(আলো ফুটে উঠলে দেখা যাবে স্টেজের একধারে কফি টেবিল তার ওপরে ফোন এবং পাশে একটি রকিং চেয়ার। সুরমিতা সান্যাল বসে আছেন। রাহুল সান্যাল বাইরে যাবার পোষাকে ঢুকলেন)
রাহুল:আমি যাচ্ছি তাহলে। মেয়েটার সাথে দেখা হলোনা, ও কি আজকেও তোমার মায়ের কাছেই থাকবে?
সুরমিতা: তা নিয়ে তুমি মাথা ঘামাচ্ছ কেন। তোমার ট্যুরে যাবার, ট্যুরে যাও। আমরা ঠিক থাকবো।
রাহুল: তুমি ঠিক থাকবে আমি জানি। হয়তো একটু বেশিই ঠিক থাকবে। তবে মেয়েটার কিসব যেন স্কুলের কাজ, কম্পিটিশন-
সুরমিতা: আমার খেয়াল আছে। তুমি কতদিনের জন্য যাচ্ছ এবার?
রাহুল: ঠিক বলতে পারছি না। ডিলটা হতে যে'কদিন লাগে।
সুরমিতা: ভালো। ফেরার আগে পারলে একটা ফোন করে দিও, এয়ারপোর্টে গাড়িটা পাঠিয়ে দেবো
রাহুল: ডোন্ট বদার। অফিসের গাড়ি আছে।
সুরমিতা: ওকে, হ্যাভ ফান
রাহুল: কাজে জাচ্ছি সুমি, মজা মারতে নয়। Please try not to be sarcastic always.
সুরমিতা: না, প্রতি উইকএণ্ডেই তোমার কাজ থাকে কিনা, তাই বলছিলাম
রাহুল: দেখো, এখন আরেকটা ঝগড়া শুরু করার সময় নেই। যাচ্ছি (বেরিয়ে যায়)
সুরমিতা: সময় তো কখনোই নেই তোমার।
(Light Fades- Music 10 seconds. Light comes back on Suramita on the rocking chair)
সুরমিতা: হাই ঋষি। কি প্ল্যান আজ সন্ধ্যায়? (হাসে) বদমাশ কোথাকার (হাসে) না কবে ফিরবে ঠিক নেই। কি বলছ? এমনি করেই যায় যদি দিন যাকনা? I wish life was that simple my dear. I have a daughter, remember.
না না ও মা'র কাছে আছে। কোথায় যাবে? রায়চক। বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না।
Can we just have a quiet evening at your place. আমি খুব ক্লান্ত জানো। কি করা উচিৎ বুঝতে পারছি না। ঝোঁকের মাথার বিরাট একটা ভুল করে ফেলতে চাইনা ঋষি।
আচ্ছা দেখা হবে তাহলে। বাই ঋষি।
(Music Light fades out and fades back in)
(টেলিফোনের আওয়াজ।)
সুরমিতা: সেলফোনটা আবার বাজছে। জ্বালিয়ে মারলো। হ্যালো কে বলছেন? হাসপাতাল থেকে। কোন হাসপাতাল? না আমি বাড়ি ছিলাম না। হ্যাঁ আমি রাহুল সান্যালের স্ত্রী। কি!! ও তো ব্যবসার কাজে ব্যাঙ্গালোর গেছিল। না, ও আমাকে তো ফোন করেনি। আমি, আমি এক্ষুনি আসছি।
(দৌড়ে বেরিয়ে যায়। light fades out. Music for 2-3 seconds) light fades in again. আলো ফুটে উঠলে দেখা যাবে হাসপাতালের ঘর ও তার সাথে লাগোয়া ডাক্তারের অফিস। একদিকে বিছানায় আধশোয়া হয়ে রাহুল, মাথায় ফেট্টি সামনে একটি চেয়ার, খাটের পাশে ছোট টেবিল। অন্যদিকটা অফিস, টেবিল চেয়ার, কাগজপত্র, এক্স-রে ভিউ-বক্স এবং চারটি চেয়ার পাতা। মাঝখানে পার্টিশন। রাহুল বেশ জমিয়ে খবরের কাগজ পড়ছে আর গুনগুন করে একটা অদ্ভুত সুর ভাঁজছে। ডাঃ চৌধুরি ও সুরমিতা ঢোকে)
সুরমিতা: কি হয়েছে তোমার। মাথায় চোট পেলে কি করে। আমায় ফোন করোনি কেন?
রাহুল: (অবাক হয়ে) দোমা? তুসি যে-এ-এ সিটাখানি ফেডো। (প্রশ্ন করার মতো) এ সুমি ভেরাকিজু? সুমি এডিচে
সুরমিতা: তার মানে? কি আজেবাজে বকছো? ডক্টর ওঁর কি হয়েছে?
ডাঃ চৌধুরি: গুডমর্নিং, আমি হাসপাতালের সুপার ডক্টর চৌধুরি। এই দেখুন মিসেস সান্যাল এসে গেছেন।
রাহুল: (হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়) ওদোর। সফি কেয়ালা গট্রম
ডাঃ চৌধুরি: তাই তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আরে মিস্টার সান্যাল, বাংলা, ইংরাজি, হিন্দি, কিছু তো একটা বলুন। এ কোন ভাষায় কথা বলছেন?
সুরমিতা: রাহুল এ কি সব বলছো। তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো না?
রাহুল: (খুব জোরের সঙ্গে) ও হো হো এলা সুমি। মেটা সুমি মো রাহে।
(ডাঃ রাঘবন ও ডাঃ পরমা বাসু ঢোকেন ডাঃ চৌধুরি এগিয়ে গিয়ে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন।)
ডাঃ চৌধুরি: এই যে মিসেস সান্যাল, ইনি ডাঃ পরমা বাসু নিউরোলজিস্ট, ইনি ডাঃ রাঘবন, এই ওয়ার্ডের ইনচার্জ।
সকলে: নমস্কার, নমস্কার।
সুরমিতা: এটা কি কোনো পয়জনিং বা কোনো ওষুধের সাইড এফেক্ট?
ডাঃ রাঘবন: মিসেস সান্যাল, আমার মতে সেটার সম্ভাবনা খুবই কম। কোনো টক্সিক সাবস্ট্যান্স পাওয়া যায়নি আর সব ওষুধ আমি বন্ধ করে দিয়েছি।
সুরমিতা: তুমি কোথায় গিয়েছিলে? তোমাকে কি কেউ অ্যাটাক করেছিল। কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল? হেড ইনজুরি?
রাহুল: (মাথা নাড়ে) নে নে
ডাঃ বাসু: না না মাথার স্ক্যান ঠিক আছে। চলুন না আমরা বরং ওই ঘরে গিয়ে কথা বলি। ওকে একটু রেস্ট নিতে দিন।
(সবাই পাশের ঘরে গিয়ে বসে)
সুরমিতা: রাহুলের কি হয়েছে?
ডাঃ বাসু: সেটা জানার জন্যই তো চেষ্টা হচ্ছে। আপনাকে তো পাওয়াই যাছিল না।
সুরমিতা: চেষ্টা হচ্ছে? তাহলে কি আমি ধরে নেব যে আপনারা রাহুলের অসুখটা ডায়াগনোসিস করতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে আমি ওকে মুম্বাই নিয়ে যেতে চাই।
ডাঃ রাঘবন:পরমাদি আপনি নিউরোলজিস্ট, আপনি কি মনে করেন?
ডাঃ বাসু: দেখুন স্পিচ ডিসর্ডার অনেক রকম আছে কিন্তু সেগুলো অন্যরকম। এ তো পাগলের প্রলাপ বলে মনে হচ্ছে, যাকে বলে পুরোপুরি ভুল বকা।
ডাঃ চৌধুরি: অথচ ওর জ্বরজারি নেই, চলাফেরা, ব্যবহার সব স্বাভাবিক, দেখতে শুনতেও পাচ্ছে চমৎকার। গুচ্ছের কথা বলে চলেছে, কিন্তু সেগুলোর কোনো মাথামুণ্ডু নেই।
ডাঃ রাঘবন: একমত হতে পারছি না। মিঃ সান্যালের কথা বলার মধ্যে একটা প্রসোডি আছে, গলার ওঠানামা আছে, কথা বলার সাথে সাথে মুখের ভাব বদলাচ্ছে। মেন্টাল ব্রেকডাউন বা ডিলিরিয়ামে এরকম হয় না। উনি যেন এমন একটা ভাষায় কথা বলছেন, যেটা আমাদের অজানা।
সুরমিতা: কিন্তু রাহুল ইংরাজি, বাংলা আর খুচখাচ হিন্দী ছাড়া আর কোনো ভাষাই জানেননা।
ডাঃ চৌধুরি: হাসপাতালের পলিসি, অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই অথরিটিকে জানানো। যা দিনকাল পড়েছে। লোকটা তিনদিন কোথায় হাওয়া হয়ে গেল তার ঠিক নেই। তারপর যদি বা খোঁজ মিললো তো সে নাকি কোন উদ্ভট ভাষায় কথা বলছে। কি আর বলবো যত কঠিন কেস সব এই হাসপাতালে।
ডাঃ বাসু: আমার তো মনে হয় পুরোটাই সাইকিয়্যাট্রিক প্রবলেম। (সুরমিতাকে)ওনার কি কোনো মানসিক অসুখ ছিল?
সুরমিতা: না। ও একটা কোম্পানি চালায়। হি ইজ হাইলি ফাংশনাল।
ডাঃ বাসু: কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটা তো সাইকোসিস ছাড়া কিছুই নয়। আপনার আপত্তি না থাকলে পেশেন্টকে কোনো সাইক হাসপাতালে ট্রানসফার করে দিলে হয়না।
ডাঃ রাঘবন: আপনারা আমায় মাপ করবেন, আমি কেসটা নিয়ে এখনও ভাবছি, হাল ছেড়ে দিইনি। সাইক ইউনিটে পাঠানোর প্রশ্ন তখনই আসবে যদি রুগি ভায়োলেন্ট হয়ে যায়। তার আগে আমি আরো দুয়েকটা দিন দেখতে চাই।
ডাঃ বাসু:আরে রাঘবন এ তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অন্য হাসপাতালে ট্রানসফার করিয়ে দিন, আরো সব নতুন নতুন ডায়াগনস্টিক টেষ্ট করে দেখুকনা কেন।
ডাঃ রাঘবন: আরেকটু সময় দেওয়া ভালো পরমাদি।
ডাঃ চৌধুরি: ঠিক আছে উইকএণ্ডটা আপনারা পাচ্ছেন দেখুন কতটা কি হয়। আজ তাহলে আমরা উঠি। আপনি নাহয় ওঁর কাছে একটু বসুন মিসেস সান্যাল।
(সকলে উঠে পড়ে। সুরমিতা আস্তে আস্তে রাহুলের পাশে এসে বসে। রাহুল ঘুমাচ্ছে, বিছানার ওপর আলো পড়েছে। সুরমিতা আস্তে ওর মাথায় হাত দেয়, রাহুল সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে)
সুরমিতা: রাহুল। কষ্ট হচ্ছে?
রাহুল: (খুব খুশি হয়ে) নে নে সুমি, সুমি উদালা, সেথ রিকাসিনো লা হাসামে। বুডা মে-সেটানা ওপাসা উ মানাসিয়ে ওপাসা। ক্কেডো সুমি, ককেডো রিমঝিম?
সুরমিতা: তুমি কি মেয়েটার কথা জিগ্যেস করছো? রিমঝিম মা'র কাছে আছে। কি হয়েছিলো তোমার? কথা বলতে ভুলে গেলে কি করে?
রাহুল: (আশ্বস্ত করে) রে জাভাথেরা উপাসা। সি মেনাতে আন্না থুই। (যেন কি একটা মনে পড়ছে) সি মেদাতে সুমি? জিবা ওদানে, জিবা মেদাতে, মুখি উ-ওওন মুখি উ-ওওন (দুহাতে সুমির হাত ধরে শিশুর মতো হাসে, জড়িয়ে ধরতে চায়)
সুরমিতা: (অবাক) তুমি ঠিক এরকম গলায় কথা বলতে - অনেক দিন আগে। কিন্তু কি বলছো তুমি? এই কদিন কোথায় ছিলে। আমাকে বলো নি কেন? প্লীজ এমন কিছু বলো যা বুঝতে পারি!
রাহুল: (যেন খুব মজা পেয়েছে) উ লা সাণ্ডা সুমি, উ লা সাণ্ডা। (হঠাৎ উঠে পড়তে চায়) সুমি টো আসামে, তিমাসে দেটৈ আসামে।
সুরমিতা: (ভয় পেয়ে) না না শুয়ে থাকো, ঘুমিয়ে পড়ো প্লীজ। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। (আলো কমে আসে। সুরমিতা রাহুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। গুনগুন করে গানের সুর- রাহুল ঘুমিয়ে পড়ছে, মৃদু নাক ডাকার আওয়াজ)
সুরমিতা: কি তাড়াতাড়ি ও ঘুমিয়ে পড়লো। না হুইস্কি না ঘুমের ওষুধ। (চাদরটা টেনে দিয়ে ওঠে) আচ্ছা এসব ওর একটা নাটক নয়তো। ও কি ঋষির কথা জেনে ফেলেছে। আমি যে বাড়ি ছিলাম না, ঋষির ফ্ল্যাটে ছিলাম।
(রকিং চেয়ারে বসে হাতের মধ্যে মাথা দেয়। অন্যদিক দিয়ে ডাঃ পরমা বাসু ঢোকেন)
ডাঃ বাসু: কি হলো মিসেস সান্যাল? আপসেট
সুরমিতা: (ভীষণ চমকে ওঠে) আপনি? এই সময়ে?
ডাঃ বাসু: ব্যস্ত হবেন না রাতের রাউণ্ডে এসেছি। কি যেন বলছিলেন?
সুরমিতা: (উদভ্রান্ত দেখায়) মানে, না মানে ও এতো কথা বলছে অথচ আমি বুঝছি না। আজকাল আমরা প্রায় কথাই বলতাম না জানেন। আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, ও ওর ব্যবসা নিয়ে। আমাদের যোগাযোগটাই নষ্ট হয়ে গেছিল। Our lives were running parallel but we hardly met.
ডাঃ বাসু: তার মানে? আপনারা একসাথে থাকতেন তো, নাকি দুজন দুজায়গায়?
সুরমিতা: একসাথেই থাকতাম কিন্তু আমরা বেশ একলা নিজের নিজের মতো বাঁচতে শিখে গেছিলাম। মাঝখানে শুধু আমাদের মেয়েটা - Our only common interest.
ডাঃ বাসু: তা উনি কি কোনো অন্য মহিলার সাথে- মানে কোনো অ্যাফেয়ার্স?
সুরমিতা: জানিনা। সন্দেহ হতো কিন্তু কোনো প্রমাণ ছিলনা। তারপর নিজেরই তো কি সব হয়ে গেল। বুঝতে পারছিলাম ঋষির সাথে ব্যাপারটা আস্তে আস্তে একটা অবসেশনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কবে যে ঠিক এইরকম হয়ে গেল।
ডাঃ বাসু: ঋষি কি আপনার প্রেমিক? So were you having an affair Mrs. Sanyal? হুঁ হুঁ বাবা, ব্যাপারটা তাহলে যা ভেবেছি তাই? ম্যারাইটাল টেনশন থেকে মেন্টাল ব্রেকডাউন। তা আপনাদের যেমন ফাস্ট লাইফ, এমনটা তো হতেই পারে।
সুরমিতা: (যেন হঠাৎ সম্বিত ফিরে পায়) সরি আমি আর এ নিয়ে কথা বলতে চাইনা। আমি ভীষন ক্লান্ত, কি বলতে কি বলছি। আই মাস্ট গো।
(রাহুল ঘুমের মধ্যে কথা বলছে- সুমি, সুমি)
ডাঃ বাসু: যতসব হাই সোসাইটি ড্রামা! দ্যাবা দেবী নিজেদের মতো উড়ে বেড়াচ্ছেন। অসহ্য।
বিরক্ত হয়ে পরমা বাসু চলে যাচ্ছেন। সুরমিতা গুনগুন করে গাইছে। আলো রাহুলের ওপর, ও যেন সুখস্বপ্ন দেখছে, আস্তে আস্তে আলো নিভে যাবে)
(স্টেজের সামনের দিকে আলো ফুটে উঠবে। টেবিল এবং দুটো চেয়ার সামনে চলে এসেছে, সুরমিতা ও ডাঃ রাঘবন হাসপাতালের কাফেতে বসে আছেন)
ডাঃ রাঘবন: আপনার সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি। কাল রাতে পরমার সঙ্গে আপনার কিছুকথা হয়েছিল।
সুরমিতা: আমি খুব আপসেট ছিলাম ডক্টর। আপনাকে ঠিক বোঝাতে পারবোনা।
ডাঃ রাঘবন: আমি বুঝতে পারছি ম্যাডাম। আপনার অবস্থায় পড়লে কেউই মাথা ঠিক রাখতে পারেনা। সত্যি বলতে কি আপনি এতটাই স্টেডি আছেন যে আমি অবাক হয়ে গেছি।
সুরমিতা: কান্নাকাটি করা আমার স্বভাব নয়।
ডাঃ রাঘবন: একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন? পেশেন্ট সবচেয়ে বেশি কথা বলছে যখন আপনি ঘরে আছেন এবং আপনাকেই লক্ষ্য করে। অবশ্য পুরোটাই ওঁর নিজস্ব ভাষায়।
সুরমিতা: আপনি বলছেন ভাষা! আপনাদের নিউরোলজিস্ট তো বললেন ওটা অর্থহীন বকবকানি।
ডাঃ রাঘবন: আমার কিন্তু তা মনে হয় না। আমার বিশ্বাস উনি একটা নতুন ভাষায় কথা বলছেন। আচ্ছা ফাইলে দেখলাম আপনাদের একটি মেয়ে আছে, ওকে নিয়ে আসেননি?
সুরমিতা: রিমঝিম আমার মা'র কাছে আছে। আমি চাইনা মেয়ে বাবাকে এই অবস্থায় দেখুক। আচ্ছা ওর কথাগুলোর মানে না বুঝলেও শুনতে বেশ লাগছিল না? বেশ উচ্ছল হাসিখুশি, স্কুলের বাচ্চারা যেমন কথা বলে। ওর সেই ঠাণ্ডা নিচু গলায় কেটে কেটে উচ্চারণ কোথায় গেল? মানসিক শক থেকে কি এসব হয়?
ডাঃ রাঘবন: মিসেস সান্যাল আপনি এতো গিলটি ফিল করবেন না। একটা খারাপ কিছু হলে আমাদের বিবেক হঠাৎ চাগিয়ে ওঠে। যা হয়েছে আপনার জন্য হয়নি, একটা র্যানডাম ইভেন্ট হিসাবেই হয়েছে। আমি বলি কি আজকেও সারাদিনটা ওর সঙ্গে কাটান না। কেউ আপনাদের বিরক্ত করবেন না। ধরে নিন এটাই ওঁর চিকিৎসা। আচ্ছা তবে আসি। নমস্কার।
(আলো কমে আসে। সুরমিতা উঠে রাহুলের কাছে যায়। ডাঃ রাঘবন বেরিয়ে গেছেন। এখন আলো ওদের দুজনের উপর পড়েছে)
সুরমিতা: রাহুল।
রাহুল: (গাঢ় অথচ কোমল গলায়) এসা সুমি। কোক্কে সিমা সাচারে? (একটু অভিমানী স্বরে) সে মুলাই উমালা সো-ও-ওম, সাকায় মাটাকারি।
সুরমিতা: কি বলছো রাহুল। তোমার মনে আছে রিমঝিম যখন এত্তটুকু ওকে নিয়ে পুরী বেড়াতে গেছিলাম। কি সুন্দর দিন ছিল তখন অফিসের চাপ শেয়ার মার্কেটের ওঠাপড়া কিছুই গায়ে লাগতো না। সারাদিন রিমঝিমের বেবি ল্যাঙ্গুয়েজে বকবকানি, হাওয়া আর সমুদ্রের শব্দ। ওই গানটা তখন খুব গাইতাম না —
অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি
তোমার ভাষা বোঝার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলি
যে আছে মম গভীর প্রাণে, ভেদিবে তারে হাসির বাণে
চকিতে চাহ মুখের পানে তুমি যে কুতুহলী।
(দুজনেই হাসে)
সুরমিতা: কতদিন বাদে তোমাকে গান শোনালাম। রাহুল (গলা ভেঙে যায়) রাহুল আই অ্যাম সরি।
রাহুল: (স্বান্তনা দেবার মতো) থিমা ওসাবে সুই। ও থিমা সুই রাটিটিমে সুমি। মিবাচা ও শাটে।
সুরমিতা: আসলে তুমি এতো দূরে চলে গেছিলে রাহুল, আমি কেমন যেন ডাম্পড ফিল করতাম। মে বি আই ওভাররিয়্যকটেড। নাকি এটাকেই এমপাওয়ারমেন্ট বলে। ঋষি ইজ সো ইয়াং অ্যাণ্ড ভিগোরাস। কিন্তু ও আমার থেকে জুনিয়র, হি নিডেড মাই ফেভার আমরা শুধু পরস্পরকে এক্সপ্লয়েট করেছি। আমি জানি এই রিলেশনশিপের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
রাহুল: (খুব যেন গোপনীয়তার সঙ্গে) ফিটারা সুমি, ফিটারা মে সেটিহালি সনাভে লাম। মে সেটিহা নালাভে জু।
সুরমিতা: আরো কথা বলবে রাহুল। আমার ভালো লাগছে শুনতে। গিভ আস অ্যানাদার চানস রাহুল।
(রাহুল কথা বলে যাচ্ছে, সুরমিতা উত্তর দিচ্ছে বাংলা ইংরাজি মিশিয়ে। আস্তে আস্তে রাহুল ঘুমিয়ে পড়বে, সুরমিতা চাদর টেনে দিয়ে উঠে আসে। রকিং চেয়ারে গিয়ে আধশোয়া হয়। ক্লান্ত। আস্তে আস্তে আলো নিভে যায়। music. Light fades back in. স্টেজের সামনের দিকে আলো। চেয়ারে বসে সুরমিতা ও ডাঃ রাঘবন, সামনে কফির কাপ)
ডাঃ রাঘবন: মুম্বাইয়ের একটা নামকরা নিউরোলজি ইনস্টিটিউট রাহুলকে নিতে রাজি হয়েছে। ওরা অনেক কিছু নতুন পরীক্ষা করে দেখবে। আমার অবশ্য অন্যরকম মতামত, আমি চাই উনি আপনার সাথে বাড়ি ফিরে যান।
সুরমিতা: আমারও তাই মতামত ডক্টর রাঘবন। আমার মনে হচ্ছে আমি ওর কথাগুলো কিছুটা বুঝতে পারছি। এটা যদি সত্যিই একটা ভাষা হয় তাহলে তো শিখে নেওয়াও সম্ভব তাই না।
ডাঃ রাঘবন: আসলে কি জানেন, দুটো সজীব মনের মধ্যে যা যোগাযোগ ঘটাতে পারে তাকেই ভাষা বলা উচিৎ। আজকাল তো যন্ত্রও কথা বলতে পারে, কিন্তু ভাব বিনিময় করতে পারেনা। আবার দেখুন একটা কবিতার মানে হয়তো করাই যায়না, অথচ পাঠকের মনে তার ভাব পৌঁছে যায়, সেখানে সংবেদনের ঢেউ ওঠে।
সুরমিতা: সংবেদনের ঢেউ। ভালো বলেছেন কথাটা।
ডাঃ রাঘবন: এই দেখুন না কাল রাতে আপনাদের মধ্যে কি সুন্দর ভাব বিনিময় হয়েছে, তার জন্য প্রতিটি কথার মানে বুঝতে হয়নি। সহৃদয়তা, কমপ্যাশন সেই জায়গাটা ভরে দিয়েছে, তাই না? আমরা ভাষাকে শুধু ব্যবসার কাজে লাগিয়েছি সে তো ভাষার দোষ নয়।
সুরমিতা: এখন ওকে কি সহজ আর প্রাণবন্ত লাগছে, ঠিক সেইরকম যখন ওর প্রেমে পড়েছিলাম। আমি ওকে বাড়ি নিয়ে গেলে আপনি কি ওর চিকিৎসার ভার নেবেন?
ডাঃ রাঘবন: নিশ্চয় নেবো। আমি আপনাদের বাড়ির কাছেই থাকি। তিন জেনারেশন ধরে কলকাতায় বাস তো, প্রায় বাঙালিই হয়ে গেছি।
সুরমিতা: (হেসে ফেলে) বাব্বা, আপনার বাংলা শুনে বোঝার উপায় নেই। আমিই বরং আজকাল আর বাংলায় কথা বলিই না বলতে গেলে।
(পিছন থেকে ডাঃ পরমা বাসু ঢোকেন)
ডাঃ বাসু: (এদিকওদিক তাকিয়ে দর্শকদের দিকে) আরে মহিলা তো রাঘবনের সঙ্গে বেশ জমিয়ে নিয়েছে দেখছি। ছেলেটার মাথাটা খেলো বোধহয়। (সুরমিতার দিকে গিয়ে) এই যে মিসেস সান্যাল বিরক্ত করলাম কি? আপনাদের ভি আই পি রোগী দেখতে দিল্লী থেকে এই দুজন এসেছেন।
(মিঃ মেহতা আর নিরুপমা রেড্ডি ঢোকেন)
মেহতা: মিসেস সান্যাল আমরা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট থেকে এসেছি। আমি সি-আই-ডি এজেন্ট মেহতা আর ইনি ডক্টর রেড্ডি, ডবলু-এইচ-ও'র তরফ থেকে। আপনার স্বামী মিঃ রাহুল সান্যাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন, আমরা সেই ব্যাপারেই একটু কথা বলতে এসেছি।
সুরমিতা: ডবলু-এইচ-ও থেকে? কিন্তু ওর তো কোনো ছোঁয়াচে আসুখ হয়নি।
ডাঃ রেড্ডি: আমরা সেটা এখনও জানিনা। তবে আপনি যদি দয়া করে আমাদের একটু সঙ্গে আসেন তো খুব উপকার হয়।
সুরমিতা: একটু সময় দিন রেডি হয়ে নি। আমার ব্রেকফাস্টও খাওয়া হয়নি।
মেহতা: যদি অনুমতি করেন ব্রেকফাস্ট নাহয় আমরা একসঙ্গেই খাই। ব্যাপারটা খুবই জরুরি।
সুরমিতা: দেখুন আমার স্বামী অসুস্থ, আমার মা আসছেন, এখন আমার কথা বলার সময় নেই। আমি বারোটা নাগাদ হাসপাতালে থাকবো, তখন আসবেন। কিছু মনে করবেন না আমাকে যেতে হবে।
(তনিমা মিত্র ঢোকেন, হাতে ক্যামেরা)
তনিমা:মিসেস সান্যাল এক মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি তনিমা, নিউজ এজেনসি থেকে আসছি। আপনি কি জানেন পৃথিবীর আরো অনেকেই কথা বলতে ভুলে গেছেন।
মেহতা: আপ কোন।
তনিমা: জার্নালিস্ট, নিউজ এজেনসি। কার্ড দেখতে চান?
মেহতা: ব্যাস মিডিয়াওয়ালে ভি আ গয়ি। দেখিয়ে ম্যাডাম, ইয়ে মেডিক্যাল ম্যাটার, আপকি ইঁহা কোই জরুরৎ নেহি হ্যায়। ঝুটমুট প্লীজ ডোন্ট ক্রিয়েট আ পাবলিক প্যানিক।
(ডাঃ চৌধুরি ঢোকেন)
ডাঃ চৌধুরি: এই যে মিসেস সান্যাল। শুনলাম নাকি আপনি পেশেন্টকে ডিসচার্জ করিয়ে নিয়ে যাবেন। মুম্বাইতে নাকি? এদিকে ওরা খবরের কাগজ থেকে ফোন করেছে।
তনিমা: গুডমর্নিং ডক্টর আমিই ফোন করেছিলাম। আমি পেশেন্ট আর আপনাদের ইন্টারভিউ নিতে চাই।
ডাঃ রেড্ডি: সেটা বোধহয় possible হবে না। উনি আমাদের সঙ্গে যাবেন।
সুরমিতা: তার মানে? আপনারা কি আমাদের অ্যারেস্ট করতে এসেছেন? কি চার্জে?
মিঃ মেহতা: এটা পাবলিক সেফটির ব্যাপার, যদি কো-অপারেট না করেন তো আই উইল গেট আ ওয়ারেন্ট।
ডাঃ চৌধুরি: ওরে বাবা!
সুরমিতা: আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
ডাঃ রেড্ডি: বুঝিয়ে দিচ্ছি। ডক্টর রাঘবনই প্রথম এই কেসটা রিপোর্ট করেছেন। তারপর নানা জায়গা থেকে আমরা আরো রিপোর্ট পেতে শুরু করেছি। মিসেস সান্যাল we believe আপনার husband একটা নতুন ধরনের রোগে ভুগছেন। It may even be a viral epidemic.
তনিমা: এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর আপনারা চেপে রাখতে চান?
ডাঃ রেড্ডি: তার আগে We need to know অসুখটা কোথা থেকে এল, ছড়াচ্ছে কিভাবে। Epidemic usually গরীবদের মধ্যেই আগে ছড়ায়। This one is affecting the wealthy, the powerful and the intellectual corporate CEOs, bankers, politicians, professors- সবাই লাইন করে পাগল হয়ে যাচ্ছে। আপনার husband যাকে আমরা বলি index case বা প্রথম রোগী। We must isolate him for testing.
তনিমা: দিস ইজ দি স্টোরি অফ আ লাইফটাইম। মিসেস সান্যাল আমি এক্ষুনি আপনাকে আর ডক্টর রাঘবনকে ইন্টারভিউ করতে চাই। তারপর BBC আর CNN কে কনট্যাক্ট করতে হবে। ওই যে আমার টিভি ক্রু এসে গেছে।
(ক্যামেরা ঘাড়ে করে ফটোগ্রাফার ঢোকে)
সুরমিতা: আমি আপনাদের বিশ্বাস করিনা। পরীক্ষার নামে আপনারা ওকে মেরেও ফেলতে পারেন। তাছাড়া রাহুল একটুও অসুস্থ নয়, ওকে এত সহজ-স্বাভাবিক আমি গত পাঁচবছরে দেখিনি।
মিঃ মেহতা: সেটাই তো খতরনাক ব্যাপার ম্যাডাম। ওঁর কোম্পানি লাটে উঠেছে, উনি তো বেশ খোশমেজাজেই আছেন। কিন্তু এইসব রেসপনসিবল লোকেরা সবাই যদি কাজকর্ম ছেড়ে হিপি হয়ে যান, সারাদিন ভুল বকেন, তবে বাজারের অবস্থাটা কি দাঁড়াবে বলতে পারেন।
তনিমা: কি বললেন? আরেকটা রিশেসান? মেলটডাউন? এদিকে অসুখটা ছড়িয়ে পড়লে আরো কি কি সর্বনাশ হবে কে বলতে পারে? না না এমন একটা খবর আপনারা পাবলিকের কাছ থেকে চেপে রাখতে পারেননা।
ডাঃ চৌধুরি: বাপরে ভুল বকা থেকে এত কাণ্ড? দেখুন এর পিছনে নির্ঘাৎ আল কায়দা আর আই-এস-আইয়ের হাত আছে।
ডাঃ বাসু: তাইতো! এইসব ছোঁয়াচে রুগীকে এক্ষুনি সরিয়ে দেওয়া দরকার। আমার তো ভয়ে প্রাণ শুকিয়ে যাচ্ছে। রাঘবন আপনিই আমাদের এক্সপোজ করার জন্য দায়ী, আমি তো প্রথম দিনেই মেন্টাল হাসপাতালে ট্রান্সফার করতে চেয়েছিলাম, ওখানে পাগলদের যতো খুশি ইনফেক্ট করতো। এখন কি হবে। আমাদের কিছু হলে আমি কিন্তু আপনাকে দায়ী করবো।
সুরমিতা: আপনারা তো যে যার দিকটা দেখছেন। আরে রোগীটার কি হবে, কে ওর চিকিৎসা করবে?
মিঃ মেহতা: ওঁকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে। কোথায়, সেটা সবার সামনে বলতে পারছিনা।
তনিমা: দেখুন কেসটা তো জানাজানি হয়েই গেছে, শুধু আমার এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউটার জন্য পাঁচমিনিট সময় দিন।
ডাঃ রেড্ডি: একদম নয়। প্রেস কে যা ব্রিফ করার হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে করবে। রাইট নাউ আমরা এই পেশেন্টের ভার নিচ্ছি, মিসেস সান্যাল আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। we will keep you informed.
ডাঃ বাসু: এর পরে আমাদের নিয়েও টানাটানি পড়বে না তো?
মিঃ মেহতা: পড়তেও পারে। এটা খুবই সিরিয়াস ব্যাপার। এখন চলুন গাড়ি তৈরি আছে। আপনারা ঠিক সময়ে খবর পাবেন। Someone will contact you soon.
(অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ। সবাই বেরিয়ে যায়, স্টেজ অন্ধকার, নেপথ্যে অজানা ভাষার কোলাহল আস্তে আস্তে জোরে হয়ে ওঠে তারপর মিলিয়ে যায়। Symphony music. আলো ফোটে। ডাঃ চৌধুরি, ডাঃ রেড্ডি তনিমা মিত্র, পরমা বাসু, ও ডাঃ রাঘবন ঢোকেন। সঙ্গে টিভি ফটোগ্রাফার)
তনিমা: (মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে) WHO থেকে আজ সকালে এক নতুন প্যানডেমিকের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ এই রহস্যময় মানসিক অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে, নিজের ভাষা পুরোপুরি ভুলে গিয়ে কথা বলছে এক অদ্ভুত ভাষায়। যিনি এই অসুখটি প্রথম আইডেন্টিফাই করে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তিনি কিন্তু আমাদের এই কলকাতা শহরেই ডাক্তার। আপনারা তাঁর ইন্টারভিউ এক্ষুনি, এই চ্যানেলেই দেখতে পাবেন। এই প্রেস কনফারেন্সে আমাদের সঙ্গে আরও আছেন ডাঃ নিরুপমা রেড্ডি epidemiologist, from WHO headquarter, ডাঃ সৌভিক চৌধুরি, সুপারিন্টেণ্ডেন্ট, এস এস কে এম হাসপাতাল, ডাঃ পরমা বাসু, প্রফেসর অফ নিউরোলজি। নিউজ এজেন্সির তরফ থেকে এই চাঞ্চল্যকর খবর আপনাদের কাছে নিয়ে আসছি আমি তনিমা মিত্র।
(ডাঃ রাঘবনের দিকে ফিরে) কনগ্রাচুলেশনস ডাঃ রাঘবন আপনি তো এখন সেলিব্রিটি। আপনার থিওরি নিয়ে সারা দুনিয়ায় হৈ চৈ, আপনিই না প্রথম এটাকে একটা ছোঁয়াচে অসুখ বলে আইডেনটিফাই করেছেন।
ডাঃ রাঘবন: না না আমি বিশেষ কিছুই করিনি।
ডাঃ চৌধুরি: সে কি মশাই। আমি তো শুনেছি আপনি নোবেল প্রাইজও পেয়ে যেতে পারেন। একেই বলে কপাল।
ডাঃ বাসু: হ্যাঁ আমরা সবাই ব্যাপারটা আঁচ করেছিলাম কিন্তু ওই সাহস করে রিপোর্টটা পাঠিয়েছে। তাই প্রাইজের লিস্টে আমাদের সবার নামই থাকা উচিৎ তাইনা। যাকে বলে টিমওয়ার্ক।
ডাঃ চৌধুরি: হে হে। আমারও ছিলো মনে। কেমনে ব্যাটা পেরেছে সেটা জানতে। হে হে
ডাঃ রেড্ডি: Really? I thought nobody believed him.
তনিমা: বাঃ, আর আমাদের নিউজ এজেন্সি যে এতো পাবলিসিটি করলো।
ডাঃ রাঘবন: আপনারা ব্যস্ত হবেন না, প্রাইজ দেবার জন্য কেউ বাকি থাকলে হয়। এভাবে চলতে থাকলে কদিন বাদে সব গল্পই নতুন করে লিখতে না হয়। দেখবেন হয়তো ওয়াল স্ট্রীটে কবি সম্মেলন বসেছে, পার্লামেন্টে গানের জলসা। দালাল আর উকিলবাবুদের খুব মশকিল হয়ে যাবে।
ডাঃ রেড্ডি: আর ঝগড়া-মারপিট না থাকলে মিডিয়ারও ছুটি।
তনিমা: কি সর্বনাশ। আমরা সবাই বেকার হয়ে যাবো বলছেন।
ডাঃ বাসু: তা কেন? ডাক্তাররা নিশ্চই বেকার হবেনা। তাছাড়া অনেকেই তো বেশ সেরে উঠছেন দেখছি। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াও মিটে যাচ্ছে।
ডাঃ রাঘবন: কিন্তু মানুষটাই বদলে যাচ্ছে যে। আপনার কম্পিউটার খারাপ হয়ে গেলে রিকভারি ডিস্ক ব্যবহার করেন তো। প্রোগ্রাম বা ডাউনলোড গুলো কিন্তু ফেরৎ পান না, কম্পিউটারটা ফ্যাকট্রি কণ্ডিশনে ফিরে যায় তাই না। এই অসুখের পর ঠিক তাই হচ্ছে।
তনিমা: আর সব ছেড়ে ভাষা নিয়েই বা টানাটানি কেন? বেশ তো ছিল বাংলা, ইংরেজি, হিন্দী, তেলেগু। ভাষা না থাকলে মিডিয়া কি করে চলবে? নতুন ভাষায় সবকিছু কনভার্ট করা কি চাট্টিখানি কথা।
ডাঃ রাঘবন: ভাষা থাকবে না কে বলেছে? শুধু content of the language একদম সরল-সোজা হয়ে যাবে। যাকে বলে clean slate. একসময় আমরা সবাই একেকটা ফ্রেশ জীবন শুরু করেছিলাম, আমাদের ভাষাও তখন অনেক সরল ছিল তাই না।
ডাঃ রেড্ডি: সাঁওতাল বা বুশম্যানেরা যেরকম ভাষায় কথা বলে। ওরা মামলা করতে পারেনা কিন্তু পেয়ার করতে কোনো অসুবিধা হয় কি?
ডাঃ বাসু: দেশের কর্তারা বুশম্যান হয়ে গেলে তো কেলেংকারি দাদা। মাইনে বন্ধ, ঘেরাও। তা সেরে ওঠার পরে সবাই বেশ আগের মতো হয়ে যায়না কেন?
ডাঃ রাঘবন: হয়তো আস্তে আস্তে সবাই আগের মতোই হয়ে যাবে। কিন্তু বিপদটা এই যে তদ্দিনে আমাদের চেনা institution গুলোর বারোটা বেজে যাবে মনে হয়। গুছিয়ে মিথ্যে কথা না বলতে পারলে দেশ চলবে কি করে? সব ব্যবসা মাটি হয়ে যাবে যে।
ডাঃ চৌধুরি: আর ঠিক সেটাই হতে চলেছে। হাহাহা-হো হো হো। মনে করো শেষের সেদিন কি ভয়ঙ্কর, অন্যে কথা কবে তুমি রবে নিরুত্তর। হা হা একটুও ভয়ঙ্কর নয়, বরং বেশ মজার।
ডাঃ বাসু: সর্বনাশ। আমি বরং যাই, সময় থাকতে বাড়িঘর সম্পত্তির একটা ব্যবস্থা করে রাখি। আমার কর্তাটি যা জিনিস, হয়তো দুম করে বিশ্বপ্রেম উথলিয়ে সব রামকৃষ্ণ মিশনে দান করে দিল।
তনিমা: (হঠাৎ কানে হাত দিয়ে) এইমাত্র খবর এল শেয়ার বাজার হু হু করে নেমে যাচ্ছে। আমেরিকায় অফিস-আদালত, কারখানা সব বন্ধ, লোকজন ছুটি নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আফগানিস্তানে লড়াই বন্ধ হয়ে গেছে, সৈন্যরা যুদ্ধে যেতে চাইছে না। ইরাকের সুইসাইড বম্বাররা সবাই ইসকনে যোগ দিএয় কীর্তন গাইছে। বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নেতারা বলেছেন এসব স্রেফ শয়তানের কারসাজি। কিন্তু সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে চিন্তার কোনো কারন নেই।
ডাঃ চৌধুরি: আরে মশায় অত সস্তা নয়, সত্যি সত্যি সবাই পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি? তাহলে তো চিন্তাই নেই। হে হে। হে হে হে
(ডাঃ চৌধুরি প্রায় নাচতে নাচতে সবার সাথে হ্যাণ্ডশেক করতে এগোয়। ডাঃ বাসু এবং রেড্ডি পালাতে চাইছেন। এর মধ্যে আলো নিভে যাবে। টর্চের আলোয় টিভি ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন নিয়ে তনিমা সবার ইন্টারভিউ নিতে চাইছে। পোস্টার হাতে একজন লোক ঢোকে। প্রচণ্ড বিশৃঙ্খলা। একে একে সবাই বেরিয়ে যায়। মঞ্চ অন্ধকার, শুধু নাইনথ সিমফনি বাজছে।)
(আবার আলো ফুটলে দেখা যাবে রকিং চেয়ারে সুরমিতা বসে আছে। সঙ্গে রিমঝিম। প্রথমে দুজনে লুকোচুরি খেলছে আর কাতুকুতু খেয়ে রিমঝিম খিলখিল করে হাসছে, ঘুম পাড়াতে সুরমিতা গান করছে, চেনা সুর কিন্তু অচেনা ভাষা। তার মধ্যেই পর্দা নেমে আসবে।)
সমাপ্ত