কিছুক্ষণ আগেই এই ঘরে বড় ধরনের একটা ঝামেলা হয়ে গেছে। অন্তত ঘরের পরিবেশ সে কথাই বলছে। খাটের চাদর এলোমেলো। মেঝের উপর জল গড়াচ্ছে। একধারে রাশিকৃত খবরের কাগজের টুকরো পড়ে। একটা চায়ের পেয়ালা উপুড় হয়ে আছে। তলানী চা মাটিতে পড়েছে এবং মাটিতে পড়ে কিছুটা বাষ্পীভূত হয়ে এখন সেটা চটচটে ও আঠালো হয়ে উঠেছে। ঘরের ভেতর একটা টিউব জ্বলছে। খাটের নিচে একটা রঙিন বেডকভার পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে এবং সেটাও আছে খবরের কাগজগুলোর মতোই টুকরো টুকরো অবস্থায়।
এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির একটা বাড়ির সামনে হঠাৎ একখানা হলুদ রঙের ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো। রূপাকে নিয়ে তার ননদ হাসপাতালের দিকে চললো। বাড়িতে এখন আছে রূপার দুই মেয়ে, ছয় বছরের বুবু আর চার বছরের মুমু। তারা একাই থাকবে এবং না জানি দুজনে একা একা কী না কী করবে! রূপা শঙ্কিত হয়ে একবার ঘরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। তবে তাকে এই মুহূর্তে যেতেই হবে। তাই অপেক্ষা না করে সে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এল, তারপর ট্যাক্সিতে গিয়ে বসলো।
রূপার জানা ছিল না, তাকে এমনভাবে হঠাৎ হাসপাতালে আসতে হবে। রূপার ননদ খুব কাছে থাকে, অসময়ে খবর পেয়ে একমাত্র সে-ই ছুটে আসতে পেরেছে। রূপা যখন গিয়ে পৌঁছালো, হাসপাতালে তখন জুনিয়ার ডাক্তাররা কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। সমস্ত রুগী যত্রতত্র বেডে পড়ে আছে। অনেকে আবার জায়গাও পায়নি, তারা মাটিতে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। রূপাও হাসপাতালে এসে তেমন এক কোণে পড়ে থাকলো। তার ননদ একা একা রূপাকে অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে ভরসা পেল না।
হাসপাতালের অবস্থাও এখন তার বাড়ির মতোই বিশৃঙ্খল ও অগোছালো। রূপার স্বামীর এ সময় তার পাশেই থাকার কথা ছিল। জরুরী কাজ থাকায়, তিনি আবার তার কর্মস্থল পুরুলিয়াতে ফিরে গেছেন। আশ্চর্য হয়ে রূপা ভাবছিল, বর্তমানে যে শিশুটি আসতে চলেছে পৃথিবীর বুকে, সে বোধহয় বাঁচবে না।
বিশেষত রূপার মনে হচ্ছে, শিশুটি অসম্ভব এক দুর্ভাগ্যকে বহন করে নিয়ে আসছে। তাই তার জন্মলগ্নে শুরু হয়েছে এমন ভয়ানক বিভ্রাট। সারাদিন একফোঁটা জলও না পেয়ে এবং অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে সে সরকারি হাসপাতালের নোংরা বিছানাতে পড়ে থাকলো। একটা সময় যন্ত্রণায় সে অজ্ঞান হয়ে গেল।
গতরাতে হঠাৎ একটা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। রূপার বাড়ি খুঁজে খুঁজে হঠাৎ রণজিৎ এসে উপস্থিত হয়েছিল। রণজিতকে রূপা তার বাড়ির ঠিকানা দেয়নি। এত বছরে সে কখনও আসেনি রূপার বাড়িতে। তবুও মোটামুটি একটা আন্দাজে, জিজ্ঞাসাবাদ করে করে সে এসে উপস্থিত হয়েছিল, কোথা থেকে। সে সম্পর্কে রূপার নিজের দাদা; একেবারে বদ্ধ উন্মাদ। তার পরনে একটা ছেঁড়া গেঞ্জি আর ছোট প্যান্ট। বাসে পকেটমার সন্দেহে জনগণ বোধহয় মারতে শুরু করেছিল তাকে, তারপর পাগল বুঝতে পেরে হয়তো অব্যাহতি দিয়েছে; কিন্তু জামাকাপড় খুলে নিয়েছে তারা। রণজিতের সারা শরীরে মার খাওয়ার চিহ্ন। রণজিৎ পাগলামী বাড়লেই বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে প্রত্যেকবার। তাই তাকে আগে থেকেই ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল, কোন ফাঁকে সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে।
