• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭১ | জুন ২০১৮ | কবিতা
    Share
  • রাইগর মর্টিস : সমরেন্দ্র নারায়ণ রায়


    ছোটনাগপুর। হেমন্তকাল। দোরে শীত নাড়ে কড়া।
    সাহু লোক ভালো, ন'বিঘা জিরেত, গোলা কটি ধানে ভরা।
    তেজারতি কিছু। সুখে শান্তিতে থাকে নিয়ে পরিবার।
    বড়ো ছেলেটা সে বছর নয়েক, ছোটটির হবে চার।
    ঠান্ডা লাগলো হঠাৎ সবার। হয়নিকো সাবধান।
    দুদিনের জ্বরে মারা গেলো সাহু, বাকীরাও জ্বরে ম্লান।
    তিন সৎভাই জমির লোভেতে আনলো ডেকে ওঝাকে,
    ঠিক হয়ে গেলো বৌদি ডাইনি, মারলো পুড়িয়ে তাকে।
    ছেলে ছুটে এলো বাঁচাতে মাকে, তো জুটলো প্রহার তার,
    ভাই দুইটিকে উলঙ্গ করে তাড়ালো গ্রামের পার।
    কোলে ভাই নিয়ে পাড়ি দিলো দাদা দূরের শহর পানে,
    যদি পায় কোনো ঔষধ সেথা, আছে ডাক্তার জানে।
    পৌঁছলো রাতে নাটমন্দিরে, জ্বরে নিজে মর মর,
    যারা ছিল সেথা তাদের জানালো ভাইটির জ্বর বড়ো।
    ঠান্ডায় রাতে ভাই মারা গেলো; প্রলাপেতে দাদা তার;
    সকাল বেলাতে খবরটা পেয়ে ছুটে এলো ডাক্তার।
    দু'ভাই তখন মা-বাপের কাছে পৌঁছে গিয়েছে হায়।
    ঠিক করা হলো বিধি মতে দাহ করা হবে দুজনায়।
    শরীর দুটিকে ছাড়ানো গেলো না, রাইগর মর্টিস,
    গুরুজনেদের হুকুম-টি হলো "এক-ই চিতায় দিস।"
    সাবেক হাকিম রাশভারী লোক, দারোগাকে এনে ডেকে,
    পাষণ্ডদের ধরালেন; তারা ঘানি ঠ্যালে জেলে থেকে।
    বড়টার মুখ আজ-ও মনে আছে, স্বপ্নে সে হেসে বলে,
    দেখো রাজাসাব, ভাইয়া-কে নিয়ে আছি মা-বাবার কোলে!!


    কবিতাটির ভিত্তি একটি সত্য ঘটনা। লেখকের Memories of Madhupur-এর 'Rigor Mortis' অধ্যায়ে বর্ণিত। ছবিটিও ওই বই থেকে অনুমতি-ক্রমে নেওয়া হয়েছে।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ দীপঙ্কর ঘোষ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments