• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭০ | মার্চ ২০১৮ | গল্প
    Share
  • কাকামণি : সাম্য দত্ত


    “সাত পুরোনো কাঠের পাল্লাটা যে ঘুণপোকাদের লঙ্গরখানা, সেকথা তো তোমাদের জানাই ছিল বাপু! কুরকুর করে ভেতরের কাঠ খেয়ে খেয়ে পাল্লাটার আর কিছুই বাকি রাখেনি। যত‌ই কষে এঁটে দাও না কেন, আদত কাঠামোটাই যে কর্পোরেশনের মুদ্দফরাসের মতো ক্ষয়াটে--ওই রোগা শরীরটার ওপর তোমরা সকলে মিলে হুমড়ি খেয়ে পড়লে কোন আক্কেলে! এখন গেল তো ভেঙে! এবার ঠ্যালা সামলাও--ওই ভাঙা পাল্লা দেখে জগা রাক্ষস যখন তুলকালাম জুড়বে, তখন কীভাবে পিঠ বাঁচাবে, সেই তৈয়ারিই বরং করোগে! ওই বোধহয় রাক্ষস এসে পড়ল, ফটফট জুতোর আওয়াজ পাচ্ছি যে!”

    অম্লানবদনে কথাকটা আউড়ে দিয়েই গোকুল নির্বিকার মুখ করে তার বেঞ্চিতে ফিরে গেল। অথচ এই গোকুল‌ই তখন ভারী জাঁক করে বলেছিল, “দেখতে চাও তো দেখবে, ঠেকাচ্ছে কে?”

    শ্রীমান গোকুলচন্দ্র ঘোষ এই ক্লাসে নতুন। আগে নাকি কোন পাড়াগাঁয়ের ইস্কুলে পড়ত, মাঝে টাইফয়েডের জন্য দীর্ঘদিন লেখাপড়া বন্ধ থাকার পর সবে বছরখানেক হল কলকাতায় পড়তে এসেছে। বয়সের বিচারে সে বাকিদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে, ইতিমধ্যেই নাকের নীচে একটা আবছা গোঁফের আভাস‌ও দেখা দিয়েছে--আর গোকুলচন্দর তার ফায়দাও তোলে চেটেপুটে। গোড়া থেকেই তার হাবভাব‌ মাতব্বরের মতো, ক্লাসের দুগ্ধপোষ্য নাবালকদের সে যেন একটু খাটো নজরেই দেখে। পুরোনো ছাত্ররাও তার ওপর বড় একটা সন্তুষ্ট নয়, তাদের দলপতি হারাণ তাই একটু সন্দেহের সুরে বলেছিল, “খুব যে বারফট্টাই করছ! জগা রাক্ষস নিজের হাতে জানালা এঁটে দিয়ে গেছে, এখন খুলতে গেলে তাকে চটানো হবে না?”

    —“ওমা! বাইরে দেখবে তো জানালা খোলার দরকার কী?” গোকুল যেন বাচ্চা ছেলেগুলোর নির্বুদ্ধিতা দেখে আমোদ পেল, “ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়—এই দেখো!”

    তা, ভেলকি সে দেখাল বটে! পোকায় কাটা জানালাটায় একটা ছোট্ট গর্ত ছিল, দেখাত ঠিক ফোকলা বুড়োর মতো। গোকুল তার ট্যাঁক থেকে একখানা উড পেন্সিল বের করে সেই গর্তটাকেই খোঁচাতে শুরু করলে। বারকতক খোঁচাখুঁচি করার পর একটু চাপ দিতেই ঘুণধরা কাঠ ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে পাল্লাটা দিব্যি হাঁ করে দাঁড়াল। হ্যাঁ, এখন বেশ বড় হয়েছে বটে, চোখ রাখলে রাস্তার ওপারের দেওয়ালটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে—ছেলেদের কৌতূহল আর বাধ মানল না, মুহূর্তের মধ্যে সেই পুবমুখো জানালাটা ভিড়ে ভিড়াক্কার! কে নেই সেই ভিড়ে—একেবারে সামনের সারিতে হারাণ আর সীতাপতির মতো পাণ্ডাগোছের ছেলেরা, তাদের ঘাড়ের ওপর ভর দিয়ে বিশু, মতিন, গোবিন্দ আর নারায়ণ, আর সবশেষে শ্যামাপদ সমেত জনা বিশেক ভীতুর দল।

    ছেলেদের উত্তেজনার আঁচের ওপর বন্ধ জানালাটা যেন এতক্ষণ দমচাপা হয়ে ছিল, এবার ওই পাঁচ আঙুল ফুটোর ম‌ওকা পেতেই ভসভস করে বেরিয়ে পড়ল স্টিম ইঞ্জিনের ধোঁয়ার মতো। কিন্তু একটা ঘুণধরা কাঠের পাল্লা আর কত‌ই বা স‌ইবে? উৎসাহের আতিশয্যে এই এতগুলো ছেলে তার ওপর হামলে পড়তেই কেলেঙ্কারি—প্রথমে মড়মড়, মুড়মুড় শব্দে একটু গোঙানি, তারপর একটা অন্তিম আর্তনাদ তুলে একেবারে দেহরক্ষা—মচাৎ! ব্যস! অত্যুৎসাহী ছেলেদের দলটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একেবারে স্পিকটি নট!

    হতভম্ব ভাবটা কেটেছে কি কাটেনি, প্রথমে চৌকাঠের কাছে জুতোর মসমস শব্দ, আর তারপরেই হাতের বেতটা নাচাতে নাচাতে ক্লাসঘরে ঢুকলেন হেডস্যার জগৎবল্লভ রায়—ইস্কুলের ছেলেরা যাঁর নাম রেখেছে জগা রাক্ষস।

    তারপর? তারপর আর কী? ঘড়ি ধরে কুড়ি মিনিট কেবল ঠাসঠাস থাপ্পড়, ঠকঠক গাঁট্টা আর লিকলিকে বেতের সপাং সপাং আছড়ানি। প্রলয়কাণ্ড শেষ হবার পর দেখা গেল, বন্ধুরা সব কান ধরে বেঞ্চির ওপর দাঁড়িয়ে, আর সেই দণ্ডিতদের ভিড়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে একলা মতিন। তার চোখ তখন খাতার পাতায় ট্রান্সলেশনে নিবদ্ধ—-“প্রজাপালক মহারাজ পঞ্চম জর্জের উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ বর্ষিত হ‌উক—মে গড ব্লেস...”


    'রক্তে আমার লেগেছে আজ সর্বনাশের নেশা।'

    ইস্কুলের গেট পেরোলেই লাল মোরামের রাস্তা, আর রাস্তার উল্টোদিকে আলিসাহেবের পেল্লায় বাগানবাড়ি। ছেলেদের সেদিকে ঘেঁষা বারণ—বাড়িটার দু'মানুষ উঁচু পাঁচিলের কটমটে চোখ, তার ওপর মাস্টারমশাইদের রাগী-রাগী মাথা দোলানোর কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এতদিন ধরে দেমাকি দূরত্ব বজায় রেখে চলা সেই পাঁচিলটার গায়েই আজ কারা যেন উপর্যুপরি কতগুলো পোস্টার সেঁটে দিয়ে গেছে—সাদা দেওয়ালের ওপর দগদগে লাল রঙের পোস্টারগুলো জেগে আছে তাজা ক্ষতের মত। প্রমাণ সাইজের দেওয়াল ঘড়ির মাপের একেকটা কাগজ—তা'তে না আছে কোন‌ও সার্কাসের নাম-ঠিকানা, না আছে বায়োস্কোপের বিজ্ঞাপন। সম্বল বলতে আঁকিবুকিবিহীন গুটিকতক অক্ষরমাত্র, কিন্তু কী সাংঘাতিক তাদের আকর্ষণী শক্তি! আগুনরঙা শব্দগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে দর্শককে—অনেকটা সেই ছেলেবেলায় বহুরূপী দেখতে যাওয়ার মত। মনে হাজারটা ভয়—কী জানি বাবা, যদি ছেলেধরা হয়? যদি ঝোলায় পুরে নিয়ে পালায়? কিন্তু তাও একটিবার চোখের দেখা দেখতে না পেলে মন মানে ক‌ই?

    নেহাৎ ইস্কুলের পরীক্ষায় তার ফল ফি বছর‌ই বেশ ঝকঝকে গোছের হয়, তাই হয়তো এযাত্রায় শাস্তির খাঁড়াটা এড়িয়ে যেতে পারল মতিন। কিন্তু যে জিনিসটাকে ঘিরে আজ সকাল থেকে এত গুজ‌গুজ-ফিসফাস, একবার চাক্ষুষ দেখার জন্য ছেলেদের মধ্যে এত হুড়োহুড়ি—সকলের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু সেই জিনিসটা একঝলক দেখে চক্ষু সার্থক করার ইচ্ছা কি তার‌ও হয়নি? হয়েছিল ব‌ইকি! আর হয়েছিল বলেই না পিঠের ওপর বিশ্বেশ্বরের বিশাল বপুর ওজন সামলে‌, ক্রমাগত কানাই আর গোবিন্দর কনুইয়ের গুঁতো খেয়েও অত কষ্ট করে উঁকি দেওয়া। কিন্তু ওই ধকল‌ই সার, এক পলকের সেই দেখায় আশ মেটেনি মোটেই। তাই ইস্কুল ছুটির পর বাড়িমুখো ছেলেদের ভিড়টা হৈহৈ করে র‌ওনা দিতেই গুটিগুটি বাগানবাড়ির পথ ধরেছে মতিন। ভাগ্যক্রমে একবার জগা রাক্ষসের হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেছে, কিন্তু এবার হাতেনাতে ধরতে পারলে যে রাক্ষস মনের সুখে মতিনের তুলো ধুনে দেবে—সেই ভয়টা মনের মধ্যে একটু খচখচ করছে বটে, কিন্তু এমন টান এড়ানোও তো শক্ত!

    'রক্তে' কথাটার 'র' যেখানে ফুটকি কেটে শেষ হবার কথা, সেখান থেকে খানিকটা অতিরিক্ত কালি গড়িয়ে গেছে কাগজের শেষ সীমানা অবধি। অসতর্কতা? বোধহয় না। একটু খুঁটিয়ে দেখলে মনে হয়, কালির এহেন অপচয় যেন ইচ্ছাকৃত—এই খুনে লাল রঙের কালি খানিক বাড়তি ঢেলে দিয়ে লেখক যেন কাঁড়ি কাঁড়ি স্পর্ধার বারুদ ঠেসে দিয়েছে ওই কটা শব্দের ভেতর। যেন বুক ঠুকে ঘোষণা করছে—-“এই দেখো, আমি রক্ত ঝরাতেই এসেছি। চোখ রাঙাচ্ছ? কুছ পরোয়া নেহি! থোড়াই ডরাই তোমাদের!”

    নিষেধের পাহারাদারি যেখানে যত মজবুত, মনটাও যেন বারেবারে সেইখানেই গিয়ে পড়তে চায়। তা, টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বুলবুলভাজা খেলে বা স্যারেদের লুকিয়ে ইস্কুলের পুকুরে ব্যাঙবাজি করলেও ওরকম গা শিরশিরে আনন্দের অনুভূতি মেলে বটে, কিন্তু এটা সেরকম মামুলি ব্যাপার নয়। এই পোস্টারগুলোর দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকাই দুষ্কর, দেখতে দেখতে বুকের মধ্যে রক্ত যেন চলকে চলকে ওঠে। দুর্গাপুজোর দিনে কলকাতা শহরের সব ঢাকিরা একজায়গায় জড়ো হয়ে দমাদ্দম রবে তাদের ঢাক পিটতে শুরু করলে যেমন ভয়াবহ কাণ্ড হবে, মতিনের সোয়া এগারো বছর বয়সী হৃৎপিণ্ডটা গলার কাছে লাফিয়ে উঠে এখন তেমন‌ই কান ফাটানো শব্দে ধুকপুক করছে।

    অবশ্য জানালার ফোকর দিয়ে একঝলক দেখেই কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। আগুনের মতো গরম কী যেন একটা ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরময়, ফুলে ফুলে উঠছে চামড়ার নীচে চুমসে থাকা শিরাগুলো। বিশুর ওজনটা পিঠের ওপর এসে পড়ায় বরাবর নুয়ে ছিল মতিন, লেখাটার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন নিজের অজান্তেই পিঠ টানটান করে দাঁড়িয়েছে—আর বেসামাল বিশু বেকায়দায় নারায়ণের ঘাড়ে গিয়ে পড়ায় নারা'ণ বেচারি কাতরে উঠেছে 'ওরে দাদারে' বলে।

    কে? কেন? কখন?—ঘিলু তালগোল পাকিয়ে দেওয়া এমন হাজারটা প্রশ্নের জ্বালায় মতিন বোধকরি একটু বেশিই তন্ময় হয়ে পড়েছিল, কাঁধের ওপর একটা থাপ্পড় আছড়ে পড়ায় তাই একেবারে লাফ দিয়ে উঠতে হল। চমকে ঘুরে তাকাতেই দেখে ব্যাটাচ্ছেলে গোকুল—মতিনকে ভড়কে দিয়ে পাজিটার সে কী কান এঁটো করা হাসি!

    —“তবে রে!” মতিন খাপ্পা হয়ে উঠতে যাচ্ছিল, গোকুল দু'হাত তুলে তাকে নিরস্ত করলে, “আরে রোসো রোসো! তুমি কি আমায় জগা ঠাউরেছিলে নাকি? ওরে বাপু, রাক্ষস তোমার পেছনে এসে দাঁড়ালে মাথায় গাঁট্টা পড়ত, কাঁধে টোকা নয়। তা, লুকিয়ে লুকিয়ে লেখাটা দেখতে আসা হয়েছিল বুঝি?”

    মতিন কোন‌ও উত্তর না দিয়ে ঘাড় গোঁজ করে দাঁড়িয়ে র‌ইল। বুকের ধড়ফড়ানি এখন‌ও কমেনি, তার ওপর সাত-পাঁচ না ভেবে গোকুলের মত বিচ্ছুর কাছে সত্যিটা কবুল করাও বিপজ্জনক। গোকুলের অবশ্য কোন‌ও হেলদোল নেই, সে দিব্যি দন্তবিকাশ করে বললে, “আমার বড়মামা বলেন, অধিক কৌতূহল স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ। অবিশ্যি তোমার আর দোষ কী? ছেলেমানুষ! এই একলাইনের পোস্টার দেখেই স্যারেদের‌ই যেরকম আক্কেল গুড়ুম।"

    —মানে?

    —মানে? মানে এই যে ইস্কুল আসার পথে আমাদের স্যারেরাও লেখাটা খেয়াল করেছিলেন। আর যেই না করা, তাঁদের সক্কলের ভুরু সেই যে একযোগে কপালে উঠল, সে আর নামবার নামটি নেই! বিশেষত হেডপণ্ডিতমশায়ের দুর্গতির কথা কী আর বলব! তাঁর টিকিটি তো দেখেছ—অ্যাইসা মোটা! তা, এই দেওয়াল লিখন পড়ার পর থেকেই তো শিখা বাবাজী সটান দাঁড়িয়ে পড়েছেন—যেন খাপ খোলা তলোয়ার! সে কী কাণ্ড, গামলা গামলা জল ঢেলে আর গায়ত্রী জপ করেও তাকে শান্ত করা যায় না।

    —যাঃ! যতসব...

    —তবে আর বলছি কী? এদিকে ওই শিং-এর মতো বেয়াড়া টিকি নিয়ে চলাফেরা করাও দায়—টিকির খোঁচা খেয়ে দু'জন মাস্টারমশাইয়ের ফতুয়া ছিঁড়ল, মৌলবী সাহেব তো পেট ফুটো হতে হতে কোনোক্রমে বাঁচলেন আর অঙ্ক স্যার রাধামাধববাবু যে কানা হয়ে যাননি, সে তাঁর ভাগ্যি বলতে হবে!

    —তারপর?

    —তারপর সকলে মিলে হাতেপায়ে ধরায় পণ্ডিতমশাই তাঁর টিকিটি বিসর্জন দিতে রাজি হলেন বটে, কিন্তু টিকি কাটার জন্য নাপিত ডাকা হবে নাকি মেডিক্যাল কলেজের সাহেব সার্জেন—তাই নিয়েই স্যারেদের মধ্যে জোর বিবাদ বেধে গেল।

    —ফের ইয়ার্কি! দাঁড়াও, তোমায় দেখাচ্ছি মজা—

    কিন্তু গোকুলের হাবভাব দেখে মনে হয় না সে এইমুহূর্তে মজা দেখতে খুব একটা উৎসাহী, চোখ ছোট করে একটিবার পেছনপানে তাকিয়েই বলে উঠল, “এই রে, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধে হয়! ওই দেখো, জগা আসছে। আরে, হাঁ করে তাকিয়ে আছ কী, লুকোও শিগ্গির।”

    তাই তো, জগা রাক্ষস‌ই বটে! আর কী সব্বোনাশ, স্যার যে পায়ে-পায়ে এদিকেই এগিয়ে আসছেন! কিন্তু মতিন বেচারি ঠিকঠাক আঁতকে ওঠবার ম‌ওকাটুকুও পেলে না, তার আগেই গোকলো ব্যাটার এক হ্যাঁচকা টানে তারা দু'জনেই গিয়ে পড়েছে একটা ঝুরি-নামা বটগাছের পেছনে। এখান থেকে রাস্তাটা বেশ পরিষ্কার দেখা যায়, কিন্তু বটের ঝুরির ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে মতিন যা দেখল, তা'তে ভয়ের ভাবটা পাতলা হয়ে গিয়ে তার বদলে পেয়ে বসল বিস্ময়।

    কালো ক্যাম্বিসের ব্যাগটা বুকের কাছে জাপটে ধরে জগৎরামবাবু এদিকেই আসছেন বটে, কিন্তু তাঁর হাঁটার ভঙ্গিতে কেমন একটা সতর্ক চোর-চোর ভাব। এক পা ফেলার আগে ডাইনে-বাঁয়ে দেখেন, তারপর সামনে-পিছে আর উপর-নীচে বারকতক চোখ বুলিয়ে নিশ্চিন্ত হলে তবেই অন্য পাটা ফেলেন। অথচ দুপুরের খাঁ-খাঁ রাস্তায় জনপ্রাণীটি নেই, তাও যে কীসের এত সাবধানতা কে জানে!

    অবশেষে দেড় মিনিটের রাস্তা পাক্কা সাড়ে পাঁচ মিনিট ধরে পার হয়ে জগৎবাবু এসে দাঁড়ালেন দেওয়ালটার সামনে, তারপর আর‌ও বারকতক চারপাশে চোরা চাহনি হেনে আড়চোখে তাকালেন পোস্টারগুলোর দিকে—যেন নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব মাংসের হাঁড়ির ঢাকনা তুলে দেখছে।

    ছেলেবেলায় উইলসন সার্কাসে বাঘের খেলা দেখেছে মতিন। রিং মাস্টার চাবুক আছড়ালে শার্দুলসাহেব যেমন আঁতকে উঠে দু'পা পিছিয়ে যান, লেখাটার দিকে চোখ পড়তে ঠিক তেমন‌ই একটা পিলে চমকানো লাফ দিয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলেন জগৎবাবু। তারপর খানিকক্ষণ হাঁসফাঁস হাঁপানি, তারপর আবার সামনে ঝুঁকে পড়ে লেখাটা পড়ার চেষ্টা এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যাঘ্রঝম্প। মিনিটখানেক ধরে চলল এই কসরত—কখন‌ও দাঁড়িয়ে, কখন‌ও উবু হয়ে বসে, কখন‌ও আবার চশমাটা কপালের ওপর তুলে পোস্টারের লেখাটা ফিরে ফিরে পড়েন, আর প্রতিবার‌ই চমকে চমকে উঠে কব্জি টিপে নাড়ির গতি মাপেন।

    গুঁড়িসুড়ি মেরে দাঁড়াতে গিয়ে দিক ধরে যাবার যো! মতিন সবে গা-ঝাড়া দিয়ে সোজা হতে যাবে, গোকুল তার জামার আস্তিন ধরে টান মারল, “অ্যাই খবরদার, নড়বে না বলছি! এখন একটা মজা করব, চুপটি করে দেখো।” তারপর দু'হাত দিয়ে মুখের সামনে চোঙা বানিয়ে, খসখসে গম্ভীর গলায় চেঁচিয়ে উঠল, “হুঁশিয়ার! পুলিশ আসছে, পুলিইইইশ! জলদি ভাগো।”

    এরপরের ঘটনা স্বচক্ষে দেখলেও বিশ্বাস করা শক্ত। মতিনের ইচ্ছে হচ্ছিল একটিবার চিমটি কেটে দেখে—সত্যিই জেগে আছে তো, নাকি এযাত্রায় নিছক স্বপ্ন দেখেই বেকুব বনতে হচ্ছে। যে হেডস্যারের ভয়ে সারা ইস্কুল থরহরি কম্প, ছাত্র-শিক্ষক সব মহল‌ই যাঁকে যমের মত ডরায়, গোকুলের চেঁচানি কানে যেতে সেই জগৎরাম শর্মাই এবার অদ্ভুত একটা কাণ্ড করে বসলেন। প্রথমে এক পেল্লায় লাফ মেরে বাগানবাড়িটার ফুটপাত থেকে সটান রাস্তায় গিয়ে পড়া, তারপর একহাতে ধুতির কোঁচা সামলে, অন্য হাতে ব্যাগটাকে মাথার ওপর চালান করে দিয়েই হেঁইয়ো ছুট! আর সে কী দৌড়, বাপরে বাপ! স্পোর্টসের দিন অমন ছুটতে পারলে প্রাইজ পাওয়া ছাত্রদের‌ও গর্বে বুক ফুলে উঠবে। মোরাম রাস্তা পার হয়ে পিচ ঢালা সড়ক, সেখান থেকে নাক বরাবর পাঁচশো মিটার দৌড়ে গেলেন মাত্র কয়েক সেকেন্ডে, তারপর একটা ঈর্ষণীয় লং জাম্প মেরে গিয়ে পড়লেন একেবারে একটা ট্রামের সেকেন্ড ক্লাস কামরার ভেতর। পেটের মধ্যে জগা রাক্ষসকে সেঁধিয়ে নিয়ে ট্রামটাও ঘটাং ঘটাং শব্দ করতে করতে চলে গেল সোজা সেই খিদিরপুরের দিকে।

    মতিনের তো একগাল মাছি! “কিন্তু... কিন্তু স্যারের বাসা সেই শ্যামবাজারের ওদিকে কোথায় না?”

    গোকুল সেকথার কোন‌ও জবাব দিল না, কেবল একটা শেয়ালে হাসি হেসে বললে, “বাড়ি যাও খোকা। তবে সাবধান, রাস্তায় যেন চোখ খুলো না! ন‌ইলে—

    —নন...ন‌ইলে?

    —“ন‌ইলে দেখবে কলকেতা লালে লাল।” গোকুল কুনো ব্যাঙের মত চোখ পাকালে, “যেদিকেই দেখো না কেন, কেবল পোস্টার আর পোস্টার।” তারপর মতিনের ঝুলপিতে একটা মোক্ষম চিড়িং মেরে, তিন লাফে অদৃশ্য হয়ে গেল বটগাছটার পেছনে।


    *******

    পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে শুনছিল মতিন। ইস্কুলের টিনের বাক্সটা ভারী হয়ে হাত থেকে খসে পড়ব পড়ব, কিন্তু তাও চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকতে সাহস হচ্ছে না। ঘরের আবহাওয়া আজ বড্ড থমথমে!

    মায়ের মুখখানা একঝলক চোখে পড়ল—যেন কান্না চাপতে একটা পাথুরে মুখোশ পরে রয়েছেন, একটু আড়াল পেলেই দু'চোখের বাঁধ ভেঙে একেবারে গঙ্গা-যমুনা ব‌ইয়ে দেবেন। মতিনের বাবা রাজেনবাবু এমনিতে বেশ হাসিখুশি মানুষ, কিন্তু এখন তাঁকেও রীতিমত গম্ভীর দেখাচ্ছে—ভুরু কুঁচকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছেন পায়ের বুড়ো আঙুলের দিকে। কেবল ঘরে উপস্থিত তৃতীয় ব্যক্তিটিই যেন এই রাশভারী পরিবেশের পক্ষে একেবারে বেমানান—চোখে আনন্দের ঝিলিক, মুখের হাসিটা চ‌ওড়া হতে হতে দু'পাশে কানের লতি ছুঁয়ে ফেলেছে, পেটানো লোহার মত শরীরটা দুলে দুলে উঠছে হাসির দমকে—মতিনের কাকামণি।

    অথচ কী আশ্চর্য, গতকাল অবধি এই কাকামণিকেই মুখ গোমড়া করে ঘুরতে দেখেছে মতিন! কথাটথা বিশেষ বলে না, হাবভাব যেন খাঁচায় আটকে পড়া বাঘের মত‌ই তনছটে—একলা ঘরে ক্রমাগত পায়চারি করে, আর কী যেন ভাবে। চ‌ওড়া বুকের কাঠামোটা সর্বক্ষণ‌ই দু'হাতের ভাঁজে বন্দী, কেবল মাঝেমধ্যে যখন জানালার সামনে দাঁড়িয়ে উদাস চোখে বাইরেটা দেখে, হাতের আঙুলগুলো আনমনে খেলা করে কোঁকড়া চুলের জঙ্গলে।

    আর সেই লোকটাই কিনা এখন উচ্ছ্বাসে একেবারে ফেটে পড়ছে—একি ভোজবাজি নাকি রে বাবা! মতিন প্রাণপণে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করল, হাসিহাসি মুখে মায়ের দিকে তাকিয়ে কাকামণি কী যেন বলছে:

    —উফ! বসে থাকতে থাকতে যেন শরীরের কলকব্জায় জং ধরে যাচ্ছিল! এতদিনে একটা মনের মত কাজ... কী বলো, বৌদি?

    মায়ের গলার স্বর সর্দি বসার মত, কোন‌ওমতে সেই ধরা গলাতেই বললেন, “তার চেয়ে সকলের কথা মেনে নেওয়াটাই কি বুদ্ধিমানের কাজ হত না? হরিদাসবাবু যখন সব ব্যবস্থাপত্র করেই ফেলেছিলেন—"

    —সেই জাহাজের খালাসিকে ধরেকয়ে চুপিচুপি বিদেশ পালানো? ছি বৌদি, তুমি না বলো আমার রকমসকম অনেকটা রাজপুত্তুরের মত! এই কি রাজপুত্তুরের উচিত কাজ? তার চেয়ে এই তো ভালো, খোলা তলোয়ার হাতে রে রে করে একেবারে শত্রুর ডেরায় গিয়ে হানা দেওয়া।

    —কিন্তু—

    —দেখো বৌদি, তোমরা যে আমাকে বিদেশে পাঠাবে বলে মনস্থ করেছিলে, সেখানে গিয়ে করতামটা কী? টাকাপয়সা ছাড়া ওই অজানা, অচেনা জায়গায় পচে মরার চেয়ে এই কি ভালো নয়?

    বাবা এতক্ষণ কোন‌ও কথা বলেননি, পাথরের মূর্তির মত একনাগাড়ে বসেছিলেন নতমুখে। এবার তাঁর গলাতেও একটু আপত্তির সুর শোনা গেল, “সেকথা কি আর আমরা ভাবিনি রে ভাই? কোথা থেকে টাকা জোগাড় হবে ভেবে ভেবে যখন দিশেহারা, কে জানি কথাটা তুলেছিল স্যার পি সি রায়ের কানে। বাপরে! শুনে সে কী ধমকটাই না দিলেন প্রফুল্লচন্দ্র!

    —“কীরকম, কীরকম?” কাকামণির মুখে দুষ্টুমির হাসি।

    —“আমরা তো মরে ভূত হয়ে গেছি, তাই না? অপদার্থ! আমাদের কাছে চাতি পার নাই? টাকার দরকার, তো একটিবার মুখ ফুটে বলতি কী হয়েছিল?” বাবা বুড়ো মানুষের গলায় খেঁকিয়ে উঠতে গিয়ে নিজেও হেসে ফেলেন, “উফ! সে কী হয়রানি! কিন্তু... থাক সেসব কথা! তুমি যখন একবার মনস্থির করেই ফেলেছ, তোমাকে যে আর টলানো যাবে না, সে দিব্যি বুঝতে পারছি। বাধ্য ছেলের মত বড়দের কথা মেনে চলার ফরমান যখন বিধাতা তোমার কুণ্ডলীতে লেখেন‌ইনি, তখন কী আর করা?”

    —আচ্ছা রাজেনদা, আমি অমন গতে বাঁধা লক্ষ্মী ছেলে হলেই বুঝি আপনারা খুশি হতেন?

    বাবা কোন‌ও উত্তর দিলেন না, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একঝলক মলিন হাসি ছুঁড়ে দিলেন কেবল।

    —“তবে!” কাকামণির ভুরুদুটো সামান্য লাফিয়ে উঠতে গিয়েও থমকে গেল, “আরে আরে, মতিনবাবু যে! কখন এলে?”

    সর্বনাশ! দেখে ফেলেছে! মতিনের বাবা-মা আড়ি পেতে বড়দের কথা শোনা ভীষণ অপছন্দ করেন—এখনই হয়ত বকাঝকা শুরু হয়ে যাবে, এমনকি যেরকম গুরুগম্ভীর আলোচনা চলছিল, তা'তে চড়-চাপড়টা আছড়ে পড়াও কিছু বিচিত্র নয়! কিন্তু মতিনকে অবাক করে দিয়ে সেসবের কিছুই হল না। মা কেবল একবার আলগোছে 'হাত-মুখ ধুয়ে নাও, খেতে দিচ্ছি' বলেই বেরিয়ে গেলেন, আর বাবা বললেন, “মতিন, তোমার কাকামণি এখন ক্লান্ত। ওঁকে একটু বিশ্রাম করতে দাও, পরে কথা বলবে 'খন।”

    কিন্তু মতিনের যে আর তর স‌ইছে না! ইস্কুলে এমন একটা রোমহর্ষক ব্যাপার ঘটে গেল, আর কাকামণির সঙ্গে একটিবার আলোচনা না করলে চলে? ওরে বাবা! সে করুণ চোখে তাকালো দু'জনের দিকে।

    —“না না দাদা, আপনি বারণ করলেও আমরা শুনব না।” শেষমেশ কাকামণিই মতিনের ঢাল হয়ে দাঁড়াল, “মতিনবাবুর নিশ্চয়‌ই কোন‌ও গুরুতর কথা আছে, ন‌ইলে খামোখা বিরক্ত করার ছেলে তো আমাদের মতিন নয়! আপনিই বরং চট করে একবার বাইরে থেকে ঘুরে আসুন, দেখুন গে'—বৌদি হয়ত একবাট্টি দোকানে যেতে বলছেন। সেই ফাঁকে আমাদের প্রাইভেট আলোচনাটা সেরে ফেলি।”

    কাকামণির মুখের হাসিটা ভারী অদ্ভুত! বাবা দমে গিয়ে এমন একটা ভাব করলেন, যার মানে দাঁড়ায়—অগত্যা!

    মতিনের গল্প শুনে কাকামণি একেবারে প্রতিক্রিয়ার রামধনু সাজিয়ে দিলে। জানালার পাল্লা ভেঙে হেডস্যারের হাতে নাকাল হ‌ওয়ার কথায় দুঃখ যেমন পেল, তেমনি গোকুলের দুষ্টুমি বুদ্ধির গল্প শুনে ছাদ কাঁপালো হা হা হাসিতে। কেবল সেই অদ্ভুত পোস্টারগুলোর কথা বলতে গিয়ে যখন মতিনের চোখজোড়া আবার গোল্লা পাকানোর যো, কাকামণি তার বড় বড় দুই চোখে শান্ত পিদিমের আলো জ্বেলে সটান চেয়ে র‌ইল তার দিকে—একটিবার‌ও চোখের পাতা পড়ল না, শ্বাসের শব্দ থমকে র‌ইল বুকের খাঁচায়। গল্প শেষ হলে ভুরুদুটো সামান্য কুঁচকে, আনমনে দু'হাতের আঙুল মটকাতে মটকাতে একদৃষ্টে চেয়ে র‌ইল পায়ের দিকে। এদিকে ঘড়ির টিক টিক গুনতে গুনতে মতিন বেচারির তো বুঝভুম্বুল দশা, শেষটায় আর থাকতে না পেরে ডেকেই ফেলল:

    —কাকামণি!

    —উঁ!

    —কী ভাবছ?

    —ভাবছি তোমার বাবা এই গল্পটা শুনলে কী খুশিই না হতেন!

    —“কেন?”—মতিন হতভম্ব।

    —“কেন?” কাকামণির গলা হঠাৎ একেবারে দশ ধাপ খাদে নেমে গেল, “পোস্টারিং ক্যাম্পেনের এতটা সাকসেস বোধহয় রাজেনদারাও আশা করেননি। ইনক্রেডিবল... ইন...” বলতে বলতেই আচমকা তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে মতিনকে একেবারে কোলে তুলে নিয়ে বাঁইবাঁই করে ঘোরাতে লাগলে, “হরে মুরারে মধু কৈটভারে, বুঝেছ মতিনবাবু? হরে মুরারে মধু কৈটভারে!”

    একি রে বাবা! এমন ভালো মানুষটা হঠাৎ ক্ষেপে গেল নাকি? আর কী কষেই না ধরেছে! ইস্পাতের মত শক্ত হাতদুটোর বাঁধনে বনবন চরকিপাক খেতে খেতে মতিন যে মূর্ছা যায়! বার দশেক পাক খাইয়ে শেষমেশ কাকামণিই যখন তাকে আলতো করে আরামকেদারায় বসিয়ে দিলে, তখনও তার ছোট্ট বুকখানা ধুমধাম-গুপগাপ শব্দে তুড়িলাফ দিচ্ছে।

    চোখের ওপর ধোঁয়াটে পরদাটা সরে যেতেই মতিন একেবারে কাকামণির গলা জড়িয়ে ধরে আবদার ফেঁদে বসল—“গল্প বলো। গল্প‌ওওওও...” অনেকদিন মনমরা হয়ে থাকার পর অবশেষে আজ কাকামণির মেজাজখানা বেশ শরীফ বোধ হচ্ছে, এমন ম‌ওকা কি কেউ ছাড়ে? মানুষ তো নয়, যেন আস্ত গপ্পের খনি—একটিবার মুখ খোলাতে পারলেই টুপটাপ মণি-মুক্তো ঝরে পড়বে।

    —গল্প চাই? বেশ তো! তা, মতিনবাবু আজ কীসের গল্প শুনবেন ফরমাশ করুন—টেনিস খেলার গল্প, নাকি সেই ভুঁড়িওলা থলথলে পুলিশটার গল্প? আচ্ছা হাসপাতালের মর্গে যে ভূতটার সঙ্গে আমার মোলাকাত হয়েছিল, তার গল্প তোমায় বলেছি কি?”

    —নাআআআ! ওসব গপ্প অনেকবার শুনেছি। আজ নতুন কিছু বলো।

    কাকামণি একটুক্ষণ কী যেন ভাবল, তারপর একহাতে মতিনের চুলগুলো ঘেঁটে দিতে দিতে, গলাটা অল্প একটু নামিয়ে বললে, “বেশ! আজ তোমাকে একদম নতুন একটা গল্প শোনাই তবে। কিন্তু মতিনবাবু, একটা ছোট্ট সমস্যা আছে যে!”

    —কী সমস্যা?

    -এই গল্পের শুরুর অংশটুকুই কেবল আমার জানা। শেষে কী হবে... এমনকি শেষ বলে আদৌ কিছু আছে কিনা, তাও সঠিক জানিনে।

    মতিন অনেক্ষণ চুপটি করে ভাবল। দুই... পাঁচ... দশ সেকেন্ড। তারপর মুখ তুলে বলল, “আচ্ছা কাকামণি, গল্পের শেষটা বানিয়ে নিলে হয় না?”

    —“বানিয়ে নেব? হা হা হা... বেশ বলেছ মতিনবাবু, বড় খাঁটি কথাই বলেছ। গল্পের শেষটুকু বানিয়ে নেবার তোড়জোড়ই চলছে বটে!” কাকামণির মুখে আবার চ‌ওড়া হাসির রেখা, “কিন্তু পরের কথা পরে হবে 'খন, এখন বোধনটুকু তো সেরে ফেলা যাক। শোনো তবে... অনেকদিন আগেকার কথা বুঝলে, এক দেশে এক মস্ত বড় জঙ্গল ছিল।”

    —খুব গভীর জঙ্গল?

    —গভীর বলে গভীর! দিনমানেও সেখানে একচিলতে রোদ্দুর ঢুকতে পায় না, এমন গভীর। অ্যায়সা বড় বড় সব গাছেরা তাদের পাতার ছাদ বানিয়ে সূয্যিঠাকুরের মুখ ঢেকে রাখে, দস্তুরমত ট্যাক্সো দিয়ে সেই ছাদ ডিঙোতে হয় তাঁকে। তা হলে কী হবে, সেই জঙ্গলে কিন্তু মেলাই পশুর বাস। বাঘ ভাল্লুক গণ্ডার হাতি হনুমান-টনুমান মিলে সে একেবারে ঠাসাঠাসি ব্যাপার!

    —আর পাখি? পাখি ছিল না কাকামণি?

    —ছিল ব‌ইকি! কাক কোকিল দোয়েল ময়ূর ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী স‌অঅব ছিল। কিন্তু তারা কেউ কার‌ও সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করত না, যে যার নিজের কাজকম্ম নিয়েই মশগুল হয়ে থাকত। যারা ঘাস-পাতা খায়, তারা বনের কচি কচি ঘাস চিবিয়ে বেশ ডাগর-ডোগরটি হয়ে ঘুরে বেড়াত। আর যারা মাংসাশী, তারা খিদে ফেলে এদের শিকার করত বটে, কিন্তু কেউ অকারণে গোলযোগ করলে বনের নিয়ম মেনে তাকে তদ্দণ্ডেই ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া হত। সব ঠিক‌ই চলছিল, হঠাৎ একদিন দেখা দিল ভীষণ উপদ্রব। কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল একটা ভীষণ দুষ্টু সিংহ। তার গায়ে বোটকা গন্ধ, দু'চোখে মাত্রাছাড়া লোভ—তবে তার গায়ের জোর বিস্তর, আর সেই দৈহিক ক্ষমতার জোরেই সে দাবড়ে রাখে বাকি পশু-পাখিদের। এতদিন জঙ্গলের নিয়ম ছিল অলঙ্ঘ্য, কিন্তু সিংহটা উঠতে-বসতে সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখায়। খিদে না পেলেও অকারণে জীবহত্যা করে, যেন অন্যের ওপর চাবুক চালিয়েই তার যত আনন্দ।

    —তারপর?

    —মজার কথা কী জানো মতিনবাবু, জঙ্গলে আর যত পশুপাখি ছিল, সবাই মিলে যদি একটিবার রুখে দাঁড়াতে পারত, সিংহের এই বোলবোলা যে কোথায় উড়ে যেত তার ঠিক নেই! অথচ তারা কেউ যেন সাহস‌ই পেলে না। চোখের সামনে তাদের এতদিনের বাসস্থানখানা ছারখার হয়ে গেল, আর তারা যে যার গর্তে ঢুকে প্রাণ বাঁচাতেই ব্যস্ত। তারপর একদিন হল কী...

    এতক্ষণ বেশ চুপটি করে শুনছিল মতিন, হঠাৎ তন্ময়তা ভেদ করে ভয়ের পোকাটা মাথার মধ্যে নড়ে উঠল, “আচ্ছা কাকামণি, স্যার বারণ করার পরেও যে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে পোস্টারগুলো দেখতে গিয়েছিলাম—একথাটা তুমি বাবাকে বলবে না তো?”

    —পাগল! ওটা আমাদের টপ সিক্রেট। তারপর শোনো...


    *******

    দিনকতক পরের কথা। দেওয়াল ঘড়ির ঢং শুনে ঘুমটা চটকে যেতেই মতিন টের পেল, তার মনটা আজ বিশেষ ভালো নেই। সর্বাঙ্গ ঘামে ভিজে টুসটুস করছে, মাথার বালিশেও কেমন একটা ভিজে-ভিজে ভাব—তবে সেটা বোধহয় ঠিক ঘামের দরুণ নয়। ব্যাপারটা কী? কোথা থেকে একফালি রোদ্দুর এসে মুখের ওপর এক্কাদোক্কা খেলতে শুরু করেছিল, চোখ রগড়ে ব্যাটাকে তাড়াতে গিয়েই মনে পড়ে গেল গতরাতের সেই স্বপ্নটার কথা। ইস! কী ভয়ানক স্বপ্ন! কেন যে মরতে মনে করতে গেল!

    খুব কদাকার দেখতে একটা সিংহ—তার ধামার মত মাথা, কুলোর মত কান আর মুলোর মত দাঁত। সিংহটার মুখ থেকে ক্রমাগত টসটসে লালা ঝরে পড়ছে। সিংহটা দাঁড়িয়ে আছে একটা হরিণের বুকে থাবা রেখে। হরিণটার হলদে শরীরে বাদামি রঙের ইলশেগুঁড়ি দাগ ধুয়ে যাচ্ছে রক্তের ধারায়, টানা টানা দুই চোখে কাজলাদীঘির মত টলটলে জল। সিংহের মুখটা আরেকটু নেমে এলেই তার কোদালে দাঁতের এক কামড়ে ছিঁড়ে যাবে হরিণটার নরম টুঁটি, কিন্তু সিংহমশাই হাজার চেষ্টা করেও মুখটি আর নীচু করতে পারছেন না। কারণটা বেশ অভিনব—হরিণটা মরতে মরতেও জানের লড়াই ছাড়েনি, তার মাথায় ছিল মস্ত শিঙের মুকুট, সেই ইকিড়মিকিড় শিঙ উঁচিয়ে ধরেছে শিকারী সিংহের গলার কাছে। পশুরাজ বেশি বেগড়বাঁই করলেই শিঙের খোঁচায় তাঁর গলার নলিটি ফুটো হয়ে যাবে। সিংহরাজা তাই ভয় পেয়েছেন—এক পা, এক পা করে পিছু হঠছেন সাবধানে।

    স্বপ্নের ধরনটা তেমন তেমন বিচ্ছিরি হলে, ঘুম ভাঙার পরেও জিভের ডগায় একটা তিতকুটে স্বাদ থেকে যায়, মতিনের মনটাও গতকালের স্বপ্নের ঘোরেই থমথমে হয়ে ছিল—সাড় ফিরল জানালা দিয়ে উত্তুরে হাওয়ার কাঁপুনি এসে ছুঁয়ে দেওয়ায়। আড়চোখে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো মতিন—কী সব্বোনাশ! আটটা! আজ নির্ঘাত ইস্কুল কামাই হবে। কিন্তু এত বেলা হয়ে গেল, অথচ কেউ তাকে একটিবার‌ও ডাকতে এল না কেন? বাড়িতে কেউ নেই নাকি? না, ওই তো পাশের ঘর থেকে মায়ের গলা পাওয়া যাচ্ছে:

    —খাও ঠাকুরপো, আমি সেই ভোরবেলা উঠে তোমার জন্য রান্না চাপিয়েছি। আজ না বললে শুনব না, সব খেতে হবে তোমায়।

    —তাই বলে এত? করেছ কী বৌদি! মাছ, মাংস, পোলাও, দ‌ই-মিষ্টি... বাপরে! এ তো এলাহি আয়োজন।

    -বললাম না, আজ কোন‌ও কথা শুনছি না। খেয়ে নাও লক্ষ্মী ছেলের মত।

    —কিন্তু বৌদি, এত খেলে যে শরীর ভারী হয়ে যাবে। তখন কব্জির জোর দেখাব কেমন করে? আচ্ছা বেশ, আমি অল্প অল্প করে সব মুখে দিচ্ছি।

    বাবার গলা পাওয়া যাচ্ছে সদর দরজার কাছে, তার মানে সকালে উঠেই কোন‌ও জরুরী কাজে বেরিয়েছিলেন। বাবা উঠোন থেকেই মায়ের নাম ধরে ডাকলেন, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই একজোড়া চাপা গলার ফিসফিস শুনে মতিন বুঝতে পারল, বাইরে দাঁড়িয়েই দু'জনের মধ্যে কীসব আলোচনা হচ্ছে। নাহ্! আর কৌতূহল ধরে রাখা গেল না, পায়ে পায়ে পশ্চিমের জানালাটার সামনে এসে দাঁড়াল মতিন—এখান থেকে বাইরের কথাবার্তা স্পষ্ট শোনা যায়।

    —খেতে বসেছে?

    —“হুঁ।” মায়ের গলার স্বর কেমন অচেনা।

    —“ওদিকে নিকুঞ্জদা কিন্তু জোর ফ্যাসাদে পড়েছেন।” বাবা যেন একটু জোর করেই হাসলেন, “কাল রাতেই প্রস্তাব রেখেছিলেন মানিকজোড়ের কাছে—কী খেতে চাও বলো। শুনে বাবুদের আহ্লাদ তো আর ধরে না! দীনেশ নাকি বলেছিল—খাওয়াতেই যখন চাইছেন, তখন মাংস‌ই হোক। তবে হ্যাঁ, মাঝপথে হাত গুটিয়ে নিলে চলবে না—যতক্ষণ পেটে ধরবে, ততক্ষণ পাতেও পড়বে।”

    —বোঝো কাণ্ড!

    —আমি গিয়ে কী দেখলাম জানো? প্রায় সেরটাক মাংস ওরা দুটিতে মিলে সাবড়ে দিয়েছে। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায় দেখ! শেষে নিকুঞ্জদা যখন কাঁচুমাচু হয়ে জিজ্ঞেস করছেন আর লাগবে কিনা, দীনেশ চোখ কপালে তুলে বলে—-“বলেন কী! এখন‌ও তো খেতে শুরুই করলাম না। আর শেষপাতে দ‌ই-মিষ্টি রেখেছেন নিশ্চয়‌ই! জানতাম, ও আপনি না খাইয়ে ছাড়বেন না।”—ওফ্! নিকুঞ্জদার মুখখানা যদি একবার দেখতে!

    বলার ধরনখানা এমন‌ই, আরেকদফা হাসি ভুসভুসিয়ে উঠেছিল মতিনের পেটের ভেতর, কিন্তু অবাক হয়ে গেল মায়ের গলা শুনে। মা ফুঁপিয়ে কাঁদছেন, যেন কতদিনের পাথর চাপা কষ্ট ঠিকরে বেরোনোর পথ খুঁজছে।

    —“কেঁদো না।” বাবার গলা বরফের মত, “আগেকার দিনে সন্তান যুদ্ধে যাবার সময় মায়েরা নিজের হাতে তাদের সাজিয়ে দিতেন। এখন তোমার দুর্বল হলে চলে? যাও, ওর পোশাক-আশাক গুছিয়ে দাও'গে। ন'টা বাজলেই কিন্তু রসময়দা এসে হাজির হবেন।”

    —এই যাই! ওদিকে... ওদিকে সব তৈরি?

    —নিকুঞ্জদা বাদলকে নিয়ে কাল‌ই একবার গিয়েছিলেন। ভেতরে ওঁর চেনা লোক আছে, সব দেখিয়ে-শুনিয়ে দিতে অসুবিধা হয়নি।

    —আরেকজন?

    —সে বাবু এখন আবৃত্তি করছেন। বেরোনোর আগে তাঁর উদাত্ত গলায় রবি ঠাকুরের কবিতা শুনে এলাম:

             “যে শুনেছে কানে
    তাহার আহ্বান গীত, ছুটেছে সে নির্ভীক পরাণে
    সঙ্কট আবর্ত মাঝে, দিয়েছে সে বিশ্ব বিসর্জন
    নির্যাতন লয়েছে সে বক্ষ পাতি, মৃত্যুর গর্জন
             শুনেছে সে সঙ্গীতের মত।”

    আড়ি পাতা শেষ হলে খানিকক্ষণ থুম মেরে বসে র‌ইল মতিন। এইমাত্র যা সব আলোচনা হল, তার বিন্দুবিসর্গ‌ও যে মাথায় ঢুকছে না! বাবা যাদের নাম করছেন, তারা কারা? লোকগুলো বেশ মজাদার, তা'তে সন্দেহ নেই, কিন্তু এদের কথা আগে কখন‌ও শোনেনি মতিন। আর কাকামণির পোশাক‌ই বা গোছানো হচ্ছে কেন? ওই রসময়দা না কে, সে কি তবে কাকামণিকে নিয়ে যেতেই আসছে?

    বিভ্রান্ত মুখে গুটিগুটি পাশের ঘরে উপস্থিত হতেই কিন্তু তার চোখে ধাঁধা লেগে গেল—এ কাকে দেখছে মতিন? এই কি তার কাকামণি? পরনে পুরোদস্তুর সাহেবি পোশাক—ঝকঝকে স্যুট, তকতকে নেকটাই, পালিশ করা দামী জুতোটায় বোধহয় মুখ দেখা চলে। আবার সঙ্গে একটা মানানসই হ্যাট‌ও! দেখলে কে বলবে, ইনি সদ্য বিলেতের জাহাজ থেকে নামা কোন‌ও সাহেব নন! কাকামণির মুখে কিন্তু সেই পরিচিত হাসি, নীচু হয়ে বাবার পায়ের ধুলো নিচ্ছে:

    —তোমার দূত এল বলে! মনে আছে তো? প্রথমে খিদিরপুরের পাইপ রোড, সেখান থেকে তিনজনে মিলে সোজা রাইটার্স বিল্ডিং—

    —সব মনে আছে দাদা, কিচ্ছুটি ভাববেন না... দেখি বৌদি!

    মা দাঁড়িয়ে আছেন পাথরের মূর্তির মত—নির্বাক, নিস্পন্দ। কাকামণি প্রণাম করতেই অস্ফুটে বলল, “বিজয়ী হয়ে ফিরে এসো।”

    —“ফিরে এসো!” কাকামণি হাসছে, “কী যে বলো বৌদি!”

    —কাকামণি!

    মতিনের ডাক শুনে তিনজনেই যেন চমকে ওঠেন। সত্যিই তো, এই একজনের কথা এতক্ষণ কার‌ও মাথাতেই আসেনি। তা না আসুক, এখন অন্তত একটিবার... কাকামণি ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দুটো হাত রাখল মতিনের কাঁধে।

    —তুমি চলে যাচ্ছ?

    —হ্যাঁ মতিনবাবু, এইবার কাকামণির পাড়ি দেবার সময় হয়েছে। কিন্তু তুমি মন খারাপ করবে না, কেমন?”

    মতিনের গলার কাছটা দলা পাকিয়ে আছে। কাকামণি যে আজ‌ই চলে যাচ্ছে, একথাটা কেউ তাকে একবার জানানোর‌ও প্রয়োজন‌ বোধ করেনি। কিন্তু আর কেউ মনে না রাখুক, কাকামণি নিজের মুখেও তো একবার বলতে পারত! জানা থাকলে কি আর মতিন বেলা আটটা অবধি বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমোয়?

    অগুন্‌তি প্রশ্নরা পেটের ভেতর থেকে ঠেলাঠেলি করে উঠে আসতে চাইছে। কাকামণি হঠাৎ এত তাড়াহুড়ো করে চলে যাচ্ছে কেন? কোথায় যাচ্ছে? আবার কবে আসবে? অনেক ভেবেচিন্তে, একটা লম্বা দম নিয়ে মুখ খুলল মতিন:

    —সেই গল্পটা... সেই যে সিংহটা এসে বনের পশুদের ওপর অত্যাচার করছিল... তারপর কী হল?

    বাইরে থেকে একটা ট্যাক্সির হর্ন শোনা যাচ্ছে। কাকামণি একবার বাবার দিকে তাকিয়ে কী একটা ইশারা করল, তারপর হাঁটু ভেঙে বসল একেবারে মতিনের চোখে চোখ রেখে। “মতিনবাবু, মনে করো, তোমার কাকামণির কাজ ছিল একটা গল্পকে শুরু করে দিয়ে যাওয়া। তার শেষটা কেমন হবে, সে আমার হাতে নেই। কিন্তু ধরো যদি তোমাকেই এই গল্পের শেষটুকু লিখতে বলা হয়—কী লিখবে তুমি?”

    মতিন একমুহূর্ত ভাবল, “আমি সিংহটাকে মেরে ফেলব। তুমি যে সেদিন আমায় এয়ারগান চালানো শিখিয়ে দিলে, ওইটা দিয়েই।”

    কাকামণি হো হো করে হেসে মতিনের পিঠটা বারকতক চাপড়ে দিল, “সাবাশ মতিনবাবু, সাবাশ! এই তো চাই।”

    বাবার গলা। চটজলদি একবার বাইরেটা দেখে এসেই ডাক দিচ্ছেন হন্তদন্ত হয়ে, “রসময়দা এসে গেছেন। এবার তাহলে—”

    হাত বাড়িয়ে মতিনের চুলটা এলোমেলো করে দিল কাকামণি:

    —হ্যাঁ, চলুন।

    বিলীয়মান ট্যাক্সিটার কালো ধোঁয়াকে পেছনে ফেলে রেখে, এক পা-দু'পা করে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিল মতিন। কেমন ঝোড়ো হাওয়া দিচ্ছে আজ! যত রাজ্যের ধুলোবালি সেই হাওয়ায় ভর করে উড়ে আসছে ঘরের ভেতর—কত যুগ ধরে জমা হয়ে ছিল কে জানে! বড্ড জ্বালা করছে মতিনের চোখদুটো। জানালাটা বন্ধ করতে করতে খেয়াল হল, এয়ারগানটা জানালার ঠিক ওপরেই হুক থেকে ঝুলছে। কিন্তু বড্ড উঁচু, তার হাত এখন‌ও অতদূর পৌঁছয় না।


    তার জন্য মতিনকে আর‌ও অনেকখানি লম্বা হতে হবে।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ উইকিপেডিয়া থেকে
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments