• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৫০ | ফেব্রুয়ারি ২০১২ | গল্প
    Share
  • অনুরোধের মূল্য : রমেন্দ্র নারায়ণ দে


    ধীরাজদা, তোমার এই বইদুটো কিন্তু এখানে পড়ে আছে।

    কলকাতা ফেরার আগেরদিন প্রখ্যাত লেখক ধীরাজ বন্দোপাধ্যায় লাগেজ গোছাচ্ছিলেন। পাশে বসে থাকা তাঁর স্নেহধন্য ছোটভাইসম কমল চৌধুরী কথাটা বলল ধীরাজকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। আমেরিকা ভ্রমণের গত দু সপ্তাহ ধীরাজ কমলের বাড়িতেই ছিলেন। বিছানার ওপরে খোলা স্যুটকেসে জিনিসপত্র ঢোকানো চালিয়ে যেতে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে ধীরাজ জিজ্ঞাসা করলেন, কোন বইদুটোর কথা বলছিস?

    হাতে ধরে তুলে সঞ্জিত সাহার বইদুটো দেখিয়ে কমল বলল, এই তো, সঞ্জিতের বইদুটো, তোমাকে পড়তে দেয়া বইদুটো।

    ও..., মুখ ঘুড়িয়ে হাতের কাজে মনোনিবেশ করতে করতে ধীরাজ বললেন, ও তুই রেখে দে।

    ধীরাজের গলার স্বরে তাচ্ছিল্য। কমল বলল, আমি রাখবো কেন! তোমাকে পড়তে দিয়েছে, তুমি নাও।

    একটু থেমে কমল আবার বলল, তাছাড়া সঞ্জিত এক্সপেক্ট করছে তুমি বইদুটো পড়ে কিছু কমেন্ট করবে। বইদুটো দেবার সময় ও তো বলল, তোমার মতো প্রতিষ্ঠিত অগ্রজ লেখকের বিচাররের মাপকাঠিতে ওর মতো অনুজ লেখক যদি কিছুটা ইমপ্রুভ করতে পারে।

    রাখ তো অগ্রজ লেখকের বিচার, ঝাঁজিয়ে উঠলেন ধীরাজ, ওসব কিছু এরা চায় না। এতোদিনে এ সব আমার দেখা হয়ে গেছে অনেক। আসল উদ্দেশ্য হলো লেখা বার করা। যদি আমার সুপারিশে কোথাও কোন ভালো পত্রিকায় জায়গা হয়ে যায়।

    কমলের মনে হল সেটা হয়তো সত্যি, কিন্তু সেটা নিতান্ত গর্হিত কোন আশা না। উঠতি লেখকেরা ধীরাজ বন্দোপাধ্যায়ের মত ক্ষমতাসম্পন্ন পূর্বসূরিদের সাহায্য না পেলে এগোবে কী করে। সত্যি কথা বলতে কী কমল তো জানে, কোন ভালো পত্রিকা এমন সুপারিশ ছাড়া নতুন কোন লেখকের লেখা ছাপাবেই না। তবুও এ নিয়ে তর্ক করার কোন উৎসাহ কমল পেল না। বলল, তাহলে তুমি বইদুটো নেবে না।

    না না, ঠোঁট বেঁকিয়ে ধীরাজ বললেন, এসব বই পড়তে গেলে আমার নিজের কাজকর্ম কিছু আর করা হবে না। জানিস এমন কতো কতো বই সবসময় আমাকে লোকে দিচ্ছে, জোর করে দিচ্ছে। প্লিজ পড়ুন, প্লিজ পড়ুন, আপনার কমেন্টস দিন, এই মিউজিক তো চলছে কাটা রেকর্ডের মত টানা।

    হাসতে হাসতে কমল বলল, ক্ষ্যাতির বিড়ম্বনা! লেখালেখির জগতে তুমি যেখানে উঠে গেছো সেখানে এমন অনুরোধ তো তুমি পাবেই।
    অনুরোধ! মাথা নাড়িয়ে কপাল কুঁচকে ধীরাজ বললেন, শোন কমল, অনুরোধ ব্যাপারটা সবসময়ই নিম্নমনোবৃত্তির বাহক। অনুরোধকারী উদ্দেশ্য-প্রণোদিত, অনুরোধপ্রাপক বিব্রত।

    দুদণ্ড চুপ করে থেকে ধীরাজের কথাটা হৃদয়ঙ্গম করল কমল। তারপর বলল, এ জন্যেই তুমি আজ এতো বড়ো। অনুরোধ নিয়ে এমন একটা ধ্রুবসত্য কতো সুন্দর ভাষায় বললে। সত্যিই তো, যারা অনুরোধ করে কোন একটা উদ্দেশ্য তাদের থাকেই। আর তোমার মতো যারা সে অনুরোধ পাচ্ছে তাদের যত হ্যাপা।
    এই তো বুঝেছিস। ধীরাজ বললেন, এমন সব বই নিজের কাছে রাখতে গেলে আমার লাইব্রেরীতে কাজের বইএর জায়গা আর কিছু থাকবে না।
    হুম..., কমল জিজ্ঞাসা করল, তো কী করবো এই বইদুটো নিয়ে?
    তুই পড়বি তো পড়িস, নয়তো ফেলে দিস।

    এসব প্রায় আড়াই দশক আগের কথা। রিটায়ার করার পর বড়বাড়ি পাল্টে ছোটবাড়িতে মুভ করার পর্যায় চলছে। সে জন্য এত বছরে জমে যাওয়া হাজার অকাজের জঞ্জাল বাতিল করে কাজের জিনিসপত্র গোছাবার সময় কমলের হাতে পড়েছে সঞ্জিতের এই বইদুটো, আর তার থেকেই মনে পড়ে গেল সেদিনের এইসব কথা।

    না, বইদুটো ফেলে দিতে পারেনি কমল। আজ মনে করতে পারছে না পড়েছিল কিনা। পড়লেও কিচ্ছু মনে নেই। বইদুটো নেড়ে চেড়ে দেখল কমল। উপেক্ষিত পড়ে থাকলেও খুব অযত্নে ছিল না। তাকের অন্যসব বইএর ফাঁকে পড়েছিল বলে এতো বছর বাদেও বেশ ভাল অবস্থাতেই আছে।

    অন্যমনস্ক ভাবে একটা বই খুলল কমল, তারপর অন্যটা। প্রথম বইটা প্রায় দুশো পাতার একটা উপন্যাস। দ্বিতীয় বইটা ছোটগল্পের একটা সংকলন, গোটা পনেরো ষোলটা গল্প আছে তাতে। কোন ভাবনাচিন্তা ছাড়াই মাঝখানের একটা গল্প পড়তে শুরু করল কমল।

    টরন্টোবাসী অনিল আরোরা দেশ বেড়াতে দিল্লী যাচ্ছে, কিন্তু সারপ্রাইজ দেবে বলে বাড়ির লোকেদের কিচ্ছু জানায়নি। জানিয়েছে কেবল বিন্নিকে, ওর দশ বছর প্রেম করা হবু বউকে। টরন্টো থেকে ছোট ফ্লাইট ধরে ও মন্ট্রিয়ল আসবে, তারপর মন্ট্রিয়ল থেকে ধরবে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৮২, যেটা লন্ডন হয়ে যাবে দিল্লী।

    থামল কমল। এয়ার ইন্ডিয়ার এই ফ্লাইটটা তো অ্যাক্সিডেন্টে পড়েছিল, মানে মিলিটান্ট শিখ গোষ্ঠী বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল প্লেনটাকে। হ্যাঁ, মনে পড়েছে, বোয়িং ৭৪৭ বিমানটার নাম ছিল ‘কনিস্ক’। বোমায় বিদ্ধস্ত প্লেনটা মুখ থুবড়ে পড়েছিল আটলান্টিক মহাসাগরে। প্যাসেঞ্জার আর বিমানকর্মীর কেউ বাঁচেনি। তিনশোর ওপর লোক মারা গিয়েছিল। তো কী হয়েছিল এই অনিল আরোরার?

    বাকীটা পড়তে শুরু করল কমল। কানেক্টিং ফ্লাইট লেট করল বলে অনিল মেন ফ্লাইটটা ধরতে পারেনি। তারপর সাধ্য সাধনা করে পরের এ ফ্লাইট সে ফ্লাইট ধরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিল্লী পৌঁছাল অনিল।

    এদিকে ফ্লাইট ১৮২ এর অ্যাক্সিডেন্টের দুঃসংবাদে বিন্নির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। অনিলকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট এসেছিল সে। সেখান থেকে হস্টেলে ফিরে ঘরের দরজা বন্ধ করে সারারাত ধরে কান্না, আর খালি কান্না।

    পরদিন সকালে বিন্নিকে বাস্তব ভাবনায় আসতেই হল। অনিলের বাড়ির লোকেরা তো কিছু জানে না, তাদের তো এই সর্বনাশের খবরটা ওকেই দিতে হবে। চোখমুখ ধুয়ে যখন বেরোবার জন্য তৈরী তখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলে বিন্নি হতবাক। সামনে দাঁড়িয়ে অনিল, পিছনে ওর বাড়ির সবাই। হাসিমুখে অনিল বলল, সারপ্রাইজ হলো বটে, তবে বাবা মার বদলে হলো তোমার।

    মন্দ লেখেনি তো গল্পটা। সবচেয়ে বড় কথা পড়তে শুরু করে ছাড়তে পারেনি কমল। যেমন ঝরঝরে ভাষা, তেমনি টানটান লেখা। ঘটনার স্রোতে যেখানে যেমন আবেগ কি অনুভব, বাস্তবতা কি পারিপার্শিকতা আসার দরকার ঠিক তেমনি এসেছে। জীবনের চূড়ান্ত ক্ষতির দুঃখ থেকে এক মুহূর্তে চূড়ান্ত সুখে উঠে আসার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে এমন সুন্দর শব্দ চয়নে যে মনে দাগ কাটে। সর্বোপরি লেখায় পরিমিতি বোধ বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়, অপ্রয়োজনীয় কথা নেই কোথ্বাও। পাতা উল্টে পিছনে গিয়ে দেখল কমল, হ্যাঁ, গল্পটার নাম সঞ্জিত ‘সারপ্রাইজ’-ই দিয়েছে।

    তারপর চার পাঁচদিনে বইদুটো পুরো পড়ে ফেলল কমল। সব ক’টা লেখাই যে দারুণ এমন না, তবে কয়েকটা বেশ ভাল, আর বাকীগুলোও এক্কেবারে খারাপ না। বাজারে যা সব লেখা চলছে সে তুলনায় খারাপ না মোটেই। আচ্ছা, সঞ্জিত কী এখনো লেখালেখি করে? খবর নিলেই হয়। খুব দূরে না, এইতো পাশের শহরেই তো সঞ্জিত থাকে।

    এর মধ্যে একদিন ফোনে কথা হল ধীরাজের সঙ্গে। প্রবীন লেখক ধীরাজ বন্দোপাধ্যায় আজকাল লেখেন কম, সভা সমিতি করেন বেশি। বিভিন্ন জায়গায় তিনি সভাপতি কি প্রধান অতিথি। বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক সংস্থার তিনি সর্বেসর্বা কি মূখ্য উপদেষ্টা। কমল বলল, ধীরাজদা, সঞ্জিতের যে বইদুটো তুমি ফেলে গিয়েছিলে সে দুটো আমি এতদিন পরে পড়লাম।
    কোন সঞ্জিত? সঞ্জিত কে?
    ও তোমার মনে থাকবার কথা না।
    তাহলে বলছিস কেন?
    কোন কারণ নেই। এমনি। পড়লাম, তাই বললাম।

    তারপর অন্য কথা। পরে কমল ভাবল এই কথাটা ধীরাজদাকে কেন ও বলতে গেল। ধীরাজদার রিয়েকশান কী হবে এ তো জানাই ছিল। যদি কাউকে কথাটা বলতে হয় তো সে হল সঞ্জিত।

    দু তিনদিনের মধ্যে খবর জোগার করে ফেলল কমল। ফোন করে সঞ্জিতকে বলে দেখা করতে গেল বইদুটো সঙ্গে নিয়ে।

    প্রাথমিক খবরাখবর লেনদেনের পর সঞ্জিত বলল, কতদিন পরে আপনার সঙ্গে দেখা হলো কমলদা। আপনি কী কোন দরকারে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন? না, তেমন কোন দরকার না। আসলে...

    কেন হেসিটেট করছেন কমলদা, সহজ গলায় সঞ্জিত বলল, যে প্রয়োজনে আপনি এসেছেন সেটা আপনি আমাকে ফ্রাঙ্কলি বলতে পারেন। তুমি তো এক সময় খুব লেখালেখি করতে, এখনও কী সে রকম করো?

    ম্লান হেসে সঞ্জিত বলল, নাহ্‌, আজকাল আর তেমন উৎসাহ পাই না। এক রকম ছেড়েই দিয়েছি বলতে পারেন। কেন? এ কথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন? ব্যাগ থেকে বইদুটো বের করে সঞ্জিতের সামনে রেখে কমল বলল, চর্চাটা রাখলে ভালো করতে।

    এ বইদুটো... আপনার কাছে...

    হাতে তুলে নিয়ে একটার মলাট খুলল সঞ্জিত। প্রথম পাতায় তার নিজের হাতের লেখা, ‘শ্রদ্ধেয় ধীরাজ বন্দোপাধ্যায়কে প্রীতি উপহার, সঞ্জিত সাহা’। ব্যথার কালোছায়ায় ঢেকে গেল সঞ্জিতের নতমুখটা, তাকিয়েছিল বলে কমল দেখতে পেল।

    মুখ তুলে সঞ্জিত কিছু বলতে যাচ্ছিল, কমল তার আগে বলল, ধীরাজদা চলে যাবার পর ফেলে যাওয়া এই বইদুটো তোমাকে আমি ফেরত দিতে পারিনি সঞ্জিত। তোমার কী ভীষণ খারাপ লাগবে ভেবে...
    আমি বুঝতে পারছি কমলদা, কমলের কথা শেষ করতে না দিয়ে সঞ্জিত বলল, কেন তক্ষুণি বইদুটো ফেরত দেননি সেটা আমি বুঝতে পারছি। বুঝতে পারছি না এতদিন পরে আজকে ফেরত দিচ্ছেন কেন। এ সত্যটা প্রকাশ করে আজকে আপনার কী হল?

    সত্যটা চেপে যাবার যাতনা থেকে মুক্তি পেলাম, বলে দম নিল কমল। তারপর বলল, রিটায়ার করে ছোটবাড়িতে যাবো বলে জিনিসপত্র সর্ট করতে বসে তোমার বইদুটো হাতে পড়ল। পড়ে ফেললাম। আমি বলা সত্ত্বেও ধীরাজদা তোমার এই বইদুটো ফেলে যাবার জন্য যে যাতনাটা সেদিন শুরু হয়েছিলো সেটা তো এতোদিন ভুলেই ছিলাম। এখন এই বইদুটো পড়ার পর আরো তীব্র হয়ে ফিরে এসেছে সেটা।

    কমল থামল। সঞ্জিতের চোখেমুখে বেদনা। ফাঁকা গলায় বলল, কমলদা আপনার সহানুভুতির জন্য ধন্যবাদ। বইদুটো আমি তো ফেরত পেলাম, জানলাম ধীরাজ বন্দোপাধ্যায়ের সময় হয়নি এদুটো পড়ার। এবার ব্যাপারটা আপনি ভুলে যান প্লিজ।

    হয়তো ভুলে যেতে পারবো, হয়তো পারবো না। সেটা এখন আর বড়ো কথা না। কমল বলল, বড়ো কথা হলো এ প্রশ্নের উত্তরে তুমি যা বললে তাতে আমি বুঝতে পারছি এনকারেজমেন্টের অভাবে কত বাডিং ট্যালেন্ট নষ্ট হয়ে যায়।

    সঞ্জিত এতক্ষণে কাটিয়ে উঠেছে মন খারাপ করা অবস্থাটা। সহজ স্বাভাবিক গলায় বলল, তেমন কিছু ট্যালেন্ট আমার ছিলো না কমলদা। থাকলে তো আমি আরেক ধীরাজ বন্দোপাধ্যায় হয়ে যেতাম এতদিনে।

    একটু থেমে সঞ্জিত আবার বলল, আমি জানতাম এমন অনেক বই পড়ার অনুরোধ ধীরাজ বন্দোপাধ্যায়ের মতো প্রতিষ্ঠিত লেখক কবিরা পান। জানতাম এমন সব অযাচিত অনুরোধ রাখা তাঁদের পক্ষে সম্ভব না। তবুও তখন তো আমি স্বপ্ন দেখার পর্বে, তখন তো আমি চেষ্টার ত্রুটি রাখবার কথা ভাবতে পারতাম না।

    শান্ত গলায় কমল বলল, আমি ধীরাজদাকে বলেছিলাম তাঁর মতো খ্যাতনামা লেখক তো এমন অনুরোধ পাবেনই। উত্তরে উনি কী বলেছিলেন জানো?
    কী বলেছিলেন?
    বলেছিলেন “অনুরোধ ব্যাপারটা সবসময়ই নিম্নমনোবৃত্তির বাহক। অনুরোধকারী উদ্দেশ্য-প্রণোদিত, অনুরোধপ্রাপক বিব্রত।”
    বাহ্‌, বেশ সুন্দর বলেছিলেন তো, সঞ্জিত হাসিমুখে বলল। দু দণ্ড চুপ থেকে আবার বলল, তবে ওঁর বলা কথার একদম শেষ শব্দটা বক্তব্যের সৌন্দর্য রাখার জন্য বলা, সেটা সত্যি কথা না।
    তাই? হাসিমুখে কমল জানতে চাইলেন, সত্যি শব্দটা তাহলে কী?

    সত্যি শব্দটা হলো ‘বিরক্ত’, ধীর গলায় সঞ্জিত বলল, পুরো কথাটা হবে, “অনুরোধ ব্যাপারটা সবসময়ই নিম্নমনোবৃত্তির বাহক। অনুরোধকারী উদ্দেশ্য-প্রণোদিত, অনুরোধপ্রাপক বিরক্ত।”

    কথাটা কিন্তু তুমি ঠিক বললে সঞ্জিত, কমল মানল, ‘বিব্রত’ কথাটার মধ্যে একটা অনিচ্ছাকৃত উপায়হীনতা আছে, যা এই বক্তব্যে সঠিক না। এ বক্তব্যে ‘বিরক্ত’ কথাটাই সঠিক, কারণ উপেক্ষা ইচ্ছাকৃত।

    সঞ্জিত আবার বলল, আসলে কী জানেন কমলদা, অনুরোধ ব্যাপারটা সবসময়ই মূল্যহীন। অনুরোধকারীর দেবার কিছু নেই, অনুরোধপ্রাপকেরও পাবার কিছু নেই।

    স্তব্ধ হয়ে সঞ্জিতের কথাটা হৃদয়ঙ্গম করল কমল। তারপর ধীর গলায় বলল, সেদিন ধীরাজদার অনুরোধ নিয়ে বলা সাইকোলজিটা শুনে আমি মোহিত হয়েছিলাম। আজকে অনুরোধ নিয়ে তোমার বলা সাইকোলজিটা শুনে আমি আরেক প্রস্থ মোহিত হলাম। দুটো সাইকোলজিই তো বাস্তবিক!

    হ্যাঁ, দুটোই বাস্তবিক, সঞ্জিত বলল, এবং দুটো সাইকোলজির মধ্যে যে মূল সত্যটা লুকিয়ে আছে তা হলো অনুরোধে ভর করে কোনদিন বড় হওয়া যায় না। অনামধেয়র অনুরোধের পিঠে খ্যাতনামীর বিরক্তি আর অবহেলা অবধারিত।



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ অনন্যা দাশ
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)