• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৯ | জুলাই ২০২০ | গল্প
    Share
  • ভয় : হীরক সেনগুপ্ত




    'একটু পরেই শুলংগুড়ি৷ কন্ডাক্টরকে ম্যানেজ করেছি৷ এখানে কোন স্টপেজ নেই। বাস একটু স্লো করবে৷ তার মধ্যেই কুইক্ নামতে হবে। নামার সময় কোনো ভ্যানতারা যেন না দেখি--' কানের কাছে হিস্ হিস্ করে প্রণবেশ।

    পূরবী আতঙ্কে কেঁপে উঠল৷ সিটের হাতল শক্ত করে আঁকড়ে ধরে৷ হেড-লাইটের জোরালো আলোর বল্লম জমজমাট অন্ধকারকে গেঁথে নিয়ে উন্মাদ গতিতে ছুটছে বাস৷


    ও জানে প্রণবেশের চাপা স্বরের এই নির্দেশ, আসলে ড্রিল মেশিনের ক্ষমাহীন তীক্ষ্ণ গর্জন৷ মুহূর্তে আগুনের ফুলকি তুলে পুরু ইস্পাতের দেওয়ালও নির্দ্বিধায় ভেদ করে যেতে পারে৷

    এই ফুলকি এখনই বোঝা যাবে ব্লাউজের ভিতর হাত দিলে৷ দশ-বারোটা ৷ ছোট ছোট এক টাকার কয়েন। সিগারেটের আদরছ্যাঁকা৷ কোনোটা ফিল্টার উইলস-এর বদলে ভুল করে ফ্লেক আনার পুরস্কার। কোনোটা গান শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে গিয়ে প্রণবেশের কলিংবেল মিস করার অভিনন্দন। কোনোটা বা আবার যৌন দাসত্বের ক্লান্তি দূর করতে প্রণবেশের মনোরঞ্জন।


    এখন বোধহয় মাত্র তিনজনই জেগে আছে সারা বাসে৷ জানলা দিয়ে আসা ঝোড়ো বাতাস, ইঞ্জিনের আর্তনাদ ও পূরবীর বিভীষিকা৷ 'কুইক্ নামতে হবে... কুইক্ ... '

    পূরবীর মাথায় ইকো হয়ে যাচ্ছে প্রণবেশ৷


    বাসের প্রবল ঝাঁকুনি আর দস্যু হাওয়া অবিন্যস্ত করে দিচ্ছে পূরবীকে। টেনে বাঁধা চুল, ক্লান্ত৷ শিথিল মাধবীলতার আকর্ষ৷ পরমাত্মীয় হয়ে ঘিরে আছে ওর বানভাসি চোখ৷ প্রথমার চাঁদের মতো সিঁথি, এখন ধস নামা পাহাড়ি জঙ্গলের রাস্তা৷ আচমকা ভেঙে অসমাপ্ত৷ ভুতুড়ে৷

    চোখের কাজলবেড়া দুমড়ে নিঃশব্দে বয়ে যাচ্ছে অন্যমনস্ক নির্জন অশ্রু ৷ হৃতসর্বস্বের একাকীত্ব৷ ঈশ্বরের কাছে আর্জি৷


    অনেকটা আগে, সামনের দিকে ফাঁকা সিটে বসে আছে প্রণবেশ। সিগারেটের লম্বা লম্বা টানে বাসের অন্ধকার লাল হয়ে তেতে উঠছে৷ ঘাড় ঘুরিয়ে পূরবীকে ইশারায় কী যেন বলল৷ পূরবীর শূন্য দৃষ্টিতে কেবল আজ্ঞা-পালনের উদ্বেগ৷ অবিরত ইশারা বৃথা গেল ৷

    বিরক্ত ডঃ প্রণবেশ দাস৷ উঠে দাঁড়ায়৷ অন্ধকার একটা অবয়ব। হেঁটে আসছে পূরবীর দিকে।

    'কথাটা মনে আছে নিশ্চয়ই,’ জ্বলন্ত সিগারেট তুলে দেখায়৷ 'আমি কিন্তু কিঞ্জল নই।'

    কিস্তিমাৎ পূরবী, আজ বিভ্রান্ত৷ কোনোক্রমে ঘাড় নাড়ে৷ কিন্তু হাসছে কেন?


    প্যান্ডোরার খোলা বাক্স থেকে কি জোনাকিধ্বনি গায়ে উড়ে আসে? 'কিঞ্জল! ... কিঞ্জল!'

    এ হাসি কি টের পায় সায়েন্স কলেজের বাইশ বছরের এক তন্বী? কিঞ্জল কলরবে ঢেউডিঙিতে ফিরে আসা হাসি? এ তো তার নিজস্ব৷ গোপন অতীত আমানত। কার সঙ্গে কথোপকথনে অনর্গল পূরবী!

    এমন ভাবেও ভেসে যাওয়া যায় …


    …তুই তো জানিস কিঞ্জল। রানিং বাস থেকে নামতে আমার ভয় করে৷ মারাত্মক ভয়৷ বল, তুই জানিস না? আমি কী করব?...

    তোর মনে আছে? একদিন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ স্টপেজে বাসটা থামল না... আমি ভয়ে চিৎকার করছি, “থামান থামান--”

    তোরা ততক্ষণে নেমে গেছিস কলেজের কাছে৷ আমি নামতে পারিনি। বাসের পিছন পিছন সবাই দৌড়চ্ছিস।

    বাস টেনে নিয়ে গেল এম. এন. চ্যাটার্জি অব্দি!

    কন্ডাক্টরের ধমক …“বাস তো স্লো হলো। সবাই নামল৷ আপনি পারলেন না৷ এবার থেকে ট্যাক্সি চড়বেন--”

    কী লজ্জা! কী লজ্জা!

    বাকি রাস্তাটুকু হেঁটে এসেছিলাম! আমরা সবাই৷ মানে তুই, প্রণবেশ, চারু, নীনা, অদিতি৷ কতটা পথ৷ কেমন নিমেষে ফুরিয়ে গেছিল বল?...

    কিজ্ঞল হাসছে।

    তুই হাসছিস কেন?

    ‘এমনি।’

    না তোকে বলতেই হবে।

    তবুও হাসছিস!


    ….তারপর কত্তো দিন তোদের গাড়িতে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিস। গেটের সামনে এলেই বলবি, “এক মিনিট৷ দাঁড়া।”

    স্টার্ট বন্ধ করে স্টিয়ারিং থেকে চাবি বের নিতিস। “এবার নাব৷ পারবি তো?”

    পূরবীর মুখ আবিরলাল৷ প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায় বনেটের সামনে দিয়ে৷ কিজ্ঞলের কাছে মুখ নিচু করে আঁচলের কোণ খুঁটছে--

    যাই?

    ‘সাবধানে।’


    আর কখনও বলতে হয় নি ... 'কিঞ্জল তুই জানিস না? রানিং বাস থেকে নামতে আমার ভয় করে?’


    ১০

    ...একবার তোর সাইক্রিয়াটিস্ট মামার কাছে গিয়েছিলাম! কোরাপুটের জঙ্গলে৷ হেল্‌থ সেন্টারে আদিবাসিদের চিকিৎসা করতেন৷

    ‘মামা, এই সেই পূরবী।’

    আমার মুখে সব শুনেটুনে বললেন--

    “এ হল ফোবিয়া৷ পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষের বহু বিচিত্র ফোবিয়া আছে৷ এর উৎস যে কী সব সময় পরিষ্কার করে তা বোঝা যায় না৷ অনুমান করা হয়, অতি শৈশবের স্মৃতিতে গেঁথে যাওয়া কোনও ঘটনা৷ বিশেষত ভীতিপ্রদ৷ এনি ওয়ে৷ অ্যাজ সাচ্ কোন চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত নেই৷ ক্ষতি যে খুব একটা হয় তা নয়। তবে মুশকিলটা হয় আশেপাশের মানুষকে নিয়ে৷ যাদের এমন কোন ফোবিয়া নেই তারা ধরতেই পারবে না গোটা বিষয়টা৷ সামান্য ব্যাপার, সিলি থিং বলে লঘু করে৷ তাই আশেপাশের মানুষেরা হয় অপ্রয়োজনীয় ভাবে সান্ত্বনা দেয় নয়তো হাসাহাসি করে। তখন একটা প্রবলেম হয় বই কি৷ কারো কারো ক্ষেত্রে এটা হয়তো সিভিয়ার ট্রমা৷ তখন সিচুয়েশনটা আগলি টার্ন নিতে পারে।”


    ১১

    মিছিলের শব্দেরা হাঁটছে… কুইক্ নামতে হবে... কুইক্…


    ১২

    তুই ফাইনাল সেমিস্টার ড্রপ দিলি কেন? আমাকে কিচ্ছু জানালি না? জানিস তোদের বাড়ি গেছিলাম৷ বাড়িতে তালা৷ তোরা যেন সব হাওয়ায় মিলিয়ে গেছিস৷ কোথায় গেছিলিস?


    ১৩

    শিশিরের সুনামি আমাকে ভাসিয়ে দিল রে কিঞ্জল৷ জানে শুধু পরীক্ষার খাতার ধ্যাবড়ানো অক্ষর৷ বালিশ। আর তোর ফেলে যাওয়া টালমাটাল রুমাল৷

    কুয়াশার শব্দে জড়িয়ে যাচ্ছি।


    ১৪

    ...তারপর হঠাৎই একদিন ফোন এল জানিস৷ প্রণবেশের৷ প্রণবেশকে ভুলিস নি নিশ্চয়ই। মনে পড়ছে না?

    আরে প্রণবেশ৷ সর্বক্ষণ আঠার মতো আমার পিছনে লেগে থাকতো রে ...ওহঃ মনে পড়ছে না...

    নীনা ফোড়ন কাটত, “দ্যাখ পূরবীর ছায়া—"

    “ছায়া কেন, বল 'পি' মৌলের অরবিটে পাক খাওয়া পি ইলেকট্রন। বেচারা!”

    সবাই হেসে গড়িয়ে পড়তিস...নীনা স্লোগান দিত, “পি ফর পূরবী…”

    তোরা বলছিস, “হিপ্ হিপ্ হুররে…”

    একবার খেপে গিয়ে তোর কলার চেপে ধরেছিল…. এডি কেবিনে৷ সে কী কাণ্ড!


    ১৫

    সেই প্রণবেশ… পুলিশের চাকরি পেল… মনে পড়েছে?


    ১৬

    ‘আরে ম্যাডাম কামাল করে দিয়েছেন তো আপনি৷ রেজাল্ট দেখেছেন?’

    কিসের রেজাল্ট?

    ‘ন্যাকামি করিস না৷ মাস্টার্সের।’

    না।

    'তুই ই ফার্স্ট।'

    ও।

    'মন খারাপ?'

    কিসের জন্য?

    'কিজ্ঞলের জন্য?'

    নাহ।

    ফোনটা কেটে দিলাম৷ ক্রেডেলে রাখতেই আবার রিঙ।

    'একটা সারপ্রাইজ আছে।'

    থাক।

    ‘শুনবি না?'

    না।

    'কিঞ্জলের নিউজ হলেও না?'

    মুহূর্তে মুঠো থেকে রিসিভার খসে পড়ল৷ কালো তার থেকে ঝুলছে৷ পেঁচিয়ে উঠে আসছে প্রণবেশের গলা,

    “হ্যালো হ্যালো--”

    রক্তশূন্য শরীর! সমস্ত শক্তি দিয়ে দু'হাতে রিসিভার তুললাম৷


    ১৭

    ‘কিজ্ঞল!’

    উত্তেজনায় ছটফট করছে শরীর।

    ‘ইয়েস।’

    ‘ক্কি নিউজ?’

    ‘সেটা শুনতে হলে আমার বাড়ি আসতে হবে।’


    ১৮

    সেই শুরু প্রণবেশের শিকার। পরের দিনই ওর বাড়ি গেছিলাম৷

    'কী জানিস কিঞ্জলের? ও কোথায়?'

    'জেলে।'

    'জে-লে!'

    'জানতাম তোর বিশ্বাস হবে না। এই ছবিগুলো দেখ।'


    ১৯

    একি চেহারা হয়েছে তোর? এ কাকে দেখছি আমি? বিশ্বাস কর কিঞ্জল, তোকে চিনতেই পারিনি! শীর্ণ চেহারার কুঁজো মানুষ৷ দাড়িগোঁফের জঙ্গল। কী বয়স্ক লাগছে! এ কি তুই কিজ্ঞল?

    শুধু চোখেই চিনলাম তোকে।


    ২০

    সব ছবি দেখে উঠতে পারি নি। আরো কী কী যেন বলেছিল প্রণবেশ, শোনা হয় নি। এইটুকু মনে আছে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছি টেবিলের উপর...


    ২১

    জ্ঞান ফিরে দেখলাম নিজের খাটে শুয়ে।

    প্রণবেশের কথা মাথায় গেঁথে গিয়েছিল।

    মনে পড়তেই ভয় পেয়ে বলি--

    'মা আমাকে বাড়ি নিয়ে এল কারা?'

    'প্রণবেশ আর কয়েক জন। দেখলাম ছেলেটি বড় পরোপকারী।'

    মাথায় আগুন ধরে গেল৷ সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার করি --

    'মা--'

    'কী হলো পূর্বী?'

    'কিছু না।'

    'কিরে শরীর খারাপ লাগছে?'

    কান্না লুকিয়ে বললাম,

    ‘কই না তো!'

    পরের দিন আবার ওর বাড়ি৷ প্রণবেশকে জিজ্ঞাসা করলাম--

    'এসব ছবি তুই পেলি কোথায়?'

    'বলব না৷ শুধু জেনে রাখ আমি এখন পুলিশের খোচর৷ খোচর মানে জানিস তো?

    কিজ্ঞলদের খোঁজ আমিই দিয়েছিলাম৷ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অ্যারেস্টড৷ কিঞ্জল আর ওর মামা—’

    'অ্যারেস্টড!'

    'হুঁ।'

    'ওদের ধরিয়ে দিয়ে তোর লাভ কী হলো?'

    'লাভ না থাকলে পুলিশের খোচর. ডঃ দাস মাথা ঘামাত না৷ ক্ষতিটা তোর হাতে।'

    'মানে?'

    'রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগটা আমাদের সাজানো৷ মিথ্যে৷ অমন হাজার হাজার কেস প্রতিদিন সাজানো হয়৷ ছাড়াও পেয়ে যায়৷ তবে সময় লাগে৷ কিঞ্জলের কত সময় লাগবে, তা অবশ্য তোর উপর নির্ভর করছে।’

    ‘মানে?’

    ‘তুই তো নিজের চোখেই দেখলি৷ কিঞ্জলের হাল৷ আসলে ইন্টারোগেশনে ওসব একটু হয়৷ তবে যত বেশিদিন জেল, তত বেশিদিন ইন্টারোগেশনের স্কোপ৷ তত ব্রেকও করতে থাকে আন্ডার ট্রায়ালে থাকা মানুষেরা৷ এমনটা হয়েই থাকে যে স্রেফ

    টর্চারের হাত থেকে বাঁচতে, সম্পূর্ণ নির্দোষ ব্যক্তিও বোগাস অভিযোগও স্বীকার করে নেয়।’

    আমি চিৎকার করে উঠি,

    ‘প্লিজ৷ চুপ কর—'

    ‘তবে তুই যদি না চাস, এসব কিচ্ছু হবে না। কিঞ্জল ছাড়া পেয়ে যাবে৷ শুধু তোকে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে।’

    আমি মরিয়া হয়ে বললাম--

    ‘কী করতে হবে বল৷ আমি রাজি৷’

    ‘আমাকে বিয়ে।’

    ‘তোকে বিয়ে? মানে?’

    ‘বিয়ে করা না করা অবশ্য তোর ব্যাপার--’

    ‘বিয়ের সঙ্গে ওর ছাড়া পাওয়ার কী সম্পর্ক?’

    'কেস উইথড্র হয়ে যাবে। বিয়েতে রাজি থাকলে বল, ওরাও রিলিজড হয়ে হবে৷ ...লেখাপড়ায় আর তোদের মতো ব্রিলিয়ান্ট নই। আমারও তো ভালো কেরিয়ার, সুন্দরী বউ…. এ সব ইচ্ছে হয়, নাকি!’


    ২২

    মিছিলের শব্দেরা হাঁটছে …কুইক্... নামতে হবে... কুইক্…


    ২৩

    ‘তুই সত্যি বলছিস? তোকে বিয়ে করলে কিজ্ঞলকে রিলিজড করে দেবে?’

    ‘সত্যি।’


    ২৪

    ...আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছি৷ প্রণবেশের মারপ্যাঁচ কিছুই বুঝতে পারিনি৷ নুড়ি পাথরের মতো ঠোক্কর খেতে খেতে আছড়ে পড়ছি৷ গভীর খাদ থেকে আরও গভীরে। অন্ধকারের নির্জনতায়...


    ২৫

    আমি তখন ঘোরের আবর্তে৷ আচ্ছন্ন৷ ভূতগ্রস্ত৷ কী বোকা আমি! দেখ রাজিও হয়ে গেলাম৷ ভাবলাম তোরা তো রিলিজড হয়ে যাবি৷ মাথা নেড়ে কী যে উত্তর দিয়েছিলাম মনে নেই! তবু টের পেলাম লুন্ঠিত স্বদেশের…। কীসের থেকে কী ঘটে গেল! দিনে দিনে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছে প্রণবেশ দাস৷ কিন্ত আজ কে বিশ্বাস করবে আমাকে?


    ২৬

    …তুই রিলিজড হয়েছিস কিঞ্জল? কী রে বল? হয়েছিস রিলিজড?...


    ২৭

    ব্যথায় সম্বিৎ আসে পূরবীর ৷ আঁচলে ঢাকা বাঁ হাত৷ পিঠের দিকে শাড়ির তলা দিয়ে মুচড়ে ধরেছে প্রণবেশ।

    'হারামি! মনে নেই নামতে হবে?'


    ২৮

    তীব্র বেদনা গলার ভিতরে খেলা করছে পূরবীর৷ তবুও ব্যস্ত, স্খলিত পা ফেলে ফেলে নির্দেশ মতো হাঁটছে৷ আঁচল গুটিয়ে এক উদ্ভ্রান্ত দরজার দিকে এগোচ্ছে৷

    ঝড়ের গতিতে বাস ছুটছে … চারপাশ অন্ধকার …দৈত্যগতির উদ্ভ্রান্ত বাস…

    অবশ হয়ে মুছে যাচ্ছে ভয়। আতঙ্কের অট্টহাসি শুনতে শুনতে ছোটো ছোটো পায়ে দিশেহারা৷ খণ্ড খণ্ড পূরবী৷ পরাস্ত হতে এগিয়ে গেছে আরও কাছে৷ দরজায় কিনারায় হাত রাখে।


    ২৯

    আচমকাই ঝাঁকুনি৷ হেঁচকি তুলে বাস স্থির হয়ে গেল ৷ ইঞ্জিনের ঘরঘর কাঁপুনিও নেই৷ স্টার্ট বন্ধ।

    আচমকাই বাস থামাতে জেগে উঠল বেশ কিছু যাত্রী৷


    ৩০

    'কী হল দাদা?'

    'কিছু না।'

    ‘কিছু হলো ভাই?’

    'কিছু না।'

    'কী ভাই অ্যাক্সিডেন্ট নাকি?'

    'আহ! বলছি তো৷ কিছু হয় নি।'

    'হ্যাঁ ভাই, বাস থামল কেন?'

    কন্ডাক্টরের গলা৷

    'কিছু না।'

    'কিছু না?'

    'কিছু না।'...


    ৩১

    …'পূরবী, সাবধানে নেমো৷ পারবে না?'

    'কিঞ্জল!!'



    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণঃ রাহুল মজুমদার

    Tags: Bhpy, Bengali short stoy, Hirak Sengupta
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments