বাইশ বছর ও ৭৫-তম সংখ্যা পূর্ণ হলো। পরবাসের জন্মের ইতিহাস প্রথম সংখ্যাতেই বলা হয়েছে, এখন বিক্ষিপ্তভাবে হলেও কয়েকটি মাত্র 'নেপথ্যকাহিনি' লিখে রাখছি, হয়তো কারুর সেগুলো ইনটারেস্টিং মনে হতে পারে।
পরবাস বুকস্টোর্সঃ শুরু হয়েছিল কিছু বইয়ের ব্যক্তিগত সংগ্রহ দিয়ে--আমেরিকার কিছু বইপড়ুয়া স্বাভাবিকভাবেই পরবাসের কাছে বাংলা বইয়ের খোঁজ করছিলেন। (আমাজন-ও তখন শিশু।) তখনো পেপ্যাল হয়নি, বা জানতাম না কীভাবে কাজ করে--অস্ট্রেলিয়া (নাকি নিউজিল্যান্ড?) থেকে এক শিশুকন্যার বাবা-মা বাংলা বই চাইছিলেন। দাম দেয়া-নেয়ার অসুবিধে হচ্ছিল। অত দূর দেশে এক বাচ্চা পড়তে চাইলেও বাংলা বই পাবে না তা কি হওয়া উচিত? তখনই এক বিজনেস প্ল্যান করেছিলাম সেটা একটু অ-সাধারণ, কিন্তু এখনো তা চালু। অল্প পরেই 'থীমা' থেকে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং 'বিকল্প'-এর রুমিদির আগ্রহও কাজে উৎসাহ দেয়। রুমিদি যখন 'বিকল্প আর্ট শপ' করেন, তখনো পরবাসের মাধ্যমেই অনেকদিন তার আন্তর্জালে উপস্থিতি ছিল। প্রথম বিক্রীত বই? নবনীতা দেব সেন-এর 'নব-নীতা'।
খুবই মর্মান্তিক যে সেই রুমিদি, দময়ন্তী বসু সিং আর নেই। এই সংখ্যাতে চম্পাকলি আইয়ুবের আমাদের রুমিদি পড়লে বোঝা যাবে তিনি কেমন সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন। পরবাসের প্রথম দিকেই তাঁকে কয়েকদিনের জন্যে পরবাসের হেড অফিসে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়। আর তখন কী আড্ডা! হাসতে হাসতে বলেছিলেন, চাক্ষুষ জানাশোনা কিচ্ছু নেই, আন্তর্জালের মাধ্যমে হুট করে এভাবে তোমাদের কাছে চলে এসেছি, জানো তো, বাড়িতে সবাইয়ের কী চিন্তা! এখন এত বছর বাদে বুঝতে পারি সেরকম দুশ্চিন্তা কতোটা স্বাভাবিক ছিল।
তথ্যটি সঠিক কি জানা নেই, কিন্তু প্রথম বাংলা বইয়ের হিব্রুতে সরাসরি অনুবাদে পরবাস এক অনুঘটকের কাজ করেছিল। 'পাগলা দাশু'র অনুবাদ করেছিলেন এক অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট--নিজে নিজে অতি সুন্দর বাংলা শিখেছিলেন (ভাষা সম্বন্ধে অদ্ভুত স্বাভাবিক ক্ষমতা তাঁর।)
Parabaas Translation: আন্তর্জালের এক সাহিত্য আলোচনা গোষ্ঠীতে (হ্যাঁ, ওটাও সোশ্যাল মিডিয়া) আলাপ হয় নন্দিনী গুপ্তের সঙ্গে--বুদ্ধদেব বসুর 'একখানি হাত' কবিতার কিছুটার ভারি সুন্দর অনুবাদ করেছিলেন। দেখা গেল, শঙ্খ ঘোষ ও অন্য কয়েকজন কবির কিছু কবিতারও অনুবাদ করেছেন। ব্যাস, তখন মনে হলো, একটা অনুবাদ বিভাগ চালু করা যেতে পারে। সেই হলো ওই বিভাগটির গোড়ার কথা। এখন এত বছর পরে, নন্দিনীর অনুবাদে ও রুমিদির উৎসাহী সমর্থনে 'সব পেয়েছির দেশে' বইটির অনুবাদ প্রকাশ করতে পেরে সত্যি খুশি আমরা।
রবীন্দ্রনাথ বিভাগঃ সঠিক মনে নেই সাল-তারিখ, কিন্তু অমর্ত্য সেন-এর গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের উপর সুন্দর প্রবন্ধটি তখন (ইংরেজিতে) বেরিয়েছে NYRB-তে। মন্দার (মিত্র) প্রথমে জানান যে ওটার বাংলা অনুবাদ বের করলে বেশ হয়। অনুমতি চাইতেই প্রোফেসর সেন তা তো দিলেনই সঙ্গে NYRB-কে চিঠি যাতে ওঁরাও আমাদের প্রয়োজনীয় অনুমতি দেন। আমরা তো মহা খুশি। কিন্তু অনুবাদ আর শেষ হয় না--অত সুন্দর সাবলীল ইংরেজির উপযুক্ত বাংলা করা সোজা নয়। অনেকদিন পরে অন্য দু-একজনকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে--ইতিমধ্যে আমাদের রবীন্দ্রবিভাগও বেশ হই হই করে শুরু হয়ে গেছে। পরে প্রোফেসর সেন-এর এক বইয়ের বাংলা অনুবাদে লেখাটি স্থান পেয়েছে। এই সুযোগে তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে বলা যায় যে রবীন্দ্রবিভাগটির পিছনে এই লেখাটির প্রভাব ছিল।
ইন্দ্রনীল দাশগুপ্তের রাহুলের ডায়েরি থেকে উপন্যাসটি এই সংখ্যাতে শেষ হলো। এটি হচ্ছে আন্তর্জালে প্রকাশিত প্রথম বাংলা উপন্যাস--১৯৯৭-সালে বেরিয়েছিল ইংরেজি হরফে, এটি তার (বাংলা হরফে এবং) সম্পাদিত রূপ। শুরু হলো সমরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ধারাবাহিক মধুপুরের পাঁচালি।