এইসব অতিক্ষুদ্র প্রাণী ছাড়াও এক ধরনের একটু বড় কীট (mite) মাকড়শা-জাতীয় পরজীবী প্রাণী যে আমাদের সবার মুখে চোখে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা বোধহয় অনেকেই জানেন না। এদের নাম ডিমোডেক্স (demodex)। এদের নিয়েই কাহিনী।
সারা পৃথিবীতে সমস্ত শ্রেণীর মানুষের ত্বকে এই কীটদের দেখা যায়। বয়:সন্ধির সময় তেলতেলে sebum নি:সরণ শুরু হয় মুখের চামড়ায়, আর ঠিক সেই সময় থেকেই ডিমোডেক্স সংক্রমণের শুরু। পঞ্চাশ বছর বয়সের মধ্যে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ মানুষের মুখে চোখে ডিমোডেক্সের অস্তিত্ব দেখা গেছে।
এমনিতে ডিমোডেক্সরা বিশেষ কোনো রোগের সৃষ্টি করে না কিন্তু কোনো কোনো রোগে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইম্যুনিটি কমে গেলে এদের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় ও তখন নানা রকম চর্মরোগের উপসর্গ শুরু হতে পারে — চুলকুনি, ফুসকুড়ি, ব্রণ, খুশকি ইত্যাদির সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।
চোখের পাতায় চুলকুনি, ফুলে ওঠা, চুল (পল্লব) পড়ে যাওয়া ইত্যাদিও বেশি হয় ডিমোডেক্সের কারণেই। তার ওপর আনুষঙ্গিক জীবাণুর সংক্রমণ হলে তো আরও কঠিন চর্মরোগের সৃষ্টি হতে পারে।
ডিমোডেক্স ছোঁয়াচে প্রাণী — সরাসরি ছোঁয়ার দ্বারা এরা একজন থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রামিত হয়। মানুষের শরীরে দুই জাতীয় ডিমোডেক্সের সন্ধান পাওয়া গেছে — Demodex follicularis এবং Demodex brevis যা লম্বায় একটু ছোট। DNA পরীক্ষা করে এদের সন্ধান আফ্রিকার আদিম মানব-মানবী পর্যন্ত দেখা যায়। ঠিক সেই রকমই অন্যান্য জাতির ডিমোডেক্স পাওয়া গেছে অন্যান্য রোমশ স্তন্যপায়ী জন্তুদের চামড়ায়। কুকুর ও বেড়ালের চামড়ায় এরা ব্যাপক। লোম ওঠা, ঘেয়ো কুকুর (mange)-দের চর্মরোগ এই ডিমোডেক্সের জন্যই। কিন্তু কুকুরের ডিমোডেক্স কুকুরেই সীমিত থাকে— মানুষে সংক্রামিত হয় না। কুকুর বেড়াল ছাড়াও গরু, শুয়োর, খরগোশ, বাঁদর, ভালুক, বাইসন, গরিলা, শিম্পাঞ্জী এমন কী জলচর সী লায়নদের (sea lion) চামড়াতেও ডিমোডেক্স দেখা গেছে। ডিমোডেক্সের মতোই উকুন ও ছারপোকাও শুধু মানুষকেই আক্রমণ করে অন্য কোনো প্রাণীকে নয়। বাঁদর ইত্যাদির উকুন অন্য জাতীয়।
এমনিতে ওষুধপত্র দিয়ে ডিমোডেক্সের উৎখাত করা অসম্ভব। (অনেক ওষুধ অন্যথা দাবী করে থাকে, কিন্তু সে সব মিথ্যা দাবী।) কোনো উপসর্গ না থাকলে এদের দূর করার কোনো প্রয়োজনও নেই। কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক কারণে এদের সংখ্যাবৃদ্ধি হলে বেবী শ্যাম্পু বা অন্যান্য ওষুধ দিয়ে সেটা কমানোর চেষ্টা করা যায়। তার ওপর বীজাণুর সংক্রমণ হলে ডাক্তার দেখিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা দরকার।
এই সব কীট, বীজাণু নিয়েই আমাদের শারীরিক জীবন। আপনাদের হয়ত মনে হতে পারে এসব না জানলেই ভালো হত। এখন এই ছোট্ট ছোট্ট মাকড়শা জাতীয় প্রাণীরা আপনার মুখে চোখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর ডিম পাড়ছে মনে করলেই হয়ত আপনার গা ঘিনঘিন করে উঠলো, কিংবা — চোখের পাতাটা কীরকম সুড়সুড় করে উঠল, তাই না ?