রূপা রণজিতকে দেখে কষ্ট পায়। সে রণজিতের মাথায় কিছুটা তেল ঘষে, তাকে টানতে টানতে শাওয়ারের তলায় এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তখনই বেকায়দায় একটা হাত রূপার তলপেটে ছুঁড়ে দিয়েছিল রণজিত। তারপর থেকেই অসময়ে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে রূপার। রণজিৎ দুপুরে খাওয়াদাওয়া করেই উৎপাত শুরু করে দিল। ঘরদোর তছনছ করে চাদর, কাগজ ছিঁড়ে ভয়ানক হয়ে উঠলো মুহূর্তে। তারপর বারান্দার রেলিং ধরে একলাফে নিচে নেমে, রাস্তায় বেরিয়ে গেল। যেমন হঠাৎ এসেছিল, তেমন হঠাৎই সে হারিয়ে গেল। তবে এরই মধ্যে যতটা ক্ষতি হওয়ার, তা হয়ে গেছে রূপার।
ধীরে ধীরে রাত নামলো হাসপাতালের ঘরটায়। যন্ত্রণায় সব সময় জ্ঞান থাকছে না রূপার। সে অস্পষ্টভাবে অনুভব করলো কারা যেন তার চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। তার উপর কাদের যেন সুতীক্ষ্ণ নজর। এ শিশু প্রাণ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হোক তা একেবারেই চায় না তারা।
পৃথিবী থেকে বহু আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্রহে তখন কিছু সূক্ষ্ম হিসেব নিকেশ চলছিল। সোয়াজ গ্রহের সুবিশাল তথ্যভাণ্ডারের হিসেব অনুযায়ী শিশুটির পৃথিবীতে জন্মানোর খুব প্রয়োজন। পৃথিবীর ভবিষ্যত কিছু কার্যক্রম না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে চিরকাল সোয়াজের শত্রু গ্রহের কিছু বিপরীত শক্তি তাদের প্রতিটি কাজে বাধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
তারা শিশুটিকে অনেক আগেই হত্যা করতে চেয়েছিল। না পেরে তার জন্মের সময় পিছিয়ে দিয়ে তাকে শেষ করে দিতে চাইছে। দীর্ঘসময়ে শিশুটির মস্তিস্কের কিছু ক্ষতি হয়েছে। যেমন তীব্র মেধাসম্পন্ন অবস্থায় তার জন্মানোর কথা ছিল, আর তা সম্ভব নয়। অশুভ শক্তির আধার দেবী মিয়মী তার কাজ শেষ করে, অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে এখন ফিরে গেছেন পৃথিবী থেকে।
এর পরের কাজটা তোমাকেই করতে হবে।
একটি ধাতব কন্ঠস্বর ধ্বনিত হলো। এটি সর্বোচ্চ স্তরের আদেশ। তেয়াস্তা প্রস্তুত হলো। তার স্বচ্ছ শরীর থেকে এক ধরনের আলো বিচ্ছুরিত হতে লাগলো। তারপর আলোর গতিতে সে পেরিয়ে যেতে লাগলো পথ। তেয়াস্তা কলকাতার উপকন্ঠের সেই সরকারী হাসপাতালটিতে এসে উপস্থিত হলো। তেয়াস্তাকে সাহায্য করতে, তার সঙ্গে এসেছেন আরও একজন। তাদের গ্রহের চিকিৎসকদের সর্বাধিনায়ক জেরামি। রূপার সামনে এসে দাঁড়ালেন তেয়াস্তা। তার পরনে এখন নার্সদের পোশাক। দেখতেও একজন মধ্যবয়স্ক নার্সের মতো। তাকে অবশ্য রূপা ছাড়া আর কেউ দেখতে পেল না। তেয়াস্তা কোমল গলায় বললো--বড় কষ্ট পেলে মা! এবার আর কষ্ট হবে না তোমার। আমি এসে গেছি।
সামান্য কথাগুলোতে কী এক মায়া ভরা ছিল। রূপার চোখে জল এসে গেল। সে অবাক হয়ে দেখলো, তার আর যন্ত্রণা হচ্ছে না এতটুকু। একটি শিশুকন্যা কী আশ্চর্যভাবে ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তাকে একটুও ব্যথা না দিয়ে! তবে শিশুটির জ্ঞান নেই আর আশ্চর্য যে শিশুটির গায়ের রঙ ঘন নীল। এমন নীল বর্ণের শিশু রূপা আগে কখনও দেখেনি। ছবিতে রামায়ণে সে রামের গায়ে এমন রঙ দেখেছে। এমন নীল যে মেয়ের গায়ের রঙ, তার ভবিষ্যত কী হবে? ভাবতেই রূপার চোখে জল এল। সে বললো--ওর গায়ের রঙ এমন কেন?
