• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৪ | সেপ্টেম্বর ২০১৬ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : নিরুপম চক্রবর্তী


    একটি ডিটেকটিভ কবিতা

    ঘোরানো সিঁড়িতে ওঠে ভারী বুট
    আর মাত্র দু’মিনিট পরে
    যবনিকা পড়ে যাবে এই সব রহস্যের
    জাল ধরে দেবে টান ডিটেকটিভ সর্বজ্ঞ কুমার।

    মাঝখানে দীর্ঘ দু’মিনিট:
    কবিতা কল্পনালতা উড়ে যায় নেপচুন গ্রহেতে
    সূর্যকে নিলামে বেচে সুরসিক নটবরলাল
    মঙ্গল গ্রহের কাছে গণ্ডমূর্খ কবিদের কারা যেন হত্যা করে গেছে।

    যবনিকা উত্তোলন:
    অন্ধকার ঘর এক, দরজাটি খোলা তার, জানালাও তাই
    দরজায়, থমকে বুটের শব্দ; ভারী বুটে রহস্যময়তা
    আধো অন্ধকার ঘরে পড়ে আছে একটি টেবিলে
    নিষিদ্ধ পিস্তল এক, একটি মুখোশ আর
    কখনও হবেনা লেখা এরকম দু’একটি কবিতা।।


    নীরবতা

    আমাকে দু’একটি গানে ভরে দিও ওগো নীরবতা।
    শব্দহীন মৃগতৃষা: বড় তৃষ্ণা জিহ্বায় আমার;
    নির্মম কবিতাগুলো ছেড়ে গেলে বর্ণহীন ক্লান্ত রাত্রি শেষে
    এলোমেলো ভোর হোয়ে এলো।
    শব্দের সীমানা থেকে বহুদূরে যেন কোনো গ্রহাণুপুঞ্জতে
    নিরালম্ব ভেসে আছি,
    আজ এই শব্দহীন যন্ত্রণার প্রাতে
    তোমার ওই নিষ্করুণ ক্ষিপ্র হিংস্র হাতে
    স্বরহীন সুরগুলো মহাকাশে এঁকে দিও, প্রিয় নীরবতা।।


    তাল্লিন শহরের কুমারী মিনার

    ল্যান্ড অ্যাহয় বলে জাগেনাই কোনো সাড়া
    তবু জানি এ আমার নিশ্চুপ জাহাজ
    বাল্টিক সমুদ্রতীরে অবশেষে নোঙর ফেলিবে।
    নীলাভ ঢেউয়েরা হাসে, রোদ হাসে, উড়ে যায় চঞ্চল সীগাল
    সমুদ্রের জলে, গীটারের মতো ছায়া ফেলে;
    তাহাদের ডানার উদ্বেল স্বর চারিধারে বাজে অতঃপর।

    ‘এইস্থানে কোন জাদুবলে, আসিয়াছো পরদেশী?’
    বলিল বালিকা এক বায়বীয় স্বর্গীয় কুমারী
    ‘তোমার পাদুকা বাজে অতীতের তাল্লিন নগরে
    আমাদের এস্তোনিয়া দেশে’
    বিলুপ্ত হইয়া যায় সহাস্য রৌদ্রবিভা
    অনায়াসে অন্ধকার আসে;
    ‘আমার নগরী দ্যাখো সুরক্ষিত পরিখা প্রাচীরে
    আমাদের উচ্চ গির্জা, মহামতি সন্ত ওলাফ আমাদের পরিত্রাতা,
    আমাদের যাজকেরা সঙ্ঘবদ্ধ, এইস্থানে
    তাহারা পাপীরে ঘাতকের ক্রুঢ়তার স্বর্গীয় মুখচ্ছবি
    দ্যাখায়েছে বারবার — এই স্থানে মূষিকের পাল
    নগরী ঘিরিয়া ফেলে, কৃষ্ণমৃত্যু খুলিয়াছে দ্বার।’

    ‘এই দেশ তথাপি আমার,
    ওই দ্যাখো কুমারী মিনার
    এ আমার বাসস্থান; রন্ধ্রহীন আলোকবিহীন
    ভূগর্ভস্থ ডাঞ্জেন, সে আমার বড় আপনার!’

    ‘এ শহর তথাপি আমার,
    আমি এর রক্ষয়িত্রী, এ আমার অবয়বে
    ফুটিয়াছে পুষ্পসম,
    এ শহরে শিশুরাও নির্ভয়ে ঘুমায় সারারাত।’
    এইরূপে একবার তিনশত বৎসরেরও আগে
    তাল্লিন শহরে হাঁটি আমি আর কুমারী মিনারে
    বড় স্নিগ্ধ, বড় স্মিত সেই বালিকাটি
    জড়ায়ে ধরেছে হাত কী যে অনুরাগে
    অবয়বহীন এক বায়ুভূত প্রচ্ছায়া রমণী!

    গভীর সমুদ্রে আজ মৎস্যকন্যা ধরিয়াছে গান।
    (সময় গলিয়া যায়!
    গির্জাচূড়ে ট্রান্সমিটার: কেজিবি শুনিছে তাহা
    কফিশপে কানখাড়া: শুনিতেছে কবেকার অ্যালকেমিস্ট খুড়ো
    শুনিতেছে পার্লামেন্ট, হে স্বাধীন এস্তোনিয়া
    শুনিতেছে অর্থোডক্স চার্চ!)
    সেসব সংগীত কভু শুনেনাই বালিকাটি
    অট্টহাস্য হাসিয়াছে ভগ্নপ্রায় কঙ্কাল করোটি,
    কুমারী মিনার তলে নিরন্ধ্র প্রকোষ্ঠ এক
    জীবন্ত প্রোথিত ওই বিষণ্ণ তাল্লিন বালা
    সেইস্থানে অনন্ত শয়ান।।


    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments