• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৩ | জুন ২০১৬ | কবিতা
    Share
  • গুচ্ছকবিতা : মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়



    এই অস্থির সময়

    আমার সকাল আর সন্ধ্যার ব্যবধান ক্রমেই প্রলম্বিত হচ্ছে।
    গ্রীষ্ম এলে সচরাচর যতটা হয়, তারো চেয়ে দীর্ঘ।
    আমার চেতন অবচেতন পরস্পরের বিরুদ্ধে যুযুধান।
    আমার নারী সত্তা কপালে হাতে পায়ে ও হৃদয়ে
    বন্ধনকে লালন করছে নিবিড় মমতায়
    তবু আমার আদিম অনন্ত অস্তিত্ব দাবী করছে মনুষ্যত্বের ব্যাপ্ত চারণভূমি।
    আমার নির্মাণ আর সৃজনে আপোষ ঘটছে না কিছুতেই...
    পুরুষের দেওয়া নিরাপদ পরিচয় শীতল ও ক্লান্তিকর
    অথচ অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনাও আজ ক্ষীয়মাণ...

    কাজে কাজেই
    এসব তুচ্ছ কথা
    অসংবদ্ধ প্রলাপ
    সময়ের নিরর্থক অপচয়।
    কাজেই প্রতিবাদী চেতনাকে বিলুপ্ত হতে দেওয়া যাক।
    এসো, ফেরা যাক গতানুগতিকতার গড্ডলিকায়…

    তুমি তো কোনো অনবশ্যক কোলাহল চাও না,
    তাই না, নারী?


    একটি হাইকু

    সেদিনের সাক্ষাৎ   সংক্ষেপ
             চোখের কোনায় ছিল জল
    সময়ের হাতে জাদুদণ্ড
             আজ প্রেম হয়েছে অতল

    তবে তাই হোক…

    বেশ...
    তবে তাই হোক।
    তুমি ফিরে যাও অস্তগামী সূর্যের দিকে চোখ রেখে
    বিকেলের হাত ধরে আমিও যাই কোলাহল পেরিয়ে
    হৃদয়ের জনহীন মানচিত্রে।

    এখানে কৃষ্ণচূড়ার বুকে রঙ
    পলাশে রংগনে এত মাতন...
    রজনীগন্ধা সারারাত জাগে আতর ছড়িয়ে।
    চারিদিকে সোহাগ আর সুখের উল্লাস!
    শুধু বেদনায় মিল হল না তোমার আমার।

    আজ অস্তগামী সূর্যের দিকে চেয়ে তুমি ফিরে যাও
    আমিও যাই... বিকেলের হাতে হাত রেখে
    হৃদয়ের জনশূন্যতায়।


    প্রত্যাশা আজও…

    প্রত্যাশা আজও ঘুমের অতল থেকে চেতনার স্তরে স্তরে নাড়া দেয়।
    জাগরূক করে আমায়, আমার প্রতিটি সূর্যোদয়ের সাথে।
    কয়েকটি শব্দগুচ্ছ, প্রভাতি আলিঙ্গন, একটি উষ্ণতম সাদর সম্ভাষণ,
    কদাচিৎ চুম্বনের অভিলিপ্সা নিয়ে ভোর হয়।

    জানি... সব সুপ্রভাত অস্তগামী আলোয় রঞ্জিতা হয়ে নেবে বিদায়।
    শুধু আকাঙ্ক্ষার বুঝি মরণ নেই!
    লয়হীন, ক্ষয়হীন, বিরাম বিশ্রাম বিহীন তার মাধুকরী জীবনযাপন।
    যুগান্তের অশ্রুপাতে অন্ধ দু-চোখ কোন হুতাশনে দীপ্ত হয়ে জ্বলে?
    কোন মন্ত্রবলে তার শত বিক্ষত জীর্ণ হৃদয় আজও আমায় নিয়ত রক্তাক্ত করে--
    আমার অরক্ষিত অসতর্ক মুহূর্তে!

    এত দিনে!
    এতদিনে পেয়েছি তার প্রাণভোমরার সন্ধান!
    সহমরণে যাব আমরা-–
    আমি ও আমার প্রত্যাশা!


    নির্বাসন

    হৃদয়ের মানচিত্র বদলে যায়
    সীমানা ছোটো বড়ো কালের ঘরে পা রেখে
    একদিন যা ছিল আমার চারণভূমি
    আজ তা অন্য কারো সরাইখানা।
    বসেছে বাজার।
    হারিয়েছে রাখালিয়া বাঁশির সুর অগুন্তি পথিকের কোলাহলে।

    শ্রান্ত দিনের শেষে আজ যদি সে রাখাল পথিক হয়?
    বিস্মৃত অতীতের দাবী নিয়ে যদি সে এসে দাঁড়ায়?
    ওকে যেতে বলে দাও, সুজন...
    তাঁবু ফেলতে বলো আর কোথাও।
    শান্তি ভঙ্গ কোরো না - যাও...
    যাও নির্বাসন।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)