এদেশে (আমেরিকায়) শুনি পাখি দেখার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে । হবেই তো । আমরা সবাই বুড়ো হচ্ছি, লাফ ঝাঁপ আর পোষায় না । পাখি দেখা বেশ শান্তিপূর্ণ, বেশি কায়িক পরিশ্রমের দরকার নেই । ধীরেসুস্থে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার প্রকৃষ্ট উপায় ।
পাখি কেন দেখি ? অনেকেই আমায় এই প্রশ্ন করেছেন । একটা সহজ উত্তর দেওয়া মুশকিল । আমরা সবাই পাখি ভালোবাসি । তাদের রংচঙে পালক মধুর স্বর । ফুড়ুৎ করে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা, সবই আমাদের প্রিয় । সারসের কমনীয় গ্রীবাভঙ্গি, ঈগলের তীক্ষণদৃষ্টি, ময়ূরের পালকের বাহার, হাঁসদের হাজার মাইল নির্ভুল মাইগ্রেশন, এসবই আমাদের কল্পনার প্রেরণা জোগায় তাই, পাখিদের চেনা ও তাদের সম্বন্ধে জানার ইচ্ছাটা খুবই স্বাভাবিক । আর শুধু তাদের নাম জানাই নয়, তাদের প্রকৃতি, স্বভাব, খাবার, বাসাবাঁধা, সবই নির্ভর করে চারপাশে প্রাকৃতিক জগতের ওপর । পাখি চেনা মানে গাছপালা চেনা, ঋতু বদলের প্রভাব শেখা, পোকামাকড়, আবহাওয়া, পারিবেশিক দূষণ এ সবই জ্ঞানের আওতায় পড়ে । প্রত্যেক পাখিপ্রেমী স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতিপ্রেমী ।
পাখি দেখার আরও মজা আছে । কোনো অদৃশ্য পাখির স্বর শুনে বনবাদাড় ভেঙে তার খোঁজ করা ও এক পলক দেখেই তাকে চিনে নেওয়ার মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জ আছে, যে কোনো শিকারীই সেটা বুঝবেন । পাখি দেখাও এরকম শিকার । শুধু তীর ধনুক বা গুলিগোলার দরকার নেই । একেবারেই অহিংস শিকার ।
পাখি দেখার শখ ইউরোপ ও আমেরিকায় খুব । কিন্তু সে তুলনায় ভারতে এটা নতুন । গত দুই দশক আগেও এটার খুব চল ছিল না । স্বাধীনতার পর ডক্টর সেলিম আলিই প্রথম পাখি চেনা ও তাদের বিষয়ে লেখাপড়ার আবর্তন করেন । তিনিই ভারতীয় পাখি বিদ্যার জনক । তাঁর লেখা গাইড বই ভারতীয় পক্ষীবিদ্দের বাইবেল । এখন অবশ্য আরও অনেক বিশারদদের দেখা পাওয়া যায় । ইন্টারনেটে অনেক সুন্দর ওয়েবসাইট আছে । পাখি দেখার ট্যুরিজমও আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।
পাখি দেখতে গেলে দুটো জিনিষের দরকার । এক ভালো একটা বাইনকুলার বা দূরবীণ । খুব বেশি ভারী না হলেই ভালো, কারণ সারাক্ষণ গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে । দ্বিতীয় একটা ভালো ছবিওয়ালা গাইড বই । সেলিম আলির বই আমার প্রিয় । কিন্তু আরও অনেক বই ইদানীং বাজারে বেরিয়েছে । বাইনকুলারের মধ্যে নাইকন আমার প্রিয় । হাল্কা ও মাঝারি দাম । এছাড়াও বাজেট ও রুচিমত স্পটিং স্কোপ, ট্রাইপড, ক্যামেরা ইত্যাদিও কিনতে পারেন ।
পক্ষীপ্রেমীরা তাঁদের খামখেয়ালী স্বভাবের জন্য পরিচিত । অনেক সিরিয়াস পক্ষীসন্ধানী একটা দুর্লভ পাখির খোঁজে সারাদিন বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন । খানাখন্দ, কাঁটাতারের বেড়া, আন্তর্জাতিক সীমারেখা কিছুই এঁদের রুখতে পারে না । লিস্টে আরেকটা নাম যোগ করার জন্য এঁরা সব কষ্ট সইতে রাজি ।
ও হ্যাঁ । লিস্ট । সব পক্ষীসন্ধানীরা নিজস্ব পাখির লিস্ট রাখেন । কোথায় কোন্ পাখি দেখা হল সব তালিকায় যোগ থাকে । সারা পৃথিবীতে প্রায় দশ হাজার জাতির পাখি আছে । অতি উত্সাহী বিশেষজ্ঞও সারা জীবনে চার পাঁচ হাজারের বেশি দেখে উঠতে পারেন না । লিস্টের কঠোর নিয়ম । কোনো রকম মিথ্যা লেখা চলবে না । খাঁচায় রাখা পাখির নাম লেখা বারণ আর হাত নিশপিশ করলেও কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন বা থ্যাংকসগিভিং টার্কি গোনা চলবে না ।
পাখিদের ওড়াউড়ি সর্বত্র । শহর, গ্রাম, জঙ্গল, সমুদ্র, শীত, গ্রীষ্ম, দিন, রাত, সব জায়গায়, সব সময়ে কোনো না কোনো পাখির দেখা পাওয়া যাবে । আমেরিকায় পাখিরা শীতের সময় দক্ষিণে, উষ্ণ আবহাওয়ার খোঁজে চলে যায়, গ্রীষ্মের সময় আবার উত্তরমুখী হয় । ভারতে অবশ্য ঠাণ্ডা কম বলে বেশি তফাৎ দেখা যায় না, কিন্তু শীতের সময় উত্তরের চীন, সাইবেরিয়া ও ইউরোপ থেকে পরিযায়ী পাখিরা দলে দলে আসে উত্তর ভারতের জলাজঙ্গলে । অবশ্য প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময়েও আমেরিকা একেবারে পক্ষীহীন হয়না । অনেক ছোটবড় পাখি সারা বছর একই জায়গায় কাটায় । শীতে গাছপালা পত্রহীন হওয়ার দরুন পাখি দেখারও সুবিধা । সময় অনুযায়ী ভোরবেলা ও পড়ন্ত বিকেলবেলাই সবচেয়ে প্রশস্ত সময় ।
যেখানেই যান না কেন, পাখি দেখতে হলে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা উচিত । সবসময় মনে রাখা দরকার যে পাখিদের কোনোরকম ক্ষতি না হয় । বাসার খুব কাছাকাছি আসা, বাসায় ডিম বা বাচ্চাদের ছোঁয়া ইত্যাদি পাখিদের ভয় পাইয়ে দেয় । অনেকসময় তারা ছোঁয়া ডিম বা বাচ্চা ছেড়ে চলে যায় । ফোটো তোলার সময় জোরালো ফ্ল্যাশের ব্যবহার কিংবা শিষ দিয়ে পাখির স্বরের অনুকরণ করাও অনেকসময় পাখিদের বিরক্ত করে ।
আশা করি পাঠকের মনে এতক্ষণে পাখি সম্বন্ধে একটু অন্তত: কৌতূহলের উদ্রেক হয়েছে । এবার ভারতীয় পাখিদের নিয়েই একটু আলোচনা করা যাক ।
ভারতে প্রায় দুহাজার জাতির (Species) পাখির বসবাস । শীতকালে আরও তিন-চারশো পরিযায়ী পাখির আগমন হয় । তুলনায় আমেরিকায় মাত্র ৮০০ জাতের পাখির দেখা পাওয়া যায় । অনভিজ্ঞ পাঠকের সুবিধার জন্য আমি ভারতীয় পাখিদের মোটামুটি চারভাগে ভাগ করছি । শহর, শহরতলি, গ্রাম ও ন্যাশানাল পার্ক ।
(ক) শহর - যে কোনো ভারতীয় শহর - এমনকি কোলকাতা বা দিল্লীর মত অতিকায়, ভিড় ও ধুলো ধোঁয়া ভর্তি শহরেও অনেক পাখির বাস । এগুলি আমাদের সবার পরিচিত -
!--------
(১) কাক (Crow) - কাককে কে না চেনে । নির্ভীক, বুদ্ধিমান জঞ্জাল সাফ করতে এদের জুড়ি নেই ।
----------
(১) চিল (Black Kite) - ঘন বাদামী রং (কালো নয়) । তীক্ষণ স্বর । এরাও মানুষকে ভয় পায় না । মরা জন্তু, জঞ্জাল ইত্যাদি সাফ করতে অপরিহার্য । কাকের থেকে দেড়গুণ সাইজ ।
!-----------
(৩) চড়ুই (House sparrow) - এটিও আমাদের সবার পরিচিত । শুনলে হয়তো অবাক হবেন, এদের সংখ্যা সাংঘাতিক কমে গেছে । বড় শহরে কোথাও চড়ুই এর দেখা পাবেন না । এর কারণ জানা নেই । নানারকম মত বিশেষে, ইলেকট্রিক তারের ব্যবহার, নতুন বাড়িতে ঘুলঘুলির অভাব, ফেলা, ছড়ানো দানার অভাব, বাগানে গাছপালায় কেমিক্যাল সারের ব্যবহার ইত্যাদি ইত্যাদি । গত বছর আমি বহু চেষ্টা সত্ত্বেও দিল্লী ও বম্বেতে একটি চড়ুই পাখির দেখা পাইনি । ছোট্ট, মিষ্টি এই পাখিটার অভাব সত্যিই মন খারাপ করে ।
------------
(২) ময়না (Common Myna) - চড়ুই ও কাকের মাঝামাঝি সাইজ । গাঢ় বাদামী রং, হলুদ চোখ ও ঠোঁট । এই পাখিটিও সবার পরিচিত । এরও অনেক বিভিন্ন জাতি আছে ।
(৩) পায়রা (Common Pigeon) - পুরনো বিল্ডিং, ইমারত ইত্যাদির আনাচ কানাচে বকবকম আওয়াজ সবাই চেনে । ধূসর বা সাদা ও বাদামী মেশানো রং । বনে জঙ্গলে আরও অন্য জাতির ঘুঘু ও পায়রা দেখা যায় ।
(৪) শকুন (Vultures) - হয়ত লক্ষ করেননি কিন্তু প্রত্যেক শহরেই ভাগাড়ে, ঘিঞ্জি বস্তিতে এদের দেখা পাওয়া যায় । মরা জন্তু খেয়ে সাফ করতে এদের জুড়ি নেই । White backed আর Red necked দুই জাতি বেশি দেখা যায় শহরে । গত দশ বছরে এদের সংখ্যাও নিশ্চিহ্ন হয়েছে । তাই নিয়ে অনেক লেখালেখি, বিতর্ক ও গবেষণার পর জানা গেছে যে Diclofenac নামক ওষুধটি এর মূল কারণ । এটা অনেক সময় অসুস্থ গরু বাছুরের চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয় । পশুগুলি মারা গেলেও এদের দেহে কেমিক্যাল থাকার দরুন শকুনদের শরীরে বিষের প্রভাব ছড়ায় এর জন্যই শকুনের সংখ্যা এতই কমে গেছে যে বম্বেতে পারসীদের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়াও ঠিকমতো সম্পূর্ণ হচ্ছে না । পারসী ধর্ম অনুসারে মৃতদেহ খোলা ছাদের ওপর রাখা থাকে, যাতে শকুনের দল হাড়গোড় শুদ্ধু সব খেয়ে সাফ করতে পারে । ধর্ম অনুযায়ী মাটিতে কবর দেওয়া বা আগুনে পোড়ানো যায় না । এঁরাই প্রথম শকুনদের সংখ্যা কমে যাওয়ার খবর প্রচার করেন । সরকারীভাবে Diclofenac এর ব্যবহার বন্ধ করা হয় বটে কিন্তু শকুনদের সংখ্যাবৃদ্ধি হতে এখনও অনেক বছর লাগবে ।
(৭) টিয়াপাখি (Ring necked parrot) - যে কোনো পুরনো গীর্জা বা মসজিদের কোনে কানাচে এদের দেখা যায় সারাক্ষণ কচরমচর চেঁচামেচি করে । সবুজ রং, ঝোলা ল্যাজ, গলায় ক্ষীণ গোলাপি ব্যাণ্ড । অনেক জাতির মধ্যে এটাই শহরে থাকতে ভালবাসে ।
(৮) বুলবুল (Red vented bulbul) - একটু খেয়াল করলে ভিড় শহরেও ছাতের আলসেতে বা টেলিফোনের তারে এদের দেখা পাবেন । এরও চার পাঁচ রকম জাতি আছে ময়নার সাইজ, মাথায় ছোট্ট ঝুঁটি, লেজের নীচে একটু লাল । বেশ মিষ্টি স্বর ।
(খ) শহরতলী, বাগান বাড়ি, শহরের পার্ক ইত্যাদি -
(৯) রবিন
-----------
!--------
(Indian Robin) - কালো রং । চড়ুই ও শালিকের মাঝামাঝি সাইজ, চঞ্চল পেটে লাল রং সবসময় ল্যাজ ওঠানামা করে ।
রবিন
(১০) সানবার্ড (Purple Sunbird) - খুব ছোট্ট । চড়ুই এর থেকেও ছোট পাখি । গাঢ় বেগুনি কালো রং । বাঁকা ঠোঁট দিয়ে ফুলের মধু খায় । আমেরিকার হামিং বার্ডের মত ।
(১১) ওয়্যাগটেল (Greyheaded Wagtail) - (খঞ্জন) শালিক সাইজের সাদা-ধূসর পাখি । এও খুব লেজ নাচায় । একে আমি কলকাতার অন্ধকার গলিতেও দেখেছি ।
(১২) সুইফট
(১৩) ব্যবলার (Jungle Babbler) (সাত ভাই) ময়নার সাইজ । বাদামী ধূসর রং । হলুদ চোখ । ভীষণ কর্কশ স্বর । ঝাঁকে থাকতে ভালোবাসে । মাটিতে খুঁটে খায় ।
!-------------
(১৪) সবুজ পায়রা (Green Pigeon) - গাছের ডালে, পাতার ফাঁকে দেখা যায় । সুন্দর স্বর ।
-----------
(১৫) হুপো (Hoopoe) - বাদামী, সাদাকালো পিঠ । লম্বা ঠোঁট, মাথায় ঝুঁটী । পাখা মেললে আরও সুন্দর মাটিতে খুঁটে খায় ।
(১৬) ল্যাপউইং (Red Wattled Larpwing) - পায়রার সাইজ । লম্বা ঠ্যাং । যে কোনো খোলা জায়গায় বা জলার কাছে এদের দেখা যায় । আমি সম্প্রতি গুরগাঁও- এর খোলা মাঠে দেখেছি ।
(১৭) মাছরাঙা (White breasted Kingfisher) - জলের কাছাকাছি থাকে । ছোট্ট পাখি কিন্তু লম্বা, মোটা ঠোঁট আর রংদার পালক । বম্বের শহরের মধ্যেও আমি একে দেখেছি ।
!---------
(১৮) বক (Pond Heron) - পাখার রং বাদামী, কিন্তু ওড়ার সময় উজ্জ্বল সাদার ঝলক দেখা যায় । শহরতলীর যে কোনো জলার পাশে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে । এগুলি ছাড়াও শহরতলীর বাগানে আপনি দেখতে পাবেন দু'তিন রকমের শালিক (Pied & brahminy myna) , দু'তিন রকমের বুলবুলি (Red vented & white crested) , কাঠঠোকরা (Yellow bached woodpecker) , সাদা-কালো রবিন (Magpie Robin) , সাধারণ রবিনের থেকে একটু বড় এবং আরও অনেক পাখি ।
----------
(গ) গ্রাম এলাকায়, জঙ্গলে - এখানেই সব থেকে সহজে অনেকরকম পাখি দেখা যায় । একটু ধৈর্য্য ধরে চুপ করে অপেক্ষা করলেই হল । বিশেষ কয়েকটির বিবরণ দিলাম ।
(১৮) ময়ূর
(Indian Peafowl) - আমাদের বিশিষ্ট জাতীয় পাখিকে কে না চেনে । উত্তর ভারতের গ্রাম জঙ্গল এদের কর্কশ স্বরে মুখরিত ।
ময়ূর (গুরগাঁও-তে তোলা ছবি)
(১৯) কপারস্মিথ (Crinson Breasted Barbet) (বসন্তবৌরী) - চড়ুই সাইজের রংচঙে ছোট্ট পাখি । মিষ্টি স্বর ।
!--------
(২০)
----------
!---------
----------- (ঘ) ন্যাশনাল পার্ক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি - ভারতে অনেক ছোট বড় সংরক্ষিত উদ্যানে হাজার রকম পাখি দেখা যেতে পারে । শীতের সময় উত্তর ও উত্তরপূর্ব ভারতে করবেট পার্ক থেকে কাজিরাঙ্গা পার্ক পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় আপনি পরিযায়ী পাখির দেখা পাবেন । দক্ষিণ ভারতে কেরালার পেরিয়ার পার্ক পাখির জন্য খুব বিখ্যাত । কিন্তু ভারতে সব থেকে সেরা পাখি দেখার জায়গা হল কেওলাদেও - ভরতপুর বার্ড স্যাংচুয়ারী । শুধু ভারতেই নয়, আমার মতে সারা পৃথিবীর মধ্যে এটি প্রথম সারিতে পড়বে ।
!-------
পার্কের মধ্যে গাড়ী চালানো মানা । শুধু সাইকেল রিকশা আছে । এতে পরিবেশ দূষণ কম হয় । রিকশা চালনকারীরা সবাই ট্রেনিং দেওয়া পাখি বিশেষজ্ঞ । তারা জানে প্রত্যেকটি পাখির নাম ধাম, আচার, আচরণ । অনেকেই ইংরাজী বলতে পারে । পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে বিদেশী পক্ষী প্রেমীরা আসেন ফোটো তুলতে ও গবেষণার কাজে এই রিকশাওয়ালারাই সবার গাইডের কাজ করে দেয় ।
জলাজঙ্গলে জলচর হাঁস, বক, সারস ইত্যাদি ছাড়াও প্রচুর স্থলচর পাখি ও শিকারী পাখি (ঈগল ইত্যাদি) দেখা যায় । শীতের সময় সমস্ত পার্ক পেন্টেড স্টর্কের (Painted Stork) আওয়াজে মুখরিত থাকে । এগুলি বিরাট বক, কালো, সাদা ও গোলাপী মেশানো পালক । এদের ছাড়াও আরও অনেক রকম বক ও সারস দেখা যায় । দুধসাদা বক (Egret) জলের ধারে চুপ করে বসে থাকে, মাছ ধরার আশায় । জলে ঝাঁপ দেয় পানকৌড়ির দল (Cormorant) । মাছ মুখে নিয়ে গাছের ডালে বসে পাখা দুটো মেলে রোদ পোহায় । পার্কে আছে নানা জাতের পাতি হাঁস ও রাজহাঁস । সরস্বতী দেবীর বাহন Bar headed goose আমি এই পার্কেই প্রথম দেখেছি । সুদূর সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসে হুপিং ক্রেন ও সাইবেরিয়ান ক্রেন । এদের সংখ্যা ইদানীং মারাত্মক ভাবে কমে এসেছে । বছরে এখন দু একটাই দেখা যায় ।
পাখি ছাড়াও কেওলাদেও পার্কে আছে নানা জাতির বাঁদর, হরিণ ও পাইথন আর লেকে আছে প্রচুর মাছ - মাছ ধরা বারণ । এইসব নিয়ে পার্কটি সত্যিই জমজমাট । আর খুব পরিচ্ছন্নও । ছোট হলেও এটি ভারতের বিশেষ গর্বের পার্ক ।
এতসব কাহিনির পর আশা করি পাঠকদের মনে পাখি সম্বন্ধে একটু উত্সাহের সৃষ্টি হয়েছে । তবে আর দেরি কেন । একটা বাইনকুলার আর গাইড বই হাতে বেরিয়ে পড়ুন । শহরে, গাঁয় শীতে, গ্রীষ্মে, দিনে রাতে, সঙ্গীবিহীন বা সঙ্গীসমেত যে কোনো জায়গায়, সময়ে, অবস্থায় আপনি পাখির খোঁজে মগ্ন হতে পারেন । হালকা ব্যায়ামে, প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় সময় কাটাতে এর চেয়ে ভালো হবি আর কীই বা হতে পারে ?
(পরবাস ৪৫, এপ্রিল, ২০১০)