• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫৩ | ফেব্রুয়ারি ২০১৩ | গ্রম্থ-সমালোচনা
    Share
  • স্বদেশবোধের কবিতা : রবিন পাল


    স্বদেশপ্রেম ও স্বাজাত্যবোধের গান কবিতা; সংকলন ও সম্পাদনা : অনুরাধা রায়; প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারী ২০১২, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি - কলকাতা, পৃষ্ঠাঃ ৫২৮ ; ISBN : 978-81-7751-207-6

    অনেকেই আত্মশ্লাঘাসহ অনুযোগ করেন যে সিরিয়াস অথচ প্রাঞ্জল গবেষণাপত্র এ সময় আর প্রকাশিত হচ্ছে না। কথাটা একেবারে বেঠিক নয়, তবে একেবারে কিছু হচ্ছে না তা তো নয়। সম্প্রতি পড়ার সুযোগ হল 'স্বদেশ প্রেম ও স্বাজাত্যবোধের গান কবিতা' নামক বইটি। এটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন ইতিহাসের প্রসিদ্ধ অধ্যাপিকা অনুরাধা রায়। বইটির 'প্রাসঙ্গিক কথা' এবং 'ভূমিকা' অংশে (৩ ও ৩৭ পৃষ্ঠা) বিষয়টির সুগভীর ও সুবোধ্য আলোচনা আছে যা যেকোনো পাঠককে নানাভাবে ভাবিত করবে। বইটির শেষ অংশে আছে 'কবি-পরিচিতি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কথা' (৪০ পৃ.??), যাতে আছে মধ্যবর্তী অংশে উপস্থাপিত গান ও কবিতাগুলির রচয়িতাদের পরিচয়। সেটাও সমভাবে জরুরী। লেখিকা দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে চর্চায় ছিলেন, তাই উপস্থাপনার সংশয়হীন প্রকাশ পাঠককে বিস্মিত করবেই বলে মনে হয়। এখানে একটি কথা বলা দরকার। আলোচ্য বইটির সঙ্গে অনুরাধা রায়ের আরও দুটি বই পাঠকের দেখা দরকার। তবেই পাঠক বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিত বিষয়ে সামগ্রিক ভাবনার উদ্দীপনে সাহায্য পাবেন। অপর দুটি বই হল — স্বাধীনতা সংগ্রামের গান ও কবিতা, ১৯৯৯, সাহিত্য আকাদেমি এবং Nationalism as a Poetic Discourse in Nineteenth Century Bengal, ২০০৩, প্যাপিরাস। এই তিনটি বইয়ের বিষয় অনেকটাই এক, কিন্তু পুনরাবৃত্ত নয়; বলবার কথা, দেখাবার বিষয় নানাভাবে হাজির করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার তারিফ করতেই হবে।

    'স্বদেশপ্রেম ও স্বাজাত্যবোধের গান কবিতা' বইটির আলোচনা অংশে কি আছে তা পাঠককে জানানো দরকার। স্বাজাত্যবোধ নিয়ে আলোচনা শ্রীযুক্তা রায়ের বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। কিন্তু স্বদেশপ্রেম বিষয়টিও ব্যাখ্যাত হওয়া প্রয়োজন। Patriotism বললে দেশপ্রেম বোঝানো হয়। স্বদেশপ্রেম কখনও মিশ্রিত ভাবে কখনও পৃথকভাবে 'ন্যাশনালিজম' বা স্বাজাত্যবোধের কাছে চলে আসে। রুশ সংবিধানের পাতা ওল্টালে মনে হবে দেশপ্রেম স্বাজাত্যবোধের থেকে বেশি উজ্জ্বল। কারো কারো মতে দেশপ্রেম সার্বভৌমতাকে মান্য করার থেকে উচ্চতর অনুভব।

    পেট্রিয়টিজম এর সেন্টিমেন্ট ন্যাশনালিজম এর সেন্টিমেন্ট থেকে আলাদা তবে এই দুই সেন্টিমেন্ট আলাদা করাও শক্ত। বলা যায় একটিতে আছে স্বাভাবিক অনুভব, অন্যটিতে আছে হয়তো যুধ্যমান ইডিওলজি। পেট্রিয়টিজম যখন অহেতুক বিদেশী ঘৃণা (xenophobia)-র সঙ্গে যুক্ত হয় তখন তা উৎকট স্বাদেশিকতা (chauvinism), আর যদি তা মারমুখো এবং অবজ্ঞাপ্রবণ হয় তাহলে হয় সংগ্রাম প্রিয় দেশ (jingoism) এইসব কথা গোড়ার দিকে থাকলে ভালো হত। ন্যাশনালিজম বা স্বাজাত্যবোধ নিয়ে গত কয়েক দশকে নতুন ক'রে সিরিয়াস আলোচনা হচ্ছে। তার তালিকা বিস্তর। তার মধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের Nationalist Thought and the Colonial World, প্রজা ও তন্ত্র এবং Benedict Anderson এর Imagined Communities : Reflections on the Origin and Spread of Nationalism প্রভৃতি বইয়ের কথা শ্রীযুক্তা রায় উল্লেখ করেছেন, অবশ্য সঙ্গে অন্যান্য বাংলা ও ইংরেজি বই আছে। আমার কৌতূহল হয় হঠাৎ Nationalism নিয়ে দেশে ও বিদেশে এতো চর্চার কারণ কি? ব্যাপারটির চর্চা যে আগে ছিল না তা নয়, কিন্তু এ বিষয়ে নানা তত্ত্বের উদ্ভাবন, সেই তত্ত্ব অনুযায়ী দেশ কাল সমাজকে ব্যাখ্যার চেষ্টা একটু বেশি মাত্রায় হচ্ছে। এর কারণ কি? Steven Grosby বলছেন - Understanding nationalism is central to understanding many of the social conflicts and political disputes that dominate the headlines today. (Nationalism) ভারতবর্ষ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন - এখানে 'নেশন এর অন্তর্গত কিছু মানুষের আছে দেশ সম্পর্কে সংকীর্ণ, অসহিষ্ণু ধারণা, তারা জোর দিচ্ছে এক ধর্মে, হিন্দুত্বের দিকে। অন্য কিছু মানুষ ভাবছে ধর্ম বিষয়ে - যথা মুসলিম, শিখ, খৃষ্টীয় - স্বাধীনতা থাকা উচিত। কেউ কেউ ভাবে - সারা বিশ্বে - নেশন demands unquestioned and uncompromising loyalty. এ ধারণা বলবান হয়ে উঠলে ব্যক্তির স্বাধীন সত্তায় ধাক্কা এসে পড়ে। ভারতে হিন্দুত্বের জেহাদ, জাপানে কাকুতাই জেহাদের মতো ইতিহাসগত ভাবে অস্বীকার করতে চান 'factual complications in the formation of the nation that a more civil conception of a territorial relation would tolerate.' (পূর্বোক্ত) পাঞ্জাবে শিখ, কেরলে খৃষ্টপন্থী, কাশ্মীরে মুসলিমরা হিন্দু ভারতের ধারণার থেকে ভিন্নত্ব পোষণ করে। ১৯৯২, ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ঘটনার পর নেশন, ন্যাশনালিটির তত্ত্বচর্চা বেশিমাত্রায় চলছে। কিন্তু আলোচনা যতই কমুক সংঘর্ষ কমে নি। Rekha Pappu একটি প্রণিধানযোগ্য কথা বলেছেন যা এ প্রসঙ্গে যুক্ত হতে পারে। কথাটি হল - The project of theorizing the nation among the left today oscillates between fatalism (arising from a contemplation of the unrelenting march of capitalism) and optimism (deriving from the irrepressible nature of resistant nationalism).
    (Determining Nations, Literatures and Theory; প্রবন্ধ - Interrogating Post-colonialism theory, Text and context - Ed. by Harish Trivedi and Meenakshi Mukherjee.)
    আমি অনুরাধা রায়ের যে ক'টি বই পড়েছি তার ভিত্তিতে বলতে পারি তিনি বামপন্থী-মনস্ক তাই এই সংকলনের ভূমিকা অংশ পাঠে এইসব কথা জরুরী মনে হতে পারে।

    কিন্তু এইসব কথা থাক। শ্রীমতী রায়ের বক্তব্য বিষয়ে মনোনিবেশ করা যাক। টীকা সহ ভূমিকা অংশ ৯টি ভাগে বিভক্ত - জাতি-সৃজন, বাঙালি জাতি, ভারতীয় জাতি, বাঙালি জাতিত্ব ও ভারতীয় জাতিত্বের পারস্পরিক সম্পর্ক, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে জটিলতা, ব্রিটিশ-বিরোধিতা ও ব্রিটিশ-আনুগত্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিষাদাচ্ছন্ন ব্যঙ্গকৌতুক, জাতির কর্মপরিকল্পনা, প্রতি-জাতিবৈর। এবার তাঁর বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন করা যাক। অনুরাধার মতে, স্বদেশপ্রেমের অভিব্যক্তি বাংলা কবিতায় অনেক প্রাচীন হলেও জাতীয়তাবাদ অনেক আধুনিক। জাতীয়তাবাদী তাগিদের দুটি উৎস—যৌথ সমাজ ভেঙে যাওয়া শূন্যতাবোধ কাটিয়ে নতুন যৌথতা সন্ধান এবং আত্মমর্যাদাবোধ। অ্যাণ্ডারসনের মতে—জাতি হল কল্পিত জনগোষ্ঠী, তবে জাতির কল্পনার মাত্রা নানা ধাঁচের। জাতীয়তাবাদীদের জাতিচেতনা গঠনে পুরোনো ধারণা কাজ করে, কখনো অতিকথা ধাঁচের। এটা বাংলা ও ভারতের স্বরূপ বোঝায় প্রতিফলিত। সুপ্রাচীন ভাষাভিত্তিক আঞ্চলিকতার চেতনা, ভাষার বন্ধন কাজে লাগানো হল। তাছাড়া জাতিগোষ্ঠী ভাবনা সঞ্জাত বলেই জাতীয়তাবাদীদের ইতিহাসচর্চা কাব্যময়, এ কবিতা 'ইতিহাস লিখন'। জাতীয়তাবাদী কবির স্বদেশ বর্ণনা—'এক ধরনের আদর্শায়িত নির্মাণ'। এ স্বদেশ—সুন্দর ও সমৃদ্ধ। বর্ণিত দেশমাত্রার চরিত্র দুপ্রকারের—কল্পিত মাতৃদেবী এবং ঘরোয়া নিজের মা। দেশমাতৃকার কল্পনা ছিল মূলত: ধর্মনিরপেক্ষ।

    বাংলাভাষা উনিশ শতকে আধুনিক যুগের উপযুক্ত হয়ে ওঠার আগে থেকেই তৈরি ভাষা। এবার লেখকরা তাকে আধুনিক ভাবনা বাহক করে তুলতে সচেষ্ট হলেন এবং আত্মপরিচয়ের তাগিদ প্রকাশক করে তুললেন। উনিশ শতকের শুরুতে যে জাতীয়তাবাদের জন্ম তাতে বৃটিশ আনুগত্য ছিল প্রবল। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ঈশ্বর গুপ্তীয় লৌকিক ভাষাবাহক কবিতার ধাঁচ বদলে গেল—ইংরেজি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা নব্যরীতি ও নব্যরুচির পরিচয় রাখলেন। রঙ্গলাল স্কট, বায়রন ও ইংরেজি সাহিত্যের ভক্ত হলেও ইংলণ্ডীয় বিশুদ্ধ প্রণালীতে বঙ্গীয় কাব্য রচনায় সচেষ্ট হন। মাইকেলও শেলী, বায়রন, স্কটের ভক্ত হলেও, মাতৃভাষার প্রতি প্রবল ঘৃণা থাকলেও মাতৃভাষাকে নিজ মহিমায় প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছিলেন। 'মাতৃভাষাপ্রীতি এই ঔপনিবেশিক এলিটদের মর্যাদাবোধের ভিত্তি ছিল।' জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রধান ভিত্তি ছিল বাংলাভাষা। বাঙালি জাতিত্বের পাশে ছিল ভারতীয় জাতিত্ব। এটা অনেক কবিতায় দেখা যাবে। জাতীয়তাবাদের অঙ্কুর বার হবার কালে ডিরোজিয়ো ভক্তরা সক্রিয় ছিল। তবে এসময় ভারতীয় জাতি মানে হিন্দুজাতি। আর ভারত শব্দের বদলে আসত 'আর্য' এই শব্দটি। হিন্দুমেলা নাম দিয়ে স্বদেশপ্রেম ও স্বাজাত্যবোধের ব্যাপক চর্চা হয়। এই হিন্দু-আর্য চেতনা কবিতায় আনতে গিয়ে কবিরা এক 'ধ্রুব অতীত' আনতেন এবং পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে এক নিশ্বাসে উচ্চারণ করতেন, দুটোই যেন ইতিহাস। আর্য গৌরবের উপাদান—জ্ঞান, বিদ্যা, ভক্তি, প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা, ধার্মিকতা। কবিরা বাহুবলের উদাহরণ দিতে গিয়ে মধ্যযুগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের লড়াইয়ের কাহিনী ব্যবহার করতেন। এর পিছনে কাজ করেছে পাশ্চাত্যের রোমান্টিক সাহিত্য ও প্রাচ্যবিদদের ভারতচর্চা এবং নিজেদের জাতীয়তাবাদী তাগিদ। অনুরাধা দেখান বাঙালির জাতীয়তাবাদী চিন্তা হয়ে উঠল হিন্দু জাতীয়তাবাদ, তাতে অনেক কল্পিত হিন্দু-আর্য গৌরবের কথা আছে। উনিশ শতকের শেষে বেশি করে ফিরে এল বঙ্গচিন্তা। ১৮৬০-এর দশক থেকে নিষ্ক্রিয় জাতীয়তাবাদ হয়ে ওঠে সক্রিয়, তার সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক সক্রিয়তা। ১৮৮৫-তে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা এই প্রয়াসকে শক্তিশালী করে। তখন কবিরা বিলাপের বদলে জাগরণ ও উত্থানের কবিতা লিখতে শুরু করেন। উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের গোড়া বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্বর্ণযুগ। রবীন্দ্রনাথের চৈতালী, কল্পনা, নৈবেদ্য, উৎসর্গ কাব্যগ্রন্থে ভারতচিন্তা আছে, তবে বঙ্গচিন্তা বেশি, আশাবাদী মেজাজ সুস্পষ্ট। কবিতার পর কবিতায় এলেন বঙ্গমাতা।

    এরপর জাতীয়তাবাদী কবিতায় ও গানে হিন্দু মুসলমান সম্পর্কের জটিল কথা। কিছু বিদ্রুপাত্মক কবিতায় বাঙালির অনুকরণপ্রিয়তা, আলস্য ইত্যাদির কথা আবার 'যবন' শব্দ ব্যবহারে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কথা। মুসলিম আগ্রাসনের ধারণা অনেক কবিতায়। নবীনচন্দ্র সেনের কবিতায় যবন ও ইংরেজের তুলনামূলক মূল্যায়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব। ভারতীয় দুর্দশার জন্য কবিরা বললেন যবন ও ব্রিটিশ দুইই দায়ী। হিন্দু স্বর্ণযুগ, মুসলিম নিপীড়ন, ব্রিটিশ শাসন বাঞ্ছনী—এই অতিকথা এল অনেক কবিতায়। উনিশ শতকের গান ও কবিতায় ethnic nationalism এ nationalism ছিল ethnicity-র থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উনিশ শতকের ইউরোপের ধ্রুপদী জাতীয়তাবাদ ঐক্যমুখী, ভারতে অনৈক্যমুখী, যদিও উনিশ শতকে এই জাতীয়তাবাদই প্রেরণা। দেখা যাবে উনিশ শতকের বাঙলা কবিতা ও গানে মুসলমানদের প্রতি মনোভাব নানা স্তরের—কখনও তীব্র বিদ্বেষ, কখনও মুসলমান বিষয়ে নীরব থেকে শুধু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রাজকৃষ্ণ রায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, অশ্বিনীকুমার দত্ত প্রভৃতির রচনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। উনিশশতকের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের চিন্তায় উদার জাতীয়তাবাদ ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ জট পাকিয়ে গিয়েছিল। জাতিচিন্তা ব্যক্ত হত এক মায়ের দুই সন্তান হিন্দুমুসলমান এই চিত্রকল্প ব্যবহারে। উনিশ শতকের বাঙালি পথিকৃৎ জাতীয়তাবাদী ব্রিটিশের তৈরি, তাদের ওপর নির্ভরশীল। ব্রিটিশ বিরোধিতা, ব্রিটিশ আনুগত্য দুয়ের অস্তিত্ব একই কবির কবিতায় দেখা গেছে। ইংরেজ সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণকে বিদ্রুপ করে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অমৃতলাল ও গিরিশ ঘোষের কবিতায়। বুদ্ধিজীবীরা চাইছিল—অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ। কিন্তু কেউ কেউ ব্রিটিশ ভক্তির বান ডাকিয়েছে। তবে দোলাচলবৃত্তিই এক্ষেত্রে বেশি। নানা অতিকথা নির্ণয় করেছেন সংকলক ইতিহাসের দৃষ্টিতে। যেমন—ব্রিটিশরাজ ও ব্রিটিশ রাজপরিবার পৃথক, ভারতীয়রা দুর্বল ব্রিটিশদের তুলনায়, ব্রিটিশ শাসন ঈশ্বরের আশীর্বাদ, কুফলের কারণ ব্রিটিশ শাসকরা কুলোক বলেই, ব্রিটিশ জ্ঞান ও মূল্যবোধের দীক্ষা দিয়েছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বের বড়ো জায়গা এই শেষের জায়গায়। রবীন্দ্রনাথ যেমন ভালো ইংরেজ খারাপ ইংরেজ নির্ণয় করেছেন। এইসব অতিকথা, জীবনযন্ত্রণা কমাতে পারেনি।

