• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭১ | জুন ২০১৮ | ছোটদের পরবাস | গল্প
    Share
  • কথা বলবি না? : কৌশিক ভট্টাচার্য



    ১. টুইটুই

    ছোট্টো পাখি টুইটুই উড়ে উড়ে খেলছিলো বন্ধুদের সাথে। আজ ওদের খুব মজা। ওরা ঠিক করেছে আজ সারাটা দিন বনপুকুরের জঙ্গলে কাটাবে, ফল খাবে, আর খেলবে। বনপুকুরের জঙ্গলে পাকা লঙ্কার মত এক ধরনের বুনো ফল পাওয়া যায়, খুব ভালো খেতে।

    বনপুকুর ওদের বাড়ির থেকে অনেক দূরে। তবে বড়রা কোনো আপত্তি করে নি। আপত্তি করবেই বা কেন? বাচ্চারা বড় হচ্ছে, উড়তে শিখেছে, এখন থেকে তো নিজেদের খাবার নিজেদের-ই জোগাড় করতে হবে! মা-বাবা কি আর চিরটাকাল ফলটা-পোকাটা-মধুটা এনে মুখে জুগিয়ে যাবে?

    বনপুকুরে যখন ওরা পৌঁছালো, সূর্য তখন মাথার উপর। প্রচুর ফল খেলো ওরা, উড়ে উড়ে ছোঁয়াছুঁয়ি খেললো নিজেদের মধ্যে। সারা বনপুকুর জুড়ে খালি ওদের হুল্লোড়ের টুই-টুই-টুই-টুই আওয়াজ।

    সন্ধ্যা হয়ে এলো। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। নিজেদের মধ্যে অনর্গল বকরবকর করতে করতে ওরা এগোলো বাড়ির দিকে।

    হঠাৎ মাথার উপর দেখা দিলো এক মস্ত কালো ছায়া। কেউ কিছু বোঝার আগেই তীরের মত নেমে এসে ছোট্ট টুইটুইয়ের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীকে ধরে নিয়ে গেলো শিকরে বাজ।

    সাংঘাতিক ভয় পেয়ে গেলো ওরা। পাগলের মত কে যে কোনদিকে উড়ে পালালো তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। কি করে যে আমাদের ছোট্ট টুইটুই অন্ধকারে পথ খুঁজে খুঁজে পুরোনো বাগানবাড়ির বড় কাঁঠালগাছে ওদের বাসায় ফিরলো তা ও নিজেও জানে না।


    ***

    ভোর হলো।

    মা ডাকলো, “টুইটুই, ওঠ! উঠে পড়!”

    অন্যদিন মা ডাকলেই উঠে বসে কলকল করে কথা বলা শুরু করে টুইটুই, আজ কিন্তু ওর গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোলো না।

    মা আদর করে ডানা দিয়ে ঢেকে দিলো ওকে। মার ডানার মধ্যে ঢুকে প্রাণভরে মায়ের গায়ের গন্ধ নিলো টুইটুই। বলতে চেষ্টা করলো যে মায়ের গায়ের গন্ধটা ওর খু-উ-ব ভালো লাগছে, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বার করতে পারলো না।

    আস্তে আস্তে সবাই বুঝতে পারলো কি হয়েছে। কথা বলতে ভুলে গেছে ছোট্ট টুইটুই।

    “কথা বলবি না?” -- মা তবুও বলে চলে বারবার।

    খুব, খুব চেষ্টা করে টুইটুই। কিন্তু কিছুতেই গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের করতে পারে না ও।


    ***

    মা, বাবা সবাই ঘিরে আছে টুইটুই-কে। সবাই চাইছে টুইটুই আবার আগের মতন ডাকুক, কথা বলুক।

    বুড়ি ঠাকুমা ওদের বলে সরে যেতে। বলে, “সময় দাও ওকে। যাও, তোমরা কাজে যাও, ও আমার কাছে থাকুক।”

    ঠাকুমা জোর করে কথা বলাতে চায় না, নিজেই শুধু আপনমনে বকবক করে চলে। ওর জন্য ওর প্রিয় খাবার নিয়ে আসে, মস্ত বড় পাকা লাল লঙ্কা। তারপর ঠাকুমা গান ধরে আস্তে আস্তে। এই গানের সুর আর কথাগুলো, কেন জানি না, খুব ভালো লাগে টুইটুইয়ের --

    “আমরা আলোর দেশে যাবো, যাবো,

    আলোর দেশে যাবো।”

    ঠাকুমা গান গায়।

    বাড়ির পাশের গাছগুলোর ছায়া লম্বা হতে থাকে।

    সন্ধ্যা হয়।


    ***

    দিন কেটে যায়।

    এর মধ্যে টুইটুইয়ের মা আর বাবা যে কত চেষ্টা করেছে ওকে কথা বলানোর তার ঠিক নেই, কিন্তু পারে নি। কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে মা বলেছে, “কই, আর কারোর মেয়ের তো এমন হলো না?”

