রবীন্দ্রনাথ ২০১৭
নন্দিত কোনও নিভৃত গভীরে কবিতার স্বর করজোড়ে
আমুড়ি-ঝুমুড়ি কেঁদেছে আকুল
গুরুচণ্ডালী থরো থরে।
তার
অশরীরী স্থিতি ছায়ার প্রকৃতি
বিশদ বিষাদে স্তম্ভিত
দীপ্র এষণা, সুখা-সৃক্কণী
প্রেতসম তার সংগীত ও
লেহন করেছে প্রাকৃত আমায়
লজ্জিত করে বারেবারে
অন্ধের মতো স্পর্শ করেছি সব কামনার অগোচরে
তার বিবর্ণ স্মৃতি, মৃত অনুভূতি
যেখানে কবিতা স্পন্দিত,
তার স্তিমিতবাসনাধৃত উপাসনা
হিম জ্বালামুখে বন্দিত
হয় শুদ্ধ চেতনাসিক্ত যাতনা
শোণিতধারায় অঙ্গুলি
প্রবাহিত করে গানগুলি তার
রিক্ত আকাশে
অন্বিত।।
স্বেদবিন্দু
মুখশ্রী ঘিরিয়া আছে বিচূর্ণ অলকদাম
পূষা যেন শেষ বিম্ব আঁকে।
প্রশস্ত কপোলে তার স্বেদবিন্দু টলোমলো করে
(মুগ্ধ আমি দেখিয়াছি)
কিছুটা বিদ্রূপ ছিলো স্ফুরিত অধরে আর
দুচোখে মুদ্রিত হোলে দৃশ্যাবলী আধোচেনা:
হৃদয় ছিঁড়িয়া গানগুলি
যন্ত্রণায় ক্রমান্বয়ে তাহারই চরণে বাজিতেছে!
নীরবে ফুটিয়া উঠে যেন এক অদ্যাখা ভুবন।
সে তাহার মহাবিশ্ব, সেখানে সে নিজস্ব আকাশে
কি প্রবল অহংকারে একা একা ভেসে যায়
নিঃসহায় ভঙ্গুর ডানায়!
ঈশান কোণেতে ঝড়, বৈশাখীর পূর্বাভাষে
থরোথরো রক্তাভ বিমান,
প্রবল কুলীশে হয় জন্মমৃত্যু আলোকিত
জয়ধ্বনি তামস বিনাশে আর দিবস রজনী একাকার।
প্রশস্ত কপোলে তার স্বেদবিন্দু:
অলৌকিক অন্ধকারে নির্বিকার তবু ওড়ে
অপবিত্র কবিতা আমার!
শৃগাল
খণ্ডিত চাঁদের নিচে যূথবদ্ধ শৃগালেরা ভোর রাতে হেঁটে চলে গেলে
একটি দশক নাকি শেষ হয়; শৃগালের নতুন দশকে
নবস্বরে, নবজন্মে, নবনব শৃগালেরা পুনরায় হুক্কাহুয়া করে।
খণ্ডিত চাঁদের নিচে ব্যথা ছিলো কৃষ্ণরাত্রি জুড়ে;
কবিতা দাঁড়িয়ে একা, শূলবিদ্ধ; প্লুতস্বরে আর্তনাদ ঝরে।
নিরন্তর বিষে নীল, অজস্র দশক ধরে গড়িয়েছে রক্ত তার
দলবদ্ধ শৃগালের নিরঙ্কুশ পদযাত্রা ঘিরে।
যামঘোষ নিরন্তর ডাকে: দশকবিহীন কে হে যূথবদ্ধ হোতে অস্বীকৃত
কবিতা সেঁকেছো তবু জীবনের অমোঘ নিয়মে,
আমাদের মতো হও, নত হও তুমি
কে তুমি পেরিয়ে যাও নতশিরে মৃত রণভূমি?
হও অঙ্গীভূত।
কে তুমি ছিটকে যাও ত্রাসে?
কে তুমি রাখোনি হাত আমাদের যৌথ বিশ্বাসে?
কে তুমি ফিরিয়ে দাও ঘৃণা?
কে তুমি বাঁচতে চাও এইসব পরিণাম বিনা?
কে তুমি তবুও ভালোবেসে
কবিতা খুঁজেছো একপেশে
খণ্ডিত চাঁদের এই দেশে
যূথবদ্ধ শৃগালের বেশে।।