ছায়া
ছায়ার নিজস্ব কোনো কাজ নেই।
বারান্দার অলস রোদেতে দেখি ঠ্যাকায় নিজের পিঠ
ধীরে সুস্থে পড়ে যায় ভালোলাগা বই।
অথবা ভেতর ঘরে দেয়ালে টাঙানো ছবি, ছায়া তার কাছে
হঠাৎ বুলিয়ে দ্যায় আলতো আঙুলটুকু,
রোদ ভাসে পড়ে থাকা সেলাইয়ের কলে।
ছায়ার মালিক ছিলো এইখানে একদিন, আজ নেই, কেউ নেই,
একাএকা ছায়া তাই দুরন্ত স্বাধীন।
ছায়া আজ বাতাসের সাথে বয়ে যাবে
ছায়া আজ আকাশ ছাপিয়ে উঠে ঘোররাতে নক্ষত্র কুড়োবে,
ছায়া আজ সমস্ত বিপন্ন দিন জেগে জেগে জেগে থেকে
মিশে যাবে রাতভরা বিষণ্ণ মায়ায়!
ছায়ার মালিক ছিলো কেউ বুঝি –- কেউ নেই এখানে এখন,
ছায়ার নিজস্ব কোনো লাভ নেই, লোকসানও নেই,
আলোয় আলোয় ভাসে বুঝি কিছু বিস্মৃতি, হাওয়া বয় একাকী ছায়ায়;
জানলায় থমকে দাঁড়িয়ে ছায়া সেই যেন কবে থেকে
চেনা ছায়াটির খোঁজে চোখ রেখে ছায়ায় ছায়ায়!
বসন্তবিলাপ
হঠাতই আসবে কেউ, বনে বনে বসন্তবিলাপে
সাপের খোলস ঝরে যাবে।
হঠাতই বইবে হাওয়া হিম শীত শেষ হলে
মৃদুমন্দ হিংস্র বৈভবে।
তুমি কি এসবই চেয়ে বসে আছো? বসেছিলে?
নীলাভ আকাশ দেখে হেসেছিলে প্রবল হেলায়,
ভেবেছিলে এসব বিচ্যুতি
কখনো তোমার নয়, গাঢ় কৃষ্ণ মহাকাশে
অগম্য অতীত থেকে হিংস্র পাখি উড়ে চলে যায়
ভালোবাসা নিয়ে পদতলে।
তুমি তার চোখের আগুনে
পুড়তে পুড়তে জানি জেনে গেছ
আমাদের বিপন্ন সময়:
এখানে মৃত্যু স্থিত
এখানে স্বপ্ন মৃত
এখানে ক্লান্ত গান
তবু বেজে যায়।।
পুরাতনী
আহা সে কোন প্রাচীন কবিতাতে তাহার স্তবে স্ফুরিত নীরবতা
ব্যাকুল যত আলোক তারে ঘিরি নৃত্যপরা, কম্বুস্বরে তারই
ফুটিত ফুল সালোক সংশ্লেষে, তাহার কথা লিখিয়াছিলো কবি
নিপুণ হাতে ভূর্জপাত ভরি।
বন্দ্যে তারে সূর্য সেনাপতি
চন্দ্র রোজ গাহিত তার স্তুতি
তাহারে হেরি সমীর উঠি নাচি
স্পর্শ করে সজীব কোমলতা।
আহা, তাহার ত্বকে কোমল পেলবতা
তাহার কেশে দিগন্তেরই ছায়া
উপলরাশি ঘিরিয়া দেখি ভাঙে
তাহার হাসি সহজ ঢেউয়ে গড়া।
কত যে গান লিখিত তারে ঘিরি;
তাহারা যারা জানিত তারা জানে
তাহার জিভ চিরকালীন চেরা
ছোবলে বুঝি তীব্র বিষ ছিলো!