    টুইটুই চুপ করে সব শোনে। টুইটুই এটাও খুব ভালো করে জানে যে একবার ও ডেকে উঠলেই মা-বাবার মুখে হাসি ফুটবে আবার। কিন্তু কথা বলার চেষ্টা করলেই ওর চোখের সামনে একটা দৃশ্য ভেসে আসে। অনেক, অনেক উপর থেকে নেমে আসছে এক কালো ঝড়। দুটো ঠান্ডা চোখ। ছুরির মতো ধারালো নখে ভরা দুটো পা চেপে ধরে আছে ওর প্রিয় বান্ধবীর গলা। কিছু যেন বলতে চাইছে ওর বান্ধবী টুইটুইকে, কিন্তু পারছে না। নখগুলো শুধু গলার ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

    ভয়ে চিৎকার করে উঠতে চায় টুইটুই, কিন্তু ওর মনে হয় কোনো অচেনা বাজ যেন ওর-ও গলা টিপে ধরে আছে। প্রাণপণে চেষ্টা করলেও গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না তাই।

    সারাদিন কথা না বলে কাটানোটা আস্তে আস্তে তাই আরও অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে।

    আজকাল আর বাকি পাখিরা খুব একটা চেষ্টাও করে না টুইটুইকে দিয়ে কথা বলানোর।

    সময়-ও নেই কারুর।

    সারাদিন চলে যায় খাবারের খোঁজে।

    সন্ধ্যা হয়ে এলে যে যার বাসাতে ফিরে এসে ঘুমোয় পাখিরা।

    শুধু বুড়ি ঠাকুমা পাখি-ই হাল ছাড়ে নি। এখনো আশা আঁকড়ে পড়ে আছে বুড়ি।

    রোজ ঠাকুমা পাখি ওকে গান শোনাতে ভোলে না --

    “আমরা আলোর দেশে যাবো, যাবো,

    আলোর দেশে যাবো।”

    যেন এক সময়ে ওই গানের সুর-ই বাধ্য করবে টুইটুইকে কথা বলাতে।

    অন্ধকার হয়ে আসে, তবু বুড়ির গান আর থামে না।

    নিচে বাগানবাড়ি পড়ে থাকে ভূতের মতন।


    ২. টিয়া

    পুরোনো যে বাগানবাড়িটাতে টুইটুইরা থাকে সেটা ফাঁকাই পড়ে থাকে সারা বছর। মাঝে মাঝে খালি এক মালি আর মালি-বৌ এসে সব কিছু ঝেড়েপুঁছে যায়, কিন্তু রাতে থাকে না তারা।

    সেদিনও মালি আর মালি-বৌ এসে সব সাফ করে ঝেড়েপুঁছে রেখে গেলো। সন্ধ্যা হয়ে এলে পাখির দল যখন ঘরে ফিরলো, ঠাকুমা পাখি তখন ওদের বললো, “লোক আসবে!”, ঠাকুমা পাখি কি করে যে সব বুঝলো কে জানে?

    সত্যিই লোক এলো পরের দিন রাতে। বাড়ির সামনে একটা বড় মোটরগাড়ি এসে থামলো। বড় বড় তিন-চারটে স্যুটকেস নিয়ে বাড়ির মধ্যে দ্রুত ঢুকে গেলো যারা এসেছিলো। টুইটুইদের দলের সব পাখিরা তখন গভীর ঘুমে। তিন-চারটে গাছ দূর থেকে একটা হুতোম প্যাঁচা চেঁচিয়ে ডেকে সবাইকে জানিয়ে দিলো, “এসেছে! এসেছে!” মধ্যরাতে হঠাৎ এমন আওয়াজে ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি মায়ের ডানার ভিতরে ঢুকতে গেলো টুইটুই। ঘুমের ঘোরে একটু বিরক্তির সাথে “উঁ! উঁ!” করে নড়ে উঠলো মা।


    ***

    আজ সারাদিন টুইটুইদের দলের কেউ খুব একটা দূরে যায় নি। বাড়িতে নতুন লোক এসেছে। তাদের কার কি মতলব কে জানে। বাচ্চাদের নিচে নেমে খেলতে বারণ করে দিয়েছে মা-বাবারা।

    বাড়ির পাশে পিচের রাস্তা। রাস্তার ওপার থেকে জঙ্গলের শুরু। রাস্তার জঙ্গলের দিকের গাছে বসে পালা করে বাড়ির উপর নজর রাখছে পাখির দল।


    ***

    সকাল দশটা নাগাদ বাড়ির খিড়কির দরজাটা খুলে গেলো।

    দরজা দিয়ে উঁকি দিলো দুটো চোখ -- খুব সাবধানে এদিক ওদিক চেয়ে দেখলো সেই দুটো চোখ, যেন যুদ্ধ চলছে আর শত্রু লুকিয়ে আছে বাগানের গাছের আড়ালে, আড়াল ছাড়লেই দমাদ্দম গুলি চালাবে বন্দুক দিয়ে।

    অনেকক্ষণ ধরে সবকিছু মেপে দেখলো সেই দুটো চোখ। বাগানে এলো ছোট্ট একটা মেয়ে, বছর দশেকের মতন বয়স। চেয়ে চেয়ে বাগানটা দেখলো সেই মেয়ে। খুব আস্তে আস্তে সাবধানে এদিক ওদিক চেয়ে টুইটুইরা যে কাঁঠাল গাছটায় থাকে, সেখানে এসে দাঁড়ালো। তারপর গাছে হেলান দিয়ে বসে পড়লো ঘাসের উপর।

    গাছের উপর ঠিক সেই সময়েই খ্যাঁকখ্যাঁক করে ঝগড়া শুরু করলো দুটো ছাতারে পাখি। আওয়াজ পেয়েই অমনি এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে আবার বাড়ির দিকে ছুট লাগালো সেই মেয়ে। দেখে মনে হয় যেন ভীষণ, ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে কোনো কারণে।

    বাড়ির ভিতর অবধি অবশ্য যেতে হলো না সেই মেয়েকে। খিড়কির দরজা দিয়ে বাগানে আসছিলো এক মহিলা। দেখে মনে হয় মেয়েটির মা। বয়স প্রায় চল্লিশ। লম্বা, ফর্সা, টিকোলো নাক, চোখে হালকা ফ্রেমের চশমা। সুন্দরী বলা যায়, কিন্তু যেন ট্রেনে তিন রাত ঘুম না হওয়া সুন্দরী। চোখে-মুখে সর্বাঙ্গে একটা ক্লান্তির ছাপ ছড়িয়ে আছে।

    মেয়েটি ছুট্টে গিয়ে দু হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো ওর মাকে। হঠাৎ এই জড়িয়ে ধরার জন্য একেবারেই তৈরি ছিলো না মহিলা। কিছুটা অবাক গলায় তাই সে বললো, “ওমা! তুই এখানে? আর আমি কিনা তোকে এতক্ষণ বাড়ির ভিতরে খুঁজছিলাম!”

    মায়ের মুখের দিকে ভয়-ভয় চোখে চাইলো মেয়ে। সেই চাউনি দেখেই মা-ও যেন পড়ে ফেললো কি বলতে চাইছে মেয়ে।

    -- ভয় পেয়েছিস আবার? কোনো ভয় নেই, আমি তো এখানেই আছি!

    মেয়ের হাত ধরে বাগানের এক প্রান্তে এসে দাঁড়ালো মেয়ের মা, বললো, “কি সুন্দর বাগান দেখেছিস, টিয়া? জায়গাটা খুব ভালো, তাই না?”

    মার দিকে চেয়ে অল্প একটু ঘাড় নাড়লো টিয়া।

    মা আবার জিজ্ঞাসা করলো, “তোর ভালো লাগছে তো এখন?”

    টিয়া আবার অল্প একটু ঘাড় নাড়লো। মানে ভালো লাগছে ওর।

    মা বললো, “এখন এখানে কিছুদিন থাকবো কিন্তু আমরা। তোর কোনো আপত্তি নেই তো?”

    মার দিকে তাকিয়ে এবার চুপ করে চেয়ে রইলো টিয়া, কিন্তু কোনো কথা বললো না।

    সূর্যের আলোয় অল্প একটু জল যেন চিকচিক করে উঠলো মায়ের মুখে।


    ***

    কারণে অকারণে এখন চোখে জল আসে পারমিতার।

    মেয়েটার দিকে যখনই তাকায় দলা পাকিয়ে যেন একটা কান্না জমে ওঠে গলায়। প্রাণপণে কান্না চাপে পারমিতা।

    অনিমেষ আর টিয়াকে নিয়ে ছোট্ট সংসার ছিল তার। সকালবেলা মেয়ে যেত স্কুলে আর ওরা দুজন বেরিয়ে পড়তো কাজে। তারপর একে একে বাড়ি ফেরা, রান্না, বাড়া, খাওয়া ...

    ছুটির দিনে তিনজনে মিলে ওরা বেরিয়ে পড়তো কোথাও না কোথাও।

    এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো বেশ।

    সব শেষ করে দিলো সেই দিনটা।


    ***

    স্কুল থাকলে ওদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে আগে বাড়িতে ঢুকে যায় পারমিতা। পারমিতা বাড়িতে ঢোকার দশ থেকে পনের মিনিটের মধ্যে বাড়ি ঢুকে যায় টিয়া-ও। টিয়ার স্কুলব্যাগে একটা চাবি রাখা থাকে। মেয়েকে পাখি পড়ার মতো শিখিয়ে রেখেছে পারমিতা যে কোনো কারণে মায়ের দেরি হলে যেন সোজা ফ্ল্যাটের সদর দরজার তালা খুলে বাড়িতে ঢুকে পড়ে টিয়া, আর কি-হোল দিয়ে ভালো করে বাইরেটা না দেখে কাউকে যেন দরজা না খোলে।

    সেদিন বাড়িতে ঢোকার আধঘন্টা পরেও মেয়ে না ফেরায় বুকটা অজানা এক আশঙ্কায় ছ্যাঁৎ করে উঠেছিলো পারমিতার। পরের কয়েক ঘন্টা পাগলের মতন শুধু একের পর এক ফোন করে গেছে পারমিতা। অফিস থেকে আগে বাড়ি ফিরে এসেছে অনিমেষ। ফোন করেছে সে ও। টিয়ার স্কুলে গেছে আবার, স্কুলবাসের ড্রাইভার আর অন্য কর্মীদের সাথে কথা বলেছে।

    রাত আটটা নাগাদ খবর এলো পুলিশের কাছ থেকে। শহর থেকে একটু দূরে ছোট একটা জঙ্গল। জঙ্গল যেখান থেকে শুরু হচ্ছে সেই জায়গার একটা ছোট রাস্তার ধারের ঝোপে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে টিয়া।

    জায়গাটা ফাঁকা। আশেপাশে কোনো লোকজন থাকে না। অল্প দূরে একটা পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান। দোকানদার নাকি ঘন্টা চারেক আগে একটা মোটর সাইকেলে টিয়াকে নিয়ে দুটো লোককে ওই রাস্তায় যেতে দেখেছে।


    ***

    থানা পুলিশ হাসপাতাল দিয়ে দুঃস্বপ্নের শুরু।

    উপরি পাওনা সাংবাদিক। মেয়ের মা-বাবার মনের অবস্থাটা কি সেটা যতক্ষণ না তারা নিজেদের মুখে বলছে ততক্ষণ যেন তৃপ্তি নেই তাদের।

    সারাটা রাত হাসপাতালে মেয়ের পাশে বসে কাটিয়েছে পারমিতা আর অনিমেষ।

    মাঝরাতে জ্ঞান ফিরেছে টিয়ার।

    ডাক্তার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে জ্ঞান ফেরার এক ঘন্টা পর। এই এক ঘন্টা একটা শব্দও মুখ দিয়ে বেরোয় নি টিয়ার।


    ***

    হাসপাতাল থেকে ফেরার পর শুরু হয়েছে সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে সিটিং।

    পারমিতা আর অনিমেষের শত অনুরোধ, চোখের জল কোনো কাজে আসে নি। সেই জ্ঞান ফেরার পর থেকে আর একটাও কথা বলে নি টিয়া।

    কোনো ভরসা যোগান নি সাইকিয়াট্রিস্ট-ও। বলেছেন, “দেখুন, মানুষের মনের অনেক কিছু আজও আমাদের অজানা। কিছু ওষুধ দিচ্ছি, মনটা এতে হয়তো একটু ভালো থাকবে। কিন্তু কবে ও কথা বলতে পারবে, আদৌ পারবে কিনা, ফ্র্যাঙ্কলি বলছি, জানা নেই আমাদের।”

    টিয়া কথা বলতে না পারায় অসুবিধে হয়েছে পুলিশেরও।

    পুলিশ কমিশনার স্বয়ং অনুরোধ করেছেন টিয়া কথা বলা শুরু করলেই ওনাদের খবর দিতে। থানায় যাবার দরকার নেই। বাড়িতে টিম পাঠাবেন উনি। টিয়ার জবানবন্দী কেসটার পক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।


    ***

    মেয়ের কাছে কারুর না কারুর সব সময় থাকা দরকার।

    চাকরি ছেড়ে দিয়েছে পারমিতা।

    ওর মা-বাবা এসে থাকতে চেয়েছিলো ওদের কাছে, দৃঢ় গলায় তাদের বলেছে, “ক’ দিন থাকবে? ধরো কিছু হলো না, তখন? কোনো দরকার নেই কয়েকদিনের জন্য এসে।”

    পাড়াপ্রতিবেশীদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছে পারমিতা। তাদের কৌতূহল বড় বেশি। পারমিতা চাকরি করবে কিনা না জানলে তাদের ভাত হজম হচ্ছে না। কিন্তু কৌতূহল যখন ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করে টিয়ার শরীর নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেছে তখন ঠান্ডা গলায় পারমিতা তাদের উঠে যেতে বলেছে।

    সাইকিয়াট্রিস্ট পরামর্শ দিয়েছেন কিছুদিনের জন্য জায়গা বদলে দেখতে।

    অনিমেষের যেন ঠিক এই ব্যাপারে সায় ছিলো না। পারমিতাই তাকে জোর করে একরকম বাধ্য করেছে এই পরামর্শ মেনে চলবার।

    অনিমেষের এক বন্ধুর মেসোমশাইয়ের বাগানবাড়ি রয়েছে রাজাভাতখাওয়ার জঙ্গলের ধারে। ওদের জন্য সেই বাড়িটা ছেড়ে দিয়েছেন মেসোমশাই।

    অতএব রাজাভাতখাওয়া …

    একাই থাকতে হবে পারমিতাকে। কতদিন আর ছুটি পাবে অনিমেষ?

    অন্য সময় হলে হয়তো বিপদের ভয় করতো পারমিতা। কাতর অনুরোধ করতো অনিমেষকে থেকে যেতে। কিন্তু চরম বিপদ এসে যাবার পর অন্য সব বিপদের যত ভয় যেন তুচ্ছ হয়ে গেছে সব।

    একাই থাকতে পারবে পারমিতা।

    অনিমেষ শুধু মাঝেমাঝে এসে ঘুরে যাবে এক দু দিনের জন্য।


    ৩. ওরা দু’জন

    গাছের উপর থেকে মেয়েটার উপর নজর রাখে টুইটুই।

    সারা বাগান জুড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় মেয়েটা। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে টুইটুই, ওর মতো মেয়েটাও কোনো কথা বলে না। ওর মা’র মতন, মেয়েটার মা-ও ডাকে ওকে, আদর করে। মাঝে মাঝে ওর মা যে কথাগুলো বলে মনে মনে সেগুলো আওড়ায় টুইটুই, “ক-অ -থা ব-অ-লবি না-আ?” কথাগুলো বলার সময় মেয়েটার মায়ের চোখদুটো অল্প জলে চিকচিক করে ওঠে। মেয়ে তবু কথা বলে না। কেন? ওর বান্ধবীকেও কি বাজপাখি মেরে ফেলেছে?

    একদিন মেয়েটা যখন একা বাগানে বসে, নিচে ঘাসে নেমে এলো টুইটুই, মেয়েটার বেশ কাছে। জোড়া পায়ে লাফাতে লাগলো ঘাসের উপর। কিন্তু যেই মেয়েটা আরো কাছে এলো, এক লাফে উড়ে আবার গাছের ডালে।

    এভাবেই শুরু।

    রোজ টিয়ার কাছাকাছি এসে ঘাসের উপরে লাফায় টুইটুই। টিয়া চুপ করে দেখে। কখনো কখনো কাছে আসার চেষ্টা করে। তবে বেশি কাছে এলেই লাফিয়ে পালিয়ে যায় টুইটুই।

    ক্রমশঃ যেন বুঝতে পারে টিয়া এটা অনেকগুলো পাখি নয়, অনেকগুলোর মধ্যে একটাই পাখি -- মনে হয় যেন ওকে খেলতে ডাকছে।


    ***

    সেদিন টুইটুই ঠিক করলো আর উড়বে না।

    টিয়া কাছে আসতেই লাফিয়ে দূরে সরে গেলো টুইটুই।

    আবার কাছে এলো টিয়া, আবার লাফ দিলো টুইটুই।

    দুজনের মধ্যে যেন শুরু হলো এক ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা।

    শেষ পর্যন্ত টুইটুইকে ধরতে লাফ দিয়ে সামলাতে না পেরে হোঁচট খেয়ে পড়লো টিয়া। তৈরী ছিল না টুইটুই। আর একটু হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছিলো আর কি! অল্পের জন্য টিয়ার হাতের ছোঁয়া এড়াতে পারলো ঠিক সময় মতন উড়ে পালিয়ে।

    মা সেদিন খুব বকলো টুইটুই-কে। ভাবো তো, ধরা পড়লে কি হতো? সারা জীবন খাঁচায় কাটাতে হতো তাহলে।

    মা-র বকুনি আর গজগজ করে যাওয়া চুপ করে শুনলো টুইটুই।

    মা-তো জানে না যে কথাটা সত্যি নয়।

    টুইটুই জানে যে টিয়া বাজপাখি নয়। টুইটুই জানে যে টিয়ার থেকে কোনো ক্ষতি হবে না ওর।


    ***

    সেদিন-ও লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে ওরা দুজনে।

    হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে ভটভট শব্দ করে বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে চলে গেলো একটা মোটর সাইকেল।

    কি হলো কে জানে, ভীষণ, ভীষণ ভয় পেয়ে পাগলের মতন দৌড় লাগালো টিয়া বাড়ির খিড়কির দরজার দিকে।

    কিন্তু পারলো না, একটা ইঁটে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো ঘাসের উপর।

    খুব ভয় পেয়েছে মেয়েটা, কিন্তু কিসের ভয়? আকাশে তো কোনো বাজপাখি নেই?

    টিয়া ওঠার আগেই সোজা ওর কাছে গিয়ে ওর গালে গাল ঘষলো টুইটুই, আর কি আশ্চর্য, ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো টিয়ার মায়ের সেই শব্দগুলো, “ক-অ -থা ব-অ-লবি না-আ?”

    টুইটুই কথা বলেছে! টুইটুই কথা বলেছে!!

    আশেপাশের সব গাছে পাখিদের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়লো এক লহমায়!

    উঠে বসলো টিয়া। তখন-ও এক বার করে ওর কাঁধে বসে লাফিয়ে ওর গাল ছুঁয়ে দিচ্ছে টুইটুই আর বলে যাচ্ছে, "ক-অ -থা ব-অ-লবি না-আ? ক-অ -থা ব-অ-লবি না-আ?”


    ***

    ভরদুপুরে মোটর সাইকেলের আওয়াজ আর পাখিদের এত চেঁচামেচি শুনে বাগানে আসে পারমিতা।

    আজকাল কাউকে বিশ্বাস নেই তার, পাখিদের-ও।

    কিন্তু একটু দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে হঠাৎই দুচোখ জলে ভরে যায় পারমিতার। এতদিন পরে এই প্রথম ওর মনে হয় যে এখানে আসাটা হয়তো ব্যর্থ হবে না।


    ৪. আমি আবার উঠে দাঁড়াই

    দিন কাটে।

    এখানে সময় কাটানো যে এত শক্ত হবে আগে তা বুঝতে পারে নি পারমিতা।

    রান্নাবান্না বা ঘরের কাজ এক দু ঘন্টায় হয়ে যায়। মাঝে মাঝে একটু আধটু এটাসেটা আনিয়ে নেওয়া ছাড়া মালি আর মালির বৌকে সে বাড়ির ভিতরে ঘেঁষতে দেয় নি। বেশি ঘেঁষা মানেই বেশি কৌতূহল, তারপর সারা পাড়া জুড়ে কথা চালাচালি।

    একাই সব সামলে নেবে সে। কিন্তু সময়কে যে ঠিক কিভাবে সামলাবে তা যেন এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না পারমিতা।

    এই যেমন এখন বারান্দার ডেক চেয়ারে বসে আছে পারমিতা। শুধু বসেই আছে। আজকের মতন রান্নাবান্না ঘরের কাজ সব শেষ। হাতে অন্য কোনো কাজ নেই, তবু আসল কাজ তো চব্বিশ ঘণ্টার।

    দূর থেকে আবার মেয়ের দিকে নজর ঘোরায় পারমিতা।


    ***

    আজকাল টিয়ার হাত দিয়ে পাখিটার জন্য খাবার পাঠায় পারমিতা: ছোলা, মটরশুঁটি, লঙ্কা।

    মাঝেমাঝে মেয়েটার কাঁধে বসে কলকল করে কি সব বকে যায় পাখিটা। কিন্তু কেন জানি না, যেই পারমিতা বাগানে আসে, অমনি ও উড়ে পালায়। আজকাল তাই বাগানে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে পারমিতা।

    মেয়ের যেন সামান্য উন্নতি হয়েছে। চব্বিশ ঘন্টা জুড়ে গায়ে লেপ্টে থাকা ভয়টাও একটু যেন কমেছে।

    পারমিতা লক্ষ্য করেছে যে টুইটুই কাছে এলে টিয়া খুব ক্ষীণ একটুখানি যেন হাসেও।

    ব্যাস, ওই পর্যন্তই। সেই সেদিনের পর থেকে আর কোনো উন্নতির লক্ষ্মণ নেই।

    মেয়েটার এখানে এসে এইটুকুও যে উন্নতি হয়েছে তাতেই কি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত পারমিতার? কিন্তু এর পরে কি? কতদিন আর পড়ে থাকতে হবে একা এই জঙ্গলে মেয়েকে ঘাড়ে নিয়ে?

    হঠাৎ করে অনিমেষের উপর এক তীব্র রাগ ভর করে। মেয়ে যেন তার একার। বছরের পর বছর জঙ্গলে বসে মেয়ের সাথে সময় কাটাতে হবে তাকে একাই।

    হাতের পাশে রাখা মোবাইল ফোনটা নিয়ে অনিমেষের নম্বর লাগায় পারমিতা। ওদিক থেকে গলার আওয়াজ আসতেই দাঁতে দাঁত ঘষে হিসহিস করে বলে, “খুব মজা না তোমার?”

    ওপাশের গলার আওয়াজের যন্ত্রণাবোধটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে পারমিতা।

    এক সময় রেগে ফোন রেখে দেয় অনিমেষ।


    ***

    আবার বারান্দায় বসে থাকে পারমিতা।

    অনেক দিন হয়ে গেলো। পাড়া-প্রতিবেশী এবারে হয়তো একটু রেহাই দেবে। এর মধ্যে আরও অনেক চমকদার ঘটনা শহরে ঘটে গেছে নিশ্চয়ই।

    তবে পাড়া-প্রতিবেশী যদি নাও থাকে, রেহাই কি রয়েছে তবুও?

    নতুন করে সব কিছু গুছিয়ে সংসার করার শখ আর নেই পারমিতার। টিয়ার জন্য স্পেশাল স্কুলের খোঁজ করতে হবে গিয়ে। অপদার্থ অনিমেষ নিশ্চয়ই এতদিন ধরে শুধু নিজের অফিস নিয়ে ব্যস্ত।

    আবার অনিমেষের নম্বরে রিং করে পারমিতা। গর্জে ওঠে, “শোনো, আর এক দিন-ও আমার পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়। যেভাবে হোক, ছুটি ম্যানেজ করে এসে নিয়ে যাও আমাদের।”


    ***

    মা ডাকলেই এখন সকালবেলা উঠে পড়ে টুইটুই। উঠেই আবার কলকল করে কথা বলা শুরু করে আগের মতন। এক সময় মা রেগে বাধ্য হয় বলতে, “ওরে, থাম, থাম! এবারে রেহাই দে একটু!”

    সকাল ন’টার পর টিয়া আসে বাগানে। কাঁঠালগাছের গুঁড়িতে বসে একবার উপরের দিকে তাকায়। নেমে আসে টুইটুই।

    সেদিনের সেই ঘটনাটার পর থেকে টিয়ার কাছে যেতে আর বারণ করে নি টুইটুইয়ের মা। মনে হয় ওর মা-ও যেন বুঝতে পেরেছে যে কিছু ভালো করতে না পারুক, টুইটুইয়ের কিছু খারাপ অন্তত করবে না মেয়েটা।

    আজকাল তাই নির্ভয়ে টিয়ার কাঁধে বসে টুইটুই। কাঁধে বসে কলকল করে কথা বলা শুরু করে. ওর সব কথা টিয়া বোঝে না। তবে মাঝে মাঝেই পাখিটা বলে ওঠে, “ক-অ -থা ব-অ-লবি না-আ?”

    এমনভাবে বিজ্ঞ ঠাকুমার মতন ঘাড় নেড়ে নেড়ে পাখিটা এই কথাটা বলে যে সেটা শুনলে মুখে অল্প একটু হাসি এসে যায় টিয়ার।

    কিন্তু জবাব দেবার চেষ্টা করলেই সামনে ভাসে কিছু ঠান্ডা হিংস্র চোখ আর গলায় ছুরি চেপে ধরা একটা হাত। চারিদিক থেকে কারা যেন ফিসফিস করে বলছে, “চু-উ-প! কথা বললেই একেবারে শেষ করে দেবো!!”

    মুখের হাসি তাই আসতে না আসতেই মিলিয়ে যায় আবার।


    ***

    পাখির দল ঠিক করেছে সবাই মিলে আগামীকাল বনপুকুর যাবে। এবারে বড়-ছোট সব্বাই মিলে।

    আবার বনপুকুর?

    একদম বেঁকে বসলো টুইটুই, “না, কিছুতেই ওখানে যাবো না আমি!”

    মা প্রচুর বোঝানোর চেষ্টা করলো। রাগারাগি করলো বাবাও। কিন্তু নিজের জেদ আঁকড়ে বসে রইলো টুইটুই।

    কিছুতেই যাবে না সে আর বনপুকুর।

    বুড়ি ঠাকুমা-পাখি শেষ অবধি মাকে রাজি করালো -- “কি আর করবি, বৌ? বেঁধে কি আর রাখতে পারবি নিজের কাছে সারাজীবন? নিজে যখন চাইছে না যেতে, দে না ছেড়ে!”


    ***

    আজ সকালে টুইটুই পুরোপুরি একা।

    সবাই চলে গেছে বনপুকুরে।

    গেছে তো গেছে! যাক আর সকলে! বড় হয়ে গেছে টুইটুই। নিজের খাবার সে নিজেই জোগাড় করে নেয় এখন। একটা দিন দিব্যি সে থাকতে পারবে একা একা।

    গাছের ডালে বসে টিয়ার জন্য অপেক্ষা করে টুইটুই। এত দেরি করছে কেন আজ মেয়েটা?


    ***

    অনেক উপর থেকে নিচে নজর রাখে এক মস্ত কালো ছায়া।

    কাঁঠাল গাছের ডালে বসে একা একটা ছোট্ট পাখি। আশেপাশে কোনো বড় পাখি নেই যে ওকে সাবধান করে দেবে বা বাঁচানোর চেষ্টা করবে ঠিক সময়।

    খাবার!

    নিচে ঝাঁপ দেয় সেই কালো ছায়া।


    ***

    কেন জানি না হঠাৎ একবার উপরের দিকে তাকিয়েছিলো টুইটুই। তাকাতেই বুক হিম হয়ে গেলো ওর।

    শিকরে বাজ!

    মনে হচ্ছে নিচে নেমে আসছে ওকেই ধরবার জন্য।

    প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়ে চিৎকার করতে করতে টিয়াদের বাড়ির দিকে উড়ে যাবার চেষ্টা করে টুইটুই। ও জানে ওর একমাত্র আশা যদি তাড়াতাড়ি কোনো ছোট্ট ফুটো বা খাঁজ দিয়ে বাড়ির ভিতরে কোনোমতে ঢুকে যেতে পারে। মানুষের বাড়ির ভিতরে ঢুকতে বাজপাখি-ও সাহস করবে না।

    ঠিক এই সময়ে খিড়কির দরজা খুলে যায়। বাগানে আসছে টিয়া, অবশেষে!

    টুইটুইয়ের কাতর ডাক শুনে এক লহমায় বুঝতে পারে টিয়া কি হতে চলেছে। বাজপাখি নেমে আসছে টুইটুইকে ধরবে বলে -- যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে ওকে। যত জোরে পারে দৌড়ে টুইটুয়ের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করে টিয়া। এক-ই সময়ে টিয়াকে দেখতে পায় টুইটুই-ও, আর সেই সঙ্গে বুঝে যায় কোথায় তার সেরা আশ্রয়। দিক একটু বদলে যত জোরে পারে উড়ে টিয়ার কাছে আসার চেষ্টা করে টুইটুই।

    বাগানের ঠিক মাঝখানে টিয়ার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে টুইটুই। দুহাতের পাতা দিয়ে ওকে আড়াল করে নিজের বুকের সাথে জাপটে ধরে টিয়া, কিন্তু পুরো সামলাতে পারে না নিজেকে। এত জোরে দৌড়েছিলো টুইটুইয়ের দিকে নজর রেখে যে কোনদিকে যাচ্ছিলো খেয়াল ছিলো না, তাই সোজা ধাক্কা খায় কাঁঠালগাছে, আর তারপর মুখ থুবড়ে পড়ে ঘাসের উপর। মাটিতে পড়তে পড়তেও যতখানি সম্ভব বুক আর পেটটাকে বাঁকিয়ে দেয় টিয়া, যাতে ওর দেহের ভারে টুইটুইয়ের কোনো ক্ষতি না হয়।

    ভাগ্যিস ঠিক সময়ে দেখতে পেয়েছিলো ছোট্ট পাখিটাকে।


    ***

    শিকার ধরতে না পেরে হতাশ হয়ে উড়ে চলে গেছে বাজপাখি।

    মাথাটা ফেটে গেছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। গা-হাত-পা-ও ছড়ে গেছে তিন চার জায়গায়। যন্ত্রণায় কটকট করছে কপালটা, আর সারা গা, হাত, পা।

    করুক কটকট।

    উঠে দাঁড়ায় টিয়া।

    এখন থেকে যতবার পড়ে যাবে, ততবার-ই উঠে দাঁড়াবে ও।

    “ক-অ -থা ব-অ-লবি না-আ?”

    টিয়ার কাঁধের উপর বসে টিয়ার দিকে তাকিয়ে ঘাড় নাড়তে নাড়তে প্রশ্ন করে টুইটুই। কি ঘাড় ঘোরানো! যেন নথ-নাড়ানো বিজ্ঞ ঠাকুমা একটা!!

    অল্প হেসে জবাব দেয় টিয়া, “কেন বলবো না?”


    (শৈশবে ধর্ষিতা হয়েছিলেন Maya Angelou, কিন্তু এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে যাবার পরেও ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন আবার, লিখেছিলেন Still I Rise এর মতন কবিতা যা আজও বিশ্বসাহিত্যের সম্পদ। এই গল্পটি তাই তাঁর ও তাঁর মতন অন্য সেই সব মেয়েদের উৎসর্গ করে লেখা, যাঁরা শৈশব বা কৈশোরে বীভৎসতার মুখোমুখি হয়েও আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন।)



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)