উত্তরে নার্সটি শুধু মৃদু হাসলেন। তারপর দ্রুত শিশুটিকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারা নীল-রঙা নিস্তেজ শিশুটিকে তাদের কুশলতায় স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করতে লাগলেন। জেরামি বললেন-- আমাদের অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। ওকে এক্ষুণি অক্সিজেন দিতে হবে। তবে, ওর ব্রেনসেল ড্যামেজ আর ঠিক হবে না। এর ফলে একটা সুবিধা হবে যে, ও সহজে মিয়মীর নজরে আসবে না। অলৌকিক শক্তির উপস্থিতি ও নিজেও ভালো করে বুঝতে পারবে না। জেরামি কিছু ক্রিয়াকর্ম করলেন। তারপর কৃত্রিমভাবে শ্বাস চালু করার জন্য শিশুটিকে উপুড় করে মুখের ভেতর ফুঁ দিতে লাগলেন। শিশুটি এতক্ষণে কেঁদে উঠলো। তার গায়ের রঙ দ্রুত বদলে যেতে লাগলো। গাঢ় নীল রঙ বদলে গিয়ে ফুটে উঠলো ধবধবে ফর্সা রঙ। 'শিশু কন্যাটি খুব সুন্দর।'--বললেন জেরামি।
কিছুক্ষণ পরে ডাক্তারদের কর্মবিরতি মিটলে, সুপারসহ জুনিয়ার ডাক্তাররা পেশেন্ট ভিজিটে এসে দেখতে পেল মা ও সেই সুন্দর শিশু কন্যাটিকে। যার জন্মের সময় এবং অন্যান্য কোনও তথ্যই নথিভুক্ত হয়নি। অনেক ঝামেলার মধ্যে সামান্য এই অস্বাভাবিকতাটুকু চাপা পড়ে গেল।
পুপু ছুটতে ছুটতেই ভাবছিল কোথায় লুকোবে। সামনের বিশাল শিমূল গাছটার নীচে একটা গর্ত আছে। সেখানে লুকোনো যায়। গাছের একপাশ থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে মালি বুড়ো, ফুলগাছের গোড়ায় মাটি দিতে। এই বাগানের মালিকানা এখন কাদের কেউ জানে না। বিরাট বড় ছড়ানো বাগানটার বাইরে একটা পাথরের ফলকে লেখা আছে, 'অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুপ্ত নিবাস'। এখানে কয়েক বছর ধরে এক বুড়ো আর বুড়ি এসে আছেন। বেড়ার ঘরও করে নিয়েছেন তারা। বেড়ার ঘরের সামনে অনেকটা জায়গায় ফুল গাছ লাগিয়েছেন তারা। সেই ফুল এই হাউসিং-এর বাসিন্দাদের কাছেই বিক্রি করেই তাদের সংসার যাত্রা নির্বাহ হয়।। সবাই বলে এরা উদ্বাস্তু কলোনীর লোক। হাউসিং-এর বাচ্চারা প্রায়ই ফুল চুরি করে নিয়ে যায় ওদের। বাচ্চাদের ধরতে পারেন না তারা। বয়স হয়েছে, তাই রেগে গিয়ে কেবল গালি দেন। এখন বিকেলবেলা। এইসময়টা খেলার সময় পুপুদের। হাউসিং-এর অনেক সমবয়সী বাচ্চারা মিলে একটা দল করেছে।
পুপুরা নানারকম খেলা খেলে। আজ লুকোচুরি খেলছে। তাদের দলে আছে ফুলি, মামণি, লক্ষ্মী দিদি, পিঙ্কি (ঢঙি পিসী), পুপু আর সাবিনা ইয়াসমিন। সাবিনারা নাকি মহামেডান। এর মানে কী? পুপু জানে না। তবে ওর নামটা ওদের সবার থেকে আলাদা। লক্ষ্মী দিদি ওদের থেকে বড়। দিদিদের দলে না থেকে, পুপুদের দলেই খেলে ও। মালি বুড়োকে গালাগালি ফিরিয়ে দেয় রোজ। লক্ষ্মী দিদি ওদের বলেছে, সাবিনার বাড়ির খাবার খেলে নাকি জাত যাবে। জাত কী জিনিস? তা আবার কেমন করে যায়? জানে না পুপু।
সাবিনা কিছুদিন হলো এখানে এসেছে। পুপু ওদের বাড়িতে গেছে। ওর মা খুব ভালো লুচি করেন। এইটুকুনি ছোট্ট, ছোট্ট। পুপু আর সাবিনা শিমূল গাছটার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। গাছটাতে ফুল এসেছে। টকটকে লাল ফুল। একটু সময় একটানা তাকিয়ে থাকলে, চোখে যেন ধাঁধা লেগে যায়। গর্ততে এখন জল নেই, বর্ষাকালে জল জমে থাকে। এখন সবুজ ঘাস আর ঝরে পড়া শিমূল ফুলে ভরা গর্তটা পুপুকে যেন আকর্ষণ করছিল। কয়েকটা কচু গাছ হয়েছে গর্তটাতে। পাতার পাশে কয়েকটা সবুজ রঙের গোল গুটি হয়েছে কচুগাছটাতে। এরকম খুব কম দেখেছে পুপু। সাবিনা গর্তে নামতে চায় না, পুপু টুপ করে গর্তে নেমে এককোণে পা মুড়ে বসলো। উপরে খোলা আকাশ আর বিকেলের সোনালি আলোয়, মনটা অদ্ভুত খুশিতে ভরে উঠলো ওর। সে কচুর গুটিটা ভেঙে হাতে তুলে নিল।
হঠাৎ সে অন্যমনস্ক। তার চোখের সামনে অন্য রকম একটা সুন্দর বাগান ফুটে উঠছে। বেগুনি, নীল থোকা থোকা ফুল দেখতে পেল সে ওই বাগানের গাছে গাছে। নিজেকেও সেখানে খুঁজে পেল। তার হাতে কচুর সেই গুটিটা ধরা। খুব সুন্দর দেখতে কিছু মানুষ ছুটে এসে ঘিরে রাখে ওকে। তাদের একজন বললো--তোমার হাতের ওই ফলটা একবার ভেঙে দেখ দেখি খুকি! পুপু ফলটা ভাঙতেই রাশি রাশি রঙিন দানা ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। উঃ কত রঙ! লাল, নীল, সোনালি, বেগুনি, আকাশি! আরও কত কত রঙ। রঙের যেন শেষ নেই। রঙের মিছিলে হারিয়ে যেতে থাকে সে। তারপর যেন অনেক দূর থেকে শুনতে পেল, সাবিনার গলা।
পুপু তো এখানেই ছিল! কোথায় গেল? লক্ষ্মী সাবিনাকে বললো--তুই ঠিক করে দেখিসনি। কোণের দিকে আছে মনে হয়। ওদের অস্পষ্ট কথার মাঝখানেই, পুপু ওখানে চলে এল। আজ আর খেলা হবে না। এখন সবাই ফুল চুরি করবে। এই কাজে পুপুর একেবারেই উৎসাহ নেই। সে গর্ত থেকে উপরে উঠে এল। সে বললো-- ফুল চুরি করলে, মালিবুড়ো তোমাদের বকবে।
লক্ষ্মীদিদি হি হি হাসতে হাসতে বললো--আমাদের তাতে কচুপোড়া হবে। তুই থাম তো!
পুপু বিষণ্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। ওরা শাল গাছের নিচু ডাল থেকে, কাঁচা শাল পাতা তুলে, ফুলগুলো তাতে নিল। হঠাৎ পুপুর হাতে ফুলসহ শালপাতাটা ধরিয়ে দিল লক্ষ্মী। তারপর একলাফে সাদা কাঠচাঁপা গাছ থেকে নেমে দৌড় দিল। পুপু তাকিয়ে দেখলো, ঝিলের পাড় ধরে মালিবুড়ো আসছে। সবাই ছুটছে বাড়ির দিকে। পুপু বেশ জোরে দৌড়াতে পারে। তার শরীর নরম আর রোগা হিলহিলে। তবে সে দৌড়ালো না। ফুলসহ শালপাতাটা সে মালিবুড়োকে ফিরিয়ে দিতে চায়। কতো কষ্ট করে গাছে গাছে ফুল ফোটায় মালিবুড়ো। পুপুর ভয় করে, তবুও দাঁড়িয়েই থাকে।
সন্ধ্যা হয়েছে। পুপুর মা রূপা এখনও ফেরেননি। রূপা কাকদ্বীপ বিএড কলেজের লেকচারার। তার বাড়ি ফিরতে রোজই অনেক দেরি হয়। বাড়িতে বুবু মুমু আর পুপু ছাড়া রান্নার ও অন্যান্য কাজের জন্য একজন লোক আছেন। পুপুরা সবাই তাকে মাসি বলে ডাকে। পুপু এখন নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। পড়াশুনো খুব ভালো হয় তাদের এই স্কুলে। আগে সে পাড়ার একটা স্কুলে পড়তো। সেখানে পুপুর কয়েকটা বন্ধু হয়েছিল। সেখানে স্কুলের বাইরে অনেক ফেরিওয়ালা আসতো। তখন বাড়ি ফেরার পথে আচার কিনে খেত সে। এই স্কুলে ফেরিওয়ালা আসেনা, তবে তাদের রোজ টিফিন দেওয়া হয়। দুধ, বিস্কুট আর রসগোল্লা। পুপুর এই খাবার পছন্দ নয়। তাছাড়া রোজ এক খাবার খেতে তার মোটেই ভালোলাগে না। সে স্কুলের মাঠে চুপিচুপি বিস্কুটগুলো ফেলে দেয়। অনেক পাখি আসে মাঠে। সে পাখিদের বিস্কুট খাওয়া দেখে।
এই স্কুলে সে নতুন। ক্লাশ টু'তে ভর্তি হয়েছে। বাকি সবাই নার্সারি থেকে পড়ছে। ওরা পুপুর সঙ্গে কথা বলে না। এই স্কুলে তার বন্ধু নেই কেউ। একমাত্র ভাস্বতী আর কাকলি তার সঙ্গে একটু একটু কথা বলে। বাকিরা তাকে দেখলেই মুখ বাঁকায়। বাড়িতেও এমন ব্যবহার সে বরাবর পেয়ে থাকে, দিদিদের কাছে। ওরা পুপুকে ওদের দলে নেয় না। কথা বলতে গেলেই বকে দেয়। পুপু তাই সবসময় নিজের মনেই কথা বলে।
পুপুর শোওয়ার ঘরে একটা জানলা আছে। কেউ জানেনা, সেটা হলো এক আশ্চর্য জানলা! পুপু ওখানে বসে বসে বাবার সঙ্গে কথা বলে। পুপুর বাবা কৃষ্ণেন্দু দত্ত পেশায় রেলের ইঞ্জিনীয়ার। তিনি মাসে একবার মাত্র বাড়ি আসেন। এখন তিনি পুরুলিয়ায় আছেন। গরমের ছুটিতে পুপুরা সবাই বাবার কোয়ার্টারে যায়। ওখানে অনেক দূরে আছে ঢেউ খেলানো পাহাড়। জায়গাটা ভারী সুন্দর লাগে তার।
আগে পুপুর কথা বলার সঙ্গী ছিল একখানা প্লাস্টিকের পুতুল। তাকে পুপু অনেক আশ্চর্য যুদ্ধের গল্প বলতো। তাদের ইতিহাস বইয়ে অলিম্পিক দৌড়ের কথা লেখা আছে। কখনও পুপু সেই প্রথম অলিম্পিক দৌড়বাজ হয়ে যায়। কত পথ ফুটে ওঠে তার চোখের সামনে, পুপু সেইসব পথ পেরিয়ে মশাল হাতে ছুটে যায়। সে যেন তখন একজন যোদ্ধা। কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে পুতুলটা হাতে বড় ভারী মনে হয় তার। তার চাই এমন কিছু হালকা জিনিস, যা হাতে নিলে তার কল্পনাগুলো পাখা পাবে।
এখন সে গল্প করার জন্য তাই হাতে নেয় ফুলঝাড়ুর কাঠি। ঝাঁটার বাঁধুনি খুলে সে সন্তর্পণে বেছে নেয়, ঋজু সুঠাম একটা কাঠি। যার মাথায় অল্প ঝাড় আছে। তারপর মাঝখানটা কৌশলে বেশ করে বেঁকিয়ে নেয়। এরপর সেই কাঠিটা তার একান্ত আপন আর নিজস্ব হয়ে যায়। দিনরাতে তার কত কথা হয় কাঠিটার সঙ্গে। কাঠিটা ভেঙে গেলে দুঃখ পায় পুপু। কাজের মাসি ঘর ঝাঁট দিতে এসে রাগ করে। পুপুকে ভয় দেখায়, মাকে বলে দেবে, পুপু নতুন ঝাঁটাটাকে আবার নষ্ট করে দিয়েছে। পুপু মাকে খুব ভয় পায়।
রাতে দিদিমণি চলে গেলে, সে তার শোওয়ার ঘরের প্রিয় জানলার রোয়াকটায় এসে বসে। এই জানলার নাম সে দিয়েছে দুঃখের জানলা। এখান থেকে রাতের চাঁদ আর অনেক তারা দেখা যায়। রাতের কালো আকাশ পুপুর মন এক অপূর্ব বেদনায় ভরিয়ে দেয়। মন কেমন করে তার। তবে এই মন কেমন করা, সে নিজের অজান্তেই যেন উপভোগ করে।
