• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৪৫ | এপ্রিল ২০১০ | গ্রম্থ-সমালোচনা
    Share
  • `মহাকর্ষের কথা'- সুকন্যা সিংহ : রজত চন্দ

    মহাকর্ষের কথা ; সুকন্যা সিংহ ; অনুষ্টুপ ; কলকাতা, প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি, ২০০৯ ; প্রচ্ছদ : হিরণ মিত্র ISBN: 978-81-906839-5-1




    !---





    ---

    যে প্রশ্নগুলির উত্তর এখন জানা নেই কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সমাধানের আশা আছে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা, আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত আবিষ্কারের উদ্দীপনা ও বিস্ময়বোধ অল্পবয়েসীদের তো বটেই, জিজ্ঞাসু প্রাপ্তবয়স্কদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে দিতে পারে । আলোচ্য বইটির দ্বিতীয়ার্ধে এই গুণগুলির কয়েকটা দেখে তৃপ্ত হলাম ।

    পলাশ বরণ পাল সম্পাদিত বিজ্ঞান গ্রন্থমালার অন্তর্গত ড. সুকন্যা সিংহের `মহাকর্ষের কথা' বইটিতে এই বিষয়ে প্রাচীন ও আধুনিক গবেষণার সুন্দর বিবরণ রয়েছে । প্রাচীন গ্রীসের বিশুদ্ধ চিন্তা ও যুক্তি নির্ভর `ন্যাচারাল ফিলজফি'র সীমাবদ্ধতা থেকে কোপার্নিকাসের বৈপ্লবিক সৌরকেন্দ্রিক ধারণা একটি বিশাল পদক্ষেপ । তারপর কেপ্লারের আবিষ্কৃত গ্রহদের পথ চলার নিয়ম ও গালিলিওর পরীক্ষামূলক গতিতত্ত্ব, নিউটনীয় মহাকর্ষের জয়যাত্রার চমত্কার বর্ণনা, জোয়ার ভাঁটার রহস্য, নেপচুন আবিষ্কারের চমকপ্রদ কাহিনি রয়েছে এই বইতে । নিউটনই দেখান যে পৃথিবীতে আমাদের অভিজ্ঞতায় মহকার্ষের যে নিয়ম, সেই নিয়মই চাঁদ, গ্রহ ও ধূমকেতুদের চলাফেরা নির্ণয় করে । এই Universal বা মহাজাগতিক নিয়মের ধারণা অভিনব । আরিস্টটলীয় অভিমত ছিল যে পার্থিব এবং নক্ষত্রলোকের নিয়ম কানুন আলাদা । এমনকি নক্ষত্র জগতের মৌলিক পদার্থ পার্থিব চারটি মৌলিক পদার্থের (জল, হাওয়া, মাটি ও আগুন) থেকে পৃথক, তিনি যার নাম দিয়েছিলেন quint essence (পঞ্চম বস্তু) । নিউটনের এই `terrestrial and celestial unification' -এর ধারা আধুনিক বিজ্ঞানেও চলেছে । উনিশ শতাব্দীর মাঝামাঝি স্কটিশ বৈজ্ঞানিক ম্যাক্সওয়েল দেখান যে বিদ্যুত্‌, চুম্বক ও আলো মূলত: একই শক্তি । আইনস্টাইনের স্বপ্ন ছিল মহাকর্ষ ও ম্যাক্সওয়েল তত্ত্বকে এক সুতোয় বেঁধে ফেলা । সফল হয়নি বহু বছর ব্যাপী সেই চেষ্টা । তবে আজ থেকে বছর চল্লিশেক আগে প্রমাণিত হল যে পরমাণুকেন্দ্রের মধ্যেকার `লঘু শক্তি' (Weak interaction) বিদ্যুত্‌-চুম্বকের পরিবারভুক্ত । পরমাণুকেন্দ্রের Strong interaction (`গুরু শক্তি'??) এবং মহাকর্ষকেও এদের সঙ্গে মেলানো, বহুর মধ্যে একের সন্ধান, গত পঁচিশ বছরের তাত্ত্বিক গবেষণার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ।

    আদিকাল থেকে মনে করা হত স্থান (space) ও কাল (time) -এর মাপ দ্রষ্টা-নিরপেক্ষ । উনিশ শতাব্দীর শেষদিকে ম্যাক্সওয়েল তত্ত্ব ও নিউটনীয় গতিতত্ত্বের মধ্যে অসংগতি লক্ষ করা হয় । এই সমস্যার সমাধান করেন অল্পবয়সী আইনস্টাইন । তাঁর `বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব' (Special Theory of Relativity) এই অসংগতি দূর করলো বটে কিন্তু স্থান ও কালের দ্রষ্টা নিরপেক্ষতাকে বিদায় নিতে হল । সুকন্যা এই বিষয়টি এবং এর পরবর্তী বিরাট পদক্ষেপ, মহাকর্ষকে আপেক্ষিক তত্ত্বের সঙ্গে মেলানো, যা আইনস্টাইনের অনন্য কীর্তি, সহজ ও সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন । স্থান ও কাল ভারি বস্তুর কাছাকাছি বক্ররূপ ধারণ করে ; এই বিকৃতিই মহাকর্ষ !

    আইনস্টাইনের মহাকর্ষতত্ত্ব বা সাধারণ আপেক্ষিকতার (General Relativity) পরীক্ষা করা সহজ নয়, কারণ যে মহাকর্ষের সঙ্গে আমাদের সচরাচর বোঝাপড়া করতে হয় সেখানে এবং সাধারণ গ্রহ-তারাদের জগতেও নিউটনের ও আইনস্টাইনের তত্ত্বের পার্থক্য অতি অল্প, যদিও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল কাঠামো একেবারেই আলাদা । যেখানে মহাকর্ষ প্রবল সেখানে এদের পার্থক্যও অনেক । অত্যন্ত ভারি এবং ঘন পদার্থের কাছাকাছি সাধারণ আপেক্ষিকতার রাজত্ব । এই বিষয়ে আলোচনা-প্রসঙ্গে সুকন্যা `কৃষ্ণ বিবর' বা Black Hole এবং নিউট্রন তারা বা `পালসার' (Pulsar) দের অনেক আশ্চর্যজনক কীর্তিকলাপের কথা সহজ কিন্তু অতি-সরলীকৃত নয়, এমনিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । এর পরে আছে নক্ষত্রদের জীবনকাহিনি, অল্পবয়েসী চন্দ্রশেখরের (এ-বছর তাঁর জন্মশতবার্ষিকী) কাজের মূল্যায়ন । কেমব্রিজের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী এডিংটন ও অন্যান্যদের এই কাজের কঠোর বিরোধিতার ফলে ভারি তারাদের নাটকীয় শেষ জীবনের আলোচনা বহু বছর পিছিয়ে যায় । এই বিষয়ের বিস্তারিত খবর আছে K. C. Wali -র `Chandra' -বইটিতে ।

    আইনস্টাইনের মৃত্যুর পরে, ষাটের দশকে, আপেক্ষিকতাবাদের নবজাগরণ ঘটে । এর পর আছে কোয়ান্টাম তত্ত্ব ও হকিং-বিকীরণ, তাপগতিবিদ্যা (Thermodynamics) ও কৃষ্ণ বিবরের নিবিড় যোগসূত্র ইত্যাদির পরিষ্কার ও কৌতুহলোদ্দীপক আলোচনা । বোঝা যায় সুকন্যা এই বিষয়টি কত ভালোবাসেন ।

    শুধু তত্ত্বকথা নেই বইটিতে । কিভাবে যুগ্মতারাদের পর্যবেক্ষণ থেকে কৃষ্ণ বিবরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হল, কোয়েজারদের (Quasars) স্বরূপ কি, বহু গ্যালাক্সির, এমনকি আমাদের বাসস্থান ছায়াপথ বা Milky Way র কেন্দ্রে সম্ভবত অতি বিশাল (Super massive) কৃষ্ণবিবরের বাস, এইসব চাঞ্চল্যকর খবর জানাতে ভোলেননি লেখিকা ।

    ম্যাক্সওয়েল-এর বিদ্যুত্‌-চুম্বকীয় তত্ত্বে তরঙ্গের উপস্থিতি লক্ষণীয় । গবেষণাগারে এই ঢেউ-এর দেখা মিলেছিল উনিশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে । জগদীশচন্দ্র বসু এদের স্বরূপ নিয়ে মূল্যবান কাজ করেন । রেডিও ও মাইক্রোওয়েভ, অবলোহিত, দৃশ্য আলো, X -রশ্মি ইত্যাদি এদেরই বিচিত্র রূপ । আইনস্টাইন তাঁর সমীকরণগুলি থেকে দেখালেন যে মহাকর্ষের ক্ষেত্রেও তরঙ্গ সৃষ্টি হতে পারে যা আলোর গতিতে প্রবাহিত হবে । একটি নিউট্রনতারা-জুটির ব্যবহার থেকে এই তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ হলো ১৯৮০ নাগাদ । কিন্তু তাতেই সন্তুষ্ট না থেকে এদের হাতে নাতে ধরার জন্য বিজ্ঞানীরা উঠে পড়ে লেগেছেন । নানা দেশের পরীক্ষাগারে এবং কয়েকটি মহাকাশযানের সাহায্যে বিশাল interferometer -এর ফাঁদে এই মহাকর্ষ-ঢেউ ধরার চেষ্টা চলবে । ২০১৮ সালের মধ্যেই এই ঢেউ সন্দেহাতীতভাবে ধরা যাবে এমনি আশা করা যাচ্ছে । ভবিষ্যতে এই ঢেউ একটি নতুন জানালা খুলে দেবে বিশ্বকে নতুন `আলো'তে দেখার জন্য । গত অর্ধ-শতাব্দীতে রেডিও, মাইক্রোওয়েভ, অবলোহিত, অতি-বেগনী ও X -রশ্মির সাহায্যে বিশ্বজগত সম্বন্ধে আমাদের ধারণা বহু এগিয়ে গেছে । যে-সব ঘটনা বিদ্যুত্‌-চুম্বকীয় তরঙ্গের নাগালের বাইরে তাদের `দেখা' যাবে মহাকর্ষ-ঢেউএর মাধ্যমে । গ্যালাক্সি কেন্দ্রের লুকোনো খবর, সুপারনোভা-দের ব্যাপার স্যাপার, অতি দূরবর্তী গামা-রশ্মি বিস্ফোরণের রহস্য, এমন কি বিগ ব্যাং-এর নাড়ি-নক্ষত্রের খবর হয়তো মহাকর্ষীয় দূরবীণে ধরা পড়বে একদিন ।

    সাধারণ আপেক্ষিকতার সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে কৃষ্ণ বিবরের কেন্দ্রে বা বি.গ ব্যাং-এর জন্মমুহূর্তে । মহাকর্ষ ও কোয়ান্টাম-তত্ত্ব মিশ খায় না । অনুমাত্র স্থান ও কণামাত্র সময়ের ঘটনাবলী বুঝতে হলে কোয়ান্টাম তত্ত্ব অপরিহার্য । এখনও মহাকর্ষের জন্য কোনো ভদ্রগোছের কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব তৈরি করা যায়নি । উপরোক্ত সীমাবদ্ধতার এইটাই কারণ । দুটি আশাজনক পথ আছে মনে হয় : স্ট্রিং থিওরি ও কোয়ান্টাম জ্যামিতি । কিন্তু এ-পথের শেষে কি আছে অথবা আদৌ কিছু আছে কি না এখনও কেউ তা জানেন না । শেষ পরিচ্ছেদে পাঠককে "জানা অজানার সীমায়" পৌঁছিয়ে সুকন্যা বইটি শেষ করছেন ।

    বইটার পরবর্তী সংস্করণের জন্যে আমার কয়েকটি অনুরোধ আছে । ৮২ পৃষ্ঠায়, যেখানে মহাকর্ষীয় সময় প্রসারণের কথা আলোচিত হয়েছে, সেখানে সাদা বামন (white dwarf) জাতীয় তারাদের, যাদের মহাকর্ষ প্রবল, বর্ণালী লাল-প্রান্তের দিকে সরে আসার কথা, তা' উল্লেখযোগ্য । ১৯২০-র দশকে Adams নামে এক জ্যোতির্বিদ ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে Sirius B , অর্থাৎ লুব্ধক নক্ষত্রের সাদা বামন সঙ্গীটির বর্ণালী পরীক্ষা করে এই সরে আসা দেখতে পান যা আইনস্টাইনের হিসেবের সঙ্গে মেলে । হাবল্‌ টেলিস্কোপের সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে এই পরীক্ষার আরো জোরালো প্রমাণ রয়েছে । নিউট্রন তারার ক্ষেত্রে এই সরে আসার পরিমাণ অনেক বেশি -- প্রায় ২০ % । সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণগুলি আপেক্ষিকতাবাদকে আবারও সমর্থন করছে ।

    অনেকে মনে করেন যে বিশেষ ও সাধারণ আপেক্ষিকতার প্রভাব আমাদের জীবনে অবান্তর । অনেকেই জানেন না যে Global Positioning System (GPS) , যার সাহায্যে এরোপ্লেন ও জাহাজ চালানো হয় এবং সেলফোন ও গাড়িতে যাদের সাহায্যে কোনো ঠিকানা, দোকান, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি খুঁজে পাওয়া খুব সহজ, তারা আপেক্ষিকতার সাহায্য ছাড়া অচল । একটু বুঝিয়ে বলা যাক্‌ । অনেকগুলি আনবিক ঘড়িযুক্ত কৃত্রিম উপগ্রহ ২০,০০০ কিংই. উচ্চতায় থেকে ঘন্টায় ১৪,০০০ কি.ংইম. বেগে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে । পৃথিবীর যে-কোনো বিন্দু থেকে অন্তত চারটি উপগ্রহ দেখা যায় যে-কোনো সময়ে । জিপিএস গ্রাহকযন্ত্র এদের থেকে সময় সংকেত পেয়ে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে নিজের অবস্থান জানতে পারে । এর জন্য সময় সংকেতগুলির অনিশ্চয়তা বিশ-ত্রিশ ন্যানো-সেকেণ্ডের কম হতে হবে । আলো এক ন্যানোসেকেণ্ডে চলে এক ফুট ।

    যেহেতু উপগ্রহগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উপরে আছে, যেখানে মহাকর্ষ কম, সাধারণ আপেক্ষিকতা বলে সেখানের ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির তুলনায় তাড়াতাড়ি চলবে ---- এক্ষেত্রে দিনে ৪৫ মাইক্রোসেকেণ্ড এগিয়ে যাবে । আবার বিশেষ আপেক্ষিহকতা বলে উপগ্রহদের ঘড়ি দিনে সাত মাইক্রোসেকেণ্ড পেছিয়ে যাবে পৃথিবীর ঘড়ির তুলনায় তাদের আপেক্ষিক গতির জন্যে । তাই এই আপেক্ষিক সময় প্রবাহের হিসেব নিলে উপগ্রহের ঘড়ি আমাদের ঘড়ির চেয়ে দৈনিক ৩৮ মাইক্রোসেকেণ্ড এগিয়ে থাকবে । তাই আপেক্ষিকতাকে উপেক্ষা করলে ভুলের পরিমাণ ৩৮,০০০ ন্যানোসেকেণ্ড, যার ফলে অবস্থানের ভুল হবে দৈনিক প্রায় ১২ কি. মি. ! অর্থাৎ আপেক্ষিকতার সংশোধন বিনা জিপিএস অচল এবং সাধারণ আপেক্ষিহকতার ওজনই এখানে বেশি । প্রতিবার সাফল্যের সঙ্গে জিপিএস ব্যবহারই আপেক্ষিকতার নিত্যনৈমিত্তিক প্রমাণ ।

