১. অথচ
ঘাসে পড়ে ঠিকরে যাচ্ছে রোদ্দুরের কুচি,
পড়েছে এমন ভাবে যেন তার বিশ্রামেই রুচি।
তার ঠিক দুই ফুট দূরে ঝুঁকে আছে ছায়া
চুম্বনের জন্যে যেন সাধাসাধি করছে বেহায়া।
নিসর্গের এইসব গার্হ্যস্থের দৃশ্য
বসে উপভোগ করা যার লিখিত ভবিষ্য
তাকেও পিচ্ছিল পথে টেনেছে চেতনা,
নচেৎ এ আলস্য ছেড়ে সে মূর্খ যেতনা
সংক্ষোভ, সংরাগ, সংশয়ের দাঁতে
বিদ্ধ পিষ্ট দষ্ট্র হতে ঘাতে প্রতিঘাতে।
তারও ইচ্ছা নিমগ্ন কোণে সিন্ধু বারোয়াঁরই,
অথচ উত্যক্ত করে দেশ নষ্ট করে খোঁয়ারি।
২. উপনিবেশ
আমি আকাশে আঙুল দিয়ে আজ
সহস্রবার লিখেছি তোমার নাম
আজ আমি বাগানে তোমার জন্যে পুঁতেছি সহস্র বাক্যের বীজ
আজ আমি সহস্র পত্রের উপর অঙ্কিত করেছি তোমার অঙ্গুরীর অভিজ্ঞান
আর তোমার মুখাংকিত সহস্র নিশান আমি বৃক্ষশীর্ষে লগ্ন করে দিয়েছি,
আজ আমি জনবহুল রাস্তার মোড়গুলিতে
রেলস্টেশন আর বিমানবন্দরে
জাহাজঘাটা আর সরাইখানায়
মহকুমাশাসকের দফতরে আর আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট গুলিতে
ফেরারি আসামীর ছবির মতন
লটকে দিয়েছি তোমার নাম
তোমার নামে আজ আমি বিলি করেছি সহস্র ইস্তাহার
শহরের প্রত্যেক উপাসনাগৃহে
তোমার নামে উৎসর্গ করেছি মোমবাতি
আর সংক্রামক মহামারীর বীজের মতন ছড়িয়ে দিয়েছি তোমার নাম।
আপাতত বৃষ্টির মেঘে আকাশে লেখা তোমার নাম ঢেকে আছে
আপাতত বাগানের মৃত্তিকার নিচে তোমার নামের জপমালা দেহ রেখে আছে
আপাতত রেলস্টেশন বিমানবন্দর জাহাজঘাটা সরাইখানায়
আপাতত ট্যুরিস্ট স্পট রাস্তার মোড় মহকুমা থানায়
সকলেই তোমার নাম ভুলে আছে
তোমার নিশান, বায়ুহীন, ঝুলে আছে।
এবং বিশ্বাসহন্তা বৃক্ষেরা তোমার অভিজ্ঞানযুক্ত পত্রগুলি একযোগে করেছে মোচন
এই বিশৃঙ্খল উপনিবেশ পুনরায় গড়ে তুলতে আমার তোমাকে প্রয়োজন।
৩. ভালবাসার একটি ইচ্ছে
রক্তে এবং মজ্জায়
তাকেও দেখ ঘিরে রেখেছি,
ঘিরে রেখেছি লজ্জায়।
একটি শুধু মুখের কথা
উলটো এবং সিধায়
তাকেও দেখ ঘিরে রেখেছি
প্রাণান্তকর দ্বিধায়।
একটি শুধু মনের কাঁটা
মর্মে রয়েছে অস্ফুট
তাকে ঘিরে দেখো রচেছি আমার
যাবতীয় এই ব্যাসকূট।
৪. রেলস্টেশনে ব্যক্তিগত হাসি
কটির যেমন চতুর্দেশে
মেখলা আঁকে চক্রব্যূহ
রেলস্টেশনে চতুর্দিকে
ঘেরাও দিল লোকসমুহ।
তবুও তাদের তুচ্ছ করে
হাসতে পারো খুব ঘনিষ্ঠ
এ কারণেই এ পর্যন্ত
তোমার প্রতি একনিষ্ঠ।
সম্মিলনের জোয়ালে আঁটা
কিন্তু মনে কুবাসনা
সঙ্গোপনে নিভৃত স্বরে
নির্জনতার উপাসনা।
৫. সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনের মধ্যে দিয়ে তুমি যখন হেঁটে যাবে
স্মৃতিকে তোমার ভ্রমণসঙ্গী কোর না
সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনের মধ্যে দিয়ে তুমি যখন হেঁটে যাবে
স্মৃতিকে পাঠানো প্রণয়পত্র পড় না
সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনের মধ্যে দিয়ে তুমি যখন হেঁটে যাবে
কেবল চ্যুত পাইনের ফল কাঁটা পাতা মাড়িও
সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনের মধ্যে দিয়ে যখন তুমি হেঁটে যাবে
উদাসীন কোন পাইন ছায়ায় দাঁড়িও
সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনের মধ্যে দিয়ে তুমি যখন হেঁটে যাবে
নগণ্য কোন ঝর্ণার জল পায়ে মেখো না
সরলবর্গীয় বৃক্ষের বনের মধ্যে দিয়ে তুমি যখন হেঁটে যাবে
নির্দোষ কোন নদীর স্রোতে পা রেখো না।
ফেরারী আসামীর মত সন্তর্পণে
এই অরণ্যকে তুমি অতিক্রম করে যেও
বে-আইনি ভাবে পাচার করা অস্ত্রের মত নিঃসাড়ে
এই অরণ্যকে তুমি অতিক্রম করে যেও
অনধিকৃত অঞ্চলের উপর দিয়ে গেরিলাদের মত
এই অরণ্যকে তুমি অতিক্রম করে যেও
মনে রেখো
যে মুহূর্তে এই অরণ্যের সীমান্তে তোমার পা পড়েছে
সেই মুহূর্ত থেকে
বুনো শিকারি কুকুরের মত
তোমার পিছু নিয়েছে
আমার ভালবাসা।