• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৮ | সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ছোটদের পরবাস | গল্প
    Share
  • চেনা-অচেনা : হৃদি কুন্ডু


    চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলতেই চমকে গেলাম। বাড়িটার এই চেহারা হল কী করে? বসার ঘরটা যেন পাশের ঘরের সঙ্গে জুড়ে আরো বড় হয়ে গেছে। টাইলসের বদলে লাল রঙের মেঝে, বেতের চেয়ারটেবিলের পাশে একটা লম্বা আরামকেদারা। কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে ওপরে তাকিয়ে দেখি গোল গোল ঘুলঘুলিতে চড়াইপাখি বাসা বেঁধেছে। আমাকে আবার চমকে দিয়ে দেওয়ালের বিশাল ঘড়িটায় ঢং ঢং করে চারটে বাজল। এই সময় ভেতর থেকে একটা ছেলের গলা শুনতে পেলাম - "আসছি মা, আসছি বাবা।" ছেলেটা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলে দেখি ওর হাতে একটা রঙবেরঙের চৌকোমত জিনিস। সেটা ঘোরাতে ঘোরাতেই চলেছে। ছেলেটার পেছন পেছন এক ভদ্রলোক আসছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন - "ওটা নিয়ে চললি কোথায়?" ছেলেটা উত্তর দিল - "বিলু আনতে বলেছে বাবা।" আমার ওকে খুব চেনা চেনা লাগল। কপালে একটা কাটা দাগ। কিন্তু ও যেন আমাকে দেখতেই পেল না। ভেতর থেকে এক মহিলা বললেন - "তাড়াতাড়ি ফিরিস, আজ মুগের নাড়ু করছি।" শুনে ছেলেটা জিভ দিয়ে ঠোঁটটা চেটে নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি ওর পেছন পেছন দৌড়োলাম। এ কী! রাস্তাটা পিচ থেকে মাটির হয়ে গেল কী করে? সামনেই দেখি একটা বড় মাঠে অনেকে ফুটবল খেলছে। ছেলেটা হাতের জিনিসটা মাঠের ধারে একটা গাছের গর্তে রেখে ওদের সঙ্গে খেলতে লাগল। খেলা শেষ করে ছেলেটা একসময় বাড়ির দিকে দৌড় লাগাল। আরে! খেলনাটা ফেলে গেল যে! আমি তাড়াতাড়ি সেটা বের করে এনে ওকে ডাকলাম, কিন্তু তার কানেই গেল না। খেলনাটা ঘোরাতে আমারও বেশ মজা লাগছিল। আমি ওর পেছন পেছন বাড়ির দিকে চললাম। দরজা বন্ধ। চাবি ঘুরিয়ে ঢুকতেই - এ কী! এই তো আমার চেনা ঘরদোর। টাইলসের মেঝে, লেদার সোফা। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি দিব্বি পিচের রাস্তা। আর মাঠ কোথায় - সেখানে সার দিয়ে বাড়ি। স্বপ্ন দেখলাম নাকি? না, এই তো আমার হাতে ধরা সেই খেলনা। ভেতরের ঘরে দেওয়ালের ছবির দিকে চোখ পড়তেই মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে উঠল। সামনেই আমার ঠাকুরদার ছবি। এ তো সেই ভদ্রলোক। ছেলেটা যাকে বাবা বলছিল। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল - এই ছেলেটার চেহারা আমি অনেকবার দেখেছি। বাড়ির পুরোনো অ্যালবামে। আমার বাবার ছবি।

    কিন্তু এসব কথা কাউকে বললে আমাকে রাঁচি পাঠিয়ে দেবে। তাই মা ফেরার পরেও আমি কিছু বলিনি। চুপচাপ পড়তে বসলাম। বাবা ফিরল আরো পরে। আমার টেবিলে খেলনাটা দেখে অবাক হয়ে গেল - "তুই রুবিক কিউব কোথথেকে পেলি?" ওঃ, এটাকেই রুবিক কিউব বলে! আমি নাম শুনেছি, আগে কখনও দেখিনি। তারপর সেটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল - "ছোটবেলায় আমার একটা ছিল। কী করে যে হারিয়ে ফেলেছিলাম। কত খুঁজেছি। তুই এটা কোথায় পেলি?" আমি তাড়াতাড়ি কথা ঘোরাতে মাকে বললাম - "মা, তুমি মুগের নাড়ু বানাতে পারো?" মা একটু অবাক হয়ে তাকাল। কিন্তু কিছু বলার আগেই বাবা আবার বলে উঠল - "মুগের নাড়ু তো আমার দারুণ পছন্দের রে। তোর ঠাকুমা কী চমৎকার বানাত আমার ছোটবেলায়।" আমি একটু হাসলাম। বাবার কপালের কাটা দাগটায় আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে ফিসফিস করে বললাম - "জানি।"


    অলঙ্করণ - অনন্যা দাশ




    হৃদি কুন্ডু কলকাতায় থাকে। হ্যারি পটার আর গণ্ডালুর ভক্ত। ভবিষ্যতে লাইব্রেরিয়ান হবে বলে ঠিক ছিল (তাতে নাকি গল্পের বই পড়ার খুব সুবিধে হবে), এখন একটু দোটানায় আছে কারণ মনে হচ্ছে গাড়ি করে আইসক্রিম বিক্রি করাটাও মন্দ নয়।

    হৃদির আর এক শখ ডিজাইন করা। এদিক-ওদিক থেকে হৃদি শোনে যে বাঙালিদের নাকি 'ডিজাইন'-বোধটা একটু কম। তার একটা বিহিত করার জন্যেই খাতার পাতায় হৃদি কিছু ডিজাইন করেছে। আপাতত শুধু পোশাকের। আপনারাও দেখতে পারেন চাইলে।

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments