সুরমা আর দিবাকর সেনগুপ্ত একেবারে ডাকসাইটে বড়লোক। দিবাকর আইটির লোক। দেশে বিই কলেজ থেকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সত্তর সালের মাঝামাঝি আমেরিকায় এসেছেন। প্রথমে এক ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করেছেন। তারপর কি ভাবে ইনফরমেশন টেকনোলজির সম্ভাব্য রমরমা হওয়ার অগ্রিম খবর তাঁর কানে বা ব্রেইনে এসে লাগে। দিবাকরের মত যারা প্রায় একই সময়ে এ দেশে এসেছে তারা একই ঘানি টেনে চলেছে। দিবাকর কিন্তু লাইন চেঞ্জ করে কম্প্যুটার সায়েন্স পড়তে ঢোকেন। চাকরি করে যা জমেছিল তাই পুঁজি করে আবার নতুন করে পড়াশুনো শুরু করা। কি টানাটানিই না গেছে তখন।
ডিগ্রী শেষ করার পর অল্প কয়েক বছর চাকরি করে নতুন লাইনে একটু এক্সপিরিয়েন্স জোগাড় করে নেওয়ার পরই একটা আইটি সার্ভিসের কোম্পানি খুলে বসেছেন। যেন ভবিষ্যতে কি ঘটতে চলেছে তা তিনি দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন। কয়েকবছর পরেই সেই কোম্পানি একেবারে ফুলে ফেঁপে একাক্কার। দিবাকরের বাবা ছিলেন ছোট ব্যবসায়ী। পুরোন দিনের লোক – আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু কাজের বেলায় তার কিছু হয়নি। বহুবার ব্যবসায় ঘটি ডুবেছে আবার ভেসে উঠেছে – তাই নিয়ে চিরকালই ছোট ব্যবসায়ী হয়ে থাকা জীবনের শেষ পর্যন্ত। ।
দিবাকর ছোটবেলায় মার তাড়নায় বাবার ব্যবসা দেখার কথা চিন্তা না করে অধ্যয়নেই লক্ষ্মী মেনে নিয়ে পড়াশুনো করেছেন। কোনদিনই ভাবেননি যে ব্যবসার পোকা মাথায় ঢুকবে। কিন্তু তিনি চন্দ্র না হলেও দুষ্ট রাহুর মতো বাবার প্রভাব তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। এক ব্যবসার লাভের পুঁজি থেকে অন্য ব্যবসা, তার থেকে আর এক। এইভাবে বর্তমানে তিনি নানান ব্যবসার মালিক। পয়সার কোন লেখাজোখা নেই। যেন বাবার ব্যবসায় অসাফল্যের শোধ তিনিই নিচ্ছেন।
সুরমা আর দিবাকরের কলেজে থাকতে প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল। সুরমার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও কোনদিনই কাজ করেননি। আর এ-ব্যাপারে কথা উঠলেই উনি মুচকি হেসে বলেছেন ‘এ সাকেসেসফুল ম্যান অলওয়েস হ্যাস এ ডেডিকেটেড ওম্যান বিহাইন্ড হিম।’ দিবাকর একথা অনেক বার শুনেছেন আর ঘাড় নেড়ে সায় দিয়েছেন। চাকরি করতে করতে হঠাৎ দিবাকর যখন ইনফরমেশন টেকনোলজি নামক ওয়াইল্ড গুজ চেইস করার জন্য বুড়ো বয়সে আবার পড়াশুনো শুরু করেন তখন সুরমা খালি উত্সাহ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, জমিয়ে রাখা খুদ-কুঁড়ো দিয়ে সংসার চালিয়েছেন। এই পর্যায়ের শেষ দিকে মেয়ে সমাপ্তি বা খুকি এসেছে। তাকে মানুষ করেছেন। কোন কোন সময়ে মনে হয়েছে এ ভাবে চলতে পারে না। তবু তিনি শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন যাতে নৌকার ভরাডুবি না হয়। পরে সেই নৌকা ফুলে-ফেঁপে উঠলেও তিনি নিজের জায়গায় অটুট রয়ে গেছেন।
সুরমা সুগৃহিণী, আবার সু-রাঁধুনিও। রান্না করা আর লোককে খাওয়ানো সুরমার জীবনের প্যাশন। রান্নার হাত সত্যিই খুব ভালো। মেয়ে তো তার বন্ধুদের কাছে মার রান্নার প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ। স্বামী দিবাকর বলেন –‘তুমি হলে আমার পাঞ্চালী, তবে তার ছিল পাঁচ বর। তোমায় কিন্তু একজনকে বরকে খাইয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’ সুরমা একজন স্বামীকে খাইয়ে সন্তুষ্ট হলেও সবাইকেই খাওয়াতে ভালবাসেন। তাই অবস্থা একটু ভালো হতেই চেনা, অর্ধ-চেনা থেকে প্রায় অচেনা অনেককেই তাঁর শ্রীহস্তের রান্না খাইয়েছেন।
রান্নার ব্যাপারে সুরমার হাব-ভাবটা হল প্রায় ফরাসী সেফদের মত। রান্না করা আর সেই রান্না পরিবেশন করা একটা আর্ট। সুরমার বাবা ছিলেন আর্টিস্ট। ছোটবেলায় ক্যানভাসে একটার পর আর একটা রং চড়িয়ে এঁকে যেতেন কত ছবি। সুরমা সামনে বসে দেখতেন। কোন কোন সময় মনে হত, না:, এটা ঠিক হল না। আবার সেইটাই যখন অন্য রঙের সাথে মিলে-মিশে ছবি হয়ে উঠত, তখন অবাক হয়ে তারিফ করার পালা। অন্যদিকে দেশে থাকতে মার কাছে শুনতে হয়েছে – ‘না, না, রান্না করবি কি! রান্না করার জন্য তো লোক আছে। তার চেয়ে পড়াশুনো কর।’ তাই রান্না-বান্না শেখার সুযোগ বিশেষ হয়নি, তার আগেই বিয়ে হয়ে গেছে দিবাকরের সাথে। সেকালের নিয়ম অনুযায়ী বিয়েতে উপহার হিসাবে পেয়েছিলেন বেশ কয়েকটা বই, যার মধ্যে ছিল রবিঠাকুরের ‘বিচিত্রা’, শঙ্করের ‘চৌরঙ্গী’, আর বেলা দে ও লীলা মজুমদারের ‘সহস্র এক রান্না’।
সুরমা বিয়ের পর বিদেশে আসার সময় রান্নার বইটা আনতে ভুল করেননি। কিন্তু শুধু বই থাকলে কি রান্না হয়! স্বামী দিবাকরের ওপর অনেক এক্সপেরিমেন্ট করেছেন তিনি। সুরমা নিজে অনেক রান্না মুখে দিতে পারেননি, কিন্তু দিবাকর সব কিছু খেয়েই বলেছেন – ‘বা;, বেশ তো হয়েছে।’ আস্তে-আস্তে আনাড়ি সুরমা রান্না শিখেছেন। সে রান্না খেয়ে এখন লোকে বাহবা দেয়। কিন্তু তাঁর কোন রান্নাই রান্নার বইয়ের বাঁধা পথে চলে না। তিনি প্রচলিত রান্নার উপাদান ভেঙে-চুরে নিজের স্টাইলে রান্না করেন। মেয়ে বলে ‘মা, তুমি আমাদের বাড়ির গ্যুর্মে সেফ।’ এইতো সেদিন মাছ রাঁধতে গিয়ে দেখেন রেফ্রিজারেটরে বেশ খানিকটা মাশরুম রয়েছে। উঠিয়ে না দিলেই নয়। কড মাছের ফিলেটা মাঝারি সাইজে কেটে, তার সাথে মাশরুমের ছোট-ছোট অংশ আর ক্রিম দিয়ে বেক করতে বসিয়ে দিলেন। একটু মিষ্টি-মিষ্টি। তাই খেয়ে দিবাকর আর খুকি ‘কি ভালো হয়েছে, কি ভালো’ বলে একেবারে একাক্কার। সুরমা ছোটবেলায় বাবাকে ছবি আঁকতে দেখেছেন, কিন্তু আর্টিস্ট হতে পারেননি। কিন্তু বাবার কাছে শেখা রঙের জাদু এখন রান্না আর তার পরিবেশনের জাদুতে এসে দাঁড়িয়েছে।
সুরমা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন কোন রান্না পরিবেশনে যদি রুচিবোধ না থাকে সে রান্নার স্বাদ ঠিকমত পাওয়া যায় না। আর সেই রান্না আর তার রুচিশীল পরিবেশনের অন্যতম অঙ্গ হোল যথাযথ ও সুরুচিপূর্ণ বাসন-কোসন। দিবাকরের শুরু করা আইটি কম্পানিটা সবে তখন লাভের দিকে ঝুঁকেছে। তারা অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে সাবার্বে সবে ছোট একটা বাড়ি কিনেছেন। বাড়ি ছোট হলে কি হবে কিচেনটা বেশ ভালো সাইজের। দিবাকর হেসে বলেন – ‘এবার তুমি যত ইচ্ছে রান্না করো, যত ইচ্ছে লোককে ডেকে খাওয়াও।’ কিন্তু তা করতে তো ভালো বাসন-কোসন লাগে। সুরমা চুপ করে থাকেন। নতুন বাড়িতে ফার্নিচার কেনারই সামর্থ নেই তো বাসন-কোসন!
সেদিন দিবাকর-সুরমা শহরে নতুন এসেছে বলে ডা: নন্দীদের কাছ থেকে নেমতন্ন এলো। ডা: নন্দীরা কাছেই এক বর্ধিষ্ণু টাউনে থাকেন। বেশ মালদার লোক। এদিকে সুরমারা তখন জাতে ওঠা থেকে বহুদূর। তাই বেশ কিছুটা ভয়ে-ভয়ে, এ দেশের বাঙালি রীতি অনুযায়ী হাতে একটা গিফ্ট নিয়ে ডা: নন্দীর বাড়ি গিয়ে হাজির। বাড়ি দেখেই ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। অন্য সবাইয়ের মত সুরমা-দিবাকরেরও তাই অবস্থা। কিন্তু সুরমার চোখ আটকে গেলো কিছুক্ষণ পর ডাইনিং রুমে এসে, সেখানকার টেবিলের দিকে তাকিয়ে।
মিসেস নন্দী বাইরের থেকে খাওয়া আনিয়েছেন। সুতরাং তা নিয়ে বিশেষ তারিফ করার কিছু নেই। তবে ডিনারে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ডিসপোসেবল থালা-গ্লাস-কাটলারি দেওয়ার বদলে এখানে সার্ভিং বোওল থেকে খাওয়ার প্লেট, চায়ের কাপ-প্লেট থেকে জল খাওয়ার গ্লাস, মায় সিলভারওয়্যার কোন কিছুতেই প্ল্যাস্টিক বা সিন্থেটিক জিনিষের কোন নামগন্ধ নেই।
মিসেস নন্দী খুব এনভায়রনমেন্ট-কনশাস। তাই বেশ গর্ব করেই বললেন –‘আমাদের বাড়িতে কিন্তু ডিসপোসেবল জিনিসপত্র একদম পাবে না। জানো তো তারা একেবারে এনভায়রনমেন্টাল নাইটমেয়ার।’ তারপর বলে চললেন ডিসপোসেবল স্টাইরোফোমের থালা-গ্লাস, প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ কেমন পরিবেশ দূষণ করে চলেছে, কারণ তাদের কোন ক্ষয় নেই। কেমন করে এইগুলো নদী-নালা সমুদ্রে গিয়ে জমছে, আর এসব গলায় আটকে কেমন করে জলজ প্রাণীরা শেষ হচ্ছে।
সুরমার কিন্তু মিসেস নন্দীর কোথায় কোন কান নেই। তিনি যে এনভায়রনমেন্ট-কনশাস নন তা মনে করার কোন কারণ নেই। কিন্তু তাঁর মন আটকে রয়েছে অন্য জায়গায়। সাধারণত লোকে নিজেদের যা নিয়ে উত্সাহ সেটাই দেখে, অন্য কিছু প্রায় চোখেই পড়ে না। তাই সুরমা এই বাসন-কোসন, সিলভারওয়্যার, টেবিল সেটিং এসব ছাড়া যেন জগতে আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না, শুনতেও পাচ্ছেন না। এ যেন অর্জুনের লক্ষ্যভেদের মত, মাছের চোখ ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছু নেই।
সুরমা আগে ‘বেটার হোমস’ ম্যাগাজিনে রয়্যাল ডলটন সিরামিক টেবলওয়্যারের ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সুরমা দেখেই চিনতে পেরেছেন। এখানে আজ সেই রয়্যাল ডলটন বোওলে খাবার সার্ভ করা থেকে শুরু করে কাপ প্লেট সবই সেই বিখ্যাত বোন চায়না মেকারের তৈরি। সুরমা উল্টে দেখেছেন সব কাপ-প্লেটের পিছনে মডেলের নাম, কোন সালে তৈরি, আর মেকারের ইনসিগনিয়া রয়েছে, আর রয়েছে এই মডেলের ছোট্ট একটা ছবি।
সুরমা একেবারে মুগ্ধ – আজও খানদান বলতে রয়্যাল ডলটনের পোর্সিলেন টেবলওয়্যার। একদিন ব্রিটিশ রাজা-রাজড়ারা এই জিনিস কমিশন করত। এখন যদিও যথার্থ মূল্য ধরে দিলে এটা রাজা-রাজড়া ছাড়াও সকলের কাছেই লভ্য, কিন্তু এর নামডাক আজো কমেনি। আর এদের শোভাই বা কী! সবাই যখন খেতে ব্যস্ত সরমা তখন রয়্যাল ডলটনের ভালবাসায় মগ্ন। এই মডেলটার নাম ‘মুন লাইট রোজ’। ঝকঝকে সাদা প্লেটের ধার দিয়ে সোনালী বর্ডার দেওয়া। আর তার তলায় আঁকা ঠিক যেন চাঁদের আধো-আলো, আধো-অন্ধকারে নীলচে-সবুজ ঘন পাতার মধ্যে পূর্ণ প্রস্ফুটিত একটা গোলাপ। তার গায়ে চাঁদের আলোর হালকা গোলাপী ছায়া লেগেছে। মনে হচ্ছে যেন কাছে গেলেই সেই গোলাপের সুগন্ধ পাওয়া যাবে।
সুরমার মগ্নতা ভাঙ্গলো যখন একজন বলে উঠল –‘আরে সুরমাদি, তুমি কিছু না খেয়ে ফাঁকা কাপ-প্লেট হাতে নিয়ে কি করছো?’ সুরমা এই অজ্ঞকে কি করে বোঝান যে একদিন ইংল্যান্ডের রাজা-রানী আর অন্য রয়্যালটিরা এই বিখ্যাত কারিগরদের হাতে তৈরি টেবলওয়্যারে খেয়েছে, আর আজ তারা খাচ্ছেন। অরসিকের কি এ রস গ্রহণ করা সম্ভব! ‘এই নিচ্ছি, এই নিচ্ছি’ বলে সুরমা সরে গেলেন।
সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার সময় সুরমা দিবাকরকে বললেন - ‘হাঁগো, আমাকে একটা সেট কিনে দেবে? তবে এই নীল রঙেরটা নয়। আমি ম্যাগাজিনে যেটা দেখেছি তার রং গোলাপী।’
‘কিসের সেট?’ দিবাকরের আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন।
‘কেন, রয়্যাল ডলটনের। যে থালায় তুমি খেলে। তুমি লক্ষ করোনি? কি অদ্ভুত সুন্দর। আমি খাবো কি, কাপ-প্লেট এসবের শোভা দেখতে-দেখতেই আমার পেট ভরে গেছে। জানো, ওই সব বাসনপত্রে খাবার রাখলে আর খেতে দিলে আমার রান্নার স্বাদই পালটে যাবে।’
এ কথায় দিবাকর হেসে ফেললেন – ‘না, আমি ভালো করে দেখি নি। কিন্তু বাসন-পত্রে কি খাবারের স্বাদ পাল্টায়।’
‘হাঁ, পাল্টায় স্যার, পাল্টায়। দাও না কিনে আমায় একটা।’
এইবার দিবাকর দেখলেন তিনি সত্যিই বিপদে পড়েছেন। বৌ কোনদিন কিছু আবদার করেনি। তাই আজকেরটা ফেলে দেওয়া সত্যিই মুশকিল। কিন্তু এসব জিনিষ তো সস্তায় পাওয়া যায় না। সবে বাড়ি কেনা হয়েছে। এখন টাকা আসবে কোথা থেকে! মাসের শেষে ক্রেডিট কার্ড বিল তো লিমিট ছুঁই-ছুঁই। তাছাড়া মেয়ে সামনের বছর কলেজে যাবে। তার কলেজের জন্য খরচের কথা মনে হলে মাথা গরম হয়ে যায়। তার ওপর রয়্যাল ডলটনের সেট কেনাটা প্রায় গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মত ব্যাপার আর কি।
‘আচ্ছা, দেখছি।’ দিবাকরের উত্তর। আপাতত বৌয়ের হাত থেকে বাঁচা গেছে!
মাসচারেক বাদেই তাদের অ্যানিভার্সারি। অন্যবারের মতো এবারও তিনজনের বাইরে খেতে যাওয়ার কথা। খুকি বলে উঠলো –‘মম, হ্যাঁ, ইট ইস মাই ট্রীট টুনাইট। দ্যাট উইল বী মাই অ্যানিভার্সারী গিফট ট্যু ইয়ু।’
‘ভেরি নাইস থট। থ্যাংক ইয়ু। কিন্তু তুই পয়সা পাবি কোথায়?’- সুরমার প্রশ্ন।
‘ডোন্ট ওয়ারী মম। রিমেম্বার, আই মেড সাম মানি লাস্ট সামার ওয়ার্কিং ইন এ গ্রোসারি স্টোর।’
‘আচ্ছা বাবা তাই হবে।’
তার আগেই সেদিন দুপুরে বাড়িতে মস্ত ও ভারি একটা প্যাকেজ এসে হাজির। বাবা-মেয়ে কেউ বাড়ি নেই। সুরমা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন প্যাকেজটা তাকেই পাঠানো। খুলতে একটু কষ্টই হোল, কিন্তু খুলতেই সুরমার চক্ষু একেবারে চড়কগাছ। সামনে ঝক-ঝক করছে গোলাপী ফুল-ফুল আঁকা রয়্যাল ডলটনের টেবলওয়্যার সেট। সুরমা নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। মনটা একটু শান্ত হতেই মনে-মনে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলেন। অনেক চুমো দিলেন। সুরমা স্বামীকে অনুরোধ করেছিলেন বটে, কিন্তু তিনি জানতেন যে সত্যি-সত্যিই এ কেনার অবস্থা তাদের এখন নেই। মনে মনে অনুরোধটা করার জন্য একটু লজ্জিতও হয়েছিলেন। তাই এই সারপ্রাইসের জন্য তিনি একেবারে প্রস্তুত ছিলেন না।
এর পর কয়েক বছর কেটেছে। তাদের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, ছোট বাড়ি থেকে মস্ত বাড়িতে মুভ করা হয়েছে। তাদের বিশাল ডাইনিং টেবিলের সাথে মানানসই ছ’জনের ‘পিঙ্ক রোজ’ সেট বাড়িয়ে কুড়িজনের করা হয়েছে। তার সাথে ম্যাচ করে কেনা হয়েছে নানা সাইজের সার্ভিং বোওল, লম্বা সুদৃশ্য চায়ের কেটলি, দুধ-দান, চিনি-দান। কেনা হয়েছে আসল রুপোর সিলভারওয়্যার। সুরমার মাথা থেকে রয়্যাল ডলটনের সঙ্গে রয়্যালটির সম্পর্কের কথাটা মুছে যায়নি। তারা জন্মগত ভাবে রয়্যালটি নন কিন্তু পয়সা-কড়ির দিক থেকে কিং-কুইন না হলেও লর্ড বা ব্যারন হতে তো পারেন। তাই অনেক খরচ করে আগের মডেলের সাথে ম্যাচ করে ‘পিঙ্ক রোজ সিগনেচার কালেকশন’ কেনা হয়েছে। এই মডেল একবারের বেশি দু-বার তৈরি হবে না –গ্যারানটিড! অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে তারাই একমাত্র এই সেটের মালিক হবে – ফর এভার! ভাবতেও গায়ে কাঁটা লাগে সুরমার। কিন্তু সেই কবে, অনেক কষ্টে কেনা, তাদের অ্যানিভার্সারির উপহার ‘পিঙ্ক রোজ’-এর কথা সুরমা ভুলতে পারেন না। কি করে যেন সেই কবে ছোটবেলায় শোনা রবিঠাকুরের কবিতায় মধু-বিধু দুই ভায়ের পুজোয় পাওয়া উপহারের কথা মনে পড়ে যায়।
২.
হাই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ঢোকার পর থেকেই সমাপ্তি সেই যে তাদের সাবার্বের বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, আর ঢোকেনি। কাছেই শহরে একটা অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে থাকে। তাতে নিজের স্বাধীনতা বজায় থাকে, কাজে যেতেও সুবিধে হয়। তা ছাড়া, শহরের একটা ভাইব্রান্ট জীবন আছে। সাবার্বে আছে কি! গাছপালা আর অন্ধকার। বড় বাড়ি ধুয়ে কি জল খাবো!
ইদানিং লম্বা কোর্টশিপের পর সমাপ্তি তার কলেজের হার্ট-থ্রব জনের সাথে লিভ টুগেদার শুরু করেছে। তাকে বাড়িতেও এনেছে কয়েকবার। জন দেখতে-শুনতে ভালো, একটা ভালো চাকরিতে ঢুকেছে। সুতরাং সেখানে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এই যে তারা বিয়ে করছে না সেটা সুরমা-দিবাকরের পছন্দ নয়। সনাতন ভারতীয় ধারা অনুযায়ী তারা লিভ টুগেদার ইত্যাদি আদৌ ভালো চোখে দেখেন না। এ কথা মেয়েকে জানাতেও তারা ছাড়েননি। কিন্তু মেয়ে একেবারে অনড়।
‘তোমাদের সময়ের ওই সব ওল্ড ফ্যাসনন্ড রীতি-নীতির আজকালকার যুগে কোন মানে আছে! এক্কেবারে অচল।‘ সমাপ্তি তেড়ে বলে।
সুরমা একটু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন। তাতে মেয়ে আরো চটে গিয়ে বলেছে -
‘মা, তোমার বাবা-মা নিশ্চয়ই তোমার বিয়ের জন্য অনেক অ্যাডভারটাইস করেছিলেন, অনেক ছেলে তোমায় দেখতে এসেছিল, তারপর এসবের শেষে বাবার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিয়েছিল। তাই না?’
সুরমা বলতে চেষ্টা করেছেন যে না তাঁর বেলায় তা ঘটেনি। কিন্তু তা কে শোনে! মেয়ে আবার প্রায় ফেটে পড়ল—যেন বাজারে গিয়ে মাছ-মাংস কেনার মত। কোনটার কোয়ালিটি ভালো, কোনটার দাম কম। ‘হোআট এ হরিড সিস্টেম!’
‘তা নয় হোল, কিন্তু বিয়েটা করছিস না কেন?’- দিবাকর বলেন।
‘ওয়েল, উই লাভ ইচ আদার। উই উইল ডু হোয়েন টাইম ইজ রাইপ। ব্যাস। নাউ ডোন্ট বদার মি।’
সেই মেয়ে ঘোষণা করেছে যে সামনের অক্টোবরে তারা বিয়ে করবে। সুরমা-দিবাকর তো আনন্দে একেবারে আটখানা। এতোদিন ভয় হচ্ছিল তাদের এত টাকা-পয়সা কে খাবে। তাছাড়া নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পাবেন কিনা সে ব্যাপারে একটা সন্দেহ মনের মধ্যে উঁকি মারতে আরম্ভ করছিল। সেই প্রতীক্ষার এতোদিনে অবসান হতে চলেছে।
প্রায় কিংবদন্তি-সম সমাপ্তি–জনের বিয়ের পার্টির কথা এখানকার বাঙালি সমাজের লোকে অনেকদিন মনে রাখবে। তা ছাড়া প্রথা অনুযায়ী কলকাতায় গিয়েও আর একটা রিসেপসন হয়েছে। সেখানেও বিত্ত-বৈভবের ছড়াছড়ি। পার্টি ছাড়াও সুরমা-দিবাকর মেয়ে-জামাইকে একেবারে ঢেলে দিয়েছেন যাতে বিয়ের পর মেয়ের নতুন ঘর সাজাতে, সেখানে গুছিয়ে বসতে কোন অসুবিধে না হয়। আর নানারকম যৌতুকের মধ্যে সুরমা মেয়েকে কবে সেই অ্যানিভার্সারিতে পাওয়া, দিবাকরের সারপ্রাইস উপহার রয়্যাল ডলটনের ‘পিঙ্ক রোজ’ সেটটিও দিয়েছেন।
দিবাকর একটু আপত্তি করেছিলেন – ‘এটা আমাদের সেই টানাটানির দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। কত কষ্টে কিনেছিলাম। কিন্তু তুমি খুশি হয়েছিলে তাতে সেই কষ্ট কষ্ট বলেই মনে হয়নি। এটা দিয়ে দেবে?’
সুরমা বেশ আবেগের সাথে বললেন ‘আমাদের যে ছেড়ে দেওয়ার দিন এগিয়ে আসছে গো। স্মৃতি ছাড়া তো আর কিছুই ধরে রাখতে পারবো না।’
দিবাকর আর কথা বাড়াননি।
৩.
সমাপ্তি আর জন-এর বিয়ের পর মাস ছয়েক কেটেছে। ওরা পুরোনো ছোট জায়গাটা ছেড়ে শহরের মধ্যেই বেশ বড়সড় আর ভালো একটা অ্যাপার্টমেন্টে উঠে গেছে। নব-বিবাহিতদের পক্ষে এটা অ্যাফোর্ড করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এ ব্যাপারে সুরমা-দিবাকর যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। প্রথমে মেয়ের তাতে ছিল ভীষণ আপত্তি – আমরা যা অ্যাফোর্ড করতে পারি সেখানেই থাকব। দিবাকর-সুরমা অনেক বুঝিয়েছেন – ‘আমাদের আর কি হবে বল। আমরা চোখ বুজলে তো সবই তোর হবে। তার আগেই কিছু নে। তাছাড়া এতে ট্যাক্স ব্রেক পাওয়ার ব্যাপারও আছে।’ এতসব শুনে মা-বাবার উপরোধ-অনুরোধের কাছে সে হার মেনেছে। জন এ ব্যাপারে আদৌ ইন্টারফেয়ার করেনি। মেয়ে তার মা-বাবার সাথে বোঝাপড়া করে নেবে, সেখানে তার কি বলার আছে!
দেখতে-দেখতে মাস তিনেক কেটেছে। সুরমার খুব ইচ্ছে মেয়ে-জামাই অ্যাপার্টমেন্ট কেমন সাজিয়েছে তা দেখতে যান, কিন্ত মেয়ে খালি বলে – ‘আমরা এখনো রেডি নয়। এইতো সবে এলাম এখানে, আরো সময় লাগবে।‘
সেদিন সুরমা আর না থাকতে পেরে মেয়েকে আবার ফোন করলেন –‘কাল সন্ধেবেলা তোরা বাড়ি থাকবি? আমি একটু আসবো? দেখি কেমন বাড়ি সাজালি।’
সুরমা ভাবেননি যে মেয়ে তাতে রাজি হবে। সূর্য যে সেদিন কোনদিকে উঠেছিল কে জানে – মেয়ে রাজি।
‘আমি তাহলে সাতটা নাগাদ চলে যাবো। না, না – ডিনার-টিনারের ব্যবস্থা করার দরকার নেই। আমি বাড়ি এসে খাবো। তোর বাবার আসতে আজ একটু দেরি হবে।’
তারপর একটু ইতস্তত করে বললেন –‘সঙ্গে ডেক্সটারকে নিয়ে গেলে তোর আপত্তি আছে?’
‘না, না। আই হ্যাভন’ট সীন হিম ফর এজেস। উড লাভ ট্যু সী হিম।’
ডেক্সটার সেনগুপ্ত পরিবারের এক বিশেষ সদস্য – এক গোল্ডেন রিট্রিভার। কয়েক বছর আগে সমাপ্তি বাড়ি থেকে একটা অ্যাপার্টমেনটে চলে যাওয়ার পর সুরমা ও দিবাকর এই চতুষ্পদকে পোষ্য হিসাবে নিয়েছেন। প্রথমে আপত্তি ছিল প্রচুর, কে দেখবে, কে নিয়মিত খাবার দেবে ইত্যাদি। বন্ধুরা অনেক বুঝিয়েছে – ওগুলো কোন সমস্যাই নয়। কথা শোন, একটা কুকুর রাখো, সে তোমাদের নি:সঙ্গ জীবনের অনেকখানি পূরণ করে দেবে। কথাটা একেবারে অক্ষরে-অক্ষরে খেটেছে।
একেবারে বাচ্চা ডেক্সটারকে দেখেই সুরমা আর দিবাকর ভালোবেসে ফেলেছেন। দিবাকর পিওর ব্রীড খুঁজছিলেন, আর ডেক্সটার মিক্সড ব্রীড। কিন্তু তাকে দেখার পর এসব কিছু মাথায়ই আসেনি। কিছু বোঝার আগেই ডেক্সটার তাদের পরিবারের একজন হয়ে গেছে। সেই ডেক্সটার এখন এক পূর্ণবয়স্ক সারমেয়। গায়ের লম্বা-লম্বা লোমের রঙে হারভেস্ট হুইট আর সোনালীর মিশ্রণ, লম্বায় আর উচ্চতায় প্রায় একটা বাছুরের মত, ঘন খয়েরি চোখ আর ঝোলা-ঝোলা কান। সে তার মার খুব ন্যাওটা। সুরমা যেখানে যান ডেক্সটারও মাথা উঁচু করে মায়ের পিছন-পিছন চলে। যেখানে সুরমা সেখানেই ডেক্সটার।
তা সত্ত্বেও সুরমা ডেক্সটারকে কুকুর ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেন না। কোথায় যেন বাধে। পাশের বাড়ির এমিলি তাদের বাড়ির কুকুরকে নিজের খাটে শোয়ায়, নিজেদের প্লেটেই কুকুরটাকে খেতে দেয়। বলে - কি হয়েছে, ‘হী ইজ অলসো গড’স ক্রিচার, লাইক আস।’ গড’স ক্রিচার তো কী! কুকুর কুকুরই, কুকুর কখনো মানুষ হতে পারে! এতোটা আদিখ্যেতা ভালো নয়। ভেবেছেন সুরমা।
সেদিন সন্ধেবেলা সাতটা নাগাদ সুরমা ডেক্সটারকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ের বাড়ি হাজির। বাড়িটা সত্যিই বেশ ভাল জায়গায়। শহরের মধ্যে এত খোলামেলা দেখতেই পাওয়া যায় না। অবশ্য তার জন্য চড়া দামও দিতে হয়েছে। তা তো হবেই--ভাবলেন সুরমা। এ দেশের নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির লোকেশনই একেবারে শেষ কথা। সুতরাং এই অ্যাপার্টমেনটের ভাড়া তো বেশি হবেই। তবে মেয়ে-জামাইকে হেল্প করতে পেরে তারা খুশিই হয়েছেন।
মেয়ের অ্যাপার্টমেনটের ভিতরে ঢুকে সুরমা অবাক। কি ভালো সাজিয়েছে! মনে বেশ একটু ভয় ছিল--কে জানে ঘর-দোর কি ভাবে রেখেছে। ছোটবেলায় সমাপ্তির বেশ গোছানো স্বভাব ছিল। কিন্তু তারপর বড় হয়ে সেই স্বভাব থাকবে কি না কে জানে। কিন্তু নিজের চোখে দেখে তিনি আশ্বস্ত হলেন। এমন কি একটু গর্বও হোল। মেয়ের বাবা বলে মেয়ে নাকি তার মত। মেয়ের বাড়ি-ঘর সাজানো দেখে মনে হচ্ছে সে তার মার রাইট ব্রেনটা পেয়েছে।
অ্যাপার্টমেনটে ঢোকার আগে মেয়ে নিজে সব ঘরের রং বেছে নিয়েছে, চমত্কার সব প্যাস্টেল কালার। তার সঙ্গে মিলিয়ে জানলার পর্দা। ছিমছাম সিম্পল আসবাব এসবের সাথে খুব মানিয়েছে। মেয়ের টেস্ট দেখে খুশি হলেন সুরমা। কিচেনও বেশ সুন্দর করে সাজানো। তবে মেয়ে জানালো যে তারা একটা ক্যাবিনেট খুঁজছে যেখানে টেবলওয়্যার ইত্যাদি রাখবে। মার রান্না ও বাসনপত্রের প্রতি ফ্যাসিনেশনের কথা তার অজানা নয়।
ডেক্সটার সমাপ্তিকে দেখে খুব খুশি। সে ঘন-ঘন লেজ নেড়ে, মুখে আওয়াজ করে তার খুশির জানান দিলো। তারপর লম্বা জিভ বাইরে বার করে কয়েকবার হ্যা-হ্যা আওয়াজ করে লিভিং রুমের এক কোণে শুয়ে রইলো। এদিকে সুরমা অ্যাপার্টমেনটের সব ঘর মেয়ের সাথে ঘুরে ঘুরে দেখে মেয়ের গুড টেস্টের তারিফ করতে লাগলেন। হঠাৎ মনে হোল ডেক্সটারকে তো জল দেওয়া হয়নি। সে খেয়ে এসেছে, কিন্তু জল দেওয়ার কথা একেবারে মাথায় ছিল না। সমাপ্তি তাই শুনে বললো--
‘ডোন্ট ওয়ারী মা। আই উইল গিভ হিম ওয়াটার ইন অ বোওল ইন দ্য কিচেন।’
দেখতে দেখতে বাড়ি ফেরার সময় এসে গেছে। সুরমা পার্স কাঁধে নিয়ে, মেয়েকে জড়িয়ে আদর করে ডেক্সটারকে নিয়ে বেরোতে যাবেন--কুকুরটাকে দেওয়া জল খাওয়ার বোওলটার দিকে নজর পড়ল। মেয়ে তাঁর অনেক সুখ-স্মৃতি জড়ানো, এক সময় অনেক কষ্টে কেনা রয়্যাল ডলটনের সেই ‘পিঙ্ক রোজ’ সেটের একটা বাটিতে জল খেতে দিয়েছে কুকুরটাকে! ডেক্সটারকে তার লীশ ধরে প্রায় টেনে নিয়ে বাইরে এলেন সুরমা। চোখ জলে ভরে উঠল - আমার এত সাধের রয়্যাল ডলটন! মেয়েকে লুকিয়ে চোখ মুছলেন সুরমা।
বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে উঠে স্টার্ট করতে যাবেন সুরমা, রীয়ার ভিউ মিররে চোখ পড়লো। দেখলেন পিছনের সীটে ডেক্সটার মুখ নিচু করে বসে আছে। ও কি কিছু বুঝতে পেরেছে যে আমি কুকুর বলে ওকে ঘেন্না করলাম!
গাড়ি স্টার্ট না করে সুরমা দরজা খুলে বাইরে এলেন। পিছনের সীটে গিয়ে ডেক্সটারের গলা জড়িয়ে ধরে তার কানে চুপি-চুপি বললেন – ‘আই অ্যাম রিয়েলি সরী। উয়ী আর অওল গড’স ক্রিচারস।’