• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৬ | মার্চ ২০১৭ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : পৃথা কুণ্ডু


    ।। ১ ।।

    যীশু বললেন,
    "শিশুরা স্বর্গের দূত, ওদের আমার কাছে আসতে দাও।"
    ওরা বলল,
    "তা তো বটেই, আগে ট্রেনের কামরায়
    ভিক্ষে করিয়ে, হাড়কাটা গলির ডাস্টবিনে এঁটো-কাঁটা খাইয়ে,
    ওদের শৈশবটাকে মেরে দিই,
    তারপর অবশ্যই পাঠিয়ে দেব।"

    যীশু বললেন,
    "যে কোনোদিন কোনো পাপ কর নি,
    সে পাথর ছুঁড়ে মার ঐ মেয়েটির দিকে।"
    ওরা বলল,
    "পাথর কেন? আমাদের হাতে অ্যাসিড আছে না?"

    যীশু বললেন,
    "মা, ঐ দেখ তোমার সন্তান।"
    ওরা বলল,
    "মায়েদের হাড়গোড় পুঁতে রেখেছি ঐ মাটির নীচে।
    বলুন স্যার, কী শাস্তি দেবেন?"

    ।। ২ ।।

    যশোধরা, মনে পড়ে
    সেই স্বয়ম্বরসভার দিন,
    যেদিন আমার অনামিকা থেকে
    রক্ত-পলাশের মতো অঙ্গুরী
    তুলে দিয়েছিলাম তোমার হাতে?
    মনে পড়ে প্রথম পিতা হওয়ার সংবাদে
    আমার মুখে প্রভাতসূর্যের আলো
    আর তোমার কপোলের সেই আরক্তিম আভা?
    তখন মনে হয়েছিল, এই বুঝি স্বর্গ।
    জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর বিভীষিকা
    তখনও আমার চেতনাকে করে নি আচ্ছন্ন।

    অথচ তোমাদের ছেড়ে যেদিন
    বেরিয়ে এলাম ছন্দকের সাথে,
    সেই ঘোর অমানিশাতেও তোমার কল্যাণী স্মৃতি
    ছিল না কি অবচেতনে?
    আর তাই বোধিলাভের মুহূর্তে
    প্রার্থনা করেছি জগতের মঙ্গল।
    তুমিও তো জগৎ ছাড়া নও।
    আমার প্রতি তোমার অভিমান ছিল জানি।
    যখন শ্রমণের বেশে ফিরলাম শাক্যপুরে,
    নিজে না এসে পাঠিয়ে দিলে তোমার সন্তানকে,
    চেয়ে নিতে পিতৃধন।
    আমার কী দেবার ছিল বল, সন্ন্যাস ছাড়া?
    তোমার সন্তানকেও হরণ করে নেব,
    জানতে কি তুমি?
    না কি সব জেনেই ত্যাগ করেছিলে মাতৃ-অধিকার,
    নিজেও ভিক্ষুণী হবে বলে?

    রাহুলমাতা, সংঘ তোমায় চিনেছিল এই নামে।
    তুমি তৃপ্ত হয়েছ কি?
    তথাগতের পত্নী থাকে না।
    সন্তানের থাকেন মা।

    ।। ৩ ।।

    পথের আলাপ।
    ভদ্রলোক না কি ছবি আঁকেন।
    বললেন, "আসুন না একদিন।
    ঘুরে দেখবেন আমার স্টুডিও।
    আর যদি চান নিজের একটা
    ছবিও আঁকিয়ে নিতে পারেন।"

    গেলাম একদিন।
    বেশ নাম ছবিগুলোর।
    কোনোটার নাম "মহেঞ্জোদড়োর ঘ্রাণ"।
    কোনোটা আবার "কোমল গান্ধার",
    "বিদিশার নিশা", "শোভন সংস্করণ"—
    এমন কয়েকটা নামও চোখে পড়ল।

    জানতে চাইলাম,
    "একটা ঝাপসা বিকেলের
    ছবি এঁকে দিতে পারেন?
    বরফে ঢাকা খাড়াই পথ,
    পর্বতমালার ওপারে ধূসর আকাশ—
    একা একটি মেয়েকে ফেলে,
    অবসন্ন শীতে, এগিয়ে গেছে
    পাঁচজোড়া পায়ের ছাপ।
    বরফে লুটোচ্ছে তার আঁচল,
    যে একদিন জন্ম নিয়েছিল
    যজ্ঞের আগুন থেকে।
    এলোমেলো তার শাড়ি,
    যে শাড়ি একদিন অশেষ হয়ে
    লজ্জা ঢেকেছিল তার।
    রুক্ষ তার চুল,
    যে চুল বহুদিন থেকেছিল অপেক্ষায়,
    বেণী হয়ে দুলবার আগে..."

    বলতে বলতে দেখি
    চিত্রকর, রঙ-তুলি,
    কেউ নেই, কিছু নেই।
    আর আমি হয়ে গেছি
    একটা ক্যানভাস—
    দিগন্ত বিস্তৃত— ফাঁকা।
    আমার সর্বস্ব জুড়ে
    এক ঝাপসা বিকেল,
    আর ঐ মেয়েটির ছবি—
    আঁকা হওয়ার প্রতীক্ষায়।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments