অজাত শব্দের কাছে
অজাত শব্দের কাছে দীর্ঘদিন নতজানু হয়ে আছি
ঈশ্বরীর মত রোজ সে আমায় শাসন করেছে
যতই যাচ্ঞা করি ভালবাসা ভুল করে কখনো দেবে না ...
একনিষ্ঠ তাও মাথা নিচু করে থাকি।
এমন অপূর্ব প্রেম সে কোথায় পাবে?
কে এমন নত নেত্রে সম্মুখে দাঁড়াবে?
চোখের তলায় কালি, উঁচু হয় চোয়ালের হাড়
শরীরের পাড় ভাঙে, বেড়ে যায় বয়স আমার
তাতে তার কী যায় আসে? আমি যদি মরে যাই সে
খুঁজে নেবে অন্য প্রেম, কম প্রেমী আছে নাকি দেশে?
রক্ত
ছুঁচের মাথায় তার আঙ্গুলে এক বিন্দু রক্ত দুলে উঠল
এমব্রয়ডারির সুতো হাত লেগে গড়িয়ে গেল টেবিলের নীচে।
অন্ধকার হয়ে আসছে, দীর্ঘ হচ্ছে জানালায় ছায়া
মধ্যবিত্ত মফঃস্বলে বিকেল পেরিয়ে গেল, ফেরার সময় হল?
এক্ষুণি সাইকেলের ঘন্টি বাজবে কী তিনবার চেনা?
গন্ধরাজ লেবুর গাছ লাগিয়েছিল ছাদের টবেতে
জল দিত সুগন্ধের লোভে, মাটি খুঁড়ে দিত
তার হাতে গাছ ভাল হত, লোকটার শখ ছিল
মিলের চাকরী থেকে ফিরে নিয়মিত জল দিত বেলি জুঁই চন্দ্রমল্লিকায়—
ছাদের কিনারে আজ ভাঙাচোরা কতগুলো টব পড়ে আছে।
অস্তিত্ব
১
বিধ্বস্ততা ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানো সহজ নয়।
যাদের ঘরবাড়ি ভাঙে তারা জানে ...
ধূসর স্মৃতির দিকে মৃত ধুলো ওড়ে
হাঁটু অব্দি ডুবে যায়, কালো নখে মাটি লেগে থাকে।
বুকের পাথর চেপে সারাদিন পাথর সরায়
বাঁচাকুচা যা যা হাতে ঠেকে, অস্তিত্ব কুড়িয়ে এনে
নীল প্লাস্টিকের শীট চাপা দিয়ে রাখে।
ভালবাসা খুঁজে পেতে রাতভোর আগুন জ্বালায়
শীত-হাত সেঁকে নেয় নিভু নিভু আঁচে।
যদিও অনিচ্ছাকৃত, পৃথিবীতে বহু লোক এভাবেই বাঁচে।
২
বিপন্ন অস্তিত্ব জুড়ে মেঘ জমে আছে
এক পশলা বৃষ্টি এল সহজ সরল
অথচ পোষাক ছাড়া কিছুই ভেজে নি
মেঘের ইচ্ছার কথা একমাত্র জানে শুধু জল।
দুহাত বাড়িয়ে রাখা আর্দ্রতার দিকে
জলের শাসন তার হয় নি কায়েম
বৃষ্টি এলে শরীরের জন্মদোষ জাগে
শব্দের পরিধি থেকে অনায়াসে উঠে আসে প্রেম …
পুরোটাই শ্লীল নয় কিছুটা অশ্লীলও
দ্রাবিড় অঞ্জলি ভরে শুধু তার নাম লেখা ছিল।
৩
অস্তিত্বর গল্প কথা তোমাকে শোনাব
হে শব্দ, তুমিই বুঝবে তার পর-নির্ভরতা
কেন সে প্রতিটি দিন সিঁড়ির ওপর
বিগত রেলিঙ ধরে উঠে যেতে চায়
সেখানে সে যত্ন করে করোটীর নীচে
হাড়ের মতন সাদা ফুল ফুটিয়েছে ...
গন্ধহীন স্পর্শহীন অনুতাপহীন
অন্ধকারে ফুটে আছে স্মৃতির অভাবে
ও শব্দ চল না আজ তোমাকে সেখানে
হাত ধরে নিয়ে যাব, যাবে?
৪
আড়ালে লুকিয়ে রাখি, যেন কোন নিশিগন্ধা নারী
স্বামী যদি দেখে ফেলে লজ্জার শেষ থাকবে না।
অথচ সবাই জানে, আশ-কথা পাশ-কথা বলে
আমার বোকামি দেখে মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসে।
সে অবশ্য নির্দ্বিধায় জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে আসে
প্রগল্ভ আলোর মত, নিয়মিত জ্বালাতে আমায়।
আমার অসতী বোধ আমাকেই কুরে কুরে খায়
তাকে অন্তরালে রাখা, প্রতিদিন আমারই তো দায়।
অনেক গভীরে তাকে পুঁতে রাখি, যেমন নাবিক
ফুলের টবের নীচে ছেড়ে যায় ডুপ্লিকেট চাবি।
৫
এক দিন ছেড়ে যেতে হবে খুব প্রিয়
পাখিদের ওড়াউড়ি, সমতল, আকাশমণিও ...
ইচ্ছে করে চন্দন বনের মৃদু গন্ধ নিয়ে যাই
কৌটো ভরে, হয় তো যেখানে যাচ্ছি সেখানে পাব না।
মায়াশব্দ জোর করে সঙ্গে যেতে চাইলে, চলুক
আমি তো ডাকিনি তাকে, পোষাকে-আষাকে
বিষাদের চোরকাঁটা যদি লেগে থাকে, থাক ...
হে পবিত্র অন্ধকার, পতিতোদ্ধারিণী গঙ্গে
অস্তিত্বর সাথে অস্থিও নিয়ে যাও সঙ্গে।