• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৬২ | মার্চ ২০১৬ | ভ্রমণকাহিনি, প্রকৃতি, বাকিসব
    Share
  • বালিয়াড়ি সারসের গান : ছন্দা চট্টোপাধ্যায় বিউট্রা

    মার্চ-এপ্রিল মাসের এই সময়টা নেব্রাস্কায় ভারি সুন্দর। এখানে বসন্তকালের শুরু হয় হাজার হাজার বালিয়াড়ি (Sandhill) সারসের গান দিয়ে। সারা শীত ফ্লোরিডা, আরিজোনা, ও টেক্সাসে কাটিয়ে এরা গ্রীষ্মের সময় ফেরে আলাস্কা ও উত্তর কানাডাতে। যাবার মাঝপথে নেব্রাস্কায় কয়েক সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়ে যায়। এখানে দক্ষিণ-পূর্বে প্ল্যাট (Platte) নদীর তীরে ক্ষেত-খামারে (প্রায় ৭৫ বর্গমাইল) ৫০০,০০০ পাখি সমাবেত হয়। পৃথিবীর সবথেকে বড়ো সারস কন্‌ফারেন্‌স!





    ভুট্টা ও গমক্ষেতে ফসল তোলার পর পড়ে থাকা কুটো-ছাঁটাগুলো এদের খাদ্য। প্ল্যাট নদীটা অগভীর ও বালিয়াড়িতে ভর্তি। এই জায়গাগুলোই পাখিদের বিশ্রামস্থান। তাই এদের নাম--বালিয়াড়ি সারস।


    প্ল্যাট নদীর পাশে পাশেই চলে গেছে হাইওয়ে আই-৮০ (Interstate 80 বা সংক্ষেপে I-80); সারা দিনরাত ঝমঝম করে গাড়ি যাচ্ছে। কিন্তু কয়েক গজ দূরেই পাখিদের এজন্যে কোনো হেলদোল নেই। ওরা নিজের মনে মাটি খুঁটতে ব্যস্ত।

    একসঙ্গে এত পাখি খুব কমই দেখা যায়। তাই এই জায়গাটা পৃথিবী-বিখ্যাত। সারস-দর্শনের জন্যে দেশবিদেশ থেকে পক্ষীপ্রেমী ও পক্ষীবিশারদদের দল এখানে আসেন। কয়েকবছর আগে অব্দি আমরা হাইওয়ের পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পাখি দেখতাম। এখন ট্যুরিস্ট আকর্ষণ করতে ব্লাইন্ড (blind) তৈরি হয়েছে।





    তাঁবুর মতো ছোটো জায়গায় লুকিয়ে বসে অনেক কাছ থেকে পাখিদের দেখা যায় ও ছবি তোলা যায়। এগুলো খুবই জনপ্রিয় ও অনেকমাস আগে থেকে রিজার্ভ করতে হয়। সেখানে ক্যাম্পিং-এর ব্যবস্থাও আছে। রাত কাটিয়ে সূর্যোদয়ের সময়টা পাখিদের ছবি তোলার জন্যে সব থেকে প্রশস্ত।




    প্রথমবার আমি দেখতে গিয়েছিলাম আমার দুই মেয়েকে নিয়ে। আশা ছিলো বেড়াবার সঙ্গে সঙ্গে একটু প্রকৃতিশিক্ষাও হবে ওদের। ওরা কিন্তু অনিচ্ছুক, গোমড়া মুখে কানে ইয়ার-পড গুঁজে গাড়িতে উঠল। মাঠে নামার সময় আলের খোঁচা খেয়ে ও গোবর মাড়িয়ে আমরা পাখিদের বেশ কাছেই পৌঁছে গেলাম। ওরা কিন্তু আমাদের দেখে একটুও ব্যস্ত হোল না। হয়তো এরা পাপারাৎজি চিনে গেছে! আমার ইচ্ছা ছিলো উড়ন্ত অবস্থায় ওদের ছবি তুলি। কিন্তু পাখিরা উড়তে মোটেই ইচ্ছুক নয়। শুধু খেতেই ব্যস্ত! একটু হুশ্‌হাশ করলাম কিন্তু ওরা শুধু একটু নড়ে চড়ে বসলো।





    ঢিল-টিল মেরে উত্যক্ত করার ইচ্ছে ছিলো না। কী করা যায় ভাবছি হঠাৎ নিঃশব্দে একটা মালগাড়ি দেখা দিলো। ক্ষেতের মধ্যে রেল-লাইনটা আগে চোখে পড়েনি। শস্যাদি নিয়ে যাবার জন্যে এরকম মালগাড়ি একেবারে ক্ষেতের ভিতর দিয়ে যায়। হঠাৎ গাড়িটা আমাদের দেখে তীক্ষ্ণ হুইসেল দিলো। আর সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁক বেঁধে আকাশে উড়ল হাজার-খানেক সারস। তাদের কলধ্বনি ট্রেনের হুইসেলকেও ছাড়িয়ে যায়।

    উজ্জ্বল নীল আকাশে ধূসর সাদা পাখার মেলা--মাথায় সুন্দর লাল তিলক। আমি আর ফটো তুলবো কি, ক্যামেরা আর বাইনোকুলার ছেড়ে শুধু দু'চোখ ভরে সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে থাকলাম। আমার দুই কন্যাও আইপড ভুলে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো।





    গাড়ি চলে যাবার পর পাখির দল আবার মাঠে নামল। বেলা পড়ে আসছে। আমরা নদীতে সূর্যাস্ত দেখার জন্যে একটা ছোটো পুলের উপর উঠলাম। সোনালী আকাশে ঝাঁক বেঁধে পাখির দল আসছে--নদীর বালিয়ারিতে সবাই রাত কাটাবার জায়গা খুঁজে নিচ্ছে।

    হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদল হরিণ জলে নামল। সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে সারস ও হরিণের ছায়া প্ল্যাটের সোনালী জলে একাকার হয়ে গেলো।





    ইচ্ছুক পাঠকদের জন্যে কয়েকটি আন্তর্যোগঃ

    http://www.nebraskaflyway.com/ (The Great Migration)

    http://visitkearney.org/sandhill-cranes/

    http://rowe.audubon.org/ (Iain Nicholson Audubon Center at Rowe Sanctuary)



    অলংকরণ (Artwork) : ছবিঃ লেখক
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments