• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৯ | এপ্রিল ২০১৫ | গল্প
    Share
  • চেনা পথের বাইরে : হাসান জাহিদ




    এক জীবনের কত রং? দুলতে দুলতে উত্তর খুঁজছিলেন ফয়েজ সাহেব। স্ত্রী এই একটি জীবনে রঙের বহু ভেল্কিবাজি দেখিয়েছেন। তিনি নিজেও রঙের যৎসামান্য কারুকাজ করেছেন। এখন বিবর্ণ পাত্রের রংতুলি ফুরিয়ে গেছে--সামনে বিছিয়ে আছে ধূসর গাঢ় রঙের চাঁদোয়া। এখন রঙের খেল দেখাবার পালা দুই ছেলেমেয়ের। দুটি স্তরে বিভক্ত মনের এক স্তরে তিনি ভাবেন বর্তমান জীবন যাপনের কথা, অন্য স্তরে তাঁর চোখে ভেসে ওঠে ফেলে আসা সাজানো সংসারের এক বর্ণিল ট্যাপেস্ট্রি। বারান্দার রকিংচেয়ারে বসে তিনি দুলতে থাকেন অতীত ও বর্তমানের দোলাচলে।

    সারেঙ্গির করুণ সুরের মতো একটা সুর ছড়িয়ে পড়ে তাঁর চারপাশে। কানের কাছে বাজতে থাকে সেই চেনা গানঃ ‘আমার কিছু কথা ছিল...কিছুই তো আর যায়না শোনা/ কার কথা কে বুঝবে বলো/ বুঝতে হলে কথার মানে/ চেনা পথের বাইরে চলো...’।

    মনে হয়, এখন বুঝি তিনি চেনা পথের বাইরেই চলছেন। কত দ্রুত সব বদলে গেল। যে বিজলি বেগম আগে বিজলির মত চমকাতেন কিন্তু বারিপাত করতেন না, সেই বিজলি বেগম আষাঢ়ের ঘ্যানঘেনে বৃষ্টির মতো কাঁদছেন। নিজ বাসভূমের মায়ায় সদা-কাতর স্ত্রী সইয়ের আকস্মিক মৃত্যুসংবাদ শোনার পর থেকে আরো কাতর হয়ে পড়েছেন।

    বিজলি বেগমের দুর্দশায় ফয়েজ সাহেবের ভেতরে একমুঠো করুণা চঞ্চল অঞ্জনের মতো একবার গাছের খোড়লে ঢোকে, আবার বের হয়ঃ বুঝে উঠতে পারছেন না স্ত্রীর কাতরতায় তাঁর নিজের কতখানি কাতর হওয়া উচিৎ। আজীবন তাঁর কেবল মনে হয়েছে বিজলি বেগমের কাছে তিনি হেরে গেছেন, নিষ্পেষিত হয়েছেন এমন কি অবহেলিতও হয়েছেন। যখন এসব হাওয়ার মধ্যে ছিলেন তখন তিনি রা করেননি। কেন রা করেননি, এবং করা যে উচিৎ ছিল, সেসব ভেবে তাঁর মনে অহর্নিশ রাগ জমা হয়। তাই স্ত্রীর দুঃখে ঢালাওভাবে সমব্যথী না হয়ে খানিকটা দর কষাকষির মতো করে বললেন, ‘কি আর করবে, নিয়তির কাছে মানুষ বড় অসহায়’।

    সমুদ্রতলে বয়ে যাওয়া অদেখা স্রোতের মতো একটা অদৃশ্য কিন্তু অনুভব্য ফারাক যেন বিরাজ করছিল দু’জনের মাঝে। সেই ফারাক খানিক হলেও ঘুচল এদেশে পা দিয়ে। দু’জনেরই মনে হয়েছিল সোনার সংসার ভেঙে গেছে। তানপুরার তার ছিঁড়ে গিয়ে বেসুরো রাগে ভুবন ভরে গেল। বিজলি বেগম আসতে চাননি। আসতে চাননি ফয়েজ সাহেবও। কিন্তু ছেলেমেয়ে যেদিকে ধাবিত হবে, তাঁদেরকেও তো পিছু হটতে হবে। সেই স্বপ্নের দিনগুলো পেরিয়ে দুই সন্তান সাবালক হয়েছে। সেদিনের তুলতুলে দুই শিশু আজ চালকের আসনে আসীন। ওরা এখন বাপ-মাকে শাসন করে আর চোখে চোখে রাখে।

    দুলতে দুলতে ফয়েজ সাহেবের চোখে ভেসে ওঠে দুইটি শিশুর মায়াময় মুখ। দুলতে দুলতেই ফয়েজ সাহেব ফিরে গেলেন সেই দিনগুলোতে। বিজলি বেগমের সেই শাসনামলে সেই অম্ল-মধুর সময়টাতে। স্বামীর সিনেমা দেখা বা অলসতাকে স্ত্রী বাঁকা চোখে দেখতেন। ফলে ফয়েজ সাহেব শান্তিতে সিনেমা দেখতে বা আরাম করে কুঁড়েমি করতে পারতেন না। তিনি বিস্ময়োপহত হয়ে দেখতেন--বিজলি বেগম নিজে আলস্য করছেন। তখন তিনি স্ত্রীর সাথে কথা বলতে গেলে খেমটা মেরে বিজলি বেগম বলে উঠতেন--‘দেখছো না বিশ্রাম করছি?’ তিনি বলতেন, ‘আর আমি বিশ্রাম করলে দোষ হয়?’

    স্ত্রী বলতেন--‘দোষ হবে কেন? আমি তো সব কাজ শেষ করে কাত হই, তুমি কি তা করো? রাজ্যের কাজ ফেলে রাখো’। তিনি অবাক হতেন। কোন্‌ কাজটা তিনি ফেলে রেখে গদাইলস্করি চালে চলতেন? ‘কোনটা ফেলে রেখেছি’? তিনি প্রশ্ন করতেন। বিজলি বেগম জবাব দিতেন-–‘ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রিকে খবর দাওনি’।

    ফয়েজ সাহেব স্মরণ করে দেখলেন--কাজটা পেন্ডিং আছে। একটা ফ্যান চলছে না। অনবধান মনটাকে তিরস্কার করতেন তিনি। একটা জায়গায় তিনি বারবার পরাস্ত হতেন। ভুলোমনের জন্যে অনেক বিড়ম্বনা সয়েছেন তিনি। বিজলি বেগম ইনডোর কী কী কাজ করার কথা অথচ করেন না--সে হিশেব তার কাছে থাকত না; অথচ আউটডোর কাজগুলোর কী কী সমাধা করেননি, তার তালিকা বিজলি বেগমের কাছে ঠিকই থাকত। অবশ্যি মেঘগর্জন যে একতরফা ঘটত, তা নয়। সপ্তাহান্তে বা মাসে ফয়েজ সাহেব একবার গর্জন করে উঠতেন। সেই গর্জনের সামনে স্ত্রী একেবারে ভিজে বেড়াল হয়ে যেতেন। গর্জনের বিষয় দুই ছেলেমেয়ে। ছেলে কেন এক্সবক্সের গেমসের জন্যে মোটা অঙ্ক খরচ করছে, কিংবা মেয়ে কেন সেলফোনে এত কথা বলে বা কী কথা এবং কার সাথে এত আলাপন--এসব বিষয়বলি। পুত্রের খরচ কিংবা মেয়ের সেলফোনের বিল--সব তো তার ট্যাঁক থেকে যায়। তাই তিনি গর্জন করার যথেষ্ট যুক্তি খুঁজে পেতেন। স্ত্রী মিনমিনিয়ে জবাবদিহি করতেন, ‘টিপুলকে টাকা আমি দিয়েছি’।

    ‘তোমার টাকাটা আসে কোত্থেকে’? তিনি বলতেন।

    ঘরের পাঁচালি, বাইরের ভেজাল, পরিবেশদূষণ আর রাজনৈতিক প্যাঁচঘোঁচের মধ্যে বাস করছিলেন তিনি; এমনকি তার স্ত্রী মোছাম্মাৎ বিজলি বেগম। তার গুণধর দুই পুত্রকন্যা এসবের ভেতরে বাস করেও দিব্যি গায়ে হাওয়া খেলিয়ে বেড়াচ্ছিল। ওদের মধ্যে কোন বিকার তিনি দেখতেন না। যেন তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আর বড় মেয়েটা তো একদিন সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিল ফুসফুসের ইনফেকশনে ভুগে...। মেয়েটা বুঝি সংসারে বিনিসুতোর মালার মতো দু’জনকে গেঁথে রেখেছিল। মেয়ের অন্তর্ধানের পর থেকে বিজলি বেগম খিটখিটে হয়ে গেছিলেন আর ফয়েজ সাহেব নির্জীব হয়ে থাকতেন।

    সেগুলো সব আগের কথা--অতীতের পটভূমি, ঘষা আয়নায় প্রতিফলিত অস্পষ্ট প্রতিবিম্বের মতো। ফয়েজ সাহেবের মনে হয়, কোন পূর্বজন্মে যেন এসব ঘটেছিল।

    ...কালের আবর্তে বিজলি বেগম কাহিল হয়ে গেছেন। দেশচ্যুত হয়ে তিনি এমনিতেই ম্রিয়মাণ হয়ে ছিলেন। তারপর একটা অশুভ খবর এলো যে, তাঁর বাল্যকালের সই ফজিলা আক্তার রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন।

    সইয়ের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বিজলি বেগম আমূল বদলে গেলেন। নরম হয়ে গেলেন আর মৃত্যুভয়ে কাহিল থাকেন। সইয়ের মৃত্যু তাঁকে আরো ক’টি মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাবা-মা ও আরো এক বোনের মৃত্যু। মেয়ের মৃত্যুর কথা। তখন তিনি, ‘ইষিতা মাগো, কোথায় চলে গেলি তুই’? বলে বিলাপ করেন। ইষিতার কথা মনে পড়লে ফয়েজ সাহেবের বুকটাও মোচড় দিয়ে ওঠে। তাই তিনি মেয়ের মুখটা ভেসে ওঠার সাথে সাথে মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেন; নানা কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত রাখেন নিজেকে। সেগুলোর একটি হল নিজস্ব ঘরানায় এনসাইক্লোপেডিয়া তৈরি। এই জ্ঞানকোষ বই আকারের প্রকাশের ইচ্ছা আছে তাঁর।

    অতএব ইহজাগতিক যাবতীয় ক্লেশ থেকে মনটাকে ঘুরাতে ফয়েজ সাহেব ফোল্ডারে লেখা কালেকশন করে চলেন। সেদিন সংগ্রহ করলেন লক নেস দানব সম্পর্কে তথ্য। তিনি জানলেন, লেক অন্টারিওতে আঠারোশ’ শতকে লক নেস মনস্টার দেখা গিয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে। স্কটল্যান্ডের উচ্চভূমি অঞ্চলে এরকম দানব প্রথম দেখা গিয়েছিল।

    রকিংচেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন ফয়েজ সাহেব। সুউচ্চ দালানের ষষ্ঠতলার অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি চোখের সামনে বিছানো রাস্তাটা দেখেন। রাস্তাটা সামান্য বেঁকে গাছপালার আড়ালে হারিয়ে গেছে। গাছপালার মাথার ওপর দিয়ে দূরের অট্টালিকাগুলো দেখা যায়। ভবনের পেছন দিক থেকে আসা রাস্তাটার দুইপাশের গাছ, তাদের ভেতর দিয়ে সোডিয়াম বাতির ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলো, আরো দূরের অট্টালিকা তিনি নিয়মিত দেখেন। একটা বিশেষ গাছকে তিনি অধিক মনোসংযোগে দেখেন। রাস্তার দিকে সামান্য নোয়ানো গাছটার ভেতরের হলুদ বাতির আলো গাছের শরীরের ভগ্নাংশের ছায়া ফেলে অ্যাশফল্টের রাস্তায়। রাতে গাছটাকে তাঁর ছেলেবেলার সেই ড্রাগন গাছের মতো লাগে; যে গাছটায় একটা ড্রাগন পেঁচিয়ে থাকতো। হলুদ-কালো বর্ণালী শরীর, লাল চোখ আর নাকের দুইপাশের গোঁফ; গিরগিটির মতো পা দিয়ে গাছ আঁকড়ে ধরে থাকতো। গাছটা ছিল ডুমুরগাছ। গায়ে গায়ে লেগে থাকা পুরনো কয়েকটি একতলা ইমারতের মাঝের এক চিলতে অন্ধকার স্থানে গাছটা ছিল। তার শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে থাকত ছাদে। ড্রাগনটাকে খুব ভোরে আর সন্ধেয় দেখা যেত।

    আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করেন তিনি। রাস্তা যেখানে বাঁক নিয়ে ডানদিকে হারিয়ে গেছে, গাছপালার আবডালের ইমারতগুলো দেখেন তিনি। ইমারতগুলো ঝাপসা। ক’টি ইমারত সেখানে আছে, সেটা আজও হিশেব করে বের করতে পারেননি। এই ইমারতগুলো তাঁর সাথে লুকোচুরি খেলে। ইমারতের একটা বা দু’টি অদৃশ্য হয়ে যায়, এমনকি নতুন বিল্ডিং গজিয়ে ওঠে। ছেলেবেলায় অংক না মিলবার মতো।

    তাঁর এই অলস সময় তাঁকে ঠেলে দেয় দূর অতীতে। একটা গল্পের বই ছিল তাঁর নিত্যদিনের জপমালা। সেই যে বীর জ্যাসন বেরিয়ে পড়েছিল সোনালী চামড়ার সন্ধানে। বইটায় হাতে-আঁকা মনকেমন-করা ছবি ছিল। একটা গাছের ডালে ঝুলানো ছিল সেই স্বপ্নের ভেড়ার চামড়া। আর গাছটায় শরীর পেঁচিয়ে চামড়া পাহারা দিচ্ছিল একটি ড্রাগন...।

    যৌবনকালে সিনেমা-পাগল ছিলেন তিনি। মাঝবয়সে সেই পাগলামি কিঞ্চিৎ থিতু হলেও বুড়ো বয়সে এসে ফের ডালপালা মেলে দিল। ঘনঘন সিনেমা দেখার বদভ্যাসটা ফিরে পেলেন তিনি। ঘটমান বর্তমান কালে সাথে বিজলি বেগমকে নিয়ে সিনেমা দেখে দেখে অতীতে দু’জনের একসাথে সিনেমা না দেখার আফসোসটা মিটিয়ে নিচ্ছেন।

    এক ভরদুপুরে স্মৃতিঘেরা পুরনো বাংলা ছায়াছবি দেখছিলেন ফয়েজ সাহেব। ছায়াছবিটা দেখে জুত করে উঠতে পারছিলেন না তিনি। যে ভয়ঙ্কর কালনাগিনী জমিদারের কন্যাকে কেটেছিল, সেই কন্যাকে ঘিরে বিণ হাতে সাপুড়ের নর্তনকুর্দন দেখে তাঁর কেবলই হাসি পাচ্ছিল। কেননা, তিনি ইতোমধ্যে জেনেছেন যে, কালনাগিনীর কোনো বিষ নেই। এই সাপকে আদর করে বিছানায় শোয়ানো যেতে পারে; এমনকি চুমু খাওয়া যেতে পারে। ইতোপূর্বে সাপবিষয়ক একটা আর্টিক্‌ল পড়ে তিনি চেঁচিয়ে বাড়ি মাত করেছিলেন। মহাবিরক্ত হয়ে ছুটে এসেছিলেন বিজলি বেগম। ফয়েজ সাহেব বললেন, ‘জানো, কালনাগিনীর বিষ নেই। ওটা নির্বিষ সাপ’।

    বিজলি বেগম বিশ্বাস করলেন না। ফয়েজ সাহেব আঙুল দিয়ে অক্ষরগুলো দেখালেন স্ত্রীকে। স্ত্রী বিড়বিড় করে নিষ্ক্রান্ত হলেন। আসলে ফয়েজ সাহেব নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কিন্তু যুগটাই এমন যে, বহুকালের ধ্যানধারণা আর বিশ্বাসের ওপর একে একে আঘাত আসছে।

    সাপের বিষয়টি তাঁকে আচ্ছন্ন করে রাখল। আরো জানলেন, সাপের শরীর আসলে পিছল নয়। বরং খসখসে। কোন্‌ দিন হয়তো এর ঠাণ্ডা দৃষ্টিটা হয়তো গরম দৃষ্টিতে পরিণত হবে। সাহিত্যে, লোকমুখে জেনেছেন সাপের চাহনি নাকি ঠাণ্ডা; এরপর হয়তো সেটা উষ্ণ দৃষ্টিতে পরিণত হবে...।

    ‘লেট মী ওয়াচ ইট’ সাইট থেকে পুরনো পশ্চিমবঙ্গীয় ছায়াছবি বের করে স্ত্রীর জন্যে অপেক্ষা করলেন ফয়েজ সাহেব। সম্প্রতি বিজলি বেগম স্বামীর সাথে বসে সিনেমা দেখেন আর গল্প করে কাটান।

    সেদিন বিজলি বেগম রান্নায় অনেক সময় নিয়ে ফেললেন। অতএব, কম্পিউটারের সামনে থেকে উঠে ফয়েজ সাহেব ডাইনিংয়ে এসে বসলেন। ডাইনিংটেবিলে তাঁর একটা ফোল্ডার আছে, সেই ফোল্ডারে তিনি নিজস্ব জ্ঞানকোষ তৈরির নিমিত্ত বিশ্বের অজানা বা বিস্ময়কর তথ্য সংগ্রহ করেন। ইন্টারনেট থেকে তথ্য ডাউনলোড করে, সেসব এডিট করে প্রিন্টআউট নেন। তারপরে ফোল্ডারে আটকে রাখেন। এখানে আগমন অবধি এই কাজটি তিনি করে আসছেন অনেকটা নির্বিবাদেই।

    অখণ্ড অবসর আর কতিপয় উর্বর সৃষ্টিশীল উন্মাদনার কারণে ঘরময় হেঁটে বেড়ান ফয়েজ সাহেব। তাঁর বন্ধু গওহর সাহেব জীবনী লেখার পোকা তাঁর মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন তাঁর মতো বিচিত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির জীবনী লেখা উচিৎ। যেদিন গওহর সাহেব পোকাটা ঢুকিয়ে দিলেন, সেদিনই ফয়েজ সাহেব জীবনী লিখতে বসে গেলেন। বহুকষ্টে কম্পিউটারে বাংলা লেখা শিখেছেন। তিনি তর্জনী দিয়ে একটা দু’টো অক্ষর লেখেন; তেমন আগাতে পারেন না। ছেলে টিপলু গত গ্রীষ্মের ছুটিতে এসে তাঁর কম্পিউটারে বিজয় ইনস্টল করে দিয়েছিল।

    তারপর থেকে খুশি হবার বদলে তিনি বিরক্ত হচ্ছেন। পৃথিবীতে কত সেকেন্ডে প্রযুক্তির কত উন্নতি হচ্ছে অথচ তিনি মনের কথা প্রকাশ করবেন বা যখন যেই ভাব আসে তা চট করে কম্পিউটারে তুলে ফেলবেন--তার কোনো জো নেই। কেবল আঙ্গুলের খোঁচায় একটা দু’টো করে অক্ষর টিপে যেতে হবে। টিপলু হেসে বলেছিল, ‘আর কিছুদিন সবুর করো বাবা, তোমার মুখের কথাগুলো কম্পিউটারে অটোম্যাটিক্যালি লেখা হয়ে যাবে’।

    ‘ততদিন বাঁচব তো?’ তাঁর এরকম প্রশ্নে টিপলু বলেছিল, ‘কি এমন তোমার বয়স হয়েছে’।

    তারপর তিনি কাগজে জীবনী লিখতে বসে স্কুলজীবন থেকে লেখা শুরু করলেন। শুরু করলেন হাইস্কুলে তাঁর শিক্ষক অমূল্য বিশ্বাসকে দিয়ে। এই শিক্ষক চারপায়ে হাঁটতেন। হাতদু’টোকে তিনি ব্যবহার করতেন দুই পা হিশেবে। তিনি ক্লাসে ঢুকলে সমস্ত ক্লাস নিশ্চুপ হয়ে যেত। তিনি চেয়ারে বসতে পারতেন না। মেঝেতে বসতেন। তাঁর চোখে থাকত মোটা কাচের চশমা। তিনি ইতিহাস পড়াতেন। ভারতবর্ষ ও গোটা বিশ্বের ইতিহাস ছিল তাঁর ঠোঁটস্থ। তিনি ইংরেজদের প্রবল ঘৃণা করতেন। একবার তিনি ফয়েজ সাহেবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন--‘একদিন তুই বড় হবি। অনেক বড়...তখন আমি থাকব না’। একথা বলার কিছুদিন পরই তিনি পরলোক গমন করেন। লিখতে লিখতে গ্রামের সেই শিক্ষকের অবয়ব ভেসে উঠছিল ফয়েজ সাহেবের মানসপটে। জীবনীটা তিনি এগিয়ে নিতে পারলেন না। লিখতে ক্লান্তি লাগে। তাছাড়া ভাব আসে না; যা আসে তা এলোমেলো।

    জীবনী লেখা কাগজগুলো তিনি দলা পাকিয়ে ছুড়ে ফেলতে গিয়েও ফেললেন না। ক’দিন পর তিনি তাঁর শিক্ষককে স্বপ্নে দেখলেন। স্বপ্নে শিক্ষকের তিরস্কার তাঁকে ঘুম থেকে টেনে তুলল। গভীররাতে জেগে উঠে তিনি যতটুকু লিখেছিলেন সেটা কেটেছেঁটে তারপর দেশের একটা পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলেন। পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সন ঘেঁটে কোথাও লেখাটা দেখতে পেলেন না। অগত্যা তিনি ফোন করলেন। সম্পাদকীয় বিভাগের ভদ্রলোক আগ্রহ নিয়ে ফয়েজ সাহেবের কথা শুনলেন। তারপর নানা প্রশ্ন করতে লাগলেন। সেসব প্রশ্ন শিক্ষকের আকার-আকৃতি ও চারপায়ে চলা নিয়ে। ফয়েজ সাহেব বললেন, ‘তিনি কয় পায়ে হাঁটেন, সেটা মুখ্য বিষয় না; তিনি একজন শিক্ষক এবং ইতিহাস-বিষয়ে পণ্ডিত। গ্রামের হাইস্কুলে এমন একজন স্কলারের অস্তিত্ব একটা বিরল ঘটনা’। সেই ভদ্রলোক আরো অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন শুরু করলেন। ফয়েজ সাহেব ঠাস করে ফোন রেখে দিলেন। নাহলে হয়তো প্রশ্ন করে বসত, সেই শিক্ষকের লেজ আছে কিনা, তাঁর স্ত্রী বা ছেলেমেয়ে কয় পায়ে হাঁটে-এসব।

    জীবনী লেখার উৎসাহ তিনি হারিয়ে ফেললেন পুরোপুরি। লেখাটা ছাপা হয়েছিল কিনা, সেই খোঁজ তিনি নেননি আর। শুধু মনে মনে সেই শিক্ষকের জন্য প্রার্থনা করলেন। শুধু জীবনী লেখা থেকেই বিরত হলেন না, তিনি কথায় কথায় আগের মতো ধারালো হিউমার প্রয়োগ করেন না।

    ছেলেমেয়ে দু’টো যেন তাঁকে বন্দী করে রেখেছে। ওরা আগের মতো বেপরোয়া আর নেই। ওরা এখন অভিজ্ঞ। কর্তৃত্বের আসন দখল করেছে। টিপলু ওয়াটারলুতে লেখাপড়া শেষ করে সদ্য চাকরিতে যোগদান করেছে ক্যালগ্যারিতে একটা এনভায়রনমেন্টাল অনুষ্ঠানে। উইকএন্ডে বাসায় আসে। মেয়ে সোহানা নার্সিংয়ে লেখাপড়া শেষ করে এখন ইন্টার্ন রূপে কাজ করছে। ছেলে ও মেয়ে তাঁদেরকে কাজ ভাগ করে দিয়েছে। ফয়েজ সাহেবের ভাগে পড়েছে গ্রোসারি সম্পন্ন করার কাজ আর বিজলি বেগমের ভাগে রান্নার ভার। এছাড়া তাঁদের আর কোনো কাজ নেই।

    অতএব, ফয়েজ সাহেব ফিরে গেলেন পুরনো অভ্যেসে। তিনি সিনেমা দেখেন--তাঁর যৌবনকালে দেখা সিনেমাগুলো। বিজলি বেগমও তাঁর সাথে যোগ দেন। আগের মতো স্বামীর ওপর খবরদারি করার সুযোগ পান না। বিজলি বেগম শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললেন–-‘আমাদের আগের জীবনটাই ভালো ছিল, তাইনা’?

    ফয়েজ সাহেব জবাব দেন, ‘তা তো বটেই। এই জীবনে তোমার গলাটা বসে গেছে। আগের মতো আর ধার নেই’।




    খবরটা শোনার পর থেকে ফয়েজ সাহেবের মুখমণ্ডলে ছায়া নেমেছে। দুই ভুরু যেন চোখের পাতার ওপর নেমে এসেছে। তিনি সিনেমা দেখা থেকে বিরত আছেন এবং গ্রোসারির কাজে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। ভাবছিলেন--স্ত্রীর সই মরে গেলে কি তার বন্ধুকেও মরে যেতে হবে!

    তিনি আড্ডা দিতেন গওহর সাহেব ও নেওয়াজ সাহেবের সাথে। এখানে এসে এই দু’জন ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয় হারমোনি হলে সিনিয়রদের একটা অনুষ্ঠানে। পরিচয়ের পর থেকে নিয়মিত ঘুরতেন আর আড্ডা দিতেন তিনজন। নেওয়াজ সাহেব জবড়জঙ্গ ব্যক্তি ছিলেন। দেশে তিনি সরকারের যুগ্ম সচিব রূপে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনমাস আগে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছিলেন। গত পরশু বা তার আগের দিন তিনি দেহত্যাগ করেছেন। তিনমাস আগে গওহর সাহেব ফয়েজ সাহেব টরোন্টোর পিয়ারসন এয়ারপোর্টে বিদায় জানিয়েছিলেন বন্ধুকে। এখানকার ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন তিনমাস আয়ু আছে তাঁর। সব চিকিৎসার বাইরে চলে গিয়েছিলেন নেওয়াজ সাহেব। লিভার ক্যানসার হয়েছিল তাঁর।




    প্রতি সামারে ফয়েজ সাহেব আর বিজলি বেগম বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই উড়তে হলো। তবে উড়লেন একজন; অন্যজন সম্প্রতি ইন্তেকাল করেছেন শোকে আর কাতরতায়। বিজলি বেগমের আকস্মিক অন্তর্ধান ফয়েজ সাহেবকে একাধারে শোকগ্রস্ত, হতভম্ব ও সতর্ক করে তুলল। তিনি মাতৃভূমিতে যাবার তাগাদা অনুভব করলেন যেকোনো সময়ে তিনিও নেই হয়ে যেতে পারেন বলে। তাই এযাত্রা বাড়িটা বিক্রি করে দিয়ে কিছু অর্থ দানখয়রাতে ব্যয়িত করে অবশিষ্ট অর্থ নিয়ে ফিরে আসবেন। ছেলে ও মেয়ের বিয়েতে ব্যাপক খরচা করবেন।

    তাঁর শুভ আগমনে স্বজনেরা পিলপিল করে হাজির হলো। সবাই তার মঙ্গল চায়। সবাইই একান্ত আপনজন। এখন বাড়িভর্তি একান্ত আপনজনেরা। আপনজনদের অতি উষ্ণতা ও ঘনিষ্ঠতার ঘন নিঃশ্বাসে ফয়েজ সাহেব চোখেমুখে অন্ধকার দেখলেন। খুব শিগগিরিই অন্ধকার দূরীভূত হলো। ‘নানা, আপনের নাস্তা’ বলে যে কচি মেয়েটি আদুরে ভঙ্গিতে এক সকালে তাঁর সমীপে হাজির হলো, তাঁকে তিনি চেনেন না। তাতে কী, নানা বলে সম্বোধন যখন করেছে তখন একটা কিছু তো হবেই। একটু পরেই আধ ঘোমটায় এক কালো মহিলা পানচর্বনজনিত কালো দাঁত বের করে বলল, ‘চাচাজান, আমার মাইয়া, জরিনা’। এই মহিলাকেও তিনি ভালো করে চেনেন না; তবে মুখদর্শন অবধি ছোটকালের অস্পষ্ট কিছু চিত্র ভেসে উঠল মনের কোণে। কিন্তু সম্পর্কে ভাস্তি না ভাগ্নি, সেটা তিনি নিশ্চিত নন। তিনি আসা ইস্তক এবাড়ির কেটারিং সার্ভিসের যাবতীয় দায়িত্ব যখন মহিলা নিয়ে ফেলেছে, তখন সে ভাস্তি বা ভাগ্নি একটা কিছু হবেই।

    ‘এ কেমন নাম? এক্কেবারে আদ্যিকালের!’ ফয়েজ সাহেব বিরক্ত ভঙ্গিতে কথাটা বললেও মা-মেয়ে দু’জনেই হেসে উঠল। যেন তিনি হাসির কথা বলেছেন। ভাস্তি বা ভাগ্নি উচুস্বরে বলল, ‘ও জরিনা, তর নানা যা বলে হুনবি, যা করতে বলে করবি। বুঝছস?’ জরিনা ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে বলল, ‘হ মা’। জরিনার মা এবার ফয়েজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে চোখে পানি ঝরাল, সেই পানি মুছেও ফেলল আঁচল দিয়ে। বলল, ‘বাপ মরা এতিম মাইয়া। বিবাহের সম্বন্ধ আসতেছে, কিন্তু টাকাপয়সার অভাবে বিবাহ হইতেছে না’।

    জরিনার দিকে তাকালেন ফয়েজ সাহেব। মেয়েটি কালো হলেও সুশ্রী। জরিনা লজ্জা পেল নানার চাহনির সামনে। কিন্তু হাসি থামল না। নিঃশব্দ হাসি। ফয়েজ সাহেব বললেন, ‘হবে। তোমার মেয়ের বিবাহ আটকাবে না। তুমি পাত্র দেখ’।

    একথায় ভাস্তি বা ভাগ্নি ও নাতনি একযোগে সালাম করল ফয়েজ সাহেবকে। প্রীত হলেন তিনি। ক’দিন বাদে আরো অভিভূত হলেন জরিনার সেবাযত্নের বহর দেখে। সেই সেবা আড়েবহরে বেড়েই চলল। এরকম জীবন যাপন করা যেতে পারে, নীল সরোবরে গা ভাসিয়ে উন্মুক্ত নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে দিন যাপিত হতে পারে, ফয়েজ সাহেব কস্মিনকালেও ভাবেননি। তাঁর নিভৃত কক্ষে জরিনার একান্ত পদসেবায় তিনি প্রায়ঃশই তন্দ্রায় তলিয়ে যান। সেই পদসেবা ক্রমেই পায়ের পাতা ছাড়িয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ফয়েজ সাহেব অনাস্বাদিত এক জগতের সন্ধান পেয়ে আবেশিত, রোমাঞ্চিত ও বিবশিত হতে থাকেন...।

    ফয়েজ সাহেব একজীবনে বহু ভালো কাজ করেছেন--একথা তিনি যেমন বিশ্বাস করেন, তেমনি আর দশজনেও বলাবলি করে। তাঁর অভ্যন্তরে এক মহৎ আত্মা বাস করে বলেই তিনি স্বেচ্ছায় বা অজ্ঞাতসারে মেলা মন্দ কাজ করেও পার পেয়ে গেছেন। যে কাজটা তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন একে তিনি পাপ বা মন্দ কাজ মনে করেন না। তিনি মনে করেন এটা তাঁর প্রাপ্য। তাঁর এই প্রাপ্তিটা স্ত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্ত উপহারের চাইতে অনেক আলাদা ও অভিনব। অতএব বিবেকদংশন নেই তাঁর।

    সঙ্গোপনে অভিসার চালিয়ে একদিন আবিষ্কার করলেন তাঁকে নিয়ে কানাঘুষো চলছে। তিনি নিজ বয়সকে দুষলেন, তিনি দুষলেন বিবেকের সেই অংশটাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে যে অংশ লয়হীন হয়ে পড়ে। বিবেকের মৌমাছিগুলো তেড়ে আসছিল হুল ফোটাতে, তিনি মৌয়ালদের মতো ধুঁয়া দিয়ে সেসব তাড়িয়ে দিলেন। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে রাতারাতি তিনি নিরীহ বুড়ো মানুষটি হয়ে গেলেন।

    একদিন সকালে জরিনা তাঁকে আখেরি সালাম করল। ওর বিয়ে পাকা হয়ে গেছে। যেদিন ভাস্তি কিংবা ভাগ্নি ও জরিনা এবাড়ি ছেড়ে চলে গেল সেদিন থেকে ফয়েজ সাহেব দেখলেন যে তাঁর করার মতো কোনো কাজ নেই। বাড়ি বিক্রির বিষয়টাও চূড়ান্ত। দু’তিনজন খাঁটি খদ্দের কিউ দিয়ে আছে। তিনি শুধু অপেক্ষা করছেন দামটা আরেকটু ওঠার।

    বিপুল পরিমাণ অবসর তাঁর। এক শুক্রবার সবকিছু পেছনে ফেলে, কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ফয়েজ সাহেব। জুম্মার নামাজ শেষ করে নেওয়াজ সাহেবের কবর জেয়ারত করলেন তিনি, তারপর একটা রিকশায় উঠলেন। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে তরতর করে চলল রিকশা। ঈদের টানা ছুটি চলছে। শহরটাকে তিনি এমনিই ফাঁকা দেখতে চান--জ্যাম ও দূষণহীন।

    তিনি ইপ্সিত স্থানটায় এসে রিকশা থেকে নামলেন। চিনতে কষ্ট হলেও তিনি চিনলেন এবং খুঁজে বার করলেন চিপা গলিটা--সেই আগের মতই চিপা। দুইপাশে সুউচ্চ অট্টালিকা। গাছপালার চিহ্ন মাত্র নেই। দম বন্ধ করা পরিবেশ। তাঁর ডুমুর গাছটা ছিল বর্তমানের দুই অট্টালিকার মাঝামাঝি। ফয়েজ সাহেব চোখ বন্ধ করে অতীতের সেই চিত্রটা ফুটিয়ে তুললেন--যেখানে ছিল ডুমুর গাছ আর তাতে পেঁচিয়ে থাকা ড্রাগন। সেই গাছ আর ড্রাগন বিলীন হয়ে গেছে অট্টালিকার উদরে। এর আগে, প্রায় দুই বছর আগে তিনি কখন এই স্থানটায় এসেছিলেন, তখনও নতুন ভবন গড়ে ওঠেনি, অতীতের ছায়াতপ ছিল। ড্রাগনগাছটা ছিল না, তবে শ্যাওলা–ধরা পুরনো নড়বড়ে দেয়াল তখনও ছিল। সেই জমানার পুরনো দুই দেয়ালের চিপাতেও কত অক্সিজেন জমা হয়ে থাকত! আর এখন ঢ্যাঙ্গা হাঁপানি রোগীর মতো বিল্ডিংগুলো সাঁইসাঁই শব্দে যেন নিঃশ্বাস নেবার প্রাণপাত চেষ্টা করছে। ফয়েজ সাহেবের ফুসফুসে কালো মেঘ জমল। বুকে ব্যথা অনুভব করলেন তিনি।

    চোখে অন্ধকার দেখলেন ফয়েজ সাহেব। চিপা দেয়ালের পাশে বসে পড়লেন তিনি। কে যেন পেছন থেকে থেলছে তাঁকে আর তিনি যেন বোধহীন প্রাণীর মতো অন্ধকারের জঠরে প্রবেশ করতে লাগলেন।

    তাঁর চেতনাজুড়ে বিছিয়ে থাকে ছেলেবেলার সেই শ্যাওলা ধরা পাঁচিলের আড়ালের সময়হীন অন্ধকার।




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments