সাম্প্রতিক কালে পাইকপাড়া মোহিত মৈত্র মঞ্চে অভিনীত ব্রাত্য বসু নির্দেশিত সাড়া জাগানো নাটক 'অদ্য শেষ রজনী'। এই নাটকটির বিষয় এবং উপস্থাপনার ভঙ্গি মন ও মননের দরজায় বারে বারে এমন সবেগে করাঘাত করে যে চার পাঁচ মাস আগে নাটকটি শেষ দেখা সত্ত্বেও বিভিন্ন sequence, অভিনয়ের বিচিত্র ভঙ্গি, অভিনেতার ধরন ধারণ মন থেকে মুছে যায় না। উপন্যাসের নিবিড় পাঠ যেমন পাঠকের মগজে নতুন ভাব ও ভাবনার সৃষ্টি করে, অভিনয়ে নাট্যের নিবিড় দর্শনেও দর্শক নানা দ্যোতনা আবিষ্কার করে চমকিত হন, শিহরণ বোধ করেন। অবসর যখন ঘটল, 'অদ্য শেষ রজনী'র নানা দৃশ্যের স্মৃতিতেই মন নিবিষ্ট হয়ে গেল। স্মৃতির মধ্যে নাটকের যে গতিশীল ছবি ফুটে আছে তাকে ব্যক্ত করাই তো নাট্য সমালোচকের অন্যতম বাসনা।
মঞ্চায়িত এই নাটকটি যেন একটি নিটোল গদ্যকবিতা। কবিতার পরতে পরতে কত খাঁজখোঁজ, ঘুলঘুলির মধ্য দিয়ে যেন ব্রহ্মাণ্ডদর্শন। কত আশ্চর্য নীলিমা, সুরের রঙ বাহার, বসন্তের উচ্ছ্বাস, হাড়হিম মৃত্যুর শব-পোড়া গন্ধ, পড়ন্ত সূর্যের নিবু নিবু আলো — এক টুকরো জীবন তার রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, বর্ণ নিয়ে ঝেঁপে আসে দর্শকের মনে। সে একটুকরো জীবন — অমিয় চক্রবর্তীর জীবন — সে জীবনে চোখ ঝলসানো দীপ্তি আর দাহ। তাই নাটক দেখার বহুদিন পরে ঘুরে ফিরে মনে পড়ে অমিয়রূপী অনির্বাণের অভিমানী কথার মোচড়ে, হেরে যাওয়ার ক্লিষ্ট ভঙ্গিতে অনন্ত হাহাকারের ছোঁয়া।
এই নাটকের ভিতরে ভিতরে নানা চোরা স্রোত বয়। অমিয়র স্ত্রী মালা স্বামীর নাট্যচর্চায় সর্বক্ষণের সঙ্গী। স্বামীর অযত্নে ফেলে রাখা পাণ্ডুলিপি মালারই ইচ্ছায় সম্পূর্ণতা পায়, নিরন্তর খোঁজাখুঁজির পর নায়িকা হিসেবে বিশিষ্ট অভিনেত্রী রজনী দাসীকে খুঁজে পাওয়া যায়। 'বারবধূ' নাটকে সে লতার ভূমিকায় অভিনয় করে। রজনী দাসী অনেকাংশে অভিনেত্রী কেতকী দত্তের আদলে গড়া। কেতকী দত্ত শিশির ভাদুড়ীর ঘরানার প্রখ্যাত অভিনেত্রী প্রভা দেবীর কন্যা। আর বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাওয়া অভিনেতা অসীম চক্রবর্তীর প্রতি অবহেলা আর বঞ্চনার নিরেট ইতিবৃত্ত সযত্নে সংগ্রহ করে অনেকটা তাঁর আদলে গড়া হয়েছে অমিয় চক্রবর্তীর চরিত্র। থিয়েটার পাগল এই মানুষটি থিয়েটার করতে গিয়ে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে কলকাতায় গ্রুপ থিয়েটারে প্রথম ব্রেখ্ট প্রযোজনা করেছেন, বাংলা থিয়েটারে আর্থার মিলারের নাটক নিয়ে এসেছেন এমনকি নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়কে পরিচিত করার কাজে ওর দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে প্রদীপ জ্বালানোর আগে থাকে সলতে পাকানোর পালা। আর সেই সলতে পাকানোর কাজটি নিপুণ ভাবে করে গেছেন ঔপন্যাসিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। অসীম চক্রবর্তীকে কেন্দ্র করে লিখেছেন উপন্যাস 'অদ্য শেষ রজনী'। এতটা ব্রাত্য ছিলেন অসীম যে তৎকালীন বেতার জগতে তা প্রকাশিত হয়নি। নাটককার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় তার যথাযথ নাট্যরূপ দিলেন। আর পরিমার্জনার পর তা মঞ্চে হাজির করলেন নট, নাটকার, নির্দেশক ব্রাত্য বসু। কি আছে এই নাট্যে আর তার অভিনয়ে? কেনই বা এই সব প্রসঙ্গের অবতারণা? কালের কপোলতলে কৃষ্ণবর্ণ অন্ধকারে প্রায় মুছে যাওয়া থিয়েটার কর্মী ও তাঁকে নিয়ে লেখা উপন্যাসের নাট্যরূপ এবং তাঁর পরিমার্জনায় বাংলা থিয়েটারের এক পর্বের ইতিহাস এবং তার যথার্থ নিরপেক্ষ মূল্যায়নে ধরা পড়ে নাটককার ও নির্দেশকের যুগলবন্দী ভাবনা, সমাজে প্রান্তিকতার বিচিত্র রং ও রূপ। সংস্কৃতির ধ্বজাধারী কালচারাল মাফিয়ার হুমকি, রাষ্ট্রের চোখরাঙানি, এমনকি ব্যক্তিগত স্বার্থ যে মানুষকে প্রান্তিক করে চিরতরে দূরে ঠেলে দিতে পারে এই নাটকের নির্দেশনা, অভিনয়ে আছে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ। এ নাটকে লেপটে থাকে বিষাদ, রিরংসা, ব্যক্তি মানুষের অবক্ষয়ের নগ্ন ছবি আরও যে কত কি! 'বারবধূ'কে কেন্দ্র করে অমিয় ও রজনীর মধ্যে love ও hate সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অপসংস্কৃতি আখ্যা দিয়ে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী 'বারবধূ' বন্ধ করলে অমিয় মামলা করে জিতে যায়। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে থেকে বন্ড সই করে অভিনয় করতে থাকে মঞ্চে। 'সম্রাজ্ঞী' নাটকের শেষ অভিনয় করার সময়ে সম্রাজ্ঞী-রূপী রজনীকে সম্রাট-রূপী অমিয় গলা টিপে হত্যা করে। দর্শক এ নাটকে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের আশা করে ফিরে যায়। বারবধূর মৃত্যুই অমিয় চাইছিল। নাটক শেষে সমালোচক বিষ্ণু দত্ত আবিষ্কার করে অমিয় রজনীকে মঞ্চে হত্যা করেছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অমিয় শেষবারের মতো চুম্বন করতে চায় রজনীকে। শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়। ছাই ঘেঁটে দেখে নেওয়ার সময় হয়েছে অমিয় সাচ্চা থিয়েটার করেছিল কিনা।
অনির্বাণ ভট্টাচার্যের অভিনয়ে অমিয়র থিয়েটার পাগল, প্রতিভাদীপ্ত মনের উত্তাপটি পাঠক অনুভব করেন। অনির্বাণের নিজের কথায় — 'যে যুগে বিপ্লব, প্রেম, আকুতি, হতাশা প্রায় সব কিছু প্রকাশের মধ্যেই যে বিপুলতা ছিল, বিশালতা ছিল এবং একই সঙ্গে আধুনিকতার যে দৃঢ় উচ্চারণ ছিল, তাই খানিকটা কণ্ঠে এবং দেহরেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।' (হায় চিল। সোনালী ডানার চিল --অনির্বাণ ভট্টাচার্য; অদ্য শেষ রজনী, সম্পাদনা ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী, কৃতি, প্রথম প্রকাশ নভেম্বর, ২০১৬) সাংবাদিক বিষ্ণু দত্তের ভূমিকায় সত্রাজিৎ সরকার অনবদ্য। এ নাটকে মঞ্চ ভাবনা পৃথক প্রশংসার দাবী রাখে। নাটকটি যেন নিটোল টিউনিং এ বাঁধা সুরেলা, সুছাঁদ অর্কেস্ট্রা। আর এই অর্কেস্ট্রার সুর, তাল, লয়কে অক্ষুন্ন রেখেছে মঞ্চে সর্পিল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা পঞ্চাশ বছর পূর্বেকার কলকাতার ভাঙাচোরা বিবর্ণ একটি ট্রাম। 'বারবধূ' অভিনীত হত প্রতাপ মঞ্চে। প্রতাপ মঞ্চের উলটো দিকে রাজাবাজার ট্রাম ডিপো। ট্রামে চড়ে যাতায়াতের পথে উত্তর কলকাতার শিষ্ট দর্শক এই 'ভালোবাসার ব্লো হট' নাট্যের তথাকথিত অশ্লীল বিজ্ঞাপন চেয়ে দেখত আড়চোখে। সন্ধে নামলে শ্লীল অশ্লীলের মাপকাঠি বিচার করার ভাণ করে, খানিকতা অস্বস্তি মগজে ঠেসে টুক্ করে ঢুকে পড়ত প্রতাপ মঞ্চের চৌহদ্দীতে অমিয় চক্রবর্তীর ঠিকানায় 'বারবধূ'র খোঁজে। হয়ত এক সময়ের বাঙালি সংস্কৃতির টুকরো চিত্রকে বিশ্বায়ন-উত্তর পর্বের আতস কাচে ফেলে দেখতে চাওয়া হয়েছে এ নাট্য প্রকল্পনায়। মঞ্চের ভিতরে ট্রামের ড্রাইভারের কেবিন, যাত্রীদের বসার জায়গা, প্যাসেজ, দরজা, ট্রামের ঘড়ঘড়ানি আওয়াজ টিং টিং ঘন্টাধ্বনি, যাত্রীদের কথাবার্তা সব মিলিয়ে চলমানতার আবহ তৈরি হয় মঞ্চে। বিশেষত রজনীর সঙ্গে অমিয়র প্রথম সাক্ষাতে ট্রামের পাদানিকে যে নিপুণ মুন্সীয়ানায় ব্যবহার করা হয়েছে তাতে নির্দেশক ধন্যবাদার্হ। ট্রামের সামনে মঞ্চের খোলা স্থানটুকুতে তৈরি হয়ে যায় অমিয়র অভিনয়ের মঞ্চ, গ্রীনরুম, রাঁচীর স্ফূর্তি নিবাস, লতার গৃহ, অমিয়র গৃহ আরও কত কি।
যে রজনীর ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে থিয়েটারের তিন যুগের ইতিহাসের স্বাদ পাওয়া যায় তাকে মরে যেতে হয়, ঝরে যেতে হয় অকালে। নাটক দেখে মনে হতে পারে এ তো অমিয় চক্রবর্তীর আঁতের কথা। কিন্তু রজনী দাসীর পাল্লাও কম ভারী নয়। আসলে সমাজ মনে করে 'মারতে হবে। এক একজনকে এক এক পন্থায় মারো'। তা তো রজনীর ক্ষেত্রেও সত্য। রজনী দাসী — রজনী দেবী হতে চেয়েছিল। রজনীর টাকাতেই তার স্বামী শশাঙ্কর সংসার চলে। রজনীর ব্যক্তিগত জীবনও বারবধূর সমতুল্য। শশাঙ্ক - 'আমি তোমার জন্য বাবু ধরে দেব। তুমি টাকা আনবে। দুজনে দুজনের জন্য। রজনী — 'তাহলে আমি তো বারবধূই হলাম'। রজনী সত্যিকারের ভালোবেসেছিল কিনা সুতীক্ষ্ণ শলাকার মতো এ প্রশ্ন অমিয়র মনকে বিদ্ধ করে রক্তাক্ত করেছে। কিন্তু রজনী সত্যিকারের ভালবাসা পেয়েছিল কি না লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের তিক্ত কষায় ঝাঁজ কোথাও যেন অনুভব করে এই অনুচ্চারিত প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দর্শক মূক হয়ে যায়। নাটকটির রচনা, পরিমার্জনা নির্দেশনা ও অভিনয়ে এভাবে between the lines-এ অনেক কথা জমাট বেঁধে আছে। রজনী দাসী কিংবা লতার ভূমিকায় দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের উপস্থাপনায় কোথায় যেন হালকা পান জর্দার গন্ধে সুরভিত, ক্ষণে ক্ষণে গুনগুন করে গান গেয়ে ওঠা স্বর্গীয়া অভিনেত্রী কেতকী দত্তের charming personality-র সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ইলা গূঢ়ৈষা নাটকে কবি ধূর্জটি ভট্ট বলেছেন — 'এ সময় ধ্বংসের সময়। এ সময় আত্মহননের সময়'। এ নাটক সেই অমাবস্যার মহাসংগীত। এই নাটক দমবন্ধ, দুর্ভেদ্য, গহন, জটিল শ্বাপদ সংকুল অরণ্যে প্রতিটি চরিত্রের পথ হারানোর ইতিবৃত্ত। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের 'বৃহৎ বঙ্গ' বইটি নাট্যকাহিনীর উৎস। কোচবিহারের মহারাজা বীরনারায়ণের রিরংসা, কামলোলুপতা তার প্রজা ও পরিজনের জীবনে দুর্বিপাক ডেকে আনল। রাষ্ট্রশক্তির অনৈতিকতা, খামখেয়ালিপনায় নারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে লাগল দিনের পর দিন। আর এই সব রঙে, রূপে, রেখায় চিহ্নিত হতে লাগল 'ইলা গূঢ়ৈষা' নাটকে, কেউ কেউ এই নাটককে গ্রীক ট্র্যাজেডি হিসাবে চিহ্নিত করতে চান। কিন্তু নাটকে প্রদ্যোত চরিত্রটি সে কথার প্রতিবাদ করে নম্রকণ্ঠে। 'রাজা যা করার আপনিই করেছেন। আমার কিছু করার দরকার পড়েনি। না প্রতিশোধ, না কিছু।' রাজার চরিত্রের ভিতরেই ছিল তার আত্মধ্বংসের বীজ। এ নাটকে কোথাও কোনো আলোর রেখা নেই। মঞ্চে অভিনয়ে, দৃশ্য সজ্জায় অন্ধকারের নানা shade-এর ছবি দেখতে দেখতে দর্শকের মনে দানা বাঁধে pity ও fear, pity ও fear তৈরি হয় বীরনারায়ণের জন্য, পদ্মাবতীর জন্য, প্রদ্যোতের হাহাকারের জন্য, তার ইলার দুর্দৈবের জন্য। রাজা বীরনারায়ণ শিল্পরসিক, নারীলোভী, অপ্রতিহত তার প্রতাপ। নারী হরণ কিংবা নারী ধর্ষণ তার কাছে সামান্য ব্যাপার। পণ্ডিত নারায়ণ ত্রৈলোক্যদর্শীর কন্যা ব্রততীকে রাজা জোর করে বিবাহ করেন। ব্রততী আত্মহত্যা করে, তিনি প্রদ্যোত ও পণ্ডিত ত্রৈলোক্যদর্শীকে বন্দী করার আদেশ দেন। কিন্তু তারা নিরুদ্দিষ্ট হয়ে তান্ত্রিক কুলার্ণবের কাছে আশ্রয় নেয়। কুলার্ণব মৃত্যুর মুহূর্তে ইলা শব্দটি উচ্চারণ করে। আর এখান থেকে শুরু হয় নাটকের আসল চমক। ট্র্যাজেডির প্রধান মোচড়। কালজানি নামক স্থানে আইমা বৃন্দেশ্বরীর তত্ত্বাবধানে বীরনারায়ণের কন্যা গোপনে সকলের অজ্ঞাতে প্রতিপালিত হয়। কন্যার পরিচয় না জেনে কামোৎসুক রাজার তাকে ধর্ষণ। রাজা ক্রমশ বিভ্রান্তি, বিপর্যয়ের শিকার। গভীর অবসাদ রাজাকে আচ্ছন্ন করে। নিজের স্তন দুটি কেটে কন্যা ইলার কাছে প্রেরণ এবং নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা। পিতার কন্যার পথে অনুগমন।
এতো সম্পূর্ণ অন্ধকার পথে পাড়ি দেওয়ার নাটক। লেখকের মতে — 'কাহিনীটি প্রাচীন হলেও বর্তমান সময় তার অস্থিরতা, তার স্ববিরোধ, দংশন, গর্জন ও কুয়াশা সবই এ নাটকে আছে।' আগ্রাসী ক্ষমতা কাঠামোর সামনে হাঁটু মুড়ে বসে নয়, বরং প্রদ্যোত নিজেই ক্ষমতা হয়ে ওঠে। ক্ষমতার কাঠামোকে গিলে ফেলার তীব্র সাধনা এখানে সার্থক হয়ে উঠেছে। প্রদ্যোত জটিল, হিংস্র, হৃদয়হীন। ইলার প্রতি নিষ্ঠুরতাকে সে ব্যাখ্যা করে দার্শনিকের উদাসীনতায়। নারায়ণ যখন বলে বীরনারায়ণ সম্পর্কে “বীরনারায়ণ প্রজাপালক। দক্ষ প্রশাসক। কিন্তু তাঁর কৃতকর্মের মধ্যেই নিহিত হয়ে রয়েছে পতনের ইঙ্গিত। তাঁর সর্বনাশের ভাবী ইশারা তাঁর মৌল স্বভাবের মধ্যেই আচ্ছাদিত।" শেক্সপিরিয়ান ট্রাজেডির সম্ভাবনা এখানে উঁকি দিয়ে যায় হয়তো। ইলেকট্রা কমপ্লেক্স বাংলা নাটকে উপাদান হিসেবে খুব বেশি ব্যবহৃত হয় নি। নাটককার ব্রাত্য বসু অবলীলাক্রমে এই বিষয়কে বিস্তৃতভাবে ব্যবহার করেছেন এ নাটকে। এই দুঃসহ বিয়োগান্তক নাটকে সংলাপের সৌরভ কিন্তু পাঠকের মন জয় করে ফেলে সহজে। ব্রততী যখন বলে — 'রাজা বীরনারায়ণের উপস্থিতিতে চিকনা পর্বতের সমস্ত শিখরে যেন মশাল জ্বলে উঠল।' তখন মনে পড়ে যায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'রাজকাহিনী'র বাপ্পাদিত্যের চেহারার বর্ণনা। উদয় যখন বলে - 'তুমি সর্বখানে আমারে দেখতে পাবা। চাষির ঘরে হাড়িপান্তার ভিতর, বালির চরে কাশফুলের ভিতর, যূথিফুলের গায়ে ভোমরার ভিতর, সবুজ জঙ্গলের ভেতর দিয়া উড়ে যাওয়া বনটিয়ার ভিতর ......' তখন 'কদমার মতো মিঠে' সংলাপের সোয়াদ পাঠকের মনে লেগে থাকে দীর্ঘক্ষণ।