    এর থেকে মুক্তির পথ—ব্যঙ্গকৌতুকের হাসি। তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকত ভর্ৎসনা, ক্রোধ, করুণা প্রভৃতি। বিদ্রুপ সাহেবকে, বিদ্রুপ স্বদেশমানুষকে। অনুকরণ ও চাটুকারিতার জন্য তিরস্কার। গিরিশ ঘোষ, হেমচন্দ্র, যোগেন্দ্র বসু, অমৃতলাল, রজনীকান্ত প্রভৃতির লেখায় কিভাবে তা ব্যক্ত লেখিকা উদাহরণসহ বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। উনিশ শতকের ভীরু দুর্বল জাতীয়তাবাদই বিশ শতকে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়। এককালে বিষাদ ও উদ্দীপনার টানাপোড়েন ছিল, পরে দ্বিতীয়টা বড় হয়ে ওঠে।

    জাতীয়তাবাদীদের নারীচিন্তা এ বইতে গুরুত্ব পেয়েছে। প্রথমে আধ্যাত্মিক অর্থে, পরে স্ত্রীশিক্ষা ও অন্যবিধ সংস্কারের সূত্রে। আর এসেছে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের বাসনা। দেশ মাতৃকার শক্তিরূপিণী জগন্মাতা ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে জাতির কর্মপরিকল্পনা মেলানো শুরু বঙ্কিমের হাতে বন্দেমাতরম গানে। আত্মশক্তির বিকাশে গুরুত্ব দেন রবীন্দ্রনাথ—বিকল্প ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সম্ভাবনা দেখা দেয়। অ্যাণ্ডারসনের Imagined Community-র তত্ত্ব যেন রবীন্দ্র আদর্শের সমরূপ। যদিও কবির দর্শন ও তার বাস্তবায়নের ফারাক আছে। সবশেষে আলোচনা করেছেন—শাসকদের বিরূপতা প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয়দের প্রতি জাতিবৈরতার পরিচয়জ্ঞাপক কবিতার কথা। লেখিকার মনে এ এক 'মৌলিক আবেগ'। তপন রায়চৌধুরী ভূদেব, বঙ্কিম, বিবেকানন্দের মধ্যে এই প্রতি-জাতিবৈরির কথা বলেছেন। অনুরাধার মতে প্রতি-জাতিবৈরি উপনিবেশ-বিরোধিতা নয়, জাতীয়তাবাদও নয়। বেনেডিক্ট অ্যাণ্ডারসনও তাই বলেন। এই লেখককে প্রধানত চিন্তা সূত্রের কেন্দ্রে রেখে ভারতবর্ষীয় উনিশ শতকী বাংলা কবিতায় জাতীয়তাবাদী লক্ষণের বিস্তৃত আলোচনা যথাসম্ভব প্রাঞ্জল ভাবেই এ বইতে উপস্থাপিত। আমরা আশা করব বিংশ শতাব্দীর একাল পর্যন্ত কবিতা ও গানে জাতীয়তাবাদ নিয়ে তিনি বড় মাপের একটা কাজ করবেন।

    বইটির দ্বিতীয় অংশে আসা যাক। এখানে আছে সাতটি পর্যায়—উন্মেষ পর্ব, হিন্দুমেলার গান-কবিতা, জাতীয়তাবাদের জোয়ার, মুসলমান কবিরা, মহিলা কবিরা, অজ্ঞাতনামা কবিরা, লৌকিক ছড়া ও গান। তার পর আছে এই সাতটি অধ্যায়ে যাঁদের রচনা তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনকথা। সাতটি অধ্যায়ে যে সব রচনা সংকলিত তার উৎস বলা আছে। আর একবার বলে নেওয়া যাক—সংকলনটি একেবারেই উনিশ শতকে সীমাবদ্ধ। উন্মেষপর্ব শুরু হয় রামনিধি গুপ্তের সুপ্রসিদ্ধ চার পঙ্‌ক্তির কবিতা (নানান দেশের নানান ভাষা) দিয়ে। এরপর আছে ডিরোজিয়োর একটি ও কাশীপ্রসাদ ঘোষের একটি কবিতা, দুটোই ইংরেজি, প্রথমটির দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃত অনুবাদও আছে। ঈশ্বর গুপ্তের সাতটি কবিতা আছে যাতে যুগসন্ধির মানসিকতা প্রতিফলিত। মধুসূদনের চারটি কবিতা আছে, সব কটিই চতুর্দশপদী কবিতাবলী থেকে। দীনবন্ধু কবি হিসাবে সমর্থ নন, কিন্তু উদ্ধৃত চারটি কবিতায় রেলগাড়ি, ইংরেজ আনুগত্য, যুদ্ধ, প্রবাসীর দুঃখ, নীলকর ব্যবহারে অস্থিরতা, মাতৃশাসকের কাছে দুঃখ নিবেদন। হিন্দুমেলার গান-কবিতা তাৎপর্যপূর্ণ এই অর্থে জাতীয়তাবাদের হিন্দুমনস্কতার বিকাশ পরিচয় এখানে ব্যক্ত। এখানে এমন অনেক কবির দেখা পাই যাঁরা সাহিত্যের ইতিহাসে কবি রূপে পরিচিত নন। যেমন - গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বামাচরণ সিংহ। জাতীয়তাবাদের জোয়ার এল ১৯০৫ এর সময়ে, লেখকরা, কবি ও প্রাবন্ধিক সবাই আর্যগৌরবে মজে গেলেন, পুরাণ ও ইতিহাস সমীকৃত হল, পাশ্চাত্য চর্চা প্রকাশভঙ্গিকে দিল আধুনিক দীপ্তি। এ অংশে নানা নাটক থেকেও গান এসেছে। আছে—নব বাণিজ্য কথা, কালাপানি যাত্রায় নারীদের কথা, কখনও নানা প্রসঙ্গ প্রহসনাত্মক হয়ে আসে। স্বদেশপ্রাণ অশ্বিনী দত্তও স্বদেশী গানে বাউল সুর দেন, সেটা আনন্দচন্দ্র মিত্র প্রভৃতিরাও করেন। উদ্দেশ্য—জনমানসে লৌকিক ঐতিহ্য ধাঁচ দিয়ে চেতনা সঞ্চার। আক্ষেপ, স্বপ্ন, আশা—সবই আছে, কলিযুগ কথাটি বহুল ব্যবহৃত। ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর 'ভারত উদ্ধার' কাব্যে ব্যঙ্গ শ্লেষ মারফৎ বাঙালির অস্থির চেতনাকে কাহিনীর আদলে হাজির করেছেন। কাঙ্গাল ফিকির চাঁদ এর বাউল গানটি তাৎপর্যপূর্ণ জাতীয়তাবাদের শিক্ষামার্জিত জোয়ারে সংযোজন হিসেবে। রামপ্রসাদী ও লক্ষ্ণৌ ঠুংরি ঢং আছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। Vernacular Press Act-এর প্রতিবাদে কালীপ্রসন্ন কাব্য বিশারদ কাব্য রচনা করে সরকারী রোষের কবলে পড়েন। কালীপ্রসন্ন ঘোষ জাতীয় সংগীত লিখলেন। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার এর 'গর্বিত রাজার প্রতি' কবিতায় আছে সংস্কৃত অনুসরণ। (ভো রাজন! গর্ব পরিহর; / স্মর স্মর পূর্ব ভূপগণ কাহিনী) দুর্ভিক্ষের বর্ণনাত্মক কবিতা কেদারনাথ ভারতী সাংখ্যতীর্থের রচনা, যাতে ভারতবাসীদের নিদ্রা পরিহার করার ডাক দেওয়া হয়েছে। ক্ষীরোদ প্রসাদ জন্মভূমি বন্দনা সূত্রে মহাভারত স্মরণ করেছেন (বনে বনে ঘুরি মহা সাম্রাজ্য-ঈশ্বর / গলবস্ত্রে কৌরবের দ্বারে)। অন্যদিকে গঙ্গাচরণ সরকার ইংরেজ শাসন বোঝাতে 'ব্রিটেনিয়া সমীপে ইণ্ডিয়া' ইংরেজ বন্দনাকে বিলাপ আকারে এনেছেন। নাট্যকার বলেই গিরিশচন্দ্রের রচনার উদ্ধৃত একাধিক গানে আছে সংলাপ আকারে গান। অনুরাধা বর্ণিত জাতীয়তাবাদের ভারতচেতনার পরিচয় পাব গোবিন্দচন্দ্র দাসের 'গুরুগোবিন্দ সিংহ', বিজয়চন্দ্র মজুমদারের 'উদয়াদিত্য', দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'প্রতাপ সিংহ', 'আয় ভারতসন্তান', দীননাথ সেনের 'ভারতের সুখাবসান', দীনেশচরণ বসুর 'বীণা', দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি গান, নবীন মুখোপাধ্যায়ের 'ভারতে গোলাপ' প্রভৃতিতে।

    কলকাতায় কংগ্রেসের কথা আছে গোবিন্দচন্দ্র দাসের কবিতায়, কখনও জেলা কথা বলছে ইংরেজ শাসকের কাছে (গোবিন্দ দাস), কখনও মার্চিং সঙ (চল্‌রে চল সবে ভারত সন্তান - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ), কখনও ভারতীয়ের সুখ অন্তর্ধানে বিলাপ (দীননাথ সেন)। কখনও পাগলের মুখে অভিব্যক্ত অবস্থা (দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়)। বঙ্কিমের তিরোধান উপলক্ষ্য করে স্বদেশ কথা (দেবেন্দ্র বিজয় বসু), কখনও ইংরেজ চরিত্র নির্ণয় (দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ), ইংরেজ শিক্ষাপ্রভাবে বৈদিকতার লুপ্তি বিষয়ে শঙ্কা (ঐ) কখনও তীব্র শ্লেষ স্বদেশ ও বিদেশবাসীর উদ্দেশে (দ্বিজেন্দ্রলাল), কখনও বাঙালি গৌরব বন্দনা (নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন্দ্রলাল), কখনও ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুতে শোক (নীরদচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়) প্রভৃতি। ভাষা ব্যবহারে নানা নতুনত্ব আসছে (ভয়ানক ঢং চেগেছে বাংলাতে - প্যারীমোহন), কবিতার নামে ইংরেজি (চিহ্নিত সুহৃদ - covenented friend - নবীনচন্দ্র), কখনও কবিতা-মধ্যে ইংরেজি (বাঙালি প্রাণে, Nationality / জ্বালিয়ে দেবার তরে - বেনোয়ারী লাল গোস্বামী), কখনও পুরোপুরি সংস্কৃতানুসরণ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের অধিভারতী), কখনও সংস্কৃত ধাঁচে ব্যঙ্গাত্মকতা (নমস্তে শ্বেতরূপায় নীলবর্ণ বিলোকন - যোগেশচন্দ্র বসু)। বুয়র যুদ্ধের কথা আসছে, রজনীকান্ত সেনের কবিতায়। রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী গানে ভাষা ও ভাবনায় আধুনিক দীপ্তি প্রকাশিত। তাঁর অনেকগুলি রচনা এ বইতে সন্নিবিষ্ট।

    জাতীয়তাবাদের একটা পর্বে হিন্দুত্ব প্রাধান্য পায় কিন্তু মুসলমানরাও তো এই জাতীয়তার অন্তর্গত হতে পারে, অন্তত ভাষা, অবস্থানগত সামীপ্যে। মুসলমানদের মধ্যে কিঞ্চিৎ বেদনাবোধ থাকলে ও স্বদেশমনস্কতা এবং কবিত্বস্ফূরণ ঘটতে পারে স্বাভাবিক ভাবেই। অনুরাধা এই দিকটি অবহেলা করেন নি, তাই এই অংশে কয়েকটি কবিতা সন্নিবেশিত হয়েছে। মীর মুশারফ হোসেন এদের মধ্যে বিখ্যাত, তাই তাঁর তিনটি গান রাখা হয়েছে। অনুরূপ ভাবে স্বদেশ চেতনার অধিকার একা পুরুষের নয়, স্বাভাবিক ভাবেই মহিলাদের মধ্যেও রাজনৈতিক সক্রিয়তায়, কাব্য রচনায়, স্বদেশিকবোধে উজ্জীবনের পরিচয় আছে এই গ্রন্থে - কামিনী রায়, কুসুমকুমারী, প্রসন্নময়ী, মানকুমারী, সরলাদেবী চৌধুরাণী অনেক খ্যাত। পাঠক বিংশ শতাব্দীর কবি সমাজে স্বাদেশিক চেতনার নারী রচিত কবিতার অধিকতর পরিচয় পাবেন, অবশ্য ভিন্ন কোনো সংকলনে। এই বইতে অজ্ঞাতনামা কবিদের অনেকগুলি কবিতা সন্নিবেশিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন সংকলনগ্রন্থে এই সব কবিতা পেয়েছেন, আগামী দিনে আশা করা যায় প্রকৃত কবির নাম জানা যাবে। কবিতার এই অজানা পরিচয় অবশ্য ইংরেজিতেও আছে। নামের ফাঁকে নামহারাদের অবস্থান থাকলে ক্ষতি কি? আমাদের তো দেখার কথা স্বদেশ চেতনা বা জাতীয়তাবোধ, কাব্যত্ব কাব্য বৈচিত্র্য পেলে বাড়তি লাভ - তাই নয় কি? এই অংশের অনেকগুলি গান / কবিতায় সাহিত্যরসের পরিচয় পেয়ে আমরা আনন্দিত। এই কবিতাগুলির মধ্যে একটি কবিতা জাহাজ চালানোর কৃতিত্বের জন্য জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ঠাকুরের সম্বর্ধনা উপলক্ষে বরিশালে নগর-সংকীর্তন বিষয়ক। পাঠক সংকলন থেকে এ কবিতা পাঠে মজা পাবেন সন্দেহ নেই। তবে এটি অধ্যায়ের শেষ গান নয়, উল্লেখ করা যায়। সবশেষে আছে লৌকিক ছড়া ও গানে স্বদেশ চেতনা। এগুলিও (একটি বাদে) অজ্ঞাত পরিচয়, সংকলক সংগ্রহ করেছেন নানা সংকলন থেকে। এর মধ্যে বাউল, গম্ভীরা, গাথা ধাঁচের কবিতা আছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় ব্রিটিশবিরোধী প্রতিবাদ এসেছে গ্রামীণ মানুষের কাছ থেকেও। তবে বিদ্রোহী মেজাজ কম ক্ষেত্রেই মেলে।

    বিশাল কর্মকাণ্ড এই সংকলন। শ্রীযুক্তা অনুরাধা রায় তাঁর বিপুল পরিশ্রমের জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন পাঠক সমাজের থেকে। দেশে দেশান্তরে দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে একাগ্র লক্ষে এ কাজ করতে হয়েছে - এটাই স্বাভাবিক। ধন্যবাদ প্রাপ্য দীর্ঘ ভূমিকার জন্য। জাতীয়তাবাদ নিয়ে এ বঙ্গে ইংরেজি বাংলা মিলিয়ে অনেকগুলি বই ও প্রবন্ধ বেরিয়েছে। আমি যেকটি দেখেছি তার মধ্যে তাঁর বইটিই সবচেয়ে সহজবোধ্য, অথচ সমগ্রতা সঞ্চারী। এ লেখায় তত্ত্ব ও তথ্য আছে, কিন্তু কোনোটাই লেখাকে আতঙ্কবিস্তারী করেনি। সামান্য ২/১টি ছাপার ভুল আছে। যেমন - পৃ. ৮৩, ১৫০, ২২১। পৃ. ১৮২ কংগ্রেস (কলিকাতায়) কবিতায় ১১ ও ১২ পঙ্‌ক্তিতে কিছু অনুক্ত আছে। সেগুলি কি? পৃ. ১৫৯ এ কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস প্রসঙ্গে বলা হয় উনি 'বিদেশে নানা দুঃসাহসিক কাজকর্ম করে দেশবাসীর প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন'। প্রকৃতপক্ষে তিনি মেক্সিকো ও ব্রাজিলে যান। একসময় সার্কাসে বাঘসিংহের খেলা দেখাতেন, পরে জাতীয় চিড়িয়াখানার সুপারিনটেনডেন্ট হন ব্রাজিলে, এর পর ওখানেই সেনাবাহিনীতে কর্পোরাল, প্রমোশন পেয়ে সার্জেন্ট, শেষ পর্যন্ত কর্নেল। তাঁর জীবৎকাল ১৮৬১-১৯০৫।

    পৃ. ২৫৩-২৫৬ পর্যন্ত বেনোয়ারীলাল গোস্বামীর 'খিচুড়ি' নামে একটি কবিতা আছে। এঁর কোনো পরিচয় প্রান্তিক টীকায় নেই। সুকুমার সেন তাঁর 'বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস' ৪র্থ খণ্ডে লিখছেন, এঁর জীবৎকাল ১৮৬০-১৯৩৮। প্রথমে নব্যভারত, পরে সাহিত্যে তাঁর লেখা ছাপা হত। প্রথম দিকে গম্ভীর কবিতা পরে সরস। যেমন 'খিচুড়ী' ও 'পোলাও' (১৯২৩)। এইরকম ছোটখাটো অপূর্ণতা পরবর্তী সংস্করণে দূরীভূত হবে এবং এই বিষয় নিয়ে আরও নতুন নতুন গবেষণার সূত্রপাত হতে পারবে। আপাতত বইটি আকরগ্রন্থের সম্মান ও অভ্যর্থনা পাবার যোগ্য বলে গণ্য হওয়া উচিত।

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments