• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭১ | জুন ২০১৮ | প্রবন্ধ
    Share
  • রাজন্যশাসিত কোচবিহারঃ উনিশ শতকের বাংলা বই : দেবায়ন চৌধুরী


    ৫৫৫ খ্রিস্টাব্দে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের অহোমরাজ স্বর্গনারায়ণকে লেখা চিঠি বাংলা গদ্যের আদি নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। অবশ্য এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো সমালোচক। ‘প্রাচীন কোচবিহারের ভাষা ও সংস্কৃতি’ নামক প্রবন্ধে অমিয়ভূষণ মজুমদার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে ‘প্রাচীন বাংলাভাষায় প্রাচীনতর পদ্যের নিদর্শন’ পাওয়া গিয়েছে উত্তরাঞ্চলেই, নেপালে। আর এই ভাষার বিশেষ একটি ‘তলে’ই ‘বাহে’ ভাষার সৃষ্টি-- “… প্রাচীন বাংলাভাষা কীরকম ছিল, তা জানতে আমাদের কোচবিহারের ভাষাকেই জানতে হবে, এবং হয়তো অনুমান করা অযুক্তির হবে না যে, সারা বাংলা যখন পাঠান বা মোগল ও ভুঁইয়াদের লড়াই নিয়ে ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশে হিন্দু সংস্কৃতি কী অবস্থায় ছিল তার অনুসন্ধান এই একটি রাজসভাতেই করতে হবে। এই প্রসঙ্গে আমাদের বোধ হয় মনে রাখা উচিত, এখন যাকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বলে জানি, তা যতটা প্রাচীনের অনুবর্তন, তার চাইতে বেশি বিদেশাগত—এক কথায় তাকে কলকাত্তাই বলা চলে, তা ভালো কি মন্দ সে কথা স্বতন্ত্র।’’ [১] এই প্রসঙ্গে লেখকের ‘উত্তরবঙ্গের ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে’ প্রবন্ধটিও স্মরণ করা যেতে পারে। সাহিত্যের ইতিহাস যদি ইতিহাস লেখার ইতিহাস হয়, তবে কামতা-কোচবিহারের সাহিত্যকে সেক্ষেত্রে কাব্যে উপেক্ষিতই বলতে হবে। অসমীয়া সাহিত্য কোচবিহার রাজদরবারের সাহিত্যকে নিজেদের ইতিহাসের অন্তর্গত করে ফেললেও আমরা নীরব থেকেছি। কোলকাতা থেকে ভৌগোলিক দূরত্ব, মূল ভূখণ্ডের থেকে বিচ্ছিন্নতা কিংবা পৃথক রাজনৈতিক আত্মপরিচয়--কোচবিহারের রাজদরবারের সাহিত্য বাংলার জনসাধারণের কাছে উপযুক্ত অভিনিবেশ না পাওয়ার মূলে অনেক কারণ রয়েছে। আমাদের উচিত বাংলা সাহিত্য ও সমালোচনার অলিখিত ইতিহাসের প্রতি মনোযোগী হয়ে রাজদরবারের সাহিত্যকে পুনর্বিবেচনা করা।


    মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ

    উনিশ শতক জুড়ে কোচবিহারে যে সমস্ত রাজাদের আমরা পেয়েছি তাঁদের নাম ও রাজত্বকালের উল্লেখ করছি--মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ (১৭৮৩- ১৮৩৯), মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণ (১৮৩৯- ১৮৪৭), মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণ (১৮৪৭-১৮৬৩), মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ (১৮৬৩- ১৯১১)। মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণের অকালমৃত্যু হলে মাত্র দশ মাস বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন নৃপেন্দ্রনারায়ণ। মূল দায়িত্ব পালন করতেন মহারানি এবং ইংরেজ সরকারের মনোনীত কমিশনার। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রাজ্যের ভার গ্রহণ করেন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৬ মার্চ ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতি দেবীর সঙ্গে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের বিবাহ শুধু কোচবিহার নয়, বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসকেই প্রভাবিত করেছিল। সব দিক দিয়েই এটি ছিল একটি ‘রাজনৈতিক বিবাহ’। এই বিয়ের ফলেই ব্রাহ্মসমাজে ভাঙন দেখা দেয়--“ভক্তরা কেশবচন্দ্রের ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ ত্যাগ করে শিবনাথ শাস্ত্রীর নেতৃত্বে ও আনন্দমোহন বসুর সভাপতিত্বে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই মে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন। আর অপরদিকে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের প্রভাবে প্রভাবিত কেশবচন্দ্রও অবশেষে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারী ‘নিউ ডিস্পেন্সেসন’ বা ‘নববিধান’ তথা খ্রিস্টধর্ম, বৈষ্ণব ভক্তিবাদ ও হিন্দু আচারপদ্ধতির অ্যালকেমিতে নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে বসলেন।’’ [২]ব্রাহ্মসমাজ বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে যে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিল, তা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সামাজিক আন্দোলনে প্রগতিশীল অবস্থানের সঙ্গেই যুক্ত হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থপ্রকাশ। কোচবিহারের রাজদরবারের সাহিত্য সাধনার ধারাকে মূলত দুটি পর্বে বিভক্ত করেছেন শচীন্দ্র নাথ রায়।[৩]ষোড়শ শতক থেকে উনিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত পাই--সংস্কৃত মহাকাব্য, পুরাণের অনুবাদ, আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতে বিভিন্ন আখ্যানকাব্য। এবং এইসময় রাজ্যের বাইরে লেখা সাহিত্য সংরক্ষণের প্রয়াস পরিলক্ষিত হতে থাকে। আর উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ শতকের প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত মৌলিক রচনা রূপ লাভ করতে থাকে। বিভিন্ন আখ্যানকাব্য, পাঁচালি, ব্রতকথা, গল্প-কবিতা-গদ্য-উপন্যাসের কথা পাই আমরা। এবারে রাজন্যশাসিত কোচবিহারে উনিশ শতকের বাংলা বই নিয়ে আলোচনায় আসতে পারি। বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় একাধিক বই এসময় প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা আমাদের আলোচনা প্রধানত উনিশ শতকের বাংলা বই নিয়েই সীমাবদ্ধ রেখেছি। উনিশ শতকে লেখা হয়েছে কিন্তু মুদ্রণসৌভাগ্য লাভ করেনি এমন বইকে সচরাচর আলোচনায় রাখা হয়নি। আবার এই সময়ে প্রকাশিত কোনো বই আগের শতাব্দীতে লেখা হলেও তা আলোচিত হয়েছে। মহারাজাদের ধর্মবিশ্বাসের ভিন্নতা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিমুখের সঞ্চার করেছিল--এই বিষয়টিও মনে রাখবার মত।

    উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়পর্ব থেকে কোচবিহারের আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন বই লেখা হতে থাকে। মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ ইতিহাস লেখার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। তাঁর উৎসাহে মুন্সী জয়নাথ ঘোষ লেখেন ‘রাজোপাখ্যান।’ ১৮২৩- ১৮৩৩ সালের মধ্যে এই বইটি লেখা শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে। দীর্ঘদিন ‘হাতে-লেখা পুস্তক’ হিসেবে প্রচলিত থাকার পর কোচবিহার স্টেট প্রেস থেকে মুদ্রণসৌভাগ্য লাভ করে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে। এই বইটিকে আমরা আলোচনার অন্তর্ভুক্ত করেছি গ্রন্থসংস্কৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষার খাতিরে। বিশ্বনাথ দাস তাঁর সম্পাদিত ‘সটীক রাজোপাখ্যান’ গ্রন্থের ভূমিকা অংশে এই গ্রন্থটির মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে আঞ্চলিক ইতিহাস-চর্চার সূত্রপাত হয় বলে মনে করেছেন।[৪]শুধু তাই নয় “ … এই গ্রন্থের গদ্যে আধুনিক পূর্ব যুগের বাঙলা গদ্যের আদল পাওয়া যেতে পারে।’’ [৫] ‘রাজাবলী’ অংশে জয়নাথ ঘোষ লিখছেন--“অতএব মহামন্ত্রীর আদেশে আমি শিববংশীয় রাজগণের কাহিনী রচনা করিতে প্রবৃত্ত হইলাম। যেহেতু হীরাদেবীর জন্ম ও মহারাজ বিশ্বসিংহের ইতিবৃত্ত দেবতার কার্য্য এজন্য তৎসম্বন্ধীয় ১২ অধ্যায় ‘দেবখণ্ড’, মহারাজ নরনারায়ণ হইতে মহারাজ ধৈর্য্যেন্দ্র নারায়ণের পুনর্ব্বার রাজত্বকাল পর্য্যন্ত যে ২১ অধ্যায় লিখিত হইল তাহা ‘নরখণ্ড’, এবং শ্রীশ্রী মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুরের রাজত্বকাল যাহা আমার চাক্ষুষ দেখা তাহা ১৮ অধ্যায় লিখিত এবং ‘প্রত্যক্ষখণ্ড’ নামে অভিহিত হইল। এই তিনখণ্ড মোট ৫১ অধ্যায়ে সমাপ্ত করিয়া এই পুস্তকের নাম 'রাজোপাখ্যান’ রাখিলাম।’’ [৬] এরপর পনেরো জন রাজার নাম উল্লেখিত হয়েছে। শেষে বলছেন--“পাঠক ও শ্রোতা মহাশয়দিগের নিকট আমার এই নিবেদন যে আমার গদ্য ও পদ্য রচনা পদ্ধতি বিচার না করিয়া এই প্রস্তাব যে কি প্রকার আশ্চর্য্য ও অপূর্ব্ব তাহাই শ্রবণ করুন আর যদি কেহ এই উপাখ্যান রাজাদেশ অনুসারে শ্লোকচ্ছন্দে অথবা পদবন্ধে কবিতা করিবার কিংবা পুনরায় গদ্যে লিখিবার ইচ্ছা রাখেন তাঁহাদের প্রতি আমার এই নিবেদন যে তাঁহারা যেন আমার নামসহ ভণিতা দেন তাহা হইলে শ্রোতৃবর্গের বিশ্বাসের কারণ হইবে। এক্ষনে আমার আত্মপরিচয় এই আমি বঙ্গজ কায়স্থ কুলোদ্ভব, আমার নাম শ্রী জয়নাথ ঘোষ, ভুপতির দত্ত উপাধি মুন্‌শী, সেজন্য লোকে ‘জয়নাথ মুন্‌শী’ বলে।’’ [৭] উনিশ শতকে লেখা এই টেক্সটের অন্তরালে মধ্যযুগের সাহিত্যভাবনার অনুবর্তন রয়েছে। তা গ্রন্থের বিষয়ের দিক থেকেই হোক কিংবা আত্মপরিচয়ের বিন্যাস।

    ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘মহারাজ বংশাবলী’। মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণের জ্যেষ্ঠা মহিষী মহারানি কামেশ্বরী দেবীর উৎসাহে রিপুঞ্জয় দাস এই গ্রন্থ লেখেন। আরো একজন পণ্ডিত এই গদ্যগ্রন্থের সহলেখক ছিলেন বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। ১৮৫৪ সালে মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণের পত্নী বৃন্দেশ্বরী দেবী লেখেন ‘বেহারোদন্ত’ অর্থাৎ বেহারের ইতিবৃত্ত। ১৮৫৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজঅন্তঃপুর থেকে প্রকাশিত এবং রংপুরের কাকিনীয়াস্থ শম্ভুচন্দ্র যন্ত্রে মুদ্রিত হয়। পরবর্তীকালে কোচবিহার সাহিত্য সভা থেকে ১৩৩০ বঙ্গাব্দে এই বইটি পুনরায় মুদ্রিত হয়। ভূমিকা লেখেন নিরুপমা দেবী। এই ভূমিকা অংশটি প্রকাশিত হয়েছিল নবপর্যায় পরিচারিকা পত্রিকার পাতায়। যেখানে নিরুপমা দেবী বলেছেন, যে সময়ে হিন্দু নারীরা সমাজবিদ্যা শিক্ষালাভে বঞ্চিত হয়ে একরকম নিরক্ষর থাকত, যখন পাঠাভ্যাসে নানারকম বিঘ্ন সৃষ্টি করা হত; সেসময় হিন্দু রাজবংশের এক পুরমহিলা কেমন করে কাব্য রচনায় সমর্থ হলেন--তা এক আশ্চর্যের বিষয়। অবশ্য এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন--“কিন্তু সেই সময়ে যে কোচবিহার রাজপরিবারে একটি সাহিত্যের হাওয়া উঠিয়াছিল তাহার পরিচয় আমরা পাই। এই হাওয়া রাজ-অন্তঃপুরেও প্রবেশ করিয়া ইহাকে সাহিত্যের রসাস্বাদ উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল। ইঁহার শ্বশুর মহাশয় মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ তাৎকালিক সাহিত্যসমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক ছিলেন।… মহারাণী বৃন্দেশ্বরীর স্বামী মহারাজ শিবেন্দ্রনারায়ণ বিরচিত সঙ্গীত পুস্তকও আবিষ্কৃত হইয়াছে।’’[৮] মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণ মারা যাবার সময় থেকে পরবর্তী ১৮ মাসের সময়সীমায় রাজ্যের অবস্থা ঘটনাবলী এই কাব্যে বর্ণিত হয়েছে। গণেশ বন্দনার মাধ্যমে গ্রন্থের সূচনা। ‘গ্রন্থারম্ভ’-এ লিখছেন--“বেহার ঈশ্বরগণ জন্ম বিবরণ/ একমন চিত্তে সবে করুন শ্রবণ।’’ [৯] রাজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের কথাও পাচ্ছি আমরা। স্বামী মারা যাওয়ার পর পুত্রকে ইংরেজি শিক্ষার জন্য কৃষ্ণনগরে পাঠানো হলে পুত্রবিচ্ছেদ-কাতরা মায়ের মন ধরা পড়ে এই কাব্যে। রচনাকালের কালের কথা পাচ্ছি কাব্যের শেষপর্যায়ে-–“অষ্টাদশ শতে কাশী শকের নির্ণয়/ মৃগেন্দ্রের পক্ষ দিনে লিপি সাঙ্গ হয়।’’ [১০] এই আখ্যানকাব্যে যে বিভিন্ন সামাজিক রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠানের কথা পাই তার মধ্য দিয়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের চিত্র পাওয়া যায়। প্রখ্যাত কোচবিহারের আঞ্চলিক ইতিহাসকার স্বপনকুমার রায় এই গ্রন্থটি সম্বন্ধে লিখেছেন--“ইতিহাসগতভাবে কিছু অসঙ্গতি থাকলেও ‘বেহারোদন্ত’ নানাদিক থেকে উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, এটি বাংলা সাহিত্যে প্রথম মহিলাকবি দ্বারা রচিত ইতিহাস। দ্বিতীয়ত, কোন মহিলা দ্বারা রচিত প্রথম মুদ্রিত পুস্তক। তৃতীয়ত, এটি কোচবিহারের প্রথম মুদ্রিত ইতিহাস। শুধু তাই নয়, উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় প্রথম মহিলা শিক্ষিতা কবি হিসাবেও বৃন্দেশ্বরী দেবীকে চিহ্নিত করলে অত্যুক্তি করা হবে না। ‘বেহারোদন্ত’ গ্রন্থে তাঁর ইংরেজী শিক্ষারও পরিচয় রয়েছে। মনে রাখতে হবে, গ্রন্থটি মুদ্রিত আকারে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে।’’ [১১]

    উনিশ শতক জুড়েই বিভিন্ন আঞ্চলিক ইতিহাসের বই প্রকাশিত হচ্ছিল। কোচবিহার হিতৈষিণী সভা রাজ-অনুদানে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেছিল সংকলন ‘কোচবিহার হিতৈষিণী সভার বক্তৃতামালা’। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যার্থীদের প্রয়োজনে ‘কোচবিহারের বিবরণ’ নামে প্রথম পাঠ্য-পুস্তক লেখেন ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কোচবিহার রাজ্যে শিক্ষা বিভাগে Sub-Deputy Superintendent হিসেবে কিছুদিনের জন্য কর্মরত ছিলেন। এরপর ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘কোচবিহারের ইতিহাস’। এখন যে বইটি আমরা পাই সেটি কোচবিহার স্টেট প্রেস থেকে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত দ্বিতীয় সংস্করণ। দ্বিতীয়বারের বিজ্ঞাপনে লেখক বলছেন--“… প্রথম সংস্করণ প্রচারিত হইলে, এ দেশীয় অনেক লোক, কোনও কোনও অংশ প্রচারিত হওয়া সম্বন্ধে আপত্তি উত্থাপন করেন। বিশেষত যে অংশে, আচার, ব্যবহার, রীতি এবং অধিবাসীদিগের বিবরণ বিবৃত হইয়াছিল, তাহাতেই অনেককে আপত্তি উত্থাপন করিতে দেখা গিয়াছে। কিন্তু আমরা নির্বন্ধাতিশয় সহকারে বলিতে পারি যে, কোনও ব্যক্তি, কি সম্প্রদায় বিশেষকে অপমানিত করা দূরে থাকুক, তাহাদের অসন্তুষ্টি উৎপাদন করাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। যে সকল বিষয় বর্ণিত হইয়াছিল, তাহা সমস্তই ইংরেজির অনুবাদ। শ্রীযুক্ত কুমার গোবিন্দনারায়ণ সাহেবের অভিপ্রায় মত, আমরা এবারে সেই সকল অংশ একেবারে পরিত্যাগ করিয়াছি।’’ [১২] এই বিষয়টিকে আমরা কীভাবে দেখতে পারি? প্রথম সংস্করণের বইটিকে ইতিহাসে অবদমিত করে রাখার মূলে যে সাংস্কৃতিক রাজনীতি কাজ করেছে, তা বলা বাহুল্য। এবং স্বাধীনতা উত্তরপর্বেও তা অব্যাহত থেকেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণের পাঠভেদ নিয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করা সম্ভব নয় কেননা অখণ্ড প্রথম সংস্করণ এখন আর পাওয়া যায় না সম্ভবত। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ গ্রন্থাগারে যে একটিমাত্র কপি আছে, সেটি অক্ষত নেই। কেন নেই? কালের গর্ভে নিমজ্জিত সে উত্তর।

    ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত আরো দুটি বই-এর তথ্য পাচ্ছি আমরা--“কোচবিহার রাজ-সরকার কর্ত্তৃক অনুবাদিত ও সংকলিত—আইনের ন্যায় বলবৎপত্র এবং রোববারী সমূহ। কুচবিহার, কুচবিহার যন্ত্রে মুদ্রিত, ১২৯০, ১৮৮৩ ইং (প্রাচীন কাগজপত্র থেকে সংকলিত) VIII+ ১৯৩ পৃষ্ঠা।

    যাদবচন্দ্র চক্রবর্তী - কোচবিহারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (বিবরণ)। কোচবিহার ষ্টেট প্রেস, ১৮৮৩, ৭৯ পৃষ্ঠা। গ্রন্থটি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।’’ [১৩] এই যাদবচন্দ্র চক্রবর্তীর বিশেষ উদ্যোগেই মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতি দেবীর বিবাহ সম্ভবপর হয়েছিল। এবার আসা যাক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ প্রসঙ্গে।

    ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গীতসূত্রসার’ একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ বলে বিবেচিত হয়। তিনিই প্রথম সংগীত সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কোচবিহার রাজ্যে তিনি চাকরি গ্রহণ করেন। এবং মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সহায়তায় ‘গীতসূত্র সার’-এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৫-তে। প্রথম বারের বিজ্ঞাপনে লেখক বলেছিলেন শুরুতেই–-“কণ্ঠ গীতচর্চ্চার বিস্তৃতি ও উৎকর্ষ বিধানার্থ এই পুস্তক প্রণীত ও প্রকাশিত হইল।… সঙ্গীতের বিশুদ্ধ উপপত্তি (theory) জ্ঞানাভাবে শিক্ষা করা, কিম্বা শিক্ষা দেওয়া, কিছুই সহজ হয় না; সেই জন্য সুর, মাত্রা, তাল, প্রভৃতি সঙ্গীতের ব্যবহার্য্য তাবৎ বিষয়ের প্রস্তুত উপপত্তি ইহাতে অতি সরলভাবে ব্যাখ্যাত হইয়াছে।’’ [১৪] নীহারবিন্দু চৌধুরী লিখেছেন--“পণ্ডিত ঁবিষ্ণুনারায়ণ ভাতখণ্ডেজী শুধু এই বইটি পড়বার জন্য বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। গীতসূত্র সারের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও চমৎকারিত্ব দেখে ভাতখণ্ডেজী গ্রন্থখানিকে লক্ষনৌ সঙ্গীত কলেজের পাঠ্যতালিকাভুক্ত করেন।’’ [১৫] বিবিধ বিষয় নিয়ে বই প্রকাশিত হচ্ছিল। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে রাজকীয় মুদ্রণালয় স্থাপনের পর দি কুচবিহার স্টেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হতে থাকে বিভিন্ন সরকারি তথ্যসমন্বিত কাগজপত্র। ১৯৮৭-৮৮ খ্রিস্টাব্দের ‘The Annual Administration Report of the Cooch Behar State’ থেকে বাবু প্রিয়নাথ ঘোষের লেখা ‘Criminal Procedure Code’, বাবু যোগেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা একটি মাসিক পত্রিকা এবং বাবু রাজনাথ গুহের জুবিলি উৎসব উপলক্ষ্যে একটি কবিতা মুদ্রিত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে রামচন্দ্র সিংহের লেখা ‘জীবনসন্দর্ভ’ নামক একটি প্রবন্ধ গ্রন্থের কথা পাচ্ছি আমরা। যেমন পাচ্ছি সাফাতুল্লা সরকারের কাব্যগ্রন্থ ‘বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলী’-র উল্লেখ। ১৮৯৩ সাল নাগাদ কুমার রঙ্গিলানারায়ণের লেখা উপন্যাস ‘আমিনা’ এই সময় প্রকাশিত হয়েছিল বলে ধারণা করেছেন এক সমালোচক।[১৬] কোচবিহার রাজ্যে কর্মরত ইংরেজ ও ভারতীয় কর্মচারীদের সারস্বত উদ্যোগ সর্বোপরি মহারাজাদের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে উন্নত মানের প্রকাশনা ও গ্রন্থপ্রকাশ সম্ভব হয়ে উঠেছিল, সন্দেহ নেই।

    ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় রাধাকৃষ্ণ দাস বৈরাগীর ‘গোসানী-মঙ্গল’। সম্পাদক ও প্রকাশক ব্রজচন্দ্র মজুমদার ছিলেন গোসানীমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ‘বিজ্ঞাপন’ অংশে তিনি লিখছেন--“ 'গোসানীমঙ্গল' কোচবিহারের আদি কাব্য। কবি রাধাকৃষ্ণ দাস বৈরাগী ইহার প্রণেতা। ইহাতে রাজা কান্তেশ্বরের জীবনবৃত্তান্ত লিখিত আছে। যাঁহারা কান্তেশ্বরের প্রাচীন কীর্ত্তিকলাপ দর্শন বাসনায় এখানে (গোসানীমারিতে) আগমন করিয়া থাকেন, তাঁহারা প্রায়ই উক্ত কাব্য দেখিবার জন্য বাসনা করিয়া থাকেন, কিন্তু হস্তলিখিত বই নিতান্ত দুষ্প্রাপ্য ও বিরল বিধায় প্রায় সকলকেই বিফলমনোরথ হইতে হয়...’’ [১৭] গোসানী মঙ্গল কাব্যের একাধিক পুঁথি পাওয়া গেছে। রাধাকৃষ্ণ দাস বৈরাগী ‘মঙ্গলাচরণ’ অংশে মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণের কথা উল্লেখ করেছেন। ফলে ১৭৮৩ - ১৮৩৯-এর মধ্যে পুঁথিটি লিখিত হয়েছে বলে অনুমান করাই যায়। কামতাপুরে খেন বংশের রাজত্ব, হোসেন শাহের আক্রমণ এগুলি ঐতিহাসিক ঘটনা। নীলধ্বজ, চক্রধ্বজ ও নীলাম্বরের এই তিনজন রাজার নাম পাই আমরা। সুবোধরঞ্জন রায় মনে করেছেন--“‘গোসানীমঙ্গলে’র কবি রাধাকৃষ্ণ দাস বৈরাগী ঐ তিনজন রাজার তিনটি কিম্বদন্তীকে একত্র করে আরোপ করেছেন কাব্যের নায়ক কান্তেশ্বরের উপর এবং তাঁকে কেন্দ্র করেই রাজ্যপ্রতিষ্ঠা ও রাজ্যলোপের ঘটনা বিবৃত করেছেন।... ‘কান্তেশ্বর’ নামটিও যেন তিন রাজাকে জড়িয়ে প্রযুক্ত হয়েছে, যেহেতু তিনের কাহিনী বর্তেছে একের উপর।’’ [১৮] এই কাব্যটিকে পরিপূর্ণ মঙ্গলকাব্য না বলে ব্রতকথাজাতীয় আখ্যানকাব্য বলে মনে হয়েছে তাঁর। উনিশ শতকের শেষে এই মঙ্গলকাব্যের প্রকাশ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এই সূত্রে আরো দুটি বই-এর উল্লেখ করতেই হয়--মানমোহন রক্ষিতের ‘গোসানীমারীর বিবরণ’ (১৮৮৬) ও ‘নব গোসানীমঙ্গল বা কান্তেশ্বর চরিত’ (১৮৯৪)।

    ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘হারমোনিয়াম শিক্ষা’ বইটি প্রকাশিত হয় রাজমুদ্রণালয় থেকেই। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে সুনীতি দেবীর বিয়েকে কেন্দ্র করে কিছু গ্রন্থ-পুস্তিকা প্রকাশ পেয়েছিল। উনিশ শতকের আলোচনায় এই বইগুলিও বিশেষ গুরুত্ব রাখে। কেবল দুটি বই-এর উল্লেখ করছি আমরা--‘‘উনবিংশ শতাব্দীর প্যাগম্বর/ ঢাকা। ১৮৮০/ কুচবিহার বিবাহ আন্দোলনের সময় কেশবচন্দ্রের বিরোধিরা এটি প্রকাশ করেন।’’ [১৯], “কপালে ছিল বিয়ে কাঁদলে হবে কি? (নাটিকা)/ ৬ মে ১৮৭৮। পৃ. ২৮। / ইহা “বিষ্ণুশর্মা’’ রচিত শিবনাথ শাস্ত্রী ‘আত্মচরিতে’(পৃ. ২৪৬) লিখিয়াছেন: “ বজ্রযোগিনী- নিবাসী আনন্দচন্দ্র মিত্র সুকবি বলিয়া সাহিত্য জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছেন: তিনি এই সময়ে কুচবিহার- বিবাহের প্রতিবাদ করিয়া একখানি ক্ষুদ্র নাটিকা রচনা করিলেন।’’ [২০] পরিশেষে বলা যায়, উনিশ শতক জুড়ে সমগ্র বাংলাদেশে যে সমস্ত বই প্রকাশিত হয়েছিল; রাজন্যশাসিত কোচবিহারের ক্ষেত্রে তা পৃথক মাত্রা পেয়েছিল। বাংলা ভাষায় বইপ্রকাশের ঐতিহ্যমণ্ডিত ধারা অব্যাহত থেকেছে পরবর্তী সময়পর্বেও। তবে সে আলাদা প্রসঙ্গ। স্বাভাবিকভাবেই পৃথক তার প্রস্তাবনা।


    তথ্যনির্দেশঃ-

    [১] প্রাচীন কোচবিহারের ভাষা এবং সংস্কৃতি, অমিয়ভূষণ মজুমদার, প্রবন্ধ সংগ্রহ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- অক্টোবর ২০১৭, পৃঃ ৮৮।

    [২] মহারাণী সুনীতি দেবী ও নববিধান ও সমকাল, স্বপনকুমার রায়, কোচবিহার বৃত্তান্ত, বইওয়ালা, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- দুর্গাপূজা ২০১৭, পৃঃ- ২২০।

    [৩] সাহিত্য সাধনায় রাজন্যশাসিত কোচবিহার, ডঃ শচীন্দ্র নাথ রায়, এন.এল. পাবলিশার্স, শিলিগুড়ি প্রথম প্রকাশ-অক্টোবর ১৯৯৯, শিলিগুড়ি, পৃঃ ৫৬।

    [৪] সটীক রাজোপাখ্যান, বিশ্বনাথ দাস (সম্পাদনা), দি সী বুক এজেন্সী, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি ২০১৪, পৃঃ ১৮।

    [৫] পূর্বোক্ত, পৃঃ ২৯।

    [৬] পূর্বোক্ত, পৃঃ ৪৪।

    [৭] পূর্বোক্ত, পৃঃ ৪৫।

    [৮] ভূমিকা, পরিচারিকা নবপর্য্যায়, নিরুপমা দেবী (সম্পা.), ৪র্থ বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা, বৈশাখ ১৩২৭, পৃঃ ৩২২।

    [৯] বেহারোদন্ত, বৃন্দেশ্বরী দেবী, কোচবিহার রাজবাড়ির অন্দরমহল, অরুণকুমার শীলশর্মা, অণিমা প্রকাশনী, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- ডিসেম্বর ২০১১, পৃঃ ২৯।

    [১০] পূর্বোক্ত, পৃঃ ৭৭।

    [১১] কোচবিহার রাজদরবারের সাহিত্যচর্চা, স্বপনকুমার রায়, বুকস ওয়ে, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ- জানুয়ারি ২০১১, পৃঃ ১৪।

    [১২] দ্বিতীয়বারের বিজ্ঞাপন, কোচবিহারের ইতিহাস, ভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় , দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, প্রথম দে’জ সংস্করণ- ডিসেম্বর ২০০৬, পৃঃ ১৬।

    [১৩] আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চায় কোচবিহার, বিশ্বনাথ দাস, নাথ পাবলিশিং, প্রথম প্রকাশ- জানুয়ারি ১৯৯৮, পৃঃ ৬৭।

    [১৪]প্রথম বারের বিজ্ঞাপন, কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতসূত্রসার (প্রথম ভাগ), এ. মুখার্জী অ্যাণ্ড কোম্পানী প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা, চতুর্থ সংস্করণ, পৌষ ১৩৮২, পৃঃ VI।

    [১৫] ভূমিকা, সংগীত- বিপ্লবী কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়, নীহারবিন্দু চৌধুরী, ঐ, পৃঃ xii।

    [১৬] কোচবিহার রাজদরবারের সাহিত্যচর্চা, স্বপনকুমার রায়, পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৫৬।

    [১৭] বিজ্ঞাপন, ব্রজচন্দ্র মজুমদার, গোসানীমঙ্গল, ডঃ নৃপেন্দ্রনাথ পাল (সম্পাদনা) অরুণা প্রকাশনী, কলকাতা, পরিবর্ধিত সংস্করণ অগ্রহায়ণ ১৪১৯, পৃঃ ৬৮।

    [১৮] গ্রন্থ পরিচিতি, সুবোধরঞ্জন রায়, ঐ, পৃঃ ৪৫।

    [১৯] উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলন, মুনতাসীর মামুন, অনন্যা, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ- ফেব্রুয়ারি ২০১৭, পৃঃ ১৯০।

    [২০] পূর্বোক্ত, পৃঃ ১৯৪।





    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ এখান থেকে
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)