• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৪ | জুন ২০১৩ | প্রবন্ধ
    Share
  • জাতীয়তাবাদী দ্বিজেন্দ্রলাল : শম্পা ভট্টাচার্য


    দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩ - ১৯১৩) বাংলা নাট্যসাহিত্য, কাব্য ও সংগীতের জগতে এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা। চলতি বর্ষে তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। ক্ষোভের কথা এই, যে ডি. এল. রায়ের দু-একটি নাটক ছাড়া দেশপ্রেমী এবং সুসাহিত্যিক এই মানুষটি বাঙালি সমাজে বিস্মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। এ দেশের বারোমাসে তেরো পার্বণ। বরেণ্য মানুষের জন্মের বিশেষ বিশেষ বছর পূর্তিতে আমরা তাদের স্মরণ করে হৈ চৈ করি। অনেক সময় সেই স্বর্ণময় দিনটির অপেক্ষায় এই সব কৃতী মানুষদের দীর্ঘদিন প্রতীক্ষা করে থাকতে হয়। মৃত্যুর রজতজয়ন্তী বা সুবর্ণজয়ন্তীর মতো বিশেষ বিশেষ দিনটি ছাড়া তাঁরা আবার বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যান। শুধু দ্বিজেন্দ্রলাল নন, তাঁর পুত্র দিলীপকুমার রায়ের উপন্যাস বা প্রবন্ধও একালে সাহিত্যবোদ্ধাদের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে নি।

    দ্বিজেন্দ্রগীতির ভাব ও ভাষার ঐশ্বর্য বড়ো কম নয়। কিন্তু গায়িকা কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায় মারা যাওয়ার পর দ্বিজেন্দ্রগীতির চর্চাও সীমিত। দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটক বা হাসির গান বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ। এই ঐশ্বর্য সম্পর্কে কয়জন বাঙালি তেমন করে খবর রাখেন তা হাতে গুণে বলা যায়। দ্বিজেন্দ্রলাল মাত্র পঞ্চাশ বছর বেঁচে ছিলেন। অথচ ঐ বয়সে তাঁর রচিত সাহিত্য সম্ভার প্রচুর। স্বাভাবিক কবিপ্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তিনি পরবর্তীকালে তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দ্বিজেন্দ্রলালের শেষ কবিতার বই ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত। 'চৈতালি' ও 'গীতাঞ্জলি' ছাড়াও তখন রবীন্দ্রনাথের আরও কয়েকটি কবিতার বই বার হয়েছে বটে, বাকি সবই ভবিষ্যতের গর্ভে নিহিত। দ্বিজেন্দ্রলালের খণ্ডিত সাহিত্যজীবনে গানে, কবিতায়, নাটকে দৃপ্ত, দুঃসাহসী পদক্ষেপ ও নির্ভেজাল স্বাতন্ত্র্য ভেবে দেখার বিষয়। উনিশ শতকের শেষে মধ্যবিত্ত বাঙালি ভদ্রলোকদের জাতীয়তাবাদী ধারণায় একটা টানাপোড়েন ছিল। ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় এ-দেশের জাতীয়তাবাদের ধরনটি অনেকাংশে ছিল পশ্চিমী সভ্যতার ছাঁচে ঢালা ফসল। ইংরেজের আধিপত্য, শাসন আর শোষণে বাঙালি অধৈর্য হয়ে পড়লেও য়ুরোপীয়ান সভ্যতার গরিমাময় সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার উপায় ছিল না। আর এই দোটনায় ছাপ তৎকালীন বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের কাজে ও কথায় প্রকাশিত হয়ে পড়ছিল। দ্বিজেন্দ্রলাল তার ব্যতিক্রম নন। 'বড়ো ইংরেজের' গুণগ্রাহী বাঙালি 'ছোটো ইংরেজের' এই দুঃশাসন আর লাঞ্ছনায় ব্যথিত হয়েছিলেন তীব্রভাবে। হয়তো এই কারণে দেবকুমার রায়চৌধুরী প্রণীত দ্বিজেন্দ্রলালের জীবনীতে 'স্বদেশী আন্দোলন ও তন্ময়তা' এবং 'রাজভক্তি', দুটি আলাদা অধ্যায়ের শিরোনাম বলে বিবেচিত, এটা তৎকালীন ভাবও ভাবনারই প্রতিচ্ছবি।

    কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য 'বিলেত' যাওয়ার পথে জাহাজে সাহেবদের সঙ্গে কথাবার্তায় তেজস্বী দ্বিজেন্দ্রলাল ইলবার্ট বিল প্রসঙ্গে বলেছিলেন — 'ইংরেজের কি অধিকার যে বাঙ্গালীকে জয় করিয়া তাহার উপর প্রভুত্ব করে? পরাক্রান্ত মনুষ্য দুর্ব্বলকে অযথা পীড়ন করিতে না পারে ইহার জন্য যদি আইন-আদালত থাকে তবে পরাক্রান্ত জাতি দুর্ব্বল জাতিকে পীড়ন করিতে না পারে ইহার জন্য, কি আরো উচ্চতর আইন ও আদালতে থাকা উচিত নহে।' (দ্বিজেন্দ্রলাল, দেবকুমার রায়চৌধুরী, দ্বিতীয় সং, আশ্বিন ১৩৭১, বসুধারা প্রকাশনী) কখনো তীব্র শ্লেষভরে বলেছেন যে ইংরেজ জাতি বড় অহঙ্কারী তারা তাদের ক্ষুদ্র দ্বীপকে অমরাবতী ও পৃথিবীর ভাবী কেন্দ্র মনে করে। মনে রাখতে হবে যে বিলেত যাত্রাকালে জাহাজে ইংরেজ পুঙ্গবদের মধ্যে একমদ্বিতীয়ম্‌ ভারতীয়টি এইসব উক্তি করার মতো সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করে রেখেছিলেন। লণ্ডনে গিয়ে ভারতীয় পোশাক পরে রাজপথে হেঁটেছেন। ভারতীয় পোশাক কি হওয়া উচিত এ-বিষয়ে বিলেতের পত্রাবলীতে দ্বিজেন্দ্রলালের সুচিন্তিত অভিমত আছে। দেশহিতৈষিতার ধারাটি বহুকাল ধরে দ্বিজেন্দ্রলাল সযত্নে অন্তরে লালন করে এসেছিলেন। তাই লণ্ডন থেকে ফেরার পর হিন্দু সমাজ তাঁকে জাতিচ্যুত করতে চাইলে দ্বিজেন্দ্রলালের মনে হয়েছিল এ-দেশের সমাজের লোকজন নানা অকাজে নিদারুণ শক্তিক্ষয় আর সময়ের অপব্যয় করে চলেছে। ইংরেজের অধীনে চাকুরি করতে তাঁর ভাল লাগত না। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাঝে মাঝে বিরোধ ঘটত। শেষে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন।

    ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দের বঙ্গ ভঙ্গের প্রচেষ্টা হয়তো বাঙালিকে এখনও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে রেখেছে। সুতরাং সেই সময়ের ঐ তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনায় জনজীবন যে কীরকম তীব্রভাবে অস্থির হয়ে পড়েছিল তা সহজে বোঝা যায়। স্বদেশী আন্দোলনের সূচনাপর্ব থেকে দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলি আগুনে ঘৃতাহুতির মতো কাজ করেছিল। স্বদেশী সভায় বক্তৃতা দিয়ে লোক মাতিয়ে তিনি জনগণের হাততালি কুড়োননি, কিন্তু ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, সুরসিক এই সাহিত্যিকের মনে এই আন্দোলনের প্রবণতা নিয়ে একটা সংশয় দানা বেঁধেছিল। বিলেতি দ্রব্য বর্জনের বিষয়টি যেন জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া না হয়। তা স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক হলে ক্ষতি নেই। তাঁর মতে—'আমি বলি, এই বিদ্বেষমূলক বয়কটের দ্বারা আমাদের পরিণামে সর্ব্বনাশ হবে, ইহাতে আমাদের স্থায়ী কল্যাণ কোনোমতেও সম্ভব নয়। এদেশ যদি আজ পর-প্রসঙ্গ ও বিজাতি-বিদ্বেষ ভুলিয়া, প্রকৃত আত্মোন্নতি ও নিজেদের কল্যাণ সাধনে তৎপর হয় তবে এমন কোন শক্তিই নাই যে তাহার সে বল-দৃপ্ত গতি রোধ করিতে পারে।' (১৯০৪, ৭ই নভেম্বর, দেবকুমার রায়চৌধুরীকে লেখা চিঠি)। এই 'বিদ্বেষমূলক বয়কটের প্রসঙ্গ' রবীন্দ্রনাথের 'ঘরে বাইরে' উপন্যাসে আরও একবার খুঁজে পাওয়া যাবে।

    দেশাত্মবোধক গান রচনায়, সুর সংযোগ ও উদাত্ত কণ্ঠের গায়কীতে শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধ করতে দ্বিজেন্দ্রলালের জুড়ি ছিল না। আত্মীয় পরিজনদের অনুরোধে জ্বলন্ত স্বদেশপ্রেমের গান লিখে তাঁকে তা নষ্ট করে দিতে হয়েছিল। ইংরেজ সরকারের প্রখর দৃষ্টি তাঁর উপর বরাবর ছিল। এই গানগুলি রক্ষা পেলে আরও উজ্জ্বল নানা দেশাত্মবোধক সংগীত বাঙালি উপহার পেত। আবার কখনও দ্বিজেন্দ্রলালের মনে হয়েছে আবেগের আতিশয্যে 'বন্দে মাতরম্‌' ধ্বনির গভীরতা ও তাৎপর্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ভাবপ্রবণতায় কবি আপ্লুত হতে পারেন, স্বদেশকর্মী ঐ পথে হাঁটলে অনিবার্য বিপদের সম্ভাবনা। এমন দেশহিতৈষীর খোঁজ তিনি রাখতেন যাঁরা সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করতে না পারলে কোনো সভাতে পদার্পণ করেন না। কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালের মতে 'কিছু ছাড়িতে চাও না, দেশ উদ্ধার করিবে Conference (সভা) করিয়া? ধিক্‌!' আধুনিককালেও এমন দেশপ্রেমী বিরল নয়। এই দেশব্রতী মানুষটি লিখেছেন তাঁর কবিতায়—

    'কথায় কথায় যাচ্ছে শুধু কথা বেড়ে,
    গানে গানে ছেয়ে পড়ল দেশটা;
    কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ক নেড়ে চেড়ে
    কি রকম যে দাঁড়ায় এখন শেষটা।
    সভায় সভায়, মাঠে ঘাটে, গোলেমালে,
    বক্তৃতাতে আকাশ পাতাল ফাট্‌ছে; যাদের সময় কাট্‌ত না ক কোনকালে,
    তাদের এখন খাসা সময় কাট্‌ছে।
    নেতায় নেতায় ক্রমেই দেশটা ভ'রে গেল,
    সবাই নেতা সবাই উপদেষ্টা,—
    চেঁচিয়ে ত সবার গলা ধ'রে গেল,
    অন্য কিছুর দেখাও যায় না চেষ্টা।
    লিখে লিখে সম্পাদকে কবিগণে
    ভীষণ তেজে অনুপ্রাসে কাঁদছে;
    সবাই বলছে কি কাজ এখন 'পিটিশনে'
    সবাই কিন্তু পায়ে ধ'রেই সাধ্‌ছে।'
                    (চতুর্দ্দশ চিত্র, নেতা, আলেখ্য কাব্যগ্রন্থ, ১৩১৪ বঙ্গাব্দ)

    ১০৬ বছর আগে লেখা এই কবিতার সঙ্গে আধুনিক ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মানচিত্র মিলিয়ে নিতে অসুবিধা হবার কথা নয়। দেশের জন্য, স্বাদেশিকতার টানে দ্বিজেন্দ্রলালের প্রাণ অস্থির হয়েছে বারবার। মনের ভিতরকার স্বদেশপ্রেমের আঁচটুকু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে স্থির থাকতে দেয় নি। ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে দেবকুমার রায়চৌধুরীকে তিনি একটি চিঠিতে লিখেছেন—'চাকুরি জীবনে ক্রমাগত transfer (বদলি) আমাকে যথার্থই যেন অস্থির করে তুলেছে। এত বদলি করছে কেন জান? আমার বিশ্বাস স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান, আর ঐ প্রতাপসিংহ নাটকই তার মূল। কিন্তু কি বুদ্ধি! এমনি একটু হয়রাণ করলেই বুঝি আমি অমনি আমার সব মত ও বিশ্বাসকে বর্জন করব?' (দ্বিজেন্দ্রলাল, দেবকুমার রায়চৌধুরী, বসুধারা প্রকাশনী, ২য় সংস্করণ)।

    'প্রতাপসিংহ' (১৯০৫), 'দুর্গাদাস' (১৯০৬), 'নূরজাহান' (১৯০৮), 'মেবারপতন' (১৯০৮), 'সাজাহান' (১৯০৯) দ্বিজেন্দ্রলালের এই সমস্ত নাটকে স্বদেশী আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর ভাব ও ভাবনাটি মূর্ত হয়ে উঠেছিল। দেশ তাঁর কাছে কোনো ভৌগোলিক পরিধি মাত্র ছিল না। তা হয়ে উঠেছিল সজীব মাতৃমূর্তি। দ্বিজেন্দ্রলালের গানে দেশমাতৃকার ছবিটি উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট। তিনি লিখেছেন—

    'জননী! তোমার সন্তান তরে কত না বেদনা, কত না হর্ষ,
    জগৎ পালিনি! জগত্তারিণি, জগজ্জননী ভারতবর্ষ।'

    বিশ্বাস, প্রেম আর মনুষ্যত্বই একটা গোটা জাতিকে নিবিড় বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারে একথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল। 'সবুজপত্র' পত্রিকার সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর মতে দ্বিজেন্দ্রলাল স্বজাতিকে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে যদি দেশের দৈন্য দূর করতে হয় তার জন্য আমাদের মনে ও চরিত্রে যোগ্য এবং সক্ষম হতে হবে, সবল হতে হবে। তাঁর দেশপ্রীতির চরমবাণী এই যে 'আবার তোরা মানুষ হ'। হিংসা-কবলিত নেতৃ-অধ্যুষিত আমাদের এ-সমাজে দেশ ও জাতি সম্পর্কে দ্বিজেন্দ্রলালের মূল্যায়ন আজও সমান প্রাসঙ্গিক ও জরুরি। 'সমাজ বিভ্রাট' ও 'কল্কি অবতার', 'বিরহ', 'ত্র্যহস্পর্শ', 'পুনর্জন্ম' এসব প্রহসন বা নক্‌শায় সামাজিক অসঙ্গতিকে তীব্র ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় কশাঘাত করেছেন তিনি। এই কশাঘাতের অন্তরালে রয়েছে দেশের প্রতি তীব্র মমত্ববোধ।

    স্বাদেশিকতার অনুপ্রেরণা জোগাতে তাঁর ঐতিহাসিক নাটকগুলি রচিত হয়েছিল, জাতিপ্রেমের বাড়াবাড়ি যে অন্য দেশ বা জাতির প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণার সৃষ্টি করতে পারে এবং স্বজাতির প্রতি তীব্র অন্ধ অনুরাগ ও যুক্তিহীন আনুগত্য মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে এ আশঙ্কাও কবি দ্বিজেন্দ্রলালের মনে উঁকিঝুঁকি দিত। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই কবি মানুষটি এ ধরনের স্বদেশপ্রেমকে জলাঞ্জলি দেওয়ার কথা বলেছেন বারবার। 'মেবারপতন' নাটকে মানসী চরিত্রটি জাতিপ্রেমের সংকীর্ণ চৌহদ্দি ছাড়িয়ে বিশ্বপ্রেমের দিকে এগিয়ে গেছে। কবিপুত্র দিলীপকুমার রায় 'মেবারপতন' নাটক সম্পর্কে লিখেছেন —"I began to revere his patriotism, too, the first fire of which had made him swiftly famous in Swadeshi days. When he wrote patriotic dramas one after the other ... It was then the heyday of Bengali Patriotism and he caught its contagion, a contagion we should avoid today. But in those days we took militant patriotism as its face value and so persuaded ourselves that it was the panacea for all the evils our flesh was heir to. We know better now. But in the first flush of our patriotic adolescence we had all devoutly believed in the gospel of nationalism ... and had burned with hatred everything foreign ....... It was at this point that Dwijendralal grew maddeningly & utterly sick of patriotism. It was at this turning point of his life that he wrote Fall of Mevar." (Translator's note : Page VII - IX : Fall of Mevar; 1958)

    দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটকগুলি সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকার অসন্তুষ্ট হলেও সরাসরি সেগুলি নিষিদ্ধ করা হয় নি। তাঁর 'মেবার পতন' নাটকে পৃথিবীতে ধর্মের নামে রক্তপাতকে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এই নাটক লেখার আর কিছুকাল পরে জাতীয়তাবোধের উন্মত্ততায় হিটলারের দানবীয় ধ্বংসলীলা আর পৈশাচিক তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করেছিল সারা পৃথিবী।

    'বিশ্বময় জাগায়ে তোল / ভায়ের প্রতি ভায়ের টান'—'মেবার পতন' নাটকে এটাই মূল কথা। এই বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধের আকাঙ্খাটি হিংসায় উন্মত্ত আধুনিক পৃথিবীতে সবচেয়ে কাম্য। আর তাই দ্বিজেন্দ্রলালের জীবনদর্শন, তাঁর সাহিত্য ভাবনার শেষ কথাটি আজকের জটিল, যান্ত্রিক আর পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ জীবনযাত্রায় আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দ্বিজেন্দ্রলাল নিজে কখনও খ্যাতির প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারেন নি বা তাঁকে ঘিরে কোনও সাহিত্যিক ভক্তমণ্ডলী সেকালে সৃষ্টি হয় নি। মৃত্যুর পর অচিরেই রবীন্দ্রপ্রজ্ঞার তীব্র উজ্জ্বল আলোয় তিনি বাঙালির মন থেকে সাময়িক ভাবে বিস্মৃত হলেন। জন্মের সার্ধ-শতবর্ষে পৌঁছে এই প্রতিভাধর, অকালমৃত মানুষটি যাতে হৃত মর্যাদা এবং প্রাপ্য শ্রদ্ধাটুকু ফিরে পান সে বিষয়ে তাঁর উত্তরসূরীদের আর একবার ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে তা সুনিশ্চিত।

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)