।”

    “আরো আছে, অনেক আছে। দিদিমার যা স্টক ছিল, ভাবা যায় না। সে যাকগে ওই পিছু ডাকা নিয়ে খামোখা ভাববেন না। হে হে হে হে, ও হচ্ছে অনাদি অনন্ত। ওর অভিযোগের আর শেষ নেই। কিছু একটা অভিযোগের কথা বলতো, হয়তো ওর ঘরের ফ্যানটা চলছে না, কাল রাতে ঘুমোতে পারেনি।”

    “রাতে ঘুমোবে কেন? রাতের ডিউটি না করে, ঘরে ঘুমোবে?”

    “এ কি আর সেই আগেকার দিনের রাতের পাহারাওয়ালা পেয়েছেন? ‘জাগতে রহো’ হেঁকে হেঁকে পাড়ায় ঘুরে বেড়াবে? ফ্ল্যাটের সবাই ফিরে এলে, রাত্রে ও সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে, নিজের ঘরে ফ্যান চালিয়ে ঘুমোয়। সে অবশ্য একদিকে ভালো। আগেকার দিনের পাহারাদাররা পাড়ার লোককে জাগিয়ে অশান্তি বাড়াত। অনাদি নিজেও শান্তিতে ঘুমোয়, আমাদেরও অশান্তি করে না। কালই দেখুন না, এমন ঘুমিয়েছি, ঘুম ভাঙতেই চায় না। আপনার মিস কল পেয়ে দৌড়তে দৌড়তে নেমে এলাম।”

    “সে কি? আমার মিস কল পাওয়ার মিনিট খানেকের মধ্যেই তো আপনি নেমে এলেন। ফ্রেস হতে বাথরুমও যাননি?” আড়ালবাবু হেসে বললেন,

    “হে হে, এমন সুন্দর ফ্রেস সকালে, আবার কী ফ্রেস হবো? তার ওপর আপনার ওই মিস কল। এই কল ব্যাপারটা নেহাত কম গোলমেলে নয়, জানেন? ইংরিজিতে কল মানে ডাক। আবার বাংলায় দেখুন কল মানে যন্ত্রপাতি, কল-কারখানা। কল মানে জলের কল। ছোটবেলায় আমরা উত্তর কলকাতায় থাকতাম, বুজেছেন? একবার ছোট ভাইয়ের খুব জ্বর হয়েছিল, আমাদের পাড়াতেই থাকতেন ডাক্তারজ্যেঠু। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁর বাড়ি গেছি, জ্যেঠিমা বললেন, ‘তোর জ্যেঠু কলে গেছেন।’ ‘আচ্ছা’ বলে আমি দাঁড়িয়ে আছি, বাড়ির সদরের সামনে। তা বেশ অনেকক্ষণ হবে। কি কাজে জ্যেঠিমা আবার বাইরে এসে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘দাঁড়িয়ে আছিস যে, বললাম না কলে গেছে, ফিরতে দেরি হবে। ফিরলে বলে দেব, তোদের বাড়ি যেতে।’ বুজুন। ডাক্তারবাবু কলে গিয়েছেন, মানে পেশেন্ট দেখতে বাইরে গেছেন। অথচ আগেকার দিনে কলঘরে যাওয়া মানে স্নান করাও বোঝাতো, সেও এক ফ্রেস হওয়ার ব্যাপার। ফ্রেস মানে পরিষ্কার। পরিষ্কার মানে সাফ সুতরো, স্বচ্ছ ভারত। তার মানে ঝেঁটিয়ে সাফ করে ফেলা।”

    “আপনি পারেন বটে, কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে চলে এলেন।” আমি হাঁটতে হাঁটতে হাসলাম।

    “না, না, অনলবাবু, আপনি চিন্তা করে দেখুন এই ফ্রেস কথাটা কত সুদূরপ্রসারী। ঝেঁটিয়ে সাফ করা নিয়ে একটা বিখ্যাত গানও আছে, ‘মার ঝাড়ু মার, ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদেয় কর।’ তার মানে, সাফ করা মানে বিদেয় করাও হয়। বিদায় করা নিয়েও খুব দুঃখের গান আছে, ‘বিদায় করেছ যারে নয়ন জলে, এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে?’ মানে যে একবার বিদায় নেয় এই পৃথিবী থেকে, তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায়? যায় না। তাছাড়া ফিরিয়ে আনবেই বা কে? আর নয়ন জল ফেলবেই বা কে? আমার স্ত্রীর জন্যে আমি নয়ন জল ফেলেছিলাম, কিন্তু আমার জন্যে মেয়ে কি আর নয়ন জল ফেলার সময় পাবে? আমার বিদায়ের খবর পেয়েই তাকে ছুটির জন্যে দরখাস্ত করতে হবে, কলকাতা আসার টিকিট বুক করতে হবে। সেই সিয়াটেল থেকে কলকাতায় আসা কি চাট্টিখানি হ্যাপা? ওই ভয়ে তো গেলামই না কোনদিন, মেয়ে-জামাই কতবার বলেছে। ওরাই সব করে দিত, ভিসা, যাওয়ার টিকিট, ফেরার টিকিট, কিন্তু ওই ঝামেলা! ঝামেলার কথা ভেবে আর যাওয়াই হল না, আর হবেও না কোনদিন।”

    আড়ালবাবুর এই বিদায় নেওয়ার দুঃখু-দুঃখু কথার মোড় ঘোরাতে আমি বললাম, “না হওয়ার কী আছে? আপনার মেয়ে জামাই, এর পরে আবার কবে আসছে, নভেম্বরে তো? ওদের সঙ্গেই চলে যান, ঘুরে আসুন কয়েকমাসের জন্যে। নতুন দেশ দেখাও হবে, কলকাতার একঘেয়ে জীবন থেকে একটা চেঞ্জও হবে।”

    “অ্যাই, খুব ভাল বলেছেন, এই চেঞ্জ কথাটাই ধরুন। চেঞ্জ মানে বদলও হয়, আবার খুচরো টাকাও হয়। ট্যাক্সিওয়ালাদের কাছে সকাল, বিকেল, সন্ধে কোন সময়েই চেঞ্জ থাকে না। পঁয়তাল্লিশ টাকা মিটারে পঞ্চাশ টাকা নেবে, বাহাত্তর টাকার মিটারে আশিটাকা নেবে, ওরাও বলে ‘চেঞ্জ নেই, দাদা’, মানে খুচরো টাকা নেই। তবে ওদের ওই চেঞ্জ না থাকাটা কোনদিনই চেঞ্জ হবে না। কিন্তু খুচরো কিছু কাজ বাকি রয়ে গেল, সেগুলো শেষ করতে পারলে ভালো হতো।”

    “এখন তো সবে আগষ্ট মাস, আপনার মেয়ে-জামাই আসতে অনেক দেরি, এর মধ্যে আপনার খুচরো কাজগুলো আস্তে আস্তে সেরে ফেলুন।”

    “আপনি ব্যাপারটা বুঝছেন না, অনলবাবু, কাজগুলো আস্তে আস্তে সেরে ফেলার সময়ও আর রইল না যে। আমার মেয়ের আসতে আসতে খুব জোর দিন দুই তিনের বেশী বাকি নেই! ওই, আবার দেখুন, আস্তে আস্তে আর আসতে আসতে। একই উচ্চারণ, কিন্তু মানেটা আলাদা। লিখতে গেলে আমরা একটু আলাদা লিখি ঠিকই কিন্তু বলার সময়? ধরুন বললাম, আমি আসতে আসতে দেখলাম, দরজাটা বন্ধ। এর মানে কী। আমি ধীরে ধীরে দেখলাম, নাকি আসার পথে দেখলাম। হে হে হে হে। দেখবেন, আজকে ফেরার সময় খেয়াল করে দেখবেন। আমার ফ্ল্যাটের দরজাটা আস্তে আস্তে দেখবেন! নাকি আসতে আসতে দেখবেন? যে ভাবেই হোক দেখতে আপনাকে হবেই।”

    “দু একদিনের মধ্যেই আপনার মেয়ে আসছে? বাঃ খুব ভালো খবর তো! কালকেও কিছু বলেন নি, হঠাৎ ঠিক হল বুঝি?”

    “হঠাৎ? হ্যাঁ, তা হঠাৎই বলতে পারেন। মেয়েও এখনও জানে না, যে তাকে আসতে হবে, আস্তে আস্তে জানবে। আর জানলেই দৌড়ে আসতে হবে, তখন আর আস্তে আস্তে আসতে পারবে না।”

    আমি খুব হাসলাম, তারপর বললাম,

    “হে হে হে হে, আজ আপনি খুব হেঁয়ালি করে কথা বলছেন, হে হে। আপনার মেয়ে জানে না, যে তাকে দু তিনদিনের মধ্যে আসতে হবে, অথচ আপনি জানেন? এ আপনার ভারি অন্যায় আড়ালবাবু। আপনার মেয়ে-জামাই বিদেশ বিভূঁইয়ে বড়ো বড়ো পদে কাজ করে, তাদের একটু সময় দেবেন তো, গুছিয়ে নিতে? তারপর ছেলেমেয়েদের স্কুল আছে, সেখানেও বলে আসতে হবে। হুট বললেই কি চলে আসতে পারবে? একটু আস্তে, ধীরে সুস্থেই আসতে পারবে। হে হে হে হে, এই দেখুন, আমিও আপনার মতোই কথা বলা শুরু করে দিয়েছি।”

    আড়ালবাবু হঠাৎই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন, বললেন, “নেহাত কম হাঁটা হল না, কিন্তু! চলুন কথায় কথায় অনেকটা চলে এসেছি, এবার ফিরি।”

    “কই আর তেমন হাঁটা হল, অন্যদিন তো এর থেকে আমরা বেশিই হাঁটি। তবে আজ বেরোতেও একটু দেরি হল, তার ওপর আমায় আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিসে বেরোতে হত। চলুন ফিরেই যাই। সকালে অফিসে ঢুকেই আজ একটা মিটিং ছিল, কিন্তু...।”

    “খুব জরুরি মিটিং? মানে, না গেলেই নয়?”

    “তা একটু জরুরি, প্রতি মাসে এই সময়ই হয়। এমাসে কলকাতায় কত টাকার ব্যবসা হল, তার হিসেব পাঠাতে হয় মুম্বাইয়ের হেড অফিসে, সেই নিয়েই মিটিং আর কি। সে এমন কিছু নয়, কিন্তু আপনার শরীর-টরীর খারাপ লাগছে নাকি?”

    “কেন বলুন তো?”

    “ওই যে বললেন, মেয়েকে দু তিনদিনের মধ্যে আসতে হতে পারে। তাহলে আজই মেয়েকে আসতে বলে দিন।”

    “শরীর খারাপের এখনই হয়েছে কী, কিছুই হয় নি। এই তো সবে শুরু। হে হে হে হে। শরীরটা নিয়ে ভাবছি না, বুঝেছেন। ঘরের কোণে পড়ে আছে যেমন পড়ে থাক, আমার কী? হে হে হে হে। আর মেয়েকে বলার লোকেরও অভাব হবে না। ঠিক ঠিক সময় মতো সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। আজকের এই সুন্দর সকালে এই যে আপনার সঙ্গে হাঁটছি, আর বকে বকে আপনার মাথা খারাপ করে দিচ্ছি, এতেই আমার খুব আনন্দ হচ্ছে, জানেন?”

    আড়ালবাবু আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মিচকে হাসলেন। আমিও এই কথায় মজাই পেলাম, বললাম,

    “আমার মাথা খারাপ করতে আপনার আনন্দ হচ্ছে?”

    “হবে না, অনলবাবু? আজকে অফিসের মিটিংয়ে বসে আপনি যখন সকালের এই কথাগুলো ভাববেন, দেখবেন বিরক্তিকর মিটিংয়ে বসেও আপনি মিটিমিটি হাসছেন। মুখে না হাসলেও মনে মনে হাসবেন। মিটিমিটি হাসি পায় বলেই তো নাম মিটিং। আমাদের আপিসেও যখন এরকম মিটিং হত, আমার হাসিই পেত, কিন্তু গম্ভীর মুখ করে বসে শুনতে হত। কি জ্বালাতন বলুন তো। বড়ো কর্তারা এমন সব টার্গেট দেবে, কোন মাসেই করা যাবে না। তবু সেই নিয়ে তুলকালাম বকাবকি। পরের মাসের জন্যে আবার একটা অসম্ভব টার্গেট, হে হে হে হে, হাসি পাবে না? তবে হ্যাঁ, আমার আর এখন কোন টার্গেট নেই।”

    “আমারও মনে হয় আজ থেকে আর টার্গেট থাকবে না। আপনার মতো ঝাড়া হাতপা, নিশ্চিন্ত। ভাবলেই কী যে মজা হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারবো না।”


    আমাদের ব্লকের লবিতে ফিরে এলাম যখন, দেখি অনাদি গোল গোল চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অদ্ভুত লাগল। অনাদির সঙ্গে আমার ভালই আলাপ আছে, কোনদিনই ওর মধ্যে বেচাল কিছু দেখিনি। তবে আজকে যাবার সময়, ওর সেই পিছু ডাক, আর এখন এই ড্যাবডেবিয়ে আমাদের দিকে তাকানো দেখে বেশ বিরক্তই হলাম।

    লিফটটা নিচেয় ছিল না, লিফটের সুইচ টিপে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। কী মনে হতে অনাদিকে আমি জিগ্যেস করলাম, “অনাদি, তখন পিছু ডাকছিলে, কিছু বলবে?”

    অনাদি থতমত খেয়ে ঢোঁক গিলে বলল, “আজ্ঞে স্যার, একটা ক-কথা ছিল, আ-আপনার সঙ্গে, মানে ইয়ে...।”

    আড়ালবাবু আমার দিকে চোখ টিপে বললেন, “আপনার সঙ্গে প্রাইভেট টক করতে চায়, মশাই, টক করে সবার সামনে বলতে পারছে না, বেচারা। আপনি ওর সঙ্গে টকটা সেরেই নিন, টক না মিষ্টি দেখুন না, কী বলে। আমি বরং ওপরে চললাম।”

    “সেই ভাল, আপনি এগোন। আমি দেখি কী বলতে চায়।”

    লিফটটা নিচেয় এসে পড়েছিল, আড়ালবাবু লিফটে উঠে যেতে, অনাদি সন্তর্পণে পা টিপে টিপে আমার দিকে এগিয়ে এল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, লিফটটা দোতলা ছাড়িয়ে উঠে গেছে। আমি বললাম, “কি হয়েছে কী, কী ব্যাপার বলো তো?”

    অনাদি আগের মতোই তোতলাতে তোতলাতে বলল, “কি-কিছু বুঝতে পারেননি, স্যার? আমার মনে হচ্ছে, র-রঙ্গলালবাবু আমাদের মধ্যে আর নেই!”

    আমার খুব রাগ হয়ে গেল, মাথা থেকে পা অব্দি জ্বলে উঠল। স্পষ্ট বুঝলাম ব্যাটা আজকাল নির্ঘাৎ গাঁজা টানছে। সিকিউরিটি এজেন্সির মালিক, নিরাপদবাবুকে এখনই ফোন করতে হবে, এমন লোক আমরা চাই না। খুব কড়া গলায় বললাম, “সারারাত ক পুরিয়া ঘাস টেনেছো, অনাদি? তার রেশ এখনো রয়ে গেল?”

    একহাত জিভ বের করে প্রথমে জিভ কাটল, তারপর দুই কানে হাত রেখে অনাদি হাঁউমাউ করে উঠল, “মা কালীর দিব্বি, স্যার। চা আর গুটখা ছাড়া জীবনে কোন নেশা নেই। আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না, স্যার। আপনি আর রঙ্গলালবাবু যাবার সময় যখন, ওই যে, ওইখানটায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, ওদিকটা পুবদিক। আপনাদের সামনে সূর্য ছিল, আর পিছনে ছিল লম্বা ছায়া। মানে, ইয়ে...আপনার ছায়া ছিল, ওঁনার ছিল না।”

    এমন অদ্ভুত কথায় আমি এমন অবাক হলাম যে, দশহাজারের চেক ভাঙিয়ে, ব্যাংক থেকে আটটা পাঁচশ আর ষাটটা একশর নোট পেলেও হতাম না। বললাম, “আমার ছায়া ছিল, ওঁনার ছায়া নেই মানে?”

    “হ্যাঁ স্যার। সত্যি বলছি। আরো আছে, স্যার। ওঁনার দুটো গোড়ালিই উলটো দিকে...।”

    “গোড়ালি? উলটো? অনাদি, নিরাপদবাবুকে আমি তোমার নামে কমপ্লেন করবোই, আমি চাই না, তোমার মতো নেশাখোর এক লোকের হাতে, আমাদের এই বাড়ির এতগুলো লোকের সিকিউরিটি জলাঞ্জলি যাক।” আমি রাগে গনগনে গলায় বললাম।

    “স্যার, আপনি খামোখা আমার মতো গরিবের ওপর রেগে যাচ্ছেন। আমি বলছি স্যার, রঙ্গলালবাবু আমাদের মধ্যে আর নেই।”

    আমার ঝাঁঝালো ধমকানিতেও ওর কোন হেলদোল না হওয়াতে, আমিই কেমন দমে গেলাম, জিগ্যেস করলাম, “তাহলে, এতক্ষণ আমার সঙ্গে যে ভদ্রলোক ছিলেন, তিনি কে?”

    “স্যার, উনিই তো তিনি! ইয়ে, মানে... তিনিই কিন্তু তিনি নন, তাঁর অশরীরী ছায়া। ছায়ার কি আর ছায়া হয়, স্যার? সূর্যের দিকে টর্চ মারলে কি আর বেশি আলো হয়, স্যার? আর গোড়ালি উলটে যাওয়া মানে, আসছে না যাচ্ছে, বোঝা যাবে না। অশরীরী স্যার, হাওয়ার মতো, সব জায়গাতেই আছে, তার আবার আসা যাওয়া কী?”

    আমি খুব সন্দেহের চোখে অনাদিকে দেখতে দেখতে বললাম, “এসব তোমাকে কে শেখালো বল দেখি?”

    “আজ্ঞে ছোটবেলায়, মা, ঠাকুমাদের কাছে শুনেছি, তখন বিশ্বাস করিনি, আজ নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস হল।”

    “বোঝো। তোমারও রঙ্গলালবাবুর মতো সবজান্তা দিদিমা-ঠাকুমা ছিলেন বুঝি?”

    “হ্যাঁ স্যার। তাতো থাকতেই হবে, তা না হলে, আমরা হবো কী করে? ঠাকুমার মুখে শুনেছি, মারা যাবার ঘন্টা ছয়েক পরে আত্মা দেখা দিতে পারে, তবে দেখা দিলেও, তার ছায়া হয় না, গোড়ালি উলটে যায়।”

    “তাই বুঝি? আর তার চেয়ে কম সময় হলে?” আমি সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে জিগ্যেস করলাম অনাদিকে।

    “সে আরো ভয়ংকর, স্যার। সে আত্মা দেখা দিলে, অবিকল মানুষের মতো মনে হয়। চট করে চেনা যায় না। কিন্তু ওই ঘন্টা ছয়েক – ব্যস, তারপর আর তার জারিজুরি খাটে না।”

    নিখিলবাবু, অমরবাবু, সামন্তবাবু আরো জনা পাঁচেক সেই সময় বাজার থেকে ফিরছিলেন, আমাদের কথা বলতে দেখে, ওঁনারাও আমাদের ঘিরে ধরে সব কথা শুনতে লাগলেন। ওঁনাদের কৌতূহলের উত্তরে অনাদিকেও বারবার একই কথা বলতে হচ্ছিল। আমার ভালো লাগছিল না, আমি ভিড়ের থেকে আস্তে আস্তে সরে আসতে আসতে লিফটের সামনে গেলাম। লিফটে উঠে গেটটা বন্ধ করে, আট নম্বর বোতামটা টিপতেই লিফটটা উঠতে শুরু করল।


    সামন্তবাবু এই আবাসনের সেক্রেটারি। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ, সামন্তবাবুর ড্রইংরুমে নিখিলবাবু, অমরবাবু এবং আরো জনা দশেক আবাসিক চা খেতে খেতে কথাবার্তা বলছিলেন। সেখানে সিকিউরিটি এজেন্সির নিরাপদবাবুও ছিলেন। সকালেই থানায় খবর দেওয়া হয়েছিল, পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে লাশ বের করেছে। তারপর সারাদিন ধরে, ফ্ল্যাটের প্রায় সবাইকে পুলিশের লোকজন জেরা করেছে। সারাটা দিন যা ধকল গেল, সে আর বলার নয়। বেচারা অনাদির অবস্থাই সবথেকে খারাপ। আবাসনের সবাই, তারপরে পুলিশের লোকেরা সারাদিন এসে তাকে জেরা করে করে জেরবার করে দিয়েছে। ভয়ে আর আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে সে দেশে যাবার জন্যে নিরাপদবাবুকে রিকোয়েস্ট করেছিল। নিরাপদবাবু অনুমতি দিলেও পুলিশের অফিসাররা দেননি। তাঁরা বলেছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে, শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনাদি কলকাতার বাইরে যেতে পারবে না।

    নিরাপদবাবু চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে, খালি কাপটা টেবিলের নিচেয় রাখতে রাখতে বললেন, “একেই বোধহয় হরিহর আত্মা বলে, মশাই!” সামন্তবাবু তাঁকে বাধা দিয়ে বললেন,

    “ওফ। নিরাপদবাবু, ওই আত্মার কথা আর উচ্চারণও করবেন না। এমনিতেই বাড়ির মেয়েরা আর ছোটরা খুব ভয় পেয়েছে। ওদের সামনে এসব কথা আর না তোলাই ভালো।”

    “আমরাও কি কম চমকে গেছি, সামন্তমশাই? আজকাল লোডশেডিং হয় না তাই, নইলে রাতের অন্ধকারে টয়লেটে একলা পেচ্ছাপ করতে যাওয়াও এখন দুষ্কর হয়ে উঠত।” নিখিলবাবু বললেন।

    “যা বলেছেন।” অনেকেই নিখিলবাবুর কথার সমর্থন করলেন, আর অমরবাবু কিছুটা আপনমনেই বললেন,

    “তবে নিরাপদবাবু কথাটা মন্দ বলেননি। দুই বন্ধুর মিলটাও দেখার মতো। রঙ্গলালবাবু দেহ রাখলেন রাত বারোটা নাগাদ আর অনলবাবু ভোরের দিকে। একজনের সেরিব্রাল, তো আর একজনের হার্ট অ্যাটাক। দুজনে আবার মর্নিং ওয়াকেও গেলেন একই সঙ্গে। এ একেবারে সত্যিই হরিহর...।”

    আঁতকে উঠে, দুই কান চেপে সামন্তবাবু বলে উঠলেন,

    “রাম রাম রাম রাম, শেষ কথাটি আর নাই বা বললেন অমরবাবু!”




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ: রাহুল মজুমদার
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments