লেবু পাতা
ছোড়দি যেন নদীর মত ছিল
ফুরলো কবে কেউ রাখেনি হদিশ
হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম
বলল – “ভাই, খবর দিবি? যদি
একটি বার আসতে পারে বাদল ...।”
বাদল মানে ভোলা কাকার ছেলে ...
ছোট বেলায় যাওয়া-আসা ছিল।
বৃষ্টি হত বাদলদারা এলে
অবধারিত, সারা পুকুর জুড়ে।
গন্ধরাজ লেবু্র বীজ কবে
বাদলদাই রাখত তার খোঁজ
ছোড়দি নাকি ছড়িয়েছিল টবে ...।
সে বীজ থেকে বেরিয়েছিল চারা?
লেবুর ফুল এসেছিল কি পরে?
কোথায় যেন বাদলদারা থাকে
বাগুইহাটি না আরও উত্তরে?
খুঁজতে গিয়ে বৃষ্টি এল জোরে
কলকাতাতে আকাশ ভাঙা জল।
পেরিয়ে গলি। সন্ধে বেলা নেই
লোক জনের বিশেষ চলাচল।
একটি শুধু রোগা মানুষ দেখি
বসে রয়েছে বারান্দাতে একা
ভিজে যাচ্ছে খেয়াল নেই তার।
অনেক কিছু বাদলদা আজকাল
ভুলে যাচ্ছে, তবু আমায় দেখে
চিনতে পারে, ইশারাতেই ডাকে
বসতে বলে। কাছে যেতেই হঠাৎ
লেবু পাতার গন্ধ আসে নাকে...।
শকুন্তলার পতিগৃহে যাত্রা
শকুন্তলা ফুল গুঁজে কুন্তলে
দাঁড়িয়েছিল সাউথ সিটি মলে
লক্ষ বছর অপেক্ষা দুষ্ম্যন্তর
প্রেমিক, না কি আসলে দুষমন তোর?
শকুন্তলার ভয় করে, রাত দিন
তল পেটে তার কাল থেকে চিন চিন
অসাবধানের শরীর বাড়ছে আস্ত
পেটের ভিতর, তা প্রায় কয়েক মাস তো।
আংটি একটা পরিয়ে ছিল বটে
আঙ্গুলে তার, গঙ্গা নদীর তটে।
তখন প্রেমে ভাসছে দেহের প্রান্ত
আপ্ত বাক্য শোনাচ্ছে অবান্তর।
ক’দিন যেতে বন্ধ হল ফোন
পেটে তখন খিদের জ্বালাতন।
চোখের জলে শুকোচ্ছে লাবণ্য
কঠিন রোগে শয্যাশায়ী কণ্ব,
হাসপাতালে লম্বা হচ্ছে বিলও।
ঘটি বাটি বাদ বাকি যা ছিল
বেচার পরে, শেষ দেখে সম্বল
আংটি খানা গিল্টি, সোনার জল।
আজকে হঠাৎ অনেক কাজের ফাঁকে
দুষ্ম্যন্তর মনে পড়েছে তাকে।
রাজার হাজার কাজ, সে কোন ছার
এমন কত করেছে পাচার।
কাচের পুতুল, হরিণ শিশু গোঠে
পড়ে রইলো, কন্যা এয়ার পোর্টে।
শকুন্তলা সুখেই আছে প্রেমে
আরব শেখের নিষিদ্ধ হারেমে।
ইউথ হস্টেল
মামাল্লাপুরমে গিয়ে কিছুই করিনি মদ্যপান রামী খেলা ছাড়া। সমুদ্রের কাছে
গিয়ে দুদণ্ড বসিনি। আর এইস্থানে অফিসের মানুষের সাথে কখনো আসব না। ইউথ
হস্টেলে অর্ধেক রাত্তির অব্দি আলো জ্বলে, ভেপারের মধ্যে বসে অনায়াসে তাস
খেলা যায়। দরকারে চেঁচিয়ে বল্লেই, প্লেটেতে করে সামুদ্রিক চিংড়ি দিয়ে
যায়, ঘাসে, লনের টেবিলে। চোখের গভীরে গর্তে কালি পড়ে, বালি পড়ে; সকালের
রোদে জানলায় আধখানা শার্ট পুড়ে যায়, তারপরে ঘুম ভাঙ্গে। এস্পিরিন, আরাম
শাওয়ার নিয়ে চেন্নাই টাউন, সাপ আর কুমীরের পার্কে চলে যাই।
আবার কখনো এলে, বালিকার হাত ধরে ঝিনুক কুড়াব; বালি থেকে শব্দ ও শব্দের
অনুগত স্তব্ধতা কুড়াব। ঝিনুক শাঁসের মত জলের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে যাব,
নিকোটিন ছেড়ে দেব, মামাল্লাপুরমে এলে এইবার বালিকার হাত ধরে সমুদ্রের
কাছে গিয়ে দুদণ্ড দাঁড়াব।
কাচ
পায়ের ভিতর কথা বলে উঠল শার্শি-ভাঙা কাচ
বন্ধুর মতন কথা বলে উঠল।
এতদিন বারান্দায়, স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিল, ডেকে উঠল।
জল স্পন্দমান, ঠিক যেন ছুঁয়ে গেছে পাখি
পাখি হয়ে এসেছিল, বৃষ্টি হয়ে ফিরে গেছে।
বিগত রেলিং শব্দহীন ভিজে, ধরে দাঁড়াতেই
ভাঙা কাচ বলে উঠল – তুই
রক্তের ভিতর যেন নাম ধরে ডেকে উঠল
যাই বলে সাড়া দিই
লঘু এক কাচ হয়ে মুখোমুখী বসি
এসময় কেউ যদি আসে
দেখে নেবে যে দেওয়ালে ভর দিয়ে আছি।
পারদ
প্রশস্ত অন্ধকার লেগে আছে মধ্যে, চুলে, মূলে
জন্তুর চোখের মত আংটি জেগে আছে, ঈষৎ আঙ্গুলে
১ পাখি, ২ পাখি জল ভেবে রাতের লোশন ছোঁয়
উড়াউড়ি খেলা করে
উড়ে যায়, উড়ে আসে, আলগোছে ঠুকরে দেয়
ক্রীমের মহিমা
এইভাবে ভুল হয়
ভুলে থাকে, ভুল নিয়ে থাকে, মেষবালকের মত
আঁজলা ভরে মৎস্যগন্ধ জল চোখে দেয়
ধুলো যায়, বালি যায়
এই সফলতা ভেবে তাহার বালকবোধ
দুপাক নেচেও নেয়
তারপর ভুল বোঝে
অগম্য জলের থেকে উঠে আসে
অর্ধ-প্রসারিত হাত
সজ্ঞানে কখনো প্রীতি-পারদ ছোঁবে না
সজ্ঞানে কখনো প্রীতি-প্রচ্ছদ ছোঁবে না
অসুখ
পরিত্যক্ত রেল লাইনের পাশে পা
ভাঙা পোস্ট, ছেঁড়া ক্যাটেনারী
আগাছায় লাল গিরগিটি নেমে যায়।
অন্যের অসুখ পোষা কুত্তার মতন
সঙ্গে হাঁটে, পা জড়িয়ে ধরে;
পদক্ষেপ সরে যায় এপাশ ওপাশ।
আঁচড়ের রক্তদাগ থেকে ক্রমে ভয় বাড়ে
ঘাসতিল হাতড়ে খুঁজি পেঁজা তুলো, প্রাচীন ডেটল।
এই নীল বোধের অসুখ
এই হীন অন্যের অসুখ
এই, হ্যাট যাঃ।