• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৫ | অক্টোবর ২০১৩ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : নিরুপম চক্রবর্তী


    ১. সুন্দর

    সুন্দর তোমাকে আমি খুঁজে পেতে চাই কোনও দিন
    কোনও দিন, কোনও অচেনা অদেখা কোনও অনিমেষ সূর্যোদয়ে লীন
    কোনও দিন, কোনও এক দিন
    এ অনন্ত রাত্রি বুঝি হতে পারে লাবণ্যে বিলীন
    সুন্দর তোমার খোঁজে অনিকেত আমি বহুদিন৷

    সুন্দর তোমার খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে বুঝি কিছুটা নিজের কাছে যাওয়া
    আড়াল দেয়নি রোদ, সরে যায় নিরাপদ হাওয়া
    আহা, দগ্ধ পথের ধারে ধুঁকতে ধুঁকতে তবু আবার নতুন করে চাওয়া
    সুন্দর তোমার মায়া, দগ্ধ পথের ধারে, মুছে গেলে অনুগত ছায়া৷

    সুন্দর তোমাকে আমি খুঁজে পাবো ঠিকই কোনও দিন
    সুন্দর তোমাকে আমি খুঁজে যাবো পৃথিবীর সব দুঃখ ঘেঁটে
    সুন্দর তোমাকে আমি খুঁজে পাবো পৃথিবীর সমস্ত বিবর্ণ পথ হেঁটে
    সুন্দর তোমাকে আমি খুঁজে যাবো অকপটে, পৃথিবীর রিক্ততায়-
    জীবনের প্রতিটি সংকটে;
    সুন্দর আমার গানে নিজেই উঠবে তুমি ফুটে

    দেখে নিও!


    ২. পোহাং: কোরিয়া

    হে বিদেশী, কে বিদেশী
    এখানে একলা পথে ঘাটে?
    এখানে প্রথম সূর্য ওঠে
    এখানে সবুজ পাহাড়েতে
    গহন মনের খেলা
    ঘনালে হলুদ বেলা
    কবিতা বিকোয় মেছোহাটে!

    হে বিদেশী, কে বিদেশী
    কথা বলো সমুদ্রের স্বরে?
    এখানে পুরনো বাতিঘরে
    অনেক বছর ধরে ভাঙছে ঢেউয়ের ফেনা
    হারানো জাহাজ এসে ভেড়ে;
    হে বিদেশী, কে বিদেশী
    অচেনা উদাসী কে গো
    সাগরিকা পোহাং শহরে?

    হে বিদেশী, কে বিদেশী
    ঝরেছে বৃষ্টি মনোরম
    এখানে সূর্যে ধরে জং
    দ্যাখো আলো থেকে মুছে যাবে রং
    ফিরে যেতে চাও ফিরে যেও
    ঘনালে আকাশে সন্দেহ
    রেখে যাও বিরহ বরং!


    ৩. সানলিন হাসপাতালঃ কোরিয়া

    নানা রঙে সেজে আছে গাছগুলো সমুদ্রের কাছে এই হেমন্তের অ্যাভেনিউ জুড়ে
    একটি বিবর্ণ ফুল এরমধ্যে যদি ফোটে, যদি বেঁচে ওঠে
    মহাজাগতিক কোনও আলো যদি দীর্ঘ যাত্রা শেষে
    ঠিকঠাক ঢুকে পড়ে জটিল ঠিকানা খুঁজে, অচেনা জানালাগুলো খুলে,
    সানলিন হাসপাতালে, যদি কারো চূর্ণ-কুন্তলে,
    আঙুল বুলিয়ে দ্যান হসপিসে
    সিস্টার কি-ইয়ং-চোইঃ
    এ শুধু করুণা নয়, এ শুধু শুশ্রূষা নয়, হয়তো আরোগ্য একে বলে৷৷

    তাই আজ হেমন্ত বিকেলে, কে যেন গাইছে গান,
    রহস্যে বা অচেনা ম্যাজিকে,
    নিজেই চলেছে হেঁটে করিডরে একাএকা স্যালাইন বোতলটি বয়ে;
    শব্দের বর্ণমালা এঁকে দিয়ে হেমন্তের নিস্তব্ধ আকাশে
    নিয়ন সাইন জ্বলে রাজপথে, সানলিন হাসপাতাল থেকে
    আমার জানালা ঘিরে রাতের শহরে দেখি ভরে যায়
    কোরিয় হাঙ্গুল,
    অক্ষর চিনিনা আমি, মানুষের ভাষা তবু অনায়াসে পারি পড়ে নিতে৷৷

    এইখানে একদিন সানলিন হাসপাতালে আমি
    অজানা রক্তের ব্যাধি বয়ে নিয়ে নিজস্ব শরীরে
    পরম বিশ্বাসে তাই শুয়ে থাকি, উড়ে যায় অভিজ্ঞতা গুলো,
    একটি আশ্চর্য শিশু লাল জামা পরে দেখি হেঁটে আসে
    স্মৃতি থেকে ভেসে
    আনন্দ উজাড় করে হেসে;
    ডাক্তার জং-এর ছুঁচ সে মুহূর্তে হাড় ভেদ করে
    বোনম্যারো খুঁজে নেয় দৃঢ়হাতে আরোগ্য সন্ধানে ।।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)