আয়না
সবার হাতে একই রকম
মন দ্যাখানো আয়না;
কেউ দেখতে চায়
কেউ চায়না।
(আহা আজ তার বাসনাবাহিত বায়ু
জুড়াবে যে তার বিষাদ-দগ্ধ স্নায়ু
চেয়ে নিরাময় রোদ্দুরে রোদ্দুরে!)
সবার হাতে একই রকম
মন দ্যাখানো আয়না;
কেউ দেখতে পায়
কেউ পায়না।
(আহা আজ তার বেদনাবাহিত বায়ু
আহা প্রেমহীন অনন্ত পরমায়ু
ভেসে আছে শুধু হিংস্র অন্ধকারে!)
সবার হাতে এ কী রকম
মন দ্যাখানো আয়না?
দেখতে চেয়েও
দেখতে পাওয়া
যায়না!
উড়ান
সবাই এসেছে উড়ে যাবে বলে
মদির যুবতী, অধীর যুবক
হিসেবী ব্যাপারী, সুধীর স্থবির
ডানা মেলে উড়ে চলে।
শুধু একজন পারেনি উড়তে
সারাদিন গেছে যাতনা জুড়তে
সারা গায়ে ক্ষত, কেবল নিহত
কামনা বয়েছে।
হঠাৎ ভেঙেছে রূপকথা গুলো
বৃষ্টি বাতাস চুল এলোমেলো
নিকষিত প্রেম, নিকোনো অশ্রু
তাকে যে বিঁধেছে।
সবাই উড়েছে বসন্ত রাতে
কি যে উল্লাস শ্বাপদের দাঁতে
বিক্ষত একা ডানাহীন কেউ
নীরবে কেঁদেছে।।
ঊর্ণনাভ
অরাযুকী নদীকুলে নিশীথ সূর্যের দেশ, সেইস্থানে ব্যাকুল বালিকা।
তাহার সোনালী চুলে চনমনে রৌদ্র হাসে,
কেহ বা কাহারা তাহা মুগ্ধ হয়ে দ্যাখে রাত্রিভর –
আমি দেখিনাই।
তাহার মরালী-গ্রীবা হয়তো রক্তাক্ত ছিলো
আমি বুঝিনাই।
আমি শুধু দেখিয়াছি নিশীথ সূর্যের দেশে একাকী হাঁটিয়া চলে
কোনও এক বিপন্ন বালিকা।
আহা এই নদীকূলে, চনমনে রৌদ্র চুলে, একাকী হাঁটিয়া চলে কে যে;
আমি তার মুখ দেখিনাই।
সে বুঝি গাহিতেছিলো গহীন গানের কলি
আমি তার কিছু বুঝিনাই।
অথচ নিশ্চিত জানি পথপ্রান্তে আছে এক রৌদ্রহীন তমিস্র বিবর,
আমি জানি সেইখানে ধৈর্যবান ঊর্ণনাভ আজও তার প্রতীক্ষায় আছে—
আহা দ্যাখো, সারারাত্রি নিশীথ সূর্যের দেশে চনমনে রৌদ্র ফুটিয়াছে।
প্রস্থান
কে যেন বিভিন্ন গান একই সুরে বারবার গেয়ে
চূড়ান্ত নিশ্চিত করে বলে গেছে কোনোদিন
আর আসবেনা।
আবাহন নেই তাই এই রাজ্যে বিসর্জনও নেই,
কবিতার দগ্ধ ক্ষেতে এইখানে দিবারাত্র পঙ্গপাল ওড়ে
পরমানন্দে গান গেয়ে যায় সুপ্রাজ্ঞ রাসভ
করুণ বসন্তগাথা কালোয়াত বায়সের সুরে।
চলে যায় –
চলে যেতে হয় বলে তাই কেউ চলে যায় একা,
এই স্বর্গ ছেড়ে যায়
ছায়াহীন ভৌতিক মানুষ এক – নখে দাঁতে উপেক্ষার বিষ।
ছেড়ে যায় এই রাজ্য, রাজপাট বন্ধু ও স্তাবক
কী যেন খুঁজতে চেয়ে চলে যায় নির্বিকল্প বোকা
ভীষণ ঊষর দেশে কবিতার নিষিদ্ধ প্রাঙ্গণে।।
আঁখি
ভুবন জুড়ি বিরাজে এক আঁখি
তাহার কথা বলিতে থামি আমি
শব্দহীন রাতের কবিতায়
সে আঁখি শুনি কাব্য অনুগামী!
আমি তো জানি আমি যে পরাজিত
দ্যাখ হে কারা জয়ধ্বনি দ্যায়
দ্যাখ হে কোন প্রবল ক্যাকোফোনি
সে নীরবতা হারানো কুয়াশায়!
গহীন রাতে বাতাসে শুধু গ্লানি
ছায়ারা হাঁটে, ত্রস্তে সরে যায়
আমার ঘরে জানালা জোড়া আলো;
বড্ড ভালো বড্ড অগোছালো
নব্য গান কাব্য-শহরেতে --
আর কী আছে বাকি?
আহা মিলেছে জুটি কবিতে আর প্রেতে
আহা বেদম নাচ চাঁদের কবরেতে
দেখিয়াছিলো এমতি সেই আঁখি
ক্লান্ত আঁখি –- মৃত্যুভয়ে ভীত!