• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৩ | জুন ২০১৬ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • ভীমবেটকাঃ আদিম মানুষের বিস্ময়কর এক শৈলাশ্রয় : চম্পাকলি আইয়ুব


    প্রাগৈতিহাসিক মানুষের আঁকা ছবি যে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল স্পেনের আলতামিরা গুহায় সেকথা তো স্কুলে থাকতেই জেনেছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশেও যে কয়েক জায়গায় অমন প্রাচীন গুহাচিত্র পাওয়া গিয়েছে তা জেনেছি অনেক পরে। সম্প্রতি এমনই এক আদিম মানুষের বাসভূমিতে গিয়ে দেখা পেলাম অতুল্য এক শিল্পসম্ভারের যা সৃষ্টি করা হয়েছিল প্রস্তর যুগ থেকে নিয়ে মধ্য যুগ অবধি সময়ে। এই জায়গাটির নাম হ’ল ভীমবেটকা শৈলাশ্রয়। অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবরা নাকি কিছুদিন এখানে ছিলেন ও ‘ভীমবেটকা’ নামটি আসলে ‘ভীম বৈঠকা’-র (অর্থাৎ ভীমের বিশ্রাম স্থল-এর) অপভ্রংশ। এখানকার শৈলাশ্রয়ে পাওয়া গিয়েছে আদিম মানুষের আঁকা রাশিরাশি গুহাচিত্র।

    />
    তেড়ে-আসা বুনো শুয়োর

    মধ্যপ্রদেশের রাইসেন জেলায় ১০ কিমি লম্বা ও ৩ কিমি চওড়া এই জায়গাটি ভোপাল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্বে অবস্থিত। শাল-সেগুনের জঙ্গলে ভরা বিন্ধ্যপর্বতের উপত্যকায় অবস্থিত ভীমবেটকা প্রত্নতাত্ত্বিক, সমাজবিজ্ঞানী ও পর্যটক সবার কাছেই অত্যন্ত আকর্ষণীয়। রাতাপানি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের অন্তর্গত এই ভীমবেটকার জঙ্গলে নানাধরনের হরিণ, বুনোশুয়োর, বাঘ, ভালুক, হায়েনা, নীলগাই, বাঁদর ইত্যাদি প্রাণী ও নানা ধরনের পাখি আছে। বৌদ্ধধর্মের কিছু নিদর্শন আছে বলে ভীমবেটকার নাম ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগে ১৮৮৮ সালে নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীকালের এক আবিষ্কারের ফলে এখন ভীমবেটকার প্রসিদ্ধি অন্য কারণে। এখানে শুধু যে ভারতের সবথেকে পুরনো প্রাগৈতিহাসিক যুগের গুহাচিত্র রয়েছে তা-ই নয়, এটি ভারতের মানব জাতির প্রাচীনতম আশ্রয়স্থলও বটে।

    />
    সাদা রঙে আঁকা ছুটন্ত ঘোড়া ও শুঁড়তোলা হাতী

    নানারকম উচ্চমানের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে এখানকার পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে থাকা শৈলাশ্রয়ে মানুষের বাস ছিল লক্ষ বছরেরও আগে থেকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হ'ল এই শৈলাশ্রয়ের অস্তিত্ব জানা গিয়েছে মাত্র ষাট বছর আগে, আর তাও বেশ কাকতালীয়ভাবে। উজ্জয়িনীর বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ববিদ ডাঃ ভি এস ওয়াকঙ্কার ট্রেনে করে ভোপাল যাওয়ার সময় ভীমবেটকার পাহাড়ের গঠনের সঙ্গে ফ্রান্স ও স্পেন-এ দেখা আদিম মানুষের আশ্রয় যেমন পাহাড়ে ছিল তার মিল দেখতে পান। অল্পদিনের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে একদল পুরাতত্ত্ববিদ ভীমবেটকায় অভিযান শুরু করে সত্যিই খুঁজে পান প্রাগৈতিহাসিক মানুষের শৈলাশ্রয়।

    />
    কচ্ছপের আকৃতির পাথর

    প্রায় ষোলো বছরের অনুসন্ধানের ফলে এই অঞ্চলে সাতশ’র কিছু বেশি গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে। তার মধ্যে চারশ’টিতে আছে গুহাশ্রয়ী মানুষের আঁকা ছবি। ভীমবেটকার এই ছবিগুলো হ’ল পৃথিবীর প্রাচীন গুহাচিত্রগুলির অন্যতম। পণ্ডিতদের মতে ওখানকার সবচেয়ে পুরনো গুহাচিত্রের বয়স ত্রিশ হাজার বছর আর নবীনতম ছবিগুলো আঁকা হয়েছিল মধ্যযুগে। ছবি ছাড়া বিভিন্ন কালে ব্যবহৃত প্রচুর পাথরের হাতিয়ার (stone tools), অস্ত্র ও গেরস্থালির সরঞ্জামও এইখান থেকে পাওয়া গিয়েছে। এই সমস্ত নিদর্শন থেকে বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন আদিম মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস। প্রস্তরযুগ থেকে মধ্যযুগ অবধি এখানে মানুষের ক্রমান্বয়ে বসতি ছিল ও তার চিহ্ন রয়ে গিয়েছে পাথরের মেঝে ও দেওয়ালে। নমুনা পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে যে ভীমবেটকার পাথরের মেঝে ও দেওয়াল পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো বাসস্থান। এছাড়া শুঙ্গ, কুশান ও গুপ্ত যুগের কিছু শিলালেখও এখানে পাওয়া গেছে। ২০০৩ সালে UNESCO ভীমবেটকাকে 'ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট' (World Heritage Site) হিশেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

    />
    />
    জু় রক (Zoo rock)-এর ছাদে রাশি রাশি নানাধরনের জন্তুর ছবি – প্রধানত চতুষ্পদ জন্তু সাদা রং-এ আঁকা। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউ বা ছুটছে। এক কোণে একজন মানুষ তীর হাতে এক পাথরের ওপর বসে আছে। মজা লাগল শুনে যে ঐ একই ক্যানভাসে ভিন্ন সময়ে একাধিক বার ছবি আঁকা হয়েছে। নিচের দিকে একসার ছবি লাল রঙে আঁকা, অর্থাৎ তারা বয়সে নবীন। সেখানে যে মানুষদের দেখা যাচ্ছে তারা ঢাল-তরোয়াল, বর্শা বা তীর-ধনুক হাতে যুদ্ধ করছে। সেখানকার একটি জিভ-বের-করা ভয়াল বাঘের ছবি সহজে ভোলবার নয়। তার কাছাকাছি গোমড়াথেরিয়াম-গোছের দেখতে একটি বাঁদর আবিষ্কার করে আমি বেশ পুলকিত হ’লাম।
    অক্টোবরের রৌদ্রোজ্জ্বল একটি দিনে আমরা ভীমবেটকা পৌঁছলাম। মূলত গুহাচিত্র দেখবার আগ্রহেই গিয়েছিলাম কিন্তু বিশাল দুর্গ-প্রাচীরের মত পাহাড় ও ঘন সবুজে ঢাকা বনভূমি প্রথমেই আমাকে মুগ্ধ করল। শুধু গুহা নয়, প্রাকৃতিক কারণে তৈরি এই শৈলাশ্রয়ের অনেকগুলোতে বেশ গাড়ি-বারান্দার মতো পাথরের প্রশস্ত ছাদ রয়েছে যার তলাতেও আদিম মানুষ রোদ-বৃষ্টি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারত। এই শৈলাশ্রয়ে ছিল পর্যাপ্ত জল--আর জঙ্গলের ফলমূল আহরণ করে ও বন্যজন্তু শিকার করে তারা খাদ্যসংস্থান করতো। পরে অবশ্য গুহাবাসীরা চাষবাসও করতে শেখে।

    />
    সাদা রং দিয়ে ভরাট করে আঁকা দুটো দাঁতাল হাতী যাদের শুঁড় শরীর অনুপাতে বেশ ছোট। তাদের একটির পিঠে দাঁড়িয়ে আছে এক মানুষ যার একহাতে রয়েছে অঙ্কুশ ও অন্য হাতে বর্শা। মানুষটির কোমর থেকে ঝুলছে তরোয়ালের মতো কোনো অস্ত্র।

    ভীমবেটকায় দর্শকদের জন্য মাত্র পনেরোটি গুহা নির্দিষ্ট করা আছে ও শুরুতেই Archaeological Survey of India-র এক বোর্ডে তার জন্য স্পষ্ট পথনির্দেশিকা রয়েছে। প্রতিটি গুহার মুখেও একইরকম বোর্ডে সেখানকার দ্রষ্টব্য নিয়ে অন্তত একটি ছবিসহ হিন্দি ও ইংরেজিতে সংক্ষেপে একটু করে লেখা আছে। এক তরুণ গাইডের নেতৃত্বে শুরু হ’ল আমাদের মানবসভ্যতার এই লীলাভূমির সঙ্গে পরিচয়। ভীমবেটকার ছবি সম্বন্ধে গাইড জানালেন যে এইসব ছবিগুলো আঁকা মূলত সাদা ও লাল রঙ দিয়ে--খুব কম ছবিতে রয়েছে সবুজ ও হলুদের ব্যবহার। কিছু ছবি রেখাচিত্র, কিছু আবার রঙ দিয়ে ভরাট করে আঁকা। সাদা রঙ তারা বানাত চুনাপাথর (limestone) থেকে ও ক্যালসেডনি (chalcedony) নামে একরকম সবুজ পাথর গুঁড়িয়ে বা কচি-গাছের ছাল থেকে তৈরি করত সবুজ রঙ। লালরঙ তৈরির জন্য তারা যে মিশ্রণ ব্যবহার করতো তাতে থাকত ম্যাঙ্গানীজ, হিমাটাইট (লোহার আকর), নরম লাল পাথর ও কাঠকয়লা।

    />
    সাদা রং-এ আঁকা এক সার অশ্বারোহী যাদের মধ্যে দু’জন বাঁহাতে বাহনকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে আর ডানহাতে উঁচিয়ে ধরে আছে লম্বাটে কোনো অস্ত্র। শিল্পী এখানে ঘোড়া আঁকায় যথেষ্ট পারদর্শী নয় - ঘোড়ার দেহ আঁকা হয়েছে দুটি ত্রিভুজের শীর্ষ বিন্দুকে মিলিয়ে দিয়ে।

    ছবির রঙের বিশদ বিশ্লেষণে জানা যায় যে রঙের সঙ্গে মেশান হ’ত প্রাণীজ চর্বি, পাতার রস আর গাছের আঠা। নরম ও আঁশ-ওয়ালা ডাল বা জন্তুর লোম ছিল তাদের তুলি। সাধারণত গুহার ভেতর দিককার দেওয়ালে ও উঁচু ছাদে আঁকা ছবি থেকে জানা যায় গুহাবাসীদের দৈনন্দিন জীবনের কথা, পাওয়া যায় তাদের বিশ্বাস ও আচার-রীতির পরিচয়। আর অবশ্যই জানা যায় তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতের বিবর্তনের কথা। প্রথম দিকের ছবিতে একলা মানুষ দেখা যায় কিন্তু পরের ছবিগুলোতে রয়েছে দলবদ্ধ নাচের ছবি, পুজো-আর্চা, শেষকৃত্য, শিকার বা যুদ্ধের ছবি যেখানে অনেক মানুষ এক সঙ্গে আছে।

    />
    লাল রং-এ আঁকা তীর-ধনুক হাতে পদাতিক ও একদল অশ্বারোহী যাদের হাতে উঁচনো লাঠি ও মোটা পাথরের মতো দেখতে অস্ত্র। তাদের কারো কারো মাথায় তিনকোণা টুপি! খুবই সরলীকৃত ঘোড়া তবে তারা বেশ সুসজ্জিত। এই মানুষ ও পশুর ভীড়ের মধ্যে আবার দু’টো পাখিও রয়েছে। ছবির রঙ এতোটাই উজ্জ্বল যে দেখে মনে হয় যেন অল্পদিন আগে আঁকা হয়েছে।

    অর্থাৎ এই ধরনের ছবির মাধ্যমে মানুষের আস্তে আস্তে সামাজিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভীমবেটকায় নানারকম জন্তু ও পাখির ছবি আছে – বাইসন, বাঘ, সিংহ, হরিণ, হাতী, ঘোড়া, বুনো শুয়োর, গণ্ডার, কুকুর, নীল গাই, বাঁদর, কুমীর, ময়ূর ইত্যাদি। আর রয়েছে (সম্ভবত) কল্পিত জন্তুর ছবিও। ঘোড়া বা হাতীর ওপর যখন ছবিতে মানুষ রয়েছে তার থেকে বোঝা যায় যে সেই জন্তুটিকে আদিম মানুষ তখন বশ করে ফেলেছে। মধ্যযুগের ছবিতে শিব ও গণেশকেও দেখা যায়! পণ্ডিতদের মতে রঙিন ছবিগুলো ৫-৭ হাজার বছরের পুরনো আর সাদায় আঁকাগুলো ১০-১২ হাজারের পুরনো।

    />
    লাল রং-এর কয়েকটি রেখা দিয়ে আঁকা অত্যন্ত সামঞ্জস্য-পূর্ণ ছুটন্ত বাইসন।

    প্রথমে গেলাম যে বিশাল গুহায় তাকে বলে সভাগৃহ বা auditorium cave। মনে করা হয় যে সেখানে আদিম মানুষরা একত্রিত হয়ে আলাপ-আলোচনা করত। এটিকে বর্ণনা করা যায় ২৫ মিটার লম্বা একটা উঁচু, দু’দিক খোলা প্রশস্ত সুড়ঙ্গ হিশেবে যার ভেতর আড়াআড়িভাবে রয়েছে আরেকটি দু’দিক খোলা অপেক্ষাকৃত ছোট সুড়ঙ্গ। এই দুই সুড়ঙ্গের সংযোগস্থলে আছে ‘chief’s rock’ বা ‘সর্দারের পাথর’ নামে বিশাল এক পাথর। এই পাথরটি ২.৫ মিটার উঁচু আর ৩.৪ মিটার চওড়া।

    />
    Auditorium Cave বা সভাগৃহ। দূরে ডানদিকে ‘সর্দারের পাথর’ দেখা যাচ্ছে

    ১৯৯০ সালে এই বিশেষ পাথরটির এক উল্লম্ব তলে (vertical plane) পাওয়া যায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন - প্রস্তরযুগের ‘প্রস্তর শিল্পের’ (rock art) সবথেকে প্রাচীন নমুনা বলে যা গণ্য করা হয় সেই cupules বা কাপের মতো গর্ত। cupules হ’ল খুব শক্ত পাথরের ওপর কোনো ধারাল পাথরের অস্ত্র দিয়ে খোদাই করা ছোট গর্ত।

    />
    সভাগৃহে আঁকা কাঠিমানুষ

    ‘সর্দারের পাথর’-এর ওপর ন’টি cupules ও তার কাছে আরেকটি বড় পাথরের ওপর পাওয়া গিয়েছে একটি cupule যার পাশে খোদাই করা আছে আঁকা-বাঁকা এক রেখা। আশ্চর্যের বিষয় হ’ল এই যে ‘প্রস্তর শিল্পের’ বিশেষ নিদর্শন এই cupules অ্যান্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশে পাওয়া গিয়েছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় অনুমান করা হয় যে ভীমবেটকার cupules গুলি নির্মিত হয়েছিল ১,৫০,০০০ বছর আগে। এই সভাগৃহের ছাদে কয়েকটি ছবি আছে। মানুষের ছবিগুলো কাঠি-শরীরের (stick figure) তবে লাল রঙে আঁকা শিংওয়ালা কয়েকটি চতুষ্পদ বেশ সুন্দর। ওখানকার দেওয়ালে কোনো এক শিশুর বাঁ-হাতের ছাপও রয়েছে।

    />
    সভাগৃহে আঁকা চতুষ্পদ জন্তু

    জঙ্গলের পথে গাইডের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে আমাদের ‘দর্শন’ চলতে লাগল। পথে ওঠা-নামা আছে। অচেনা গাছের সৌন্দর্যে বা চেনা পাখির ডাক শুনে আমি মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম। এক জায়গায় দেখলাম জল-হাওয়ার দাপটে পাথর ক্ষয়ে তৈরি হয়েছে এক কচ্ছপের আকার। কয়েকটি গুহা এতো সরু যে ঢুকতে সাহস হ’ল না। একটিতে ঢুকে আমরা অনেকদূর অবধি গেলাম কিন্তু সেটিতে এমন চামচিকের দুর্গন্ধ যে সেখান থেকে চটপট বেরিয়ে এলাম। বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি জায়গাকে বলছে ‘সমাধি-স্থল’; সেখান থেকে একটি কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল--এখন সেটি পুণের সংগ্রহালয়ে রাখা আছে।

    />
    হলদে ফুলদানিতে সাদা বড়-বড় পাপড়ির ফুলে হলুদের ছোপ

    ভীমবেটকা শৈলাশ্রয়ের দ্রষ্টব্য যা কিছু সব দেখিয়ে গাইড বিদায় নিলে আমরা এদিক-ওদিক খানিক ঘুরলাম। আমার মাথায় তখন নানা চিন্তার আনাগোনাঃ যে সৃষ্টির তাগিদে মকবুল ফিদা হুসেন-এর মতো আধুনিক শিল্পীরা নানা জন্তুর - বিশেষত ঘোড়ার – ছবি এঁকেছেন ঠিক তেমনি কি ছিল ঐ প্রস্তরযুগের শিল্পীরও তাগিদ? আদিম যুগে এক সার্থক চিত্রকরের কি তার দলের অন্যদের কাছে বিশেষ কোনো সম্মান ছিল? এইসব ভাবতে ভাবতে এসে বসলাম মস্ত এক গাছের নিচে পড়ে থাকা এক চ্যাপ্টা পাথরে। আমার সামনে বিবৃত মানব-জাতির বিবর্তনের ইতিহাস, যা অত্যন্ত বিস্ময়করভাবে সময়ের করালগ্রাস থেকে বেঁচে গিয়েছে। শুনলাম বটে যে ঘন জঙ্গলের আচ্ছাদন নাকি এই শৈলাশ্রয়কে রোদবৃষ্টি থেকে অনেকখানি রক্ষা করেছে। আমার মনে হ’চ্ছিল যেন আদিম-মানবের এই বাসস্থান ও বিস্তৃত শিল্পশালা অতীতের কাহিনী বর্তমানের কাছে পৌঁছে দিতেই এতোদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে!

    />
    সাদা রং-এ আঁকা একদল মানুষ ‘হাতে হাতে ধরি ধরি’ নাচছে। পাশে একজন একটি ঢোলের মতো বাদ্যযন্ত্র দু’হাত দিয়ে বাজাচ্ছে (লাল তীর চিহ্নে দেখানো হয়েছে)

    যে সমস্ত ছবি আমরা দেখে এলাম তা কি শুধু আদিম মানবের ‘সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’ নির্মিত, নাকি তার আরো কোনো গূঢ় অর্থ আছে? এ নিয়ে পণ্ডিতরা এখনো ভেবে চলেছেন, আমি শুধু নাম-না-জানা সেই শিল্পীদের কালজয়ী শিল্পসম্ভার দেখার আনন্দ নিয়ে ফেরার পথে পা বাড়ালাম।

    অতিরিক্ত তথ্যসংগ্রহঃ

    1. https://en.wikipedia.org/wiki/Bhimbetka_rock_shelters 2. The Cupules on Chief’s Rock, Auditorium Cave, Bhimbetka. R. G. Bednarik. The ARtefact, 1996, Volume 19



    অলংকরণ (Artwork) : ছবিঃ পূষন্‌ আইয়ুব
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)