• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭০ | মার্চ ২০১৮ | ছোটদের পরবাস | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • উষাগ্রামের উত্তেজনা : রঞ্জাবতী চট্টোপাধ্যায়


    ই ইঁট, কাঠ, কংক্রিট, শ্যাওলা-ময়লার শহরে আমরা কীভাবে বেঁচে আছি তা এক বড়ো প্রশ্ন। আসলে এটা শুধু বেঁচে থাকার জন্য বাঁচা। জীবন যাপন করা একে বলা যায় না। আমরা যে এই দমবন্ধ পরিবেশের মধ্যে বড়ো হবো তা আর মানতে পারছিল না দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল। তাই ক্লাস সিক্সের কিছু ছাত্রছাত্রীকে নতুনত্বের স্বাদ দিতে আর শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের উপস্থিতি অনুভব করাতে নদীয়া জেলার উষাগ্রাম বেড়াতে যাওয়ার উদ্যোগ নেয় স্কুল। সেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আমি এক মূর্তিমান (নাকি মূর্তিমতী!)

    আস্তে আস্তে যাওয়ার দিনটা এগিয়ে এল। আরে, চারটে দিন তো। বিদেশে পড়তে থোড়াই যাচ্ছি! কিন্তু মা-বাবাদের তা বোঝানোই দায়। বাস ছাড়তে, আমরা পাড়ি দিলাম আমাদের বহুকালের স্বপ্নের রাজ্যে। ভেবেছিলাম রাস্তায় গল্পের বই পড়ব কিন্তু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তা আর হল না। অতএব, আমরা গল্প করে, হট্‌ ডগ্‌ খেয়ে খাতায় ‘নোট’স নিতে নিতে পৌঁছে গেলাম এক্কেবারে সবুজের শোভায় উজ্জ্বল ছোট একটা জায়গা – উষাগ্রামে। রবীন্দ্রনাথের ‘এলেম নতুন দেশে’ গানটা শেখা এতদিনে সার্থক হল। দুটো ছবির মতো ডরমিটরি আমাদের চারদিনের বাসস্থান হল। দুপুরবেলা খাওয়ার পরে আমরা দুটো মন্দির ঘুরে দেখলাম। তারপর গেলাম আশ্রমে। তখন সন্ধেবেলা। ভেতরে ঢুকতেই সারা দিনের ক্লান্তি ধুয়ে গেল। প্রথম দিন এতটাই।

    পরদিন সকালে খেলার মাঠ জুড়ে এক ঘন্টা প্রজাপতিদের মত ঘোরাঘুরি করার পর গেলাম মধু-চাষ আর নির্ভরযোগ্য জীবিকা দেখতে। সঙ্গী হল উৎসাহ। এর আগে মা-বাবার সঙ্গে বহরমপুরে দাদুর বাড়ি গিয়ে টোটোয় উঠেছিলাম। এবার উঠলাম বন্ধুদের সঙ্গে। মধু-চাষ দেখতে গিয়ে আমি ভয় পেয়েও বীরত্ব দেখালাম। একটা মৌমাছি আমার কানে আর একটা মাকড়সা আমার চুলে ঢুকে গিয়েছিল। দুটোকেই টেনে বের করলাম তাও হাত দিয়ে। সবাই আমার বীরত্ব দেখে অবাক হয়ে গেল। আমি মনে মনে হাসলাম। তারপর নির্ভরযোগ্য জীবিকা দেখতে বেশ ভালোই লাগল। আমাদের সবাইকে, যার বাড়িতে নির্ভরযোগ্য জীবিকা দেখতে গেছিলাম সেই উৎপল কাকুর, গাছের কমলালেবু খাওয়ানো হল। এরপর নির্ভরযোগ্য জীবিকা ভালো না-বেসে থাকা যায়?

    এই একই দিনে আমরা কবি কৃত্তিবাস ওঝার বাড়ি গিয়ে ওনার ব্যাপারে অনেক কিছু জানলাম। তাছাড়াও আমরা গেলাম উষাগ্রাম বিদ্যানিকেতন শিশু বিহারে। ওখানকার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগল। আমরা তারপর গেলাম পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে। এখানে আমরা অনেক কিছু জানলাম। আমাদের তো সবকিছুই কিনতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু আমরা বড়োদের মতো কিছু জিনিস কিনেও টাকা বাঁচিয়ে রাখলাম।

    পরদিন সকালে খেলার শেষে আমরা চলে গেলাম মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরে। সেখানে সারাদিন মজা করলাম। নাচলামও। তাছাড়া গোটা মন্দির ঘুরে দেখলাম। প্রসাদটা ছিল অসাধারণ। অত ভালো সরবত আগে খাইনি। তাছাড়া ভাতও ছিল। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সম্পর্কে জানলামও অনেক।

    পরের দিন আমরা গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জীবিকা যতদূর সম্ভব জানলাম। তারপর হঠাৎ বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল। খেয়াল হল চারদিন আমরা ঘরছাড়া। আরে, এরই মধ্যে ফেরার সময় হয়ে এল। আমরা অবাক। ফিরে আসার সময় আমাদের দমদমের একটা পাঞ্জাবী ধাবায় আলুর পরটা, তড়কা আর থামস আপ খাওয়ানো হল। তা যতই খাওয়াক, ক্ষণস্থায়ী বাসস্থান ফেলে চলে আসতে আমাদের সবার দুঃখ হচ্ছিল বইকি!

    ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)