সে তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার সমস্ত মন জুড়ে থাকে তখন এক প্রতীক্ষা। কীসের এই অপেক্ষা পুপু জানে না। সে কোন এক অজানা দেশের পথিক হতে চায়। সেখানে বাস করে 'অজানা দেশের না জানি কী'। সে সেই অজানা দেশে যেতে চায়। রাতে তারা সবাই খেতে বসলে, তাদের মা ফিরে আসেন। মা জানতে চায়, তারা সবাই ঠিকমতো পড়াশুনো করেছে কিনা। তারপর বড়দি আর মা চলে যায় একঘরে, আর পুপু, মুমু দিদির সঙ্গে শুতে যায়।
পুপুদের মর্নিং স্কুল। বাড়ি ফিরে সে মায়ের ঘর থেকে রোজ গল্পের বই নিয়ে পড়ে। কোনওদিন বাগানে চলে যায়। মাসি তাকে কিছু বলে না। তখন মাসি ঘুমিয়ে থাকে। বাগানে অনেক জংলী ট্যাঁপারি ফলেছে এবারে। এই বুনোফল পাখি ছাড়া কেউ খায় না। পুপু দু’একবার মুখে দিয়ে দেখেছে, খেতে একটু তিতকুটে আর খুব মিষ্টি। সে প্রায়ই বাগানের ভেতরের বিরাট ঝিলের মতো পুকুরটার সামনে বসে থাকে। নিঝুম দুপুরে, ঝিলের পাড়ের নরম মাটিতে, কাঠবাদাম গাছ থেকে কাঠবাদাম খসে পড়ে। খোলাশুদ্ধ বাদাম। বাড়ি নিয়ে গেলে, মাসি জাঁতি দিয়ে কেটে দেবে। পুপু তোলে না। সে কী চোর? 'না বলিয়া পরের দ্রব্য নেবে?'
পুকু্রপাড়ে বসতে বসতে তার জলের ভেতরে কী কী মাছ আছ দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করে। খাঁ খাঁ করা নিঝুম দুপুর। চারিদিকে একটাও মানুষ নেই। দূরে কোথাও কাঠঠোকরা পাখি ডাকে। ঘুঘু ডাকে মন কেমন করা সুরে। আর কোনও শব্দ নেই। পুপু প্রবল আগ্রহে জলের দিকে চেয়ে থাকে। হঠাৎ তার সামনে জলের উপর ভুস করে ভেসে ওঠে কতো মাছ! তারা যেন সবাই মুখ দেখাতে এসেছে তাকে। ডুবে যায়, আবার ভেসে ওঠে নতুন মাছ। পুপু আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে। অনেকক্ষণ ধরে চলে মাছদের এই শোভাযাত্রা। তারপর ধীরে ধীরে মেঘ ঘনিয়ে আসে চারপাশে। জলের ধারের সাদা কাঠগোলাপ গাছটা থেকে ফুল বিছিয়ে থাকে ঝিলের কালোজলে। এক অপূর্ব আনন্দ জেগে ওঠে পুপুর মনে। তার শুধু মনে হয়, এত আনন্দ চারপাশে, কেউ এর খোঁজ রাখে না। দিদিদের জন্য তখন দুঃখে পুপুর মন ভরে ওঠে।
পুপুদের স্কুলে কিছুদিন ধরে একটা অদ্ভুত সমস্যা শুরু হয়েছে। গরমের দিনে স্কুলের দোতলায় কাঁচের ঘরের মধ্যে রাশি রাশি সাদা তুলো দিয়ে ইগলু বানানো হয়। গরমে বরফ দেখতে ভালো লাগে। মাদার ট্রেনিং প্রোগ্রামের এর জন্য তাদের সারদা মিশনে অনেক মায়েরা সব সময় থাকেন। এইসব জিনিস তারাই বানান আর নানা রকম হাতের কাজ বিক্রি করেন তারা। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসবে স্কুলে মেলা হয়। তখন সব ফেলে দেওয়া জিনিস যেমন শিশি, বোতল, খালি দেশলাই বাক্স, ডিমের ট্রে, ডিমের খোলা এইসব দিয়ে খুব সুন্দরসব জিনিস বানান সেই মায়েরা। পুপুর দেখে সবগুলোই কিনতে ইচ্ছা করে। স্কুলের ইগলুর সেই কাঁচের বাক্স থেকে তুলো চুরি যাচ্ছে। প্রথমটা বোঝা যায়নি। পরে বোঝা গেল, কে যেন খাবলা করে তুলো তুলে নিয়ে যাচ্ছে রোজ রোজ।
বড়দি মনে বড় ব্যথা পেয়েছেন এই ঘটনায়। স্কুলের বাচ্চাদের তিনি লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ হওয়ার পাঠও দেন। প্রায়ই ক্লাশে এসে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, রাতে তারা কে কী স্বপ্ন দেখেছে। পুপু ঘুমিয়ে তেমন স্বপ্ন দেখেনা। দেখলেও ঘুম ভাঙলে সে সেসব ভুলে যায়। সে মাঝে মাঝে সামনে এক অদ্ভুত জগৎ দেখতে পায় ঠিকই, কিন্তু পুপু জানে, এসব কথা কাউকে বলার নয়। তার ভেতর থেকে কে যেন তাকে এইসব কথা কাউকে বলতে বারণ করে দেয়। পুপু তাই বড়দিদিকে বলেছিল সে কোনও স্বপ্নই দেখে না। এ কথা শুনে বড়দি বেজায় খুশি হন তার উপর। তিনি বলেন-- সবাই কত কী স্বপ্ন দেখেছে বলেছে, তবে কমলিকা দত্তই একমাত্র সত্যি কথা বলেছে। একথা শুনে ক্লাশের সবার মুখ শুকনো হয়ে গেল। ক্লাশে ক্লাশে দিদিমণিরা গিয়ে জানতে চাইলেন-- সত্যি করে বলো, তোমাদের মধ্যে কে কাঁচের ঘর থেকে তুলো নিয়েছ? কোনও শাস্তি দেওয়া হবে না। আমরা কেবল সত্যিটা জানতে চাইছি।
উত্তরে কেউ এগিয়ে এল না। সেদিন পুপুর কনুইতে ফোঁড়া হওয়ায়, তার মা সকালবেলা কলেজ যাওয়ার আগে, তাকে খানিকটা গোলাপী রঙের বোরিকতুলো দিয়েছিলেন। পুপু সেটা তার অ্যালুমিনিয়ামের স্কুল যাওয়ার বাক্সতে রেখে দিয়েছিল। টিফিনে কে যেন সেটা দেখতে পেয়ে গেল। টিফিনের পরের পিরিয়ডে ক্লাশে দিদিমণি আসতেই পুপুর যেসব বন্ধুরা তার সঙ্গে কথাই বলে না, তারা বললো-- কমলিকার কাছে তুলো আছে।
ইন্দিরাদিদিমণি পুপুকে সামনে টেনে নিয়ে গেলেন। তারপর আর কিছুই জানতে না চেয়ে প্রথমেই খুব জোরে একটা চড় মারলেন। পুপুর ফর্সা গালে পাঁচটা আঙুল যেন কেটে বসে গেল। পুপু কিছু বলার আগেই দিদিমণি বললেন -- সারাদিন চুপ করে থাকে, অথচ এ মেয়ের পেটে এমন বদ বুদ্ধি! তারপর পাশের ক্লাশে ছুটে গেলেন। পুপু শুনতে পেল, ইন্দিরাদিদি বলছেন-- তুলোচোর ধরা পড়েছে। বীণা দিদিমণিও কোনো কিছু না জানতে চেয়ে একই রকমভাবে পুপুর কান ধরে, দু গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারলেন। পুপু একবারও কাঁদছে না। তার কিছু বলার আছে। এত চীৎকারে তার সরু আর কোমল গলা চাপা পড়ে গেল।
চেঁচামেচি শুনে নিচ থেকে স্কুলের বড়দি সুষমাদিদিমণি উঠে এলেন। বললেন--
কই দেখি, কে চোর? বলে পুপুর হাতটা টেনে নিলেন তার হাতে। এতক্ষণে পুপুর চোখ জলে ভরে উঠলো। সে অস্ফুটে বলে উঠলো--
আমি চুরি করিনি। পুপুর পালস্ দেখা শেষ করে, সুষমাদিদি কড়া চোখে ইন্দিরাদির দিকে তাকালেন। তারপর রাগি গলায় বললেন--
ও চোর নয়।
ইন্দিরাদিদি বললেন-- তবে যে শুনলাম, তুলো আছে, ওর কাছে?
ওইসব তদন্ত আপনি করুন। মোটমাট ও চুরি করেনি। ওকে মারার আগে সবটা আপনারা ভালো করে জেনে নিতে পারতেন!
বড়দি চলে যেতে পুপু নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো। সমস্ত ক্লাশের বন্ধুরা তার দিকে তাকিয়ে আছে। সবার চোখে কেন জানি না ঘৃণা দেখতে পেল সে। পুপু মাথা নিচু করে নিল।
বাড়ি ফিরে তার দুঃখের জানলায় বসে থাকে পুপু। মার খাওয়ার কথা দিদিদের বলা যাবে না। তারা তাকে নিয়ে তাহলে আরও হাসবে। মা বাড়িতে নেই। থাকলেও সে মাকে বলতে পারবে না। বাবা থাকলে, পুপু বাবাকে সব কথা বলতো। পুপুর এখন খুব বাবাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। বাবা কাছে নেই। তাদের বাড়িতে ফোন নেই। মামাবাড়িতে ঘোরানো ডায়ালের একটা ফোন আছে। পুপু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। দুপুর হয়ে গেছে। বাড়িতে কাজের মাসি ছাড়া কেউ নেই এখন। পুপু আজ একদম একটুখানি ভাত খেল। আজ তার খিদেই পায়নি। সে বাগানে গিয়ে পুকুর পাড়ে বসে থাকে। গলার কাছে কী যেন দলা পাকিয়ে ওঠে তার। বুকের ভেতর চাপ চাপ কষ্ট।
হঠাৎ তার সামনে একটা দৃশ্য ফুটে ওঠে। ঠিক যেন সামনে একটা সিনেমা দেখছে সে। সে দেখতে পায় তাদের ক্লাশের অর্ধেন্দুকে। সে ছুটির পর চুপিচুপি উঠে এসেছে দোতলায়। তারপর কাচের বাক্স খুলে খানিকটা তুলো বের করে নিয়ে, নিজের পিঠের ব্যাগে ঢোকালো। পুপু অবাক হয়ে দেখতে থাকে। চোখের পলক পড়েনা তার। কেন চুরি করছে অর্ধেন্দু? পুপুর মনে এই প্রশ্ন আসা মাত্রই কে যেন তাকে বলে দেয়, — ওর বাড়িতে অর্ধেন্দু বড় একা। ওর সঙ্গে ভালো করে কথা বলার আর সময় দেওয়ার জন্য কেউ নেই। তাই কিছু না বুঝেই ও চুরি করছে। এই চুরি তাকে তার প্রতি হওয়া অন্যায়কে ভুলিয়ে দেয়। পুপু অর্ধেন্দুর জন্য কষ্ট পায়। তার বুকের ভেতরে যন্ত্রণা জমা হয়।
বিকেল হওয়ার আগেই পুপু ভগবানের উদ্দেশ্যে তার প্রথম চিঠিটা লিখে ফেললো। ঠিকানাতে কেয়ার অফ ইন্দ্র আর স্বর্গ কথাটাও লিখেছে। সে মাঝে মাঝে তার বাবাকে চিঠি লেখে, ঠিকানা লিখতে হয়, তা সে ভালো করেই জানে। চিঠিতে পুপু লিখেছে,
"আমাকে কষ্ট দিলে কেন তুমি? আমার খুব মন কেমন করছে। অর্ধেন্দুকে ভালো করে দাও। ও যেন আর চুরি না করে। তুমি আমার প্রণাম নিও।" তারপর বিকেলে যখন ভীষণ কালবৈশাখি শুরু হলো, সে দুঃখের জানলা খুলে চিঠিটা ঝড়ের হাওয়ায় ভাসিয়ে দিল। ভীষণ অভিমানে নিজেকেও চিঠির সঙ্গে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছা করলো পুপুর। তাকে কেউ ভালোবাসেনা।
পুপু হঠাৎ দেখতে পেল, ঝোড়া হাওয়ার সঙ্গে দুঃখের জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে স্বচ্ছ দেহের অধিকারী কয়েকটি মানুষ। তারা পুপুকে ঘিরে দাঁড়ালো সবাই। কেউ কেউ তার চোখ মুছিয়ে দিল। একজন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। তাদের মধ্যে থেকে একজন পুপুকে বললো-- মন খারাপ করো না পুপু। তুমি রূপকথায় দেখোনি, কী ভীষণ কষ্টের পরে আসে জয়ের সাফল্য! মানুষের জীবনও রূপকথা হয়ে ওঠে যখন যদি কেউ তীব্র দুঃখ কষ্টের মধ্যে থেকেও তার মানবিকতা ভুলে না যায়। খুব আনন্দে থেকো পুপু। এই পৃথিবীর তোমাকে বড় প্রয়োজন।
পুপুর মনখারাপ কেটে যাচ্ছে। অভিমানও। সে বুঝেছে এখন সে আর একা নয়।