    এই সূত্রে সঠিক সময় মাপার সাহায্যে প্রথম কিভাবে ভূপৃষ্ঠে অবস্থান নির্ণয় করা হয়, অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজ ঘড়ি নির্মাতার সেই চমকপ্রদ গল্প কৌতূহলী পাঠক Dava Sobel -এর Longitude বইটিতে পাবেন ।

    ১৬২ পাতায় বিশ্বের প্রসারণ ত্বরান্বিত হবার এবং অদৃশ্য শক্তির বিকর্ষক বল যোগানোর কথা খুব সংক্ষেপে বলা হয়েছে । যেহেতু ১৯৯৮-এর এই অপ্রত্যাশিত ও বিখ্যাত আবিষ্কার গত দশ বছরে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং আধুনিক বিশ্বতত্ত্বের একটি প্রধান অঙ্গ হয়ে উঠেছে (Lambda - CDM model) তাই একটু বিশদভাবে বিষয়টির আলোচনা দরকার । বিশেষ করে বিভিন্ন দূরত্বে Type 1a সুপারনোভা (উজ্জ্বলতম "standard candles" )-দের আপাত উজ্জ্বলতা থেকে কি ভাবে বিশ্বের প্রসারণের ইতিহাস উদ্ঘাটিত হয়েছে (ত্বরাণ্বিত প্রসারণের শুরু ৫ বিলিয়ন বছর আগে) একটু বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে বললে পাঠকদের সাম্প্রতিক এমন কি ভবিষ্যতের নতুন আবিষ্কারের তাত্পর্য বুঝতে সুবিধে হবে বলে মনে করি ।

    বইএর শেষে বাছাই করা কয়েকটি বই এবং কিছু ভালো সহজবোধ্য প্রবন্ধ ও web links -এর (মন্তব্যসহ) উল্লেখ থাকলে উত্সাহী পাঠকেরা উপকৃত হবেন ।

    এবারে কয়েকটি ত্রুটি ও মুদ্রণপ্রমাদের কথা তুলছি । ২০ পাতায় মহাকর্ষসূত্রের প্রথম প্রকাশ ১৬৮৫ সালে । ক্যালকুলাসের আবিষ্কারে লাইব্নিট্স্‌-এর উল্লেখ প্রয়োজন । ২৪ পাতায় ১ নং ছবি হবে ৩ নং ছবি । জোয়ারের ৫ নং ছবির বর্ণনায় `বেশি ও কম' কে উল্টে লিখলে ছবির সঙ্গে মিলবে । ৮৬ পাতায় শেষ বাক্যটি দু'বার ছাপা হয়েছে । ১৩৪ পাতার দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফে "কেন্দ্রের কাছে ... গ্যালাক্সির" অংশটিও দু'বার ছাপা হয়েছে । ৯৪ পাতায় `পঞ্চাশ লক্ষ' হবে পাঁচশ' কোটি অথবা ৫ বিলিয়ন, কারণ সূর্যের হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়ম তৈরি পর্বের (Main Sequence) আয়ু প্রায় দশ বিলিয়ন বছর । সূর্য জন্মেছিল প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর আগে । ১০২ পাতায় "হিলিয়ম কেন্দ্রকে একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রন"-এর জায়গায় "...দুটি ... দুটি.." হবে । ২৭ নং ছবিতে আয়না দুটির নাম বদল করে নিলে ১৪৭ পাতার বর্ণনার সঙ্গে মিলবে । আরও কয়েকটি মুদ্রণপ্রমাদ চোখে পড়লো কিন্তু সেগুলো গৌণ ।

    উপসংহারে বলি বইটি খুব ভালো হয়েছে । নিউটন পরবর্তী মহাকর্ষ বোঝা কঠিন । এই দুরূহ বিষয়ের নানা দিক সহজভাবে বোঝানো মোটেই সহজ নয়, বিশেষত বিজ্ঞানের পরিভাষা ও অংক বাদ দিয়ে । এই কাজে সুকন্যা কৃতকার্য হয়েছেন । তিনি বাংলায় বিজ্ঞানপাঠকদের কাছে ধন্যবাদার্হ হবেন ।


    (পরবাস-৪৫, এপ্রিল, ২০১০)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments