• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৮ | সেপ্টেম্বর ২০১৭ | গল্প
    Share
  • জংলী জামাই : শ্রীময়ী চক্রবর্তী


    সুখময় বাবুর মেয়ে ধিঙ্গীর বিয়ে দিতে সবার নাকের জলে চোখের জলে অবস্থা হয়েছিল। ধিঙ্গী যার ভালো নাম অপরূপা সান্যাল সে সত্যিই মনে-প্রাণে বেজায় ধিঙ্গী। একদম শিশুকালে অপরূপার ডাক নাম রাখা হয়েছিল রুপা। কিন্তু বছর চারেক বয়সে রুপা বাই চয়েজ হয়ে যায় ধিঙ্গী। সেদিন কি কুক্ষণে ঠাকুমা তার দুষ্টুমির চোটে তিতিবিরক্ত হয়ে বলে বসেছিলেন "মেয়ে তো নয় ধিঙ্গী অবতার হচ্ছে দিন দিন!" রুপা ধিঙ্গী শব্দটায় বিমুগ্ধ হয়ে যায়। সে সবাইকে "আমার নাম ধিন্নী," "আমার নাম ধিন্নী" বলে বলে মাথা খারাপ করে দেয়। এমন কি স্কুলের ইন্টারভিউতেও সে নিজের নাম ধিন্নী ছান্নাল বলে আসে। ক্রমে ক্রমে মজা মারতে মারতেই অপরূপার ডাক নাম হয়ে দাঁড়ায় ধিঙ্গী। তবে এমন টেলর-মেড নাম বোধহয় ধিঙ্গীর জন্য আর একটিও হতে পারতো না। ধিঙ্গী সত্যিই ধিঙ্গী অবতার। এই পাড়ার মাঠে হকি খেলছে, এই সাইকেল চালাচ্ছে, এই দেখা গেলো পুকুরে সাঁতার কাটছে তো পরমুহূর্তেই আম গাছের ডালে ঝুলছে। পাক্কা গেছো দাদার বালিকা সংস্করণ। ধিঙ্গীদের যৌথ পরিবারে আরো দুটো পিঠোপিঠি বোন আছে। তারা যখন খেলনাবাটি নিয়ে পুতুল খেলতে বসতো ধিঙ্গী হয় চাকর সাজতো, নয় সবজিওয়ালা বা কাগজওয়ালা সাজতো। ড্রাইভার বা চোর কিছুতেই ধিঙ্গীর না ছিলো না শুধু তাকে গিন্নী সাজতে বলো না।

    এমনি করে হাটে মাঠে ঘাটে ধিঙ্গী দিব্বি রোদ হাওয়ার মতো তরতরিয়ে বেড়ে উঠলো। জিওগ্রাফিতে মাস্টার্স করার পর কেউ যখন তাকে বিএড করতে বলছে, কেউ সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে বলছে--ধিঙ্গী একদিন ঘোষণা করলো সে কোন চাকরিই করবে না। সে ফোটোগ্রাফিটাই প্রফেশন হিসেবে নিতে চায়। কুড়ি বছরের জন্মদিনে মেয়ের আবদারের বন্যায় ভেসে গিয়ে ধিঙ্গীর বাবা ধিঙ্গীর মায়ের কতকটা অমতেই একটা ক্যাননের ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে দিয়েছিলেন। ধিঙ্গী সেটা বগলদাবা করে তাদের ছোট গঞ্জ শহরটার আশেপাশে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে ঘাস ফুল, সূর্যাস্তের গোধূলি আকাশ, প্রজাপতি, রাখাল আর গরুর পালের ছবি তুলে বেড়াতো। ধিঙ্গী নিজের একটা ফটোগ্রাফি ব্লগও বানিয়েছে যার নাম 'ধিঙ্গীস ক্লিক'। বেশ কটা পত্র পত্রিকায় তার ছবিও ছাপা হতে লাগলো। কিন্তু পাড়ার কি আত্মীয়স্বজনের বিয়েতে ছবি তুলতে বললেই মান যেতো মানিনীর।

    বোনেদের একে একে বিয়ে হয়ে গেল। ধিঙ্গীকে বিয়ের কথা বললেই "পরে হবে ক্ষন" বলে কাটিয়ে দেয়। ধিঙ্গীর মা দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে এবার অসহোযোগ আন্দোলন শুরু করলেন, প্রয়োজন ছাড়া একটি কথাও তিনি মেয়ের সাথে বলেন না। এদিকে ধিঙ্গী তো পড়লো মহা ফাঁপরে-- ইমোশনাল অত্যাচার তার মোটেই হজম হয় না। তবে কিনা ধিঙ্গী দুষ্টু-বুদ্ধির গাছ। সেও ঠিক করে ফেললো সম্বন্ধ দেখা চলতে থাকুক সেও একটা না একটা বাহানায় ঠিক কাটিয়ে দেবে। তারপর একসময় বাবা, মা, কাকি, জ্যেঠিরা ক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দেবে। ব্যাস সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না। শুরুটা বেশ পরিকল্পনা মাফিকই হয়েছিল। বাবারে এতো বিবাহযোগ্য ছেলেও দুনিয়ায় আছে!--ধিঙ্গী অবাক হয়ে ভাবতো। দেখা গেলো খবরের কাগজ, পাড়ার লোক, আত্মীয়স্বজন, ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট সবাই ডজন দরে দেশবিদেশের পাত্র সাপ্লাই করে যাচ্ছে। শিক্ষিত উচ্চ-মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারের সন্তান ধিঙ্গী দেখতেও ভারী নজর কাড়া। গায়ের রঙটা হয়তো ঠিক গৌরবর্ণ নয় কিন্তু উজ্জ্বল ত্বকের অতি মিষ্টি মুখের মেয়েটিকে ভালো‌ লেগে যেতো সবারই। ধিঙ্গীও কখনো আপার কাট, কখনো ড্রাইভ, কখনো পুল‌ করে তার দিকে তেড়ে আসা বলগুলোকে মাঠের বাইরে বের করে দিচ্ছিলো। কিন্তু গোল বাঁধলো ছোটো কাকির তুতো বোনের ভাশুরের ছেলে কিংশুকের বেলায়। একদিন বসন্ত সন্ধ্যায় শ্রীযুক্ত কিংশুক এবং শ্রীমতী অপরূপা পরস্পরের সাথে দেখা করতে গেল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। পাত্রী দেখার সাবেক পদ্ধতি কিংশুকের বেজায় অপছন্দ। কোকিলের কুহুতান শুনতে শুনতেই হো্ক্‌, অদূরে চুম্বনরত যুগলমূর্তি দেখেই হোক বা কিংশুকের সোজা-সাপ্‌টা আড্ডাবাজ স্বভাবেই হোক ধিঙ্গী দড়াম করে কিংশুকের প্রেমে পড়ে গেলো, এবং তার অনাঘ্রাত হৃদয়টি দর্শনমাত্র প্রেমের নীতিতে লোপ্পা ক্যাচের মতো কিংশুকের হাতে তুলে দিলো। কিংশুকের মনের কথা অবশ্য অনভিজ্ঞ ধিঙ্গী কিছুই বুঝতে পারলো না। বাড়ি ফিরে তার বুক দুর দুর করতে লাগলো। মা ধিঙ্গীকে জিজ্ঞেস করলেন "কি রে ধিঙ্গী ছেলেটাকে কেমন লাগলো তোর?" ধিঙ্গী তখন প্রথম বার "জানি না যাও!" বলে বোকা বোকা হাসতে লাগলো। তার পরের দিন বিকেল বেলা যতক্ষণ না কিংশুকের মায়ের ফোনটা এলো ধিঙ্গীর প্রাণটা যেন গলায় আটকে রইলো।

    বিয়ের দিন ঠিক হলো নভেম্বরের মাঝামাঝি। বিয়ে করেই ওরা চলে যাবে কাজিরাঙ্গা ফরেস্টে। না, হানিমুন করতে নয়; কিংশুক কাজিরাঙ্গার কহোরা রেঞ্জের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার। নভেম্বর ট্যুরিসমের পিক সিজন, সাত দিনের বেশি ছুটি সে কোনমতেই পাবে না। যদিও তার রেঞ্জ কোর এলাকায়, ফলে ট্যুরিস্ট পারমিট কমই দেওয়া হয়, তবু ফরেস্ট অফিসারের পক্ষে বেশিদিন ছুটি নেওয়া অসম্ভব। ধিঙ্গীর মা কাকি জ্যেঠি এমনকি পুরোনো কাজের লোক অব্দি মেয়েটাকে একটু রান্না শেখানোর তপস্যা শুরু করলেন। কিন্তু ধিঙ্গী তো ধিঙ্গীই; সে মুগের ডালের জায়গায় আলু পোস্তয় ঘি দিলো, পটলের ডালনা নুনে পোড়া করলো, অবশেষে যখন মাংসের ঝোলে জল টুবুটুবু দিয়ে প্রেশার কুকার বার্স্ট করালো তখন তাকে আর রান্নাঘরে ডাকা হলো না। বরং সবাই মিলে একটা খাতা বানিয়ে তাতে সহজ সহজ রেসিপি লিখে গুরুজনের কর্তব্য সাঙ্গ করলেন। শপিং আর ব্যাগ গোছানোর দায়িত্ব নিলো বোনেরা। ধিঙ্গী কিংশুকের সাথে চ্যাটিং করে আর ক্যামেরার লেন্স সাফ করে দিব্যি কটা মাস কাটিয়ে দিলো।

    দেখতে দেখতে ধিঙ্গীর বিয়ের দিনটা এসে গেলো। রোগা ছিপছিপে ডাগর চোখের মেয়েটাকে লাল বেনারসি আর লাজুক হাসিতে দেখাচ্ছিল যেন বালিকা বধূ। কিংশুক শুভদৃষ্টির সময়ে হাঁ করে বৌকে দেখছিলো, এই কি সেই ভিক্টোরিয়ায় দেখা মেয়েটা! খানিকক্ষণ বাদে আশপাশের হাহা-হিহির চোটে তার ধ্যানভঙ্গ হলো। ধিঙ্গীদের বাড়িতে বাসরটা খুব জমিয়ে হয়। গান, আড্ডা, অন্তক্‌সারিতে রাত কোথা দিয়ে কেটে যায় কেউ জানে না। শালীরা কিংশুককে ধরলো গান গাইতে হবে। গান কিংশুক গাইতে পারে না, কবিতাও বলতে পারে না। সে বলল "আচ্ছা দাঁড়াও, আমি তো জঙ্গলে থাকি তোমাদের বুনো জানোয়ারের ডাক শোনাচ্ছি।" কিংশুক পোক্ত হরবোলা। সে মুখের কাছে হাত নিয়ে এসে লম্বা একটা শ্বাস বুকে ভরে হুক্কা হুয়া বলে ডেকে উঠল। সানাই তখন থেমে গেছে। বাড়ির বড়রা গোছগাছ করছিলেন। মাঝরাতে বাড়ির মধ্যে শেয়ালের ডাক শুনে সবার পিলে চমকে গেলো। সবাই এমনকি ধিঙ্গীর ঠাকুমা অব্দি কোঁকাতে কোঁকাতে বাসরঘরে ছুটে এলেন। ছেলেরা যারা বাইরে ছিল তারা তো লাঠি হাতে শেয়াল খুঁজতে বেরিয়ে পড়ছিল আর কি। খুব একচোট হাসাহাসির পর কত যে ডাক শোনালো নতুন জামাই! বাঘের ডাক, বাঁদরের ঝগড়া থেকে ঝিঁঝিঁর শব্দ পর্যন্ত। শালা শালী থেকে বাবা কাকারা পর্যন্ত ধন‍্য ধন্য করতে লাগলো শুধু ধিঙ্গীর ঠাকুমা গালে হাত দিয়ে চোখ কপালে তুলে বললেন, "ওমা জামাই তো জংলী"।

    বিয়ের ছদিনের মাথায় বিশাল লটবহর, বড়দের আশীর্বাদ, গলায় ক্যামেরা আর হাতে রান্নার খাতা নিয়ে ধিঙ্গী বরের সাথে তার কর্মক্ষেত্র কাজিরাঙ্গায় এসে পৌঁছাল। মা আসার সময় পইপই করে বলে দিলেন "দেখিস ধিঙ্গী বেশি ধিঙ্গীপনা করিস না, একটু শান্ত হয়ে থাকিস।"

    কাজিরাঙ্গা পৌঁছেই ধিঙ্গী সাপের পাঁচ পা দেখলো। রান্না তাকে মোটেই করতে হয় না--তার জন্য কুক আছে। মালী এসে বাগান সাফ করে, বাজার-হাটও দরকার মতো করে দেয়। আউট-হাউসে কুক বৌকে নিয়ে থাকে। কুকের বৌ বাড়ির যাবতীয় কাজ করে। কাছেই শোনিতপুরে তাদের গ্রাম। কিংশুক রাঁধতে শুধু পারেই না--রান্না তার প্যাশন। তার হাতের বন-মোরগের বারবিকিউ খেলে কেউ জীবনে ভুলবে না। ধিঙ্গী অবশ্য ব্ল্যাক কফিটা নিজেই করে, তার কাজ হলো ধিঙ্গীপনা করে কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে, কখনো হাতির পিঠে কখনো জীপে জঙ্গল চষে বেড়ানো। আর বিকেল বেলায় আশপাশের গরীব বাচ্চাদের বিনা পারিশ্রমিকে লেখা পড়া করানো।

    অসমিয়া ভাষাটা সে মাসখানেকের মধ্যে কাজ চালানোর মতো শিখে নিয়েছে। ‘ধিঙ্গীস ক্লিক’ ভরে গিয়েছে হাতির পাল, মা আর শিশু গণ্ডার, বুনো মোষ, হাই-তোলা বাঘ, চকিতনয়না হরিণ, রঙবাহারি পাখি, প্রজাপতি আর অর্কিডের ছবিতে। আদিবাসী গ্রামে গিয়ে বিশাল পিতলের মাকড়ি পরা আদিবাসী রমণী, মাথায় ঝাঁকা বাঁধা আদিবাসী পুরুষের ছবি বড়ো যত্ন করে ভালোবেসে তুলেছে সে। বিষাক্ত সাপের উপদ্রব এখানে খুব বেশি, কিংশুক তাকে বারবার সাবধান করে দেয়। কোয়ার্টারের বারান্দায় কত সময় শুয়ে থাকে পাহাড়ি গোখরো, হাততালি দিলেই সরসর করে সরে যায়। রাত্রে কখনো কখনো ছিটকে চলে আসে চিতাবাঘ। অচেনা বুনো ফুলের গন্ধ, জঙ্গলের দিক থেকে ভেসে আসা জানোয়ারের ডাক সব মিলিয়ে ধিঙ্গীর বুক শিরশির করে। তার কাজের বৌ লক্ষ্মীর কাছে সে বেশ কটা বিহুর গান শিখেছে। ধিঙ্গী আপন মনে গান গায়—

    "বিহুরে লগন মধুর এ লগন

    আকাশে বাতাসে লাগিল রে... "

    রঙ্গালী বিহুতে লক্ষ্মীদের গ্রামে গিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে নেচেও এসেছে। দেখতে দেখতে স্বপ্নের ডানায় ভর করে একটা বছর কেটে গেল। এর মধ্যে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হিসেবে দেশ বিদেশে অপরূপার বেশ নাম ডাক হয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে তার তোলা ছবি ছাপা হয়েছে। সে একটা আ্যসাইনমেন্ট নিয়ে বর্ষাকালে বান্ধবগড় জঙ্গল আর ফোর্টের ওপরে একটা শ্যুটিং টিমের সাথে স্টিল ফটোগ্রাফিও করে এসেছে। নামের সাথে ধিঙ্গীর ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সও কিছুটা বেড়েছে বৈকি। টাকা জমিয়ে সে কিনে ফেলেছে প্রফেশনাল নাইট-ভিশন ক্যামেরা।

    কিংশুকের অফিসের টাটা সাফারিটা নিয়ে সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ তারা জঙ্গলে ঢুকলো। যদিও এটা আইনবিরুদ্ধ, তবু ফটোগ্রাফার বৌয়ের জন্য এইটুকু নিয়ম ভাঙতে কিংশুকের এতটুকু বাঁধলো না। সন্ধে সাড়ে সাতটাতেই জঙ্গলে গভীর রাত। ভাঙাচোরা চাঁদের আলো আর চাপ চাপ জোনাকির অনৈসর্গিক আলোর মধ্যে ওরা একটা সল্ট লিকের কাছে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। মিনারেল চাটতে আসা জানোয়ারদের ছবি তুলতে পারবে ধিঙ্গী।

    ভালোই চলছিল ছবি তোলা। বাঘ, লেপার্ড, বুনো শুয়োরের বেশ কিছু ছবি তোলা হয়ে গিয়েছিল হঠাৎ একটু দূরে কোথাও ফট ফট করে কালীপটকা ফাটার আওয়াজ হলো। ধিঙ্গী চমকে বললো

    "ওটা কিসের আওয়াজ?" কিংশুকের প্রতিটা পেশী শক্ত হয়ে উঠেছে। অন্ধকারে তার চোখ যেন

    বনবেড়ালের মতো জ্বলছে। দাঁতে দাঁত চেপে কিংশুক বললো "জঙ্গলে পোচার ঢুকেছে, ওটা রাইফেলের আওয়াজ। ওরা স্পটলাইট ফেলে চোখে আলো পড়ে থমকে-দাঁড়ানো জানোয়ারদের জিপে বসে মারে। ওদের প্রধান শিকার গণ্ডার কিন্তু সামনে যা পায় তাই মারে। ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর, রুথলেস ওরা। বাধা পেলে মানুষ মারতেও ওরা দ্বিধা করে না। তুমি না থাকলে আজ দেখিয়ে দিতাম মজা।"

    কোমর থেকে সার্ভিস রিভলবারটা বের করে চেক করে কিংশুক। তারপর এক অদ্ভুত কাজ করে। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে বাইরে, সর্বশক্তি দিয়ে জঙ্গল কাঁপিয়ে হাতির ডাক দেয়। বুনো মদ্দা হাতি খেপে গিয়ে আক্রমণের আগে শাসায় ঠিক এমনি করে। আর একবার নয় মুহুর্মুহু ডাক দিতে থাকে সে। ঝটপট করে কিছু পাখি উড়ে যায়। বাঁদরেরা চিৎকার করতে থাকে। রাইফেলের শব্দ বন্ধ হয়ে যায়, আবছা অপসৃয়মান গাড়ির শব্দ শোনা যায়। কিংশুক গাড়িতে এসে বসে।

    অপরূপা যদিও ধিঙ্গী অবতার তবু সে ভয় পেয়েছে। কিংশুক তার ঠান্ডা হাতটা ছুঁয়ে বললো, "পাগলা হাতিকে সবাই ডরায়। ওরা পালিয়েছে। খুব সম্ভবত সোনা-গাঁওয়ের দিক দিয়ে এসেছিলো।"

    পুরো রাস্তাটা নিজের মধ্যে ডুবে রইলো কিংশুক। ফেরার পথে ঘুমন্ত ফরেস্ট গার্ডদের সে তুলে তুলে মারে আর কি। প্রচুর গালাগালি দিয়ে ওরা যখন বাড়ি ফিরলো তখন মাঝরাত। জামা কাপড় পাল্টে শুতে এসেও ধিঙ্গীর মুখ শুকিয়ে আছে। কিংশুক কিন্তু তার পুরোনো ফুর্তিবাজ মেজাজে ফিরে গেছে। বৌয়ের কাঁধে হাত রেখে সে বললো "ভয় নেই ধিঙ্গীরানী আমি তো আছি। জঙ্গলে কোনো বিপদ হলে আমায় ডাকবে। আমায় চেনো তো আমি টারজান" বলে 'আঁ আঁ আঁউউ' করে টারজানের মতো লম্বা ডাক দিলো। ধিঙ্গীর মুখে এবার অনাবিল হাসি ফুটে উঠলো, সে বরের বুকে মাথা রেখে বললো "জংলী কোথাকার!" তারপর স্বভাবসিদ্ধ তড়বড়ে ভঙ্গিতে বলে উঠলো

    "কালকে রাত্রে কিন্তু আমরা আবার ছবি তুলতে যাবো, হ্যাঁ?"




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments