|| ১ ||
আলাদা করা যায় না গল্পগুলোকে। গায়ে গায়ে লেপ্টে সব। আলাদা করতে গেলে, জোর করে আলাদা করতে গেলে খাবলা অংশ উঠে আসবে আশপাশের গল্পের শরীর থেকে। তারপর মিশে যাবে তোমার নিজস্ব গল্পটির সঙ্গে। মেয়েদের চুলের বিনুনির মতো যেন। তিনগুছি, চারগুছির বিনুনির মতো। একটার সঙ্গে আর একটা জড়িয়ে জমাট। নিপুণ হাতে বাঁধতে গেলেও দু এক গাছি চুল জড়িয়ে যাবেই এক প্যাঁচ থেকে অন্য প্যাঁচে। যেমন বেণুর গল্পের সঙ্গে, বেণুর এই আজকের ঘর-গেরস্তির গল্পের সঙ্গে মিশে যায় ছোটবেলার ভাঙা প্রেমের গল্প। মিলনের সাদামাটা গল্পে ছায়া ফেলে থাকে একটা আবছা স্বপ্নের মতো কি। যে গল্পটা বেণু আর মিলনের জীবন দুটো মিশিয়ে বোনা, মনে হবে দুধে চিনি গুলে গেছে একদম, সেই দুধ জুড়োলে কিন্তু ওপরে আর একটা সরের আস্তর। খুব সাবধানে তুলতে গেলেও পুরোটা উঠবে না কিছুতে। ছেঁড়া ছেঁড়া থেকেই যাবে, ভেসে বেড়াবে দুধের ওপর।
|| ২ ||
বেণু রোদের অপেক্ষায় ছিল। কড়া না হোক, একটু গরম ভাপের মতো অন্তত। ঘুরে ফিরে চিলতে বারান্দায়। বারবার। বৃষ্টি দেখছিল। বাড়া, কমা। ধরে আসছে কিনা। আকাশের পাঁশুটে ভাব। আকাশ আর কতটুকু। সরকারি আবাসনের চারতলা বাড়িগুলো গায়ে গায়ে। বেণুর তিনতলার বারান্দার অর্ধেকের বেশি জুড়ে গ্যাসের সিলিন্ডার, বাক্স, পুরোন দেরাজ, ওপরে ডাঁই করা শুকনো কাপড় জামা। আকাশ আর কতটুকু ধরা পড়ে? তুলসী, বোগেনভেলিয়া, পাথরকুচির টবগুলো ও গুঁজে রেখেছে নিজেদের ঘেঁষাঘেঁষি ওরই মধ্যে। আলো হাওয়া ওদেরও দরকার। যেমন দরকার দড়িতে মেলা ভিজে কাপড়গুলোর। বেণুর শাড়ি, সালোয়ার পেটিকোট, তুয়ার ফ্রক, স্কুল ইউনিফর্ম, টী শার্ট, বেণুর বর মিলনের অফিসের প্যান্ট জামা, পাঞ্জাবি, পাজামা। সোঁদা গন্ধ বারান্দায়। ভিজে কাপড়ের। বারান্দার রেলিং থেকে একটু ঝুঁকে, কোমরের ওপর থেকে শরীরটা বিপজ্জনক ভাবে বার করে, ঘাড় বাঁকিয়ে আকাশটাকে ধরতে চাইছিল বেণু। রোদ খুঁজছিল। কড়া না হোক, গরম ভাপের মতো অন্তত।
রোদের অপেক্ষায়, শুকনো দিনের অপেক্ষায় থাকে বেণু বছরের এই তিন সাড়েতিন মাস। প্রত্যেক বছর। এই করে আটতিরিশ। আর দুবছর পর বুড়ো হয়ে যাবে। মিলন বলে, পাগলি তুই একটা। চল্লিশে কেউ বুড়ো এখন? চাকরিকরা মেয়েরা, আমাদের অফিসের, পথে ঘাটে- চল্লিশে তো খুকি যেন। তুয়ার যেরকম জামা কিনলাম গেলবার পুজোয়, শুধু মাপে বড় খানিক। পঁয়তিরিশ, ছত্রিশের আগে তো বিয়েই করে না। তারপর আজ সিঙ্গাপুর, কাল দুবাই। মিলনের অফিসের মেয়েরা। দেখেনি বেণু। গল্পই শুধু। মিলন বলে। মিলন আরেকটু নিচু তলার। খানিকটা নিশ্চিন্ত যেন বেণু। অফিসের মেয়েরা, যাদের গল্প মিলন বলে, তারা অন্য বৃত্তের সেটা বোঝে। ছুঁয়ে যায় কখনও কোন বিন্দুতে কিন্তু ভিন্ন কেন্দ্রে, ভিন্ন ব্যাসের বৃত্ত। খানিকটা নিশ্চিন্ত তাই বেণু। অফিসে খাওয়াদাওয়া হলে না খেয়ে নিয়েও চলে আসে কখনও মিলন। তিনজনে ভাগ করে রাতে রুটির সঙ্গে। অন্য তরকারির সঙ্গে — বুঝলি তুয়া, সামনের জন্মদিনে এখানেই নিয়ে যাবো এবার। রেস্তোঁরায় বসে খাবার মজাই আলাদা।
বেণু জানে মিলনও রোদের অপেক্ষায়। এই করে বিয়াল্লিশ। আর তিন বছর পর বুড়ো হয়ে যাবে। মুখে অবশ্য বলে, দুর, পঁয়তাল্লিশ আবার বয়স হল ব্যাটা ছেলেদের? তুয়াকে লুকিয়ে চিমটি কাটে বরের কনুইতে। ফিসফিস করে বলে বুড়ো হলে তো বাঁচি আমি।
|| ৩ ||
মিলন আলোর অপেক্ষায় ছিল। চড়া আলো নয়। পরিষ্কার অথচ আবছায়া যেন খানিক। স্বপ্নের মতো আলোছায়া খেলা। অন্যরকম হোক দিনগুলো একটু, আর একটু ঝলমলানো, একটু বড় মাপের। মাইনে বাড়লো না তেমন এবছরেও। আবার অপেক্ষা। দুপুরে কাজ-টাজ সেরে বাংলা কাগজটা নিয়ে বসে একটু বেণু। ঝিমোয়, পড়ে। খবর-টবর কিছু না। সিনেমা সিরিয়ালের মেয়ে পুরুষদের ছবি, কেচ্ছা। শাড়ি, সাজের দোকান-টোকান। আর রাশিফল। মিলন পেছনে লাগে। বরাবর। — দিনটার আর্ধেক কাটিয়ে কেমন যাবে আজকের দিন দেখা মানে তো আর্ধেক পয়সাই জলে। বেণুর মজার যুক্তি। — খারাপ কিছু থাকলে মন খারাপটাও তো আর্ধেক। মনে হয় আর কয়েকটা ঘন্টা কাটালেই তো কাল সকাল। কাল নিশ্চয়ই ভালো কিছু। সকালে কাগজটা নিয়ে বসে মিলনও একটুক্ষণের জন্য। হেডলাইনে চোখ চালিয়েই বেণুর দেখাদেখি রাশিফলে। — তোমার তো মীন। মীনগণ হীন হয়ে... আরে শোন। তৃতীয় ব্যক্তিকে ঘিরে দাম্পত্য অসন্তোষ। বুকটা কেঁপে ওঠে বেণুর। আচমকা রেগে যায়। — তৃতীয় ব্যক্তি না ব্যক্তিনী? তোমারও তো মীন। ধরেই নিলে ঝামেলা আমার তরফের। আমার তো মনে হয় তোমারই ব্যাপার কিছু। লুকোন ঘটনা। চেপে গেছ। অবাক হয়ে যায় মিলন। কাগজটা রেখে উঠে আসে। হাত রাখে বেণুর পিঠে। কি বলছ কিসব আবোল তাবোল। চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় বেণুর। কিছু না বলে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। — টিফিন দিতে হবে না। বাইরে খেয়ে নেব দরকার হলে। রেগে যায় মিলনও। বেণু কিছু বলে না বলে রাগটা বেড়ে ওঠে। স্নানে ঢুকে যায়। দরজার সামনে রাখা পাপোশটায় লাথি মারে একটা। জমে থাকা ধুলো ওড়ে খানিক। নাকে মুখে ঢুকে যায়। কাশি আসে। সজোরে বন্ধ করে স্নানঘরের দরজা। মাথায় জল ঢালে। গায়ে হাতে পায়ে। রাগ পড়ে গেলে নিজেই হেসে ফেলে। বেণুকে বলে, লেখাটা কিন্তু মিলে গেল খানিকটা — দাম্পত্য অসন্তোষ। কাউকে ছাড়াই। খামোকা।
|| ৪ ||
খামোকা নয়। বেণু জানে। আর ভয় করে ওর। আঠেরো বছর পর মিলনের মুখে তৃতীয় ব্যক্তির কথা শুনে প্রভাতদা যখন ফিরে এল আচমকা ভয় পেয়ে গেল বেণু। আঠেরো বছর আগে শেষ দেখা। এয়ারপোর্টে যেতে পারেনি। কোন উপায়ই ছিল না। সময় হিসেব করে ছুতো করে বাজারের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়িটা, ভাড়া করা সাদা অ্যাম্বাসেডর গাড়িটা ওকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিল। প্রভাতদা ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে। যত দূর দেখা যায়। সামান্যই সময়। বাড়িতে কিছু বলে যায়নি। পা ধুয়ে ঘরে ঢুকতেই মা বলেছিল, হ্যাঁরে বিশ্বাসদের ছেলেটা যে শুনেছিলাম বিলেত না আমেরিকা কোথায় যাবে — চলে গেছে? জানি না বলে বিনুনিটা খুলে চিরুণি চালায় চুলে জোরে জোরে। জট পড়েছিল। চিরুণি টানতে গিয়ে ছিঁড়ে যায় ক-গাছি চুল। ব্যথায় জল এসে যায় চোখে। তেল দিতে গিয়ে দেখে বোতল খালি। রাগতে গিয়ে দেখে হারিয়ে গেছে রাগটাই। তখন শ্যাম্পু ঢালে মাথায়। ফেনা তোলে। কল খুলে জলের নিচে মাথা দেয়। স্নানঘরের মেঝে জুড়ে জল আর ফেনায় বাহারি নক্সা ফোটে। মিলিয়ে যায়।
তিন বছরের মাথায় ফিরেছিল প্রভাত। বিয়ে ঠিক হতে। বিদেশেই আলাপ। পাঞ্জাবি না মারাঠি মেয়ে। বেণুর বিয়ে হতে আরও দুবছর প্রায়। কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে। কথা পাকা হতে নিজেই ফোন করেছিল মিলনকে। দেখা করেছিল আলাদা। প্রভাতের কথা, কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাবার নাম করে তারাপীঠে লুকিয়ে সিঁদুর পরার কথা, তিনদিন হোটেলে কাটানোর কথা — সবই বলেছিল মিলনকে। বেণুর ছোটখাটো, সাদামাটা চেহারার সঙ্গে ঘটনাগুলো মেলাতে হোঁচট খেয়েছিল মিলন। সামলে নিয়ে খোলাখুলি মিলনও। — তাহলে প্রভাত বিশ্বাস ল্যাং মারলো বলেই মামুলি মিলন সাঁতরা? — একদম। সময় নিয়ে ভাবো। যদি রাজি হও তবেই। কিন্তু পুরোন কথা তুলবে না আর কোনদিন। নমো নমো করেই হয়েছিল বিয়েটা। বাবা রিটায়ার করে গিয়েছিল। পেনশনও চালু হয়নি তখন। আর মিলনের সামান্য চাকরি।
সময় দিয়েছিল বেণু। ভালো করে ভেবে মত জানাতে বলেছিল। মিলন সময়ও নেয়নি। ভাবেওনি কিছু। এত স্পষ্ট করে লুকোন প্রেম, বিয়ে, তিনদিন অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর কথা বলেছিল বেণু, জড়তাহীন যেন সদ্য দেখে আসা সিনেমার গল্প। পুরোটা বিশ্বাস করতেও পারেনি যেন তখনই। বেণুকে বাতিল করার আর কোন জায়গাই ছিল না। পরে বুঝেছে বেণুর সূক্ষ্ম চালটা। কতটা হিসেব করে দান ফেলেছিল বেণু বুঝতে সময় লেগেছে। শর্ত মেনে চলেছে। ওসব খাতাকলমের শর্ত-টর্তর কথা আসলে মনেই ছিল না মিলনের। নিজেকে ঘষে মেজে খানিকটা সাব্যস্ত করার চেষ্টায় ছিল সে সময়ে পুরোপুরি। ছেড়েছে কিছু বেণুও। মিলে-জুলে এঁটে গেছে দুটো জীবন। পরে তিনটে। প্রথমদিকে আবছা একটু সাবধান ভাব। বেণুকে দেওয়া কথা। হানিমুনে জয়পুর। কিছুটা জমানো টাকা, অফিসের কো-অপারেটিভের লোন কিছুটা। যাওয়া আসা প্লেনে। দামী হোটেল। রাতে বিছানায় সব মিটিয়ে মুখে এসেই গিয়েছিল কথাটা — প্রভাত বিশ্বাসের সঙ্গে তারাপীঠের হানিমুনটা কি এর চেয়ে বেশি থ্রিলিং ছিল? সামলেছে। এরকম আরও বহুবার। আস্তে আস্তে ভুলে গেছে সব। ছায়া হয়ে মিলিয়েছে তৃতীয় ব্যক্তি। তবু আঠেরো বছর পর কোন চোরা পথে আচমকা প্রভাত বিশ্বাস।
|| ৫ ||
রোদে সেঁকা উষ্ণ জীবন যে বেণুর নয় তা স্থির হয়ে গিয়েছিল সেদিনই। প্রভাতের সঙ্গে জীবন জড়ালে কি কাঙ্খিত রোদ থাকতো বরাবর। বলা যায় না সে-কথাও। বাড়ি ফিরে শ্যাম্পু ঘষেছিল কেনই বা সে? তেলের খালি শিশিটাই কি সবটুকু? ফেনা তুলে তুলে, ফেনা তুলে তুলে মেঘের পাহাড় জমিয়েছিল। সেই পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল বেণুর মাথা মুখ, চোখ, চুল, গোটা শরীর, ভাঙা মন। ভাবছিল এই মেঘের ভেতর দিয়েই চলে যাবে প্রভাতের প্লেন। ঠিক এই রকমই যে ভেবেছিল সেদিন তাও তো নিশ্চিত নয়। মা ধাক্কা দিচ্ছিল দরজায় — ঘুমিয়ে পড়লি নাকি স্নান করতে গিয়ে?
আঠেরো বছর পরে একটু একটু করে মিনিট সেকেন্ড জুড়ে জুড়ে ফিরিয়ে আনছিল ঐ দিনটা। সকাল থেকে মেঘলা ছিল আকাশ। প্রথমে হাল্কা মেঘ। ক্রমশ স্তরের পর স্তর জমছিল। গুমোট, ঘাম। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল বেণুর। হাওয়া পাচ্ছিল না যেন। ঐ মরামরা পাঁশুটে আলোর মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারের সামনে। ছাতাটা ও ঢুকিয়েছিল ব্যাগে মনে করে। ময়লা মতো সাদা একটা ঢাউস গাড়িতে চলে গেল প্রভাতদা। আঠেরো বছর পর আজ বেণু খুঁজছিল তন্ন তন্ন ঠিক কতটুকু দুঃখ ছিল সেদিন বুকে? কতটুকু অদম্য ইচ্ছে ঐ গাড়িতে প্রভাতের সঙ্গী হবার? যার সঙ্গে মিছিমিছি বিয়ে মতো কিছু একটা। বিয়ে আবার কী? এক ধ্যাবড়া সিঁদুর। হোটেলে রাত কাটানোর লাইসেন্স। সিঁদুর তো ধুয়েই ফেলেছিল তারাপীঠ থেকে বাড়িমুখো হবার আগেই। ছাপটুকু, কি সিঁদুরের, কি সেই দিনগুলোর বা রাতগুলোর, কি প্রভাত বিশ্বাসের শরীরের, তাড়াহুড়োয় অসম্পূর্ণ আনন্দহীন দেহ বিনিময়ের, বিষাদের যত ছাপ — হাল্কা হতে হতে মিলিয়েই গেছে কবে। থেকে গেছে শুধু সেদিনের ঐ মেঘগুলো। আকাশে জমেছিল যা আর ওর স্নানঘরে শ্যাম্পুর ফেনায় ফেনায় যা। আটকে রইলো ওর আকাশে, মিলনের আর তুয়ার আকাশেও। বরাবরের মতো।
রোদের আশায় থেকে থেকে বেণু দেরি করলো তুয়াকে আনতে। আলোর অপেক্ষায় থেকে দেরি করলো মিলনও। তুয়া এল যখন বিয়ের পাঁচ বছর পেরিয়েছে। বেণুর শরীর আর মন জুড়তে সময় গেল। মিলন মুখে কথা দিয়েছিল বেণুকে। পুরোন কথা না তোলার শর্তে রাজি হয়ে বিয়ে। মনকে জোর করে শিখিয়ে পড়িয়ে সহবত শেখানো যায়। কিন্তু শরীর সায় দেয় না। বেণু জোর করেনি। সময় তো ওরও লেগেছে। ততদিনে হাল্কা কানাঘুষো। আত্মীয়দের গায়ে পড়া উপদেশ। যেমন হয়। বেণু হঠাৎ ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করল। একটু আধটু ডাক্তার-টাক্তার দেখানো। মামুলি কিছু ওষুধপত্র। তুয়া এল। আলো আর রোদ নিয়ে। তবে স্থায়ী হল না। আবার সেই মরা আলো। বারান্দা থেকে ঝুঁকে ঝুঁকে রোদ মাপা। অথচ বেণু আর মিলন ভেবেছিল মেঘলা দিন, কম আলোর দিন বরাবরের মতো শেষ বুঝি।
|| ৬ ||
বেণু রোদের অপেক্ষায় ছিল। দেখতে দেখতে চল্লিশ। আর তিন চার বছর পরে বুড়ো হয়ে যাবে। মিলন পরিষ্কার একটা আলোর অপেক্ষায় থেকে পঁয়তাল্লিশ। আর পাঁচ বছর পর বুড়ো হয়ে যাবে মিলন। তুয়া স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বন্ধুদের বেড়ানোর গল্প বলে। ছবি দেখায়। বলে, চলনা যাই আমরাও কোথাও। সামনের গরমের ছুটিতে যাবে বাবা? তাজমহল, জয়পুর, আন্দামান? কোথাও নিয়ে যাওনা আমাকে। তোমাদের বেড়ানো মানে শুধু দীঘা আর পুজোয় দেশের বাড়ি। দীঘা আর যাবো না আমি। কি ঘুপচি আর গুমোট ঐ হোটেলের ঘর। আর দেশের বাড়িতে সন্ধে হল তো ঝুপুস অন্ধকার। কি টিমটিমে আলো। ঐ অন্ধকার ভালো লাগে না আমার একটুও। বেণু চমকে ওঠে। আলোর তালাশ কি তবে শুরু হয়ে গেল তুয়ারও?
মিলন বলে এই দেখ না। যাবো এবার ঠিক। প্রত্যেক বছর। এবার প্রমোশন বাঁধা। গাড়ির লোন। দুবছরে একবার যেখানে খুশি বেড়াতে যাওয়া। কোথায় যাবি ঠিক করতো মা। তুয়া কম্পিউটার খুলে বসে যায়। কম্পিউটার স্ক্রীনের সাদা আলোটা জোরালো। আরও জোরালো। বেণু বারান্দায় বেরিয়ে ঝুঁকিয়ে দেয় শরীরটা বিপজ্জনক ভাবে। বাড়িয়ে দেয় হাত। আর একটু, আর একটু যদি বাড়াতে পারে হাত, তাহলেই।