• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫২ | অক্টোবর ২০১২ | কবিতা
    Share
  • তিনটি কবিতা : নিরুপম চক্রবর্তী


    ১. সাপেদের শিস

    একদিন ভালোবাসা ভুল ক’রে তাকে ভালোবেসে
    ফিরবে ফিরবে বলে ফেরেনি তো জানি অবশেষে
    হয়তো গিয়েছে দূর দেশে
    হয়তো বুঝতে পারেনি সে
    ছড়ানো জীবনগুলো ভ’রে ভ’রে ওঠে শুধু
    ফেনাঝরা সাপেদের বিষে।।

    একদিন ভালোবাসা ভুল ক’রে তাকে ভালোবেসে
    ঠিকই ফিরে এসেছিলো ছেঁড়াখোঁড়া পুরোনো স্বদেশে
    জানিনা তো সে কি চেয়েছিলো
    জানিনা তো সে কি পেয়েছিলো
    বাতাস হ’য়েছে ভারি অবিরাম সাপেদের শিসে
    বেরোলো লুকোনো ছুরি, কেঁপে ওঠে ছায়াগুলো
    দুলে ওঠে ফণা হিস্-হিসে।।


    ২. ক’লকাতা ২০১২

    যাও নদী, সবটুকু গ্লানি বয়ে নিয়ে যাও সমুদ্রের কাছে৷
    নীল সেতুটিতে আজ নীলবর্ণ শৃগালের পাল
    রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় সারারাত:
    গুরু তোর দাড়ির কসম!
    রবীন্দ্রনাথের শ্মশ্রূ ভেসে যায় প্রলয়ের স্রোতে
    সংবর্তে উত্তাল ঢেউ, আদিম টমটম বাজে ঢাকুরিয়া লেকে
    গলিত চাঁদের ফোঁটাগুলো
    টুপটাপ ঝরে পড়ে
    মেমোরিয়ালের পরী প্রেডেটর টেরোড্যাকট‌্ল
    ঘোররাতে উড়ে গেল:
    কারা যেন সারারাত ধরে
    তীক্ষ্ণ চীৎকারে বুঝি নগরবাসিনী কোনো
    অতিহিংস্র চামুণ্ডার জয়ধ্বনি করে৷৷

    পরাজয় ছাড়া কোনো প্রাপ্তি নেই ক্লিন্ন অন্ধকারে৷
    আমাদের জিভ নেই, চোখ নেই, গানে গানে তবুও বিরহ
    কেন যে উঠেছে জেগে, অনুমতি নেই হাসবার
    হাসতে হাসতে তবু হঠাৎই একলা ভাবি
    এ শহর একদিন ছিলো বুঝি অন্যকারো
    সূ্র্যের নির্যাসে তাই ভরা ছিলো অলিগলি
    আনাচ কানাচ;
    সরল শিশুর মতো নির্বোধ পায়ে পায়ে
    হাঁটতে হাঁটতে তারা কিছুতেই বোঝেনিতো
    রাক্ষস খোক্কস আছে
    তেপান্তরের অন্য পারে
    নিদারুণ ব্যথিত শহরে৷৷


    ৩. মায়ামি হারিকেন

    কিছু একটা হবে৷

    কে যেন আসবে বলে জেগে ওঠে ঝড়ের দাপট
    বেলেল্লা ঢেউয়ের স্রোতে লুপ্ত হয় সমুদ্রের
    রহস্যময়তা
    জলের গভীর থেকে ভেসে উঠে হিংস্র মাছেরা
    ভয়ার্ত জাহাজটিকে নিয়ে আসে উপকূল মুখে
    নির্মম মারমেড এক
    নগরীর হৃৎপিণ্ড ছিঁড়ে নিয়ে সারারাত
    বৃষ্টি হ’য়ে ঝরে ঝরে যায়
    অবিশ্রান্ত উন্মাদ ক্রন্দনে
    হারিকেনে
    তাকেই সংগীত বলে মেনে
    বিধ্বস্ত নাবিক এই প্রতিহিংসা চাক্ষুষ দেখেছে।।

    আদার ব্যাপারী আমি মারমেড কিংবা কোনো জাহাজের খবর রাখিনি
    মায়ামি নগরে তবু ওই রাতে ক্লান্ত পরবাসে
    আমারও সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে সেই ঝড় বয়ে চলে গেলে
    কিছু একটা হবে বা হ’য়েছে
    কে যেন নিঃশব্দে এসে ওই রাতে সরলরেখায়
    যন্ত্রণার তূণ গুলো শূন্য ক’রে কবিতার সারিবদ্ধ তীর
    চূড়ান্ত গাণ্ডীব থেকে বজ্রগর্ভ মহাকাশে একে একে নিক্ষেপ ক’রেছে

    কিছু একটা হবে বা হ’য়েছে৷৷



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments