• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬৩ | জুন ২০১৬ | কবিতা
    Share
  • গুচ্ছকবিতা : সন্তু ঘোষ


    অভিঘাত

    নির্জনতা জড় হলে বয়েস রেখায়
    খাজনা মিটিয়ে নেয় পরিচিত হাতের উঠোন।
    এসময় কলঘরে বিপন্ন বিলাপে
    কেউ ভিন্নার্থে খুঁজলে বিশিষ্ট গরমজল
    আগেকার মতো—
    জ্যোৎস্নার সমান্তরালে অমোঘ উজিয়ে ওঠে অন্ধকার
    আর ঘাটের মুখরা ভুলে ফিরে যায় স্রোত
    সময়ের অবসন্ন রাগে।

    জুকবক্স

    আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো—আহা কী দরাজ সব পাখি—
    কেউ খুঁটে খায়, কেউ খেটে খায় মাঠে বা প্রান্তরে
    যদিও দৃষ্টান্তে আজ ওখানে জমেছে জুকবক্স
    জমেছে মৌমাছি আর মাইক্রোফোন—প্রকৃত চড়ুইভাতি
    তবু ধরে নিতে দোষ নেই
    মাইক্রোফোনের ভিতরেই আছে প্রকৃত মাঠ বা অনেকটা তেপান্তর
    তবে কেন শাসনে আবদ্ধ খসে যাচ্ছে কিছু কন্ঠস্বর!

    আমাদের সংরক্ষিত জল, সকলেই জানে, এখন প্রধানমন্ত্রীহীন
    এমনকি ট্রানকুইলাইজারের প্রকৃত অর্থও এখন আমরা জেনে গেছি
    তবে কেন এত ঘুম, হে ধর্মাবতার?
    এবার তৃতীয় কোনও পেয়ালায় জমা হোক ভোটপত্রগুলো হে ধর্মাবতার
    আমরাও দেখি,
    প্রাণবন্ত ও প্রিয় খরগোশের বর্ণমালায়
    কীভাবে লুকিয়ে থাকে ছদ্মবেশী আপেলের শব।

    অনস্তিত্ব

    খুব মন্থর কুয়াশা ছিল
    ছিল শীতের তোরঙ্গভর্তি শিশিরের গ্রামাফোন,
    বৈঠকখানার পুরোনো গানগুলো — আর
    ভাঙা বন্দরের টুকরো টুকরো ছবি।
    এমনকী যে সমস্ত নদীগুলো আমার গায়ক বন্ধু হয়ে
    আজও পাঠ্যতালিকায় ঢুকে আছে—
    তারাও ছিল তাদের রং বদলানোর ইতিহাস নিয়ে
    জলের উপর স্বল্পপ্রাণ আলোর মতো।
    ওরা সবাই গ্লাসে-গ্লাস ঠেকিয়ে ভুগছিল বয়ঃসন্ধির জ্বরে

    শুধু কুয়াশা আরও মন্থর হতে হতে অস্ফুটে বলেছিল—
    বন্ধুগণ, সংগ্রামী মানুষের কোনও বৈঠকখানা থাকতে নেই!

    কবিতার ডালে

    ভোরের বাগান ফুঁড়ে ফুটে আছে যমজ টগর—
    সবিনয়ী কিছু ঘাস
    নুয়ে আছে শিশির-বিলাসী
    কানে আসে শিউলি পতনের মৃদু শব্দ
    এও নাকি... কবিতা অসুখ...

    সে অসুখে সিম্ফোনি কোকিল শুনে ভয় পাই
    মনে হয় কবিতা মানুষ করি আমি, আর
    অন্য কেউ কবি!

    প্রতিলিপিহীন

    তুমুল বর্ষাদিনেও শান্ত বসে আছ আজ প্রতিলিপিহীন
    আমিষাসী কাদামাটি থেকে ঝরে পড়ছে কী অমায়িক কষ্ট
    তাই কি জানালাও দূরত্ব মেপে আজ মধ্যাহ্নভোজী!

    টের পাই, বড় ভুলে ভরা শ্রাবণের এই ইস্তেহার!

    ব্যর্থ অনুবাদক আমি
    কিছু না লিখেই তাই ভাঙাচোরা ফিরে যাচ্ছি সহজিয়া বর্ণাশ্রমে—
    যেখানে হুল্লোড়ে বর্ষা
    এমন নিঃসঙ্গতার নাম রাখে ঈশ্বর সাধনা।

    শীতবৃষ্টি

    পিছিয়ে পড়বার আগে দেখে নিতে চাই
    কীভাবে গাছের পাতা ভিজে গিয়ে ঝরে পড়ে শীতের সকাল
    কীভাবে মাঘের গায়ে জড়সড় ফিরে ফিরে আসে
    ফেলে আসা মানসীর মুখ
    এত সুর এত রাগ—সব যদি অভিসারী নেশা
    তবে কাকে বলে চারুকলা—কে আমার সনাতনী প্রিয়া

    আমি তো ছুঁয়েছি তোমাকে হে আমার মাঘী-ফসলের শিশির সকাল
    দেখেছি তোমার বুকে সোনালি পরিখা ঘেরা উন্মুক্ত আকাশ
    তবু কেন আজও আমি উড়ে যেতে পারি না বিনম্র
    হাঁসেদের মুহূর্ত সঙ্গী হয়ে

    পিছিয়ে পড়বার আগে দেখে নিতে চাই
    শামুক খোলসে থাকা বহুরূপী ঘর
    আর তার দর্পণে জেগে থাকা আঁকাবাঁকা মানুষের মুখ।
    চাতকের সুতীব্র তৃষ্ণায় জ্বলে থাকা গাঢ় সিগন্যালে
    যারা খুঁজে পায় আগুনের মুখ
    আমিও তাদের মতো খুঁজে পেতে চাই পথিকের শ্যেন দৃষ্টি
    আর সড়কের বুক ভরা ব্যথা
    সহস্র যোজন হেঁটে যেতে চাই নীল সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে
    দেখে নিতে চাই বালিতে লুকানো লাল কাঁকড়ার কুঁড়ে ঘর

    পিছিয়ে পড়বার আগে বুঝে নিতে চাই
    নিঃসঙ্গ এলাকায় কীভাবে আঁতুড় গড়ে শ্বাপদের নির্বিকার হাসি!



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ - অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)