• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৪৪ | ডিসেম্বর ২০০৯ | কবিতা
    Share
  • : দিব্যেন্দু ঘোষাল

    ॥ চন্দ্রগীতিকার ছন্দপতন ॥


    জানতাম না সে দু:খসুখের ছন্দপতন কয় কাহারে ।
    চাঁদ.ই ছিলে মধ্যমণি আমার, শৈশব আকাশের গোধুলিবেলায় ।
    পূর্ণচন্দ্র, চন্দ্রকলা হয়ে, চাঁদের ফলক আলো হাতে, `আঁধারের যাত্রী' আমারই তরে
    সে-ই গহন মনের আসমুদ্র-হিমাচল ভাসায়ে সাদা আলোর বন্যায়
    আর - রৌদ্র শোভিত দিনে বালুকা বেলায়, খুঁজিয়া ফিরিত তারে,
    আমার সে-ই চক্ষু দুটি, ওই চাতকীর খোঁজে, চাতক পাখির ন্যায় ।

    আজো মনে পড়ে - সেই সব রাত্রি বিকেল, এই মুহূর্ত ক্ষণে
    মোর জীবনের, তবু সেই চন্দ্রগীতির তাল-সুর আর, ফেরে নাকো এ মনে ।
    এই গগন-মাঝারে, ভুবন ভোলা সব জীবন-ছন্দ মুছি ।
    অমোঘ, কুন্তী-পুত্রের রথ চক্রের, হায়, ঘনাইল কাল ।
    কোন্‌ সে পরশুরাম মোর, অমোঘ কালের স্বপ্ন রচি,
    দরজার এ-পারে মোর, অনুভবে আনে সে শৈশবের আকাল ।
    আনিবে কি এ মনের মরা গাঙে সে-প্লাবন, নদের নিমাই-মাতা শচী
    নিত্যানন্দের বার্তার পুনরাবৃত্তি করি, ঘুচি এ কালের কলঙ্কের বৈকাল ।



    !--------
    ॥ চন্দ্রগীতি - আলেখ্য ॥


    খোলা জানালাখানি দিয়া দেখি তবে কার সে
                  প্রতিফলন ?
    শৈশব-বাল্যের বাঁধা-গত অতিক্রমি, পান করি
                  সে বিষ;
    নিশি-ডাক শুনি পাগল-পারা, বিজ্ঞান ধূলিসাৎ
                  সব কারণ-দর্শন ।
    নদনদী, কালীদহ, সবুজ প্রান্তর, নেচে ওঠে
                  গমক্ষেত ধানের শীষ,
    ত্রিপুরা-বাংলা সহ ভেজায় এ বিশ্বভুবনে চরাচরে ।
    গহন ধবল সে যাত্রাপথ, সুদূর নীহারিকার পথে ।
    রাত্রি উপস্থিত বৈষ্ণবীর ন্যায়, সাদা টিপটি
                  পরে
    আলগোছে কপালে আর, সারাটি গায়ে তার যূথে
    সাদা তিলক জ্যোত্স্না ফল্গুধারায়,
    তব পদযুগলের চিহ্নছায়ায়
    তিমিরবরণের রূপ খানি, এ কালরাত্তিরে করি বরণ
    প্রেমের সে আলিঙ্গনে, বিচারভূমি এ মোর মন
    জেগে ওঠে আমার সে মনে, প্রেমের
                  লুকোচুরির মাঝে
    ছন্দ-গীতি, সুর-তাল-লয়, চন্দ্রগীতিকায় এ প্রেম
                  সাজে ।
    মোর মন কাপালিক তখন, পূজিত ঐ নীহারিকায়
    যামিনীরে কালিকাদেবীরূপে, চন্দ্রপ্রদীপের শিখায় ।
    তাহারই মাঝে প্রত্যক্ষ করি চন্দ্রের জলকেলি ।
    প্রেমের কি অপরূপ মুরতি তাদেরি, ডানা মেলি
    কখনো বা সে বলাকারাজি উড়ি যায় কোন্‌
    সে দূরদেশ পানে, তখন নলখাগড়া হাতে ছন্নছাড়া মন
    চন্দ্রছায়ায় তাদের রূপে, পাদপ্রদীপের আলোয় এ কী
    গান বাঁধিবার ছলে, বিশ্ব-প্রেমের রূপ দেখি ।



    ॥ চন্দ্র-তমসার অপার প্রেম ॥


    কৃষ্টি সে তো চন্দ্র-যামিনীর, অনাদি-অনন্তকালের ।
    পুঞ্জীভূত অপার প্রেম সে সাগরে ডুব সুপ্ত-জীয়ন্ত
                  অগ্নিগিরিরাশির ।
    মন্থনে প্রত্যক্ষ করালে করুণাসাগরে, আহা
                  একি দয়া,
    সরল বাল্য-হৃদয় মম মাঝারে তব কায়া ।
    দোলাচল কবি-হৃদয়ে কুমুদিনী এ প্রেম আকুল;
    ভাব-মন, গীতি-মন, মরণ মম জীবন ব্যাকুল ।
    এ তো নয় যুগল - `বন্দী' কাল-গণ্ডীর মাঝে
                  সুশৃঙ্খলে,
    গহন-অন্তরে বাজিছে সে বীণা, গর্হিতনন্দিনীর
                  কোমল কোলে,
    এ প্রেম পাতিয়া মেলে আঁচলটুকু তাহার,
                  প্রতিটি পদক্ষেপে ।
    চরণ-দুখানি যাহাতে এ কবিতার রাখিতে পারি
                  মেপে ॥
    বহিয়া আনি, বিধাতা-পুরুষের অগাধ শান্তির বাণী ।
    ভাঙিয়া ফেলিতে চাহে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে,
                  পরমব্রহ্মের শবযাত্রাধ্বনি ॥
    তমসা-প্রেমে দেখায় যে চন্দ্র এক আশায় জানি ।
    এ গূঢ় মনুষ্যতটে লিখন মুছিয়া দিবে সে কবে,
                  সর্ব হানাহানি ॥



    ॥ চন্দ্রগীতিকা কলুষিত ॥


    যবে অবক্ষয় আজি বাঁধিতে নারি, এ সমাজেরে
    সংকীর্ণ কালে আবদ্ধ করি বেড়াজালে এই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিরে ।
    তমসা করে সাজবদল, কলুষিত আজি সে তমসা
    আর তার সাথী চন্দ্র আজি, করে দিক্বদল,
                  যে সহসা
    রক্তঝরা সবে দৈহিক বাহ্যিক, ধারণারাশির ঊর্ধ্বে -
    অনুর্বর মস্তিষ্ক-প্রসূত বীজরোপণ সে বিষের
                  গর্ভমূহুর্তে
    মনুষ্য যথা বৃশ্চিকরাজি হনন করি নির্দ্বিধায়,
    সভ্যতার আপনজনারে, হন্তারিকে কোন্‌ সে ক্ষুধায় !

    সাত মহারথীর চক্রব্যুহ, হায় ! বালক
    অভিমন্যু, পাণ্ডবকূলের ভাগ্যচালক
    সেদিনে, ভূলুন্ঠিত আজ সে, `অনিয়তি'র ন্যায়,
    শাস্ত্র-নীতি কলঙ্কিত করি সে সংকীর্ণ পন্থায় ।
    পরাণা-গীতি এ চন্দ্রগীতি বাধা পড়ে ও শৃঙ্খলে,
    বৃহত্তর প্রেম চন্দ্র-তমসা, ছত্রছায়ার পেখমতলে ।
    -----



    (পরবাস-৪৪, ডিসেম্বর, ২০০৯)

  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments