আজ বহুদিন পর
আমার ঘরের পশ্চিম দিকের বড়ো জানালাটা খুলে দিলাম
ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে জানালাটা খুলে যেতেই
পড়ন্ত বিকেলের এক ঝাঁক সোনা রং রোদ্দুর
খিল খিল করে হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকে পড়লো
কেউ ঘরের কোণায় রাখা সোফায় পিঠ ঠেকালো--
কেউ দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো--
কেউ বা সোজা মেঝেতেই পা ছড়িয়ে বসে গেলো
ওদের হাসিতে হাসিতে আমার ছোটো ঘরটা
ভরে উঠলো সবকোণে--সবখানে।
ওদের মধ্যে একজন হঠাৎ হাসি থামিয়ে
ঘাড় বেঁকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললো,
'কী হলো? তুমি এত চুপচাপ কেন?'
আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়ে কোনোমতে জবাব দিলাম,
'না, মানে--এইতো তোমাদের দেখছি আর কি--
খুব ভালো লাগছে--কেমন প্রাণ খুলে হাসছো সবাই!'
সে বললো, তুমিও হাসো--হাসতে কারো মানা তো নেই।'
একটু ক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর আস্তে আস্তে বললাম,
'অমন প্রাণ খুলে হাসতে ভুলেই গিয়েছি যে!'
আমার কথা শুনে ওরা আবার হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো--
সে হাসি আর থামে না
তারপর আমার বিব্রত মুখ দেখে ওদের দয়া হলো বোধহয়
হাসি থামিয়ে বললো 'ভেবো না, আমরা যখন এসেই পড়েছি,
তোমার আর কোনো চিন্তা নেই
সেই কোন সাত সকালে বেরিয়েছি আমরা,
পার হয়ে এলাম সাত সমুদ্দুর তেরো নদী,
আলোতে হাসিতে ভরিয়ে দিলাম কতো কিছু--
আর তোমাকে হাসানো, সে আর এমন কি কাজ!'
ওদের সবার মধ্যে যে সবথেকে ছোটো,
সে বললো 'আমি আরুশী, আমি ফেসবুকে আছি,
আমাকে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠিও, তোমাকে আমার বন্ধু করে নেব।
আমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেখানে যেখানে যাই,
তার সব ছবি তুলে ফেসবুকে লাগাই,
তুমি দেখে লাইক ক'রো--কেমন?'
আমার পূবের জানালা আর পশ্চিমের জানালা দুটোই খোলা থাকে এখন
ভোরের আলোর প্রথম রশ্মি থেকে গোধূলির শেষ রেখা--
রোজ আমার ফেসবুকের হোমপেজ ভরে ওঠে
ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর ছবিতে,
থাকে লালকমল আর নীলকমল
আর পক্ষীরাজ ঘোড়ার ছবি
লম্বা চুল এলিয়ে বারান্দায় বসে থাকা রাপুনজেল,
নিমো, ছুটন্ত স্কুবি-ডুবি-ডু, আরও কতো কি!
ছবি দেখি, লাইক করি, কমেন্টও করি কখনোসখনো।
আজ বহুদিন পর কিছু লিখলাম, সাদা কাগজে নয়--
কম্প্যুটারে সদ্য ডাউনলোড করা বাংলা ফন্টে।
লিখলাম আশার কথা, হতাশার কথা
লিখলাম বেদনার কথা, সমবেদনার কথা
লিখলাম মনের কথা, সুখ দুঃখের কথা
লিখলাম মানুষের কথা, অমানুষের কথা
লিখলাম সুন্দরের কথা, অসুন্দরের কথা
তারপর আমার সবকিছু তুলে দিলাম ফেসবুকের পেজে
প্লীজ দেখো, আর যদি ভালো লাগে তবে লাইক ক'রো।